Skip to main content

Full text of "Hindu Darshan - 2nd ed. হিন্দু দর্শন - ২য় সং"

See other formats




শ্রীযুক্ত চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার 
প্রণীত ও প্রকাশিত । 


দ্বিতীয় সংস্করণ। 
কলিকাতী .. 
৬২ নং আম্হার্ষ গ্রীট, সংস্কৃতযন্ত্ে 
জ্রীউপেন্দ্রনাথ চক্রব্তাঁ ছারা 
ঘুজ্রিত । 





শকাব্দাঃ ১৮২৬। 


আবাঢ। 


সস্তা 








১৮৪৭ মালের ২০ আঁইন অনুসারে এই পুস্তকের 
কগিরাইট্‌ রেজিষ্টরী করা হইল। 


.. পপ পপ পা পপ পপ পা ৩০০৬০০৮২৬০৯, ৭৮৮ পাপা পাপা 


প্রথম সংস্করণের বিজ্ঞাপন । 


পপ বউও বট ছু টিছিওত এ 4৫0 


শ্রযুক্ত বাবু শ্রীগোপাল বন্থুমন্লিক মহাশয়ের বিষ্যান্ুরাগ, শ্বদেশগ্রীতি 
ও বদান্যতায় এতদেশে মর্ধগ্রথম ফেলোশিপের স্ট্টি হইল। এজন্য তিঞি 
দেশের কতজ্ঞতাভাজন, সন্দেহ নাই। হিন্দুদর্শন, বিশেষতঃ বেদান্তদর্শন 
সম্বন্ধে লেক্চর দেওয়াই ফেগোর কর্তব্য বলিয়া পরিধি ইইয়াছে। 
দর্শনশাস্ত্ব অতি বৃহৎ ও গভীর গবেষণায় পরিপূর্ণ | এক একটি 
দর্শনের অন্ুশীলনেই দমগ্র জীবন অতিবাহিত হইতে পারে, ইহা অত্যুক্তি 
নহে। সুতরাং ছইচারিটা কথায় ষড়দর্শন বুঝাইতে যাওয়া বিড়ম্বনা- 
মাত্র। তথাপি কর্তব্যের অনুরোধে দর্শনবিষয়ে আমাকে কিঞ্চিৎ বলিতে 
হইয়াছে। আমি বৈশেধিক, ন্যায়, সাথ ও পাতগ্দর্শন সম্বন্ধে সৃল সল 
কয়েকটি কথা বলিঘ়্াছি। উচিত বিবেচনা হওয়াতে প্রথমতঃ অনুক্রমণিকা- 
স্বরূপে কিছু বলিয়া নামকরণপ্রণালী এবং সাধারণভাবে দর্শনশান্ত্রবিষয়েও 
কিছু 'কিছু বলিয়াছি। বিষয়ের দুরপনেয় কাঠিন্তসত্বেও সরল ভাঁষায় 
বুঝাইতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছি। আমার উপর যে গুরুতর ভার স্তস্ত 
হইয়াছে, ইহাতে সেই ভার কতদূর বহন করিতে পারিয়াছি, তাহা 
উদদারহৃদয় স্ধীগণ বিবেচনা করিবেন | অতি সাবধানতার সহিত ছুর্বোধ 
দার্শণিক দিদ্ধান্তগুলির আলোচনা করিতে অগ্রমর হইয়াছি। বর্ষে অন্যুন 
ছয়টি লেক্চর দিবার নিয়ম। আমি নয়টি লেক্চর দিয়াছি। সময়ের 
অল্পতানিবন্ধন সমস্ত বিষয় সংক্ষেপে বলিতে হইয়াছে। মন্ধযুজনসুলত 
প্রমাদের বশবর্তী হইয়া! কোন স্থানে যদি শ্বলিতপদ হইয়া থাকি, তাহ 
সুধীগণ ক্ষমা করিবেন। শ্রীযুক্ত বাঁবু শ্রীগোপাল বন্থুম্লিক মহাশয় 


2/ ০ 


যে-অভাব-দুরী করণোদ্দেশে মুক্তহস্তে অর্থব্যয় করিয়াছেন, তাহার সেই 
মহৎ উদ্দেশ্য যদি কিঞ্িৎপরিমীণেও আমার দ্বারা সাধিত হয়, তাহ! 
হইলে আমি আমার এই পরিশ্রম সার্থক বোধ করিব। অলমিতি। 


কাকা; ১৮২০ 
শ্রীচন্দ্রকান্ত শর্মা । 
] মাঘ। 


' "শদ্ধিতীয়বারের বিজ্ঞাপন । 


বাবু শ্রীগোপাঁল বন্ুমল্পিক মহাশয়ের প্রথমবর্ষের লেক্চর দ্বিতীয়বার 
মুদ্রিত ও প্রচারিত হইল। কতিপয় আত্মীয়ের অনুরোধে এবার 
অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অক্ষরে মুদ্রণকার্ধয সম্পাদিত হইয়াছে। মূল্যও পূর্বাপেক্ষা 
কিছু অর্প করা হইল। আমার শরীর স্বচ্ছন্দ না থাকায় এবারে বিশেষ 
পরিবর্তন করা হয় নাই। শ্রীমান্‌ অতুলকুষ্ণ গোস্বামী বাবাজির গ্রতি 
দ্বিতীয় সংস্করণের ভারার্পণ করিয়াছিলাম। অল্লাংশমুদ্রণের পর তিনি 
পীড়িত হইয়া গড়েন। তখন শ্রীমান্‌ বলাইটাদ গোস্বামী বাবাজি এই 
মুদ্রাঙ্কনের ভার গ্রহণ করিয়া আমার যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছেন। তিনি 
এঁ ভার গ্রহণ না করিলে বর্ধমান সময়ের মধ্যে কিছুতেই দ্বিতীয় 
সংস্করণ সম্পন্ন হইতে পারিত না। ভগবৎসকাশে প্রার্থনা করি, উক্ত 
বাবাজিদ্য় নিরাময় ও দীর্ঘজীবী হউন। 


কলিকাতা। বিনীত 
শকাবা; ১৮২৬ 
নি শীচন্দ্রকান্ত শন্মা। 


সূচীপত্র। 
প্রথম লেকৃচর। 
বিষয়। 
অনুক্রমণিকা ।-- 
হিনদুরাজত্বসময়ে শান্তরচর্চার সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত 
শাস্তরগ্রন্থের বিনাশ 


মুসলমান-রাজত্বলময়ের অবস্থা ... ০০৬ 


সম্রাট আকৃবরের রাজত্বমময়ের অবস্থা 
বর্তমান সময়ের অবস্থা 


প্দর্শনশান্ত্র নীরদ ও কঠিন”-_এই প্রবাদের সমালোচিন! ১ 


দর্শনশান্ত্র নীরন নহে 

দর্শনশান্ত্রে অভূুতরদ আছে 

দর্শনশান্ত্র কঠিন ও কাঠিন্যের কারণ 

কাঠিন্তের চরমফল পরিশ্রমের আধিক্য. ... 
পরিশ্রমানুমারে বস্তর উৎ্কর্ষাপকর্ষবিচার 
গরিশ্রম বা কর্ম মনুষ্ের স্বাভাবিক 

পরিশ্রম শ্বাভাবিক হইলেও সমাধি হইতে পারে 
মমাধিকালে আভ্যন্তরীণ কর্ম বিলুপ্ত হয় না... 
জ্ঞান ও মানসী ক্রিয়ার ভেদ 

জ্ঞানের কারণ "* 


কর্ধ মনুষ্বের স্বাভাবিক হইলেও ডি চে পারে 


মন্ুষ্যশব্দের অর্থ শরীর, আত্মা নহে 

আত! নিক্ষিয় "" রি রর 
আত্মা নিক্ষিয় নি তাহার সা 
আত্মার কর্তৃত্ব '*' 

তত্বজ্ঞানদ্বার! সঞ্চিতকর্মের চি 
প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তির কারণ :,' 


গু 
ঠ৪ 


১৪ 
১৬ 
১৭ 
১৭ 
১৮ 
১৮ 
১৭৯ 
১ 
২১ 
২১ 
২৩ 
২৩ 
৪ 
৪ 
৬ 
এ 
৮ 


'বিষয়। পৃষ্ঠা। 
পরিশ্রমের উপকারিতা 7... *5 20 25১২৮ 
দর্শনশান্ত্র-অনুশীলনের আবশ্তকতা ..* ০৩৪ 
ভারতীয়দর্শনবিষয়ে ইউরোপীয়দিগের মত :* * ৩৬ 


০ 


দ্বিতীয় লেক্চর । 


নামকরণপ্রণালী ।-_ 

দর্শনশবের ব্যাখ্যা ... .১ ১ ০ ২58০ 
একদেশদার। সংজ্ঞা বানামের ব্যবহার "১১৮৪২ 
দর্শনশব্ের ্যাখ্যাবিষক্পে মাধবাচার্ধোর মত ***27 ৪২ 
নৈয়ায়িকদ্িগের মতে যৌগিকাদি চতুধিধ নাম বা সংজঞ ৪৩ 
অতিব্যাপ্তি ও অব্যাপ্তি ... ..* ০৮০০০ 8৪ 
বুাৎপত্তিনিমিত্ত ও প্রবৃত্তিনিমিত্ত "1: ১০০8৫ 
আজানিক সঙ্কেত বা শক্তি ও ৪ সন্কেত 
বাপরিভাষা ... 2 25, ১৮৮2 8৫ 
সমস্ত নাম ধাতু হইতে উৎপন্ন কি না, তাহার বিচার ৪৭ 
তদ্দিষয়ে শাকটায়নের মত ... ১ ৮১০৯০ ৪৭ 
'গার্গ্যের মত ১ 2 তত ৮258৮ 
যাস্কের মত .১ 5 25 2 5০০ ৩০৫২ 
'নিকুক্তানুমত নামের নি দার, ৮০০৫৬ 
হিন্দুশকের বাৎপত্তি ... ... ০ তত তি ৬৩ 


ভিন্ন ভিন্ন দর্শনের বিশেষ বিশেষ নাম ও তাহার কারণ ৬৬ 





তৃতীযু লেক্চর। 
দর্শনশান্র | 
বর্শনশাস্ত্রের প্রয়োজন, উপকারিত| ও আবশ্ঠকতা ৬৮ 
দর্শনশান্ত্রের প্রকারভেদ বাবিভাগ :* *৮ ৮৮৭৫ 
আস্তিক ও নাস্তিক: ১ ১2 25৮০ ৫ 


পহক্তি। 
«১ ১৬ 


* ১২ 


১, ১৩ 


৮ ৯৯ 


১৩ 


[. ৩ 4 


বিষয় । 
ষড়দর্শন ও তাহাদের অবান্তর বিভাগ .. 
ষড়্দর্শনের অতিরিক্ত দর্শন 
দর্শনশান্ত্রের রচনা প্রণালী 
ত্র, বৃত্তি, ব্যাখ্যা বা টাকার পরিচয় ... 
সৃত্রের লক্ষণ ... 
ব্যাখ্যার লক্ষণ... 
ভাম্ের লক্ষণ... 
বার্তিকের লক্ষণ নি 
বাণ্তিককারের স্বাধীনতা ও তাহার দৃষ্টান্ত .. 
স্থালীপুলাঁকন্তায় 
আ্তির অবিরোধে স্বৃতির প্রামাণ্য 
প্রকরণের লক্ষণ 


নব্য নৈয়াধ্িকদিগের ই সংক্ষিপ্ত রঃ 


চতুর্থ লেক্চর। 


বৈশেষিকদর্শন।-_ 

বৈশেধিকদর্শনের গ্রন্থকার ও গ্রন্থাবলীর 
সংক্ষিপ্ত পরিচয় রঃ 
কণাদের মতে পদার্থসংখ্যার আলোচনা 
ষট্‌পদার্থবাদীদিগের মত ... 
সপ্তপদার্থবাদীদিগের মত. 


বৈশেষিকীর্শনের স্ত্রসংখা। ও অধ্যায়সংখ্যা এবং 


তাহার প্রতিপাগ্থ বিষয় 
দ্রব্যপদার্থের লক্ষণ ও বিভাগ ..' 
পঞ্চভূতের পরিচয় '"" 

ক্ষিতি ব! পৃথিবীর লক্ষণ ও বিভাগ 
পরমাণুনিরূপণ 


পৃষ্ঠা । 
৭৭ 
৭৮ 
৭৮ 
৭৮ 
৭৯ 
৭৯ 
৮০ 
৮০ 
রি 
৮২ 


৮৭ 


৮৯ 


নি৬ 


৯৮ 


৯৯ *.. 


১০২ 


১০৩ 


১০৪ 


পংক্তি 
ঙ 


২ 


৮. 


* ২৪ 
৭ 


*. ১৩ 


, ১৬ 
রঙ ২৪ 
৮ 


* ১৭) 


', ২৮ 


৮ 


১৬ 


* ২৪৯ 


* ২৮ 


২৫ 


* ১৩ 


বিষয়। 


[| 8 


অবয়ব ও অবয়বীর বিষয়ে পাশ্চাত্য 


বৈজ্ঞানিকদিগের মত 


ইন্ড্রিয়গণের অভিব্যঞ্লকতাবিষয়ে ইউরোগীর 


দরর্শনিকদিগের মত 


26৪ 


অগ্‌ বা জলের লক্ষণ 'ও বিভাগ "" 
তেজঃপদার্থের লক্ষণ ও বিভাগ 


বাধুর লক্ষণ ও বিভাগ 
আকাশের লক্ষণ ..£ 
কাল ও দিকের লঙ্গ% 


আত্মার লক্ষণ ওবিভাগ ... 


মনের লক্ষণ 2 


জ্ঞান ও ক্রিয়ার যৌগপস্ভ নাই ... 
বৈশেধষিকমতে গ্রলয় ও স্থষ্টির ক্রম 
তারতীয় পঞ্চভূত ও ইউরোপীয় রি 


সম্বন্ধে ুইএকটি কথ! 


কাল ও দিক্‌ আকাশ হইতে অতিরিক্ত ডি না, 


তদ্বিযয়ের সংশয় 


বৈশেষিকদর্শন |-_ 


পঞ্চম লেকৃচর । 


গুণপদার্ধের লক্ষণ ও বিভাগ 
রূপাদি চতুবিংশতি গুণের পরিচয় 


জ্ঞানের প্রকারভেদ 
কর্ম ও তাহার বিভাগ 


“সামান্ত*পদ্দার্থ ও তাহার প্রকারভেদ... 


“বিশেষণ পদার্থনিরূপণ 
সমবায়নিরূ্পণ 


১১৪ 


১২২ 
১২২ 
১২৪ 


১২৮. 


১২৮ 
১২৯ 


৮ ১৪ 


৪ 


*** ২৩ 


৮৯৬ 


'.. ১৪ 


* ২৩ 


১, ২৪ 


* ১% 


৮, ৬৫ 


, ২৫ 


৮১১৫ 


* ৭ 
* ৯৮ 


বিষয়। 
অভাব ও তাহার প্রকারভেদ ... 
কারণনিরূপণ 
প্রমাণবিভাগ-- প্রত্যক্ষ ... 
লৌকিক সন্নিকর্ষের বিভাগ 
অবয়বিনিরবূপণ 
অলৌকিক দন্নিকর্ষের বিভাগ 
অনুমান .. 
গমকতৌপয়িক 
হেত্বাভাননিরূপণ 


ষষ্ঠ লেকৃচর। 


হ্যায়দর্শন।-__ 

্যায়দর্শনকর্তার নাম ও স্যায়দর্শনানুমত মুক্তি ... 
হ্যায়দর্শনের হুত্র ও অধ্যায়াদি বিভাগ এবং 

তাহার প্রতিপাদ্য বিষয় ... ২১১ ১১ তত 25 
হ্যায়দর্শনের পদার্থ ** 

স্াঁয়মতে মুক্তির ক্রম 


প্রমাণপদার্থনিরূপণ--প্রত্যক্ষ ... 

অনুমান ** তি 55256 555 
অনুমানের প্রকারতেদ ১555 00855 
উনার 28-55-5824. 5 
শব .. ৮5, 


প্রমেয়পদার্থ আত্মাদির নিরূপণ ' 

সংশয় 'ও তাহার কারণ 

প্রয়োজন *** ৮2, 

দৃষ্টান্ত ও তাহার প্রকারভেদ **' 

পিদ্ধান্ত ও তাহার প্রকারভেদ ,** ১১১ 22 5৯, 


পৃষ্ঠা। 


১২৯ 
১৩৪ 
১৩৯ 
১৩২ 
১৩৩ 
১৩৬ 


১৩৩ 


১৪১ 


১৪৩ 
১৪৪ 
১৪৪ 
১৪৫ 
১৪৬ 
১৪৩ 
১৫০ 

১৫৩ 
১৫৯ 

১৫৩ 
১৫৫ 
১৫৫ 


১৫৫ 


পংক্তি 
, ২৫ 


বি 


* ৯৪ 


৮ ১৩ 


৮ ২১ 


* ২৮ 


"২৯ 


১৪ 


, ২১ 
* ২৪ 
১১ 
২৮ 


৯১, ও 


29৬ 


* ৯৫ 


বিষয়। 
হ্যায় 88 
অবয়ব ও তাহার বিভাগ. 
তর্ক নি. 
নব্য নৈয়ায়িকদিগের অনুমত তর্ক 
নির্ণয় ী 
কথা এবং তাহার বিভাগ:"' 
কথা ও বাদের অধিকারী... 
শান্সীয় বিচারপ্রণালী , ... 
হেত্বাভাস ও তাহার প্রকারভেদ 
ছায়া বা অন্ধকার স্্রীব্য' নহে 
ছল ও তাহার প্রকারডেদ :** 
জাতি ও তাহার প্রকারভেদ 
নিগ্রহস্থান ও তাহার বিভাগ 


সপ্তম লেক্চর। 


সাঙ্খযদর্শন ।-- 
সাঙ্যদর্শনের গ্রন্থ ও গ্রন্থকার ... 


সাঙ্যদর্শনের শুত্রমংখ্য। ও অধ্যায়বিভাগ 


এবং তাহাদের প্রতিপাদ্য বিষয় 
সাঙ্ঘদর্শনের গ্রস্থাবলী 
ছুঃখত্রয়ের বিবরণ :'" 
ছুঃখনিবুত্তির উপায় 
বৈধহিংসার পাপজনকতা 


দ্র্গলাভেও ছুঃখের অত্যন্তানিবৃত্তি ... 


দ্বর্গের অনিতাতা ৮. 
সাঙ্যমতে প্রমাণসংখ্যা *"। 


পৃষ্ঠা । 
১৫৭ 
১৫৭ 


১৫৮ 


5৪১৫৯ 


১৬০ 
১৬০ 
১৬০ 
১৬১ 
১৩১ 
১৬৩ 
১৬৫ 
৯৬৬ 


১৬৪ 


১৭৩ 


৯৭৪ 


১৭৪ 
১৭৫ 
১৭৭ 
১৭৮ 
১৭৭) 
১৮০ 


পংক্তি। 
9 
€ 


44৯ 


. ২৭ 
, ১৬ 


"১৮ 


“৯১. 


বিষয়। পৃঠা। . গংজতি। 
প্রমাণসন্বন্ধে প্রণালীগত-বৈলক্ষণ্য-বিষয়ে 
বাচম্পতিমিশ্রের মতা ১১ ১ 2০০১৮০275১৩ 
বিজ্ঞানভিক্ষুর মত *** ১১ 55 তত 2১১৮১ 25 ২২ 
প্রত্যক্ষ না হইলেই বস্তর অভাব নিশ্চয় কর! 
সঙ্গত নহে ১ ঠিত হত 5১১১০ 22ত2৮৮১৮২ ১১০5০ ২৪ 
বিদ্যমান বস্তর প্রত্যক্ষ না হইবার কারণ ... *** ১৮৩ ১ ৩8 
সাঙ্খযমতে তত্ব বা পদার্থ... ২.১ ২১5০১৮৪০5১৬ 
সৃষ্টি বা কাধ্োৎপত্ভিবিষয়ে 
অসদ্বার্দ... :, ০০55, রি ১১০০১০০১৮৫০ ২৬ 
বিবর্তবাদ .*১ ১ হত ওহ ১৯ ১৯৪5১, ধরার 
পরিণামবাদ বাবিকারবাদ '' ,১ ৮ 5০ ১৮৭ 2০ ০ ৭ 
আরস্ভবাদ ... ৮ ০2 25০১ 55৮০০০১৮৭ 25 ২৩ 
সতকার্ধযবাদ- সংস্থাপন ১১ তত তত 2১১৮১৮৮2258 


অষ্টম লেকৃচর। 


সাঁঙ্যদর্শন।__ 

জগৎ ও জগতের কারণ স্থখছুঃখমোহাত্মক ... 2 এত ১23 
সত্ব, রজঃ ও তমঃ :১২ ২.১ 2 5০2 ০০৯৯৩ ০০০০ ১৬ 
পরিণামভেন্ ... 2 ১55০98৯৪85০ 5৮৬ 
পুরুষের অনুনান ও পুরুষ গুণাতীত :** .** 7১৯৪ 12 তা ২০ 
শরীরভেদে পুরুষতেদ ** ১১১ 2 ত৪১৯৫ ০০১৮৮ ১৪ 
প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগ ১ ১০2559৯৫৮০৮ ২৫ 
সর্গ বাস্ছির প্রকারভেদ ১ ১, 22 তত ১৯৬, দ০ 5০৭ 
ইন্দ্রিয় ও ইন্জিয়বৃত্তির পরিচয় ,. ** ১.১ ১৮ ১৯৬ ০১2৮ ১৮ 
অন্তঃকরণ ও বাহাকরণ, .,*১ 2552255৮১৯৬ হত ২৯ 
অন্তঃকরণের দাধারণ বৃত্তি প্রাণাদি '' ৮ 55 ১৯৭ ১, 5০২ 


বিষয়। পৃষ্ঠা । পংক্তি। 
সবিশেষ ও অবিশেষ 15 2 হাত তি তত ৯৯ ৮০৩ 
প্রবীর ১::১৮5::5: 588: উঠ. আহ উনি ৩৪ 3555৬ 
বিপর্যয় ও তাহার অবান্তর তেদ 2 2২০৪ 2৮১ 
শক্তি ও তাহার অবান্তর ভেদ '** *** ১২০১ 2 2৬ 
তুষ্টি ও তাহার অবান্তর ভেদ *,. *** ** তা ২০১ ৫ হা ৮ 
পিদ্ধি ও তাহার অবান্তর ভেদ ... *** ৮ তত ই০৩ তত 2৯৪ 
সংসারের ছুঃখময়ত্ব :*. তত 5৮১৮2২০৫2৮১ ১৭ 
সাঙ্যমতে ঈশ্বর স্থপ্টিকর্ত। নহেন ** তত ইতদ 5০১৩ 
বিবেকখ্যাতি ও মুক্তি বিষয়ে ছইএকটি কথা: ২০৯ ৮৮ ০০৮ ২৫ 


নবম লেকৃচর। 


পাতগ্রীলদর্শন |-_ 

পাতঞ্জলদর্শনের ভাষ্যকার *** ১ 2 তি ২১২ হি ১ 
বেদব্যাম ভাষ্যকার নহেন, এই আপত্তি ও তাহার 
ডিন: 25 85851 78৮74 4 
শাস্ত্রের কোন বিষয় অপ্রমাণ হইলে সম্পূর্ণ শান্ত 
অপ্রমাণ হয় কি না... ৮ ১১১ 5555১১৮১৩5০ ১৮ 
যোগদর্শনের মুখ্য ও গৌণ বিষয় ... ১. **৮ ২১৪ ০ ১০ ২৯ 
পতগলি... ৮ ১৮ ১ হি তিক ৯ 55 ইউনি ৩৩ হ৬ 
পাতগুলদর্শনের হৃতরসংখ্য। ও পাদ ব৷ পরিচ্ছেদ্- 

বিভাগ এবং তাহাদের প্রতিপাদ্য বিষয় *** ১৮ ২১৯ 2255৫ 
পাতগ্ুলদর্শনের গ্রন্থাবলী :'* 55225৮৮২২০5 তত 
হাতার? 2 55... 82 8 8. বর: 
উদর এর 7.8 8:.525.51.:48-58৮ ইত ০ 9748 
ক্লেশ, কর্ম, বিপাক ও আশয় ..১ ১০55২২১225৮ ই 


পুর্ববজনম 2 শি ৮৯ হস 27 $ ৪৪ ৬৪৫ ২২২ ও 8 ৩ 


২১২ ২ ০১ ২১ 


বিষয়। 
যোগের লক্ষণ ' 
চিন্ততৃমি বা চিত্তের অবস্থা 
যোগের প্রকারতেদী ৮ ০ 
বৃত্তির গ্রকারভেদ ... 
বৃত্তিনিরোধের উপায় 
চিত্প্রদাদের উপায় .. 


ক্রিয়াযোগ ... ৮ 95৮5, 
কারণের অবান্তর বিভাগ" 
পরিণাম... ... :১. তত 5 


ৃষ্ঠা। 


২২৩ 
২২৩ ** 
২২৪ ,, 


* ২২৪ 


১৪৪ ২৫ 
মোটর 2:85. 342.88০8 
যোগের অন্তরায় ও তাহার নিবারণের উপায় ... 
$ ২২৮ ৪8 


২৫ 
২৭ 


গংক্ি। 





কতিপয় আবশ্যক শবের সূচী । 





পি 

98 পৃষ্টা ৰ শব পঙ্গা। 
অ ূ অনুত্পত্তিনমা ১, ১০১ | ১৬৮, 

অকিষ্টবৃত্তি, অসম্প্রজ্ঞাত ... ২২৪ | অনুভব, অনুভূতি: ৮ ৯২৫ 
অঙ্গমেজয়ত্ব, অনবস্থিতত্ব, অলব্ধ- অনুমান ""'৮৯:১৩১,১৩৬,১৪ ৬,২২৪ 
ভূমিকত্, অবিরতি **৮ ২২৮ অন্থমিতি ৮ ৪20৮৯ 
অজ্ঞান, অগ্রতিভ! ১১০ ১৭১ অনুমিৎসা ... ৫ *০৭ ১৩৬ 
অতিব্যাপ্তি, অব্যাপ্তি ... ৪৪ | অন্থযোগিতা ২ তা ৯১ 
অতীতকাল 55১৬৪ অনুযোগী ১ হে ৮৯ 
অতীন্্রিয় .... .... ১০৬,১৩৪ ; অনৈকান্তিক ১৩৯, ১৬১, ১৬২ 
অতযান্তাভাব, অন্ঠোন্তাভাৰ ... ১৩০ ; অন্তঃকরণ, অন্তরিক্িয়া ১৯৯,১৯৬ 
অনৃষ্ঠ, অধন্দা ...  ... ১২৭ ; অন্ত্যাবয়বী ১৪৮ ০৯০৫ 
অধিক, অননুভাষণ, অপার্থক, অন্ধতামিত্্ ১০5 ২৭৩ 
অপ্রাপ্তকাল, অর্থান্তর, অন্থয়ী হেতু, অবয়ব, ... ১৫৭ 
অবিজ্ঞাতার্থ, ... ... ১৭১ । অপকর্ষসমা ১৮ ০০৮ ১৬৬ 
অধিকরণ... . .... ১০৮৯১ অপরাজাতি ১১ 7 ১২৮ 
অধিষ্ঠানশরীর ... ০ ই৯৯ অপরিগ্রহ '.. রা **, ইহ 
অধায়ন ... . ... ২০৩,২০৪) অপবর্গ ১৫৩ 
অধাবসায়.... *১* ১০১৮০ অপসিদ্ধান্ত ৪8৮ নর 
অধ্যাত্ববিষ্তা .... ০... ১১ অপেক্ষাবৃদ্ধি 22 ১২৩ 
অধ্যাস .. .... ২১১ ২৩ অপৌরুষেয় 1 2 ৮১ 
অনপদেশ, অপদেশ ১. ১৩৯ | অপ্রতীতার্থ ০ ৮১৫৪ 
অনারববিপাক .... ১১১ ২১১ অপ্রথা, অবিদ্তা ২ 2১২৫ 


অনিত্যসমা, অনুপলব্িঘমা ... ১৬৯ 1 অপ্রসিদ্ধ, অসন্‌ ... . ১৩৯, ১৬১ 
অনুত্তমান্তঃ ৮.০ ২০২ অগ্রাপ্তিমমা 12১৬৭ 


9/০ 


শকা। পৃষ্ঠ | 
অভাব ২২ ৯২৭৯ 
অভিনিবেশ ২০০১২২২ 
অভিমান, অহঙ্কারতত্ব  *** ১৯৬ 
অভিলাপ ... ১২৫)৯ম৭ 
অভ্যাস ২২৫ 
অমুতত্থ ৭২ 
অস্তঃ ২০২ 
অয়োগোলক "** ৯৪ 
অর্থ ২০৯৮ ১১৫১ 
অর্থাপত্তিসমা, অবিশেষসমা, 
অহেতুদমা .... ১৬৮ 
অলৌকিক ৮২ 
অলৌকিক সন্িকর্ষ .. ১৩৬ 
অবক্ষেপণ... ১২৮: 
অবচ্ছিন্ন **" ৯৪ 
অবচ্ছেদ্র ... ৯৪ 
অবশ্যসমা... ১৬৭ 
অবয়বার্থ ... ৪৩ 
অবয়বী ... ১৩৪ 
অবস্থাপরিণাম ২৩০১২৩১ 
অবাধিতত্ব, অসংপ্রতিপক্ষিতত্ব ১৬১ 
অবিদ্ধমানক্রিয় 8৭১৪৮ 
অবিদ্ধা ৬৪ 
অবিদ্তা, অশ্মিত! ২০৩,২২২ 
অবিশেষ "*, ১৯৯ 
অবৈদ্দিক ৪5 ৭৬ 
অবাক্ত ১৯৩ 
ফঅব্যপদেশ্ট ২৩০ 


শব | পৃষ্টা। 
অশক্তি ... রা 82 ডিও 
অশুর্লারুষ্ণ ২ ২২২,২২৩ 
অসদ্বাদ '*" ১,১৮৫ 
অনমবায়িকারণ *... ০ ১৩১ 
অসিদ্ধ ...  .... ০২,১৬৪ 
অন্তেয় :.... 5০ ২২৬ 
অহঙ্কার *** -**২৭১ ১৮৪, ১৯৬ 
অহিংসা .... .... ৮ ২২৫ 
আ 
আকাশ ...  .... ... ১০৮ 
আকুঞ্চন ... ৭ ১৯০ ১২৮ 
আক্ষেপের সমাধান ১৮ ৭৯ 
আগম **" রি ৪5 -ই$ 
আজানিক, আধুনি ১১:8৫ 
আতিবাহিক শরীর “২০০ 
আত্মমনন... পু ০ ৪5 
আত্মা ৮ ০০১০৯১১৫১ 
আত্যন্তিক ২২১ ২১১ 
আধার, আধেয়ত্ব '** ২ ৯১ 
আধ্যাত্মিক তৃষ্টি ... .*.. ২০২ 
আধ্যাতিরী বায়ু... ১০৬ 
আপ্ত ১৭ 2 ৮৪১১৫০ 
আগ্তোপদেশ *** ৮ ৬৯ 
আরম্ভক সংযোগ ""' ১১০ ১১৩ 
আলস্ত ... ও ৪৮ হি 
আলোচনজ্ঞান "* ৮৯ ১৯ 


আশয় "*" তন ** ই২৩ 


শব । 
আসন 
আস্তিক ... 
আহাধ্য "*" 
আহক 


ইন্দ্রিয় 
ইষ্ট, ইষ্টসাধন 


ঈ 


ঈশ্বর গ্রণিধান 


উতকর্ষসমা .. 
উৎক্ষেপণ ... 
উত্তমান্তঃ ... 


উদ্বাহরণ, উপনয় ... 


উদ্দেশ 
উদ্দোশস্থত্র '.. 
উদ্ভৃত রূপ... 
উপচারচ্ছল 
উপপতিসম। 
উপমান . 
উপলব্ধি ... 
উপলব্িসম 
উপাদান ... 
উপাদ্দানতুষ্টি 





১৯৮ 


১৯০১১১০২ 


" ১০৬,১০৭,৯৫১ 


২৮ 


২২৭,২২৮ 


১৬৬ 


১৩৩ 
১৬৫ 
৯৬৮১১৬৯ 
১৫৩ 
১৫১১১৫৪ 


১৬৭ 


২১১২৩১১৯৩ 


২৩২ 


| 
| 
ৰ 
ৃ 
ৰ 
। 


ূ 


| 


এক |, 


উপাদান প্রত্যক্ষ 


উপাদেয় ... 

উপাধি 
উপেক্ষানাত্মক নিশ্চয় 
উভয়তঃপাশা রজ্জু : 


উ 
নিন 
এ 
একাগ্র 
এঁকান্তিক 
ও 
ওঘ **. 
ওপাধিক .*, 
ক 
কঠিন স্পর্শ 
কথ! 
করণ 
কর্তী *, 


কন্ম, কর্ণত্বজাতি ... 


২০৩,২৪৪ 


২২৩,২২৪ 


১৩৯,২১১ 


২০২ 


১৬ ১৯২৩ 


১৬৩ 
১৩১ 

ত্৬ 
১২৭ 


1০ 


শব। পৃষ্ঠা। ৷ শব্দ। পৃষ্ঠা । 
কর্্মীববোধ 5 ৩ তব 
কাদাচিংক  *”  *” ১৪২ [ঘোরত্ব .. .... .. ১৯৪ 
কারণ .." 5৪৭ ১৩০, ২২৯ ঘ্বাণেন্দ্রিয় ... রি »০, ১০৬ 
কাধ্যসমা ... ৮, ১১১ ১৬৯ ০4৫ 
কাল ' 1 তং *১, ১০৯ 

ঠ 


কালতুষ্টি ... ."*১ ২০২,২০৩ 
কালাতীত ১০০৮০ ৯৬৪ | চক্ষুরিত্ত্িয় -- ১. ১০৮ 
কালাত্যয়াপদিষ্ট ...*  .,, ১৬৫ | চমতকার ..১. ১৮ ৮৮১৪ 
কটঙ্থ .... ,.. ... ১৮৫] চিকীর্ধা ৮. ০. ০১২৬ 
কতিপাধাত্বজ্ঞান ... ... ১২৬ | চিচ্ছায়াপত্তি 7 তি ই৭ 


কৃষ্কর্শী .... ১.০ ২২২ চিত্তভূমি .... ৮ ইইও 
কৈবল্য ... ...  ,.. ১৯৫ ] চেতনাশক্তির অনুগ্রহ" *** ১৮১ 





কোটি ... রা ১১৫৩ 


ক্রিয়াধোগ ০ 94 ছ্‌ 

কিষটবৃত্তি **- ১১২২৪ | ছল দু "** ১, ১৬৫ 
কেশ 2 2 ২২৯১২২২ পি 

ক্ষিপ্ত ... ২5০ ২২৩ জর 


জন্ম ৪. ১ *১১৫৩ 





গ জলত্ব, জলত্বজাতি ... . *'* ১০৭ 

গন্ধ 1 ০৯৪ '"" ১২২ । জল্প 2 রস "১৬০ 
গমকতা, গমকতৌপয়িক জাতি (করব)... ** ১৬৬ 
রূগ .. ""* ১৩৮,১৬১ | জাতি ( রী নত) 0. 988. অহ 


গমকতৌপয়িক-রূপ-শৃন্ত *১. ১৩৮ 
কনিগী, ০৪ ৮৮৭ ৮. উই 


জীবনযোনি যত ... ১২৬ 
জ্ঞান ১. ৬৫১৬৬,১০৩,১২৪১১৮০ 

খপ, গুপত্বগাতি .... ০: ১২২ | জানলক্ষণ সন্নিকর্ষ... ... ১৩৬ 

কত্ব ৮ ৮ ১২৬] আানসাধন, ০২155 ৯০২ 

.গৌণলিদ্ধি ২৮ ০৮ ২০৩ 

:শ্বৌনী ৫০ :১০০০0৮৮। শড উনি 


শব । পৃষ্টা 
ট 

টীকা... ৮ 
তি 

তত্ব ১৮৪ 

তত্বজ্ঞান, তত্বসাক্মাৎকার ''. ৯৮ 

তন্মাত্রস... ১৯৬ 

তিপঃ ২২৭ 

তমঃ, তামিস্ত্ ২০০ 

তর্ক ... ১৫৮ 

তর্কশান্ত্ ... ... ৪, পি 


তর্কী, ত্রিবেদবেত্া (তিন জন) ৩ 





তার ২০৩ 
তারতার ... ২০৩ 
তার-মন্দ-ভাব ১২০ 
তুষ্ট ২০১ 
তৃতীয় লিঙ্গপরামর্শ ১৩৭ 
তেজ, তেজন্ব, তেজন্বজাতি'.. ১০৭ 
তৈজস ... ১৯৬ 
ত্রপরেণু :. ১০৫ 
ত্বগিন্্িয় ... ৪... ১০৮ 
দৃ 
দান ৫ ২০৩, ২০৪ 
দিক "৭ ১, ১০৯ 
ছ্ঃখ ৮১১ ১৫৩১,১৭৪,২২৮ 
দৃষ্টান্ত ১৫৫ 


1//9 


শবা। 
দোষ 
দৌর্মনন্ত .. 

্রবত্ব 

রব্যত্ব, দ্রব্যত্বজাতি 
দ্রব্য বা দ্রব্যপদার্থ 
দ্বিতীয় লিঙ্গপরামর্শ 
দ্িষ্ট.  ... 
দিষ্টসাধন '.. * 
দ্বেষ 
দ্বাগুক 


ধর্ম 

ধর্মনিরূপণ, ধর্্মিনিবূপণ 
ধর্মপরিণাম 

ধর্মমেঘ সমাধি 
ধর্িগ্রাহক প্রমাণ-*' 
ধারণা, ধ্যান 

ধার্য 

ধবংসাভাব 

ধ্বনি 


নাস্তিক ... 
নিঃশরেরস 

নিগ্রহস্থান 
নিতাসমা.'' 


পৃষ্ঠা। 


১৫২ 
২২৮ 
১২৭ 


১০২ 


১৩৭ 
৮ 
২৮ 

২২ 


***৮৭)১২৭ 


৯২০ 
২৩০ 
২৪০২ 
১১০ 


১৯৮ 
১৩৪ 


১২৩ 


৭৫ 
৬৮ 
১৬৩৭ 


৯৬৮ 


শব্দ । ৃষ্ঠা। | 
নিদিধ্যাসন 2 
নিদ্রা ... ২২৪ 
নিমিত্তকারণ ১৩০,১৩১ 
নিয়ম ২২৭ 
নিরন্ুষোজ্যানুযোগ ১৭২ 
নিরর্থক, নান ১৭১ 
নিরৰদ্ভ *** ৭8 
নিরুদ্ধা **১ ১৮১ ২২৪ 
নিরূপাঁধিক ৩৫ 
নিরপা-নিরূপক-ভাব ' ৯১ 
নির্ণয় ১৬০ 
নিবিকল্পক ১২৪ 
নিবৃত্তি ১২৬ 
নোদন ... ১২৭ 
হ্যায়, নিগ্ন ১৫৭ 
প্‌ 
পক্ষ. ১৩৬, ১০৮ 
পক্ষতা ১৩৬ 
পক্ষপত্ব **" ১৩৮ 


গঞ্চভৃত, পৃথিবী, পৃথিবীত্ব ... ১ 
পর্চাগ্নিবিদ্যা 

পদচ্ছেদ, পদার্থোক্তি ৭৯ 
পরম অণুত্ব, পরম মহত্ব, পরিমাণ ১২৩ 


৩ 


১০২ 


গরিযাধু ১০৪ 
পরমাণুপু্ত ১৩৪,১৩৫ 
পরাজাতি ১২৮ 
১৪৯ 


পরার্থান্থমান 


পাপী শপ শশী শশা িাাাশ্পিশািীশীসিসীিটীিিাীশীীাীশীীশীীাীবাাাশীীাকীাশীীীাাীাশাীীশীীশ্াীা 


শব । পৃষ্টা । 
পরিকর্ধ্ম ... ২০ 
পরিণাম "*' ২৩০ 
পরিণামবাদ ১৮৬ 
পরিভাষা .. ৪৬ 
পরিষদ্‌ ৩ 
পরীক্ষক ... ১৫৫ 
পরীক্ষা ৪২,৪৩,৭৮ 
পরোক্ষ (অগ্রতাক্ষ ), প্রমিতি ৬৯ 
পর্যযনুযোজ্যোপেক্ষণ ১৭২ 
পাকজ স্পর্শ ১২৩ 
পার, পারাপার ২০১ 
পারিভাষিক ৪৬ 
পুনরুঞ্ত ... ১৭১ 
পুরুষতন্ত্র ... ২২ 
পুরুষার্থ .." ১** ১৮১৬৮ 
পূর্বববৎ ১৪৭ 
পৃথকৃত্ব ১২৩ 
পৌরুষেয় ... ৮১ 
পৌরুষেযবোধ ১৮১ 
প্রকটক্রিয় ৫৪ 
প্রকরণ ৮৯ 
প্রকরণন্ম ১৬২ 
প্রকরণসম! ১৯ ১৬৮ 
্রকল্াক্রিয়, প্রত্যক্ষক্রিয় ... ৪8৭ 
প্রকাশ ্‌ ১৯৮ 
প্রকৃতি, প্রধান ১৮৪ 
প্রকৃতিতুষট ২০২ 
প্রতিজ্ঞা ... ৮». ১৫৭ 


15/৩ 





শব | ৃষ্টা। : শব্দ । পৃষ্ঠা। 

প্রতিজ্ঞান্তর, প্রতিজ্ঞাবিরোধ. ১৭০: প্রাগভীব.... ১... ১২৯ 

প্রতিজ্ঞানন্ন্যাস ১৭০ প্রাপ্তিসমা,.. ১5০ ১৬৭ 

প্রতিজ্ঞাহানি ... ... ১৭০ । প্রারনধফল পর. 

প্রতিদৃষটান্তসমা, প্রসঙ্গমমা :.. ১৬৮ প্রেত্যভাব 2৮ 4৮ 

প্রতিযোগিতা 5০ ৯১ টিটি 

প্রতিযোগী *০* ২৮০৮৯ ফ 

প্রতাক্ষ ... ১১২৫১১৩১২২৪ 

প্রত্যক্ষ প্রম *-" ৮,১৪৫ রর ৯ ই 
 প্রতাক্ষপ্রমাণ ... ১৩১,১৪৫ ূ রা 

পরতযয়সর্স.... ,৯ ০. ১৯৬ | ব 

প্রত্যাদত্তি এ ১৫০ সুতিই বুদ্ধি *** * ০.৮ ১২৪১১৫১১১৮০ 

প্রত্যাহার, প্রাণায়াম. ... ২২৭: বুদ্ধিবৃতি, বুদ্ধিসত্ব, বোধ '- ১৮৪ 

প্রথম লিঙ্গপরামর্শ ,.*. ১৩৭ | ত্্বচরধ্য : ০০ ২২৬ 

পরমা * ১১. ১২৫১১৮০১১৮২ টিভির 


প্রমাণ ১৩১,১৪৫,১৮০১১৮২,২২৪ ভ 


প্রমাতা, প্রমাসাক্ষী ১১১৮২ ভগ্রক্ষত-সংরোহণ *৮ 55১০৬ 


০ 


প্রমাদ ৮১২২৮ ভাগাতুছি ১ 2 ২০২ 
প্রমেয় ১ 55৮১৫১। ভাবনা ১ রঃ ১১,১২৭ 
প্রমেয়নত্র' ০১৯৮1 ভাবনাচতু্টয় ১৭ ১৮ ২২৫ 
প্রমোদ .... 225 ২০৩ | ভাম্বর ১ 2৮১২২ 
প্রযত্ব ৭৯৯ 5:9৪ মা ২১ ভূত ৪৪৪ ৪৩৭ ৪৬১ ১০৩ 
প্রযোজক... ৮ ৮৮১৩৮ [ভূতাদ্দি 1 27১৯৬ 
প্রয়োজন ... *** ৮৮১৫৫ | ভে ১০ 2 *** ১৩০ 
প্রলয়প্রযোজক **..  .*, ১১৩ 1] ভোগকরণ, ভোগায়তন ... ১০৫ 
প্রবৃত্তি ৮ ১২৬১১৫২ ( ভোগপ্রযোজক ... ৮১১৩ 
প্রবৃত্তিনিমিত্ত *.৯ "8৫ | ভোগধাধন রঃ ** ১০৫ 
গ্রমারণ ** ৮৪০ »* ১২৮ ভ্রান্তিদর্শন রি ১১ ২২৮ 


প্রস্থানভেদ 5. ৫ রাত 


0০ 
শবদ। ৃষ্টা। | শব্দ! পৃষ্ঠ 1 
রজোবিশাল .... ..৮ ১৮: 


মাক: ১ 2. ক ইনি 


মন তত? ৪ ১০৯,১৫১ 
মনন চি রি ৮০১০১ 
মননশাস্ত্র '.. '** ০....৭০ 
মমকার ... ১৪ ১ ২৫ 
মরণ... -** ক, চিক 


বস. এ 28 
রসনা : 2 ০০১০৭ 
বগি: .:8 এ কঃ 
ঢু ২৪ "** ১৭:8৩ 
রূডযৌগ্নিক টড টি এ 
রী 2 82 হু 


ৰ 
ূ 
মতানুজ্ঞা .... .... ১১ ১৭২ 


মহত্ত্ব ০, ১১৮6 ০2১৯৬ 
মহামোহ, মোহ *** 82 
মহাবয়বী... ... এরি 
মহাব্রত ... ১১ ২২৬ 
মিথ্যাজ্ঞান ৪০, 2. 2৫ 
মুখাসিদ্ি, যুদিত, মোদমান '*. ২০৩ ল 
মূ (চিত্ততুমি) ..... 7 ২২৩ | লক্ষণ 1 তি তত ৭৮ 
মূঢত্ব মূঢ়াত্ বক *** ০ ১৯৯ | লক্ষণপরিপাম "০৮ ২৩০ 
মূর্ত ৮18 এ, হাক ৯. ১১ ৭৬ 
মূলগ্রকৃতি.... : ৮১৮৪ লিঙ্গ... 1 ৮ 2১৩৬ 
২ লিঙ্গশরীর.... ৭ ১৭৪,১৯৯ 
লিঙ্গী *" নু ১,১৪৬ 
যত্ন 4 8 ০ উহ ১, ৮২ কীনা 
যম, যোগের অঙ্গ .. ২২৫ 
লৌকিক ... রর ১১১৫৫ 
যাবদদব্যভাবী 8 428--8উ চি দা 
যোগ ১, *** ১, ২২৩ ৃ 
ঘোগজ .১১ * ১০ ১৩৬ 
যোগজ ধর্ম দর 48. 28 ব 
 যোগরঢ় ..১. ১১8৬ বর্ণ ৮: . ৬, “উন, 
ধোগার্থ ... ... ১১০৫৩ বর্ণনমা ... ২১১৬৬) ১৬৭ 
আীদিক ... ০:০০ 9৩ [ বাবরি .......:০০ ২৯ 
যৌগিকরঢ .... .. ৪৬; বলবদ্ি্ট... .১৮ ০8 ২৯ 


| 
1 
1 
| সপ 





শব 

বস্তৃতন্ত্, বিধিপরতন্ 
'বহিঃকরণ, বহিবিন্দিয় 
বাঁকৃছুল- ... 
বাকাযোজন। 

বাদ 

বাণ্তিক 

বায়ু 

বাহাকরণ ... 
বাহাতুষ্টি ... 
বিকল্প:*. 
বিকল্পমম! .. 
বিকারবাদ, বিবর্তবাঁদ 
বিকৃতি .. 
বিক্ষিপ্ত *.. 
বিক্ষেগ 

বিগ্রহ 

বিচারশাস্ত্র 
বিজ্ঞান "*' 
বিতণ্ 
বিদেহমুক্তি 

বিদ্যা 

বিপক্ষ 

বিপক্ষাসত্ব 
বিপর্যয় ... 
বিপধ্যাস ... 
বিপাক 
বিপ্রতিপত্তি 
বিভাগ 


॥/* 


পৃষ্ঠা । | শব্দ । 

২২ বিভাগ (গুণ) 
১০৯ | বিভূ... **। 
১৬৫ | বিভূতি 

৭৯ | বিরুদ্ধ 
১৬০ | বিশিষ্টজ্ঞান 

৮০ র বিশেষ 
১০৮ | বিশেষগ্তণ."। 
১৯৭ বিষয় '** * 


২০২ ; বিমদৃশ পরিণাম ০... 


৮৩, ১২৪, ২২৪ ; বীচিতরঙ্গন্তায় 
১৬৭ বৃত্তি ... 
১৮৬; বৃত্তি, বৃত্তি 

১৮৪, ১৮৫ । বৃত্তি (গ্রন্থ) 
২২৩: বৃত্তিনিরোধ 
১৭১ । বৃত্তিলাভ .. 
৭৯ । বৃষ্টি 

৪ ৷ বেগ 

৬৬ ৷ বৈকারিক 
১৬০ : বৈদিক দর্শন 
৩৩ | বৈধর্ম্য 

১২৫ | বৈধর্দ্যসমা 
১৩৮ | বৈরাগা .. 
১৩৮ । ব্যতিরেকী হেতু 

২০০, ২২৪ | ব্যপদেশ ... 
১২৫ ব্যভিচার **, 
২২৩! ব্যাখা। 

১৫৪ ; ব্যাধি 
৭৮,১২৪ ব্যাপক, ব্যাপ্য 


পৃষ্ঠা। 


১২৩) ১২৪ 
২৪ 

২৩ 

১৪০) ১৬২ 
১১৪ 


১২৮, ১৯৯ 


১৪৮ 
১৮০ 
৯১ 
, ৭৯১৮০ 
১১২ 
১১৩ 


৫৫ 
৮৯, ১৬২ 
** ৭৯ 
২২৭, ২২৮ 

৯৫ 


শক। পৃষ্ঠা | 
ব্যাপার ১৩১ 
ব্যাপ্তি .১১ 2 ৯৮৯ 
ব্যাপ্যত্বাসিদ্ক ১৩৯ 
ব্ুৎগত্তিনিমিত্ত ৪৫ 
বঙ্গ, ৪৭ 
শ্‌ 
শক্তি , * ১৯১ ২০১ ৪৫ 
শব " ১৪৮,৪১২৩) ২০৩, ২০৪ 
শা প্রমাণ... ন্‌ 
শরীর ১৫১ 
শাস্তত্ব 1 ৮ ০৮১৯৯ 
গুরুকৃষণ বর্ণ, গুরুকর্ধ ২২৩ 
গুফতক গণ 
শেষবৎ **১ ১০১৪৭ 
শোচ হর 
শ্রবণ ২০৩ 
শ্রবণেন্দিয়-. ১৯৮ 
+ 

খ্যা ১২৩ 
ঘাত ২৩, ১৯৪ 
সযোগ .... ১.৮ ৯২১ ১২৩ 
সংশয় ১২৫, ১৫৩, ২২৮ 
সংশয়সমা ১৬৮ 
সংসর্গাধ্যাস এ 
 সংর্সাভাব "1 ০১১২৯ 
ৃ সংস্থার রি ১২৭ 


শবা। 
সংহত 
সঙ্কলা :৮ ১০ তং 
সন্কেতে ... 
সন্কেতযুক্ত... 
সঞ্ভিহীর্যা .... **, 
সতকার্ধ। বাদ রা 
ঘত্তাজাতি... 
সত্বমুদ্রেক ভি, 9 
সংগ্রাতিপক্ষ 

সতা .. 

সত্বষ্তদ্ধি .... ১ ২, 
মদামুদিত .*. 

সদৃশ পরিণাম ... 
সন্তোষ :** **, 
সন্দিগ্ধ 

স্নিকর্ষ, সন্বন্ধা ... 
সপক্ষ 
সপক্ষদত্্ ... 
মমবায় 
মমবায়িকারণ 
সমাধি 
মমাধিযোগ 
মন্প্রজ্ঞাত '.' 
সলিল ... 
মবিকল্পক ... রর 
ব্যভিচার 8 
সাক্ষাৎকার রি 


৪২ 


সঙ্গী :... ২, 


ৃষ্ঠা। 


১৯৪ 
১৯৩ 


ৃ ৪৫. 


8৩ 
১১২ 
১৮৭ 
১২৮ 
১৮৬ 


১৬৩ 


৭২ 
২০৩ 
১৯৪ 
২২৭ 
১৩৯ 
১৩২ 
১৩৮ 
১৩৮ 
১২৪৯ 


১৩৩ 


শব । পৃষ্ঠা । 
সাধ্য... ১০৯৮ 
সাধঙ্মামম| জাতি ... ১৬৩ 
গাধা] 1 22৯১ 
সাধ্য তা, মাধাতাবচ্ছেদক ধর্ম, 
সাধ্যতাবচ্ছেদক মধ্বন্ধ, সাধ্যা- 
ভাব ... 5. 2: এ 
গাধ্ামম ... ১৬৩ 
সাধ্যসমা "* ১৬৭ 
সামান্তচ্ছন ১৬৫ 
সামা্ততোদৃষ্ট ১৪৬) ১৪৭, ১৪৯ 
সামান্ত বাজাতি * ১২৮ 
সিদ্ধান্ত ১৫৫ 
দিদ্ধি ১৩৬) ২০৩ 
সিষাধস্িষা..' ১৩৬ 
'লিস্ক্ষা ... ১১৩ 
সুতার ২০৩ 
সুপার ২০১ 
সুহৃংগ্রাপ্তি ২০৩, ২৪৪ 


স্পর্শ, স্বুকুম 
শৃৃতি বা স্বরণ 


1৬০ 


| শব্। 


হঙ্মশরীর, স্ুলশরীর 


নর 


সতের 
স্তান 


ধোপাধিক 


স্থালীগুলাকন্া 


স্থিতিস্থাপক 
শ্নেহে *' 


স্তনান 


হতে 
হেত্ৃম্তর :* 
হেত্বাভাম 


র 


শ্বাধ্যায় 


রশ. 


পৃষ্ঠা । 
«১৪৭ 
৭৯ 

রঃ 

২২৬ 

২২৮ 

৮২ 

১২৭ 

১০৭ 

১২২, ১২৩ 
১২৫, ২২৫ 
১২৭ 

২২৭ 


৯১) ১৫৭ 
১৭১ 
১৩৯) ১৬১ 


লেকৃচরে উল্লিখিত গ্রন্থ ও গ্রন্থকারের নাম। 


অক্ষপাদ 
অক্ষপাদদর্শন 
অথর্ববেদ 
অদ্বৈত সিদ্ধি 
অধিকরণমালা 
অধবরমীমাংসা 
অনন্তদ্দেব 
অমরপিংহ 
অনদ্বাদী 


আত্মতত্ববিবেক 


আন্বীক্ষিকী 
আপস্তম্ব 
আরম্তবাদী 
আহতদর্শন 
আল্লোপনিষৎ 
আস্ুরি 


ঈশ্বরকৃষ 


উপাদ্ি প্রকরণ 
উত্তরমীমাংসা 
উদয়নাচার্যয 
উদ্ভট 
উদ্মোতকর 


ওলুক্য দর্শন 


কণাদ 

কণাদদর্শন 
কণাদস্ত্রবিবৃতি 
কপিল 
কর্ম্মীমাংসা 
কলাপচন্দ্র 
কাতন্ত্রপঞ্জিকা 
কাত্যায়ন 
কাদন্বরীটাক। 
কামধেনু 
কালিদাস 
কাব্যপ্রকাশ 
কাশ্মীরের ইতিহাস 
কিরণাবলী 
কিরণাবলীপ্রকাশ 
কিরণাবলীরহস্য 
কুন্ুকভট্ট 


খণ্ডনথগখা্থয 
গঙেশোপাধ্যায় 


গার্গ্য 
গোতম বা গৌতম 


গোঁপীনাথ তর্কাচার্্য 
গৌড়পান্দীচার্য্য 
গোঁড়ত্রহ্মানন্দী 


চন্্রশেখর বাচম্পতি 
চার্বাক 

চার্বা কাঁদর্শন 
চিৎসুখন্বামী 


ছান্দোগ্যোপনিষৎ 
ছান্দোগ্যোপনিষস্ভাষ্ 


জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন 
জয়স্তভতট্র 

জাবাল 

জৈমিনি 


তত্বচিন্তামণি 
তত্বপ্রদীপিক। 
তত্ববৈশারদী 
তত্বসমাস 

তন্ত্রবার্তিক 

তর্কশান্ 

তাজিক 

তাকিক 


ভ্রিকাগমণ্ডন 
ত্রিকাগুমণ্ডনটীকা 
ভ্রিলোচন দান 


নকুশীশপাগ্ুপতদর্শন 


নব্ন্ঠায় 

নিরীশ্বর সাংখ্যদর্শন 
নিরুক্ত 
নিরুক্তীচার্যয 
নৈয়ায়িক 
হ্তায়কন্দলী  ' 
স্তায়কুমুমাঞ্জলি 
স্তায়দর্শন 
হ্যায়ভাম্ 
হ্যায়তাষ্াকার . 
স্কায়মঞ্জরী 
হ্যায়লীলাবতী 
ন্যায়বান্তিক 


ন্তায়বার্তিকতাঁৎপর্ধ্যটীক' 
স্তায়বার্তিকতাৎপর্যাপরি শুদ্ধি 


ম্যায়বিস্1 
হ্যায়্চীনিবন্ধ 
স্তায়াচার্য্য 


পঞ্চদশী 

পঞ্চশিখাচার্ষ্য 
পঞ্জিকা! 

_ পতগ্রলি 

 পদার্ঘধর্ংগ্রহ 


8/০ 


পরিশিষ্ট প্রবোঁধ 
পাণিনি 
পাণিনিদর্শন 
পাতঞ্জলদর্শন 
পাতঞ্জলতাষ্য 
পারমীকপ্রকাশ 
পারসীগ্রকাশ 
পুষ্পরদস্ত 
পূর্ণপ্রজ্ঞনর্শন 
পূর্বমীমাংসা 
প্রতাঙিজ্ঞাদর্শন 
প্রবচনভাদ্য 
প্রশস্তপাদাচাধ্য 


ফণিভান্ 


বলদেব বিস্তাভূষণ 
বৃহদারণ্যকোপনিষং 
বৌদ্ধ 

বৌদ্ধদর্শন 
্রঙ্মমীমাংসা 
ব্রহ্ধানন্দ 


ভগবদগীতা 
ভট্ 
ত্টবার্তিক 
ভাশ্চন্র 
তামতী 
তাধাপরিচ্ছে্‌ 


ভাষ্যকার 
ভোঁজদেব 


মথুরানাঁথতর্কবাগীশ 
মধুস্ছদন দরশ্বতী 
মনুসংহিতা 
মহাভারত 
মাধবাচা্য 
মীমাংসক 
মীমাংসাদর্শন 
মীমাংসাতাত্য 
মীমাংসাভাম্বকার 
মেধাতিথি 
মেরুত্স্ত্র 
মোক্ষধর্ম 


যাজ্ঞবন্াসংহিত। 
যাস্ক 

যোগদর্শন 
যোগবার্তিক 
যোগবিবৃতি 


স্পস্ট 


রঘুনন্দনতট্াচার্য্য 
রথুনাথশিরোমণি 
রত্বগ্রভা 
রষেশ্বরদর্শন 
রামকৃষ্ণ 
রামান্ুজদর্শন 
রামাস্থ্স্বামী 





/ রাবণ 
| রাবণভাস্ত 





1 লীলাবতী প্রকাশ 
' লীলাবতীরহদা 
 বর্ধমানোপাধ্যায় 
বল্পভাচার্ধ্য 
বাঁচ্পতি মিশ্র 
বাৎস্যায়ন 
বার্ষগণ্য 
বিজ্ঞানভিক্ষ 
বিগ্ভাপতি 
বিবর্তবাদী 
বিশ্বনাথ কবিরাজ 
বিহারী কৃঞ্ণদাস 
বৃত্বিকার, 

বেদ 

বেদব্যাস 
ব্দোঙ্গরায় 
বেদাস্তকল্পতরু 


৬/০ 


বেদান্তদর্শন 
বৈদাস্তিক 

বৈশেষিক 
বৈশেধিকদর্শন 
বৈশেষি কবার্ধিক 
বৈশেধিকহৃত্রোপস্কার 
ব্যাকরণ 
ব্যাকরণমহাভাস্য 
ব্যাখ্যাকার 


শঙ্করমিশ্র 

শঙ্করা চার্য্য 
শবশক্তি প্রকাশিক। 
শাকটায়ন 
শাট্যায়নিত্রাঙ্গণ 
শারীরকভাম্ব 
শারীরকমীমাংসা 
শাবরভাব্য 
শেষনাগ 
শৈবদর্শন 
শ্রীধরাচার্ধ্য 


্রীহর্ষ 


শ্রুতি 


সর্বদর্শনসংগ্রহ 
সাংখ্য 

সাংখ্য কারিক। 
নাংখাকারিকাভা ঘ্য 
সাংখ্যতত্বকৌমুদী 
সাংখ্যদর্শন 

সাংখা প্রবচন 
সাংখাভাষ্য 
সাংখ্যসার 
সাহিত্যদর্পণ 
সিদ্ধচন্্ 
সিদ্ধাত্তমুক্তাবলী 
ুষেণবিষ্তাভূষণ 
মৌভাগ্যকা্ড 
স্থৌলাঠীবী 
স্থতিকার 
শ্মৃতিতত্ব 


হাফেজ 


শুদ্ধিপত্র। 


পৃ্ঠা। গংকি।  অষ্ুদ্ধ। শুদধ। 
১৫৭ ১৬. পক্ষে মাধ্ের পক্ষের 
২০৩ ২৫. মদামুদ্রিত মদামুদিত 





প্রথম লেকৃচর। 


শশা পাস্পি্জযা 





উপক্রমণিকা। * 


পূর্বকালে এতদেশে দর্শনশান্সাদির যেরূপ চর্চা "ছল, বর্তমানকালে 
তাহা নাই (১)। হিন্দুরাজাদের সময়ে শাস্ত্রের অন্ুশাসনক্রমে সমাজ 
পরিচালিত হইত । হিন্দুজাতি ধর্ম প্রধান। হিন্দুরা বিবেচনা করেন যে, 
কেবল ভোগের জন্য নহে, প্রধানত ধর্দসাধনের জন্তই তাহার! জন্ম- 
পরিগ্রহ করেন। তাহাদের জন্ম হইতে মৃত্যু পর্য্যস্ত প্রায় সমস্ত কাঁধ্যই 
ধন্মান্ুগত। তৎ্কালের লোকপকল ধর্মপ্রাণ ছিলেন, তাহারা ধর্মরক্ষার 


শপ ০ পপ 


(১) কেহ কেহ বলেন যে, গৌড় বা বঙ্গদেশে কেবল চ্যায়দর্শনেরই চ্চা ছিল, 
সাংখা-বেদান্ত প্রভৃতি অন্তান্ত দর্শনের চচ্চ। বঙ্গদেশে কখনও ছিল না। ইহা! সত্য নহে। 
গৌড়দেশীয় মধুশ্দন সরস্বতী, ব্রন্মানন্দ ও বলদেববিদ্যাতৃষণ প্রভৃতি গ্রস্থকারগণ 
বেদাস্তদর্শনের উৎকৃষ্ট গ্রন্থ রচনা করিয়! গিয়াছেন। এ সকল গ্রন্থ অন্যাপি বিদ্যমান 
রহিয়াছে। ব্রন্ধানন্দকৃত অদ্বৈতনিদ্ধির টাক। 'গৌড়রদ্ধানন্দী' বলিয্লা খ্যাত। রঘুনাথ- 
শিরোমণি প্রভৃতি নৈয়াকিক শ্রস্থকারগণ নিজ নিজ গ্রন্থে শীমাংসা, বেদান্ত ও সাংখ্যাদি 
দর্শনের মত তুলিয়াছেন এবং থণ্ডন করিয়াছেন। সাহিতাদর্পণকার বিশ্বনাথকবিরাজ 
নিজগ্রন্থে বেদাস্তমত তুলিয্লাছেন। বিখ্যাত স্বার্থ মহামহোপাধ্যায় রঘুনন্ননভ্টাচার্ধ্য 
্বতিতন্বে মীমাংসাভাধ্য, শারীরকভাবা], অধিকরণমাল।, বেদাস্তের ভামতী, সাংখ্যতত্ব- 
কৌমুদ্রী এবং তন্তবার্তিকের পংক্তি তুলিয়াছেন, বেদাত্তকপ্জতরুরর উল্লেখ করিয়াছেন, 
পাতঞলদূর্শনের স্থত্র তুলিয়াছেন, মীমাংসাদর্শনের অনেক সুত্র উদ্ধত করিকাছেন। 
চ্রশেখরবাচম্পতি ও রামকৃফ মীমাংসা দর্শনের প্রস্থ রচন] করিস্কছেন। কাতন্্ব্যাকরণের 
পঞ্জিকা্রন্থে ব্রিলোচনজান, কলাপচন্রে ধা এবং. পািউটববোধে 
গোীনাধতর্কাচার্য্য সাংখ্যাদি-দর্শনের মত তুলিয়াছেন। ' ৪ 


ঃ প্রথম লেফ্চর। 


জন্ত সর্বদা উদ্যুক্ত থাকিতেন। ধর্মের জন্য তাহাদের কিছুই অদেয় বা 
অকর্তৃব্য ছিল না। ধর্ম্মের জন্য জীবন বিসর্জন করিতেও তাহারা কুষ্ঠিত 
হইতেন না, ধর্মের কোনোরূপ ক্ষতিকেও অত্যন্ত ভয় করিতেন। 
অধ্যয়ন, তাহাদের ধর্মকর্মমধ্যে পরিগণিত ও অব্্তকর্তব্য (১)। 
বেদাধায়ন ব্রান্ষণের উৎকষ্টতপন্তারূপে কীর্ভিত হইয়াছে (২)। ধর্মজ্ঞান 
বেদাধ্যয়নসাধ্য (৩)। স্ৃতরাং বেদের অক্ষরগ্রহণমাত্র হইলেই অধ্যয়ন 
পূর্ণতাপ্রাপ্ত হইত না । অর্থজ্ঞানেরও আবপ্তকতা ছিল। বেদের অর্থজানীর | 
প্রশংনা এবং অর্থজ্ঞানবিহীনের নিন্দা শাস্ত্রে দেখিতে পাওয়া যায় ( ৪ রঃ | 


(১) “তপোবিশেধৈ িবিধৈর্রতৈশ্চ বিধিদেশিতৈঃ | 
বেদঃ কৃৎন্্োহধিগন্তব্যঃ সরহন্তে। ছিজন্মনা ॥'-( মন্ুনংহিতা ২। ১৬৫ )। 
বহপ্রকার তপস্তাৰিশেষ ও শাস্ত্রোক্ত নানাবিধ ব্রত আচরণপূর্বক দ্বিজ্গাতিগণ 
উপনিষৎ এবং বেদাঙ্গের সহিত বেদ অধ্যয়ন করিবে। 
'্বাধ্যায়োহধ্যেতবাঃ' ।-_রত্বপ্রভাপ্রভৃতিধৃতক্রতি | 
বেদ অধ্যয়ন করিবে। এই বিধি নিত্য । 
(২) “বেদমেব সদাভ্যন্তেৎ তপস্তগ্নান্‌ ছ্বিজোত্তমঃ। 
বেদাভ্যাসে হি বিপ্রস্ত তপঃ পরমিহোচ্যতে ॥-( মনুসংহিতা ২। ১৬৬)। 
তপস্তাকরণেচ্ছক ্রান্মণ সর্ববদা বেদাভ্যাস করিবেন। কেন না, বেদাভ্যাস ব্রাহ্মণের 
সম্বন্ধে উৎকৃষ্ট তপস্তা| বলিয়া কথিত। 
“আ। হৈব ম নথাগ্রেভ্যঃ পরমং তপ্যতে তপঃ। 
যঃ অথ্থাপি দ্বিজোহধীতে শ্বাধ্যায়ং শক্তিতোহম্বহম্‌ ॥'-(মনুসংহিতা ২। ১৬৭)। 
যিনি পুপ্পগালা ধারণ করিয়াও অর্থাৎ ব্রক্মঠারীর নিয়ম না করিয়াও প্রত্যহ 
যথাশক্তি বেদাধ্যয়ন করেন, তিনি নথাগ্রপর্য্যন্ত অর্থাৎ সমস্তশরীরব্যাপক শ্রেষ্ঠ তপক্ত। 
করেন। 
(৩) 'ৃষ্টো হি তন্তার্ঘ; কর্মীববোধনং নাম।”-( মীমাংসাভাষ্য ১। ১। ১)। 
কর্টের অববোধ বেদা ধ্যয়নের দৃষ্ট প্রয়োজন । 
(৪) 'স্থাগুরয়ং ভারহারঃ কিলাভুদধীত্য বেদং ন বিজানাতি যোহর্থম্‌। 
যোহ্রধজ্ঞ ইৎ দকলং ভদ্্রমশুতে নাকমেতি ভ্ঞানবিধুতপাপম| ॥--(নিরুজ্ ১1৬1২)। 
ঘে বেদ অধ্যয়ন করিয়! তাহার অর্থ জানে না, সে গর্দভের স্াঁয় ভারবহ মান্্। 
যি অর্থ জানেন, তিনিই সম্পূর্ণ মঙ্গল প্রাপ্ত হন,__অর্থজান-্বারা পাপ বিনষ্ট 
বরিয়। নক ন্বর্থাং ঘর্গে গমন করেন। | 


উপক্রমণিক1। ৩ 


অর্থজ্ঞান ন! থাকিলেও মন্ত্রাদির উচ্চারণে অদৃষ্ট ব! পুণ্য হয় বটে, (১) 
কিন্তু কর্মাববোৌধ বা ধর্মজ্ঞান বেদের অর্থজ্ঞান ভিন্ন হইতেই পারে না। 
অর্থ জানিতে হইলেই আপাতত বিরুদ্ধার্থকরূপে প্রতীয়মান বাকাযনসকলের 
মীমাংসা আবশ্যক হয়। দর্শনশান্ত্র ভিন্ন মীমাংসার অন্য উপায় নাই। মনু 
ৰলিয়াছেন যে, বেদ ও স্মৃত্যাদি শাস্ত্র বেদশান্ত্রের অবিরোধী তর্কের 
দ্বার যিনি বিচার করেন, তিনিই ধর্ম জানিতে পারেন, তর্কানভিজ্ঞ 
ব্যক্তি ধর্ম জানিতে পারেন না (২)। তিনি আরও বলেন, ধিনি বিশুদ্ধ 
ধর্ম জানিতে ইচ্ছ। করেন, তিনি প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শাস্ত্র উত্তমরূপে 
জানিবেন (৩)। ধর্মতত্বনিরূপণের জন্য পরিষদের , আবশ্তকতা৷ শাস্ত্রে 
বধিত আছে। ত্রিবেদবেত্তা, হৈতুক অর্থাৎ অনুমানাদিকুশল, তর্কী 
অর্থাৎ উহাপোহক্গমনুদ্ধিযুক্ত, নিরুক্তাভিজঞ, ধর্মশাস্ত্াধ্েতা, ব্রহ্মচারী, 
গৃহস্থ ও বানপ্রস্থ, এই দশ বাক্তি দ্বারা পরিষৎ গঠিত হয় (9)। 
জৈমিনিকৃত মীমাংসাদর্শনের সর্বপ্রথম অধি করণেই (€) সিদ্ধান্ত কর! 





(১) “বদ্বাহধ্যয়নসংনিদ্ধবিজ্ঞানরহিতোইপি সন্‌। 
নাতীবাধিক্রিয়া শুন্ঠে! ভর্তৃষজ্ঞাদিদর্শনীৎ|'_-(ত্রিকাগুমণ্ডন ১। ৪১)। 
'অর্থজ্ঞানাভাবে কর্ম্গ্যধিকারো নাস্তীতি বত্ং ন যুক্তমূ।'_-(ত্রিকাওসণনটাকা)। 
(২) “আর্য ধর্শোগদেশঞ্চ বেদশাস্ত্রীবিরোধিনা। 
যন্তকেণান্ুসন্ধত্তে স ধর্মং বেদ নেতরঃ॥'--( মনুসংহিতা ১২। ১০৬)। 
(৩)  প্রত্যক্ষমনুমানঞ শান্ত্র্চ বিবিধাগমমূ। 
ত্রয়ং সববিদিতং'কার্যাং ধর্মশুদ্ধিভীদ্মতা ॥'_( মন্থসংহিতা ১২। ১৯৫)। 
(8)  “ত্রৈবিদো। হৈতুকস্তকাঁ নৈরুক্তো ধর্মপাঠক1 
্রয়শ্টাশ্রমিণঃ পুর্বে পরিষৎ স্তাদ্দশাবর] ॥--( মনুসংহিতী ১২। ১১১)। 
(৫) গঞ্চাঙ্গবিচার এবং তত্প্রতিপাদদক গ্রস্থীংশের মাম 'অধিকরণ' | বিচারের প। 
অঙ্গ এরই 
“বিষয়ে! বিশয়শ্চৈব পুর্ববপক্ষস্তখোত্বরমূ। 
নির্ঘয়শ্চেতি পঞ্চাঙ্গং শান্ত্রেযধিকরণং মতম্‌ ॥'--( তট্টবার্তিক )। 
. বিষয়'--বিচারযোগ্য বাক্য। অর্থাৎ ষে বাকোর অর্থ বিবেচিত হয়, তাহার নাম 
বিৎয়। “বিশয়'সংশয়। অর্থাৎ এই বাক্যের এই অর্থ কি অস্ত অর্থ--এইরাপ সংশয়ের 
মাম বিশয়'। বন্তগত্যা বাক্যের যে. অর্থ, তথিরদ্ধ অর্থ সমর্থন করিবান জন্য যে 


৪ প্রথম লেক্চর। 


আছে থে, বেদাধ্যয়ন মম্পূর্ণ হইলেই শিশ্যা গুরুকুল হইতে প্রত্যাবৃত্ত 
হইবে না। বেদাধ্যয়নের পর বেদবাক্যবিচার দ্বারা ধর্শতত্ব অবগত 
হইবার জন্য গুরুকুলে বাদপুর্রবক বিচারশান্ত্র (মীমাংসাদি-দর্শন ) অধ্যতন 
করিবে। তৎপরে গুরুফুল হইতে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া গৃহস্থাশ্রমে প্রবেশ 
করিবার নিয়ম (১)। এতদ্বারা প্রতিপন্ন হইতেছে যে, পূর্বকালে 
বেদের গ্যায় দর্শনশান্বও অবস্ত অধ্যেতব্য বলিয়া! পরিগণিত ছিল। 

ূর্ববকালের ব্রাঙ্মণগণ ক্ষণিক বৈষয়িক ন্তুখকে সুখ বলিয়াই গণ্য 
করিতেন না,-তাফে ছুঃখেরই প্রকারভেদ বলিয়া বিবেচন1 করিতেন(২)।. 
এমন কি পারলৌকিক স্ুখও বিনাশী বলিয়! তাহাতেও তাহার! পরিতৃপ্ত 
হইতে পারিতেন ন1, ইন্দ্রপদেরও কামনা করিতেন না, সুখছুঃখের বন্ধন, 
ছিন্ন করিয়! ুক্তিলাত করাই তাহাদের প্রধান উদ্দেশ্ত ছিল। ভৌগ- 
বাসন] তাহাদের ত্রিসীমা স্পর্শ করিতে-পারিত না। দেহধারপণোপষোগী 
সামান্ত ভোগেই তাহার! পরিতৃপ্ত থাকিতেন। 

আত্মসাক্ষাৎকার “পরমধর্” বলিয়া! শাস্ত্রে কীর্তিত আছে (৩)। 
দর্শনশান্্র আত্মসাক্ষাৎকারের সোপান নির্দেশ করিয়া দেয়। বাহার! 
ধর্মের জন্য অধ্যয়ন করিতেন, পরমধন্মের ( আত্মশাক্ষাৎকারের ) 
উপযোগী দর্শনশান্ত্র ষে তাহারা মনোযোগপূর্বক অধ্যয়ন করিতেন, 
এ কথ প্রমাণ করিবার চেষ্টা! অনাবশ্তাক। খধিগণ অধ্যাত্মবিষ্ভার বিশেষ 
আদর করিতেন বলিয়া তাহাদের প্রণীত দর্শনগুলি অধ্যাত্মবিস্তায় 
পরিপূর্ণ। কেবল প্রস্থানভেদ রক্ষা কন্দিবার জন্ট ভিন্ন ভিন্ন দর্শনে 
গ্রসন্বক্রমে নানাধিক-পরিমাণে ভৌতিকাদি পদার্থের আলোচনা! আছে 





তর্কের উপন্তাস কর! হয়, তাহার নাম 'পূর্বপক্ষ”। সিদ্ধান্তের অনুকূল তর্কের গছ 
নাম "উত্তর । বাক্যের তাৎপর্য্যার্থনিশ্চয়ের নাম 'নির্ঘয়' । 

(১) 'অধাতো ধর্দমজিজ্ঞাস]।--( মীমাংসাদর্শন+১৯ শুত্র )। 
'গুরুকুলান্মাসমাবর্তি্ট কথং হু বেদবাক্যাদি তিচারগেদিত্যেবমর্থোইয়মুপেশঃ | 
ঈসা থেদমধীত্য রি নক্সাতঘ্যম্‌ অনস্তয়ং ধর্মে! জিজ্ঞাসিতব্যঃ 1 শোবরভাঁা) 1 

(২) ১ ছিংখবিকযে হুখাভিমানাচ্চ।-(ভায়দর্শন ৪1১৫৪): 
-" (৩) য়ন্ত পরো ধর্ধে। বদ্বাগেদাকমার্শসদ।-( বাজবধ্যামংহিভা)। : : 


উপক্রমণিক!। ৫ 


১)। প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় দর্শনগুলিকে 'অধ্যান্মদর্শনঃ বলিলে অত্যুক্তি 
হয় না। লোকের রুচি ভিন্ন ভিন্ন, এইজস্ঠ দয়ালু মহর্ষিগণ ভির তির 
প্রস্থান অবলম্বন করিয়া! দর্শনমকল প্রণয়ন করিয়াছেন । প্রস্থান ভিন্ন ভিন্ন 
হইলেও কোন প্রস্থানই লক্ষ্াত্র্ হয় নাই। কুচি জনুপারে যিনি যে 
প্রস্থানের অন্ুনরণ করুন না কেন, শীঘ্র বা বিলম্বে সকলে একই 
গন্তব্স্থানে উপস্থিত হইরেন। পুষ্পদস্ত বলিয়াছেন-- 

রুচীনাং বৈচিত্র্যাদৃজুকুটিলনানাপথনুষাং 
নৃণায়েকো। গম্যন্বমসি পয়সামর্ণব ইব।, | 
তগবন্, জল যে পথেই যাউক না কেন, উহা যেমন পরিশেষে 
সমুদ্রে যাইয়া উপস্থিত হয়, সেইরূপ রুচির বৈচিত্র্য অন্ুদারে সরল বা 
কুটিলপথগামী মন্ুত্যদিগের তুমিই একমাত্র গম্য । "ইন্দুদিগের দর্শনশাস্তর 
তাহাদের ধর্মের উৎকৃষ্ট রা ও ফন লিিরোররডিত এ কথা স্বীকার 
না করিয়া পারেন নাই (২) 
আপন্তৰ্ বলিয়াছেন যে, যেমন ফলের জন্য আম রোপণ করিলে ছায়। 
ও গন্ধ আন্বর্সিক রর থাকে, সেইরূপ ধর্ম আচরণ করিলে অর্থ 
আপনিই উৎপন্ন হয় (৬)। পুর্বকালের ত্রাহ্মণগণ ধর্মের জন্মই বিদ্যাধায়ন 
করিতেন বটে, কিন্তু রর অর্থ তাহাদের অনায়াসে লভ্য 
হইত। কারণ, কৃতবিদ্ধ ব্রাহ্মণদিগের শাস্ত্জ্ঞান, ধর্্ানুষ্ঠান ও পোব্যবর্গ- 
ভরণ, (৪) এই সকল বিবেচনাপূর্বক উপযুক্ত বৃত্তি নির্দারণ করিয়া 
দেওয়! হিন্দুরাঙ্জাদের অবস্ত কর্তব্য বলির! শাস্ত্রের অনুশাসন আছে (€)। 


(১) ভিন্ন ভিন্ন দর্শনের প্রতিপাদ্য বিষয়ের প্রতি লক্ষা করিলে ইহা ব্যক্ত ০ | 
(*) [0159 162৮0198 00 006 % 90910৮50010), 
(৩) আমে ফলার্থে নির্দিতে ছায়াগন্ধাবনৃৎ্পদ্যেতে | এবং ধর্মং চর্য্যমাণমর্থ। 
আনুৎপদ্যান্তে ॥'--( শারীরকভাধ্যাদিধৃত আপন্তত্ব-বচন )। 5 
(8) “পিতা বাতা গুরুত্রণতা প্রজা দীদাঃ সমাশ্রিতাঃ। 
.. অন্যাগতোহতিখিশ্চৈৰ গোষাবর্গ উদাহতঃ।'--(মন্ুসংহিত।),। 
 এঞ্রতবৃত্তে বিদিদ্বাহল্ত হৃিং বর্দ্যাং শয়েৎ।' মনুমংহিতা ১৩৫ ) ॥ 
ক  ক্রুতবৃতে -পাজাবানুষ্ঠানে 1 কুজুকভট )। সি ” 
কা বৃদ্ধি কটা বযামসং ম তব 4৮৫ মেখাতিবি)। ) ॥.. 










৬ প্রথম লেক্চর। 


বিছন্মগুলী অর্থবিষয়ে নিশ্চিন্ত হইয়া সমস্ত জীবন ধর্মসাধনায় নিযুক্ত 
রাখিতেন। আগন্তক আপদ্ের জন্তও তীহাদ্িগকে ভাবিতে হইত না। 
পিতা যেমন ওরসপুত্রদিগকে রক্ষা করেন, হিন্দুরাজ। সেইরূপ বিদ্বান্‌ 
ব্রাঙ্গণদিগকে সব্ধদা রক্ষা করিতেন (১)। 

পরিতাপের মহিত বলিতে হইতেছে যে, পূর্বকালে যে পরিমাণে - 
দুরদরশীদিগের আবির্ভাব হইয়াছিল, সে পরিমাণে শান্্গ্রস্থ এখন বিদ্যমান 
নাই। তাহার অন্ততম কারণ এই যে, বৌদ্ধদিগের অভুদয়ের সময়ে 
অনেক শাস্তরগ্রন্থ বিনষ্ট হইয়াছে, তাহার ইতিহাস পাওয়া যায় (২)।” 


. সপপিপশীপীপপপপপপি ০ 





৪ 

(১)  “সংরক্ষেৎ সর্বতশ্মৈনং পিত। পুক্রমিবৌরসম্‌।'_(মনুসংহিতা। ৭। ১২৫)। 

(২) ধারের মহারাজ ভোজদেব “কামধেনু' নামে স্থৃতিসংগ্রহ প্রণয়ন করেন। বৌধ , 
হয়, উহাই ম্মৃতিশান্ত্রের প্রথম সংগ্রহগ্রন্থ | কামধেনুর উপক্রমণিকায় গ্রন্থপ্রণয়নের 
ইতিবৃত্ত বর্ণিত আঁছে। তাহা এই 1-ভোজদেবের দৌহিত্র এবং খ্যাতনাম| বিক্রমা- 
দিত্যের পুজ্র উজ্জয়িনীশ্বর মহারাজ মতাদিত্া অকালে কালগ্রাসে পতিত হন। তাহার 
মৃতদেহ সৎকারার্থ শশানে নীত হইয়াছে, এমন-সময় একজন বৌদ্ধযোগী অভিপ্রেতার্থ- 
সাধনের উত্তম স্যোগ হইবে বিবেচনায়, যৌগপ্রভাবে মহারাজ মতাদিত্যের শবদেছে 
প্রবিষ্ট হন। শ্মশানে মহারাজ জীবিত হইয়া! উঠিলেন, রাজ্যময় আননদা-উৎসবের পরিসীমা 
রহিল না। কিছুকাল পরে মতাদ্দিত্য একটি যজ্জ করিবেন, মন্ত্রীদিগের নিকট এইরূপ 
ইচ্ছ। প্রকাশ করিলেন। মন্ত্রিগণ তাহার অনুমোদন করিলে তিনি বলিলেন, ভারত- 
বধধায় সমস্ত পঙ্ডিত সমস্ত ধর্পুত্তক লইয়! উজ্জয়িনীতে উপস্থিত হইবেন। সমস্ত 
ধর্মপুস্তক আলোচন। করিয়া পণ্ডিতগণ এঁকমত্যে যে যজ্জ উৎকৃষ্ট বলিয়। স্থির করিবেন, 
সেই যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হইবে। মন্ত্রীদিগের ষত্কে অবিলম্বে রা্জাজ্ঞা প্রতিগালিত হইল । 
পঙিতদিগের নির্দেশানুমারে শিপ্রানদীর তটে দীর্ঘায়তন যঞ্জবাঁট এবং বুছৎ বৃহৎ 
যজ্ঞকুওনকল প্রস্তুত হইল। যজ্জদীক্ষার দিন অবধারিত হইল। ইতিমধ্যে একদিন 
মতাদিত্য কৌন কৌশলে পঙ্ডতদিগকে রাঁজধানীর কিছু দূরে পাঠাইয়। দিলেন। 
পণ্ডিতবর্গ রাজধানী হইতে দুরে যাইলে, মতাদ্দিত্যের আজ্ঞাক্রমে ষজ্জকুণ্সকলে অগ্নি 
প্র্জলিত, এবং এ অগ্নিতে পগিতদিগ্রের ধর্মপুস্তকসকল ভত্মীভৃত হইল। পগ্ডতগণ 
যথাসময়ে রাজধানীতে উপস্থিত হইলেন। তাহারা সমস্থ বৃততাত্ত অবগত হইকপা দুঃখসন্তপ্- 
হৃদয়ে স্ব স্ব স্থানে প্রতিগমন করিলেন। মতাদিত্য বৌদ্ধধর্দের বহুলপ্রচার করিবার 
অভিলাষে রাজামধ্যে অত্যাচার করিতে আরস্ভ করিলেন। ভ্রমে এই বৃত্ধাত্ত মহারাজ 
ভোজদেবের কর্ণগত হইল। “মতাঁদিতা তাহার দৌহিত্র ' এবং বিকরমাদিতোর গুজ, 


উপক্রমণিক। | ট ণ 


অন্থগ্রকারেও যে এ বিলোপ হইয়াছে, এ্তিছাদিকদিগের তাঁহা 
অপরিজ্ঞাত নাই (১ 

ঘাত হইলেই রী হইবার নিয়ম। বৌদ্ধেরা দার্শনিক বিচারে 
স্বপক্ষনমর্থন করিতে প্রয়াদ পাইলেন। হিন্দুদার্শনিকগণও তাহা খণ্ডন 
করিতে উদ্ভত হইলেন। এইরূপে ততৎকালে দর্শনজগতে একরপ যুগান্তর 
উপস্থিত হইয়াছিল বলিতে পারা যায়। বৌদ্ধদিগের দার্শনিক তর্ক খণ্ডন 
করিবার জন্য যেসকল উংকষ্ট গ্রস্থনিচয় রচিত হইয়াছিল, তাহার অনেক- 
গুলি অগ্ঠাপি বিগ্কমান রহিয়াছে । 

তখনও দেশ বহিঃশক্রদ্বারা আক্রান্ত হয় নাই। ঞতখনও দেশে শাস্তি 
বিরাজমান! ছিল। কালে দেশের অবস্থার পরিবর্তন হইল। “কোরাণে 
যাহা! আছে, তাহার জন্য গ্রন্থান্তর নিশ্রয়োজন, কোরাণে যাহা নাই, 
তাহা অপ্রমাণ ও অসত্য, সুতরাং যে গ্রন্থ এরূপ অনত্য বিষয়ের উপদেশ 
দেয়, তাহা অনিষ্টকর, তাহার অস্তিত্ব বাঞ্চনীয় নহে”__-এই অদ্ভুত যুক্তি- 
বলে যে-জাতীয় সেনাপতির আদেশে আলেক্জেন্দ্িয়ার বিখ্যাত পুস্তকালয় 
তম্মীত্ৃত হইয়াছিল, (২) হূর্ভাগ্যক্রমে সেই-জাতীয় রাজা ভারতের 


লি ০, 





উন কপপিপিপতপাশিছি 


কেন তাহার ঈদৃশ ছুর্শতি হইল?' ইহা চিন্তা করিয়া তিনি নিতান্ত দুঃখিত হইলেন। 
জ্যোতিষীগণনায় স্থির হইল যে, প্রকৃত মতাদিত্য জীবিত নাই। মতাদিত্যের শরীরে 
একজন বৌদ্ধ পরকায়প্রবেশ-পূর্ববক অধিষ্ঠিত রহিয়াছে। অবিলম্বে ধারানগরীতে পর- 
কারপ্রবেশের বিঘটক যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হইল। যে-দিন যে-সময়ে ধারানগরীতে অনুষ্ঠিত যক্জ 
পরিসমাপ্ত হইল, সেই-দিন সেই-দময়ে মতাঁদিত্যের দেহও প্রাণবিধুক্ত হইল। তাহার 
পর ভারতবর্ষের যেখানে যে শাস্গ্রন্থ অবশিষ্ট ছিল, তৎসমন্ত সংগ্রহ কত্ষিয়! এবং 
ভারতীয় প্ডিতবর্গকে ধারানগরীতে সমবেত করাইয়া, শীস্তরস্থ হইতে এবং সমবেত 
পঙ্ডিতমণ্ডলীর কঠস্থ শাস্ত্রবাকাসকল সংগ্রহ করিয়া, মহারাজ ভোজ 'কামধেনু-গ্র্থ 
রচন। করেন। তিনি যেসকল শাস্তরগ্রস্থ মম্পূর্ণ এবং যেসকল গ্রন্থের যে যে অংশ প্রাপ্ত 
হইয়াছিলেন, কামধেনুর প্রীরন্তে তাহার একটি বিস্ৃত তালিকা দিয়াছেন। 
(১) মহারাষ্রীয়দিগের অভ্যুদয়কালে তীহীর! 'সহাজ্রিথও' পুস্তক বিনষ্ট বলিনি | 
ই | | 
(২) কেহ কে বলেন, আলেককেন্দরিয়ার পুস্তকালয় টড ৮ সত্য, কিন্ত 
তাহা! সেনাপতির আদেশে হয় নাই। 


৮ প্রথম লেক্চর। 


রহিংশজ্ররপে উপস্থিত হইলেন (১)। যে প্রবল শত্রুর আক্রমণে হিন্দু- 
রাজাদের অতুল এশ্ব্্য ও পরমারাধ্য দেবমুষ্ঠি পর্যান্তব বিনষ্ট হইয়াছিল, 
কে বলিতে পারে যে, ও আক্রমণে শান্গ্রস্থ বিনষ্ট হয় নাই? গ্রবল 
বহিংশক্রর পুনঃপুন আক্রমণে দেশ অন্তঃসারশূন্ত হইয়া পড়িল। 

ছিদ্রেনর্থা বহুলীতবস্তি। এইক্প মন্কটিসময়ে হিন্দুরাজাদের গরম্পর 
যনোমালিস্ত উপস্থিত হইল | জবন, দেশের রাজপদে অধিষ্ঠিত হ ইলেন। 
রাঁজবিপ্রবে যেদকল “অনিষ্ট হইয়া! থাকে, ভারতের সয়স্কেও তাহার 
কোন বার্জত বিধি নাই; ভারতেও এ্সকল' অনিষ্ট উপস্থিত হইল." 
দেশে ঘোর অশান্তির আবিাব হইল। এক হস্তে ধর্্রস্থ ও.মপর হস্তে 
তরবারি লইয়! র্মপ্রচার কর! ধাহাদের রীতি, সেই শ্রেণীর রাজার 
প্রথম অধিকারকালে হিন্দু প্রজাদের কিরূপ দুরবস্থা হইবার সম্ভর, 
তাহা সহজেই অনুমান করা যাইতে পারে। 

তখন দেশের রাজা-গ্রজা! সকলেই আত্মরক্ষা লইয়া] ব্যন্ত। রাজা 
আর পঞ্ডিতদিগের বৃত্তি নির্ধারণ করেন না, ওরদপুজের স্তায় তাহাদিগকে 

করিতে পারেন না। সে লময় কোনরূপে পোষ্যবর্গভরণ ও ধর্শরক্ষা 
করিতে পারিলেই শাস্ত্রব্যবদায়িগণ কৃতার্থ হইতেন। পোম্যবর্ঠতরণ ৪ 
ধর্ানুষ্ঠানের জন্য অর্থোপার্জন করা তাহাদের আবশ্তক হইয়া উঠিল। 
অর্থচিন্ত। কিয্ংপরিমাগে শান্ত্রচিন্তার স্থান অধিকার করিল। নানা 
কারণে লোকের ধর্মনিষ্ঠাও অপেক্ষাকৃত অল্প হইয়া পড়িল। এসময়ে 
বিদ্বার উন্নতির আশা ছুরাশমাত্র। কিন্তু তখনও বিগ্তাচষ্চা একেবারে 
অন্তহিত হয় নাই। কারণ, তৎকালে ব্রাহ্মণদের ধর্মনিষ্ঠা কিয়ংপরিমাণে 
আলোড়িত হইলেও পরিলুপ্ত হয় নাই । 

শান্ত্গ্রন্থদকল সংস্কৃতভাষায় রচিত । ব্যাকরণে টড ন1 জন্মিলে 
মংস্কতভাষায় প্রবেশাধিকার হয় না। .মং স্তভাষাধ্যারীদিগকে বাধা হইয়া 








০:€১) সলতান মামুদ্'ও নাদিরশাহ প্রস্ৃতি ব্রিক, ভার রঃ শন্তু। 
গর রা্যবস্তারনঅতিপ্রায়ে তারতবর্য আক্রমণ করেন নাই । ভারতের ধমগম্পন্সি 
ষ্ঠ করাই তীহাদের ভারত-ম।জ্রমণের প্রান উদ্দেখা ছি এক-রধায় বলিতে 
% হারা রাজারণে ভারতে উপহথিত হন না$-দরপ উপস্থিত হই ছিরেন। 














উপক্রমণিকা । ৯ 


র্যাকরণ অধ্যয়ন করিতে হয়। স্থতরাং সেরূপ হুঃমময়েও ব্যাকরণের 
অধ্যয়ন বিলুপ্ত হয় নাই। হিন্দুদিগের প্রায় সমস্ত নিত্যনৈমিত্তিক অনুষ্ঠান 
ধন্মশাস্ত্রের অন্ুশাসনে নিয়মিত | ধর্মশান্ত্র অধায়ন ন1 করিলে র্মকর্মের 
বিধিব্যবস্থা জানিবার উপাক়াস্তর নাই। ধন্মশাস্ত্রাধ্যয়ন অপেক্গাকৃত 
অন্নকাল 3৪ অল্লায়ান সাধা। ধর্মশাস্ত্রব্যবসায়ীদিগের ধর্মগন্বন্ধীয্ ব্যবস্থা- 
গ্রদান ও ধর্্কর্মাদিতে যতকিঞ্চিৎ অর্থাগমও হইত । পক্ষান্তরে, দর্শন- 
শাস্ত্রের অধায়ন দীর্ঘকালদাধ্য এবং সমাজে দার্শনিকদিগের যথেষ্ট সমাদর 
থাকিলেও ধর্ম্শান্ত্রব্যবসায়ীদিগের স্তায় স্তাহাদের নিত্য প্রয়োজন হইত 
না। ক্রমে দশনশান্ত্রের অধায়ন বিরল হইতে বিরলফ্ভর হইতে আরম্ত 
হইল। তখনও মধ্যে মঞ্চে প্রবীণ প্রবীণ দাশনিক ও অন্থান্ পগ্িতের 
আবির্ভাব দেখা যায় বটে, কিন্তু তাহা বিকারগ্রস্ত অচেতন রোগীর ক্ষণিক 
চেতনাসমাগমের স্ায় অচিরস্থায়ী-_-পূর্ব প্রতিভার শেষ বিকাঁশমাত্র । 
অপ্রাসঙ্গিক হইলেও এস্থলে সম্রাট আকবরের নাম উল্লেথ না করিলে 
অসঙ্গত হয়। মহাত্বী আকবর কতকগুলি অদাধারণ সদ্‌গুণ লইয়া 
ভূমগুলে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন। তাহার জন্মকালে সভাসদ্দিগের নিকট 
কম্ত,রী বিতরণ করিবার সময়ে হোমাউনের আশংসা সম্পূর্ণরূপে ফলবতী 
হইয়াছিল। আকৰর অপাধারণ প্রতিভাবলে রাজ্যশাসনের সুব্যবস্থা 
করিয়াছিলেন । তিনি জাতিনিবিশেষে তুল্যরূপে সমস্ত প্রজামগুলীর রক্ষণা- 
বেক্ষণ করিতেন। সংস্কৃতশাস্ত্রে তাহার যথেষ্ট অনুরাগ ছিল। কথিত আছে 
যে, আকবরের যত্বে কতিপয় মুসলমান ব্রাঙ্ণবেশ ধারপূর্বক ব্রাহ্মণগুরুর 
নিকট সংস্কৃতশান্ত্র শিক্ষা! করিয়াছিলেন। অনেকে অনুমান করেন যে, 
'অল্লোপনিষৎ” তাহার সময়ে রূপে শিক্ষিত মুসলমান দ্বারা রচিত হয়। 
অল্লোপনিষৎ কিন্তু অথর্ববেদের সৌভাগ্যকাণ্ডের একখানি উপনিষৎ। 
তাহার অর্থ অন্তর্বপ।. সে যাহা হউক, আকবরের সন্তোষার্থ তাহার 
অন্যতম সভামদ্‌ বিহারী কৃষ্ণদাস 'পারসীক প্রকাশ নামে অন্তত গ্রন্থ রচনা 
করেন। 'তাঞ্জিক'নামক প্রখ্যাত অদৃষ্টপৃর্ব জ্যোতিযগ্রন্থও সম্ভবত তাহ্থার 
বা তাহার উত্তরাধিকারীদের উৎলাহেই রচিত হইয়া থাকিবে (১)। 


সপ পপ পপ  প্ 


(১) 'পারমীকপ্রকাশ' একখানি অভিধান। ইহাতে দংস্কৃতভাবায় কতকগুলি 
পু | 





১৪. প্রথম লেক্চর। 


আকবর সংস্কৃতশাস্্ব্যবসায়ীদিগকে সন্মনিত এবং উপাধিদ্বাঁরা ভূষিত 
করিতেন (১)। তিনি রাজ্যশাসনের বে শৃঙ্খলা স্থাগন করিয়া যান, 
তাহ তাহার স্বর্গারোহণের পরেও অনেককাল দেশে শাপ্তিরক্ষা করিতে 
সমর্থ হইয়াছিল । আকবরের রাজনীতির ন্যায় তাহার সংস্কৃতান্থরাগ ও 
তাহার সহিত অন্তছিত হয় নাই, তাহার উত্তরাধিকারীদের মধ্যেও অন্ুবৃত্ত 
ছিল। জাহাঙ্গীরের সময়ে কতিপয় উৎকৃষ্ট সংস্কতগ্রস্থ রচিত হয়। 
শীজেহানের প্রসাদলাভের জন্য বেদাঙ্গ রায় 'পারসীপ্রকাশ'-নামক 
জ্যোতিগ্রন্থ রচনা করেন (২)। এখনপর্যান্তও গুজরাট-অঞ্চলের মুপল- 
মানগণ সংস্কৃত অধ্যয়ন করিয়া থাকেন। 


৫* 


পারসীশব্দের অর্থ সঙ্কলিত হইয়াছে । “তাজিক' সংস্কৃত ও পারনীক শব্দের সংযোগে 
রচিত একখানি জ্যোতিগ্রন্থ। এই অস্ভুত গ্রন্থদ্য়ের রচনাপ্রণালী প্রদর্শনের জন্য এক- 
একটি প্লোক উদ্ধত করা যাইতেছে__ 
মাহশ্চন্রে চ মাসে চ গুরৌ ক্রয়িণি মুশ্তরী। 
_ দিদ্ধান্তে পেষণে হলো মেহর্‌ স্তাৎ করুণার্বয়োঃ॥৮-( পারসীকপ্রকাশ )। 
: “যদ! আপতাপো ভবেদ্বমুনস্থোহধবা চত্্রপুত্রো গলিম্ববৃযুক্তঃ | 
যদ মুশ্তরী মালখানাগতঃ স্তাস্তবেভূমিপালোহথবা বাদশাহ) ॥” (তাঁজিক)। 
প্রথম শ্ে।কের ব্যাখা। অনীবগ্যক | দ্বিতীয় শ্লোৌকটির তাঁৎপর্যয লিখিত হইতেছে ।- 
যাহার জন্মকালে আপতাপ অর্থাৎ সুর্য ছুষ্মুনস্থ অর্থাৎ শক্রগৃহস্থিত, অথবা চন্্রপুত্র 
অর্থাৎ বুধ গলিম্বক্নধুক্ত অর্থাৎ পাপগ্রহযুক্ত, মুশ্তরী অর্থাৎ বৃহস্পতি মাঁলথানাগত 
অর্থাৎ ধনগৃহগত হয়, দেই ব্যক্তি ভূমিপাঁল অর্থাৎ রাজা, অথবা বাদশাহা অর্থাৎ 
সম্জাটু হয়। 
(১) কাদপ্বরীর টাককার ভানুচন্ত্র এ গ্রন্থের মঙ্গলাচরণে লিখিয়াছেন যে,-- 
£ শ্রিবাচকঃ সম্প্রতি ভানুচন্দ্রঃ অকব্বরগ্মাপতিদত্তমানঃ।' 
এ গ্রস্থের পুষ্পিকায় লিখিত আছে__'পাতিশাহ-প্রীঅকব্বরগ্রদাপিতোপাধ্যায়পদ- 
/ ধারক *** ইত্যাদি। | 
ানুচন্্রের শিখ্য সিদ্ধচন্র কাদদ্বরীর উত্তরভাগের টাকা করেন। তিনি গুশশিকায 
এইরূপে নিজের পরিচয় দিয়াছেন-_ 
হাম ইতাদি। 
(২) পারসীপ্রকাশের প্রথম শ্লোক এই-_ | 


উপক্রমণিকা। ১১ 


কালক্রমে অপেক্ষাকৃত অনুপযুক্ত রাজগণ সিংহামনারঢ হইলেন। 
রাজ্যশাদনবিষয়ে তাহাদের অমাধারণ ক্ষমতাও ছিল না, বলবতী ইচ্ছাও 
ছিল না। অল্পে অন্নে তাহারা বিলামের বশবর্তী হইয়৷ উঠিলেন। রাজার 
দৃষ্টি না থাকায় রক্ষািকৃত অমাত্যবর্গ যথেচ্ছ ব্যবহার করিতে আর্ত 
করিলেন। শাস্তির স্থানে অশান্তির সিংহাসন প্রতিষ্ঠিত হইল। প্রঞ্জাদের 
ঈনানারপ ছুঃখকষ্টের পরিসীম। রহিল না। অত্যন্ত গরম হইলেই জল হয়। 
বিধাতার মঙ্গলময় ইচ্ছায় ভারতের শাসনদও ইংরাজের হস্তে ন্যস্ত হইল। 
রাজবিপ্রবের' প্রথমাংশে যে-সকল অন্ুবিধা অনিবার্য, ইংরাজরাজের 
রাজ্যাধিকারের প্রথমাংশেও তাহ। অল্পবিস্তর হইয়াছিল। 
ইংরাজের স্ুশাসনে এখন দেশমধ্যে শাস্তি বিরাজমানা। ইংরাজী- 
বিগ্বার প্রভাবে দেশে যুগান্তর উপস্থিত হইয়াছে। ইংরাজ নিজে বিদ্বান্‌ 
স্থতরাং বিগ্যান্থরাগী। এতদ্দেশীয় আধ্যগণ পরলোক প্রধান ছিলেন। 
তাহারা পরলোক লইয়াই সর্বদ! ব্যস্ত থাকিতেন। ইহলোকের জন্য 
বড়-একটা ভাবিতেন না। ভূমগুলে যে-কয়েকট| দ্দিন থাকিতে হইবে, 
তাহ। কোনো-একরূপে কাটিয়! গেলেই তাহারা যথেষ্ট মনে করিতেন (১)। 
তাহাদের দর্শন অধ্যাত্মবিষ্ভাবিশেষ, ইহ! পূর্বেই বলিয়াছি। ইউরোপীয় 
মনীধিগণের রুচি অন্তরূপ। তাহারা ইহলোকের সমুন্নতির জন্ত যত 
পরিশ্রম ও যত্ু করিয়াছেন এবং করিতেছেন, অধ্যাআ্ববিষয়ে তত যত্ব 
করা আবশ্তঠক মনে করেন না। ইউরোপীয় অধিকাংশ দর্শন বা! বিজ্ঞান 
ইহলোকের বিষয় লইয়া প্রণীত, সুতরাং ভৌতিক । অনেক দেশীয় 
বিদ্বার্থিগণ ইউরোপীয় দর্শনাদ্ি অধ্যয়ন করিয়াই পরিতৃপ্ত হইতেন, 
দেশীয় দর্শনাদির প্রতি দৃক্পাতও করিতেন ন1। অধিকত্ব দেশীয় শাস্ত্রে 
4 ননত্বা শ্রীভূবনেশ্বরীং হরিহরৌ লক্োদরাদীন্‌ দিজান 
শ্রীমচ্ছাহজহানরেন্ত্রপরমত্রীতিপ্রসাদাগুয়ে । 
কুত্বা সংস্কৃতপারসীকরচনাভেদপ্রদং কোতুকং 
_ জ্যোতিঃশান্ত্পদোপযোগি সরলং বেদাঙ্গরায়ঃ নুধীঃ॥' 
(১) কথিত আছে, মন্থুয্যের গরমায়ু অল্প। ভূমওলে অল্পদিন থাকিতে হ্য়। এই 
বিবেচনায় লোমশমুনি নিজের বাসের জন্ত পর্ণকুটার- নির্মাণও জাবশান্ধ নননানা 
করেন নাই। আর্ধাগণ ইহলোকে এমনই জস্থাবান্‌! | : 


১২ প্রথম লেক্চর। 


কোন সত্য বা চিস্তয়িতব্য বিষয় আছে, তাহারা ইহা মনে করিতে 
পারিতেন ন!। ধাহার! দেশীয় শান্ত্রনিচয় না জানিয়াই ততসম্বন্ধে একটা 
সিদ্ধান্ত করিয়া! বসেন এবং তদনুরূপ সংস্কার পোষণ করেন, তীহারাই 
যে ইংরাজীবিষ্কায় অনভিজ্ঞ দেশীয় শাস্্রব্যবসায়ীদিগকে “কুসংস্কারাচ্ছন্ন 
বলিয়! দ্বণা করেন, ইহা! কৌতুকোদ্দীপক হইলেও দুঃখের বিষয়, সলোছু 
নাই। এ 
এখন শোত অন্যদিকে ফিরিতেছে। ইংরাজীবিগ্ভাধ্যেতা ছাত্রগণ 

বুঝিতে পারিয়াছেন যে, দেশীয়শান্ত্রে সত্য আছে,_চিস্তয়িতব্য বিষয় 
আছে। কারণ, ইউরোগীয় অনেক মনীষী সংস্কৃতশাস্ত্র-অধ্যয়নের জন্য 
তাহাদের অমূল্য ময় ব্যয় করিতেছেন; সংস্কতশান্ত্র অধ্যয়ন করিয়া 
অপরিসীম আনন্দ অনুভব করিতেছেন ; সংস্কৃতশাস্ত্রে নূতন নৃতন বিষয় 
অবলোকন করিয়া বিস্মিত হইতেছেন) সংস্কৃতশান্ত্রের উৎকর্ষ বুঝাইয়] 
দিবার জন্য প্রবন্ধ প্রচার করিতেছেন। রাজ রাজকীয়ভাষার বিগ্ভালয়ে 
সংস্কতশিক্ষা প্রবর্তিত করিয়াছেন, উচ্চ-সংস্কতশিক্ষার জন্য সংস্কতবিগ্যালয় 
স্থাপন করিয়াছেন; বিলুপ্তকল্প চতুষ্পাঠীর রক্ষার জন্য নানাবিধ সছুপাক়্ 
অবলম্বন করিতেছেন; টোলের ছাত্র ও অধাপকদিগকে বুত্তিপ্রদান 
করিতেছেন; উপাধিপরীক্ষার স্থষ্টি করিয়া কৃতবিদ্ধ ছাত্র ও অধ্যাপক- 
দিগকে পুরস্কৃত করিতেছেন; যোগ্যতর অধ্যাপকদিগকে উপাধিদ্বার! 
সম্মানিত করিতেছেন। যত্বের সহিত হন্তলিখিত সংস্কৃতপুস্তক রক্ষা 
করিতেছেন; হস্তলিখিত সংস্কৃতপুস্তকসকলের সৃচীপ্রস্ততের জন্ত বিস্তর 
অর্থব্যয় করিতেছেন; আশিয়াটিক সোসাইটাকে সাহায্য করিয়া এবং 
অন্ত উপায়ে সংস্কৃতপুস্তকাবলী মুদ্রিত ও প্রচারিত করিতেছেন। 

এখন সকলেই বুঝিতে পারিতেছেন যে, সংস্কতশাস্ত্র অন্তঃসারশূহয 
নহে। উহাতে গভীর সত্যসকল নিহিত রহিয়াছে। উহাতে জানিবার ও 
তাবিবার বিষয় অনেক আছে। কেন না, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা যাহা আচরণ 
করেন, অপর ব্যক্তিরাও তাহাই করিয়া থাকেন (১)। এইজন্য, ইংরাজী- 
বিস্তায় ধাহার৷ পারদর্শিতা লাভ করিয়াছেন বলিলে নিতান্ত অত্যুক্তি হয় 


ঠা 


| কপ পা পপর উপ পাঠ 


রঃ 


(১) ধিদ্য়দারতি শ্রেঠন্ততুদেবেতরে| ঈনঃ '-( তগবদগীতা ৩। ২১)। 


উপক্রমণিক!। ১৩ 


না, সংস্কৃতবিদ্যাশিক্ষার জন্য-_সংস্কৃতদর্শনের আলোচনার জন্ত, তাহাদের 
প্রচুর আগ্রহ দেখিতে পাওয়া যাইতেছে। এ কথা প্রমাণ করিবার জন্ত 
অধিক দূরে যাইতে হইবে না। উদ্দারহ্ৃদয় বাবু শ্রীগোপাল বন্থ-মল্লিকের 
ফেলোশিপের প্রবর্তনা এবং দেশীয়শাস্ত্রের অন্ুশীলনার্থ শিক্ষিতমণ্ডলীর 
উপস্থিত সমাগমই তাহার যথেষ্ট প্রমাণ। দেশীয় বা জাতীয় বিগ্ভার অন্থু- 


শীলন করা৷ সকলেরই কর্তব্য। জাতীয়বিগ্তার অনুশীলন-_জাতীয়শান্ত্রের 


আলোচনা! ভিন্ন কোন জাতিই সমুন্নত হইতে পারেন না। অন্তান্ত 
সভ্যদেশের প্রতি দৃষ্টি করিলে ইহার প্রচুর প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায়। এ 
বিষয়ে মুসলমানভ্রাতাদের আচরণ প্রশংসনীয়। তাহারা জাতীয়বিদ্যার 
অনুশীলন ন! করিয়া কেবল রাজকীয়বিগ্ভার অনুশীলনে পরিতৃপ্ত হন ন]। 
সৌভাগ্যক্রমে আমরা এমন রাজ! পাইয়াছি, ধিনি প্রত্যক্ষ বা 
পরোক্ষ ভাবে আমাদের শান্ত্রালোচনার জন্ত আমাদিগকে উৎসাহিত 
করিতেছেন। অপক্ষপাতী ইউরোপীয় পণ্ডিতবর্গের আগ্রহে দেশীয় 
দশনাদিশান্ত্ের প্রতি অনুরাগ অস্কুরিত ও রাজার অন্ুগ্রহে পল্পবিত 
হইয়াছে। অধ্যবসায়-অবলম্বনে কতবিদ্কমগুলী উহা পুষ্পফলে শোভিত 
করিবেন, এরূপ আশা করিলে অসপ্ধত হইবে ন|। রাজবিগ্ভায় কৃতবিদ্ধ 
দেশীয় মশীষিগণ যখন দেশীয় দর্শনাদির সক্ম হইতে হুক্মতম বিষয়সকলের 
অনুশীলন ও পর্যযালোচন1! করিবেন এবং পদে-পদে শাস্ত্রকারদিগের 
অপারসীম ক্ষমত! ও কৌশল অবলোকন করিয়! তাহাদের প্রতি অকৃত্রিম 
তক্তিরমে পরিপ্লত হইবেন, তখন এদেশে বিগ্তাবিষয়ে যুগান্তরের প্রাদুর্ভাব 
হইবে। কৃতবিদ্যগণ শান্ত্রতত্ব অবগত হইবার জন্ত ইউরোপীয় প্ডিত- 
দিগের অনুবাদের প্রতি নির্ভর করিবেন না,__ স্বয়ং শান্ত্র পর্য্যালোচন। 
করিয়া শান্ত্রতত্ব অবগত হইবেন, ইহ কল্পনা করিতেও কত মধুর। যখন 
সত্যসত্যই উহ। কার্যে পরিণত হইবে, তখনকার মাধুর্য বুঝাইয়া দিবার 
উপায় নাই,_সে গুভদিনের তুলনা! নাই। আশা করা অনুচিত নহে যে, 
অনতিবিলঘ্ধে সেই গুভদ্িন সমাগত হইবে। শুভক্ষণে কৃতবিদ্কদিগের 
গুভবুদ্ধি হুইয়াছে। ইহা কার্যে পরিণত হইলে, দেশের উপকার ত 
হইবেই, কৃতবিদ্তগ্ণও অল্প লাতবান্‌ হইবেন না। দেশীয় বস্ত বিদেশীয়- 


ভাষায় প্রচারিত না হইলে তাহারা তাহ! জানিতে পারেন না, নিজেদের 


জুল 


১৪ প্রথম লেক্চর। 


রস্ত নিজের! চিনিতে পারেন না, নিজেরা সমাদর করিতে জানেন না, পরের 
পরিচয়ে ও পরের দমাদরু দেখিয়া চিনিবেন ও সমাদর করিতে শিখিবেন, 
ইহা কৃতবিগ্ঠদিগের পক্ষে প্রশংসার কথা নহে। এরপ দৃষ্টাস্তও একান্ত 
বিরল নহে যে, ইউরোপীয় পপ্ডিতদিগের আবিষ্কৃত বলিয়! যাহা গ্রহণ কর! 
হয়, শাস্ত্র পর্যযালোচনা করিলে দেখিতে পাওয়া যায় যে, তাহা এদেশে 
বহুকালপূর্বে সমুদ্ভাবিত হইয়াছিল। পৃথিবীর গতি, গোলত্ব ও নিরাধাবত্ব 
গ্রভৃতি শতশত বিষয় ইহার দৃষ্টান্তস্বরূপে নির্দিষ্ট হইতে পারে। সে যাহা 
হউক, এখন সধারণ্যে দেশী বিদ্ধ গ্রচারের সময় নিকটবর্তী হইয়াছে। 
যাহারা এই উপ্গা্ের বিষয়ের প্রবর্তক ও সাহায্যকারী, ঈতিহানে 
স্বর্ণ ক্ষরে তাহাদের নাম লিখিত হউক । সর্বমঙ্গলা তাহাদের মঙ্গল করুন। 
 ধীহারা দর্শনশাস্ত্রের অনুশীলনে সমুৎস্থক, দর্শনশান্ত্র নীরস ও 
কঠিন*__এই প্রবাদবাক্য গুনিষ়্া। তাহারা যেন মনোৎসাহ না হন, ইহাই 
প্রার্থনীয়। অধিকাংশ প্রবাদবাক্য অপেক্ষাকৃত অজ্ঞলোকের প্রবন্তিত। 
প্রবাদবাক্য শুনিলেই তাহ! অটল সত্য বলিয়া! বিশ্বাস করা অনঙ্গত। 
আবার প্রবাদবাক্যগুলি কেবলই অলীক,_ উহার মূলে কোনও সত্য নাই, 
সহস! এরূপ সিদ্ধান্ত করাও অন্ুচিত। স্থিরচিত্তে প্রবাদবাক্যের তথ্য 
পর্যালোচনা করিয়া তাহাতে আস্থা বা অনাস্থা স্থাপন কর! কর্তৃব্য। 
উল্লিখিত প্রবাদবাক্যে দুইটি অংশ আছে +₹_-১ম, দর্শনশান্ত্র নীরস ; ২য়, 
দর্শনশান্্র কঠিন। এই অংশঘ্য় পৃথক পৃথক রূপে আলোচন৷ করা 
যাইতেছে। | 

যাহাতে রদ আছে, তাহা সরস; যাহাতে রদ নাই তাহা নীরস। 
দর্শনশান্্র নীরস+ এই প্রবাদাংশ ছার! প্রতীয়মান হইতেছে যে, প্রবাদ- 
অষ্টার ঘতে দর্শন্শান্ত্রে কোনও রদ নাই। কিন্তু রসের সত্তা বা অনত্বা 
নির্ণয় করিতে হইলে, রদের প্রকৃতির প্রতি লক্ষ্য করা আবশ্তক। রসের 
প্রকৃতি জানিতে পারিলে, রসের সত্তা ব1 অসন্ত। সহজে নির্ণীত হইতে 
পারে। আলঙ্কারিকদিগের মতে 'অলৌকিক চমৎকার+-_রসের প্রাণ বা 
সার (১)। চমৎকার--একপ্রকার আনন্দ বা বিল্বয়। যাহার অপর নাম 


২ সাকা ও 





পাস 





(১) 'লোকোত্বরচমথকারপ্রাণঃ কৈ শ্চিৎ প্রমাস্থৃতিঃ। 





উপক্রমণিক!। ১৫ 
"চিত্তবিস্তার' (১)। এতদ্বারা প্রতিপন্ন হইতেছে যে, যাহার অনুশীলন বা 
পর্যযালোচনায় স্ুখান্ুভব বা বিশ্বময় জন্মে, তাহা "সরদ+ এবং যাহার অনু- 
শীলন বা পর্যালোচনায় সুখান্ভব বা বিস্ময় হয় না, তাহ? 'নীরম?। 
এইখানেই দর্শনশাস্ত্র নীরস” এই প্রবাদাংশের মেরুদণ্ড ভাঙিয়া গেল। 
কারণ, ধাহার! দর্শনশাস্ত্রের অনুশীলন করেন, তাহারা যে তন্বারা নির্মল 
আনন্দ অনুভব করিয়] থাকেন, ইহার অপলাপ করা অসম্ভব । দর্শনশান্ত্রের 
অন্শীলনকারিগণই ইহার প্রকট প্রমাণ। ধাহার! ইউরোপীয়শান্ত্ে কুতবিপ্য, 
তাহারা দেশীয়দর্শন না হউক, ইউরোপীয়দর্শন অবস্তই অধ্যয়ন করিয়াছেন। 
আমার বিশ্বাস, ইউরোপীয়দর্শন অধ্যয়ন করিয়া তাহধরা বিশেষ আনন্দ 
অন্ুতব করিয়াছেন। বিদ্বান্‌ ব্যক্তি বিদ্যারসান্বাদন ঝ্বুরিতে পারেন না, 
এ কথা অশ্রদ্ধেয়। সাহসপূর্বক বলিতে পারি যে, উপস্থিত শিক্ষিতমগ্ডলী 
আমার উক্তি সমর্থন করিবেন। স্ু্ৃদ্বিয়োগাদি করুণার্দিরসের আলম্বন, 
সুতরাং উহা কেবলই ছুঃখময়, উহাতে স্ুখান্ুভব হয় না-এই আপত্তি 
থণ্ডনের জন্য আলঙ্কারিকেরা বলিয়াছেন যে, করুণাদিরসেও যে পরমস্থুখের 
আবির্ভাব হয়, মহদয়দিগের অনুতবই তাহার প্রমাণ (২)। 

এ খ্বটে,..দর্শনশান্ত্র অধায়ন করিয়াও কেহ কেহ স্ুখান্ুভব করিতে 
পাঢরন মা কিন্তু রসময় কাব্যশান্ত্র অধ্যয়ন, করিয়াও ত কেহ কেহ 
রসাঙ্ছুভব করিতে পারেন না। ষ্ঠা বলিয়া কি কাব্যশান্্রকেও নীরস 
বলিতে হইবে? র্শনশাস্ অধ্যয়ন 'করিয়াও সুখান্থভব না! করিবার 
কারণ--দর্শনশাস্ত্রের নীরসতা নহে। ধাহারা হ্খাহছভব করিতে পারেন 
না, তাহারা বুদ্ধিদৌর্বল্যবশত দর্শনশান্ত্রে প্রবেশাধিকারলাভে বঞ্চিত, 
অথবা তাহাদের রসবিষয্িণী বাসন! নাই। রসবিষদ্িণী বাদন| না থাকিলে 





খ্বাকারবদকতিতনছেনাযমাস্বাদ্যতে রস ॥ 

রসে সারশ্চমৎকারঃ সব্ধত্রাপ্যনুভূয়তে ।' (সাহিত্যদর্পণ) তৃতীয় পরিচ্ছদ ) 
(১) 'ুখধিশেষপর্ধ্যবসিতচমৎকার প্রত্যশি' ইত্যাদি । ( শববপক্তিগ্রকীশিক1)। 
'চমৎকারশ্চিত্ববিদ্তাররূণো শিশ্ষয়াপরপর্য্যায়ঃ1( দাহিতযদর্পণ ॥ তৃতীয় পরিচ্ছেদ )। 
(২) 'করুণাদাষপি রসে জায়তে বৎ গরং হুখম্‌। ডি 
সচেতনামনতবঃ জমাণং তঙ্জ কেবলম্‌ 7 ( সাহিত্যার্গণ 1. তৃতীক্ক পরিচ্ছেদ 





১৬ প্রথম লের্চর। 


রসের আস্বাদন বা অন্ুভব হয় না. (১).। কাব্য করিবার জন্য যেমন 
বীজভূত-শক্তি বা সংস্কারবিশেষ অপেক্ষণীয়, কাব্য বুঝিবার জন্যও সেইরূপ 
বীজভূত শক্তি বা সংস্কারবিশেষের অপেক্ষা আছে। যথাক্রমে উক্ত শক্তি- 
দ্বয়ের নাম_-কর্তৃত্বশৃক্তি ও বোছ্‌ত্বশক্তি। ধাহার বোদৃত্বশক্তি নাই, তাহার 
নিকট উৎকৃষ্ট কাব্যও উপহাসাম্পদ হইয়া! থাকে (২)। ইহাও আলঙ্কারিক- 
দিগেরই সিদ্ধান্ত। কাব্যবিষয়ে আলঙ্কারিকের! যে দিদ্ধান্ত করিয়াছেন, 
দর্শনশান্্রস্বন্ধেও নে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপেই প্রযুক্ত হইতে পারে। অতএব 
স্থির হইতেছে যে, দর্শনশাস্ত্রের রসাম্বাদনে অনমর্থ ব্যক্তিই উক্ত 
প্রবাদাংশের ত্রষ্টা 1, 

এখন প্রশ্ন হইতে পারে যে, দর্শনশান্ত্রে যদি রস আছে, তবে এ রম 
কি-নামে অভিহিত হইবে? এতদুত্তরে বক্তবা এই যে, উহা! অভ্ভুতরদ। 
বলিয়া অভিহিত হইতে পারে। বিস্ময় বা চমৎকার যে-রসের স্থায়িভাব, 
তাহার নাম অভ্ভূত-রস” (৩)। স্বপক্ষম্থাপন ও পরপক্ষ ্রতিষেধ উপলক্ষে 
দর্শনকারগণ যেরূপ অলৌকিক কৌশল ও অছ্ুত পাণ্ডিত্য প্রদর্শন 
করিয়াছেন, তাহা পর্য্যালোচনা রিলে অত্যন্ত বিস্মিত বা চমতকৃত 
হইতে হয়। কোন আলঙ্কারিকের মতে রসমাত্রই "অদ্ভুত, (৪) শৃঙ্গার, 
বীর, হাস্ প্রভৃতি অভভুতরসেরই অবান্তর প্রভেদ। দর্শনশান্ত্রস্বদ্ধে যাহ. 
বল! হইল, অন্যান্শাস্ত্রস্বন্ধেও তাহা, বলা যাইতে পারে। সমন্ত শান্ত্রেই 
অদাধারণ কৌশল ও পাত্ডিত্য প্রদর্শিত হইয়াছে । তাহার পর্যালোচনা 
করিলেও অল্লাধিক চমৎকারের বা বিস্ময়ের আবিঙাব হইয়। থাকে। 
সুতরাং সমস্ত শান্ত্েই অল্লাধিক-পরিমাণে অভ্ভুতরস বিদ্যমান রহিয়াছে । 


(১) 'ন বিদ্যতে তদাস্বাদো। বিনা রত্যারদিবাসনাম্‌।' (সাহিত্যদর্পণ। তৃতীয় 
পরিচ্ছেদ্ন )। 

(২) "শক্তি; কবিত্ববীজরূপঃ সংক্কারবিশেষঃ | যাঁং বিনা কবিত্বং ন প্রসরেৎ প্রস্থতং 
ধা উপহসনীয়ং স্তাৎ।' (কাব্যপ্রকাশ )। 
0৩) স্ভুতে। বিশ্য়স্থায়িভাবে গর্ধর্বদৈবতঃ।, (সাহিত্যদর্পণ। তৃতীয় পরিচ্ছেদ ।) 
(৪) 'রমে সারশ্মৎকারঃ সব্বত্রাপ্যন্থভুয়তে। 
. তচ্চমৎকারসারত্ে সর্ধত্রাপ্যভুতো! রসঃ। . '. 
.. ভম্মাদভূতমেবাহ কৃতী নারায়ণ রমম্‌।" ( সাহিতাদর্পণ। তৃতীয় পরিচ্ছেদ ।) 


উপক্রমণিক]। ১৭ 


শৃঙ্গার, হান্ত প্রভৃতি মনোমত কয়েকটি রস ধেখানে নাই, তাহাই যদি 
[নীরস' বলিয়! পরিত্যক্ত হয়, তবে তত্তন্্রপপ্রধান কয়েকখানি কাব্য 
নি কোন গ্রন্থই অধ্যেতব্যশ্রেণীতে স্থান পাইতে পারে না। 
দর্শনশান্ত্র কঠিন? ইহ! প্রবাদের দ্বিতীয় অংশ। এ অংশে সত্য আছে । 
দর্শনশান্ত্রের কাঠিন্য ছুই কারণে হইয়াছে ;--ভাষা ও প্রতিপাগ্ঠ বিয়য় । 
অশ্রতপূর্বব অনন্যন্থলভ কতকগুলি পারিভাধিকশব দর্শনশাস্ত্রের ভায়া- 
গত কাঠিগ্ঠ সম্পাদন করিয়াছে। দর্শনশান্ত্রের প্রতিপান্ভ-বিষয়সকল 
নুক্ম হইতে ুক্্রতর। স্থৃতরাং উহাতে বিষয়গত কাঠিন্তও যথে্ই আছে। 
কেবল দর্শনশান্ত্ই কঠিন নহে। সকল শাস্ত্রে আল্লাধিক পরিমাণে 
অশ্রতপূর্বব অনন্যসাধারণ পারিভাষিক শষ ও প্রতিপাস্ বিষয়ের হুক্মতা 
আছে। অতএব নকল শাস্ত্ই অব্পবিস্তর কঠিন। কিন্তু শান্ত্রকারগণ 
যেরূপ কৌশল ও বিবেচনা পূর্বক বিষয়সকলের সন্নিবেশ করিয়াছেন, 
তাহাতে কাঠিষ্ঠ অনেকাংশে নিরাকৃত হইয়াছে । তদ্থারা সোপানা- 
রোহণের ন্যায় অপেক্ষারুত অল্নায়াসে শাস্ত্রে প্রবিষ্ট হইতে পারা যায়। 
“বিষয়সন্গিবেশের কৌশলেও দর্শনশান্ত্রের কাঠিন্য কিছুমাত্র নিরা- 
কৃত হয় নাই,_তর্কের অনুরোধে ইহা স্বীকার করিয়া লইলেও, 
দরশনশান্ত্রের অন্থশীলনবির্ীয়ে সমূ্থক স্থধীগণের উৎসাহ মন্দীভৃত হই- 
বার কোনও হেতু দেখা যায় নাগ কারণ কাঠিন্ঠের চরম ফল-- 
পরিশ্রমের আধিক্য। যে বিষয় যত কঠিন, তাহা আয্ত্ত করিতে 
তদনুরূপ পরিশ্রম করিতে হয়। কিন্তু পরিশ্রম ভিন্ন জগতে কোনও 
কাধ্য সম্পন্ন হয় না। অথচ পরিশ্রম কর্সিতে হইবে বলিয়া কেহই 
কর্তব্য কাধ্য হইতে বিরত হন না। অলসপ্রক্কৃতি লোকেই পরিশ্রমকে 
ভয় করিয়া থাকে । জনৈক গ্রস্থকার অলসের একটি উক্তি উদ্ধৃত 
করিয়াছেন। তাহার তাৎপর্ধ্য এই যে, অধ্যয়ন ছুঃখের হেতু, কে 
এই ছুঃখকর অধায়ন করিতে দমর্থ হয়? (১)। ক্ৃতবিস্তগণ এই 'উক্ধি 
শুনিয়া হান্তনংবরণ করিতে পারিবেন না। আশা করা অন্তায় নহে 





১৮ প্রথম লেক্চর । 


যে, ঘোরতর সংগ্রাম দর্শন করিলে অঙ্জুন যেমন আনন্দিত হইতেন (১ 
দর্শনশান্ত্রের অনুশীলন করিতে হইলে অধিক পরিশ্রম করিতে হয় প্‌ 
নুধীগণ তেমনি দ্বিগুণ উৎদাহান্বিত হইবেন | নিকষ প্রস্তর দ্বারা যেমন 
বর্ণের উৎকর্ষাপক্ষর্য নিাঁতি হয়, পরিশ্রমদ্বারা সেইরূপ বিষয়ের উৎ- 
কর্ষাপকর্ষ নির্ণীত হইতে পারে। যে-বিষয়-মম্পাদনে যে-পরিমাণ পরিশ্রম 
আঁবশ্ক হয়, সেই বিষয়ও নেই পরিমাণে উৎকৃষ্ট বলিয়া পরিগণিত হওয়া 
মঙ্গত। অনায়াসসম্পাগ্ঠ বিষয়ের উৎকর্ষ কদাচিৎ পরিলক্ষিত হইলেও 
সাধারণতঃ পরিশ্রমান্থসারেই বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচিত হুইয়া থাকে। 
লোকে ইহার প্রচুর দৃষ্টান্ত দেখিতে পাওয়া যায়। ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ, 
এই চতুর্বি্ধ পুরু্ার্থের মধ্যে ধর্ম ও মোক্ষের উত্তরোত্তর উৎকর্ষও ইহার 
উত্তম দৃষ্টান্ত । ধর্ম বহুল-আয়াম সাধ্য বটে, কিন্তু মোক্ষ বহুলতম-আয়াম- 
সাধ্য-_অনেক-জন্মপরম্পরা-আয়ানলত্য। অথচ মোক্ষ অপেক্ষা উৎকৃষ্ট 
বা মোক্ষতুল্য বন্ধস্তর নাই। 

অভিনিবেশপুর্বক বিবেচনা করিলে দৃষ্ট হইবে যে, মনুষ্য শ্বতাবতঃ 
পরিশ্রমশীল। পরিশ্রম কর! মনুষ্যের স্বতাবসিদ্ধ। কারণ, সাংখ্যাচারধ্যদের 
মতে--মনুধ্য রজোবিশাল অর্থাৎ রজঃপ্রধান (২)। রজোগুণ “চল 
অর্থাৎ ক্রিয়াশীল (৩)। নতরাং রজঃপ্রধান ঈশ্ুষ্ের পক্ষে ক্রিয়া অর্থাৎ 
কোন-না-কোন একটি কার্ষের অনুষ্ঠান শ্বাভাবিক। শিশুদিগের 
নিনিমিত্ব হস্তপদাদিসঞ্চালন ; বালকদিগের বস্তরনকলের ধারণ, বিক্ষেপণ, 
বিনাশন ও অপরাপর নিষ্কারণ অনুষ্ঠান; যুবা, প্রৌচি ও বৃদ্ধদিগের 
ুস্তপদাদির চাপল্য ও অন্যান্ত বৃথাচেষ্টা এই কারণেই সমুদ্ভূত হইয়া থাকে। 
কেন না, প্রাকৃতিক নিয়ম ভিন্ন স্বভাবের অন্যথাকরণ সাধ্যাতীত। সহত্র 
সহম্র শিল্পী ধরমত্যে যুগসহত্্র চেষ্টা করিলেও দলিলের শীতলতা, দহনের 
উষ্ণতা) তপনের প্রকাশকতা, পবনের মনোহর স্পর্শের অন্তথা করিতে 
পারে না। এইই রি শ্বামপ্রশ্বাম এবং হস্তগদাদিদধশালনের 


। । ছা রি 
বিসিসি 








রা ) "অতীব নমরং রা হর্যো বন্মোপজায়তে।' (মহাভারত) 
রহ) ''মধো রজোবিশালঃ:) (লাধ্থাকারিকা)। 
দা ক চাক রন (সাম্াকারিকা) 


 উপক্রমণিক!। ১৯ 


 অন্ুবৃত্বি দেখিতে পাওয়া যায়। শ্বতাবের অন্তথা হইতে পারে না বণিয়াই 
তগবান্‌ বলিয়াছেন, না | 

“ন হি কশ্চিং নি জাতু ভিত ঃ 

কার্ধাতে হাবশঃ কর্ম সর্বঃ প্রকৃতিজৈগ্ত গৈ: ॥ঠ (১) 


-কেহ কখনও ক্ষণকালও কর্ম না করিয়! থাকিতে পারে না। প্রকৃতির 
গুণনকল প্রাণিদিগকে কর্ম করিতে নিযুক্ত করে। তাহারা অন্বাধীনভাবে 
কর্ম করিতে বাধা হয়। ইচ্ছায় হউক বা! অনিচ্ছায় হউক, মনুষ্য যখন 
কর্ম বা পরিশ্রম না করিয়া থাকিতে পারে না, তখন সেই পরিশ্রম উৎকৃষ্ট 
বিষস্বে প্রযুক্ত হওয়াই প্রার্থনীয়। ্ 

কম্্ম বা পরিশ্রম মন্ুষ্বের স্বভাবসিদ্ধ”_ এই সিদ্ধান্তে মর কিছু 
আপন্ডি উপস্থিত হইতে পারে। তাহ! ক্রমশঃ প্রদর্শিত ও মীমাঁংদিত 
হইতেছে । প্রথমতঃ, নিদিধ্যাসন বা সমাধি, শাস্ত্রে উপদিষ্ট হইয়াছে। সমাধি- 
কালে যোগীদিগের কর্ম পরিলক্ষিত হয় না। আননদ্বার। শরীর নিশ্চল 
থাকে । কুস্তকদ্ধার! প্রাণবাধুর ক্রিয়াপর্যাস্ত নিয়মিত হয়। স্ৃতরাং কর্ম 
মন্থুযোর স্বাভাবিক হইলে সমাধি হইতে পাঁরে না, সমাধি হইলে কর্ণের 
স্বাভাবিকত্ব-সিদ্ধাস্ত তঙ্গ হয়। এইরূপ উভ্য়পক্ষে যে দোষ হয়, তাহাকে 
দাশনিকেরা 'উভয়তঃপাঁশা রজ্জ্‌ঃ” বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন (২)। যে 
রঙ্জুর উভয়প্রান্তে বন্ধনযন্ত্র থাকে, তাহাকে “উভয়তঃপাখা রজ্জু” বলে। 
উভয়তঃপাশা। রঙ্ইর কোনদিকেই যাইবার উপায় নাই। কারণ, থে 
দিকেই যাওয়া যাউক না কেন, 'বন্ধন হইতে রক্ষা পাওয়া অসস্ভব | 
উল্লিখিতশ্রেণীর দোষও এইরূপ। যে পক্ষই অবলম্বন করা যাউক না 
কেন, দোষের হস্ত হুইতে পরিত্রাণ পাইবার উপায় নাই। | 

এই আপত্তির উত্তরে বক্তবা এই যে, সাধারণতঃ স্বভাবের অন্যথা 
করা সাধ্যাতীত হইলেও, প্রযতব্ধারা কিয়ংকালের জন্য কোন কোন 
স্বাভাবিক ধর্ের প্রতিরোধ বা বিরুদ্ধধর্থের সমাবেশ করিতে পারা যায়। 
যেমন, অগ্নির ঘাহিক। শক্তি স্বভাবসিদ্ধ? কিন্তু এককধাতীয় মণি আছে, | 


০০০ 








০) জিত, 7 


( ২) ) ইউরোপীয় দার্শনিকেরা ইহাকে ডাইলেগ। ! [চট বং নির্দেশ করেন। 





হ প্রথম লেক্চর। 


যাহা! নিকটে রাখিলে, তৎকালে অগ্নির দাহিকা শক্তি প্রতিরুদ্ধ হয় (১)। 
তখন দহনের সহিত দাহ্বস্তর সংযোগ করিলেও উহা! দগ্ধ হয় না। 
জলের শীতলত! স্বভাবসিদ্ধ হইলেও অগ্নি বা আতপ সংঘোগে তাহার 
সাময়িক-উষ্ণতা-সম্পাদন বা শীতলতার প্রতিরোধ হইয়া থাকে। প্রক্রিয়া 
বিশেষ দ্বারা জলের ম্বাতাবিক দ্রবত্ব কিয়ংকালের জন্য প্রতিরুদ্ধ হইয়া 
করকা ও তুষারেরও উৎপত্তি হয়। সেইরূপ কর্ম মনুষ্যের স্বভাবসিদ্ধ 
হইলেও যোগশাস্ত্োক্ত উপায় দ্বারা সমাধিসময়ে তাহা৷ প্রতিরুদ্ধ করা 
যাইতে পারে |” 

ছিতীয়তঃ, ঘ্লৌকিক উপায় দ্বারা স্বভাবের অন্যথাকরণ সাধ্যাতীত 
হইলেও শান্্ীয় উপায়ের অসাধ্য কিছুই নাই। আমাদের ইন্জিয়সকল 
স্বভাবতঃ বিষয়গ্রবণ অর্থাৎ বিষয়ের প্রতি ধাবমান হইলেও,-_আমাদের 
মন শ্বভাবতঃ চঞ্চল হইলেও, শাস্ত্রোক্ত শমদমাদি ও জ্ঞান দ্বারা ইন্দরিয়- 
সকলের বিষয়প্রবণতা ও মনের চাঞ্চল্য নিবারিত হইয়া থাকে। মনুষ্য 
স্বতাবতঃ গুরু ও স্থূল হইলেও, লঘিম! ও অণিমারূপ যোগবিভূতি দ্বারা 
এত লঘু ও এত ুস্ম হইতে পারে যে, চন্ত্রশ্মি-অবলগ্বনে চন্ত্রলোকে গমন 
ও শিলার মধ্যে অনুপ্রবেশ করিতে সক্ষম হয়। যোগশাস্ত্রোক্ত বিভূতি- 
সকলের প্রতি অবিশ্বাস করিবার কারণ নাই। কেন না, যোগসাধন। 
দ্বারা যে-কোন-একটি বিভূতি লাভ করিতে পারিলে, শাস্ত্রীয় সমস্ত বিষয়ে 
মোগীর ঘুঢ়তর বিশ্বাস উৎপন হইবে, এই অভিপ্রায়েই যোগশাস্ত্ে চিত্তের 
পরিকর্ম (২) ও বিভৃতিসকল উপদিষ্ট হইয়াছে (৩)। ইহার শতশত 





এপ 





(১3 ইহা কি এশ্বেস্টস্‌ (48986০৪)1 
(২) নানি ওহাতির হুখছুঃখপুণ্যাপৃণ্যবিধয়াপাং ভাবনাতশ্চিত্তপ্রসাদনম্‌।” 
(পাতঞ্জলনুত্র । ১। ৩৩।) 
হসক্কোগীপর সমস্ত প্রাণীতে মৈত্রী, ছুংখিত সমস্ত প্রাণীতে করুণা, পুণ্যগীলদিগের 
প্রতি মুদদিতা এবং পাগগীলদিগের প্রতি উপেক্ষা ভাবন! করিবে। এই ভাবনাচতু্টয 
যোগশাস্ত্রে চিত্তপরিকর্ত্ণ বলিয়া অভিহিত । 
(৩) 'তন্মাচছানরসুমানাচার্য্যোগদেশোপোদ্বলনার্ঘসেবাবস্ঠং ব শিব গ্রতার্গীকর্তবা:। 
'তক্র ততুপসিষ্টার্থকদেশগ্রতাঙ্ষড়ে তি সর্বং হুহুক্কবিষয়ষগ্যাগবর্গীৎ ্রদ্ধীয়তে। 
| ধুকে চিগুপরিকর্ধ বিরদিগ্ততে। (যোগভাষা। ১। ৩৫ 1) 


পক্রমণিকা। ২১ 


শাস্ত্রীয় দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতে পারে। কিন্তু বাছুল্যভয়ে অধিক নহী 
প্রদর্শনে বিরত হইলাম। 

তৃতীয়তঃ, কর্ম বা পরিশ্রম দুইপ্রকার,-বান্ ও আভ্যন্তরীণ । 
সমাধিকালে বাস্থকর্ম না থাকিলেও আত্যন্তরীণ কর থাকে । কুম্তক- 
দ্বারা প্রাণবাযুর বহিঃসঞ্চার নিবারিত হয় বটে, কিন্তু আভ্যন্তরীণ সঞ্চার 
নিবারিত হয় না। আভান্তরীণ-বায়ু-দধশার না থাকিলে শরীর পৃতি- 
রন্বযুক্ত ও গলিত ইইতে পারে। শরীরধারণপ্রযন্তও সমাধিকালে বিলুপ্ত 
"ছয় না। শরীরধারণপ্রযত্ব না থাকিলে যোগীর শরীর পড়িয়া যাইতে 
পারে। প্রাণবায়ুর আভ্যন্তরীণ সঞ্চার থাকে বলিয়াই*সমাধিকাঁলে যোগী- 
দিগের পাদতল হইতে মস্তক পর্যন্ত পিপীলিকাপঞ্চরণ্রের স্ায় একপ্রকার 
স্পর্শ অনুভূত হয়, এবং প্রাণবাষু ধমনীবিশেষে প্রতিহত হইয়া ঘণ্টাদি- 
ধ্বনির হায় একরূপ ধ্বনি উৎপাদন করে, তাহাও যোগিগণ অনুভব 
করিয়া! থাকেন। ইহা যোগশান্ত্রে বগিত আছে। 

সমাধিকালে ধ্যেয়বস্তর যথার্থ ম্বরূপের যে পরিস্ৃর্তি হইয়া থাকে, উহা] 
জ্ঞান-__উহ! প্রত্যক্ষের পরাকাষ্ঠা, উহ। “ক্রিয়া? নহে। জ্ঞান'--কাঁরণ ; 
ক্রিয়া__কার্্য। আত্মা মনের সহিত, মন ইন্দ্রিয়ের সহিত ও ইন্দ্রিয় 
বিষয়ের সহিত সংযুক্ত হইলে আত্মাতে জ্ঞানের উৎপত্তি হয় (১)। *জ্ঞান। 
হইলে তদ্িধয়ে ইচ্ছা হয়; “ইচ্ছা' কৃতি বা প্রধত্বের অর্থাৎ প্রবৃত্তি বা 
নিবৃত্তির উৎপাদন করে ; প্প্রযত্্ চেষ্টা বা কায্িকব্যাপারের জনক) 
ক্রিয়া” চেষ্টাজন্ত (২)। যে বিষয়ে আমাদের জ্ঞান উৎপন্ন হয়, সেই বিষয়ে 
আমাদের ইচ্ছা হইয়া থাকে। অর্থাৎ জ্ঞাত বিষয়টি উপাদেয় বা উৎকৃষ্ট 
বলিয়া বিবেচিত হইলে, তাহার “উপাদান, বা'সংগ্রহ করিবার ইচ্ছা, 
এবং জ্ঞাত বিষয়টি হেয় বা নিকৃষ্ট বলিয়া বিবেচিত হইলে, তাহার “হান, 
বা বর্জন করিবার ইচ্ছা হইয়া থাকে । অজ্ঞাতবিষয়ে কখনও ইচ্ছা হইতে 
পারে না। “ইচ্ছা” তদন্ুরূপ প্রযত্ব উৎপাদন করে। প্রযত্বদ্বার। চেষ্টা 





(১) আত্ম! মনস। সংযুজাতে মন ইন্জিয়েশ ইন্ডিয়মর্থেন॥ (্যায়তাষ্য )। 
(২) 'জ্ঞানজন্া ভবেদিচ্ছ! ইচ্ছাজন্তা। কৃতির্ভীবেৎ। 
কৃতিজন্ত1 ভবেঙ্গেষ্টা ভন্জন্য। চ ক্রিয়োচাতে ॥' (কারিকা)। 


সহ; প্রথম লেক্চর। 


জন্মে। চেষ্টা হইতে হান বা উপাদান সম্পন্ন হয়। সুতরাং 'ভ্ঞান' ক্রিয়ার 
উৎপত্তির হেতু, উহা ক্রিয়া নহে। 

যেরূপ বলা হইল, তাহাতে প্রতিপন্ন হইতেছে যে, “ক্রিয়া” প্রযত্রদাধ্, 
'জ্ঞান” প্রযত্বসাধ্য নহে, প্রত্যুত ইচ্ছা দ্বার! প্রযত্বের সাধন। 'প্রবন্রা 
চেষ্টাদ্বার! ক্রিয়ার সাধন । সুতরাং জ্ঞান” ও “মানসী ক্রিয়া আলোক ও 
অন্ধকারের ন্যায় অত্যন্ত ভিন্ন পদার্থ। কদাচিৎ কোন ক্রিয়া কোন 
জ্ঞানের 'প্রযোজকঃ অর্থাৎ পরোক্ষভাবে বা ব্যবহিতরূপে পরম্পরা-হেতু 
হইলেও, এ প্রয়োজকক্রিয়াও যে জ্ঞানজন্য ও জ্ঞান হইতে ভিন্ন, তাহাভে: .. 
ঘসন্দেহ নাই। প্রমাগনদ্থারা গ্রমেয়ের যথার্থ স্বরূপের অবগতির নাম 'জ্ঞানঃ। 
অর্থাৎ "দান? জ্য়ুবস্তর গ্রকৃত স্বরূপ অবলম্বন করিয়া পমুৎপন্ন হয় ও 
তাহারই প্রকাশ করে (১)। “মানসী ক্রিয়া" বস্তুর স্বরূপের অপেক্ষা 
করে না। যেমন পধ্ণগ্নিবিগ্ভাতে (২) পুরুষ ও স্ত্রী প্রভৃতি পাঁচটি বস্তুকে 
অগ্নিরূপে চিন্তা করিবার উপদেশ আছে। পুরুষাদিতে অগ্রিবৃদ্ধি মানসী 
ক্রিয়া”, জ্ঞান নহে। কারণ, উহা পুরুষপ্রবত্রাধা এবং উহাতে বস্তুর 
স্বূপের অপেক্ষ! নাই ৷ অধিকন্ত, উহা বিধিপরতন্ত্র। প্রসিদ্ধ অগ্রিতে যে 
অগ্নিবুদ্ধি হইয়া থাকে, তাহা 'জ্ঞান” মানসী ক্রিয়া নহে। কারণ, উহা 
পুরুষপ্রযত্বদাধা নহে, উহ! বস্তত্বূপের অপেক্ষা করে,__উহা বস্তুত 
বিধিপরতন্ত্র নহে। “মানসী ক্রিয়া'_বস্তৃতন্ত্র নহে, পুরুষতন্্। কেন না, 
পুরুষাদিতে অগিবুদ্ধি পুরুষের ইচ্ছাধীন। পুরুষ ইচ্ছা করিলে পুরুষাদিতে 
অগ্নিবুদ্ধি করিতে পারে, ইচ্ছা! করিলে অগ্নিবুদ্ধি না করিতেও গারে। 
কিন্তু গ্রমিদ্ধ অগ্সিতে ইন্রিয়গন্ন্ধ হইলে যে অস্নিবদ্ধি উৎপন্ন হয়, তাহা 
গুরুষাদিতে আগ্রিবুদ্ধির স্তায় পুরুষের ইচ্ছাধীন নহে। উহ! বস্তৃতন্ত্। পুরুষ 
ইচ্ছা না করিলেও উহা]! উৎপন হইবে। সুতরাং প্রসিদ্ধ অগ্িতে অগ্নিবুদ্ধি 
ড্ঞান” মানসী ক্রিয়া নহে। ফলতঃ 'জ্ঞান,__বস্তশ্বরপদাপেক্ষ, মানসী 
ক্রিয়”-_বনতত্বরপনিরগেক্ষ । জ্ঞান ও মানসী ক্রিয়ার এই সগ্ম গ্রভেদের 
গ্রতি লক্য কর | কর্তা 1 


দা পপ ১ 
খা 





রক 


( ১) শ্মারণ, রাখিতে হইবে থে, ষথার্ঘজ্ঞানের প্রতি লক্গা রাখিয়। টা বল! হন ॥ 
৫২ ২ ) ছাপোগ্যোগর দা দিতে পঞ্কাপিবিদা। উপদিষ্ হইয়াছে |. 








উপক্রমণিক]। | ২৩ 


“কর্ম বা! পরিশ্রম মন্থুষ্যের স্বাভাবিক"_-এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্বিতীগ 
আপত্তি এই হইতে পারে যে, কর্ম মনুষ্ের স্বাভাবিক হইলে, মুক্তিলাভ 
করা অসম্ভব হইয়া উঠে। কারণ, কর্ণান্ধন ছিন্ন না হইলে মুক্তি হইতে 
পারে না) পক্ষান্তরে, স্বাভাবিক কর্মবন্ধনের সমুচ্ছেদ সম্ভবপর নহে । 

এই আগন্ির উত্তর পুর্কেই প্রদত্ত হইয়াছে। লৌকিক উপায়ে 
কন্মবন্ধনের সমুচ্ছেদ অসম্ভব হইলেও, অলৌকিক অর্থাৎ শাস্ত্রীয় উপায়ে 
উহা সম্ভবপর হইবার কিছুই বাধা নাই। বিশেষরূপে বিবেচনা করিলে 
প্রতীত হইবে বে, দ্বিতীয় আপত্তির কিছুমাত্র সারবত্তা নাই। তাহার 
কারণ প্রদণিত হইতেছে। * 

কেন বা পরিশ্রম করা মন্ষ্যের শ্বভাবসিদ্ব'-_-এই ধর্সদ্ধান্তে মহুষ্যশবের 

*খ্অর্থের প্রতি মনোযোগ করা আবশ্তক। মন্ুয্যুশবের অর্থ-“সংঘাত, 
অর্থাৎ ইন্জিয়াদিযুক্ত শরীর । কারণ, মনুয্যত্ব-ব্াহ্মণত্ব-প্রভৃতি “জাতি” বা 
ধর্ম--শরীরগত। “আত্মা, সংঘাতমংযুক্ত হইলেও আত্মাতে মনুষ্যত্ব ব৷ 
্রা্মণত্বাদি “জাতি” নাই। নট যেমন তত্তদূবেশ পরিগ্রহপূর্বক কোনসময় 
অজাতশক্র, কোন সময় বংসরাজ, কোনসময় বা জামদগ্ন্য হয়, আত্মাও 
তদ্রপ বিতিন্ন শরীর পরিগ্রহ করিয়া কোনসময় মনুষ্য, কোননময় বা 
পশ্বাদিরূপে প্র্ীরমান হয়। “আমি মনুষ্য, আমি ব্রাহ্মণ ইত্যাদি 
প্রতীতি “অধ্যাস*মান্র অর্থাৎ ভ্মাত্্ক জ্ঞান। 'দংঘাত ও “আত্মা, 
তমঃগ্রকাশের স্ঠায় অত্যন্ত ভিন্ন হইলেও, দোষপ্রযুক্ত এ ভেদ গৃহীত 
হয় না। প্রত্যুত সংঘাত ও আত্মাকে এক করিয়। “আমি মনুষ্য” 
আমি ব্রাহ্মণ, ইত্যাদি জ্ঞান হইয়া থাকে। বন্তগত্যা আত্মতত্ব-তরাহ্গণ_... 
কষত্রিয়াদি-ভেবাতীত। হি 
পিস উনারা পা রর 

পুর্বে বলা হইয়াছে যে,__“রজোুণ ক্রিয়াস্বভাব+, স্থৃতরাং রজঃপ্রধান 
মনুষ্যও ক্রিয়ান্বভাব। “শরীর-_তৌতিক পদার্থ, স্থতরাং বিগুণাত্মক . 
অর্থাৎ মমস্ত জড়বর্গই সত্ব, রজঃ ও তম:, এই গুত্রয়ের কাধ্য । “উপাদেয়? 
বা কার্ধ্য-_ উপাদানের .সমানধর্ঘটা হয়! থাকে । যেমন ঘটের উপাদান, না 
-_ মৃত্তিকা অ্ধাৎ মৃত্তিকাদ্বারা ঘট নির্দিত হয়, এইজন্য ঘটও ৃ্ধিকন্ক !. 
সুবপর্ধার! কুল নিশ্মিত হয়, এইজন্য, কুগুল ইক উপতরারা। 
ভূত ও ভৌতিকের নির্বাণ হয, এইজ ভূত ও ভৌ চক, সং 








২৪. প্রথম লেক্চর । 


 ন্িগুণাত্মবক। তন্মধ্যে মনুষযশরীর--রজংঃ প্রধান, স্থৃতরাং ক্রিয়াম্বভাব। 
আত্মা জড় নহে, আত্মা চৈতত্তস্বরূপ বা চেতন। আত্ম ত্রিগুণাত্বক 
নহে, আম্মা! গুণাতীত । গুণাতীত আত্মার ক্রিয়া হইতে পারে না। কারণ, 
ক্রিয়া__রজোগুণের কার্য । পক্ষান্তরে, শরীরের মুক্তি হয় না, আত্মার 
মুক্তি হয়। অতএব “কর্ম” শরীরের স্বভাবসিদ্ধ হইলেও, আত্মার মুক্তি- 
লাভের কোনও ব্যাঘাত হইতে পারে না। 
আম্মা গুণাতীত বলিয়া “নিক্ষ্িয় | নৈয়া়িকমতে ক্রিয়ার যেরূপ কারণ 
প্রদর্শিত হইয়াছে, তদন্ুদারেও আত্মাতে ক্রিরা হইতে পারে না। যাহার 
পরিমাণ অপকৃষ্ট অর্থাৎ যে বস্ত কোন-নিদিষ্টদেশ-পরিচ্ছিন্ন, তাহাকে 
মূর্ত” বলে। মূর্তহ”__ক্রিয়ার কারণ। অর্থাৎ মূর্তপদার্থই ক্রিয়ার 
আশ্রয়_-মূর্ত পনার্থেই ক্রিয়া জন্মে। শরীর-_মূর্তপদার্থ, স্তরাং ক্রিয়ার: 
আশ্রয়। আম্ম। “অমূর্ভ'_বিভূ বা সর্ধব্যাপক, এইজন্য আত্মা ক্রিয়ার 
আশ্রয় নহে। অর্থাৎ আত্মা-_নিষ্রিয়। একটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে এই 
বিষয়টি সহজবোধ্য হইতে পারে। “গমন+--একটি ক্রিয়া। উত্তরদেশ- 
জীংযোগানকুল ব্যাপারের নাম “গমন? | যে দেশে যে অধিষ্ঠিত গ্রাকে, 
তদদেশ অপেক্ষা ভিনদেশই তাহার পক্ষে উত্তরদেশ” | যে ব্যাপার বা 
ক্রয় দ্বার। উত্তরদেশের মহিত সংযোগ সম্পন্ন হয়, তাহাই উত্তরদেশ- 
ংযোগান্ুকুল ব্যাপার? বা গমনক্রিয়া । যাহা! “মূর্ত” অথাৎ ঘাহার পরিমাণ 
কোন দেশবিশেষে সীমাবদ্ধ, তাহারই গমনক্রিক্না হইতে পারে। কেন না, 
ৃত্তপদার্থেরই পূর্বদেশনংঘোগ বিনষ্ট হইয়া দেশান্তরের সহিত সংযোগ 
হওয়া সন্তবপর । যাহা “অমূর্ত', অর্থাৎ যাহার পরিমাণ দেশবিশেষ- 
পরিচ্ছিন নহে_বাহা বিভু বা সব্বদেশসংযুক্ত, কোনরূপেই তাহার 
গমনক্রিয়া হইতে পারে না। কেন না, বে সমস্তদেশে অবিষ্টিত, তাহার 
পক্ষে দেশাস্তর বা উত্তরদেশ সম্ভব হয় না। আত্মা--অমূর্ভ বা বিভব, 
ইং আত্মা ননিষ্টিয়ঃ | " 
জিজ্ঞান্ত হইতে পারে যে, আত্ম! নিঙ্িয় রী তাহার কর্মাও নাই, 
| তাহার বন্ধনও নাই, তাহার ছেদনও নাই। সুতরাং “কর্মবন্ধন ছিল 
হই ছইনে লে জাত 1 মুক্ত হন”, অজাত পুত্রের নামকরণের স্তায় এই উক্তি 
মিত্াস্ত হাস্তান্পদ হইতেছে। শরীরের কর্ণ দ্বারা যদি আত্মার বন্ধন হয়, 








উপক্রমণিকা 1 | ২৫ 


তবে দেবদত্ের কন্ম দ্বারাও যজ্ঞপত্তের বন্ধন হইতে পারে ? এতদুত্তরে 
ধক্তব্য এই যে, শরীরের কর্ম আত্মার বন্ধনস্বন্নপ হইবার বাঁধা নাই। 
কেন না, শরীর ও আত্মাকে এক করিয়া 
'অহং স্ুলঃ, অহং কৃখঃ, অহং করোমি, অহং চ্ছামি /-- 

অর্থাৎ আমি স্ুল”, আমি কৃশ', আমি করিতেছি”, আমি যাইতেছিঃ_- 
ইত্যাকার শতশত অধ্যান বা মিথাজ্ঞান বর্তমান আছে। শরীর ও 
আত্মার যখন অভেদাধ্যাস রহিয়াছে, তখন শরীরের কর্ম আত্মার 
বন্ধনন্বদ্ধপ হইবে, তাহা আশ্চর্যের বিষয় নহে। দেবদতভ্ ও যজদত্তের 
অভেদাধাম নাই। অর্থাৎ আত্মা ও দেহকে এক করিয়া যেমন 
“অহং মনুষ্যঃঃ ইতাদি অভেদাধ্যান আছে, দেবদত্ত ও য়েজ্জদন্তকে এক 
করিয়া সেইরূপ অভেদাধ্যাস দেবদন্ডের বা হজ্ঞদত্তের নাই। এইজন্য দেব- 
দত্তের কর্ম যজ্জদন্তের বন্ধনস্বরূপ হয় না। অধ্যান বা মিথ্যাজ্ঞান--য়তত 
অনর্থের মূল। একএকটি মিথ্যাজ্ঞানের জন্য আমাদিগকে বিস্তর অস্থৃবিধ! 
ভোগ করিতে হয়। ইহ! সকলেই জানেন, স্থলবিশেষে পুজ্রাদির কার্ষ্যের 
জন্য পিত্রাদিকে দায়ী হইভে হয়। 'নংসর্গাধ্যাদ অর্থাৎ “আমার পুত্র 
+আমার পরিজন? ইত্যাদি 'মমকার, তাহার কারণ। সৈনিকের যুদ্ধ করেনঃ 
সৈনিকের জয় বা পরাজয় রাঁজার ইষ্ট রা অনিষ্ট সম্পাদন করে। কারণ, 
,সৈনিকদিগের প্রতি রাজার মমকার বা সংসর্থাধ্যান আছে। যেরাজার 
সৈনিকদিগের প্রতি মমকার বা সংসর্গাধ্যান নাই, সৈনিকদিগের জয় » 
পরাজয়ে ভীহার ইষ্ট ৰা অনিষ্ট হয় না। যে সৈনিকদিগের প্রতি যে 
বাজার মমকার বা সংসর্থাধ্যান ছিল, বৈরাগ্যাদিকারণরশতঃ তাহার 
দেই অধ্যান অপনীত হইলে, সেই সৈনিকদ্দিগের জয়পরাগয়ে আর 
তাহার ইষ্টানিষ্ট হয় না। রাঁজধি জনকের তত্বজ্ঞান স্বারা “মিখাজ্ঞান' 
অর্থাৎ অহঙ্কার-মমকার অপনীত হইয়াছিল রলিয়াই তিনি বলিতে সমর্থ 
হইয়াছিলেন যে. 

“মিথিলারাং প্রদীপ্তায়াং ন মে লাভো ন যে ক্ষতি: 17 
মিথিলানগরী প্রজ্জলিত হইলে আমার লাভও নাই, ক্ষতি নাই 
্বত্বজ্তানদ্বারা উভয়বিধ অধ্যাস অর্থাৎ অহঙ্কার-মম্কার, বিদুরিত. হইলে, 
শরীরের কর্ম আত্মার নধর হ্মনা। এইই ট্ হইয়াছে ছে 

ন্‌ 








২৬ প্রথম লেক্চর। 


1 অশ্বমেধমহলরেণ বরন্মহত্যাশতেন বা। 
'পুণাপাপৈর্ন লিপ্যন্তে যেষাং ব্রহ্ম হৃদি স্থিতম্‌ ৮ 

ফাহাদের হৃদয়ে ব্রহ্ম আছেন, অর্থাৎ ধাহাদের আত্মতত্বসাক্ষাৎকার 
হইয়াছে, সহত্র অস্বমেধ ও শত ব্রহ্মবধ করিলেও তাহারা পুণ্যপাপপিপ্ত 
হন না | 

ফলতঃ বেদান্ত গ্রভৃতি দর্শনের মতে বস্তগত্যা আত্মার কর্মবন্ধন নাই । 
মিথ্যান্ঞানমূলে আত্মার বন্ধন এবং মিথ্যাজ্ঞান অপনীত হইলেই "মুক্তি 
হইল” বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে আত্মা সর্বদাই মুক্ত । এইসকল বিষয় 
যথাস্থানে বিবৃত হইুবে। . 

্যায়মতে 'প্র্র'-_আত্মার গুণ, শরীরের গুণ নহে। কিয়াহৃল | 
প্রযত্রের আশ্রয়_কর্তী,। অর্থাৎ যাহার গ্রযত্রদ্ধারা ক্রিয়া সম্পন্ন হয় 
তিনিই “কর্তা” । শরীরে ক্রিয়া, জন্মে বটে, কিন্তু সেই ক্রিয়ার জনক 
প্রযত্ব-_আ'ত্মাশ্রিত। প্রথমতঃ আত্মাতে প্রযত্র উৎপন্ন হয়, পরে সেই 
প্রযন্দ্ধারা শরীরের “ক্রিয়া নিষ্পন্ন হইয়া! থাকে। অতএব “আত্মা 
এক্রিয়ার আশ্রয় না হইলেও, ক্রিয়ার কর্তা । | 
৭ পক্তয়া” অন্তগত হইলেও, ক্রিয়ার কর্তা ক্রিক্কাজন্ত গুভানুভ ফলভোগ 
করিবেন, সন্দেহ নাই। পুরুষের প্রযত্ব দ্বারা বাণ নিক্ষিপ্ত হয়, নিক্ষিপ্ত 
বাণ বধের বধসম্পাদন করে। এম্থলে গতিক্রিয়া বাণসমবেত হইলেও, 
ঘে পুরুষ তাহার কর্তা, অর্থাৎ যাহার প্রধত্দ্বারা বাণের ক্রিয়া! সমুৎপন্ন 
হইয়াছে, দে-ই বধের ফলভাগী, বাঁণ বধের ফলভাগী নহে। নেইবূপ 
প্রিয়া শরীরসমবেত হইলেও, শরীর-_ক্রিয়ার ফলভাগী নহে, ক্রিয়ার 
কর্তা আত্মাই তাহার ফলভাগী । স্থতরাং স্তায়মতে - শরীরসমবেত ক্রিয়া 
আত্মার বন্ধনম্বরূপ হইবে, ইহাতে কিছুই বিস্ময়ের বিষয় নাই। 

“কর্তা শাস্তার্থবন্াৎ, (১)--ইত্যাদি ুত্রদ্বার বেদান্তদর্শনেও আত্মার 
ওপাধিক কর্তৃত্ব অঙ্গীক্কৃত হইয়াছে । সাং ্যাচারধ্যদিগের মতে কর্তৃত্ব 
. শবণধর্ম, আত্মধন্দ নহে। তাহাদের মতে কর্তৃত্ব 'শ্বণের ধর্ম হইলেও, 
এবং আত্মা সম্পূর্ণ উদাপীন বা মধ্যস্থ হইলেও, তিনি (আত্মা) কর্তার 
্ য়, দা, হন। তাহার কারণ এই যে, বুদ্ধি_তিুপাত্মিকা। | | 
্‌ ) বোস্তদর্শন ২। ৩। ৩) লুন্্। 








উপক্রমণিকা। ২ 


গ্রবত্বাদি__বুদ্ধিধর্ম। বুদ্ধি বিশেষভাবে আত্মার সন্নিহিত বলিয়া, আত্ম. 
বুদ্ধিতে প্রতিবিদ্বিত হন। এই সন্িধান বা মংযোগবশতঃ অচেতনা! বুদ্ধি 
চিচ্ছায়াপত্বিদ্বারা চেতনের স্তায়.প্রতীয়মানা হয়। এবং মুখের মালিস্ত না 
থাকিলেও, মগ্সিন দর্পণে মুখের প্রতিবিষ্ব পড়িলে, দর্পণধর্খব 'মালিন্তঃ 
যেমন মুধে আরোপিত হয়, তেমনি আত্মার কতৃত্ব না থাকিলেও, | 
বুদ্দিধর্্ম “কর্তৃত্ব বুদ্ধিপ্রতিবিষ্বিত আত্মাতে আরোপিত হয়। ভগবান্ও 
ইহাই বলিয়াছেন।-_- 
'প্রকৃতেঃ ক্রিকমাণানি গুণৈঃ কর্মমাণি সব্বশঃ। 
অহঙ্কারবিমুঢ়াত্ব! কর্তাহমিতি মন্তাতে ॥১ (১) 

সমস্ত কর্ই প্রকৃতির গুণ দ্বার! ক্রিয়মাণ হয়। আত্ম! “অহস্কারবিষুঢ়' 
অর্থাৎ ইন্দট্রিয়াদিতে আত্মাধ্যান দ্বারা বিমূঢ় হইয়! নিজেকে 'কর্খের কর্তা! 
বলিয়া বিবেচনা! করেন। বুদ্ধিধর্ম্ের আত্মাতে আরোপ হয় বলিয়াই, 
আত্মার নংদার এবং স্ুখছুঃখভোগ বাপদিষ্ট হয়। তত্বজ্ঞান হইলে এই 
কর্ণবন্ধন ছিন্ন হইয়া! যায়। কারণ, তত্বজ্ঞান সঞ্চিত কর্ণের বিনাশ বা 
বীজভাব নষ্ট করে। কর্মের বীন্দভাব নষ্ট হইলে, কর্ম বিদ্যমান থাকিলেও, 
ফল উৎপাদন করিতে পারে না। কেন না, মিথ্যাজ্ঞান কর্মফলেরক্ঈী 
মহছকারি-কারণ। খাহার আত্মতত্ব্নাক্ষাৎকার হইয়াছে, তাহার সঞ্চিত- 
কর্মরূপ কারণ থাকিলেও, মিথ্যাজ্ঞানরূপ সহকারি-কারণ নাই বলিয়া, 
কর্মফল উৎপন্ন হইবে না। এবিষয়ে শাস্ত্রে একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত প্রদর্শিত 
হইয়াছে। তাহা এই-_ 

'মিথ্যান্জানসলিলাবমিক্তায়ামেবাজ্মুভূমে কর্মাবীজং ফলাঙ্কুরমারভতে, 
তু তত্বজ্ঞাননিদাঘনিপীতসলিলায়ামুষরায়ামপি + (২) 
বীজ অস্কুরোৎপন্তির কারণ। তাই বলিয়া নির্জল শুক্ষভূমিতে বীঞ্জ 
বপন করিলে অন্কুর জন্মে না। কিন্তু জলসিক্ত ভূমিই অস্কুরোৎপত্তির 
উপযুক্ত-স্থান। গ্র্তাবিত বিষয়ে 'কর্দ-_বীজ, 'আাত্মা'হৃষি, মিথ্যা 
জানল, “ফণ'অদুর, “তত্ভান'নিদাঘ অর্থাৎ ্রীন্স-খতু বা 


১ ১ ািলি 


চে 
সু 








(0১) ভগবদ্গীতা। ৩।। ২৭ 
(২) চন্ত্রশেখর 2385 ভামতী গতি অনেক, টু ইহার সমানর্ঘ বারা 
আছে। 875 ৃ 


হি, প্রথম লেফ্চর। 


প্রথরতাপরূপে বর্ণিত হইয়াছে। উদ্ধৃতবাক্ের এই অর্থ নিশ্পন্ন 
হইতেছে যে, মিথ্যাজ্ঞানরূপ-জলগিক্ত আত্মবূপ ভূমিতেই কর্মুরূপ বীজ 
ফলরূপ অঙ্কুর উৎপাদন করে, তত্বজ্ঞানরূপ নিদাধদ্বারা যাহার মিথা- 
ভ্ঞানরূপ সলিল নিগীত হইয়াছে, তথাবিধ শুধু উর আত্মভূমিতে 
কর্মফল জন্মে না। 

প্রসঙ্গক্রমে প্রস্তাবিত বিষয় হইতে কিছু দূরে আনিয়া পড়িয়াছি। 
এখন প্রস্তাবিত বিষয়ের অনুসরণ করা যাইতেছে । পরিশ্রমের কর্তব্যতা- 
বিষয়ে বক্ষামীণ আপত্তি উঠিতে পারে। পরিশ্রম করিলে কষ্ট বা দুঃখ 
হয়, ইহ প্রত্যক্ষপেদ্ধ। দুঃখ ম্বভাবতঃ থিষ্ট অথাৎ ছ্বেষের বিষয়। 
কেহই ছুঃখ ভালবাসে না। সকলেই ছুখকে দ্বেষ করিয়া থাকে। 
স্থৃতরাং ছুঃখ “ছিষ্ট'। পরিআম ছুংখজনক, সুতরাং 'দিষ্টপাধন? | “দ্বিষ্- 
মাধনতাঁজ্ঞান” নিবৃত্তির কারণ। অতএব পরিশ্রমে প্রবৃত্তি না হইয়! 
নিবৃত্তিই হইতে পারে। ইহাতে এই আশঙ্কা! হইতে পারে যে, দিষ্টনাধনত1- 
স্ভান যেমন নিবৃত্তির কারণ, “ইষ্টসাঁধনতাজ্ঞান” তেমনি প্রবৃত্তির কারণ। 
“ইষ্ট, ইচ্ছার বিষয়। যাহ! পাইবার জন্য ইচ্ছা হয়, তাহার সাধন; অর্থাৎ 
ষদ্দারা অভিল্যিত বস্তু পাওয়া যায়, তাহাকে 'ই্টসাধন+ কহে। পরিশ্রম 
স্বারা; অভিলধিত্ বস্তু লাভ করা যায়, সুতরাং পরিশ্রম “ইষ্টসাধন”। 
কেন না, সুখ ও দুঃখাতাবই সহজতঃ ইচ্ছার বিষয় হইয়। থাকে। পরিশ্রম 
সবার স্থখ ও হ্ঃথাভাব সম্পন্ন হয়। অতএব পরিশ্রমের 'দিষ্টনাধনত? 
আছেঃ বলিয়। যেমন তত্বিষ্বয়ে নিবৃত্ি হইতে পারে, “ইষ্টসাধনতা আছে” 
ৰলিয়া সেইরূপ প্রবৃত্থিও ত হইতে পারে? এতছুত্তরে বক্তব্য এই ষে, 
প্রবৃত্তি ও নিবুত্তি পরম্পরবিরিদ্ধ পদার্থ। এক বিষয়ে, এক কাঙে, এক 
গুরুষের পরস্পরবিরুদ্ধ প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি হওয়া! একান্ত অদস্ভব। কেবল 
ইষ্টসাধনতাজ্ঞান” প্রবৃত্তির এবং "দ্ি্সাধনতাজ্ঞান? নিবৃত্তির কারণ 
হইলে, প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি উভয়েরই বিষয়জাত দুর্ঘট হইয়া পড়ে । কারণ, 
এমন বিষয় নাই, যাহা নিরবচ্ছিন্ন সুখ বা নিরবচ্ছিন্ন ছুঃখ সম্পাদন 
রুরে। সকল বিষয়ই রিনি সুখ ও দুঃখের সাধন । কবি, যথার্থই 
আব্লিয়াছেন)__ টি 

_. দৃষ্টংকিমপি লোকেহশ্রিন্‌ ন নির্দোষং ন নিগুণম্‌ ।+ 


উপক্রমণিকা | | ২৯ 


সুখসম্প।দনে প্রবৃত্তি প্রাণিমাত্রের স্বাভাবিক। অভিলধিত শব্দাদি- 
বিষয়ে ইন্দ্রিয়ের সম্বন্ধ হইলে সখের উৎপত্তি হইয়া থাকে । অভিমত 
বিষয়ে ইন্ড্িয়ের সম্বন্ধ--ইন্দ্রিয়পরিচাঁলনাপাপেক্ষ । অনেকস্থলে অভিমত 
বিষয়ের সহিত ইন্দ্রিয়ের সম্বন্ধনম্পাদন__চেষ্টাসাপেক্ষ। বাহার অভিনয়- 
দশন ব1 গীতশ্রবণ-জন্য স্খান্ুভব করেন, তাহার] নাট্যশালাদিতে যাইয়া 
অভিমতবিষয়ের সহিত ইন্দরিয়সন্বন্ধ সম্পাদনপুর্র্বক স্ুখান্ুভব করিয়া 
থাকেন। দৃষ্টাত্ববাহুলোর প্রয়োজন নাই। নিখিষ্টচিন্তে চিন্তা করিলে 
সকলেই বুঝিতে পারিবেন ষে, প্রত্যেক সুথপাধনের সমহ্তি অন্ততঃ 
কিয়ন্মাত্র ছুঃখ অপরিহীর্ধা রহিয়াছে। নিশ্চেষ্টভাবে থকিয়া কখনই বিষয়- 
গ্রহণ করাযায় না। অন্ততঃ শারীরিক শক্তিগুলির পরিচালনা আবশ্বক 
হয়। “ইষ্টসাধনতাজ্ঞান*মাত্র প্রবৃত্তির এবং ্বিষ্টমাধনতাজ্ঞানমা ত্র নিবৃত্তির 
কারণ হইলে, প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি এক প্রকার অসম্ভব হইয়। পড়ে। এই- 
জন্য আচার্যেরা সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, ইষ্টপাধনতাজ্ঞান প্রবুত্তির কারণ 
বটে, কিন্তু বলবদ্দিষ্টনাধনতাজ্ঞান তাহার প্রতিবন্ধক। যে বিষয়ে উতৎ্কট 
ব। অতিশয় হেষ হয়, তাহার নাম “বলবন্দিষ্ট । মধু ও বিষমিশ্রিত 
'অন্নের ভোজনবিষয়ে কাহারই প্রবৃত্তি হয় না। মধুমিশ্রিত অন্ন সুস্বাছু। 
তাহার ভোজন “ইষ্টনাধন' হইলেও, বিষমিশ্রিত অন্নের ভোজন 
বিলবদ্ধিষ্টসাধন/। কেন না, বিষমিশ্রিত-অন্ন-ভোজনে মৃত্যু হইতে পারে। 
মৃত্যু-বলবন্দধিষ্ঠ । এইজন্য মধুবিষমিশ্রিত-অন্ন ভোঞ্নে প্রবৃত্তি হয় না। 
ইষ্টসাধনতাজ্ঞানমাত্র প্রবৃত্তির প্রতি কারণ হইলে, মধুবিষমিশ্রিত-অন- 
ভোজনেও প্রবৃত্তি হইতে পারে। তাহ! হয় না বলিয়াই, 'বলবন্ধিষ্ট- 
সাধনতাজ্ঞান প্রবৃত্তির প্রতিবন্ধকরূপে স্বীকৃত হইয়াছে। এবং “দিষ্ট- 
সাধন তাজ।ন+ নিবৃত্তির কারণ হইলেও, “বলবদিষ্টনাধনতাজ্ঞান, নিবৃত্তির 
প্রতিবন্ধকরূপে অন্ীক্কত হইয়াছে। যে বিষয়ে উৎকট বা অতিশয় 
অভিলাষ জন্মে, তাহাকে 'বলদিষ্ট” কছে। 'ব্লবদিষ্টসাধনতাজ্ঞান। নিবু- 
তির প্রতিবন্ধক না হইলে, পাকাদিতে প্রবৃত্তি হইতে পারে না) স্রং 
নিবৃত্তি হওয়াই সঙ্গত হয়। কারণ, পাক করিতে কষ্ট হয়, সুতরাং 
পাকের দ্বিষ্টদাধনতা আছে।. কিন্তু পাকের 'বলবদিষ্টনাধনতা” আছে, 
এইজন্য পাকবিষয়ে নিবৃত্তি হয় না প্রবৃত্তিই হইয়। থাকে। ফেন না, 


চি 


৩$ প্রথম লেক্চর। 


পাক করিয়া! ভোজন করিলে যে তৃপ্তি বা সুখ হয়, তাহা 'বলবদিষ্ট/ | 
ইষ্ট ও দিষ্টগত বলবত্ স্বভাবতঃ ব্যবস্থিত নহে । অবস্থাভেদে এবং রুচি- 
ভেদে উহ! বিবেচিত হইয়া থাকে। এক অবস্থায় যাহা “বলবদ্দিষ্ট' 
বলিয়া বোধ হয়, অবস্থাত্তরে তাহার অন্যথা হইয়া থাকে। দাশনিক 
কবি শ্রীহর্য যথার্থ বলিয়াছেন, | 
“ভিন্নম্পৃহাণাং প্রতি চার্থমর্থং 
িষ্টত্বমিষ্টত্বমপব্যবস্থম ।” 
হস্তপদাদির ছেদন “বলবদ্দধিষ্ট” কিন্তু অবস্থাবিশেষে তাহা “দ্বিষ্ না হইয়া 
হষ্ট' হইয়া থাকে! যখন হস্তপদাদিতে এমন দূষিত ক্ষত জ্চে যে, 
তাহা ছেদন না করিলে জীবনরক্ষা হইবার উপায়ান্তর থাকে না, তখন 
জীবনরক্ষার জন্ত লোকে হস্তপদাদদ ছেদন করিতে কুন্টিত হয় ন1। 
তখন জীবনরক্ষ। “বলবদিষ্* বলিয়। হস্তপদাদিচ্ছেদন “বলবদ্দিষ্ট” বিবেচিত 
হয় না। এমন লোকও নিতান্ত বিরল নহে, ষেঁ জীবনরক্ষার জন্তও 
হস্তপদাদ্দি ছেদন করিতে চাহে না। তাহারা বিবেচনা! করে যে, 
মৃত্যু মন্ুষ্যের অবস্থস্তাবী, সকলকেই মরিতে হইবে। সুতরাং কয়েকদিন 
জীবনধারণের জন্য হস্তপদাদি ছেদন কর সঙ্গত নহে। বীরগণ শক্রর 
উপর জয়লাভ এত অভ্যর্থিত বলিয়া বিবেচনা! করেন, এবং মহাজনের! 
যশ এত ভালবাসেন যে, তজ্জন্ত তাহারা শরীররক্ষার দিকে দৃষ্টিই করেন 
না। কবি বলিয়াছেন,-_ 
/ চিন্তা ষশসি ন বপুষি প্রায়ঃ পরিদৃশ্ঠতে মহতাম্‌।, 

অধিক দূরে যাইবার প্রয়োজন নাই। ক্ষুধার তাড়নায় শরীররক্ষার জন্ত 
সকলেই ভোঞ্জন করিয়! থাকেন। ভোজন অন্পপরিশ্রমসাধ্য নহে। হস্ত- 
সঞ্চালন, মুখনঞ্চালন ও আহার্ষ্যবস্তর গলাধঃকরণে ঘষে পরিশ্রম আব্তক, 
তাহা কাহারই অবিদিত নাই। অনেকে ভোজনকালে গলদ্ঘর্দ হইয়! 
থাকেন, তথাপি ভোঞ্জন হইতে নিবৃত্ত হন না। আবার দুইটি ছুঃখ 
বর্পবদ্দেষবিষয় হইলেও সময়বিশেষে উহার মধ্যে একটি দুঃখ বিশেষরূপে 
গবিধিষ্ট হইয়া উঠে। তখন এ ছুঃখ্জপরিহীরের জন্ত অপর ছুঃথাট 
অঙ্ীকত হয়। তৎকালে উহা “িলবদ্ধিষ্ট বলিয়! বিবেচিত হয় না। 
শৌঁকাকুলদিগের আত্মহত্যা ইহার উত্তম দৃষ্টান্ত । ক্ষণিক সুখলাভের, 





উপব্রমণিকা। ৩১ 


প্রত্যাশায় লৌকে কত কষ্ট স্বীকার করে, তাহা সকলেই অবগত 
আছেন। ইহার কারণও আছে। অভাব, বস্তর গৌরব সম্পাদন করে। 
মনুষ্া-রজঃপ্রধান, 'হুঃখ-রঙ্গোগুণের পরিণামবিশেষ। সুতরাং মনুষ্য 
ছুঃখে জড়িত" বণিলে অত্যুক্তি হয় না। স্খ-সত্গুণের কার্য্য | 
মন্তব্যের সত্তৃগুণ থাকিলেও তাহ! প্রধান নহে। মনুষ্যের পক্ষে ছুঃখ যেরূপ 
সুলভ, সখ সেরূপ সুলভ নহে। কিন্তু সুখের মোহিনী শক্তি অতুলনীয় । 
স্থখের প্রত্যাশা তাড়িতের স্তার অন্তঃকরণে অনির্বচনীয় উৎসাহ উৎ- 
পাদন করে ভূতাবিষ্টের স্ায় দিখ্বিদিগৃজ্ঞানশূন্ত হইয়া লোক সুখ 
সম্পাদনের জগ্ত ব্যাকুল হয়। সামান্ত সেতু ফ্মেন প্রথর আ্োতের 
গতিরোধ করিতে সমর্থ হ্ন না, সেইরূপ বাধাবিত্ব *ততকালে উৎদাহ- 
উদ্ভম প্রতিহত করিতে পারে না। তখন কষ্টকে কষ্ট বলিয়া বোধ 
হয় না। অক্রান্তমনে অধ্যবসায়ের সহিত পরিশ্রম করিতে প্রবৃত্তি হয়। 
এইজন্য কবি বণিয়াছেন,__ 
নন হি জুখং ছুঃখৈর্বিনা লভাতে? ।-- 
এস্থলে সুখশব্দ একবচনান্ত ও দু:খশব্দ বহুবচনান্ত প্রয়োগ করিয়া 
কবি নিজের সুক্ষদর্শিতা প্রতিপন্ন করিয়াছেন। অভিনিাবষ্টচিত্তে চিন্তা 
কগিলে প্রতীত হইবে যে, কবির বাক্য যথার্থ, ইহাতে অতুযুন্তির লেশ- 
মাত্র নাই। সত্যসত্যই একএকটি স্থুখ লাভ করিবার জন্য আমাদিগকে 
অনেকপ্রকার ছুঃখকষ্ট সহা করিতে হয়। দুঃখের কশাঘাত না থাকিলে, 
জগতে সুখের এত আদর হইত কি না, সন্দেহ। প্রতিপক্ষ না থাকিলে 
কোন বস্তরই গৌরব পরিস্কুট হয় না। অন্ধকার যেমন আলোকের গৌরব 
ও উপাদেয়তার তুলাদণ্ড, অর্থাৎ অন্ধকারের গাটতার তারতম্য যেমন 
আলোকের উপাদেয়তার তারতম্য সম্পাদন করে, সেইরূপ ছুঃখ, সখের 
আদরের ও উপাদেয়তার তুলাদণ্ড কি না, তাহাও বিবেচ্য । 
'্থুখং হি ছুংখান্তন্থতৃয় শোভতে 
_.. ঘনান্ধকারেঘিব দীপদর্শনম্‌ 7 ও 

ঘোরতর অন্ধকারে দীপদর্শনের স্তায় অনেক-ছুংখ-অনুভবের পর স্থখ 
শোভা পায় /__এই উক্তি দ্বারা কবিরও তাহাই, অভিপ্রেত বলিয়া বোধ 
হয় কি না, স্তুধীগণ তাহা বিবেচনা করিবেন। ধনলাভ করিতে পারিলে 


৩২ গ্রথম লেক্চর। 


নুথস্থচ্ছন্দতা হইবে, এই আশায় মুগ্ধ হইয়া ধনাজ্জনের জন্ত লোকে 
কতই-না কষ্ট করিয়া থাকে । অধিক কি, যে শরীরের বা জীবনের স্ুখ- 
স্রচ্ছন্দতা-সম্পাদনের জন্য লোকে ধনাজ্জনে প্রবৃত্ত হয়, ধনাজ্জনব্যাসক্ত 
ব্যক্তি তৎকালে সেই শরীর বা জীবনের প্রতিও লক্ষ্য করে না। ধনার্জনের 
'জন্য শরীর বা জীবন বিসর্জন করিতেও কুণ্ঠিত হয় না। ইহ! মোহান্ব 
মানবের অনুরূপ কাধ্য 3 সুখের মোহিনী শক্তির উজ্জল দৃষ্টান্ত । অধিক 
ষ্টান্তের প্রয়োজন নাই। স্ুখপ্রত্যাশায় কষ্টভোগের এবং স্ুবিধা- 
সম্পাদনের জন্য অস্ত্রবিধাভোগের শতশত নিদর্শন নকর্েই অবগত 
আছেন। অপরিশ্ঈম পরিশ্রম ও অস্ুবিধাভোগের পর অভিলধিত-বস্তব- 
লাভ হইলে যে আন্দ অনুভূত হয়, তাহার তুলনা নাই। অভিমত-বস্ত- 
পান্ডের এমনই মাহাত্ম্য যে, পরিশ্রমের ফললাভ হইলে পরিশ্রম-ক্লেশ 
তৎক্ষণাৎ অন্তহিত হয়। তখন উহ! স্মৃতিপথেও অল্পই উদ্দিত হইয়া 
থাকে। মনে নৃতন স্টৃপ্তির আবির্ভাব হয়। কালিদাম যথার্থ বলিয়াছেন, 
“ক্লেশঃ ফলেন হি পুনর্নবতাং বিধত্তে 
অনাম়াসলন্ধ বস্তর লাভেও আনন্দ হয় বটে, কিন্তু প'রশ্রমলন্ধ-বস্ত 
লাভের আনন্দ তদপেক্ষা সহত্রগুণ অধিক, তাহাতে সন্দেহ নাই। 
অনারানলন্ধ বস্তু অপেক্ষা পরিশ্রমলন্ধ বস্ত মনস্বীদিগের সমধিক প্রীতি গ্রদ 
ও আদরণীয় হইয়া গাকে | লোকের 'অভার্কের পরিনীমা নাই । অথচ 
পরিশ্রম ভিন্ন একটি অভাবও পুর্ণ হইতে পাঁরে না। সুতরাং পরিশ্রমের 
উপকারিতা ও আবশ্তাকত। সর্ধবাদিদিদ্ধ। ফলতঃ পরিশ্রম আপাজ্তঃ 
ছঃখকর হইলেও, পরিণামে উহ! অনীম সখের কারণ হইয়া থাকে । 
অতি সামান্ত অভাবও যখন পরিশ্রম ভিন্ন পরিপূর্ণ হয় না, তখন দর্শন- 
শান্ের অনুশীলনের অভাব বিনা-পরিশ্রমে বা সামান্য পরিশ্রমে পরিপৃণ 
হইবে, এরূপ কল্পনা করাও অসঙ্গত। অলস ও সামান্য ব্যক্তিদের কথ! 
স্বতন্ত্ন। মহদ্বাক্তিদের অন্তঃকরণ সর্বদাই উচ্চতম লক্ষের প্রতি ধাবিত । 
তাহার কখনই সামান্ত বিষয় লইয়া! পরিতৃপ্ত থাকিতে পারেন না। 
ক্রমোন্নতি ঘদ্দি মানবের প্রাকৃতিক নিয়ম হয়, তবে মানব উচ্চ হইতে 
উচ্চতর, উচ্চতর হইতে উচ্চতম বিষয় লক্ষ্য ও অবলথ্ধন করিবে, 
এবং লক্ষ্যের উচ্চতাই শাঁনবের মহত্বের পরিচায়ক হইবে, ইহাও 


উপক্রমণিকা ৩৩ 


প্রাকৃতিক নিয়ম বলিয়া স্বীকার করিতে হর । পরিশ্রম যদ্দি বস্ত্র 
উপাদেয় বা উৎকর্ষের পরিমাণনির্দেশিক হয়, গুবে দর্শনশাস্ত্রের অনু- 
শীলন অধিকপরিশ্রমসাধ্য বলিয়া, দর্শনশান্ত্র সমধিক উপাদেয় বা 
উৎকৃষ্ট, ইহা নিঃদস্কোচে বলা যাইতে পারে। পুর্বেই বলা হইয়াছে 
যে, পরিশ্রমলদ্ধ বস্তই মনস্বীদিগের সমধিক প্রীতি প্রদ | যেস্থুধী মানব 
ভূলোকস্থিত হইয়া ছ্যলোকস্থ জ্যোতিফমগডলীর আকার, সংস্থান, গতি, 
স্থিতি প্রভৃতি কত অচিন্তশীয় বিষয়মকলের তথ্যাবধারণ করিতে সমর্থ 
হইতেছেন, অন্তরিক্ষলোকন্থিত বিছ্বাৎ ধাহাদের বুদ্ধিবলে বশীভূত হইয়া 
কিন্করীর ন্যায় আজ্ঞাসম্পাদন করিতেছে, অন্নপপাক করিবার সময় স্থালীর 
আচ্ছাদন শরাবের স্পন্দনরূপ সামান্য ঘটন। অবলম্বনে যাহারা আশ্চর্ধ্যকর 
কা্্যঘকল সম্পাদন করিতেছেন, নৈসর্মিক কর্মবন্ধন ছেদনপূর্ব্বক 
খিদেহমুক্তিলাভের জন্য ধাহাবা অষ্টাঙ্গযোগের অনুশীলন করিতে কুষ্ঠিত 
হন না, নেই সুধী মানবগণের পক্ষে দর্শনশাস্ত্রের অনুশীলনের পরিশ্রষ-_ 
“নিপীতকালকুটন্ত হরস্তেবাহিখেলনম্‌।- 
বলিলে অত্যুক্তি হয় না। অপরে যাহা করিতে পারেন, আমরা চেষ্টা 
করিলে তাহ! করিতে পারিব না, আমাদের পৃজ্যপাদ পূর্বপুরুষগণ যে 
দর্শনশান্ত্রের সৃষ্টি করিয়াছেন, আমরা তাহার অন্শীলনও করিতে পারিৰ 
না, ইহা নিতান্ত অশ্রদ্ধেয়। ইহার কল্পনাও লজ্জাকর। কতকগুলি পর- 
শ্রম আমাদের এমন অভাস্ত হইয়। পড়িয়াছে যে, তাহ! আর তত পরিশ্রম 
বলিয়া বোধ হয় না। দৃষ্টাস্ন্বরূপ ভোজনের পরিশ্রমের উল্লেখ করিতে 
পারা যাঁয়। তাহাধ় কারণ এই যে, পরিশ্রম অর্থাৎ শক্কির পরিচালনা 
দ্বার! শক্তিবৃদ্ধি হইয়া খাকে। অল্লশক্তির পক্ষে যাহা আয়ানকর বা পরি- 
শ্রম, বদ্ধিতশক্তির পক্ষে তাহা বিনোদমাত্র। একসময় যাহা সাধ্যাতীত 
বলিয়া বোধ হয়, চেষ্টাপ্রভাবে অন্তসময়ে তাহাই সাধ্যায়ত্ত বা অনায়ান- 
সাধ্য হইয়া! থাকে। চেষ্টা ফরিলে সকল পরিশ্রমেই অভ্যন্ত হইতে পার! 
যায়। যাহার রমন! পিত্ৃদূষিত হইয়াছে, তাহার পক্ষে শর্কর! যেমন তিক্ত 
বলিয়া অস্তুভূত হয়, সেইরূপ ধাহার! কখনও দর্শন্শাস্ত্রের অনুশীলন করেন 
নাই, তাহাদের পক্ষে দর্শনশান্ত্রের অনুশলন আপাততঃ কষ্টকর বলিয়া 
প্রতীয়মান হইতে পারে। কিন্তু পিত্রদুষিত ব্যক্তি পুনঃপুনঃ শর্করার 
৫ ্‌ 


নাক 


৩৪ প্রথম লেক্চর। 


আস্বাদন করিতে থাকিলে, কালে শর্করার মধুরতা অনুভব করিতে মমর্থ 
হয়, তাহার পিত্দোষও বিদুরিত হয়; তদ্দপ দর্শনশাস্ত্রের অনুশীলন করিতে 
থাকিলে, অন্নকাল পরেই উহার কষ্টকরত্ব থাকে না, অধিকন্তু অন্ুুশীলন- 
কারী দর্শনশান্ত্ের মাধুরধ্য অনুভব করিয়া নিরতিশয় আনন্দলাভ করিতে 
পারেন। একটি বিষয় আয়ত্ত হইলে, অপর বিষয়টি জানিবার জন্য ওৎ- 
স্ুক্য জন্মে ও তাহা অপেক্ষাকৃত অল্নায়াসে আয়ত্ত করা যাঁয়। শ্রমের সঙ্গে 
সঙ্গে ফপলাঁভ হইলে, শ্রমের কষ্টকরত্ব সহজেই অপনীত হয়। কবি বলিয়া- 
ছেন যে, যাহার রসনা অপবিষ্ঠারূপ পিত্ত দ্বারা উপতপ্ত হইয়াছে, কঞ্চনাম 
ও কৃষ্ণচরিজ্রাদিরূগ শর্কর। তাহার পক্ষে রুচিকর হয় না। কিন্তু আঁদর- 
পূর্বক প্রতিদিন সেবা করিলে, উহা স্বাছু বলিয়া প্রতীয়মান হয় এবং 
রোগের মূল বিন করে (১)। 

উত্তম ব্যক্তির সমাঁদর যদি বস্তুর উৎকর্ষের রা হয়, তাহা হইলে 
হিনদুদর্শনের উতকৃষ্টত। সর্ববাদিসন্মত, বল! যাইতে পারে। কেবল দেশীয় 
স্থধীগণের কথ! বলিতেছি না, ইউরোপীয় মনীষিগণের মূল্যবান সময়ের 
অনেক অংশ হিন্দুদর্শনের চর্চায় নিযুক্ত হইয়াছে ও হইতেছে । ধাহারা 
তীক্ষমনীষাবলে বিজ্ঞানাদদি নানাবিধ উৎকৃষ্ট শান্ত্রমাগর মন্থন করিয়া তাহার 
মারোদ্ধার করিতে সমর্থ হইয়াছেন, হিন্দুদর্শন অকিঞ্ংকর, অসার ৰা 


অদদ্বদ্ধ প্রলাপমাত্র হইলে তাহার! বিজ্ঞানাদি উতকৃষ্টশান্ত্রের অনুশীলন 


পরিত্যাগ বা সঙ্কুচিত করিয়া হিন্দুদর্শনের অনুশীলনে প্রবৃত্ত হইতেন না। 
এতদ্বারা প্রমাণ হইতেছে যে, বিজ্ঞানাদির অনুশীলনে হুক্দশরদিগের যে 
ভ্ঞানপিপাপার নিবৃত্তি হয় না, হিন্দুর্শনের অনুশীলন তাহার নিবৃত্তি করিতে 


ই পারে। বিজ্ঞান যে বিষয়ে প্রদীপের আলোক প্রদান করিতেও সমর্থ 
: হয় না, হিন্দুদর্শন তথায় সুর্যের আলোক বিকীর্ণ করিতে সক্ষম। বর্তমান 


: ইউরোগীয় বিজ্ঞানের কাধ্যক্ষেত্র ভূত-ভৌতিক-পদারমাত্রে সীমাবদ্ধ । 





(১) শ্যাৎ কৃষ্ণনামচরিতার্দিমিতাইপবিদ্যা- 
পিস্বোপতগ্তরদনস্ত ন রোচিকৈব। 
কি্বু্জরাদমুদিনং খলু সেব্যমান। 
্বাদ্ী ভবেদপি চ তদগদমূলহত্ত্রী ॥ 


উপক্রম্ণিকা । ৩৫ 


“আত্মা, পরলোক” ইত্যাদি আধ্যাত্িক বিষয়ে বিজ্ঞান অন্নই অগ্রসর হইতে 
পারিয়াছে, ব। কিছুই অগ্রসর হইতে পারে নাই। যখন বিজ্ঞান অধ্যাত্ম- 
বিষয়ে অগ্রদর হইবে, তখন দর্শনশান্ত্র হইতে প্রচুর সাহায্য পাইবে, 
এবং তখন দর্শনশীন্ত্রের দিদ্ধান্তমকল “বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত বলিয়া প্রতিপন্ন 
হইবে। 

কেহ কেহ বলেন যে, বিজ্ঞানাদি শাস্ত্রের অনুশীলন করিয়া! যদি 
জগতের প্রায় সমস্ত বিষয় জানিতে পাবা যায় এবং তদ্বারা প্রয়োজন- 
নির্বাহ হয়, তবে আত্মাকে না জানিলেই বাক্ষতি কি? ইহলোকসর্বন্ব 
সংসারী জীবের অনুরূপ কথা বটে! শাস্ত্রে বলে, সুংসারের সমস্ত বিষয় 
আত্মার উপকরণ ব৷! প্রয়োজননির্বাহক। সমস্ত বসত আত্মার্থ বলিয়াই 
প্রিয়। ধন আমাদের প্রিয়, কেন না, ধন আত্মার ভোগনাধন। স্ত্রী- 
পুক্রাদি প্রিয়, কেন না, স্ত্ীপুত্রা্দি আত্মার ভোগসাধন বা প্রয়োজন নির্বা- 
হক। লোঁকে ধনের জন্ত ধনকে ভালবাদে না। স্ত্রীপুত্রাদির জন্ 
্্ীপুত্রাদিকে ভালবাসে না। আত্মার অভিলধিত-সম্পাদক বলিয়াই 
সকলকে ভালবাসে । এত প্রিপ্নতম স্ত্রীপুত্রাদিও যদি নিজের প্রতিকূল 
হয়, তবে তাহাদিগকে কেহই ভালবাসে না। আত্মা কিন্তু সব্বাপেক্গ! 
প্রিয়। আত্মাতে প্রীতি 'নিকূপাধিক” অর্থাৎ স্বাভাবিক । স্ত্রীপুত্রাদি 
স্মস্ত বিষয়ে গ্রীতি 'সোপাধিক* অর্থাৎ আত্ম!র প্রীতিসাধন বলিয়া । 
স্থতরাং আত্ম! নিরতিশয় প্রিয়, আত্মা অপেক্ষা প্রিয়বস্ত নাই (১)। আত্মাকে 
না জানিয়। ধাহারা আত্মার প্রীতিসাধন বিষয় জাঁনিতে পারিলেই 
কুতার্থন্বন্ত হন, তাহার! একান্ত হান্তাম্পদর ও নিতান্ত মোহান্ধ। দেব্ধি 
নারদ অপর সমস্ত বিদ্যার পারদর্শী হইয়াও আত্মতত্ব জানিতে পারেন নাই 
বলিয়! শোকাকুলচিত্তে আত্মজ্ঞানলাভের জন্য ভগবান্‌ সনৎকুমারের নিকট 


০ 





(১) 'ন বা অরে সর্বন্ত কামায় সর্বং প্রিয়ং ভবতি, আত্মনস্ত কামায় সর্ধং প্রিয়ং 
ভবতি ।'-_বৃহদরগ্যকোপনিষৎ ২৪।৫ 
'তৎ প্রেমাত্বার্ঘমন্যত্র নৈবমন্যার্থমাত্মনি। 
অতত্তৎ পরমং তেন পরমাননতাক্মনঃ॥-- 
পঞ্চদশী, গ্ুত্যক্তত্বিবেক » 


৩৬ প্রথম লেক্চর। 


শিষ্যুরূপে উপস্থিত হইয়াছিলেন (১)। পুজ্যপাদ্দ আঁচাধ্যন্বামী বলিয়াছেন 
যে, আত্মতত্ব না জানিয়া সমস্ত বেদ ও অপর সমস্ত বিদ্যা জানিলেও পুরুষ 
কৃতার্থ হইতে পারে না(২)। আমি সমস্ত বিষয় জানিতেছি, পাগিত্যের 
গর্র্ব করিতেছি, বুদ্ধিবলে অত্ডুত কাধ্য সম্পাদন করিয়া জগৎকে চমতকৃত 
করিতেছি, অথচ কেহ যদি জিজ্ঞাসা করে যে-তৃমি কে+, তাহা 
হইলে বলিব যে, “আমি কে, তাহা জানি ন1।' ইহা অপেক্ষা শোচনীয় আর 
কি হইতে পারে? গ্রীক দার্শনিক সত্রেটিস_-'আমি কে+, তাহা 
জানিতে উপদেশ দিয়াছেন। কিন্তু তাহার সিদ্ধান্ত হইয়াছিল যে, “আমি 
কিছুই জানি না।১* কেহ বলেন যে, 'জ্ঞান কি”, তাহা তিনি পরে জানিতে 
পারিয়াছিলেন। ফাহা হউক, হিন্দুদর্শনে আয্মার বিষয়ে বিস্তর বিশদ 
ব্যাখ্যা আছে। আত্মজ্ঞ হওয়া সকলের পক্ষেই বাঞ্ছনীয়। সুতরাং 
যত্বপুর্বক দর্শনশাস্ত্রের অনুশীলন করা উচিত। 

অনেক ইউরোপীয় পণ্ডিত ইউরোপীয়দর্শন অপেক্ষা ভারতীয়দর্শনের 
উৎকর্ষবিষয়ে স্পষ্ট সাক্ষ্য দিয়াছেন। ভট্ট মোক্ষমূলর বলিয়াছেন যে-- 
"মাধ্যমিক বা অধুনাতন ইউরো পীয়দর্শন অপেক্ষা ভারতীয় পুরাতন দর্শন 
অনেক জ্ঞানগর্ভ ! বিজ্ঞানের সাহাঁয্যে অনেক ছুরধিগম্য বিষয়ের অধিগম 
হইতেছে বটে, কিন্ত আত্মজ্ঞানবিষয়ে প্রায় কিছুই হয় নাই। ভারতীয় 
নির্জন বনের নিস্তব্বতার মধ্যে যে আত্মজ্ঞানের প্রকাশ হইয়াছিল, 
জনাকীর্ণ কোলাহলপুর্ণ রাজমার্গে তাহা পাওয়া যায় না।” জন্দণির 
সর্বোচ্চ দাশনিক শোপেন্হর প্রকাশ্ত বক্তৃতার সময় বলিয়াছিলেন যে-_ 
“ভারতীয় কাব্য ও দর্শন এক্ষণে ইউরোপে প্রচলিত হইতে আরম্ত 
হইয়াছে । অভিনিবিষ্টচিত্তে তাহা পাঠ করিলে বুঝিতে পার! যায় যে, 
তাহাতে এত গভীর সত্য নিহিত রহিয়াছে যে, তাহার তুলনায় 


চে 





পপি পাপিপাপাসপশপ পাপা 
পিসী 


(১) 'অধীহি ভগবইতি হোপদসাদ সনৎকুমারং নারদঃ। * * * সোহহং ভগবো 
মন্ত্বিদেবান্মি। নাত্মবিৎ। শ্রতং হেব মে ভগবদ্শেভ্যন্তরতি শোকমাত্মবিদিতি। 
সোহহং ভগবঃ শোচামি তং ী' ভগবান্‌ শোকস্ত পারং তারয়তু।'__ 

ছান্দোগ্যোপনিষৎ ৭১।১--৩ 
€২) 'সর্ববানপি বেদানধীত্য লব্ধং চান্তদ্বেদ্য মধিগম্যাপ্যকৃতার্থ এব ভবতি যাবদা 
তগ্ধং ন নীতি ।-ছান্দোগ্যোপনিষস্তীধ্য। ৩1১1৩ 


উপক্রমণিকা। ৩৭ 


ইউরোপীয়দর্শন অতি সামান্ত বলিয়া প্রতীত হয়। সুতরাং আমরা 
ভারতীয় দর্শনকর্তাদের উদ্দেশে প্রণত না হইয়া থাকিতে পারি না। 
আমাদের ম্বতই মনে হয় যে, মনুষ্যজাতির আগছ্ঘস্থান উচ্চদর্শনের 
জন্মভূমি।” ফ্রেডরিক শ্নিগল্‌ বলেন যে--গ্রীকদর্শনের উেচশরেনীর | 
ুক্তিতত্ব ভারতীয়দর্ণনের যুক্তিতত্বের নিকট প্রশ্দুট দিবালোকে নির্বা- | 
গোন্ুখ ক্ষীণপ্রভ প্রদীপের হায় প্রতীয়মান হয়।” তিনি আরও বলেন! 
যে-“পুরাকালে ভারতীয়গণ যথার্থ ঈশ্বরজ্ঞান লাভ করিয়াছিলেন । 
বেদান্তদর্শন শিক্ষা দেয় যে, মনুষ্য ঈশ্বরের অংশ এবং ঈশ্বরের সহিত 
মিলিত হওয়াই তাহার প্রত্যেক উদ্যম ও কার্যের সখা উদ্দেশ্ত ।» 
ভিন্টর কোজিন্‌ দেশীয়শান্ত্রের পক্ষপাতী হইয়াও বলিতে বাধ্য হইয়া" 
ছিলেন যে, “উপনিবৎ-অবায়ন অপেক্ষা মঙ্গলদায়ক ও উন্নতিনাধক অধ্যয়ন 
ইহজগতে আর নাই!” উপনিষৎ-অধায়নে জীবদ্দশায় যেরূপ শান্তি 
পাইয়াছেন, মৃত্কালেও সেইরূপ শান্তি পাইবেন» এরূপ আশাও তিনি 
করিয়াছিলেন। ভট্ট মোক্ষমূলর এই মত সমর্থন করিয়া বলেন যে, 
“নন্য্যদিগকে সুখে মৃত্যুর সম্মুখীন হইবাঁর ন্ত প্রস্তত করাই যদি দর্শন- 
শান্পরের উদ্দেন্ত হয়, তবে বেদান্তদর্শনদ্বারা সে উদ্দেশ্ত যেরূপ স্ুসিদ্ধ হই- 
য়াছে, অন্ত কিছুতেই যেরূপ হইতে পারে না” দর্‌ উইলিয়ম জোন্দু 
ৰলেন যে--“বেদান্তাদির সুচারু প্রস্তাবসকল পাঠ করিলে ইহা বিশ্বান না 
করিয়া থাকা যায় না যে, গ্রীপীয় পিথাগোরস বা প্লেটো তাহাদের উচ্চ 
ফোয়ারাসকল ভারতীয় জ্ঞানীদিগের উৎস হইতে পূর্ণ করিয়াছিলেন ।” 
ইউরোপীয় দূরদশিগণ কেহ স্পষ্টভাষায় কেহ বা প্রকারান্তরে স্বীকুর 
করিতে বাধ্য হইয়াছেন যে, ইউরোপীয়দরন, ভারতীয়দর্শন হইতে 
সংগৃহীত। ইহা সম্ভবপর বটে। কারণ, গ্রীন্দেশই ইউরোপীয় দর্শনের 
ও সভ্যতার আদি বিকাশস্থান। গ্রীদ্দেশ হইতেই ইউরোপের অন্থান্ট 
দেশে শিক্ষা ও সভাতার বিস্তার হয়। এ বিষয়ে ইউরোগীয়দিগের 
মতভেদ নাই। আধুনিক ইউরোপীয়দিগের মত. অন্তরূপ হইলেও) 
গ্রীপীয়দিগের মতে-মিশরদেশ বা ইজিপ্টে প্রথম সভাতার উৎপত্তি 
হয়। গ্রীনীয় মনীষিগণ উহা! শ্বদেশে লইয়া] যান বা ষিশরীয়গণ গ্রীসে 
যাইয়া বসবাদ করার গ্রীন্দেশেও.সভ্যতার বিকাশ হয়। গ্রীসীয় সর্ব. 


ক পিন রাজি 


৩৮ প্রথম লেকৃচর। 


প্রথম দার্শনিক পিথাগোরস্‌ মিশরদেশে শিক্ষালাভ করেন। তিনি 
মিশরদেশে শিক্ষিত হইয়া এশিয়াখণ্ডের নানাদেশ পরিভ্রমণ করিয়া দেশে 
গ্রতিগমন করেন এবং ইটালীর ক্রতনা-নগরীতে অধ্যাপনা! কবেন। 
তাহার দর্শনে জন্মীস্তর অঙ্গীকৃত ও আমিষভোজন পাপজনক বাঁলয়। 
স্থিরীকৃত হইয়াছে । প্লেটো! ইউরোপের সর্ধোৎকৃষ্ট দার্শনিক এবং গ্লেটোর 
দর্শন ইউরোপের সর্বোৎকৃষ্ট দর্শন। ইনিও ইজিপ্টে বহুদিন বাস করিয়। 
শিক্ষাকার্ধা সম্পন্ন করেন। তিনি পরলোক মানিতেন এবং একেশ্বরবাদী 
ছিলেন। অনেকে অনুমান করেন যে, তিনি ইজিপ্টেই একেশ্বরবাদ 
অবগত হইয়াছিলেন। ফলতঃ পুর্বকালে ইজিপ্টই ইউরোপীয়দিগের 
উচ্চশিক্ষার স্থান ছিল। অন্ততঃ নবদ্ধীপে কিছুকাল অধায়ন না করিলে 
যেমন ব্দেশীয়দিগের শিক্ষা উচ্চশিক্ষা বলিয়। পরিগণিত হইত না, সেইরূপ 
ইভিপ্টে অধ্যয়ন না করিলে ইউরোপীয়দিগের শিক্ষাও উচ্চতা প্রাপ্ত হইত 
না। তাংকালিক ইউরোগীয়দিগের পক্ষে মিশরদেশ নবদ্বীপ ছিল, 
বলিলে অত্যুক্তি হয় না। মিশরদেশের সংস্কত নাম-_াঁমআদেশ?। কথিত 
আছে যে, অতি পুর্বকালে মিশ্রদেশ অতি উচ্চশ্রেণীর বাণিজ্যন্থান 
ছিল । ভারতীয় আর্ধ্যগণ বাঁণিজ্যোপলক্ষে তথায় যাইতেন এবং সাময়িক 
বাদ করিতেন। প্রাচ্য এবং প্রতীচ্য দেশীয় লোকসকল তথায় মিশ্রিত 
হইতেন বলিয়া উহার নাম 'মিশ্রদেশ' হইয়াছিল। আধ্যগণ সভ্য । 
অমরসিংহের মতে-মহাকুল, কুলীন, আর্ধ্য, সভ্য, সঙ্জন ও সাধু, এই 
কয়টি শব্দ একার্থবোধক (১)। আর্ধ্যগণকর্তৃক মিশরদেশে সভ্যতা! প্রবর্তিত 
হয়। ষ্ঠাতি পূর্বকালের ইউরোপীয়দিগের পক্ষে এশিয়াখণ্ড প্রায় 
অপরিজ্ঞাত ছিল। তাহাদের পরিজ্ঞাত দেশনকলের মধ্যে মিশরদেশে 
তাহার! প্রথম সভ্যতা দেখিয়াছিলেন বলিয়া, সম্ভবতঃ তাহাকেই লভ্যুতার 
আদিজন্মভূমিরূপে নির্দেশ করিয়াছেন । পিথাগোরসের সময় এশিয়া- 
থণ্ডের অনেক দেশ পরিজ্ঞাত হইয়াছিল। এইজন্য তিনি মিশরে শিক্ষা- 
সমাপন করিয়া সবিশেষ অভিজ্ঞতালাভের জন্য এশিয়াখণ্ডেব অনেক 
দেশ পরিভ্রমণ করিয়াছিলেন। তিনি ( পিথাঁগোরস ) সভ্যদেশে (মিশর- 


া পাপ 





হ 
৪ 


(১) “মহাকুগকুলীনারধাসভাসঙ্জনসাধবঃ1- ন্ধবর্গ ২ 


উপক্রমণিকা | ৩১ 


দেশে) অধায়ন গরিপমাপ্ত করিয়া অমভ্যদেশে ( এশিয়াথণ্ডে ) পরিভ্রমণ 
করিয়াছিলেন, এরূপ কল্পনা অপেক্ষা, তিনি গভাদেশে অধ্যয়ন গরিমমাপ্ু 
করিয়া মভ্যতর দেশে পরিদ্মণ করিয়াছিরেন,_এইরূগ কন্পন! লমধিক 
মঙ্গত। গে যাহা হউক, ইউরোগীয় মনীষিগণ যে-ভারতীয়দর্শনে মমধিক 
আস্থাবান্‌ ও ভ্তিমানূ। ফে-ভারতীয়দর্শন বুদ্ধির নির্শতা-ম্পাদনের 
উপায়, গ্রতিভার আকর, তর্কের লীলাঙ্ষেত্র, ঘত্মজ্ঞানের উম, 
মুজির মোগান এবং মুত্বাতয়রোগের অদ্বিতীয় মহৌষধ, যে-ভারতগন্তান 
মেই ভাঁরতীয়দর্শনের অনুশীলনের জন্য যত্ন ও পরিশ্রম করিতে গরামুখ, 
তাহাকে বিচারমূঢ ভিন্ন আর কি বলা যাইতে গাতে। দরশনশান্কে দূর 
হইতে ব্যাগে করনা করিয়া ভীত হইবার গরয়োঞ্ন নাই। মাহপূর্বক 
নিকটে গেলে দ্ট হইবে যে, উহা যার নহে, বিচিতরবণশোভিত থরতি। 
উহ] হইতে তীক্ষনখংস্বাধাতের ভয় নাই, ঘনপূর্বক উহাকে দৌহন 
করিলে পুষ্টিকর সুমধুর ক্ষীর পাওয়া যাইবে। 
'আশঙ্কমে যদগিং তদিনং ক্পর্শক্ষমং তুম 

যাহাকে আগ বঙিয়! আশঙ্কা করিত্ছে, তাহা অগ্রি নহে, শ্র্শযোগয 

রত্ব। 





দ্বিতীয় লেক্চর। 


ন[মকরণপ্রণালী। 


দর্শনশাস্ত্রের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করিবার পূর্বে দর্শনশাস্ত্রের পরিচয় 
দেওয়া অপ্রামন্িক, হইবে না| দর্শনশান্ত্ব কাহাকে বলে, তদ্বিষয়ে 
দর্শন” এই সব্্ঞা বা নাম হইতে কতদূর দাহাষা গাওয়া যায়, তাহার 
আলোচনা করা যাইতেছে । দৃশ্ধাতু ও ল্য, যু বা অনট্‌ প্রহ্ায়ের যোগে 
দর্শনশব্দ নিশ্পর হইয়াছে। দৃশ্ধাতুর অর্থ জানিতে না পারিলে দর্শন- 
শব্ের ব্যুৎপত্তিলভ্য অর্থ জানা যায় না। ধাতুর অর্থ জানিতে হইলে 
প্রথমেই ধাতৃপাঠের প্রতি দৃষ্টি পড়ে। ধাতুপাঠে দৃশ্ধাতু প্রেক্ষণ অর্থে 
পঠিত হইয়াছে। গ্রউপসর্দ পূর্ব ঈক্ষাতু হইতে 'প্রেক্ষণশব উৎপন্ন 
হইয়াছে। অতএব ঈক্ষ্ধাতুর অর্থ না জানিলে দৃশ্বাতুর ঘর্থ জানিতে 
পারা যায় না। ধাতুপাঠে ঈক্ষ্ধাতু দর্শনার্থে পিত। সুতরাং ধাতৃপাঠের 
সাহাঘ্যে দৃশ্ধাতু এবং ঈক্ষ্ধাতুৰ অর্থ অবগত হইবার প্রতাশ। বিফল 
হইল। কেন না, ধাতুপাঠ অনুারে দৃশ্ধাতুর অর্থ প্রেক্ষণ এবং ঈক্ষ- 
ধাতুর অর্থ দর্শন। এখন উপায়ান্তর-অবলম্বনে দৃশ্ধাতুর অর্থ স্থির 
করিতে হুইবে। | 
উপায়ান্তরের সাহায্যে অর্থনির্ণয় করিতে হইলে প্রয়োগান্থণারে অর্থ- 
নির্ণয় করা উৎকষ্টকল্প। প্রান্কৃতভাষায় দৃশ্ধাতুর স্থানে “পেক্‌ধ” 
আদেশ হয় । বিদ্তাপতির “পেখনু” এবং বাক্গালাভাষায় 'দেখশব প্রাকৃত 
. গেক্খণশব্দের অপত্রংশমাত্র। চক্ষুরিভ্রিয়জ্ত প্রত্যক্ষস্থলে সচরাচর “দেখ, 
' বলা হইয়া থাকে। সংস্কৃতভাষাতেও চাক্ষ্ষজ্ঞান অর্থেই সাধারণতঃ দৃশ্ধাতু 
প্রযুক্ত হয়। মহামহোপাধ্যায় রঘুনন্দন ভট্টাচার্য বলিয়াছেন যে, চাক্ষুষ- 
জ্ঞানই দৃশ্ধাতুর মুখ্য অর্থ। দৃশ্ধাতুর অর্থ স্বজন, ইহা নৈয়ায়িকেরাও 
্বীকার করেন। উহা সর্বত্দিদ্াস্ত বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। এইজন্য 


নামকরণপ্রণালী | ৪১ 


ঙ্ু্ানদাধন চক্ষুরিত্্িয়ের নাম দর্শনেন্ত্িয়। অতএব বুঝা যাইতেছে 
যে, চাক্ষুষজ্ঞানের সির শ 

প্রশ্ন হইতে পারে থে ন্‌ বা রর সাধন, শাস্ত্র চাক্ষষ- 
জ্ঞানের সাধন হইবে কেন? চা এই যে, দুর্শনূশান্ত্র সাক্ষাৎ 
ন] হউক, পরম্পরা আত্মসাক্ষাকারের সাধন বটে। কেন না, দর্শনশাস্তর 
আত্মমননের উপায় । আত্মমনন যোগরূপে পরিণত হইলে আত্মসাক্ষাৎকার 
হয়। সত্য বটে, আত্মসাক্ষাৎকার চাক্ষুষ কি মানস, তদ্বিষয়ে বিবাদ 
হইতে পারে, কিন্তু উপনিষদে অনেকস্থলে আত্মনাক্ষাৎকাঁর অর্থে দৃশ্‌- 
ধাতু এবং ঈক্ষধাতু প্রবুক্ত হইয়াছে । অতএব আত্মাক্ষাৎকার চাক্ষুষ- 
জ্াানম্বরূপ, এরূপ বলিলেও কোন বাধা হইতে পুর না। যদিও 
রূপবদৃহি্রবাই চাক্ষুষজ্ঞানের বিষয় হইয়া থাকে, তথাপি লৌকিক প্রত্যক্ষ- 
স্থলেই তখাবিধ নিয়ম, আত্মার চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ লৌকিক নহে, অলৌকিক-_ 
যোগজধর্মজন্য | যে যোগজ ধর্ম দ্বারা অতীন্দরিয়, সুক্ষ, ব্যবহিত এবং 
বিপ্রকষ্ট অর্থাৎ দুরস্থ বস্তরও চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ হইয়৷ থাকে, যে যোগজ- 
ধর্মবলে ভাগীরথী ও সমুদ্র পরিপীত, দণ্ডকরাজ্য অরণ্যে পরিণত হইয়াছিল, 
সেই যোগজ ধর্ম দ্বারা আত্মার চাক্ষুষপ্রত্যক্ষ হইবে, ইহাতে বিন্ময়ের 
বিষয় কিছুই নাই। বিশ্বরূপদর্শনকালে ভগবদিচ্ছায় অর্জুনের দিব্য- 
চক্ষুর আবির্ভাব হইয়াছিল। ততন্বার! চর্মচক্ষুর অদৃষ্ত বিষয়সকলও তিনি 
দেখিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। ভগবান্‌ বেদব্যাস যোগপ্রভাবে সঞ্জয়কে 
দিব্যচক্ষু ও" দরিব্যুশ্রোত্র প্রদান করিয়াছিলেন । এইজন্ত তিনি হস্তিনা- 
রাজধানীতে অবস্থিত থাকিয়াও কুরুক্ষেত্রসংগ্রামের সমস্ত বিষয় শ্বয়ং 
দর্শন ও শ্রবণ করিয়। ধৃতরাষ্ট্রের নিকট যথাষথ বিবৃত করিতে পারিয়া- 
ছিলেন। ফলতঃ যোগজধর্ম্বের প্রভাব অচিস্তনীয়, সন্দেহ নাই। রশ্শি- 
বিশেষের সাহায্যে ব্যবহিত বস্ত্র চাক্ষুষপ্রত্যক্ষ পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিকেরাও 
এখন স্বীকার করিতেছেন । সুতরাং কারণাস্তর প্রভাবে সচরাচর পরিরৃ 
লৌকিক নিয়মের স্থলবিশেষে ব্যতিক্রম হওয়া আশ্চর্যের বিষয় নহে। 

আত্মসাক্ষাৎকার চাক্ষুষন্ঞানম্বরূপ ন! হইলেও বেদে আত্মসাক্ষাংকার 
অর্থে দৃশ্ধাতুর প্রচুর প্রয়োগ থাকায় আত্মসাক্ষাংকারও দৃশ্ধাতুর অর্থ, 
ইহা অবশ্ঠ স্বীকার করিতে হইবে। সুতরাং যে শাস্ত্র আত্মসাক্ষাৎকারের 






৪২ দ্বিতীয় লেক্চর । 


সাধন, তাহাকে অনায়াসে দর্শনশান্ত্র বল| যাইতে পারে। শ্রবণমননাদিও 
আত্মাক্ষাৎকারের সাধন বলিয়া দর্শনপদবাচ্য হইতে পারে বটে, কিন্ত 
শ্রবণমননাদি শাস্ত্র নহে, স্থতরাং দর্শনশান্ত্র বলিলে শ্রবণমননাদিকে 
না বুঝাইয়! শান্ত্রবিশেষকেই বুঝাইবে। অন্নকথায় ব্যবহার সম্পাদন 
করিবার জন্য সমস্ত সংজ্ঞাট ব্যবহৃত না হইয়া অনেকসময় সংজ্ঞার 
একদেশমাত্র ব্যবহৃত হইয়া থাকে। সেই একদেশদ্বারা সমুদায়ের 
কার্য সম্পন্ন হয়। যেমন ভীমসেনকে ভীম, রামচন্দ্রকে রাম, নত্যভামাকে 
সত্য। ব৷ ভামা বল! হয়, নেইরূপ দর্শনশান্ত্কেও দর্শন বলা হইয়! থাকে । 
এমন কি, সংক্ষেণের জন্ট নামের একটি অক্ষরদ্বারাও সমুদায়ের ব্যবহার 
শাস্ত্রে দেখিতে পাওয়া ষায়। উপাহরণবাহুল্যের প্রয়োজন "নাই, দুই- 
একটি উদ্বাহরণ দ্দিলেই যথেষ্ট হইবে। প্রেতপক্ষের পরবর্তী দ্বিতীয়া, 
কোজাগরপুণিমার পরবর্তী দ্বিতীয়া, চৈত্রাবলীর পরবত্তী দ্বিতীয়া এবং 
চাতুর্মীস্তত্রতের পরবর্তী দ্বিতীয।-_-এই চারিটি দ্বিতীয়া “প্রে কো টৈ 
/চা”_-এই চারিটি আস্ঘ অক্ষরদ্বারা নিদিষ্ট হইয়াছে । আধাটী পুরিমা, 
কার্তিকী পুিমা, মাঘী পুিমা ও বৈশাখী পুণ্রিমা, এই চারিটি পূণিম| 
“আ ক মা বৈ”_-এই চারিটি আগ্ অক্ষরদ্বারা নিদ্দিষ্ট হইয়াছে । 
এইরূপ শাস্ত্রীয় ব্যবহার লোকেও দেখা যায়, চিঠার তঃ পুঃ ইত্যাদি 
লিপি তাহার উদাহরণ । 
পৃজ্যপাদ মাধবাচাধ্য বলিরাছেন যে, অর্থের সাদৃশ্ত অনুপারেও সংজ্ঞার 
প্রবৃত্তি হয়। এই মতে দর্শনশান্ত্র সংজ্ঞাটি সাদৃশ্ত লইয়! হইয়াছে, ইহ। 
ৰলিলে কোনও অসঙ্গতি থাকে না। প্রত্যক্ষ ষড়বিধ হইলেও চাক্ষুষ 
প্রত্যক্ষ সমধিক পরিস্ফুট এবং অধিকাংশ স্থলে নিঃসংশয় হইয়া থাকে । 
দর্শনশান্ত্রে এরূপ দৃঢ়তর ও অকাট্য যুক্তি দ্বার পদ্ার্থসকল প্রতিপার্দিত 
হয় যে, তাহা চাক্ষুষজ্ঞানগোচর পদার্থের স্ায় পরিস্ফুট ও নিঃসংশয়। 
সুতরাং বে শাস্ত্র চাক্ষুষক্তানের সদৃশ জ্ঞানের সাধন, তাহাকে দর্শনশান্তর 
বলিলে কোনও দোষ হইতে পারে না। লক্ষিত পদার্থ উপপন্ন হয় কি না, 
প্রমাণদারা তাহার অবধারণ কর! দর্শনশান্ত্রের একটি প্রধান বিষয়। 
দার্শনিকের! বস্তর উপলব্ধিমাত্রে পরিতৃপ্ত হইতে পারেন না। বস্তুর তত্ব- 
নিরূপণ এবং উপলব্ধির সত্যাসত্যত। নির্ধারণ করিয়া থাকেন। এই 


নামকরণপ্রণ।লী | ৪8৩ 


প্রক্রিয়া পরীক্ষাশন্ষে অভিহিত হয়। পরি-উপসর্ণ-পুর্বক ইঈক্ষ্ধাতু 
হইতে পরীক্ষাশব ব্যুৎপাদিত। প্রমাণিত হইয়াছে যে, ঈক্ষ্ধাতু ও 
দুশধাতু একার্থক। সুতরাং পরীক্ষাশব্দ ও দর্শনশব্দ তুল্যার্থক বলিলে 
অসঙ্গত হইবে না। অতএব পরীক্ষার প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া দর্শননাম 
প্রবন্তিত হইয়াছে, ইহা অনায়াসে বলা যাইতে পারে। 

আর এক কথা। শবের বুুৎপত্তি অন্থসারেই যে, সকল বস্তর নাম 
হইবে, ইহা সর্ববাদিসিদ্ধ নহে। এ বিষয়ে পুর্বাচার্ধ্যদিগের মতভেদ 
আছে। ধাহার! বাত্পত্তির অন্ুদরণ করেন, তাহাদের মতেও বুুৎপন্তি 
অনুনারে সর্ধস্থলে বস্তর নামকরণ হনব না। ব্যুৎগভির যথাকথঞ্চিৎ 
স্বপ্ন অনুপারেও নামকরণ হইয়া থাকে। এবং স্থলবিটেশষে বুৎপত্তিলভ্য 
অর্থ মন্পূর্নরপে পরিত্যক্ত বা উপেক্ষিত হয়। ইহ! ক্রমে প্রদর্শিত 
হইতেছে। 

নৈয়ায়িক আচার্ধযদিগের মতে নাম চতুর্কিধ £--যৌগিক, রূঢ়, 
যোগরূঢ়, ও বৌগিকরঢ় বা রূঢুযৌগিক। এতভিনন লক্ষকও একপ্রকার 
নাম আছে। যোগ কিনা শবের বুৎপত্তিলভ্য অর্থ বা অবয়বার্থ অর্থাৎ 
প্রকুতিপ্রতায়ের অর্থ অনুসারে যে নাম হয়, তাহাকে যৌগিক কহে। 
ষেমন, পাচক প্রভৃতি । পচ্ধাতু ও ল্যুণ্‌, বুণ্‌ বা অকণ্‌ প্রত্যয়ের যোগে 
পাচকশব্দ বুতপন্ন হইয়াছে। পচ্ধাতুর অর্থ পাক, প্রত্যয়ের অর্থ কর্তা। 
অতএব পাচকশবের বুৎ্পত্তিলভ্য অর্থ-পাককর্তী। লোকেও পাক- 
কর্তীকেই পাচক বলে। স্ুৃতরাত যে পাক করে, তাহার পাচকনামটি 
যৌগিক । সঙ্কেতযুক্ত নামকে রূঢ় কহে। যে নাঁম প্রকৃতি প্রতায়ের 
অর্থ অনুসারে প্রবৃত্ব হয় না, সমুদায়ের অর্থ অনুসারে প্রবৃত্ত হয় অর্থাৎ 
যাহার বুৎপত্তিপত্য অর্থ গৃহীত ন1 হইয়া নমুদ্রায়ের অর্থ অঙ্গীকৃত হইয়া 
থাকে, তাহাকে সঙ্কেতযুক্ত ও রূঢ় বলে। যেমন, গে প্রভৃতি শব । 
গম্ধাতু ও ভোন্‌ প্রত্যয়ের যোগে গোশব সাধিত হইয়াছে। গম্ধাতুর 
অর্থ গতি বা গমন, ডোস্প্রতায়ের অর্থ কর্তা । সুতরাং গোশবের 
বুৎপত্তিলভ্য অর্থ হইল গমনকর্তী। এই অর্থ অন্থুবারে গোশবের 
প্রয়োগ হয় না। কারণ, তাহা হইলে গমনকর্তী মন্ষ্যাদিতেও- গোশবের 
প্রয়োগ হইতে পারে এবং শয়ন ও. 'উপবেশনের অবস্থায় অর্থাৎ যে 


৪৪ দ্বিতীয় লেক্চর। 


অবস্থায় গমনক্রিয়া থাকে না, সেই অবস্থায় প্রকৃত গোপশুতেও 
গোশৰের প্রয়োগ হইতে পারে ন|। 

এই দুইটি দোষের যথাক্রমে দার্শনিক নাম অতিব্যাপ্তি ও অব্যাপ্তি | 
ব্যাপ্ডিশব্বের অর্থ সন্বন্ধ। অতিব্যাপ্তি--অতিশয় সম্বন্ধ বা অতিরিক্ত 
সন্বন্ধ। সন্বন্ধযোগ্য স্থলকে অতিক্রম করিয়া অথাৎ যাহার সহিত সম্বন্ধ 
হওয়া উচিত, তাহাকে অতিক্রম করিয়া, অন্ঠের সহিত সম্বন্ধ হইলে 
অতিব্যাপ্ডিদোষ হয়। সন্বন্ধধোগ্য স্থলকে অতিক্রম করিয়া, বলাতে, 
এরূপ বুঝিতে হইবে না যে, মন্বন্ধযোগ্য স্থলে আদৌ মন্বন্ধ থাকিবে না। 
সন্বন্ধযোগ্য স্থলে সন্গন্ধ থাকিয়াও সম্বন্ধের অযোগ্য স্থলেও যদি সম্বন্ধ হয়, 
তবেই অতিব্যার্জি্দাষ ঘটে। উক্ত স্থলে বুযুৎপত্তি অন্ুদারে গমনশীল 
গোপশুতে গোশবের প্রয়োগ হইবার কোনও বাধ! নাই, অথচ গমনশীল 
মনুষ্যাদিতেও গোশবের প্রয়োগ হইতে পারিতেছে। গমনশীল মনুষ্যাদি 
গোশব্দের সন্বন্ধের যোগ্স্থল নহে। এই অযোগাস্থলে সন্বন্ধ হইতেছে 
বলিয়া, অতিব্যার্চিদৌষ ঘটিতেছে। অব্যাপ্তি অপন্বন্ধ। কোন অর্থের 
সহিতই শবের সম্বন্ধ থাকিবে না, ইহা! অসম্ভব । সুতরাং যে স্থলে সম্বন্ধ 
থাক1 উচিত, সে স্থলে সম্বন্ধ না থাকিলেই অনমন্বন্ধ বুঝিতে হইবে। যেমন 
শয়ান বা উপবিষ্ট গোপশুও গো বটে, তদবস্থাতেও তাহার সহিত গো- 
শবের সম্বন্ধ থাক] উচিত, কিন্তু গোশবের ব্যুৎপত্তিপ্লভ্য অর্থ অনুসারে 
শয়নাদি অবস্থায় গোপশুর সহিত গোশবের সম্বন্ধ থাকিতে পারিতেছে 
ন1। এইজন্য অব্যাপ্রিদোষ হইতেছে । গোশব যৌগিক বজিলে উক্তরূপ 
অতিব্যাপ্তি ও অব্যাপ্ি দোষ হয়, সুতরাং গোশব যৌগিক নহে, রূঢ় । 

কোন কোন প্রত্যয় ক্রিয়৷ করিবার ষোগ্য পর্য্স্ত বুঝায় বটে, কিন্ত 
নকল প্রত্যয় ক্রিয়া করিবার যোগ্য পর্য্যস্ত বুঝায় না । সাধারণতঃ ক্রিয়া- 
কর্তীকেই বুঝাইয়া থাকে | স্থলে ডোন্প্রত্যয়ের অর্থ ক্রিয়ারর্তা। 
নৃতরাং অব্যাপ্তিদোষ ঘটিতেছে । ক্রিয়া করিবার যোগ্য পর্যযস্তই ডোস্‌- 
প্রত্যয়ের অর্থ, ইহা মানিয়া লইলে আপত্তি হইতে পারে যে, যেমন পাঁচক 
ব্যক্তি ষেসময়ে পাক করে না, মে সময়েও তাহাকে পাচক বল! হয়.। 
কেন না, তৎকালে পাক না করিবেও তাহার পাক করিবার যোগ্যতা 
'আছে। এইরগ শয়ান বা উপৰিষ্ট গোপশ্ড তৎকালে গমন ন! কুরিলেও 


নামকরণ প্রণালী । ৪৫ 


গমন করিবার যোগ্যতা তাহার রহিরাছে বলিয়া শয়নাদিকালেও গো- 
শবের প্রয়োগ হইতে পারে। ন্ুুতরাং গোশব্ব' যৌগিক হইলেও 
অব্যাপ্ডিদোষ হইতেছে না। এতদ্ুন্তরে বক্তব্য এই যে, উক্তরূপে 
কথঞ্চিৎ অব্াপ্তিদোষের পরিহার করিতে পারিলেও কিছুতেই অতি- 
ব্যাপ্ডিদোষের পরিহার হহতে পারে না, সুতরাং গোশব্ব রূট, ইহ! 
অবন্ঠ স্বীকার করিতে হইবে । 

গমনকর্তা এই অবয়বার্থ (গম্ধাতু ও ডোন্ প্রত্যয়ের অর্থ) গোশবের 
বু্পত্তিনিমিন্ত মাত্র, প্রবৃত্তিনিমিত্ত নহে। গোশবের প্রবৃত্তিনিমিত্ত গোত্ব- 
জাতি। যে অর্থ অবলম্বন করিয়া শব বুপন্ন হয় বা শব্দের বুাুৎপত্তি অন্ু- 
সারে ঘে অর্থ পাওয়া যায়, তাহাকে বুৎ্পত্তিনিমিদ্, এবং থে অর্থ 
অবলম্বনে শবের প্রবৃত্তি অর্থাৎ প্রয়োগ হর, তাহাকে প্রবৃত্তিনিনিত্ত 
বলে(১)। অতএব গোত্বজাতি ব! গোত্বজাতিবিশিষ্ট বান্তিতে গোশব্দের 
প্রয়োগ হয় বলিয়া! এ অর্থে গোশবের সঙ্কেত অঙ্গীকার করিতে হইতেছে। 
এ সঙ্কেত গো--এই বর্ণাবলীগত গোশব্দের ঘটক গম্ধাতু বা ডোস্‌- 
প্রত্যয়গত নহে। পাচকশব যৌগিক, রূঢ় নহে। কারণ, পাচক-_-এই 
বর্ণাবলীর কোন অর্থবিশেষে সঙ্কেত নাই, অবয়বসক্কেত অথাৎ পচ্ধাতু ও 
বুণপ্রত্যয়ের সঙ্কেতদ্বারাই পাককর্তারূপ অর্থের অবগতি হইতে পারে। 
সমুদ্দায়ের সঙ্কেত স্বীকার করিবার কোনও কারণ নাই । এইজন্য পাচক 
শব বুট নহে, যৌগিক । 

সঙ্কেত ছুই প্রকার £--আজানিক ও আধুনিক। যে সঙ্কেত অনাদিকাল 
চলিয়া আসিতেছে--যাঁহা নিত্য, তাহা আজানিক এবং যে সঙ্কেত অনাদি- 
কাল চলিয়া আগিতেছে না, কালবিশেষে প্রবর্তিত হইয়াছে, তাহা আধু- 
নিক1 আজানিক সঙ্কেতের অপর নাম শক্তি, আধুনিক সঙ্কেতের অপর 
নাম পরিভাষা । গোগৰয়াদি পদের সঙ্কেত আজানিক এবং চৈত্র-মৈত্রাদি 
পদের সঙ্কেত আধুনিক। আজানিক সঙ্কেত বা শক্তি অন্ুমারে যে শব 








পপ পপ পাপ পতি পাপী পিপিপি সিপিশাপাপস্পিসপি পপি উপ 





পাশাপাশি 


(১) শবের বযুৎপত্তিনিমিত্ত ও প্রবৃত্তিনিমিত্ত অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হইয়] ধাকে, অর্থাৎ 
এক অর্থে ব্যুৎপন্ন হইয়া! অন্য অর্থে শব প্রযুক্ত হয়, ইহ! পূর্ববাচার্য্েরা ম্পষ্টভাষায় 
বলিয়াছেন। ইহার শত, শত উদ্দাহরণ দেওয়া যাইতে পারে। বাহুল্যতংয় বিরত 
রহিলাম। | 


৪৬ দ্বিতীয় লেক্চর। 


বে অর্থ গ্রতিপাদ্দন করে, অনাদ্দিকাল হইতে সেই শবের সেই অর্থে 
প্রয়োগ হইয়া থাকে । আধুনিক সঙ্কেত বা পরিভাষা অনুসারে যে শব্দ 
যে অর্থ প্রতিপাদন কৰে, সে অর্থে সে শব্দের অনাদিকাল প্রয়োগ হয় না, 
হইতে পারে নাঁ। কেন না, আধুনিক সন্কেত বা পরিভাষা, ব্যক্তিবিশেষের 
ইচ্ছানুসারে প্রবর্তিত হইয়া থাকে। পরিভাষাস্থষ্টি হইবার পুর্ব পারি- 
ভাঁষিক অর্থবোধ একান্ত অসন্ভব। মনে করুন, একজন ব্যাকরণাচার্ষ্য 
শ্রদ্ধা, অগ্নি, নদী, বৃদ্ধি:গ্রভৃতি শব্দ, বিশেষ বিশেষ বর্ণের সংজ্ঞা দিয়াছেন । 
তীহার এরূপ পরিভাষা করিবার পর হইতে শ্রদ্ধাদিশব্দ বিশেষ বিশেষ 
বর্ণের বোধক হইতেছে বটে, কিন্তু তৎপুর্বে কখনই তাহা হইত না। 
এবং পারিভাধিকশব্দ সাধারণো প্রযুক্ত হয় ন7া। অতএব শ্রদ্ধাদিশবের 
বর্ণবিশেষে সঙ্কেত আজানিক নহে, আধুনিক । 

রূঢশবের বিষয় আর অধিক না বলিয়া এখন সংক্ষেপে যোগরূঢ় ও 
যৌগিকরূঢ় শব্দের পরিচয় দেওয়া যাইতেছে । যে শব্দের অবয়বার্থ ও 
সমুদরায়ার্থ পরস্পর অন্বিত হয়, তাহার নাম যৌগরূট় । যেমন পক্কজাদি 
শব । যাহা পঙ্কে জন্মে, তাহা পঙ্কজশব্দের অবয়বার্থ। কুমুদাদিও পঙ্ক- 
জাত, অবয়বার্থ অনুসারে কুমুদাদিতেও পঙ্কজশবের প্রয়োগ হইতে পারে, 
সচরাচর কিন্তু পঙ্কজাত পদ্মেই পক্কচজশবের প্রয়োগ হইয়া থাকে । এই- 
জন্য পদ্ম পঙ্কজশবের সমুদায়ার্থ বলিয়া শ্বীকার করিতে হয়। যৌগব্ঢ় 
স্থলে অবয়বার্থ এবং সমুদায়ার্থ পরম্পর অন্থিত হয় বলিয়াই কেবল 
অবয়বার্থ অবলম্বনে কুমুদাদিতে বা কেবল সমুদ্বায়ার্থ অবলম্বনে স্থলপন্সে 
পঙ্কজশব্ের প্রয়োগ হয় না। স্মরণ রাখিতে হইবে যে, স্তায়াচার্য্যদিগের 
মত বিবৃত হইতেছে। মীমাংসাচার্ধাদিগের মতে অবয়বার্থ ও সমূদায়ার্থ 
পরস্পর অন্থিত হইলেও স্থলবিশেষে কেবল অবয়বার্থ অনুসারে কুমুদাদিতে 
এবং কেবল সমুদায়ার্থ অনুসারে স্থলপদ্মেও কখন-কখন পঙ্কজশবের প্রয়োগ 
হইয়া থাকে । যুক্তির বৈলক্ষণ্য থাকিলেও কোন কোন ন্তায়াচার্ধ্য 
এই মতের অনুসরণ করিয়াছেন। অনাবশ্তকবোধে তাহাদের যুক্তি 
প্রদর্শিত হইল ন1। | 

যে শব্ের অবয়বার্থ এবং সমুদায়ার্থ কখন পরস্পর অন্থিত হয় না, 
পৃথক্‌ পৃথক্‌ রূপেই প্রতীত হয়, তাহার নাম যৌগিকরূঢ় বা রূঢ়যৌগিক। 


নামকরণ প্রণ।লী। ৪৭ 


ঘেমন মণ্ডপশব্দ। মগণ্ডপশর্ষ কোনস্থলে অবয়বশক্তি দ্বারা মণ্পানকর্তীকে, 
কোনস্থলে সমুদায়শক্তি দ্বারা গৃহবিশেষকে (মণ্ডপ_-ঘর ) বুঝায় । কোন- 
স্থলেই অবয়বার্থ এবং সমুদায়ার্থের পরস্পর অন্থয় হয় না, হইতে পারে না। 

এখন দেখা যাইতেছে যে, স্তায়াচাধ্যদিগের মতে ব্যুৎপত্তিলভ্য অর্থ 
অনুসারে সমস্ত-নাম হয় না। কেবল যৌগিক নামগুলি ব্যুৎপপ্তিলভ্য 
অর্থের অন্থসরণ করে, রূটুযৌগিক নাম কোন অর্থে ব্যুৎপত্তির অনুসরণ 
করে, কোন অর্থে করে না। যোগরূট় নাম ব্যুৎপত্তিলভ্য অর্থ ও সমুদায়ের 
অর্থ, উভয়েরুই অনুসরণ করে । রূঢ় নাম একেবারেই বুৎ্পত্তিলভ্য অর্থের 
অঙ্ভুসরণ করে না। স্থতরাং দর্শনশব্ব যোগরূঢ় বা কেবল রূঢ় বলিলে 
কোনও দোষ হইতে পারে না। ॥ 

সমস্ত নাম ব্যুৎ্পন্ন অথাৎ ধাতু ও প্রতায়ের যোগে উৎপন্ন হইয়াছে 
কি না, এ বিষয়েও পুব্বাচাধ্যদিগের মতভেদ আছে । ব্যাকরণাচার্ষ্য 
শাকটায়ন এবং অধিকাংশ নিরুক্তাচাধ্যদিগের মতে সমস্ত দাম ধাতু হইতে 
উৎপন্ন হইয়াছে। নিরুক্তাচার্ধ্য গার্গ্য এবং কোন কোন ব্যাকরণাচাধ্য- 
'দিগের মতে যৌগিক নামগুলি ধাতু হইতে উৎপন্ন, তপ্ভিন্ন অপর সমস্ত নাম 
রূঢ়শব্দ অর্থাৎ ধাতুর ন্যার স্বতঃপ্রপিদ্ধ, প্রকৃতি প্রতায়যোগে সমুৎপন্ন নহে। 
স্তরাং তাহাদের মতে যৌগিকনাম ভিন্ন অপরাপর নামের অবয়বার্থ 
আদৌ নাই। ধাতুসকল ক্রিয়াবাচী। সমস্ত নাম ধাতুজাত হইলে, 
সর্বত্র ধাতুপ্র্কপাগ্ক্রিয়াযোগে বস্তু অভিহিত হওয়া উচিত। তাহা 
কিন্তু একান্ত অসম্ভব। ক্রারণ, বস্তর নামপকল তিন শ্রেণীতে বিভক্ত 
হইতে পায়ে, প্রত্যক্ষক্রিয়, প্রকল্পযক্রিয় ও অধিগ্ভমানক্রিয়। যে স্থলে নাম- 
ঘটক প্ররুতি প্রত্যয়ের অর্থ অভিধেয়বস্তূতে সঙ্গত হয়, অথাৎ নাদের 
অবয়বার্থ অন্ুদারে বস্তর নামকরণ হইয়াছে; আরও স্পষ্ট করিয়া বলা 
যাইতে পারে যে, অভিধেয়বস্তগত কোন ক্রিয়। অবলম্বনে যে নাম প্রবৃত্ত 
হয়, তাহার নাম প্রত্যক্ষক্রিয়। কারক, হারক প্রভৃতি নাম প্রত্যক্ষক্রিয়। 
কেন না, কারকাদিনামের অভিধেয়বস্ত--করিতেছে, হরিতেছে, বা করণ 
ও হরণ ক্রিয়াধুক্ত, ইহা প্রত্যক্ষসিদ্ধ। সুতরাং কারকাদি নাম প্রত্যক্ষ- 
ক্রিয়। গো-অশ্ব প্রভৃতি নাম প্রকল্প্যক্রিয়। কারণ, অবস্থাবিশেষে 
গবাদিতে ক্রিয়া প্রত্যক্ষ না হইলেও, ধাতুর অর্থ অনুসারে ক্রিয়৷ কল্পনা করা 


৪৮ দ্বিতীয় লেক্চর। 


যাইতে পারে। কিন্তু ডিথ-ডবিথ প্রভৃতি নামে ক্রিয়া কল্পনা করাও চলে 
না। কেন না, ডিখ-ডবিথ প্রতি যর্চ্ছাশব্, উহার মুলীভূত কোন ধাতু 
নাই যে, তদনুসারে ক্রিয়া কল্পনা! করা যাইতে পারে । স্থতরাং ডিখ- 
ডবিখাদি নাম অবিদ্যমানক্রিয়। অতএব সিদ্ধ হইতেছে যে, প্রত্যক্ষক্রিয় 
নামগুলি ধাত্বর্থ অনুসারে প্রবৃত্ত, স্থতরাং ধাতুজাত। প্রকল্ন্যক্রিয় নাম 
ধাত্বর্থ অনুসারে প্রবৃত্ত নহে, স্থৃতরাং ধাতুজাতও নহে। গবাদিশব' ধাতু- 
যোগে উৎপন্ন হইলেও, ধাতুর অর্থ অবলম্বনে অভিধেয়বস্তর প্রতিপাদন 
করে না বলিয়া বস্তর নামকরণ ধাতুজ নহে। অর্থাৎ গবাদিশব্দঘটক 
গমাদিধাতু প্রতিপাষ্ঠ গমনাদিক্রিরা অন্ুনারে গবাদিবস্তর গবাদিনাম 
হয় নাই, সুতরাং ঞ্জাবাদিনাম ধাতুর অর্থ অনুসরণ করিয়া প্রবৃত্ত হয় না। 
এইজন্য গবাদিনাম ধাতুজ বলা যাইতে পারে না। কেন না, শব্দটি ধাতু 
হইতে উৎপন্ন হইলেও, নামকরণবিষয়ে ধাতুর কিছুমাত্র আনুকূল্য বা 
কার্যকারিতা নাই। প্রকল্পাক্রিয় নামের সম্বন্ধে যাহাই হউক, অবিদ্যমান- 
ক্রিয় নামগুলি যে ধাতুজ নহে, তাহা ইতিপুকব্বেই প্রদশিত হইয়াছে । 
প্রাচীন নিকুক্তাচাধ্য গাগ্য কতিপর আপত্তি উত্থাপন করিয়া, 
সমস্ত নাম ধাতুজ, শাকটায়নাদির এই মতের প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। 
তিনি যে সকল আপত্তি তুলিয়াছেন, তাহ] ক্রমে প্রদর্শিত হইতেছে । 
গাণ্য বলেন যে, নামঘটকধাতুবাচ্য ক্রিয়া অনুসারে অথবা অভিধেয়বন্তব- 
গত ক্রিয়া বা ধন্মানুসারে বস্তর নামকরণ হইলে ছুইটি স্ক্র্ব হয়। প্রথম, 
অনেক বস্তরতে এক ক্রিয়ার সম্বন্ধ থাকিতে পারে বলিয়। অনেক বস্তর এক 
নাম হইতে পারে। দ্বিতীয়, এক বস্ততে অনেক ক্রিয়া ব! ধর্মের সম্বন্ধ 
আছে বলিয়া এক বস্তুর অনেক নাম হইতে পারে। অর্থাৎ নামঘটক- 
ধাতুবাচ্য যে ক্রিয়ার সম্বন্ধ আছে বপিয়া যে বস্তর যে নাম হইয়াছে, সেই 
বস্ত ভিন্ন অন্য বস্ততেও সেই ক্রিয়ার সম্বন্ধ থাক! হেতু এঁ অন্ত বস্তরও সেই 
নাম হইতে পারে, এবং অভিধেয়বস্ততে কেবল একটিমাত্র ক্রিয়া বা ধর্ম 
থাকে না, প্রত্যেক বস্ততে অনেকগুলি ক্রিয়া বা ধন্ম থাকে, তাহার মধ্যে 
একটি ক্রিয়া বা ধর্ম লইয়া! ধেমন একটি নাম হইয়াছে, তেমনি অপরাপর 
ক্রিয়া বা ধর্ম লইয়া অপরাপর নামও হইতে পারে । 
.*; উদাহরণের সাহায্যে বিষয়ছুইটি বিশদভাবে বুঝিবার চেষ্টা করা 


নী 
বি 


নামকরণপ্রণালী। ! 8৯ 


যাউক। ঘোটকের একটি নাম অশ্ব। ব্যাপ্ত্যর্থ অশ্ধাতু হইতে অশ্বশব্দ 
উৎপন্ন হইয়াছে । এস্থলে অশ্ধাতুর পাধ্যন্তিক অর্থ হইতেছে অধ্বব্যাণ্ডি 
অর্থাং পথের সহিত সম্বন্ধ। ঘোটকে অধ্বব্যাপ্তি আছে, এইজন্য ঘোটকের 
নাম অশ্ব। এখন দেখিতে হইবে যে, অধ্বব্যাপ্তি অশ্বনামের কারণ হইলে, 
ঘোটক ভিন্ন অপর যেযেবস্তর অর্বব্যাপ্তি আছে, ঘোটকের ন্যায় সেই 
সেই বস্তরও অশ্বনাম হইতে পারে। আর একটি উদ্দাহঞ্ণ দেওয়া 
যাইতেছে । একপ্রকার উদ্ভিদের একটি নাম তৃণ। হিংসার্থ তৃদ্ধাতু 
হইতে তৃণশব্দ উৎপন্ন হইয়াছে । এ উদ্ভিদ পশুগণ ভক্ষণ করে, স্থৃতরাং 
হিংপিত হয়। এইজন্য উহার নাম তৃণ। হিংসিত, হওয়া তৃণনামের 
কারণ হইলে, ঘে কেহ হিসিত হয়, সে সকলেরই তৃণনাম হইতে পারে। 
ধাতুবাচ্য-ক্রিয়ান্ুুদারে বস্তর নামকরণ হইলে কিরূপে অনেক বস্তুর এক 
নাম হহতে পারে, তাহা দেখান হইল । এখন কিরূপে এক বস্তর অনেক 
নাম হইতে পারে, তাহা দেখান যাইতেছে । স্তত্তের বা থামের একটি নাম 
স্থণা। অভিধেয়বস্তগত ক্রিয়া বা ধর্ম অন্ুারে বস্তুর নামকরণ হইলে 
স্থণাতে যতগুলি ক্রিয়া বা ধর্ম আছে, সে সমন্ত ক্রিয়া বা ধর্ম লইয়া! স্থণার 
অনেকগুলি নাম হইতে পারে । যেমন স্থৃণা, দর বা গর্ভে শয়ন করে 
অর্থাৎ থাকে বলিয়া “দরশয়া,শব্ও স্কূণার নাম হইতে পাঁরে। এবং স্থণাতে 
তির্শ্চীন বংশ বা পাড় সজ্জিত হয় বলিরা 'সপ্তনী'শবও স্ৃণার নাম হইতে 
পারে। কেন না, বস্তুগত একটি ক্রিয়া বা ধর্ম লইয়াই বস্ত্র নাম হইবে, 
অপর ক্রিয়া বাধর্ম লইয়! হইবে না, তাহার কোন কারণ নাই । 

গার্গযের উদ্ভাবিত তৃতীয় আপত্তি এই যে,বস্তগত ক্রিয়। অনুসারে বস্তর 
নামকরণ হইলে যে যে শব দ্বার! সেই ক্রিয়ার প্রতিপাদন হইতে পারে, 
তৎসমস্তই সেই বস্তুর নাম হইতে পারে। এস্থলেও উদাহরণের সাহায্য 
লওয়] যাইতেছে । পুরে অর্থাৎ শরীরে শয়ন করেন অর্থাৎ শরীরের সহিত 
স্বন্ধ আছে বলিয়া আত্মার নাম পুরুষ। পুরশব ও শয়নার্থ শীধাতুর 
যোগে পুরুষশব্দ নিষ্পন্ন হইয়াছে। পুরশয়নপ্রতিপাদক পুরুষশব্ধ যেমন 
আত্মার নাম, তেমনি "পুরিশয়'শব্দও আত্মার নাম হইতে পারে। কেন না, 
পুরিশয়'শববও পুরশয়ন প্রতিপাদন করে। এইরূপ 'অষ্টা'শব অশ্বের নাম 
হইতে পারে। কারণ, অষ্টাশব ও ব্যাপ্তযর্থ অশ্ধাতু হইতে উৎপক্ন। এবং 

৭ 


৫০ দ্বিতীয় লেক্চর | 


ভৃণশবের স্তায় তর্দনশবও হিংসার্থ তৃদধাতু হইতে উৎপন্ন, সুতরাং তৃণ- 
শব্দের মত তর্দনশব্বও ভৃণসংজ্ঞক উদ্ভিদের নাম হইতে পারে । এক বস্তুতে 
অনেক ক্রিয়াথাকে বলিয়৷ ভিন্ন ভিন্ন ক্রিয়৷ অন্নারে এক বস্তর ভিন্ন ভিন্ন 
নাম হইতে পারে, ইহ। দ্বিতীয় আপত্তির বিষয়। এক ক্রিয়ার প্রতিপাদক 
ভিন্ন ভিন্ন শব এক বস্তুর নাম হইতে পারে, ইহাই তৃতীয় আপত্তি । অর্থাৎ 
অনেক ত্রিয়। অনুনারে অনেক নামের আপত্তি এবং এক ক্রিয়া অনুসারে 
অনেক নামের আপতি যথাক্রমে গার্গ্যের দ্বিতীয় ও তৃতীয় আপত্তি । 
গার্গ্যের চতুর্থ আপত্তি এই-বস্তর নিপ্ন্ন নাম লইয়া শাকটায়ন 
প্রভৃতি বিচীর করেন যে, এই নামটি কোন্‌ ধাতু হইতে উৎপন্ন হইয়াছে 
এবং নামের কি অর্থ হইতে পারে। গার্গ্য বলেন, এ বিচার অনর্থক । 
কারণ যে নাম নিষ্পন্ন বা প্রসিদ্ধ আছে, তাহার ধাতু-অন্নন্ধান 
নিশ্রয়োজন। যে বস্তুর যে নাম প্রসিদ্ধ আছে, সেই বস্তই সেই নামের 
অর্থ, সুতরাং ধাতুর অর্থ অন্থুপারে নামের অর্থ করিবার, চেষ্টাও বৃথাচেষ্টা 
বা পণুপরিশ্রম মাত্র। উহা সঙ্গতও হয় না। একটি উদ্দাহরণ দেওয়া, 
যাইতেছে । শাকটায়ন প্রভৃতি বলেন যে, প্রথনাৎ পৃথিবী । প্রথনের 
সম্বন্ধাধীন পৃথিবী। ভূমি প্রথিভ অর্থাৎ বিস্তারিত বলিয়া ভূমির নাম 
পৃথিবী । এতদ্বীব্া। প্রতীয়মান হইতেছে যে, শাকটায়নাদির মতে ভূমি 
স্বভাবতঃ প্রথিতা নহে। কোন সময়ে অপ্রথিতা ছিল, পরে প্রথিতা 
হইয়াছে । এস্থলে গার্্য উপহাসচ্ছলে প্রশ্ন করিয়াছেন যে, কে ইহাকে 
প্রথিত করিয়াছে? অর্থাৎ কে অপূৃথিবীকে পৃথিবী করিয়াছে? এবং 
গ্রথনকর্তা কোন্‌ আধারে প্রতিষ্ঠিত থাকিয়া! প্রথনক্রিয়া সম্পন্ন করিয়া- 
ছেন? গ্রথনক্রিয়ার কর্তা ও তাহার আধার উভয়ই অসম্তব। সুতরাং 
প্রথনক্রিয়া অলীক । এইজন্য সমস্ত নাম ধাতুজ, এ সিদ্ধাস্ত ত্রমাত্মক। 
গার্গোর উদ্ভাবিত পঞ্চম আপত্তি বা দোষ। সমস্ত নাম ধাতুজ, এই 
প্রতিজ্ঞা করিয়া শাকটায়ন বড়ই বিপন্ন হইয়াছেন। স্থলবিশেষে নামের 
ধাতুজত্ব রক্ষা! করিতে অক্ষম হইয়া অতি অদ্ভুত ও উপহাসাম্পদ উপায়ের 
আবিষ্কার করিতে বাধ্য হইয়াছেন। ইহার উদ্দাহরণস্বরূপে সত্যশবের 
উল্লেখ করা যাইতে পারে। শাকটায়ন অনন্ঠোপায় হইয়া “সত্য*পদকে 
সৎ ও য--এই ছুই ভাগে বিভক্ত করিয়াছেন। পরে ভিন্ন ভিন্ন দুইটি পদ 


নামকরণপ্রণালী। ৫১ 


হইতে বর্ণ বা! অক্ষর গ্রহণপূর্বক এ ভাগদ্য়ের সংস্কার করিয়া! সত্যশবের 
ধাতুজত্ব রক্ষা করিবার চেষ্টা করিয়াছেন। বিদ্মানার্থ অস্ধাতু হইতে 
অন্তিপদ সম্পন্ন হয়। এই অন্তিপদ হইতে অকার, মকার ও তকার গ্রহণ 
করিয়াছেন। অস্তিপদে অকারের পর সকার আছে। কিন্তু শাকটায়ন 
বর্ণবিপব্যয়প্রণালী অনুনারে সকারের পরে অকার স্থাপন করিয়৷ সত্য- 
শব্দের পুর্ববাদ্ধ অর্থাৎ সৎ এই অংশের সংস্কার করিয়াছেন । এবং জ্ঞানার্থ 
ইণ্ধাতুর কারিতান্ত অর্থাৎ ণ্যন্তরূপ আয়য়তি এই রূপ হইতে যকার 
গ্রহণ করিয়া সত্যশব্দের দ্বিতীয়াদ্ধ অর্থাৎ য এই অংশের সংস্কার সম্পন্ন 
করিয়াছেন। এইরূপে মৎ+য এই ছুই অদ্ধ সংস্কৃত হইলে ব্যাকরণের 
নিয়মান্ুদারে সৎ এই তকার যকারের সহিত মিলিত হইয়া যকারের 
উপরিভাগে স্থিত হইবে। এই প্রক্রিয়৷ অন্দারে সতাপদের সংস্কার 
সমাধান করা হইয়াছে । এই সংস্কার বা ব্যুৎপন্তি অনুসারে প্রতিপন্ন 
হইতেছে যে, যাহা বিগ্বমান অর্থের অর্থাৎ যথার্থ অর্থের জ্ঞান জন্মায়, 
তাহাই সত্য। একটি পদকে ভিন্ন ভিন্ন অংশে বিভক্ত করিয়! উত্তরূপে 
ধাতুজত্ব রক্ষা করিতে কোন পুক্বাচাধ্যই প্রয়াম করেন নাই। কিন্তু 
প্ররূপ না! করিলে শাকটায়নের গ্রতিজ্ঞারক্ষ1! হয় না। তাই শাকটায়ন 
এরূপ অদ্ভুত উপায় অবলম্বন করিয়া নিজের সত্যপ্রতিজ্ঞত্ব রক্ষা করিতে 
চেষ্টা করিয়াছেন । 

গার্গ্ের ষষ্ঠ আপত্তি । অভিজ্ঞ আচার্যের। বলেন যে, অগ্রে বস্ত 
উৎপন্ন হয়, তৎপরে তাহার ক্রিয়া হইয়া থাকে। কেন না, ক্রিয়া দ্রব্যাশ্রিত। 
আশ্রয় বা অবলম্বন ভিন্ন ক্রিয়ার উৎপত্তি অসস্তব। স্থতরাং শাকটায়নের 
মতে উত্তরকালভাবী ক্রিয়া দ্বার! পূর্ববোৎপন্ন বস্তর নামকরণ হয়, ইহ! 
অবশ্ঠ বলিতে হইবে। তাহা কিন্তু হইতে পারে না। কারণ, বস্তর নাম 
বস্তর সহভূত। উত্তরকালভাবী ক্রিয়া অপেক্ষা! না করিয়। নামের মহিত 
সম্ব্ধ হইয়াই বস্ত্র উৎপন্ন হইয়া থাকে । কেন না, শব্ধ ও অর্থের সম্বন্ধ 
নিত্য। শব্দ অর্থের এবং অর্থ শবের সহিত সম্বদ্ধ না হইয়। থাকে না, 
থাকিতে পারে না। এরূপ থাকিতে পারিলে শব্ধ ও অর্থের সম্বন্ধ নিত্য 
হইতে পারে না-_অনিত্য হইয়া! উঠে। শাকটায়নের মতে কিন্তু তাহাই 
হইতেছে । কেন না, বস্ত উৎপন্ন হইলে পরে তাহার ক্রিয়া হইবে। ক্রিয়া 


৫২ দ্বিতীয় লেকৃচর। 


হইলে তবে এ ক্রিয়া অনুসারে বস্তর নাম হইবে। স্থতরা” বস্তর ক্রিয়ার 
উৎপত্তির পরে বস্তর মহিত নামের সম্বন্ধ হইতেছে। ক্রিয়ার উৎপত্তির 
পূর্বে ক্রিগান্থমারী নামের সম্বন্ধ হওয়া! একান্ত অসম্ভব । অর্থাৎ বস্তগত 
ক্রিয়ার উৎপত্তি হইবার পুর্বে উৎপন্ন বস্তর কোনও নাম ছিল না__ 
শাকটায়ন ইহা বলিতে বাধ্য হইতেছেন। ইহ! অতীব হাস্তাম্পদ । 
অতএব সমস্ত নাম ক্রিয়াসাপেক্ষ নহে, ক্রিয়ানিরপেক্ষ। 

নিরুক্তাচার্ধ্য যাস্ক, আচার্য গার্গ্যের পুর্বোক্ত আপত্তিগুলির যেরূপ 
উত্তর দিয়াছেন, তাহা! একাদিক্রমে প্রদশিত হইতেছে । যাস্ক বলেন, 
বস্ত্র ক্রিয়ান্ুসারে * নামকরণ হইলে অনেক বস্তর এক ক্রিয়া থাকায় 
অনেকের এক নাম হইতে পারে। গার্ের এই প্রথম আপত্তি 
অসঙ্গত। কারণ, দেখিতে পাওয়া যায় যে, যাহার! তুল্য কর্ম করিয়া 
থাকে, সেই কর্ম দ্বারা তাহাদের মধ্যে ব্যক্তিবিশেষ ব! শ্রেণীবিশেষেরই 
নামকরণ হইয়া থাকে, সকলের হয় না। গাগ্াযও ইহা! স্বীকার করিতে 
পারেন না। যেমন তক্ষণ ও পবিব্রজন প্রিয়া অনেকে করিলেও সত্রধরের 
নাম তক্ষা এবং নন্ন্যাসী বা যতির নাম পরিব্রাজক তক্ষা বা পরিব্রাজক 
নাম অপরের হয় না। কেন এবপ হয়, এ প্রশ্ন শাকটায়নের নিকট 
জিজ্ঞাসা করা উচিত হয় না । লোকের নিকট জিজ্ঞাা করাই উচিত। 
কেন না, শাকটায়ন এ নিয়ম প্রবন্তিত করেন নাই, উহ1 লোক প্রপিদ্ধ। 
দেখিতে পাওয়া যায় যে, ফললাভের জন্য অনেক লোক একজাতীয় 
উপায় অবলপ্চন করিয়া থোচিত চেষ্টা করে, কিন্তু তাহাদের মধ্যে সকলের 
অভিলধিত ফললাত হয় না। কাহারও ফললাভ হয়, কাহারও বা ফললাভ 
হয় না। সেইরূপ অনেকের এক ক্রিয়ার সহিত সম্বন্ধ থাকিলেও দেই 
ক্রিয়া! দ্বারা কাহারও নাম হয়, কাহারও নাম হয় না। ইহা লোক- 
প্রধিদ্ধ। শব্দের স্বভাব এই যে, কোন ক্রিয়া দ্বারা কোন বস্তর প্রতিপাদন, 
করে, সকল বস্তুর প্রতিপাদন করে না। গার্গ্যেরও এ কথা-অস্বীকার্‌ 
করিবার উপায় নাই । কেন না, গারো মতে যে সকল নাম ী নহে, 
অর্থাৎ রূঢ়, সেই সকল নাম অর্থবিশেষেই রূঢ় হইল কেন, অর্থাস্তরে রূঢু 
হইল না কেন,_-অশ্বশব্ব ঘোটকেরই নাম হইল, অপর বস্তর নাম 
হইল না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে গার্গ্যকে বাধ্য হইয়া বলিতে হইবে 


নামকরণপ্রণ।লী। ৫৩ 


যে, ইহা লোক প্রপিদ্ধ বা শবের স্বভাব। সুতরাং শাকটায়নের পক্ষে এ 
কথ] বলায়, কোনও দোষ হইতে পারে না। যে যে ব্যক্তি অতিশয়রূপে 
বা নিয়মতঃ তক্ষণ এবং পরিব্রজন করে, তাহাদের নাম তক্ষা ও পরি- 
ব্রাক, ইহ] শবের স্বতভাবপিদ্ধ ও লোকপ্রমিদ্ধ। 

এক বস্ততে অনেক ক্রিয়ার যোগ থাকায় প্রত্যেক ক্রিয়া অনুমারে 
নামকরণ হইয়া এক বস্তুর অনেক নাম হইতে পাঁরে,গার্দ্যের এই 
দ্বিতীয় আপত্তিও উল্লিখিত প্রকারেই নিরাককৃত হইতেছে । কারণ, এক 
বস্ততে অনেক ক্রিয়ার ঘোগ থাকিলেও কোন একটি ক্রিয়া অনুসারেই 
তাহার নাম হইয়! থাকে, ইহা শব্ধের স্বভাব এবং লোক প্রনিদ্ধ। তক্ষা ও 
পরিব্রাজক, তক্ষণ ও পরিব্রজনের স্তায় অপরাপর ক্রিয়া)৪ করিয় থাকে, 
কিন্তু সে সকল ক্রিয়া! লইয়া তাহাদের নাম হয় না, তক্ষণ ও পরিব্রজন 
ক্রিয়া অনুনারেই নামকরণ হইয়াছে । কেন না, তক্ষা ও পরিব্রাজক শবের 
স্টায় অপরাপর-ক্রিয়া-প্রতিপাদক শব্দের তাদৃশ স্বভাব ও প্রসিদ্ধি নাই। 

গার্গোর ভৃতীয় আপত্তিও ইহা দ্বারাই খ্ডিত হইল। যে ক্রিয়া অনুসারে 
বস্তর নাম হয়, যে যে শব দ্বারা সেই ক্রিয়া প্রতিপাদিত হইতে পারে, 
সে সমস্ত শব্দই সে বস্তর নাম হউক, বাসে সমস্ত শব্দ দ্বারা সেই বস্তুর 
নির্দেশ হউক, ইহাই গার্গের তৃতীয় আপত্তি। ইহার উত্তরে অধিক 
বলিবার আবশ্তকতা নাই । যাহ] বল! হইয়াছে, তাহাই যথেষ্ট । শবের 
স্বভাব এবং লোকপ্রসিদ্ধি অনুসারে যে বস্তর যে নাম আছে. পরীক্ষকেরা 
তাহার পরীক্ষা বা অন্বাখ্যান করেন মাত্র। পরীক্ষকেরা শবের প্রযোক্তা 
নহেন। তাহার! লোক গ্রযুক্ত শব্ের বিবয় আলোচনা করিয়া থাকেন। 
এমত অবস্থায় পরীক্ষকর্দিগকে উপালস্ত বা উপহাম না করিয়া প্রযোক্তা - 
দিগের উপালস্ত করাই গার্্যের উচিত হয়। অথবা, ক্ষমতা থাকিলে 
গ্রযোক্তাদিগের ব্যবহার তিনি নিবারণ করিতে পারেন। 

নিষ্পন্ন নাম অবলম্বনে পরীক্ষা বা বিচার করা অন্যায়, ইহ! গার্্যের 
চতুর্থ আপত্তি। এই আপত্তিও অসঙ্গত। কারণ, নামের নিষ্পত্তি হইলেই 
তাহার যোগার্থের পরীক্ষা হইতে পারে । নাম নিষ্পন্ন না হইলে কাহার 
অর্থ পরীক্ষিত হইবে । ধিচারের বিষয় ভিন্ন বিচারগ্রবৃত্তি, প্রক্কৃতিস্থ 
ব্যক্তি আশা করিতে পারেন না। প্রথনাৎ পৃথিবী” এই শাকটায়নের 


৫৪ দ্বিতীয় লেক্চর। 


মতের প্রতি প্রশ্নচ্ছলে যে কটাক্ষ কর। হইয়াছে, তাহাও অনদঙ্গত। 
কেন না, শাকটায়ন বলিতে পারেন, অন্ত কেহ প্রথিত না করিলেও, 
ভূমি পৃথু অর্থাৎ বিপুলায়তন, অতএব তাহার নাঁম পৃথিবী । পৃথিবীর 
পৃথুত্ব প্রতাক্ষদৃষ্ট। ইহাতে বিবাদ হইতে পারে না। এখন দেখা যাইতেছে 
যে, শাকটায়নের অভিপ্রায় যথাবৎ অবধারণ করিতে ন। পারিয়াই গার্্য 
চতুর্থ আপত্তির অবতারণা করিয়াছেন (১)। 

শাকটায়ন পদবিভাগপুব্বক দুইটি ধাতু দ্বার! সত্যশব্দের বুৎপত্তি 
করিয়াছেন। ইহ]! গার্গ্যের মতে দূষণীয়। ইহাই তাহার পঞ্চম আপণ্ডি। 
এই আপতিও সঙ্গত হর নাই। শাকটায়নের অভিপ্রায়ের অপরিজ্ঞান- 
নিবন্ধন সমুদ্তাব্রীত হইয়াছে। কেন না, যদি *ধাতুদ্বয়ের দ্বারা ব্যুৎপন্ন 
করিলেও সত্যশব্দের প্রকৃত অর্থ প্রকাশিত না হইত, তাহা হইলে 
শাকটায়ন নিন্দনীয় হইতেন, সন্দেহ নাই। তাহা ত হয় নাই। সত্যশব্ধ- 
প্রতিপাদিত অর্থ, অন্ুগতার্থ ধাতুদ্বশ্নের দ্বারাই শাকটারন সংস্কৃত করিয়া- 
ছেন । সুতরাং গাগোর পঞ্চম আপত্তি, অশিক্ষিত পুরুষের আপত্তির ন্যায় 
নিজেরই নিন্দার কারণ হইতেছে । এমন অশিক্ষিত পুরুষ অনেক আছেন, 
ধাহারা একধাতুজ নামের ধাতৃজত্বও জানেন না। অনেকধাতুজ নামের ত 
কথাই নাই । বে নামের ক্রিয়া নিতান্ত অভিব্যক্ত, তথাবিধ পাচক, লাবক 
প্রভৃতি পদদকল কোন্‌ কোন্‌ ধাতু হইতে সমৃত্পন্ন হইয়াছে, তাহাও 
জানেন না, ঈদৃশ লোকেরও অভাব নাই । যাহারা শব্দের অর্থ ধাতুদ্বারা 
অনুগত করিতে পারে না, তাহারাই গহণীয়। যাঁহার৷ এক ধাতু বা অনেক 
ধাতু দ্বারা শব্দের অর্থ অনুগত করিতে সক্ষম, তাহারা প্রশংসার যোগ্য । 
তাহারা কোনক্রমেই গর্থণীয় হইতে পারেন না। পাঁচক, লাবক প্রভৃতি 
কতকগুলি নাম প্রকটক্রিয়, অর্থাৎ কোন্‌ ক্রিয়া অনুনারে এ সকল নাম 
হইয়াছে, তাহ) শিক্ষিতমাত্রেই অনায়ামে বুবিতে পারেন। সত্য প্রভৃতি 
যে সকল নাম অপ্রতীতার্থ, অর্থাৎ যাহাদের ক্রিয়া সহস। প্রতীত হয় 
না, প্রক্কৃতিপ্রত্যয়াদি বিভাগ দ্বারা তাহাদিগকে প্রতীতার্থ করাই 
পরীক্ষকের কার্ধ্য। তদ্থারাই বুযুৎপাদয়িতার পাণ্ডিত্য বা শিক্ষার উৎকর্ষ 


শিপ পপপপসপিসপিপ পিপি পপ পীাপপীপশা পাশা পিপিপি টিপিপি পপ পাপ পাপা পাপা 
ভাপা ০ 





(১) স্বপ্রতিষ্ঠ কোনও মহাঁপুরুষ পৃথিবীকে প্রথিত করিয়াছিলেন, এ কথাও 
অনায়াসে বল। যাইতে পারে। | 





নামকরণপ্রণালী। ৫৫ 


প্রকটিত হয়। আরও বিবেচন1 করা কর্তব্য যে, অনেক ধাতু দ্বারা এক 
পদের নির্বচন বেদান্থুদারী, উহা শাকটায়নের বুদ্ধিমাত্রোতপ্রেক্ষিত নহে। 
সুতরাং অনেক ধাতু দ্বারা এক পদের ব্যুৎপা্ন করিয়াছেন বলিয়া 
শাকটায়নকে উপহাস কর] গাগ্যের উচিত হয় নাই। শতপথব্রাঙ্গণে 
হ্ব-ধাতু, দা-ধাতু ও ইণ-ধাতু, এই তিনটি ধাতু দ্বারা হৃদয়শব ব্যুৎপাদিত 
এবং প্রত্যেক অক্ষরের বুৎপত্তিবেত্তার তদনুরূপ ফল কথিত আছে। 
শতপথব্রাঙ্গণের মতে হ-ধাতুর হৃ, দা-ধাতুর দ এবং ইণ্ধাতুনিষ্পন্ন 
আয়য়তি-পদের য়--এইরূপে ধাতুত্রয় হইতে অক্ষরত্রয় গ্রহণ করিয়া 
হৃদয়শব্দ বুৎপন্ন হইয়াছে । ছান্দোগ্যোপনিষদে হদযশব্দের অন্তপ্রকার 
বাতৎপত্তি প্রদশিত হইয়াছে। 

পরভাবিনী ক্রিয়া দ্বারা পূর্বজাত বস্তুর নামকরণ হইলে শবার্থসন্বন্ধের 
নিত্যত্বসিদ্ধান্ত ভঙ্গ হর-_গার্দ্যের এই ষষ্ঠ আপত্তিও অকিঞ্চিকর। 
কারণ, পরভাবিনী ক্রিয়। দ্বারা পুর্বজাত বস্তর ব্যপদেশ বা সংজ্ঞা অনেক" 
স্থলে দেখিতে £পাওয়া বায়। উদাহরণস্থলে বিন্বাদ ও লম্বচুড়ক শবের 
উল্লেখ করা যাইতে পারে । কেন না, পরকালীন বিন্বাদনক্রিয়া ও 
চুড়ালম্বনক্রিয়ার সহিত ভবিষ্যৎ যোগ বা সম্বন্ধ অবলম্বনে পূর্বকালোৎপন্ন 
স্তর নামকরণ দৃষ্ট হইয়াছে। এস্থলে ক্রিয়ার উৎপত্তির পরে বস্তর নাম 
হয় নাই। ক্রিয়ার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধ অনুসরণ করিয়া পূর্বেই তথাঁবিধ 
নাম হইয়াছে । প্পুরোডাশকপালেন তুষানপনয়তি””-_-এই শ্রুতিতে 
ভবিষ্যৎ পুরোডাশের সম্বন্ধ অনুসারে কপালবিশেষ পুরোডাশকপালশব্ে 
নিদ্দি হইর়াছে। ইহা মীমাংসাদর্শনের সিদ্ধান্ত। উল্লিখিতরূপে গার্্যের 
আপত্তবিগুলি নিরারুত হওয়াতে, সমস্ত নাম ধাতুজ, শাকটায়নের এই 
সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ এবং সমর্থিত হইল। প্র 

বঢ়শবের বুৎপত্তি অনাবশ্তক, ইহাঁও অসঙ্গত। কেন না, বেদে রূট- | 
শবেরও ব্ুৎপত্তি প্রদর্শিত হইয়াছে । দ্বতের একটি নাম সর্পিঃ। সর্পিদ্‌- 
শব ঘ্বতে রূঢ। তথাপি বেদে গমনার্থ স্থপ-ধাতু হইতে সর্পিস্শব্ধ 
ব্যুৎপাদিত হইয়াছে। যেহেতু সর্পিত হয়, অতএব ম্বৃতের নাম সর্পিঃ। 
কেন না, ঘ্বত ক্ষরিত হইয়া অগ্নিতে হুত হইয়া থাকে। স্বভাবতও ঘৃত 
সর্পিত বা ক্ষরিত হয়। সুর ও অনুর শব্দ যথাক্রমে দেব ও দেবশক্রতে 


৫৬ দ্বিতীয় লেক্চর। 


বূঢ়। কিন্তু বেদে উভয় শব্েরই বুৎপত্তি প্রদর্শন করা হইয়াছে। স্ু- 
শব্দ গ্রশস্তবাচক, অস্থশব্ষ অপ্রশস্তবাচক। সু ও অসু শব্দের উত্তর 
মত্বর্থ র-প্রতায় হইয়। সুর ও অসুর শব্দ ব্যুৎপাদিত। শ্রুতি বলিয়াছেন, 
প্রজাপতির প্রশস্ত আম্মা হইতে সমুৎপন্ন বলিয়া দেবগণ স্থুরশব্ববাচ্য 
এবং প্রজাপতির অপ্রশস্ত আত্ম! হইতে সমুৎপন্ন বাঁলয়! দেবশক্রগণ অন্ত্রর- 
শব্দবাচ্য। ধাতু প্রত্যরযোগে বূঢ়শববুযুৎপাদনের শত শত উদাহরণ বেদে 
রহিয়াছে । ব্যাকরণের উপাদিপ্রকরণে বিস্তর রূউুশব্দ ব্যুৎপাদিত হইয়াছে । 
অতএব সমস্ত নাম ধাতুজ--শাকটায়নের এই শিদ্ধান্ত বেদানুমারী এবং 
ব্যাকরণসম্মত ; সুতরাং অন্রান্ত, সমীচীন ও আদরণীয়। ্‌ 
সমস্ত নাঢুমুর ধাতুত্ব উপপাদনের জন্ত কিরূপ নির্বচনপ্রণালীর 
অনুসরণ করিতে হইবে, তদ্বিষয়ে নিরুক্তাচার্ধ্য যাস্ক যে সর্ঘক্ষপ্ত উপদেশ 
দিয়াছেন, তাহার স্থূল তাৎপর্য প্রদর্শিত হইতেছে । যাস্ক বলেন যে, যে 
সকল নাম ব্যাকরণপ্রানদ্ধ-প্রক্রিয়ান্থুনারে ব্যুত্পাধিত হইলে অন্তগতার্থ 
হয় অর্থাৎ অভিধেরবস্তগত ক্রিয়াদি যথাযথ গ্রতিপাদন করিতে সমর্থ 
হয়, ব্যাকরণপ্রপিদ্ধ প্রক্রিরা অন্থসারেই তাহার বুৎ্পাদন করিবে। 
কেন না, তাহা হইলেই ব্যুৎপত্তিপভ্য অর্থ অবলম্বনে এ সকল নাম 
অনারামে অভিধেয়বস্তর প্রতিপাদন করিতে পারিবে । যেখানে ব্যাকরণ- 
প্রসিদ্ধ প্রক্রিয়া অন্নুমারে বুযুৎ্পন্ন নাম অন্থুগতার্থ হয় না, অর্থাৎ নামের 
'্যুৎপত্তিলভ্য অর্থ অভিধেয়বস্ততে সাক্ষাতনন্বন্ধে সঙ্গত হয় না, সেখানে 
অর্থের প্রতি অর্থাৎ যে বস্তুতে নামের প্রয়োগ হইতেছে, সেই বস্তুর 
প্রতি প্রধানতঃ লক্ষ্য রাখিয়া বুুৎপত্তিলভ্য অর্থের কোনরূপ সামান্য 
বা সাদৃশ্ত অবলম্বনপুর্বক পরীক্ষা করিবে। অর্থাৎ সচরাচর যে অর্থে 
নামের প্রয়োগ হটুর্া থাকে, বাৎপত্তিলভ্য অর্থের সহিত সেই অর্থের 
কিরূপ সাদৃশ্ত আছে, তাহা নিরূপণ করিবে। সাদৃশ্ত নিরূপিত হইলে এ 
সাদৃশ্ত অবলম্বনে ব্ৎপত্তিলভা অর্থের ভিন্ন অর্থেও নামের প্রয়োগ 
হইয়াছে, ইহা নিশ্চয় করিবে । বিশেষ মনোযোগের মহিত নিরূপণ 
করিতে প্রবৃত্ত হইলেও ' যেখানে কোনরূপ অর্থনামান্য লক্ষিত হয় না, 
সেখানে শব্দদামান্ত অনুসারে নির্বচন করিতে হইবে। অমুক ধাতুৃতে 
এই বর্ণ তৃষ্ট হইয়াছে, এই নামেও সেই বর্ণ দেখা যাইতেছে, অতএব এ 


নামকরণপ্রণালী। ৫৭ 


ধাতু হইতে এই নামের উৎপত্তি হইয়াছে, এইরূপ স্থির করিবে। অর্থাৎ 
যে ধাতুর সহিত নামগত বর্ণের সাদৃশ্ত আছে, সেই ধাতু দারা দেই 
নামের নির্বচন করিবে। নে স্থলে ব্যাকরণের নিয়মের প্রতি আদর 
প্রদর্শন করিবার আবগ্ঠকতা নাই। কেন না, পদ নিষ্পন্ন করিবার জন্ 
বৈয়াকরণের! প্রক্কতি প্রতায়ের বিস্তর বিকৃতি করিয়াছেন। নৈরুক্তেরাও 
তাহাই করিবেন। এইরূপে নাম বুৎপাদিত করিয়া সেই ধাতুর অর্থ 
সেই নামে স্থাপন করিবে। ধাতুর অর্থ সহজে অভিধেয়বস্তুতে সঙ্গত 
না হইলে প্রয়োজনানুস]রে ধাত্বর্থের বিস্তার ও সষ্কোচাদি করিয়া নির্বচন 
সম্পন্ন করিবে। ব্যুৎপত্তির ঈদৃশপ্রণালী প্রাচীন বৈষাকরণদিগের ও 
অন্ুমত। এইজন্য বৈয়াকরণ আঁচার্যেরা বলিয়াছেন _-* 
বর্ণাগমে। বর্ণাবিপর্ধ্যয়শ্চ দ্বৌ চাগরৌ বর্ণবিকারন1শৌ । 
ধাতোস্তদর্থাতিশয়েন যোগন্তদুচ্যতে পঞ্চবিধং নিরুক্তম্‌ ॥ 
বর্ণের আগম, বর্ণের খ্বিপর্যায়, বর্ণের বিকার, বর্ণের নাশ এবং ধাতুর 
অর্থের অতিশয়ের সহিত ধাতুর যোগ, নির্বচন এই পাঁচপ্রকার। 
বর্ণাগমাদির উদাহরণও পূর্বাচার্যের! দেখাইয়াছেন। যথা-- 
বর্ণাগমো গবেন্দ্রাদৌ সিংহে বর্ণবিপর্য্য়ঃ | 
োড়শাদৌ বিকারং স্তাদ্বর্ণনাশঃ পৃষোদরে ॥ 

গো+ইন্্র গ্ুই শব্দহ্রযোগে গবেন্ত্রশব্ষ বুাত্পন্ন হইয়াছে। ব্যাকরণের 
নিয়মানুসারে গবেন্ত্র না হইয়া গবিভ্ত্র হইতে পারে। এম্থলে গোশব্ের 
পরে একটি অকার যোগ করিয়া গবেন্ত্র হইল । হিংসার্থ হিন্স-ধাতু 
হইতে দিহশব্‌ উৎপন্ন । ব্যাকরণের নিয়মান্থসারে দিংহ না হইয়া হিংস 
হইতে পারে । এস্বলে হকার ও. সকারের বিপধ্যয় করিয়া দিংহশঘ্দ 
পিদ্ধ হইল। যষ ও দশ শবযোর্গে 'যোড়শ,শক হইয়াছে। ব্যাকরণের 
নিয়মান্দারে যড়্দশ হইতে পারে। কিন্তু যষ্শর্দের শেষ ষকারস্থানে 
উকার এবং দশশব্ের দকারস্থানে ডকার--এইরূপ বর্ণবিকার প্রণালী 
দ্বারা ফোড়শপদ সাধিত হইল। পৃষৎ4-উদর এই দুইটি শব্ধের যোগে 
পৃষোদর/পদ্ হইয়াছে। ব্যাকরণের নিয়মান্থসারে পৃষহুদর হইতে পারে। 
কিন্তু পূষংশব্দের তকারের লোপ করিয়া 'পৃষোদর/পদ সিদ্ধ হইল। 

নৈরুত্ত: ও বৈয়াকরণদিগের মতে বডঢ়শবেরও বুৎপত্তি করিতে 

৮ 


৫৮ দ্বিতীয় লেক্চর। 


হইবে, ইহা স্থির হইল। মীমাংসাঁভাম্যকার আচীর্ধ্য শবরস্বামী বঢ়শবের 
বাৎপত্তির পক্ষপাতী নহেন। তিনি স্বক্কৃত মীমাংসাভাষ্তে বলিয়াছেন যে, 
যে শবের যে অর্থে প্রসিদ্ধি আছে, সে শব্দের সেই অর্থই গ্রহণ করিতে 
হইবে, নিরুক্ত-ব্যাকরণাদ্ি দ্বারা অর্থ কল্পনা করিতে হইবে ন1। কারণ, 
নিরুক্তা্দি দ্বারা অর্থ কল্পনা করিলে অর্থ ব্যবস্থিত অর্থাৎ নিশ্চিত হয় 
না। কেন না, বুৎপত্তি অন্ুমারে কল্পিত অর্থ, অভিমত বন্তমাত্রে শীমাবদ্ধ 
থাকিতে পারে না। সুতরাং বাৎ্পত্তি অন্ুলারে অভিমত বস্তর গ্তায় 
অপর বস্তপ্ত এ শব্দের অর্থ হইতে পারে। অতএব যে শবের যে অর্থে 
গ্রসিদ্ধি আছে, সে শবের সেই অর্থই গ্রহণীয়। আধ্যদিগেক্ম ব্যবহারে 
যে শব্ধের কোনগুঅর্থে গ্রসিদ্ধি নাই, অথচ য্লেচ্ছব্যবহারে অথবিশেবে 
প্রসিদ্ধি আছে, সে শব্দের ম্লেচ্ছব্যবহ্থার প্রসিদ্ধ অর্থও গ্রহণ করিতে 
হইবে। যেমন পিক, নেম, তামরদ, সত প্রভৃতি শব্দের আধ্যব্যবহার প্রপিদ্ধ 
অর্থ না থাকায়, ম্নেচ্ছপ্রপিদ্ধি অন্থপারে পিকশব্দের অর্থ কোকিল, 
নেমশবের অর্থ অদ্ধ, তামরসশব্দের অর্থ পদ্ম, সত-শব্দের অর্থ শতচ্ছিদ্র 
বর্তুলাকার দারুময় পাত্র। আর্য ও শ্রেচ্ছ ব্যবহারে ঘে সকল শবের, 
প্রদিদ্ধ কোন অর্থ নাই, নিরুক্ত এবং ব্যাকরণানুদারে সেই সকল শবেের 
অর্থ কল্পনা করিতে হইবে। শবরস্বামীর এই সিদ্ধান্ত বস্তগত্য। প্রস্তাবিত 
বিষয়ের বিরোধী নহে। কেন না, নৈরুক্ত ও বৈয়াকবণ আচান্যের! রূ়- 
শব্দের ব্যুৎ্পাদন এবং বুৎপত্ভিলভ্য অর্থ, লোক প্রসিদ্ধ অর্থে অর্থাৎ 
অভিধেয়বস্তুতে সঙ্গত করিয়া নিজের পাত্ডিত্য ও কৌশল প্রকাশ করেন 
বটে, কিন্তু তাহারাও রূঢ়শবের প্রসিদ্ধ অথই গ্রহণ করিয়া থাকেন। 
ইহা পূর্বেই প্রদর্শিত হইয়াছে। শবের ব্যুৎপত্তি গ্রনর্শন করা তাহাদের 
কর্তব্য বলিয়া তাহারা রূঢ়শবেরও বুৎ্পত্তি প্রদর্শন করিয়াছেন। 

স্মরণ করিতে হইবে যে, শব্দের ব্যুৎ্পত্তিপ্রদর্শনই নিরুক্তাদি শাস্ত্রের 
উদ্দেশ্ত। সেইজন্যই নিকক্তাদি শান্ত্র প্রণীত হইয়াছে। স্থতরাং নৈরুক্ত 
এবং বৈয়াকরণ রূঢ়শব্বেরও ব্যুৎ্পত্তি প্রদর্শন করিতে বাধ্য । মীমাংসা- 
দশন্রে উদ্দে্ত অন্তরূপ। সন্দিপ্বস্থলে অদদর্থ নিরাসপুর্বক বেদের 
সদর্থবাথা অর্থাৎ আলোচনমাত্রে বা আপাততঃ বিরুদ্ধার্থরূপে গ্রতীয়- 
মান বেদবাক্যসকলের মীমাংসা করিবার উদ্দেশে মীমাংসাদর্শন প্রণীত 


নামকরণপ্রণালী। ৫৯ 


হইয়াছে । এইজন্য মীমাংসাভাষ্যকার রূঢ়শবের বুৎপাদনের আবগ্তকতা 
বিবেচনা করেন নাই । কেন না, শব্দের বু[ৎপত্তি প্রদর্শন তাহার কার্ধ্য 
নহে। সদর্থ ব্যবস্থাপন করাই তাহার কার্ধ্য। নৈরুক্ত প্রভৃতি আচাধ্যগণ 
এবং মীমাংমাভাবষ্মকার, উভয়েই শৰের প্রমিদ্ধ অর্থেরই গ্রহণ করিতে 
বলিঘাছেন। কিন্তু প্রথমোক্ত আচার্বযাগণ শবের ব্ৃত্গন্তি প্রদর্শন 
করিয়াছেন । মীমাংসাভাষ্যকার তাহা করেন নাই। পরস্পরের মধ্যে 
এইমাত্র বৈলক্ষণ্য। ফলিতার্থে কোনও বিরোধ হইতেছে না । 
পিকাদিশবৰের প্লেচ্ছপ্র সিদ্ধ.অর্থ গ্রহণ করা হইয়াছে বলিয়া কেহ যেন 
মনে করেন না যে, এ সকল শব্ধ অ্রেচ্ছভাষা হইতে গৃহীত, সুতরাং 
তত্তৎশবাঘটিত বেদবাকাগুলি আধুনিক। কেন না, শবদ,যদি মনুষ্ানির্শিত 
হইত, তাহা হইলে এরূপ আশঙ্কা কর! সঙ্গত হইত। বাস্তবিক কিন্তু 
তাহা নহে। মীমাংসাদর্শনের মতে শব্দরাশি কোন মনুষ্য বা অপর 
কাহার৪ নির্মিত নহে। উহা! নিত্য। মনুষ্য তাহা প্রকাশ করে ও 
ব্যবহার করে মাত্র। ম্হাভাম্যকার এই মতের অনুবর্তী হইয়া শব্দ 
মনুষ্যনিন্দিতি নহে, ইহা! বুঝাইবার জন্য একটি কৌতুকাঁবহ হেতুর উপন্তণস 
করিয়াছেন। তিনি বলেন যে, শব্ধ মন্তুষ্যনিম্মিত হইলে সংস্কৃতশব্দগুলি 
বৈয়াকরণ পঙ্ডিতদিগের নিশ্পিত, ইহা অব্তই বলিতে হইবে। ঘটশরা- 
বাঁদির গ্রয়োজন উপস্থিত হইলে লোকে যেমন কুলাল বা কুম্তকারের 
বাড়ী যাইয়া বলে যে, আমার এতগুলি ঘটশরাবের প্রয়োজন উপস্থিত 
হইয়াছে, তাহ! গ্রস্তত করিয়া দাও, আমি ব্যবহার করিব; সেইরূপ শব 
মনুষ্থনির্িত হইলে লোকে বৈয়াকরণ পগ্ডিতদিগের গৃহে যাইয়। বলিত 
যে,আমার আবশ্রক হইয়াছে, আমার জন্য এতগুলি শব প্রস্তত করিয়। 
দাও, আমি তাহা ব্যবহার বা প্রয়োগ করিব। তাহা কিন্ত কেহই করে 
না। অতএব শব্দ নিত্য, মন্ুষ্যনিশ্মিত নহে। সে যাহা হউক, শবের 
নিত্যত্ব মীমাংদাদর্শনে সমীচীন যুক্তি দ্বারা মমর্থিত হইয়াছে। শব 
নিত্য হইলে ব্রেচ্ছভাঁষা হইতে শব্খগ্রহণের আশঙ্কা হইতে পারে না। 
কারণ, নিত্য শব্ধ জল ও অনলাদির ন্যায় সকলেরই সাধারণ সম্পত্তি 
এবং যথেচ্ছ ব্যবহার্য । জাঁতিবিশেষে শব্দবিশেষের প্রয়োগের বিরলত। 
ও প্রাচুর্য জাতিবিশেষের অবস্থান্থনারে ঘটিয়া! থাকে । যে শব যেতর্থে 


৬০ দ্বিতীয় লেক্চর। 


যে জাতি প্রচুর ব্যবহার করে, দেই জাতির পক্ষে সেই শব্দের সেই 
অর্থ প্রপিদ্ধ, অপরের পক্ষে অপ্রসিদ্ধ, এইমাত্র প্রভেদ। ব্যবহারের 
্রাচূ্ধ্যই প্রমিদ্ধির কারণ। ব্যবহারের বিরলত। কালে সঙ্কেতবিন্মরণের 
হেতু হইয়া পড়ে। 

ইউরোগীয় পণ্ডিতদিগের অবলদ্ষিত প্রণালী অন্ুপারে যাহার! উক্ত- 
কারণে বেদবাক্যের আধুনিকত্ব বলিতে চাহেন, তাহাদের ম্মরণ করা 
উচিত যে, একত্রবাদী এক আদিমজাতি হইতে কালে ছুই শাখা ছুই 
বিভিন্ন দেশে উপনিবিষ্ট হইয়া আর্ধ্য ও শ্রেচ্ছ নাম প্রাপ্ত হইয়াছে, ইহাও 
ইউরোগীয় পগ্ডিতদিগের সিদ্ধান্ত । সুতরাং কথিত কারণে পিকাদি- 
শব্ঘটিত বেদবাক্যগুলির আধুনিকত্ব প্রতিপন্ন হইতে পারে না। দেশাস্তরে 
উপনিবিষ্ট হইয়াও এক শাখা! এ সকল শব্দ বহুলপরিমাণে বাবহার করিয়াছেন, 
সুতরাং প্র নকল শব্দের অর্থ তাহাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ, অন্ত শখার ব্যবহার 
অর হইতে অল্নতর হওয়াতে অর্থ অপ্রসিদ্ধ হইয়া পড়িয়াছে। ইহা ভিন্ন 
আর কিছুই বলা যাইতে পারে না। এক.আদিম জাতিরই এক শাখা 
আর্ধজাতি ও অপর শাখা শ্নেচ্ছজাতি নামে আখ্যাত, ইহ! আমার অঙ্গীকৃত 
দিদ্ধীন্ত বলিয়! যেন বিবেচিত হয় না। ইউরোপীয় প্রণালী অনুসারে 
আপত্তি হইলে ইউরোপীয় প্রণালী অনুনারে তাহার উত্তর দেওয়া যাইতে 
পারে, ইহা প্রদর্শন করাই আমার উদ্দেস্ত । উক্ত বিষয়ে আমি কীদৃশ 
সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছি, এস্লে তাহা বল! নিশ্রয়োজন। ধরিয়া 
লইতে পারেন যে, হয় ত এ বিষয়ে আমার কোন সিদ্ধান্তই হয় নাই। 

সে যাহ। হউক, নিরুক্তাচার্য্য যাস্ক অর্থপামান্য অনুনারে নির্চন 
করিবার যে উপদেশ দিয়াছেন, তাহার উদাহরণস্থলে প্রবীণ, উদার 
প্রভৃতি শব্দ উল্লেখযোগা। পপ্রকুষ্টো বীণায়াম্‌” অর্থাৎ বীণাবিষয়ে প্রকুষ্ট। 
এই অর্থে প্রবীণশব্দ বুযুৎপাদ্দিত। অতএব গান্ধর্ববিষ্ঠায় দৃক্ষ বাক্তি প্রবীণ- 
শবের প্রকৃত অর্থ। অভ্যা্জনিত পটুতা৷ না হইলে প্রকষ্ট বা দক্ষ হইতে 
পারা যায় না। সুতরাং গান্ধর্ববিগ্ায় দক্ষ ব্যক্তির অবস্থাই অভ্যাঁসপাটব 
আছে।. এই অভ্যাসপাঁটবরূপ সামান্য অবলম্বন করিয়া! অন্তত্রও প্রবীণ- 
শব্দের প্রয়োগ হইয়া থাকে। যে ব্যক্তি যে বিষয়ে পরিশ্রমপূর্ক 
কৌশললাভ করিয়াছে, তাহাকে সেই বিষয়ে প্রবীণ বলা হয়। যেমন, 


নাঁমকরণপ্রণ।লী। | ৬১ 


ব্যাকরণে প্রবীণ, দর্শনে প্রবীণ ইত্যাদি। আরও দূরতর সাদৃশ্ত লইয়া 
লোকে প্রবীণশবের প্রয়োগ করিয়া থাঁকে। প্রবীণ ব্যক্তি কৌশলমম্পন্ন, 
স্বতরাং তাহাতে মহত্ব আছে। এই মহত্ব অবশ্ত গুণগত । কিন্ত 
পরিমাণগত মহত্ব লইয়া কখন-কখন লোকে ইহ! প্রয়োগ করিয় থাকে । 
যেমন, প্রবীণ বৃক্ষ, প্রবীণ মস্ত ইত্যার্দি। 'আর*'শব্দের অর্থ কশার 
প্রান্থভাগ। সারথিকর্তৃক কশ! উত্তোলিত হইবামাত্র অর্থাৎ পৃষ্ঠদেশে কশার 
প্রান্তভাগ পাতিত করিবার পূর্বেই যে অশ্ব বা বলীবর্দ সারথির অভিপ্রায় 
বুঝিয়া চলিয়া থাকে, তাহার নাম উদ্দার। কেন না, "আর" অর্থাৎ কশার 
প্রান্তভাগ তাহার পৃষ্ঠদেশ হইতে উদ্ধগত হইয়াছে, পৃষ্ঠটদেশের সহিত 
আরের সম্বন্ধ হয় নাই । তথাবিধ অশ্বাদি “উদার'শন্দের সাহজিক অর্থ । 
কিন্তু অভিপ্রায় বুঝিয়া কাধ্য করা, এই সামান্ত বাঁ সাৃশ্ত অবলম্বন 
করিয়া, যে দাতা প্রার্থীর অভি প্রায় লক্ষ্য করিয়া প্রার্থনা করিবার পূর্বেই 
অভিলধিত বস্ত প্রদান করেন, তীাহাকেও উদার বলা হয়। বর্ণসামান্তয 
অনুারে নির্বচনের প্রচুর উদাহরণ নিরুক্তগ্রন্থে দেখিতে পাওয়া যাঁয়। 
বাহুল্যভয়ে তাহ! প্রদধিত হইল না। 

বৈদিক নামকরণপ্রণালীর আভাস পূর্বেই দেওয়া হইয়াছে। নিরুক্ত- 
গ্রন্থে তাহাই অন্ুস্থত, ব্যাথ্যাত ও পল্লবিত হইয়াছে । উদাহরণস্বরূপ 
অগ্নিশঝের নির্বচনপ্রণালী দেখান যাইতেছে। অগ্নি কি পদার্থ, 
তদ্বিষয়ে মতভেদ আছে। আত্মবাদীরা বলেন, এক আত্মাই বিভূতি- 
যোগে নানারূপে অবস্থিত, অতএব সমস্ত শবই নানাভাবে অবস্থিত 
আত্মাকেই প্রতিপাদ্ন করে। লোকবেদপ্রসিদ্ধ যজ্ঞাঙ্গ দেবতাবিশেষের 
নাম অগ্নি, ইহা যাজ্িকদিগের মত। পৃথিবীস্থিত জ্যোতিঃপদার্থবিশেষ 
অগ্নি, ইহ! নিরুক্তকারদের অভিমত। এই অর্থের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া 
অগ্রিপদ্দের নির্বচন প্রদর্শিত হইয়াছে। অগ্রশব্ ও নীধাতুর যোগে 
অগ্রণীশব ব্যুৎপন্ন। অগ্রশবের অগৃ-অংশ এবং নীধাতুর দীর্ঘ ঈকার 
শ্বরূপে বিকৃত করিয়া নীধাতুর নি লইয়া! অগ্নিনাম সম্পন্ন করা হইয়াছে। 
যেহেতু, সকল বিষয়েই ইনি নিজেকে অগ্রে নয়ন করেন। অথবা ইনি 
দেবতাদের অর অর্থাৎ দেলাপতি(১)1 বা বকরের 


(১) অগ্নি দেবতাদিগের সেনাপতি, ইহা শ্রুতিসিদ্ধ। 


৬২ ছিতীয় লেক্চর। 


নীত অর্থাৎ প্রণীত বলিয়া ইহার নাম অগ্নি। অথবা কি লৌকিক, কি 
বৈদিক, যে কর্মে ইনি দাধকরূপে উপস্থিত হন, তথায় নিজে প্রধান 
হইয়া অপর সমস্তকে নিজের অঙ্গতাঁ-নয়ন অর্থাৎ গুণীভূত করেন, এই- 
জন্ত ইঙার নাম অগ্নি। “মঙ্গং নয়তি ইত্যাগ্সিত,| অথবা তৃণ বা কাষ্ঠ 
যাহা-কিছু আশ্রয় করেন, তাহাকেই অঙ্গতা-নয়ন অর্থাৎ আত্মসাৎ করেন 
বলির! ইহার নাম অগ্নি। স্থৌলাঠীব আচার্য্যের মতে, অক্লোপন অথাৎ 
রুক্ষকারী বলিয়া ইহাকে অগ্নি বলা হয়। এ মতে 'অক্লোপনঠশব্দের বর্ণ- 
লোপ ও বর্ণবিকার প্র্রক্রিঘ্না অনুদারে অগ্িপদ নিষ্পন্ন হইয়াছে। 
শাকপুণি আচার্য্য তিনটি ধাতু দ্বারা অগ্নিশব্দের নির্বচন করিয্বাছেন। 
বর্ণবিকার প্রক্রিরান্থসারে গতার্থ ইন্ধাতুর অকার, প্রকাশার্থ অঞ্জধাতু 
বা দাহার্থ দহধাতুর গকার এবং প্রাপণার্থ নীধাতুর নি, এইরূপে ধাতু- 
ত্রয় হইতে অক্ষরত্রয় গ্রহণ করিয়৷ অগ্নিশব্দ সাধিত বা সংস্কৃত হইয়াছে । 
কারণ, এই ধাতুত্রয়বাচ্য ক্রির়াই অগ্নিতে আছে। অগ্নি গতিক্রির়াযুক্ত, 
রূপের প্রকাশক বা পার্থৰ বস্তর দাহকারী এবং হবনীয় দ্রব্য দেবতা- 
দের উদ্দেশে নয়ন করেন। বাক্যের আদি ও অন্ত বর্ণ লইয়াও 
নির্চন দেখিতে পাঁওরা যায়। “বলাদতীতঃ৮--এই বাক্যের আদি ও 
অন্ত অক্ষর লইয়া 'বত,শব্দ ছুর্ধলে প্রযুক্ত হইয়াছে । লোকেও স্থল- 
বিশেষে এইরূপ ব্যবহার দেখিতে পাওয়া যাঁয়। দেশবিশেষে পুক্ষরিণীকে 
পুণীঃশন্দে অভিহিত করা৷ হয়। কুব্ধাণা-এই পদের উকার ও বকার 
লোপ করিয়া 'ক্রাণা”শবেের নির্চচন করা হইয়াছে । স্বৃতিপুরাণাদিতেও 
নৈরুক্ত নির্বচনপ্রণালীই অনুস্থত হইয়াছে_- 
জয়ং পুণ্যঞ্চ কুরুতে জয়ন্তীমিতি তাং বিছুঃ। 
জয় ও পুণ্য করে বলিয়া তাহার নাম জয়ন্তী। এখানে “জয়ং 
পুণ্যং চ কুরুতে” এই বাক্যের প্পুণ্যং চ কুরু” এই অংশ বর্ণলোপপ্রবালী 
অনুদারে লুপ্ত এবং বর্ণবিকার প্রক্রিয়া দ্বারা “তে” এই একার ঈকারে 
গরিণত করিয়া জয়ন্তীনাম নিষ্পন্ন কর! হইয়াছে। মনুমংহিতায় বক্ষ্য- 
মাণরূপ শরীরশবের ব্যুৎপত্তি পরিদৃষ্ট হয়_ 
যনুত্্যবয়বাঃ সুঙ্ষাস্তস্তেমান্তা শ্য়স্তি ষট্‌। 
তম্মাচ্ছরীর্মি ত্যাহুস্তস্ত মূর্তিং মনী[ষণঃ | 


নামকরণপ্রণ।লী। ৬৩ 


যেহেতু দেহমকল সেই ক্র মুদ্তির অহঙ্কার ও পঞ্চতন্মাত্র এই ছয়টি 
সুপ্ম অবয়বকে আশ্রর করে, সেইহেহু দেহাকারে পরিণত তাহার মুন্তিকে 
প্ডিতেরা শরীর বলেন। কুরুকভট্ট বলিয়াছেন,-প্বড়াশ্ররণাচ্ছরীরম্‌,” 
ছয়কে আশ্রয় করে বলিয়। শরীর। সুতরাং বলিতে হইবে যে, ষষ্‌- 
শব্দের উত্তর মত্বর্থীয় “র'প্রতায় করিয়া বর্ণবিকার প্রক্রিয়ান্ুসারে শরীর- 
বের বুুৎপন্তি কর! হইয়াছে । এমন কি, কোন বস্ত্র সম্বন্ধ আছে 
বলিয়| সেই বস্তর নামে বন্তবিশেষের নির্দেশ দেখিতে পাওয়া যায়। যেমন, 
দণ্ডের যোগ আছে বলির! দণডশব্ব এবং মঞ্চে অবস্থান করে বলিয়া মঞ্চশব্দ 
পুরুবে প্রযুক্ত হয়। কখন-কখন বিক্রেয়বস্তর নামে ফেরিওয়ালাকে ডাকা 
হয়, ইহ! সকলেই অবগত আছেন। দেশবাচক অঙ্গ-বরঙ্গ-কলিঙ্গাদি শব্দ 
তত্তন্দেশবাসীতে ভূরি প্রমাণে প্রঘুক্ত হইয়া থাকে । 
এঁতিহাপিকদিগের মতে হিন্দুনাম এ মূল হইতে উদ্ভৃত। দিদ্ধুনদের 
পূর্ববর্তী দেশনকল দাঁধারণতঃ সিনুস্থান অর্থাৎ সিন্ধু প্রদেশ বলিয়া 
বিদেশীয়দিগের নিকট পরিচিত। পারস্তভাষার উহ! হিন্দুস্তান বলিয়া 
আখ্যাত। এই হিন্দুস্থানবাসীদের প্রকৃত নাম হইতে পারে হিন্দুস্থানী, 
. কিন্ত সজ্ষেপতঃ হিনুনামে তাহার! নির্দিষ্ট হইয়াছে। স্মরণ রাখিতে হইবে 
যে, যে সময়ে মুসলমানেরা ভারতীয়দ্িগকে হিন্দুনামে আখ্যাত করেন, সে 
সময়ে এ দেশে মুসলমানের বসবান আদৌ ছিল না। হিন্দুনামের বাঁজভূত 
সিন্ধুনদ পারন্ততাষায় হিন্দু, গ্রীকৃভাযায় ইন্দুন্‌ বলিয়া কথিত হয়। 
তদমুমারে লাঁটিন্ভাষায় ভারতবর্ষের নাম ইওিয়া হইয়াছে। পারস্ত- 
ভাষায় কৃষ্ণবর্ণও হিন্দুশব্ধের এক অর্থ । এ ভাষায় হিন্দুকোশপর্বতের 
নাম হিন্দুকোহ্‌ অর্থাৎ কৃষ্ণপর্বত। পারসীকদিগের মতে রমণীদিগের 
গণ্ডস্থলে কৃষ্ণবর্ণ তিল অতিশয় সৌন্দর্যবদ্ধক। বিখ্যাত পারন্তকবি 
হাফেজ বলিয়াছেন_- 
অগর আন্‌ তুর্ক শিরাজী বদস্তারদ্‌ দিলে মারা। 
বখালে হিন্দোয়েন্‌ বকৃষম্‌ সমরকন্দো বোখারা রা ॥ ৮৮ 
ইহার তাৎপর্ধ্যার্থ এই--শিরাজবাদিনী সে সুন্দরী যদি আমার অন্তঃ- 
করণকে হস্তগত করে অর্থাৎ আমাকে ভালবাসে, তবে তাহার কষ্ণবর্ণ 
তিলের পরিবর্তে পমরকন্দ ও বোখা'রা উভয়ই প্রদান করিব। উক্ত পদ্ছে 


৬৪ দ্বিতীয় লেক্চর । 


কৃষ্ণবর্ণ অর্থে হিন্দুশব প্রযুক্ত হইয়াছে। দিন্ধুপ্রদেশবাসিগণ অধিকাংশ 
কুষ্ণবর্ণ বলিয়া! মুসলমানেরা তাহাদিগের হিন্দু-আখ্য! দিয়াছেন কি না, 
তাহাঁও চিন্তাশীলদিগের বিবেচ্য । পূর্বকালে মুসলমানেরা আফ্রিক! 
হইতে ক্রীতদাসের আমদানী করিতেন। আক্রিকাবাদীর! কৃষ্ণবর্ণ বলিয়। 
হিন্দুশবে অভিহিত হইত। কালে দীসমাত্রই হিন্দুনামে আখ্যাত 
হইয়াছিল। বিজয়ী মুসলমানগণ দ্বণাপুর্রবক দিদ্ধুপ্রদেশবাসীদিগকে 
হিন্দুনামে আখ্যাত করিয়াছেন কি না, তাহাঁও চিন্তয়িতব্য বিষয় বটে । 
বুঝা যাইতেছে ধে, হিন্দুনাম আমাদিগের নিজসম্পন্তি নহে, বাবুনামের 
ন্যায় উহা! অন্তের প্রদত্ত । অনন্তরনির্দিষ্ট কারণদ্বয়ের কোষ কারণে ব 
উভয় কারণে যদ্দি হিন্দুনামের উৎপত্তি হইয়া থাকে, তবে হিন্দুনাম সিন্ধু- 
গ্রদেশবামীদিগের পক্ষে গ্লানিকর ভিন্ন গৌরবের বস্ত নহে। অথচ আমর! 
হিন্দুনামের কতই-ন! গৌরব করিয়া থাকি । সুতরাং ইহাকে বেদান্ত- 
মতসিদ্ধ অবিগ্া বা অজ্ঞানের অনির্বচনীপ্প প্রভাবের যংসামান্তয আভাদ 
ভিন্ন আর কি বলা যাইতে পারে। মেরুতন্ে হিন্দুশবের অন্তবিধ বুৎগন্তি 
প্রদশিত হইয়াছে । যথা: 

হীনঞ্চ দূষয়ত্যেব হিন্দুরিত্যুচ্যতে গ্রিয়ে । | 
হীন অর্থাৎ নিকৃষ্ট আচারব্যবহারকে দুষিত করে বলিয়া! হিন্দুনামে অভি- 
হিত হয়। কেহ কেহ বলেন যে, মেরুতন্ত্রে লগুননগরের উল্লেখ আছে, 
অতএব উহ নিতান্ত আধুনক। কিন্তু তাহাদের বিবেচন1 করা উচিত যে, 
পুরাণাদিতে অনেক ভবিষ্যদুক্তি আছে। মেরুতন্ত্রেও ভবিধ্যৃক্তিস্থলেই 
লগডননগরের উল্লেখ আছে। সুতরাং তদ্ারা মেরুতত্ত্রের আধুনিকত্ব 
প্রতিপন্ন হইতে পারে না। উহা! যে ভবিষ্বুক্তি, তাহা দেখাইবার জন্ত 
মেরুতন্ত্র হইতে কিয়দংশ উদ্ধৃত হইতেছে__ 


:* পশ্চিমায়ায়মন্ত্রান্ত প্রোক্তাঃ পারশ্তভাষয়]। 
অষ্টোত্বরশতাশীতির্যেষাং সংদাধনাৎ কলৌ। 
_ গক্ষ থানাঃ সপ্ত মীর! নব সাহ। মহাবলাঃ। 
হিন্দুধর্ম গ্রলোপ্তারে! জায়ন্তে চক্রবন্তিনঃ | 
হীন দূষয়ত্যেব হিন্দুরিতুচ্যতে প্রিয়ে। 


নামকরণপ্রণালী। ৬৫ 


পূর্বায়ায়ে নবশতং বড়শীতিঃ প্রকীর্তিত] । 
ফিরিজভাবয়া মন্ত্রী যেযাং সংসাধনাৎ কলৌ। 
অধিপা মগুলানাঞ্চ সংগ্রামেঘপরাজিতাঃ। 
ইংরেজ! নব্যট্পঞ্চ লগ্ডজাশ্চাপি ভাবিনঃ। 
ইহার ব্যাখ্যা অনাবশ্যাক। কিন্তু মেরুতন্ত্রের প্রামাণ্য সন্দেহ করিবার 
অন্ত কারণ আছে। তাহা এই--পারস্তভাষা এবং ফিরিঙ্গভাষায় যে 
সকল মন্ত্রের, কথা বল! হইয়াছে, তত্তভাষাভিজ্ঞেরা জানেন যে, বস্তগত্যা। 
উহাদের অস্তিত্ব নাই। কোন প্রাঙ্গাণিক গ্রস্থকার মেরুতন্ত্ব হইতে বচন 
উদ্ধৃত করেন নাই। হিন্দুনাম চিরন্তন হইলে ক্রতিস্থৃতিপুরাণাদি গ্রন্থে 
আধ্যনামের ন্যায় হিন্দুনামের উল্লেখ থাকিত। 
সে ষাহ! হউক, নামকরণের যে সকল প্রণালী প্রদর্শিত হইয়াছে, 
তাহার প্রতি মনোযোগ করিলে দর্শনশাস্ত্রের নামকরণবিষয়ে কোনও 
অনুপপন্তি থাকিতে পারে না। দর্শনশব্দের ব্যুৎপত্তিলভ্য অর্থ যাহাই 
হউক না কেন, শান্ত্রবিশেষ যে তাহার প্রসিদ্ধ অর্থ, তদ্ধিষয়ে বিবাদ 
হইতে পারে না। যে শান্ত্রবিশেষে যুক্তিদ্বারা বক্তব্যবিষয় সমর্থিত হয়, 
সচরাচর তাহাকেই দর্শনশান্ত্র বলে। এতাবতা এই সিদ্ধান্তে উপনীত 
হওয়া যাইতে পারে যে, দর্শনশক বুৎপত্তিলভ্য অর্থ বা তাহার সাদৃশ 
লইয়া শান্ত্রবিশেষে প্রযুক্ত ; অথবা! শান্ত্রবিশেষে রূঢ় । 
কেহ দশনশবের অন্যরূপ ব্যাখ্য। করিয়া থাকেন। চাক্ষুষজ্ঞান দৃশ্‌- 
ধাতুর মুখ্য অর্থ হইলেও জ্ঞানও উহার অপর অর্থ, ইহা পু্বীচার্যযগণ 
স্পষ্টভাষায় ম্বীকার করিয়াছেন। এস্থলে দৃশ্ধাতুর জ্ঞান-অর্থ গ্রহণ 
করিলে, যাহ! জ্ঞানের সাধন, তাহাই দর্শনশব্ের বুাতৎপত্তিলভ্য-অর্থরূপে 
প্রতীয়মান হয়। অন্তঃকরণাদি জ্ঞানের সাধন হইলেও তাহা! শাস্ত্র নছে। 
আপত্তি হইতে পারে যে, শান্ত্রমাত্রই জ্ঞানের সাধন, অনাদি বেদ হইতে 
অগ্ভতনীয় কাব্য পর্ধ্যস্ত সকলই অল্লাধিকপরিমাণে জ্ঞানের সাধন বলিয়া 
শান্ত্রমাত্রই দর্শনশান্ত্রূপে পরিগণিত হইতে পারে। এতছুত্তরে তাহারা 
বলেন যে, জ্ঞানসামান্তয ও জ্ঞানবিশেষ, এই. উভয় অর্থেই জ্ঞানশব্ের 
প্রচুর প্রয়োগ দেখিতে পাওয়া যায়। অমরসিংহ বলিয়াছেন-_ 
মোক্ষে ধীর্জানমন্তাত্র বিজ্ঞানং শিল্পশান্ত্রয়োঃ। 
৯ 


৬৬ দ্বিতীয় লেক্চর। 


মোক্ষবিষয়ক বুদ্ধির নাম জ্ঞান, শিল্প ও শান্ত্রবিষয়ক বুদ্ধির নাম 
বিজ্ঞান। প্ররুতস্লে দৃশ্ধাতুর জ্ঞানবিশেষ অর্থাৎ মোক্ষবিষয়ক-জ্ঞানরূপ 
অর্থ গ্রহণ করিলে উক্ত আপত্তি নিরাকৃত হইতে পারে। কেন না, দর্শন- 
শান্তর মোক্ষবিষয়ক জ্ঞানের সাধন, অপরাপর শাস্ত্র জ্ঞানসামান্তের সাধন 
হইলেও মোক্ষবিষয়ক জ্ঞানের সাধন নহে । 

ভিন্ন ভিন্ন দর্শনের প্রতিপাস্থ বিশেষ বিশেষ বিষয় অবলম্বন করিয়! 
অধিকাংশ স্থলে দর্শনসকলের বিশেষ বিশেষ নাম হইয়্াছে। দর্শনান্তরে 
অনালোচিত “বিশেষনামক একটি অতিরিক্ত পদার্থ স্বীকৃত হওয়াতে 
কণাদের দর্শন বৈশেষিকদর্শন বলিয়া আখ্যাত। ন্তায়পদার্থ বিশেষরূপে 
আলোচিত ও প্রযুক্ত হওয়ায় গোতমের দর্শনের নাম ন্যায়দর্শন। সাংখা- 
দ্িগের দর্শনের নাম সাংখ্যদর্শন, পতগ্জলির দর্শনের নাম পাতঞ্জলদর্শন, 
এই দুইটি নাম যথাক্রমে সম্প্রদায় ও কর্তার নামানুসারে অঙ্গীকৃত 
হইয়াছে। পাতঙ্জলদর্শনের অপর নাম যোগদর্শন। কেন না, তাহাতে 
যোগের বিস্তর ব্যাখা। আছে। সাংখ্য ও পাতঞ্জল দর্শনের সাধারণ নাম 
সাংখাপ্রবচন। কারণ, তত্বপমাদনামক আদি বা সংক্ষিপ্ত সাংখ্যদর্শনের 
পদ্দার্থাৰলী উক্ত উভয় দর্শনে প্রকৃষ্টরূপে উক্ত অর্থাৎ ব্যাখ্যাত হইয়াছে। 
মহাভারতে সাংখাশবের এইরূপ ব্যাখ্যা দেখিতে পাওয়1 যায়__ 

সংখ্যাং প্রকুর্বতে চৈব প্রকৃতিঞ্চ প্রচক্ষতে । 
তত্বানি চ চতুর্বিংশৎ তেন সাংখ্যাঃ প্রকীর্তিতাঃ ॥ 

বাহার সংখ্যা! অর্থাৎ সমাক্‌ জ্ঞানের উপদেশ করেন এবং প্রকৃতি ও 
চতুধিংশতি তত্ব বলেন, তাহারা সাংখ্য। বেদবাক্যসকলের উৎকৃষ্ট 
বিচার আছে বলিয়৷ জৈমিনির দর্শনের নাম মীমাংসাদর্শন। “শরীর'শবের 
উত্তর ক্ুৎসার্থে কন্‌-প্রত্যয় করিয়া “শরীরক'শব্ নিষ্পন্ন হইয়াছে। 
“শারীরক'শব্বের অর্থ কুৎসিতশরীরবাপী জীবাত্মা (১)। কুৎসিত- 
শরীরবাসী জীবাত্ম উৎরুষ্টর্ূপে বিচারিত হইয়াছে বলিয়া ব্যাসের দর্শনের 


(১) শরীর শ্বতাবতঃ কুৎমিত; কেন, না, মূত্রপুরীধযোগহত মাতার উদর তাহার 
উৎপত্তি ও অবস্থিতির স্থান, শুত্র-শে।ণিত তাহার উপাদান, শরীর স্বয়ং মুত্র-ুরীষ- 
,মাংন-শোণিভাদি-যুক্ত। / 


নামকরণপ্রণ।লী। ৬৭ 


নাম শারীরকমীমাংসা। বেদাস্তবাকাদকলের অর্থ বিচারিত হইয়াছে 
বলিয়। উহার অপর নাম বেদান্তদর্শন। জৈমিনি ও ব্যাসের দর্শন উভয়ই 
মীমাংসাশব্দেও অভিহিত হয়। মীমাংসাশব্দের অর্থ পূজিত বিচার বা 
বেদবিচার। ছুই দর্শনের পার্থক্য বুঝাইবার জন্য ব্যাসের দর্শন 
উত্তরমীমাংনা ও ব্রহ্মমীমাংদ1! এবং জৈমিনির দর্শন পূর্বমীমাংসা, কন্ম- 
মীমাংসা ও অধ্বরমীমাংসা নামে ব্যবহৃত হয়। বৌদ্ধদর্শন, আহতদর্শন 
প্রভৃতি কতগুলি দশন সম্প্রদায়নামে এবং পাণিনীয়দর্শন প্রভৃতি কর্তৃ- 
নামে আখ্যাত হইয়াছে । 

কণাদ প্রভৃতি দর্শনকর্তারা তাহাদের গ্রন্থে বৈশেষিকাদি বিশেষ 
বিশেষ নামগুলি ব্যবহার করেন নাই । ভাষ্যকার প্রভৃতি এ সকল নাম 
ব্যবহার করিয়াছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে, দর্শনকার ব1 ভাষ্যকার 
কেহই দশননাম ব্যবহার করেন নাই । ভগবান্‌ শঙ্করাচাধ্য শারীরক- 
ভাষ্য এবং উদয়নাচার্্য তাহার ন্যায়কুসুমাঞ্জলি প্রকরণে দর্শনশব্দ 
ব্যবহার করিয়াছেন। অবশ্ত তাহার বহুপূর্ধে দর্শনখব ব্যবহৃত হইত । 
কারণ, এরূপ প্রিদ্ধি না থাকিলে তাহার! উহা ব্যবহার করিতেন 
'না। ফলত: দর্শননাম অধ্যেতৃসম্প্রদায়প্রদিদ্ধ। অর্থাৎ অধ্যেতার! 
দশননাম ব্যবহার করিয়াছেন। তদনুনারেই উহা প্রসিদ্ধ হইয়াছে। 
কেবল দর্শন বলিয়া নহে, কর্পস্থত্র ও গৃহাস্থত্রনকল বেদভেদে ও 
শাখাভেদে ভিন্ন ভিন্ন। কোন্‌ বেদের-বা কোন্‌ শাখার কোন্‌ স্তর, 
তাহ। স্ুত্রগ্রন্থে কথিত হয় নাই। এমন কি, কোন্‌ মন্ত্র বা সংহিতা 
এবং কোন্‌ ব্রাহ্মণ কোন্‌ শাখার, তাহাও সংহিতা বা ব্রাহ্মণে নির্দিষ্ট 
নাই। উহাও অধ্যেতৃসম্প্রদায়প্রপিদ্ধ। এখন সকলেই বুঝিতে 
পারিতেছেন যে, অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার লোপ কেবল বিস্তালোপের 
কারণ নহে । উহা! রহিত হইলে কালে গ্রন্থের পরিচয় পর্যন্ত রহিত 
হইয়। যাইতে পারে । অতএব পুর্বপুরুষদিগের প্রতি ভক্তিপ্রদর্শন 
এবং ভবিষ্যবংশীয়ধিগের মঙ্গলের জন্য ক্লতবিগ্মগ্ুলী দর্শনশান্ত্রাদির 
অনুশীলনবিষয়ে বন্ধপরিকর হউন, ভগবান্‌ তাহাদের সহায় হউন । 


তৃতীয় লেক্চর। 


শত উড উপ 


দর্শনশাস্ত্র | 


কি প্রয়োজন সম্পাদনের জন্য দর্শনশান্ত্রের আবির্ভীব, তাহার উপকারিতা 
ও আবশ্তকতাই বা কি, কেনই বা দর্শনশাস্ত্রের এত সমাদর? 
যাহারা দর্শনশাস্ত্রের অনুশীলনে প্রবৃত্ত হইবেন, স্বভাবতই তীহার্দের 
এই সকল বিষয়'পরিষ্কাররূপে জানিবার অভিলাষ হইবে। প্রাণিমাত্রই 
কোন একটি প্রয়োজন লক্ষ্য করিয়াই কার্ধ্যে প্রবৃত্ত হইয়া থাকে, 
নিপ্রয়োজন প্রবৃত্তি আকাশকুস্থমের মত অলীক বলিলে অত্যুক্তি হয় 
না। এইজন্য অগ্রে প্রয়োজনের বিষয় আলোচনা করা যাইতেছে। 
দর্শনশান্ত্র যেরূপ উচ্চস্থান অধিকার করিয়াছে, তাহার উদ্দেশ্তও অবশ্যই 
তদনুরূপ উচ্চ হইবে। 

পূর্বে বলিয়াছি, ভারতীয় দর্শনসকল আধ্যাত্মিক দর্শন। মহধিগণ 
অধিকাংশ দর্শনের প্রণেতা । তাহারা অধ্যাত্মজগতে বিচরণশীল। 
তাহাদের প্রণীত দর্শন অধ্যাত্মবিস্তাবিশেষ এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ে 
কোনরূপ-বিশিষ্টগ্রয়োজন-দম্পাদনার্থ প্রবৃত্ত--ইহা1! সহজেই বোধগম্য 
হইতে পারে। বস্তগত্যা আধ্যাত্িক-প্রয়োজন-সম্পাদনই দর্শনশাস্ত্রের 
মুখ্য ও প্রধান উদ্দেশ্য বা প্রয়োজন। ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ, এই 
চতুর্ধ্ধ পুরুষার্থ অর্থাৎ পুরুষপ্রয়োজনের মধ্যে মোক্ষ বা মুক্তিই পরম- 
পুরুষার্থ, ইহ! সর্ববাদিসিদ্ধ। মহযি কণাদ ও গোতম প্রভৃতি অধিকাংশ 
দর্শনগ্রণেতাগণ নিঃশ্রেয়ন বা মুক্তিই তাহাদের দর্শনের প্রয়োজন, ইহা 
স্গষ্টভাষায় বলিয়! গিয়াছেন। তত্বজ্ঞান মুক্তির কারণ, ইহাও তাহারা 
যুক্তকঠে স্বীকার করিয়াছেন। ফলত; তত্বজ্ঞান মুক্তির উপায়_এ 
বিষয়ে অধ্যাত্ববেত্বাদিগের মতভেদ নাই। কেননা, সংসার ব| বন্ধন 
: মিথ্যাজ্ঞানজন্ত । সুতরাং তত্বজ্ঞান মিথ্যাক্তানের অপনয় সাধন করিয়া 
মুক্তি সম্পাদন করিবে, ইহা অনায়ামবোধ্য। আত্ম! বস্তগত্যা দেহাদি- 


দর্শনশাস্ত্র। ৬৪ 


ভিন্ন হইলেও দৌঁধবশতঃ সাংসারিক মানবগণ দেহ বা ইন্রিয়াদিকেই 
আত্মা বলিয়া জানে। ইহাই হইল মিথ্যাজ্ঞান, ইহাই অনর্থের মৃল। 
এই মিথ্যাজ্ঞান অপনীত ন] হইলে যুক্তি হইতে পারে না) এবং এই 
মিথ্যাজ্ঞানের অপনয্ন একমাত্র আত্মতত্বজ্ঞানসাধ্য । এইজন্য আত্মতত্ব- 
সাক্ষাৎকারের উদ্দেশে আত্মার শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন বেদে 
বিহিত হইয়াছে। স্মতিকপর বেদবিহিত শ্রবণমননের উপায় নির্দেশ 
করিয়াছেন-__ 
শ্রোতব্যঃ শ্রতিবাক্যেভ্যো মন্তব্যশ্চোপপত্তিভিঃ। 
মত্বাচ মততং ধ্যেযর এতে দর্শনহেতবঃ ॥ 

শ্রতিবাক্য হইতে শ্রবণ ও উপপত্তি দ্বারা মনন করিয়া অবিচ্ছিন্নভাবে 
ধ্যান করিবে। এই তিনটি আত্মদর্শনের বা আত্মনাক্ষাৎকারের হেতু । 
উপপত্তি_যুক্তি বা অন্ুমান। | 

আশঙ্কা হইতে পারে যে, যাহ! বেদবাঁক্য হইতে শ্রুত হইবে, 
তাহ! অবশ্ঠ যথার্থ, সুতরাং তদ্দিষয়ে মননাদি অনাবশ্তক | কিন্তু লোকের 
স্বভাব এই, আপ্তোপদেশ অর্থাৎ অন্রান্তপুরুষের বিশ্বীস্তবাক্যে যাহা 
. শ্রবণ করে, যুক্তি বা অনুমান দ্বারা তাহ] বুঝিতে চায়, যাহ] যুক্তিসঙ্গত 
বিবেচনা করে, তাহা প্রতাক্ষ দেখিতে ইচ্ছুক হয়। প্রত্যক্ষ দেখিতে 
পাইলে তদ্ধিষয়ে আর কোনরূপ জিজ্ঞানা থাকে না। সুতরাং 
প্রমিতি বা যথার্থজ্ঞান প্রত্যক্ষাবসান অর্থাৎ প্রত্যক্ষদর্শন হইলে 
জিজ্ঞাসা অর্থাৎ জানিবার ইচ্ছ! নিবৃত্ত হয়, ইহা! স্বাভাবিক বা অন্ুভব- 
সিদ্ধ। ন্তায়ভাষ্যকারও এইরূপই সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। তত্বজ্ঞান- 
মাত্রই মুক্তির কারণ নহে। সাক্ষাৎকার অর্থাৎ প্রতাক্ষাত্বক তত্বজ্ঞানই 
মুক্তির কারণ। প্রত্যক্ষাত্মক তত্বজ্ঞান বা আত্মদর্শন শ্রবণমাত্রসাধ্য 
নহে। উহাতে মনন ও নিদিধ্যামনেরও আবশ্তকতা আছে। শ্রবণ 
শ্রবণেন্রিয়মাত্রমাধা, মনন অন্তঃকরণসাধ্য। একেন্িয়জন্য জ্ঞান 
অপেক্ষা একাধিক-ইন্দ্রিয়জন্য জ্ঞান সমধিক বিশ্বসূনীয়। দেহাদিতে 
আত্মন্রম যেরূপ প্রত্যক্ষ, দেহাতিরিক্ত আত্মস্তানও সেইরূপ প্রত্যক্ষাত্মক 
হওয়৷ আবগ্তক | পরোক্ষ ততজ্ঞান, প্রত্যক্ষাত্বক মিথ্যাজ্ঞানের সমুচ্ছেদ- 
বিধানে সক্ষম হয় না। তত্বজ্ঞান প্রত্যক্ষাত্বক হইলে তবে প্রত্যঙ্ষাত্মক 


৭৪... তৃতীয় লেক্চর। 


মিথ্যাজ্ঞানের উন্ুলন করিতে পারে । এইজন্ত শ্রুতি ও স্থৃতিতে শ্রবণ, 
মনন ও নিদিধ্যাসন আত্মদর্শনের হেতু বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছে। 

দর্শনশান্ত্র মননের উপায় নির্দেশ করিয়া দেয়। এই কারণে দর্শন- 
শাস্ত্রের অপর দুইটি নাম--মননশান্ত্র ও বিচারশান্ত্র। দর্শনশান্ত্রের 
এতাদৃশ সমুচ্চ লক্ষ্য বা প্রয়োজন আছে বলিয়াই দর্শনশাস্ত্রের এত 
আদর ও এত গৌরব। পাংশুলপাছবক কৃষীবল হইতে শাস্্রব্যবসায়ী 
বিদ্বান্‌ পর্যান্ত সকলেই “অহং স্থুলঃ, অহং কৃশ£” অর্থাৎ “আমি স্থূল, আমি 
কুশ* এইরূপে সংঘাত অর্থাৎ দেহাদিকেই আত্ম! ৰলিয়া জানে । দর্শন- 
শান্তর বুঝাইয়া দেয় যে, আত্মা দেহ নহে, আত্মা দেহ হইতে ভিন্ন 
পদার্থ । যে দর্শনশান্ত্র সর্বসাধারণের প্রত্যক্ষ অনুভবের অসত্যত! 
প্রতিপন্ন করিয়া' আশাতীত কৃতকাঁধ্যতা লাভ করিয়াছে, মোহান্ধ 
মানবের জ্ঞানচক্ষু সমুন্মীলিত করিয়াছে, ইহলোকের অকিঞ্চিংকরত্ব 
প্রদর্শন করিয়া অপ্রতক্য অচিস্তনীয় পরলোকের পথে মানবকে পরি- 
চালিত করিয়াছে, গাঢ়তর অন্ধকারে পরিস্কুট আলোক বিকীর্ণ 
করিয়াছে, সংক্ষেপতঃ জগতে যুগান্তর উপস্থিত করিয়াছে, সে দর্শনশান্ত্রের 
গৌরব ও মহিমা! অভিনিবেশমহকারে বুঝিবার যোগ্য, বাকাদ্ারা বুঝাইবার 
যোগ্য নহে। 

আত্মা দেহ নহে, দেহ হইতে ভিন্ন, ইহ! শাস্ত্রে উপদিষ্ট হইয়াছে 
সত্য; কিন্তু পূর্বেই বলিয়াছি, লোকের শ্বভাব এই যে, তাহারা উপদেশ- 
মাত্রে তৃপ্ধিলাত করিতে পারে না,_উপদিষ্ট বিষয় উপপত্তিসহকাকে 
বুঝিবার জন্ ব্যগ্র হয়। দশনশান্ত্র সেই উপপত্তি নির্দেশ করিয়৷ দেয় 
বা শাস্ত্রের উপদেশ উপপত্তিসহকারে বুঝাইয়৷ দেয়। এমন লোকও 
একান্ত বিরল নহে যে, শাস্ত্রের প্রতি তাহাদের তাদৃশ আস্থা নাই, ব 
সম্পূর্ণ অনাস্থাই রহিয়াছে, তথাপি দর্শনশান্ত্ব তাহাদিগের পক্ষেও আত্মার 
দেহাতিরিক্রত্ব প্রতিপন্ন করিতে সক্ষম । কুতার্কিকদিগের তর্কজাল 
ছিন্নভিন্ন করিয়া সমীচীন তর্কের সাহায্যে শাস্ত্রের প্রামাণ্য সংস্থাপন- 
পূর্বক বিপথগামীকে দৎপথে আনয়ন করা, লক্ষ্যত্রষ্টকে লক্ষ্যের অভিমুখ 
করা, দর্শনশান্ত্র ভিন্ন অপর কোনও শাস্ত্রের সাধ্যায়ত্ত নহে। 

গরমকারুণিক শাস্ত্র পিতামাতার ন্যায় লোকের ছিতকর উপদেশ 


দর্শনশাস্ত্র। ৭১ 


দিয়াছেন। কিন্তু বিরুতবুদ্ধি গর্বিত পুত্র পিতামাতার উপদেশ গ্রাহ 
করে না। দে যতক্ষণ না তাড়িত হয়, ততক্ষণ কিছুতেই পিতা- 
মাতার উপদেশের অনুবর্তন করিতে চাহে ন1। তাড়িত হইলে তাড়নার 
ভয়ে উপদেশের বশবর্তী হইতে বাধ্য হয়। আমরাও তন্রপ শাস্ত্রের 
উপদেশের প্রতি অনাস্থা বা অনাদর প্রদর্শন করিলে, দর্শনশান্ত্রের মকাট্য- 
তর্করূপ কশাঘাতে নিয়মিত হইয়া শাস্ত্রের উপদেশের প্রতি আস্থা ও 
তক্তি প্রদর্শন করিতে বাধ্য হই। মাগুলিক রাজগণ যেমন সম্রাট 
কর্তৃক রক্ষিত হয়েন, অপরাপর শান্স সেইরূপ দশনশান্ত্রের সাহায্যে 
রক্ষিত ও পরিপুষ্ট হয়। ফলত: দর্শনশান্ত্র শান্ত্রগতে সম্রাট, লোকের 
পক্ষে গুরুর স্তায় মঙ্গলাকাজ্ষী, বন্ধুর ন্যায় হিতোপদেষ্টা, প্রিয়তমের 
ন্ায় গ্রীতিপ্রদ। উৎকৃষ্ট শাস্ত্রের উতকৃষ্ট উদ্দেশ্ত, মণিকাঞ্চনযোগ 
সম্পাদন করিয়াছে। বুদ্ধির নিন্মলত1 ও শুঙ্ষগ্রাহিতা এবং তর্কশক্তির 
সমুন্মেষ প্রভৃতি দর্শনশান্ত্রের অবান্তর প্রয়ৌোজন। অবান্তর প্রয়ৌজন- 
গুলি দর্শনশাস্ত্রের মুখ্য প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্ত ও ক্ষুদ্র বলিয়া 
প্রতীয়মান হইলেও, শান্ত্রান্তরের পক্ষে তাহাই অস্ামান্ত ও পর্ষতপ্রমাণ 
বলিতে হইবে, সন্দেহ নাই। কেন না, অন্ঠান্ত শাস্ত্র ততদূর অগ্রসর 
হইতেও সক্ষম নহে। বল! বাহুল্য যে, পৌরুষেয় শাস্ত্রের প্রতি লক্ষ্য 
করিয়াই এইরূপ বল! হইল। অপৌরুষেয় বা ঈশ্বরীয় বেদশাস্ত্রের কথা 
স্বতন্ত্র। চিন্তাশীল স্ধীগণ শ্বীকার করিতে বাধ্য যে, সমস্ত শান্ত্রই 
বেদশান্ত্ব হইতে সমুদ্ভুত হইয়াছে। নাস্তিকশিরোমণি চার্ধাক বেদের 
প্রকৃত অর্থ বুঝিতে পারেন নাই। তিনি ভ্রান্ত হইয়া তাহার দর্শনের 
মূলভিত্তি বেদ হইতে সমা্ত মনে করিয়াছিলেন । এইজন্য তিনি 
নিজে বেদ না মানিলেও আস্তিকদিগের চক্ষে ধুলিনিক্ষেপ করিবার 
উদ্দেশে তাহার দর্শনেও বেদবাক্য প্রমাণরূপে উপন্স্ত করিয়াছেন। 
দেখিতে পাওয়া যায় যে, ষাহার! শান্তর মানেন না, তাহারাও শাস্ত্র 
বিশ্বাসীদিগকে ঠকাইবার জন্য শাস্ত্রের দোহাই দিয়া থাকেন। 

সত্য বটে, জৈমিনির কর্মমীমাংসা কর্ম্মকাতীয় বেদবাঁক্যাবলীর 
মীমাংসায় পর্য্যবসিত। মীমাংসাদর্শনের প্রয়োজন মুক্তি নহে, কর্মের 
অববোধমাত্রই তাহার প্রয়োজন । কিন্তু মুক্তি সাক্ষাৎসম্বন্ধে তত্বজ্ঞান- 


২ তৃতীয় লেক্চর । 


সাধ্য হইলেও পরোক্ষভাবে কর্মুও মুক্তি সম্পাদন করে । কেন না, বর্ম 
দ্বারা সত্শুদ্ধি না হুইলে তন্বজ্ঞানের আবির্ভাব হয় না। অতএব মুক্তি 
* মীমাংসাদশনের সাক্ষাৎ প্রয়োজন না হইলেও পরম্পরা, প্রয়োজন, সন্দেহ 
নাই। কারণ চিত্তশুদ্ধির একমাত্র কারণ কর্ম্ম ও তাহাই মীমাংসাদর্শনের 
আলোচ্য বিষয়। আর এক কথা । অনেক বৈদীন্তিক আচার্য্য, স্পষ্টাক্ষরে 
না হউক, প্রকারান্তরে জৈমিনির প্রতি কটাক্ষ করিয়াছেন যে, জৈমিনির 
মতে মুক্তি আত্মস্বূপ নহে, স্বর্গাদির স্থায় লোকান্তর ব৷ স্বর্গবিশেষ। 
প্যামিমাং পুম্পিতাং বাচম্‌”--এই উক্ভিদ্বারা ভগবান্ও মীমাংদকদিগের 
প্রতিই কটাক্ষ করিয়াছেন কি না, তাহাও বিবেচা । নে যাহ! হউক, 
বেদে আছে যে, সোমযাগ করিলে অমুতত্বলাভ হ্য়। মুক্তি আর অমৃতত্ব 
এক কথ।। মুক্তি আর অমৃতত্ব এক পদার্থ, ইহ! সমস্ত দার্শনিকদিগের 
অবিসংবাদী সিদ্ধান্ত । অতএব বল। ধাইতে পারে যে, জৈমিনির দর্শনেরও 
প্রয়োজন মুক্তি। তবে, জৈমিনি যাহাকে মুক্তি বলেন, অপর দার্শনিকেরা 
তাহাকে মুক্তি বলেন না। জৈমিনির সম্মত মুক্তি এবং অপরাপর 
দার্শনিকদিগের সম্মত মুক্তি ভিন্ন ভিন্ন, একরূপ নহে, এইমাত্র প্রভেদ। 
ইহাতে কিছু আসে-যায় না। প্রচুরপরিমাণে দার্শনিকদিগের পরস্পর 
মতভেদ দেখিতে পাওয়া যায়। স্মরণ ধরিতে হইবে যে, দর্শনসকলের 
প্রস্থানভেদই প্ররূপ মতভেদের কারণ। রামান্ুজন্বামীর মতে জৈমিনির 
পূর্বমীমাংসা ও ব্যাসের উত্তরমীমাংসা, এই ছুইটি ভিন্ন ভিন্ন দর্শন নহে, 
উভয়ে মিলিয়! একটি দশন। একই দর্শনের ভিন্ন ভিন্ন অংশ তাহার! 
প্রণয়ন করিয়াছেন। অর্থাৎ দর্শনের কর্মকাগ্ডাংশ জৈমিনি এবং জ্ঞান- 
কাগ্ডাংশ বেদব্যাস প্রণয়ন করিয়াছেন। যেমন অষ্টাধ্যায়ীর একই 
কাশিকা বৃত্তির ভিন্ন ভিন্ন অংশ বামন ও জয়াদিত্য রচনা করিলেও এ এ 
অংশ তিন্ন ভিন্ন গ্রন্থ নহে, একই কাঁশিক। বৃত্তি, তদ্রপ ভিন্ন ভিন্ন অংশ 
জৈমিনি এবং ব্যাসের রচিত হইলেও উহা ভিন্ন ভিন্ন দর্শন নহে, উভয়ে 
মিলিয়া একই মীমাংসাদর্শন। এই মতে মীমাংসাদর্শনের উদ্দেশ্ত যে 
মুক্তি, তাহাতে কোনও সন্দেহ থাকিতে পারে না। লোকগ্রসিদ্ধি 
অনুসারে এ প্রস্তাবের অনেকস্থলে মীমাংদাদর্শন ও বেদান্তদর্শন ভিন্ন 
ভিন্ন দর্শনরূপে ব্যবহৃত হইবে। 


দর্শনশন | ৭৩ 


মংক্ষেপে দর্শনশান্ত্রের প্রয়োজন প্রদণিত হইল। তন্বারাই দর্শন- 
শাস্ত্রের উপকারিত! ও আবপ্তকতা হৃদয়ঙ্গম হইতে পারে। আবশ্তক তা- 
সম্বন্ধে ইহা বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে, দর্শনশাস্ত্রের সাহাধ্য দ্ডিন্ন কি 
শাস্ত্রীয়, কি লৌকিক, কোন বিষয়েই একপদও অগ্রসর হইবার উপায় 
নাই। শান্ত্রার্থবিষয়ে কোনরূপ সন্দেহ উপস্থিত হইলে দর্শনশান্ত্রের 
সহায়ত। ভিন্ন তাহার মীমাংসা! হইতে পারে ন1, ইহা শান্ত্রব্যবসায়মাজেইী 
অবগত আছেন। লৌকিক বিষয়েও এইটি কর্তব্য, এইটি অকর্তব্য, ইহ? 
ভাল, ইহ! মন্দ_-এইবপ নির্ণয় করিতে হইলে অনুকূল কা প্রতিকূল যুক্ধি 
আবশ্তক হয়। যুক্তির আকর দর্শনশান্ত্র। অন্যান্ত শাস্ত্রে যে যুক্তির 
অবতারণা দেখা যায়, তাহারও মূলভিভ্ভি দর্শনশান্ত্র।* একটি সামান্ত 
উদাহরণ দেওয়া! যাইতেছে। গ্রীন্ম খতুতে শরীরের উষ্ণতার মাত্র। অতান্ত 
অধিক হইলে তাহার প্রশমনের জন্য অনেকে ন্নান করিয়া থাকেন। 
ইষ্টসাধনতাজ্ঞান প্রবৃত্তির কারণ_-ইহ1 পূর্বে দমধিত হুইয়াছে। স্নান 
আমার ইষ্টদাধন অর্থাৎ স্নান করিলে আমার অভিলষিত উষ্ণতার প্রশমন 
হইবে-_শ্নানে প্রবৃত্ত হইবার পূর্বে অবশ্ঠই লোকের ঈদৃশ জ্ঞান হইয়া * 
থাকে। তাহা না হইলে স্নানে প্রবৃত্তিই হইতে প্রারে না । এখন কথা! 
হইতেছে যে, স্নান করিবার পর উষ্ণতার প্রশমন তৎক্ষণাৎ অনুভব কর! 
যার বটে, কিন্তু স্নান করিলে উষ্ণতা প্রশমিত হইবে, ম্লান করিবার পুর্বে 
এইরূপ ভবিষ্যৎ বিষয় জানিবার উপায় কি? এতদুত্তরে যদি বলা হর যে, 
অনেকবার দেখা গিয়াছে যে, ত্নান করিবার পুর্বে যেরূপ উষ্ণতার অনুভব 
হয়, সান করিলে তাহা অনেক অংশে প্রশমিষ্ত হইয়া! থাকে, অতএব 
বুঝ! যাইতেছে যে, স্নান উঞ্ণতাপ্রশমনের একটি উপায়। কর্তব্য স্নানও 
্নান বটে, সুতরাং তদ্বারাও উষ্ণত। প্রশমিত হইবে । এইরপে, ম্লান 
করিলে উষ্ণতা প্রশমিত হইবে-_-এই ভবিষ্যৎ বিষয়ের জ্ঞান লোকের 
অনাজ্কাসে হইতে পারে । কিন্তু তাহা! হইলে অবস্থ বলিতে পারা যায় যে, 
এস্থলে লোকে অজ্ঞাতভাবে দর্শনশান্ত্রের সহায়ত। গ্রহণ করিতেছে। 
কারণ, স্নানের পূর্ব্বে ভবিষ্যৎ উষ্ণতাপ্রশমনের প্রত্যক্ষ হইতে পারে না। 
কেন না, বিদ্যমান বিষয়েরই প্রত্যক্ষ হইয়া থাকে । অনাগত (খ্ভবিষ্যৎ ) 
ও অতীত বিষয়ের প্রত্যক্ষ হয় না। স্নান করিবার পূর্বে সেই স্নানসন্ত 

১০ 


৪ তৃতীয় লেক্চর। 


উষ্ণতাপ্রমন বিদ্যমান নহে, অনাগত বা ভবিষ্যৎ । কারণ এ উষ্টতার 
শান্তি তখনও হয় নাই। ন্নান করিলে তবে উষ্ণতার শান্তি হইবে । 
ন্ুতরাঁং অনাগত উষ্ণতা গ্রশমনের জ্ঞান অর্থাৎ স্নান করিলে উষ্ণত। 
প্রশমিত হইবে, এই জ্ঞান প্রত্যক্ষ নহে, উহ অনুমান। স্নান উষ্ণতা- 
প্রশমনের কারণ, উষ্ণতাপ্রশমন ন্নানের কার্য । এখানে কারণের দ্বার! 
কার্যের অনুমান হইতেদছ। কাধ্যকারণভাবনিশ্চয় দর্শনশান্ত্রসাপেক্ষ। 
আপত্তি হইতে পারে যে, যাহারা দর্শনশান্ত্র কখনও দেখে নাই, এমন 
কি, দর্শনশান্ত্রের নাম পর্য্যন্ত শুনে নাই, তাহারাঁও কাধ্যকারণভাব- 
নিশ্চয় এবং ক্সানদ্বারা উঞ্জতানিবারণের চেষ্টা করিয়া থাকে । সুতরাং 
তাহাতে দর্শনশযুস্্রর কোনও সহায়তা নাই। ইহার উত্তর পূর্বেই প্রদত্ত. 
হইয়াছে । অর্থাৎ তাহারা অজ্ঞাতভাবে দর্শনশান্ত্ের সহায়তা গ্রহণ 
করে। তাঁহার! দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করে নাই বটে, কিন্তু পরম্পরাগত 
ঘটন! বা উপদেশের সাহায্যে প্রকারান্তরে দর্শনশাস্ত্রের সিদ্ধান্ত অবগত 
হইয়াছে। এইজন্তই তাহার কাধ্যকারণতাৰ নিশ্চয় করিতে সক্ষম 
"হয় এবং আলানদ্বারা! উষ্ণতানিবারণের আশা করিয়া থাকে । ফলতঃ 
কার্ধযকারণভাবনিশ্চয় এবং অন্থুমানের সাহায্য ভিন্ন প্রবৃত্তি ও নিবৃ্ভি 
একেবারেই অনস্তব হইয়া পড়ে । কিঞ্চিম্মাত্র মনোযোগ করিলেই ইহা 
অনায়াসে বুঝিতে পারা যাঁয়। এ বিষয়ে উদাহরণবাহল্যের প্রয়োজন 
নাই [ 

অসস্তব নহে যে, গ্রাণীদিগের বুদ্ধির বিকাশ বা কল্পন! অন্যতম মূল- 
তিভ্তি করিয়া কোন কোন দর্শনশান্ত্র প্রণীত হইয়াছে, কিন্তু তাহ! 
হুইলেও দর্শনশান্ত্র এ কল্পনাসকলের পরিগপোষণ, পরিবর্ধন, পরিবর্জন ও 
পরিমার্জন করিয়াছে, সন্দেহ নাই। সুতরাং বল! যাইতে পারে যে, 
নিরবস্ত অর্থাৎ নির্দোষ কল্পনাতে লোককে অত্যন্ত করাই দর্শনশাস্ত্রের 
উদ্দেস্ত । অতএব ধাঁহারা সমীচীন কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করিতে সক্ষম, 
তাহাঁরী ভাতভাবে হউক, অজ্ঞাতভাবে হউক, দর্শনশান্ত্রের সহায়তা 
ঝাভ করিয়াছেন বলা যাইতে পারে। কেন না, লোকের সমীচীন কল্পন! 
. এবং দর্শনশাস্ত্রের প্রপ্নোজন বস্তগত্যা ভিন্ন হইতেছে না। দর্শনশান্ 
নি্ের উপনীবয অর্থাৎ অববস্বনন্বরূপ কল্পনার দোষ প্রদর্শন করিতেও 


দর্শনশাস্্র। ৭৫ 


কুঠিত হয় নাই বলিয়া সাঁধাঁরণভাষায় *গুরুমারা বিগ্া” বলিয়া! দর্শন- 
শাস্ত্রের একটা অখ্যাতি আছে। ুক্তিগ্রধান দর্শনই অধিকপরিমাণে 
এই অধ্যাতির ভাজন। সে যাহা হউক, এখন লোকযাত্রা নির্ববাহের 
মূলীভূত দর্শনশান্ত্রের অবান্তরভেদ বা প্রকারভেদ প্রদশিত হইতেছে। 

দর্শনশান্ত্রকে প্রধানতঃ ছুই ভাগে বিভক্ত করা যাইতে পারে-- 
নাস্তিকদর্শন ও আন্তিকদর্শন। চাৰ্বাকদর্শন প্রভৃতি নাস্তিকদর্শন, 
স্ঠাযদর্শন প্রভৃতি আন্তিকদর্শন। এস্থলে নাস্তিক ও আস্তিকের সংক্ষিপ্ত 
পরিচয় দিলে অসঙ্গত হইবে না। কেহ কেহ মনে করেন যে, ধাহার। 
ঈশ্বর মানেন না, তীহারাই নাস্তিক। ইহা ঠিক নহে। কারণ, তাহা 
হইলে মীনাংসকাচার্ধ্য এবং সাংখ্যাচারধ্য নাস্তিক বলিয়া অভিহিত হইতে 
পারেন। কেন না, তাহারা ঈশ্বর মানেন না। অধিকন্ধ, ঈশ্বর নাই, 
ইহ] প্রচলিত সাংখ্যদর্শনে যুক্তিদ্বার প্রতিপন্ন কর! হইয়াছে। যাহার! 
ঈশ্বর মানেন না, গীতাতে তগবান্‌ তাহাদিগকে “আস্থুরসম্পদ্যুক্তঃ বা 
'আন্র? বলিয়। নির্দেশ করিয়াছেন, “নান্তিক+ বলেন নাই । মীমাংসকাচার্্য 
ও সাংখ্যাচার্্য ঈশ্বর মানেন ন|! বটে, কিন্তু উভয়েই বেদের প্রামাণ্য 
স্বীকার করিয়াছেন। এইজন্ত তাহারা নিরতিশয় আস্তিক বলিয়া 
প্রসিদ্ধ। পৌরাণিকের! মীমাংসা! ও সাংখ্য উভয় দর্শনেরই যথেষ্ট গ্রশংস। 
করিয়াছেন। তাহার! বলিয়াছেন যে, জৈমিনি বেদের পারদর্শী, তাহার 
দর্শনের কোনও অংশ বেদবিরুদ্ধ নহে। সাংখ্যজ্ঞানের তুল্য জ্ঞান নাই। 
সাখখ্যজ্ঞান অত্যুৎকষ্ট জান, এ বিষয়ে সংশয় করা অন্ুচিত। এতদন্ুদারে 
বিবেচনা করিলে প্রতীত হইবে যে, ধাহারা বেদ মানেন, তাহারা 
আস্তিক) ধাহারা বেদ মানেন না, তাহার! নাস্তিক। আস্তিক ও 
নাস্তিকের এইরূপ লক্ষণ হইলে বৌদ্ধদর্শন প্রভৃতিও নান্তিকদর্শন 
বলিয়া গ্রণায হইতে পারে। কারণ, চার্বাকদর্শনের ভ্তায় বৌদ্ধাদি 
দর্শনেও বেদের প্রামাণ্য অঙ্গীকৃত হয় নাই। 

ষে অর্থ অবলম্বন করিয়া! আস্তিক ও নান্তিক পদ ব্যৎপার্দিত ব! 
নিশপন্ন করা হইয়াছে, সেই অর্থের অন্ুদরণ করিলে আস্তিক এবং 
নাস্তিকের লক্ষণ অনায়াসবোধ্য হইতে পারে। যিনি পরলোক মানেন, 
তিনি আস্তিক, যিনি পরলোক মানেন না, তিনি নাস্তিক--ইহ]আস্তিক- 


ণ৬ তৃন্তীয় লেক্চর । 


নাস্তিকপদের বাৎপত্তিলভ্য অর্থ । চার্বাক পরলোক মানেন না, স্থতরাঁং 
চার্বাকের দর্শন নান্তিকদর্শন। বৌদ্ধগণ পরলোক মানেন কি না, তাহা 
নিশ্চয় বলা যায় ন1। বৌদ্ধদর্শন কালে বিলুপ্তপ্রায় হইয়া! গিয়াছে। 
নুতরাং তাহাদের প্রক্কৃত মত বিস্তৃতরূপে জানিবার উপায় নাই। যতদূর 
জান] ধাইতে পারে, তাহাতে বোধ হয়, প্রকারগত বৈলক্ষণ্য থাকিলেও 
তাহাদের মতে পরলোক থাকিতে পারে। কোন কোন নৈয়া়িক কিন্তু 
বৌদ্ধদিগকে নাস্তিক বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন । আহ্তেরা পরলোক 
মানেন। স্থৃতরাং ব্যুৎ্পত্তি অনুসারে আ্তদর্শন আস্তিকদর্শনশ্রেণীতে 
পরিগণিত হইবার যোগ্য । বৈশেষিকাদি দর্শন যে আস্তিকদর্শন, তাহ 
বলাই বাহুল্য । « রঃ 

বৌদ্ধাদি দর্শন আস্তিকদর্শন বলিয়! গণ্য হইলে আন্তিকদর্শন' 
অবৈদিক ও বৈদিক এই ছুই শ্রেণীতে বিভক্ত হইতে পারে। বৌদ্ধ- 
দর্শন ও আহ্তদর্শনে বেদের প্রামাণ্য অঙ্গীক্ূত হয় নাই, স্থতরাং উহা 
অবৈদ্িক। অন্যান্য সমস্ত আন্তিকদর্শনে বেদের প্রামাণ্য স্বীকৃত 
হইয়াছে বলিয়া উহার! বৈদিক । বৈদিক দর্শনও ছুই শ্রেণীতে বিভক্ত-_- 
যুক্তিপ্রধান ও শ্রুতি প্রধান । হীমাংসা ও বেদান্ত এই ছুইটি দর্শন 
শুতিগ্রধান। এই দর্শনদয়ে শ্রুতিই প্রধান প্রমাণ অর্থাৎ শ্রুতিই 
উক্ত দর্শনদ্বয়ের মূলতিত্তি। উহাতে শ্রত্যর্থ উপপাদন করিবার জন্যই 
সমস্ত যুক্তি প্রযুক্ত হইয়াছে । কেবল যুক্তিবলে কোন বিষয় অঙ্গীকৃত 
বা প্রত্যাখ্যাত হয় নাই। তত্তিন্ন বৈশেষিকাদি অপরাপর দর্শনগুলি 
যুক্তিপ্রধান। তাহাতে যুক্তিবলেই শ্বমত সংস্কাপন এবং পরমতের 
প্রত্যাখান কর! হইয়াছে। যুক্তিই তাহাদের মূলভিত্তি। এইজন্ত 
বেদান্ত ও মীমাংসা দর্শন ভিন্ন অপর সমস্ত দর্শনের সাধারণ নাম 
তর্কশাস্ত্র । এ সকল দার্শনিকের যুক্তিবলে স্বমতবিসংবাঁদী শ্রুতিসকলের 
অর্থান্তর করিতেও কুিত হন নাই। ফলতঃ তাহারা দার্শনিক- 
বিষয়ে শ্রুতির বড়-একটা ধার ধারেন না বলিলে নিতান্ত অসঙ্গত হয় 
ন1। তর্কবলে তাহারা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হন, শ্রতিতে তাহার 
বিরুদ্ধ কথা থাকিলে গৌণী বা লক্ষণ! বৃত্তির সাহায্যে এবং অন্ত উপায়ে 
্ মেন-তেনুগ্রাফারে শ্রুতির অর্থান্তর করিয়া তাহাকে স্বসিদ্ধান্তের অনু- 


দর্শনশান্্ব। ৭৭ 


কুল করিয়া লন। এইজন্তই বৈদান্তিকের! শ্রতিবিরুদ্ধ বা শ্রতিবিপ্লাবক 
তর্কগকলকে শুষ্কতরক ও কুতক আথা! প্রদান করিয়া তার্কিকদিগের 
প্রতি কটাক্ষ করিয়াছেন। কেবল তর্কবলে থে অতীন্রিয় বিষয়নকল 
স্থিরীকুত হইতে পারে না, তাহাও উত্ভমবূপে বুঝাইয়া দিয়াছেন। 
এখন দর্শনশাস্ত্রের অন্রূপ বিভাগ প্রদরশিত হইতেছে। 

স্গায়, বৈশেষিক, নাংখ্য, পাতগ্তল, মীমাংসা ও বেদান্ত, এই ছয়টি 
দর্শন যড়দর্শন বলিয়! প্রসিদ্ধ। এই বড়্দর্শন প্রধানত; তিন শ্রেণীতে 
বিভক্ত হইতে পারে। অবান্তর মতবৈলক্ষণা থাকিলেও ন্যায় ও 
বৈশেধিক দর্শন একশ্রেণীর অন্তর্গত হইবার যোগ্য। উভয় দর্শনেই 
কেবল নিরবচ্ছিন্ন তর্কবলে বক্তব্যবিষয় সমর্থিত হইয়াছে । নৈয়ায়িক 
ও বৈশেষিক আচাধ্যেরা স্তাঁয় ও বৈশেধষিক দর্শনকে সমানতন্্ব বলিয় 
স্বীকার করিয়াছেন। কোন অংশে কিঞ্চিৎ মতভেদ থাকিলেও স্যায়- 
দর্শনের পদার্থনকল বৈশেষিকদিগের এবং বৈশেযিকদর্শনের পদার্থ- 
সকল নৈয়া্িকদিগের অন্ুমত ও অঙ্গীকৃত। ইহা গ্তায়ভাম্মকার মুক্ত- 
কণে স্বীকার করিয়াছেন। কপিলের দর্শন এবং পতঞ্জলির দর্শন এক- 
শ্রেণীতে পরিগণিত হইতে পারে । উভয় দর্শনের সাধারণ নাম সাংখ্য- 
প্রবচন। কারণ, উভয় দর্শনেই সংক্ষিপ্তসাংখ্যদর্শনোক্ত বিষয়সকল 
ব্যাখ্যাত হইরাছে। সুতরাং উভয় দর্শন অনায়াসে একশ্রেণীস্থ হইতে 
পারে। কপিলের দর্শনে ঈশ্বর অঙ্গীকৃত হন নাই, প্রত্যুত যুক্তিদ্বারা 
খণ্ডিত হইয়াছেন । পতঞ্জলির দর্শনে প্রমাণ প্রদর্শনপুর্বক ঈশ্বর অঙ্গীকৃত 
হইয়াছেন। এইজন্য দার্শনিক আচাধ্যগণ উক্ত দর্শনদ্বয়কে যথাক্রমে 
নিরীশ্বরসাংখাদর্শন ও দেশ্বরসাংখাদর্শন নামে অভিহিত করিয়াছেন। 
জৈমিনির ও ব্যাপের দর্শনে বেদবাক্যসকল বিচারিত হইয়াছে । এ উভয় 
দর্শন যে একশ্রেণীস্থ বা এক, তাহা পুর্ধেই প্রতিপাদিত হইরাছে। 
ষড়দর্শনের মধ্যে বৈশেধিকাঁদি দর্শনচতুষ্ঠ় প্রধানতঃ পদার্থবিচারে 
এবং মীমাংসা ও বেদান্ত দর্শন শ্রত্যর্থবিচারে পরিপূর্ণ । সর্বদর্শনসংগ্রহ- 
গ্রন্থে মাধবাচার্যা পঞ্চদশটি দর্শনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়াছেন। তিনি 
অন্য গ্রন্থে শাঙ্করদর্শনের বিবরণ দিয়াছেন বলিয়া সর্বদর্শন্সংগ্রহে তাহার 
প্রতিপাগ্থ বিষয়ের সংগ্রহ করেন নাই। শাঙ্করদর্শন এবং সর্বদর্শনসংগ্রহে 


৭৮ তৃতীয় লেক্চর। 


ংগৃহীত পঞ্চদশ দর্শন, ইহাদের সমষ্টিতে মাধবাঁচীর্য্যের মতে দর্শনের সংখা 
হইতেছে যোড়শ। ততম্মধ্যে প্রনিদ্ধ ষড়দর্শনের অতিরিক্ত দশখানি দর্শনের 
নাম দেওয়া যাইতেছে । চার্ধাকদর্শন, বৌদ্ধদর্শন, আর্তদর্শন বা জৈন- 
দর্শন, রামান্ুজদর্শন, পূর্ণপ্রজ্ঞর্শন, নকুলীশপানশুপতদর্শন, শৈবদর্শন, 
গ্রতাভিজ্ঞাদর্শন, রসেশ্বরদর্শন ও পাণিনিদর্শন। তনম্বধ্যে রামানুজদর্শন, 
ূর্ণপ্রজ্ঞদর্শন এবং শৈবদর্শন বেদান্তদর্শনের প্রস্থানবিশেষ মাত্র। সুতরাং 
সাতখানিমাত্র দর্শন ষড়্দর্শনের অতিরিক্ত হইতেছে। 
এখন দর্শনশান্ত্রের রচনা প্রণালীবিষয়ে কিছু বলা আবশ্তক। অন্ান্ত 
দর্শন অপেক্ষা বৈশেষিক ও স্তায় দর্শনের বিষয়সন্নিবেশপ্রণালী সনীচীন। 
এই ছুইটি দর্শনে উদ্দেশ, লক্ষণ ও পরীক্ষা, এই তিন প্রকারে প্রতিপাদ্ধ 
বিষয়ের আলোচনা করা হইয়াছে । প্রথমতঃ উদ্দেশ অর্থাৎ প্রতিপাদ্ 
বিষয়গুলির নাম কীর্তন ব| উল্লেখ করিয়া তাহাদের লক্ষণসকল প্রদিত 
হইয়াছে । লক্ষণপ্রদর্শনের পরে তাহাদের পরীক্ষা অর্থাৎ উপপন্তি ও 
গ্রতিবাদীদিগের মতের খগ্ডনাদি লিখিত হইয়াছে । বিভাগ অর্থাৎ এক 
একটি বিষয় কত প্রকারে বিভক্ত হইতে পারে, তাহাও দেখান হইয়াছে 
বটে, কিন্ত পূর্বাচার্য্যেরা সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, বিভাগ উদ্দেশের প্রকার- 
ভেদ মাত্র। বৈশেষিক ও স্তায় দর্শন প্রথমাধিকারীর পক্ষে, অর্থাৎ 
তদ্দারা বুদ্ধি পরিমার্জিত হয়, এইজন্য উহাতে এইরূপ শৃঙ্খলা অবলম্বিত 
হইয়াছে । অপরাপর দর্শন দ্বিতীয়াদি অধিকারীর পক্ষে অর্থাৎ পরিমার্জিত- 
বুদ্ধির পক্ষে, এইজন্য তাহাতে তথাবিধ শৃঙ্খলা অবলম্বন করা হয় নাই। 
অধ্যেতৃমণ্ডলী নহজে স্থূল বিষয়গুলি আয়ন্ত রাখিতে পারিবে, এই বিবে- 
চনায় অধিকাংশ দর্শন স্ত্রাকারে রচিত হইয়াছে । কোন কোন দর্শন 
শ্লোকে রচিন্ডও দেখা যায়। 
স্ত্রগুলি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত । ছন্দোনুরোধে অন্নকথায় বাক্যসমাঁপন 
করিতে হয় বলিয়! গ্লোকবদ্ধ বাক্যগুলিও সংক্ষিপ্তই হইয়া পড়ে। অতএব 
উভয়ই রুঠিন ও অস্ফটার্থ। স্বতরাং ব্যাখ্যার আবস্থকতা অনিবার্য । 
দর্শনশাস্ত্রের বিষয়গুলি হুন্ম ও জটিল। দর্শনকারগণ সরলভাবে অল্প" 
কথায় তাহাদের মত ব্যক্ত করিলেও বিষয়ের হু্মতা ও জটিলতা নিবন্থান 
তাহাতে বিস্তর আপত্তি বা আশঙ্কা উপস্থিত হইতে পারে ।. সম্ভাবিত 


দর্শনশাস্ত্। ৭৯ 


আপত্তি বা আশঙ্কাগুলির নিরাসপূর্ববক দর্শনকারের মত সমর্থন কর] ও 
পরিষ্কাররূপে বুঝাইয়া৷ দেওয়া! ব্যাখ্যাকারদিগের কাধ্য। এইজন্য মূল- 
দর্শনের অথাং সুত্র বা শ্লোকের উপর অনেক প্রকার. ব্যাধ্যাগ্রস্থ আছে। 
ব্যাখা গ্রন্থগুলি বৃত্তি, ভাষ্য, বাণ্তিক, টাকা, টিগ্ননী প্রভৃতি নানা- 
শাখায় বিভক্ত। এস্কলে শৃত্রাদির পরিচয় দেওয়া যাইতেছে । স্তরের 
লক্ষণ এইরূপ নিদ্দিষ্ট হইয়াছে__ 


লঘূনি সুচিতার্থানি স্বশ্নাক্ষরপদানি চ। 
সর্বতঃ সারভৃতানি স্ুত্রাণ্যাভর্মনীষিণঃ ॥ 
লঘু অর্থাৎ নাতিদীর্ঘ, অল্প অক্ষর ও অল্প পদ যুক্ত, অনেক অর্থের স্থচক 
ও সর্বতোভাবে সারভূত বাক্যকে পঞ্ডিতেরা সুত্র বলেন। এই স্থত্র থে 
ব্যাখ্যামাপেক্ষ হইবে, তাহা বলাই বাহুল্য । ব্যাখ্যার সাধারণ লক্ষণ 
এইরূপ-- 
পদচ্ছেদঃ পদার্থোক্তিবিগ্রহো। বাক্যযোজন!। 
আক্ষেপস্য সমাধানং ব্যাখ্যানং পঞ্চলক্ষণম্‌ 

পদচ্ছেদ অর্থাৎ হৃত্রে কয়টি পদ আছে, তাহা স্পষ্টরূপে বলিয়া! দেওয়া। 
পদার্থোক্তি অর্থাৎ কোন্‌ পদের কি অর্থ, তাহার নিদ্দেশ করা। বিগ্রহ 
অর্থাৎ সমস্ত পদের ব্যাসবাক্য উপন্তান করা। বাক্যযোজন। অর্থাৎ 
সমস্ত বাক্যটর বা স্ুত্রটির অন্বয় অর্থাৎ বাক্যঘটক পদ্রাবলীর অর্থ- 
সকলের পরস্পর সম্বন্ধ প্রদর্শন করা। আক্ষেপের সমাধান অর্থাৎ 
সম্ভতাবিত আপত্তি বা আশঙ্কার সমাধান বাঁ নিরসন। ব্যাখ্যার এই 
পাঁচটি লক্ষণ। বেদেও পদচ্ছেদপ্রদর্শনের জন্য পদপাঠ বা পদগ্রন্থ: 
এবং ব্যাখ্যার জন্য ব্রাহ্মণগ্রন্থ বিদ্ধমান আছে। ব্যাখ্যাগ্রন্থে উক্ত 
পাঁচটি বিষয় থাক। উচিত । কিন্তু সমস্ত ব্যাখ্যা গ্রন্থে সর্কস্থলে সমভাবে 
এঁ পাঁচটি বিষয় বর্ণিত হয় নাই। বাক্যষোজনাদ্বার৷ পদচ্ছেদের কার্ধ্য 
সম্পন্ন হয় বলিয়া অনাবশ্বক বিবেচনায় প্রায় সব্ধাত্রই পদচ্ছেদ উপেক্ষিত 
হইয়াছে। লাট্যায়নহত্রের ভাষ্যে আচার্য অগ্রিস্বামী স্থানে স্থানে 
সুত্রের পদচ্ছেদ প্রদর্শন করিয়াছেন । ব্যাখ্যাকর্তীগণ স্থলবিশেষে পদের 
অর্থনির্দেশ করিয়াছেন বটে, কিন্তু অধিকাংশ স্থলেই পদের অর্থ 
পৃথক্ভাবে নির্দেশ করেন নাই। বাক্যযোজনাচ্ছলেই পদের, অর্থ বল! 


৮০ তৃতীয় লেক্চর। 


হইয়াছে। ব্যাখ্যাকারেরা আক্ষেপের সমাধানের জন্য স্থলবিশেষে একা- 
ধিক কল্প বা প্রথালী নির্দেশ করিয়া থাকেন । ষে স্থলে অনেক কল 
নির্দিষ্ট হর, সে স্থলে সচরাচর শেষ করটিই সমীচীন, পৃৰ্বপূর্ব্ব কল্প- 
গুলি কিঞ্চিৎ দোষছুষ্ট বা আপত্তিযোগা । শেষ কল্পটর নির্দেশ করিলেই 
যখন উত্তমরূপে আক্ষেপের সমাধান হয়, তখন অসমীচীন পূব্বপূর্ব্ব 
কল্পগুলির উপন্যাস অন্তায় বা অনাবশ্তক বলা যাইতে পারে বটে, 
কিন্তু ভারতীয় আচাধ্যগণ এ রীতিতে অভ্যস্ত। তীহারা শিশ্যবুদ্ধির 
বৈশছ্য ও পরিচালনার জন্য বা কৌশলপ্রদর্শন-অভিপ্রায়ে নানা করের 
অবতারণা করিয়! থাকেন। মৃলদর্শনকর্তারাঁও যে স্থলে একটি বিষয় 
সমর্থনের জন্ত একাধিক হেতু নির্দেশ করিয়াছেন, সে স্থলে পূর্ব নিদিষ্ট 
হেতু প্রায় অসমীচীন বা আপভিযোগ্য । ফলতঃ শিষ্যবুদ্ধি ক্রমশঃ পরি- 
মার্জিত করিবার জন্ত ভারতীয় আগচার্ধ্যগণ উত্তরোত্তর উৎকৃষ্টতর করের 
অবতারণা করিয়া থাকেন। বৃত্তি, টীকা প্রভৃতি, ব্যাখ্যাগ্রন্থেরই প্রকার- 
ভেদ। বৃত্তিগ্রন্থ সংক্ষিপ্ত এবং রচনায় গা্তীর্যযঘুক্ত | ভাষ্যের লক্ষণ এইরূপ 
নির্দিষ্ট আছে 

সত্রার্থো বর্ধ্যতে যত্র পদৈঃ সুত্রান্থুদারিভিঃ | 

স্বপদানি চ বর্যন্তে ভাষ্যং ভাষ্যবিদে। বিছুঃ ॥ 
যে গ্রন্থে সত্রান্থসারী পদের দ্বারা স্ত্রের অর্থ বশিত হয় এবং নিজের প্রযুক্ত 
পদনকল অর্থাৎ বাক্যও ব্যাখাত হয়, তাহার নাম ভাষ্য। ভাষ্যের রচনা 
প্রগাঢ় । ভাষ্তের অক্ষরার্থ সহজ, তাৎপর্যার্থ কিঞ্িৎ আয়াসগম্য। 
কোন কোন বুত্তিও ভাষ্তাকারে এবং কোন কোন ভাষ্যও ব্যাখ্যার 
প্রণালীতে রচিত দেখিতে পাওয়া যায়। তাহাতে ভাষ্যের লক্ষণ আদৌ 
নাই। উদাহরণুস্থলে বিজ্ঞানভিক্ষুক্ৃত সাখখ্য প্রবচনভাষ্বের উল্লেখ কর! 
যাইতে পারে। বার্তিকের লক্ষণ এইব্নপ-- 

উক্তানুক্তদুরুক্তার্থব্যক্তকারি তু বান্তিকম্‌। 
যে গ্রন্থে উক্ত, অনুক্ত এবং দুরুক্ত অর্থ পরিব্যক্ত হয়, তাহার নাম বার্তিক। 
অর্থাৎ মূলে যে বিষয় উক্ত হইয়াছে, তাহা উত্তমরূপে ব্যাখ্যাত, মূলে যাহা 
উজ্জ হয়.নাই, তাহা পরিব্যক্ত ব! বযুৎপাদিত এবং মূলে যাহা ছুরুক্ত অর্থাৎ 
সঙ্গত বুল! হইয়াছে, তাহার প্রদর্শন এবং তথাবিধ স্থলে সঙ্গত অর্থ 


ধর্শনশান্ত্র। ৮১ 


নির্দেশ করা বার্তিককারের কর্তব্য। কাত্যায়নের বাণ্তিক পাণিনীয় সৃত্রের 
উপর, উদ্মোততকরের স্যায়বাত্তি ক বাতস্তায়নের ভাব্যের উপর, ভট্ট কুমারিলের 
তন্ত্রবান্তিক জৈমিনির সুত্র এবং শবরশ্বামীর ভাষ্যের উপর রচিত। 
ফলতঃ বান্তিকগ্রস্থ গতর ও ভাষ্যের উপরেই রচিত হইয়া খাকে। বৃত্তি, 
ভাষ্য প্রভৃতি গ্রন্থ মূলগ্রস্থের নীম অতিক্রম করিতে পারে না। অর্থাৎ 
ভাষ্যকার প্রভৃতিকে সম্পূর্ণরূপে মূল গ্রন্থের মৃতানুদারে চলিতে হয়। 
কিন্তু বাণ্তিককার সম্পূর্ণ স্বাধীন। ভাষ্যকার প্রভৃতির স্বাধীন চিন্ত। 
হইতেই পারে না। কিন্তু বাত্তিকের লক্ষণের প্রতি মনোযোগ করিলেই 
বুঝিতে পারা যায় যে, বার্তিককারের স্বাধীন চিন্তা পূর্ণমাত্রায় বিকাশ 
হইতে পারে। 

বার্তিককারের ন্বাধীনতার একটি উদাহরণ প্রদরপিত হইতেছে। 
মীমাংসাদর্শনে প্রথমতঃ স্বৃতিশাঙ্ত্রের প্রামাণ্য সংস্থাপন করা হইয়াছে। 
তৎপরে, বেদবিরুদ্ধ স্বৃতি প্রমাণ কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে দর্শনকার 
জৈমিনি বলিয়াছেন যে, “বিরোধে ত্বনপেক্ষং স্তাদসতি হান্মানম্।” অবশ্ত 
প্রশ্নটি জৈমিনির উত্থাপিত নহে, ভাষ্কার এ প্রশ্ন তুলিয়া তাহার 
উত্তরম্ব্ূপে জৈমিনির শ্ৃত্রটির ব্যাথা! করিয়াছেন। ভাম্তকারের 
ব্যাখা! এই--প্রতাক্ষশ্রতির সহিত বিরোধ হইলে স্বৃতিবাক্য অন- 
পেক্ষণীয় অর্থাৎ স্বৃতিবাকোর অপেক্ষা করিবে না, উহা অনাদ্ূত হইবে । 
প্রত্যক্ষশ্রুতির সহিত বিরোধ না| থাকিলে স্থৃতিবাকা দ্বারা শ্রুতির 
অনুমান করা সঙ্গত। অপৌরুষেয় শ্রুতি স্বতঃগ্রমাণ। স্মৃতি পৌরুষেয় 
অর্থাৎ পুরুষের বাক্য, সুতরাং স্থৃতির প্রামাণ্য সৃলপ্রমাণসাপেক্ষ। 
পুরুষের বাক্য স্বতঃপ্রমাণ নহে, পুরুষবাক্যের প্রামাণ্য প্রমাণাস্তরকে 
অপেক্ষা করে। কেন না, পুরুষ যাহা জানিতে পারিয়াছে, তাহাই অন্যকে 
জানাইবার জন্য শব্ধপ্রয়োগ বা বাক্যরচনা করিয়া থাকে। অতএৰ 
স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে যে, যেরূপ জ্ঞানমূলে শব্ধ প্রযুক্ত হইয়াছে, সেই 
জ্ঞানটি যথার্থ অর্থাৎ ঠিক হইস্া থাকিলে তন্মুলক বাক্যও ঠিক অর্থাৎ 
প্রমাণ হইবে। বাক্যপ্রয়োগের মূলীভূত জ্ঞান অবথার্থ অর্থাৎ ভ্রমাত্বক 
হুইয়া থাকিলে তদনুবলে প্রযুক্ত বাক্যও অপ্রমাণ হইবে। ন্বৃতিকর্তার! 
আপ্ত। তাহাদের মাহাত্ম্য বেদে কীন্ডিত আছে। তাহারা লোককে 


১১ 


৮২ তৃতীয় লেক্চর। 


প্রতারিত করিবার জন্য কোন কথা বলিবেন, ইহ অসম্ভব । এইজন্য 
তাহাদের স্থৃতির মূলীভূত ব্দবাক্য অনুমিত হয়। তাহারা বেদবাক্যের 
অর্থ স্মরণ করিয়া বাঁকা রচন। করিয়াছেন বলিয়া তাহার নাম স্থৃতি। 
স্বতিবর্ণিত বিষয়গুলি অধিকাংশ অলৌকিক অর্থাৎ ধর্শাসন্বদ্ধ । পুর্ধান্ুভব 
স্মরণের কারণ । অনন্থৃভৃত পদাথের স্মরণ হইতে পারে না। মুনিগণ 
যাহা স্মরণ করিয়াছেন, তাহা পূর্বে তাহাদের অনুভূত হইয়াছিল, ইহা 
অবশ্তই বলিতে হইবে । বেদ ভিন্ন অন্ত উপায়ে অলৌকিক বিষয়ের 
অনুভব একপ্রকার অসস্তভব। স্থতরাং ন্মৃতিদ্বারা শ্রতির অনুমান 
হওয়া সঙ্গত। স্মৃতিকারেরা যাহা স্মরণ করিয়াছেন, তাহা যে 
বেদমূলক, বেদ, পর্যালোচনা করিলেই তাহা বুঝিতে পারা যায়। 
অষ্টকাকর্ম্ম ম্মার্ড, কিন্তু বেদে তাহার উল্লেখ আছে। জলাশয়ের 
থানন ও প্রপা অর্থাৎ পানীয়শালার প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি স্বৃত্যুক্ত কর্মগুলির 
আভামও বেদে দেখিতে পাওয়া যায়। ভাষ্যকারের মতে জলাশয়- 
খানন, প্রপাপ্রতিষ্ঠা প্রভৃতি কর্মগুলি দৃষ্টার্থ। কেন না, তন্বারা 
লোকের উপকার হয়, ইহা প্রত্যক্ষদিদ্ধ। সুতরাং জলাশয়াদিখানন 
ধন্মার্থ নহে, লোকোপকারার্থ। লোৌকোপকার অবশ্ত ধর্মার্থ হইবে। 
স্বৃতিবর্ণিত অনেকগুলি বিষয়ের বেদমূলকতা যখন স্পষ্ট দেখা যাইতেছে, 
তখন যে সকল স্থৃতির মূলীভূ ত বেদবাক্য অন্মদাদির দৃষ্টিগোচর হইতেছে 
না, তাহাও অনুমিত হওয়া সর্ধথা সমীচীন। অন্পপাক করিবার সময় 
তগুলগুলি ফুটিয়াছে কি না, তাহ! জানিবার জন্ত পাকস্থালী হইতে ছুই- 
একটি তণুল তুলিয়া টিপিয়া দেখা হয়। হস্তমদ্দিত তগুল ফুটিয়া থাকিলে 
অনুমান করা হয় যে, সমস্ত তওুলগুলিই ফুটিয়াছে । কেন না, সমস্ত 
তওুলেই সমানকালে অগ্নিসংযোগ হইয়াছে। তন্মধ্যে একটি ফুটিলে 
অপরটি না ফুটিবার কোনও কারণ নাই। এই যুক্তির শাস্ত্রীয়নাম 
স্থালীপুলাকন্তায়।  প্ররুতস্থলেও অনেকগুলি স্মৃতি বেদমূলক--ইহ' 
প্রত্যক্ষ দেখিতে পাওয়৷ যায় বলিয়া স্থালীপুলাকন্তায় অন্দারে সমস্ত 
স্মৃতির বেদমূলকতা অনুমিত হইতে পারে। অনেক বেদশাখা বিলুপ্ু 
হইয়াছে, ইহা দার্শনিকেরা উত্তমরূপে গ্রতিপন্ন করিয়াছেন। যাহা বিলুপ্ত 
হইয়াছে, অবশ্যই তাহা পূর্বে ছিল। স্থতরাং এ বিলুপ্ত বেদবাক্য-মূলক 


১ 


দর্শনশান্ত্র। ৮৩ 


ঘে সকল স্মৃতি প্রণীত হইয়াছে, তাহার মূলীভূত বেদবাক্য এখন দৃষ্ 
হইতেছে না বলিয়া এ মকল স্মৃতি অপ্রমাণ বল1 যাইতে পারে না । 

কিন্ত যে সকল স্ৃতি প্রত্যক্ষশ্রুতিবিরুদ্ধ, ভাষ্যকার বলেন, তাহা 
অপ্রমাণ হইবে । কেন না, বেদ্ধমূলক বলিয়াই স্থৃতি গ্রমাণ। বেদবিকুদ্ধ 
স্বৃতি বেদমূলক হইতে পারে না, বরং বেদের বিপরীত হইতেছে, 
সুতরাং অগ্রমাণ। প্ররুতস্থলে স্বৃতির মূলরূপে শ্রতির অন্ুমানও কর! 
যাইতে পারে না। কারণ, প্রত্যক্ষশ্রুতিবিরুদ্ধ অনুমান হইতে পারে 
না। বেদবিরুদ্ধ স্মৃতির কতিপয় উদাহরণ ভাষ্যকার প্রদর্শন করিয়াছেন । 
একটিমাত্র উদাহরণ উদ্ধৃত হইতেছে। জ্যোতিষ্টোমযাগে সদৌনামক 
মণ্ডপের মধ্যে একটি উদুম্বরবৃক্ষের শাখা নিখাত বা প্রোথিত করিতে 
হয়। এ উদুম্বরশাখা স্পর্শ করিয়া উদগাতানামক খত্বিক সামগান 
করিবেন, এইরূপ শ্রুতি আছে। সমস্ত উদুষ্বরশাখা বন্ত্রদ্বারা বেন 
করিবে, এইরূপ একটি স্মৃতি আছে। এই স্মৃতি উক্তব্দেবিরুদ্ধ । 
কেন না, সমস্ত উদুম্বরশীখা বস্্রবেষ্টিত হইলে উদ্ুম্বরশাখার উপস্পর্শ 
অর্থাৎ উদৃম্বরশীখাসংযুক্ত বস্ত্র স্পশ্‌ হইতে পারে বটে, কিন্তু উদুম্বর- 
শাখার স্পর্শ হইতে পারে না। উদুষ্বরশাখার স্পর্শ করিতে হইলে 
সমস্ত উদ্ুষ্বরশাখার বেষ্টন হইতে পারে না। স্তরাং সব্ববেষ্টনস্থৃতি 
প্রত্যক্ষক্ষতিবিকদ্ধ, অতএব অপ্রমাণ। আপত্তি হইতে পারে যে, 
পূর্বান্থতব না থাকিলে স্থৃতি বা স্মরণ হইতে পারে না; সর্ববে্টন 
বেদবিরুদ্ধ, সুতরাং সর্ধবে ষ্টনবিষরে পুর্বান্থভব হইবার কোনও কারণ 
নাই। অথচ পুৰ্বান্ভব ভিন স্মরণ অসম্তব। ভাষ্যকার ইহার এই 
উত্তর দিয়াছেন যে, কোনও খত্বিক লোভবশতঃ বস্ত্র গ্রহণ করিবার 
জন্য সমস্ত উদুম্বরশাখা বস্ত্রবেষ্টিত করিয়াছিল। স্বৃতিকর্তা তাহা দেখিয়া, 
.সর্ববেষ্টন বেদমূলক, এইরূপ ভ্রান্ত হইয়া সর্ধবেষ্টনস্থতি প্রণয়ন 
করিয়াছেন। 

বার্তিকগ্রন্থে ভাত্বগ্রন্থ ব্যাখ্যাত এবং সমর্থিত হইলেও বার্তিককার 
তাষ্যকারের এই সিদ্ধান্ত সঙ্গত বিবেচনা করিয়া অন্যরূপ মিদ্ধান্তে 
উপনীত হইয়াছেন। তিনি বলেন, স্থৃতিসকল বেদমূলক, ইহা! দৃঢ়ভাবে 
স্বিরীকৃত হইয়াছে। এখন কোনও একটি স্থৃতিবাক্য প্রত্যক্ষশ্রুতিবিরুদ্ধ 


৮৪ তৃতীয় লেক্চর। 


হইলেও উহা! বেদমূলক নহে, লোভাদিমূলক, ইহা! কিরূপে সিদ্ধান্ত 
করা যাইতে পারে। বেদবাক্যসকল নানাশাখাবিপ্রকীর্ণ। এক পুরুষের 
সমস্ত বেদশাখার অধ্যয়ন একাস্ত অসম্ভব। কোন ব্যক্তি কতিপয় শাখা, 
অপরাপর ব্যক্তিগণ অপরাপর কতিপয় শাখা অধ্যয়ন করিয়া থাকেন। 
ইহা৪ চিন্তয়িতব্য যে, সমস্ত বেদবাক্য ধর্ম্ানুষ্ঠানের ক্রমানুসারে 
গঠিত হয় নাই। তন্রপে পঠিত হইলে ধর্পানুষ্ঠানের অনুরোধে তাহার 
স্ুপ্রচার থাকিতে পারিত। সাক্ষাৎসন্বন্ধে প্রচরদ্রপ ধন্মানুষ্ঠানের 
উপযোগী বেদবাক্যগুলি ধার্মিকদিগকে অবশা অধায়ন করিতে হয়। 
তদতিরিক্ত এবং ধর্মানুষ্ঠানের ক্রমানুসারে অপরিপঠিত বেদবাক্যগুলির 
বিরলগ্রচার দেখিয়া! কালে তাহ! বিলুপ্ত হইবার আশঙ্কায় পরমকারুণিক 
স্ৃতিকারগণ বেদবাক্যগত আখ্যানাদি অংশ পরিত্যাগপূর্বক বেদবাক্যের 
অর্থসন্কলন করিয়! স্মৃতি প্রণয়ন করিয়াছেন। 

উপাধ্যায় স্বয়ং কোন বেদবাক্য উচ্চারণ ন1 করিয়াও যদি বলেন ষে, 
এই অর্থ বা বিষয় অমুক শাখায় ব! অমুক স্থানে পঠিত আছে। তাহা! 
হইলে আপ্ত অর্থাৎ সজ্জন এবং হিতোপদেষ্টা উপাধ্যায়ের প্রতি যথেষ্ট 
বিশ্বান আছে বলিয়া শিষ্য তাহ যথাষথ বলিয়াই বিবেচনা করেন। 
সেইরূপ স্বৃতিবাক্যদ্বারাও তাম্বুরূপ বেদবাক্যের অন্তিত্ব বিবেচিত 
হওয়া সঙ্গত। মীমাংসকমতে বেদরাশি নিত্য, কাহারও নির্মিত নহে। 
অধ্যাপকপরম্পরার উচ্চারণ বা পাঠদ্বারা অর্থাৎ কণ্ঠতালু প্রভৃতি 
গ্রদেশে আভান্তরীণ বায়ুর অভিঘাতে যে ধ্বনির উৎপত্তি হয়, এ ধ্বনি 
দ্বার! নিত্য বেদের অন্িব্যক্তি হয় মাত্র। যেমন ন্যায়মতে চক্ষুরার্গির 
সন্নিকর্ষবিশেষ অর্থাৎ সন্বন্ধবিশেষ দ্বারা নিতা গোত্বাদিজাতির অতি- 
ব্যক্তি হয়, আলোকাদি দ্বারা ঘটাঙ্গির অভিব্যক্তি হয়, সেইরূপ মীমাংসক- 
মতে কণ্ঠতালু প্রভৃতি প্রদেশে সমুৎ্পন্ন ধবনিবিশেষের দ্বারা নিত্য 
বেদের অভিব্যক্তি হওয়া অসঙ্গত হইতে পারে না। অধ্যাপকের বা 
অধ্যেতার ধ্বনিবিশেষের দ্বারা যেমন বেদের অভিব্যক্তি হয়, স্মৃতিকর্তী- 
দিগের স্মরণ দ্বারা সেইরূপ বেদের অভিব্যক্তি হইবে, ইহাতে কিছুমাত্র 
ইতরবিশেষ হইবার কারণ নাই। স্বৃতিকর্তারাও একসময় শিষ্যদিগের 
অধ্যাপনা করিতেন। তখন তাহাদের উচ্চারণে বেদের অভিব্যক্তি 


দর্শনশানু। ৮৫ 


হইত, সন্দেহ নাই। যদি তাহাই হইল, তবে তাহাদের ম্মরণ কি অপরাধ 
করিরাছে যে, তন্থারা বেদবাক্যের অভিব্যক্তি হইবে না? স্থতরাং 
ধ্নিবিশেষের দ্বারা অভিবাক্ত বেদ এবং ম্মৃতিকর্তাদিগের ম্মরণদ্বার 
অভিব্যক্ত বেদ, উভয়ই সম্পূর্ণরূপে তুল্য, ইহাদের পরম্পর কোনও 
তারতম্য ব৷ ব্লাবলভাব হইতে পারে না। ন্মৃতার্থ শ্রুতি অর্থাৎ ষে 
শুতির অর্থ মুনিগণকর্তৃক স্থৃত হইয়াছে, সেই শ্রুতি এবং পঠিত শ্রুতি, 
এই উভয় শ্রুতিই তুল্যবল। ইহাদের মধ্যে একে অপরের বাধা করিতে 
পারে না। স্বৃতিশান্ত্রের মধো কোন একখানি স্থৃতি বদি আগ্ঘোপাস্ত 
সমস্তই অবৈদিক হইত, তবে এ স্বৃতিখানি কখনও শিষ্টদিগের ব্যবহৃত 
হইত না। তত্তিন্ন অপরাপর বৈদিক স্থৃতিমাত্রই, ব্যবহৃত হইত। 
অবৈদ্দিক স্মৃতিখানি পরিত্যক্ত হইত । বস্ততঃ কোন স্বৃতিই অবৈদিক 
নহে। সমস্ত স্মতিই কঠ ও মৈত্রায়ণীয় প্রভৃতি শাখাপবিপঠিত-শ্রতি- 
মূলক-_ইহা দেখিতে পাওয়া যায়। বাণ্তিককার বলেন যে,যখন দেখা 
যাইতেছে যে, সমস্ত স্থৃতিশান্ত্র বেদমূলক, তখন তন্মধ্যপাতী একটি 
_বাক্য-যাহার মূলীভূত বেদবাক্য অম্মদাদির দৃষ্টিগোচর হইতেছে না, তাহা 
বেদমূলক নহে, অন্তমূলক অর্থাৎ ত্রান্তিমূলক ব1 লোভমূলক-_ আমাদের 
জিহ্বার ত এ কথা বলিতে প্রবৃত্তি হয় না। যে নৈয়াকিকম্মন্ত প্রত্যক্ষ 
অর্থাৎ তাহার পরিজ্ঞাত শ্রুতির বিরুদ্ধ হইলেই কোন স্বৃতিবাক্যকে 
অপ্রমাণ বলিয়া উপেক্ষা ব। পরিত্যাগ করেন, কালাস্তরে তাহার উপেক্ষিত 
স্মৃতিবাক্যের মুলীভূত শাখান্তরপঠিত শ্রুতি যখন তাহার শ্রবণগোচর বা 
জ্ানগোচর হইবে, তখন তাহার মুখকাস্তি কিরূপ হইবে? তখন তিনি 
অবপ্তই লজ্জিত হইবেন, সন্দেহ নাই। কেবল তাহাই নহে। ঘিনি 
নিজের জ্ঞানকেই পর্যাপ্ত বিবেচনা করেন অর্থাৎ নিজেকে একরপ 
সর্বজ্ঞ ভাবেন, তাহাকে পদে পদে লজ্জিত হইতে হয়। তাহার বাধাবাধ-.. 
ব্যবস্থাও অব্যবস্থিত হুইয়া পড়ে । কারণ, তিনি নিজের পরিজ্ঞাত 
শ্রতির বিরুদ্ধ বলিয়া এক সময়ে যে স্বৃতিবাক্য অপ্রমাণ বা বাধিত বলিয় 
সিদ্ধান্ত করেন, পূর্বে তাহার অপরিজ্ঞাত এ স্থৃতিবাক্যের মৃলীভূত শাখাস্তর- 
পঠিত ক্রতি সময়াস্তরে জানিতে পারিলে, প্র স্থৃতিবাক্যকেই আবার 
গ্রমাণ বা অবাধিত বলিয়! তাহাকেই সিদ্ধান্ত করিতে হইবে। 


৮৬ তৃতীয় লেক্চর | 


বার্তিককার আরও বলেন যে, ভাম্তকার যে উদুষ্বরশাখার সর্ববেষ্টন- 
স্বৃতিকে শ্রতিবিরুদ্ধ বলিয়াছেন, তাহা সঙ্গত হয় নাই। শ্াট্যায়নি- 
্রাহ্মণে প্রতযক্ষপঠিত শ্রুতিই তাহার মুল। ওঁছুষ্বরীর উদ্ধভাগ ও অধোঁভাগ 
পৃথক্‌ পৃথক বস্ত্র দ্বারা বেষ্টন করিবে, এইরূপ প্রত্যক্ষশ্রুতি শাট্যায়নি- 
ব্রাহ্মণে রহিয়াছে । বাত্তিককার এতাবন্মাত্র বলিয়াই নিরস্ত হন নাই, 
তিনি এ শ্রুতি উদ্ধৃত করিয়া দেখাইয়াছেন। উছুহ্থরীবেষ্টনস্থৃতি যদি 
কতিমূল হইল, তবে তাহা! কোনমতেই স্পর্শক্রতিদ্বারা বাধিত হইতে 
পারে না। কেন না, উভয়ই যখন শ্রুতি, সুতরাং তুল্যবল, তখন কে 
কাহার বাধা জন্মাইতে পারে? প্রমাণদ্বয় তুল্যকক্ষ বলিরা বরং বিকল্প 
হইতে পারে। দরশশপৌর্মাদ যাঁগে যবদ্ধারা হোম করিবে, ব্রীাহিদ্বারা 
হোম করিবে__এইরূপ ছুইটি শ্রুতি আছে। এস্থলে যব ও ক্রীহি উভয়ই 
প্রত্যক্ষশ্রতিবোধিত বলিয়া যব-ব্রীহির বিকল্প, ইহ] সর্ধসন্মত। ইচ্ছান্গু- 
সারে যব বা ব্রীহি ইহার কোন একটি দ্বারা হোম করিলেই ষাগ সম্পন্ন 
হইবে। তদ্রপ প্রক্ৃতস্থলেও, ওদুম্বরী বেষ্টন করিবে এবং ওঁদুষ্বরী স্পর্শ 
করিবে, এই ছুইটি বিষয় পরস্পর বিরুদ্ধ বলিন্না বিবেচিত হইলেও যব- 
বীহির ন্যায় উভয়ের বিকল্প--এইরপ সিদ্ধান্ত করাই ভাষ্যকারের উচিত 
ছিল। বেষ্টনস্থৃতিকে বাধিত বলিয়া স্থির কর! সঙ্গত হয় নাই। বেদে 
যদি আদৌ বিকল্প না থাকিত, তবে স্পষ্ট শ্রুতিবিরুদ্ধ বলিয়া বেষ্টনন্ৃতি 
অনাদরণীয় হইলেও হইতে পারিত। কিন্তু বেদে শতশত স্থলে বিকল্প 
দেখিতে পাওয়া যায় । বিকল্স্থলে কল্পদ্বয় পরম্পর বিরুদ্ধ, ইহা! বলাই 
অধিক। ন্ুতরাং নিজের পরিজ্ঞাত শ্রুতির সহিত বিরোধ হইতেছে 
বলিয়! বেষ্টনস্থৃতির অপ্রামাণ্য সিদ্ধান্ত কর! নিতান্তই অনঙ্গত হইয়াছে। 
বস্তগত্যা কিন্তু গ্রকৃতস্থলে বিরোধও হয় না। কেন না, বেষ্টনমাত্র ত 
স্পশশ্রুতির বিরুদ্ধ হইতে পারে নাঁ। স্পর্শনঘোগ্য ছুই তিন-অঙ্গুলী- 
পরিমিত স্থান পরিত্যাগ করিয়া ওঘুম্ববীর উত্তরভাগ বেষ্টন করিলে 
কোনও বিরোধ হইতে পারে না। কেন না, ওছুষ্বরীর উত্তরভাগের স্পর্শ 
করাই বিধি । “সর্ঝা ওঁঢুম্বরী ঝেষ্টফ্িতব্া+__স্ত্রকার এরূপ বলেন নাই। 
“তুম্বরী পরিবেষ্টয়িতব্য'-_ইহাই হ্ত্রকারের বাকা । এখানে পরিশবের 
অর্থ সব্ধভাগ অর্থাৎ উদ্ধতাগ ও অধোভাগ ! এ উভয় ভাগ বেষ্টন করাই 


দর্শনশান্ত্র। ৮৭ 


হুত্রকারের বাক্যের তাৎপর্ধ্যার্থ। সর্ধস্থান বেষ্টন করা উহার অর্থ 
নহে। যাজ্ভিকেরাও ওছুন্বরীর উভয় ভাগ বেষ্টন করেন বটে, কিন্ত 
কর্ণমূলপ্রদেশ বেষ্টন করেন না। 

বান্তিককার বলেন,-_সব্ববেষ্টনবাক্য লোৌভমূলক, ভাষ্তকারের এ 
কল্পনাও সমীচীন হয় নাই। কেননা, সমস্ত বেষ্টন না করিয়া মূল ও 
অগ্রভাগ বেষ্টন করিলে অর্থাৎ স্ত্রীদিগের স্ঠায় একথানি পরিধানীয় 
বন্্ এবং একখানি উত্তরীয় বস্ত্র এই ছুইথানি বস্ত্র বারা ওঁদু্ঘরীর 
মূলভাগ ও অগ্রভাগ বেষ্টন করিলে, লোভের চরিতার্থতার কি অবশিষ্ট 
থাকে, যাহার জন্য সব্ববেষ্টন করিবার আবশ্তকতা হইতে পারে। আরও 
বিবেচনা করা উচিত যে, ওছুষ্বরীর সাক্ষাৎ স্পশ কোনরূপেই সম্ভব 
হয় না। কারণ, প্রথমতঃ কুশদ্বারা ওছুম্বরীর বেষ্টন করিবার বিধি। 
পরে কুশবেষ্টিত ওহুষ্বরীকে বন্তরদ্ধারা বেষ্টন করিতে হয়। যাজ্জিকেরাও 
তাহাই করিয়া থাকেন। বস্ত্রবেষ্টনই যেন লোভমূলক বলিয়। অগ্রমাণ 
হইল, কুশবেষ্টন ত আর লোভমুূলক বলিবার উপায় নাই। তড়াগ- 
.প্রপাদির উপদেশ দৃষ্টার্থ, ধন্মাথ নহে, ভাষ্যকারের এপ সিদ্ধান্ত করাও 
ভাল হয় নাই। কেন না, যাহ! বেদে কর্তব্য বলিয়া উপদিষ্ট হইয়াছে, 
তাহাই ধর্ম, ইহ! জৈমিনির উক্তি। ভাষ্যকারও তাহা অস্বীকার করেন 
না। দৃষ্টার্থ হইলেই যে ধর্ম হইবে না, তাহার কোনও কারণ নাই। 
প্রতাত তওুলনিষ্পত্তির জন্ত ত্রীহাদির অবহনন, চুর্ণের জন্য তওুলের 
পেষণ প্রভৃতি সহত্র সহস্র দৃষ্টার্থ কর্ম 'বেদবিহিত বলিয়া ধর্মরূপে 
অঙ্গীকৃত হইয়াছে । চার্ধাক প্রভৃতি বিরুদ্ধবাদীরা বেদবিহিত অদৃষ্টার্থ 
কর্মে দৃষ্টার্থতা কল্পনা করিতে প্রয়াস পায়। অতএব দৃষ্টার্থই হউক 
আর অদৃষ্টার্থই হউক, বেদে যাহ! কর্তব্য বলিয়া বিহিত হইয়াছে, 
তাহাই ধর্্-ইহা মীমাংসকের1 অস্বীকার করিতে পারেন না। বান্তিক- 
কার এবম্প্রকার অনেক হেতু প্রদশন করিয়া ভাম্তকারের মত খণ্ডন 
করিয়াছেন। তিনি ভাষ্তকারের মত খণ্ডন করিয়া জৈমিনিস্থত্রের 
অন্তরূপ অর্থ করিয়াছেন। 

তিনি বলেন, যখন স্থির হইল যে, শ্রতি-স্বতির বিরোধ নাই) 
বিরোধ থাকিলে উহা! শ্রুতিদ্য়ের বিরোধরূপেই পধ্যবসিত হয়; 


৮৮ তৃতীয় লেক্চর। 


শ্রতিদ্বয়ের বিরোধস্থলে বিকল্প হয়, অর্থাৎ ভিন্ন-ভিন্ন-শ্রুতিপ্রতিপাদিত 
ভিন্ন ভিন্ন কল্পের মধ্যে ইচ্ছান্ুসারে কোন একটি কল্পের অনুষ্ঠান 
করিলেই অনুষ্ঠাত1 চরিতার্থ হন; তখন যেস্থলে প্রত্যক্ষপরিদৃষ্ট 
শ্রতিতে এবং স্মৃতিতে ভিন্নভিন্নরূপে কর্তব্য আদিষ্ট হয়, সেস্থলেও 
অবশ্ঠ যে-কোন-একটিই অনুষ্ঠেয় হইবে। তদবস্থায় প্রয়োগ বা অনু- 
পানের নিয়মের জন্য অনুষ্ঠাতাদিগের অত্যন্ত হিতৈষিরূপে জৈথিনি 
স্হস্ভাবে বলিতেছেন যে, শ্রোত-্মার্ত পদার্থ পরস্পরবিরুদ্ধ হইলে 
শ্রোতপদার্থের অনুষ্ঠান করিবে। শ্রোতপদা্থের মহিত বিরোধ ন! 
থাকিলে স্থার্তুপদার্থ শৌতপদার্থের ন্যায় অনুষ্ঠেয় । স্থৃতিকার জাবালও 
ইহাই বলিয়াছেন"- 
শ্রুতিস্থতিবিরোধে তু শ্রুতিরেব গরীয়সী। 
অবিরোৌধে সদ। কাধ্যং স্মার্ডং বৈদিকবৎ্ সতা॥ 

শ্রুতি-স্থৃতির বিরোধ হইলে শ্রুতিই গুরুতরা । অর্থাৎ সে স্থলে শ্রোত- 
পদার্ঘই অনুষ্ঠেযম। অবিরোধস্থলে স্মার্তপদার্থ বৈদিক পদার্থের স্যার 
সাধুগণের অনুষ্ঠেয়। এরপ ব্যবস্থার হেতু এই যে, মকলেই পরপ্রত্যক্ষ 
অপেক্ষা স্বপ্রত্যক্ষের প্রতি সমধিক আস্থাবান্‌ হইয়া থাকে। স্মৃতির 
মূলীভূত শাখাস্তরবিপ্রকীর্ম শ্রুতি পরপ্রত্যক্ষ হইলেও অনুষ্ঠাত! 
স্বগ্রত্যক্ষ শ্রুতির প্রতি অধিক নির্ভর করিতে বাধ্য। যব ও ব্রীহি 
উভয়ই প্রত্যক্ষশ্রতিবিহিত, সুতরাং বিকল্পিত। কোন অনুষ্ঠাত৷ যদি 
উহার একটি অর্থাৎ কেবল যব বা কেবল ব্রীহি অবলম্বনেই চিরজীবন 
যাগের অনুষ্ঠান করেন, তাহা! হইলে যেমন কোনও দোষ হয় না, সেইরূপ 
প্ররুতস্থলেও শ্রোত বা ম্মার্ভ এই উভয়ের মধ্যে কোনও একটির অনু- 
ান শান্্রান্ুমত হইলেও, কেবল শ্রোতপদ্রার্থের অনুষ্ঠান করিলে কোনও 
দোষ হইতে পারে না। প্রস্তাবিত জৈমিনিস্ত্রের অন্তবিধ ব্যাখ্যাস্তর 
করিয়া বার্ডিককার ইহাও প্রতিপন্ন করিয়াছেন যে, এই শৃত্রারা 
শাক্যাদি স্মৃতির ধর্ে প্রামাণ্য নাই, ইহাই সমর্থিত হইয়াছে। 

বার্তিককার অপরাপর অনেক স্থলেও ভাষ্বকারের মত প্রত্যাখ্যাত 
 শ্রবং জৈমিনিস্থত্রের অর্থান্তর প্রদর্শন করিয়াছেন। এ সকল স্থলে 
স্থত্রকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হইয়াছে বটে, কিন্ত কোন কোন 


দর্শনশাস্ত্র। ৮৯ 


স্থলে ৃত্রকারকে খণ্ডন করিতেও তিনি কুহিত হন নাই। ম্থায়- 
বাণ্তিককার উদ্োতকর মিশ্রও এইরূপ শ্বাধীনচিন্তার পরিচয় দিয়াছেন, 
অপরাপর বাত্তিকেও অন্নবিস্তর স্বাধীনচিন্তার বিকাশ দেখিতে পাওয়া 
যাঁয়। ঈদূশ স্বাধীনচিন্তার পরপর যে প্রশংসনীয় এবং প্রার্থনীয়, তাহা 
মনীষিগণ অনায়ামে বুঝিতে পারেন, তজ্জন্ত বাগাড়ম্বর নিশ্রয়োজন। 
স্ত্র, বৃত্তি, ভাষ্য, বাণ্তিক, টাকা, টিগ্লনী ভিন্ন আর-এক-শ্রেণীর গ্রন্থ মঃছে, 
তাহার নাম প্রকরণ । প্রকরণের লক্ষণ এইরূপ কথন আছে-- 
শাস্ত্রৈকদেশসন্বদ্ধং শাস্ত্র কার্য্যান্তরে স্থিতম্‌। 
আহঃ প্রকরণং নাম গ্রন্থভেদং বিপশ্চিতঃ ॥ 

শাস্্ের একদেশের সহিত সম্বন্ধ অর্থাৎ শান্ত্রপ্রতিপুগ্ভ কোন-একটি 
বিষয় অবলম্বনে প্রণীত, অগচ শাস্ত্রের উদ্দেষ্তসম্পাদনবিষয়ে অবস্থিত, 
এতাদৃশ গ্রন্থবিশেষের নাম প্রকরণ । উদয়নাচার্যোর স্তায়কুস্থমাঞ্জলি ও 
আত্মতত্ববিবেক, গঙ্গেশোপাধ্যায়ের তত্বচিন্তামণি, শ্রীহর্ষের খণ্ডনখণ্ডখা গ্ঘ, 
মধুস্ছদন সরস্বতীর অদ্বৈতসিদ্ধি, চিৎ্থস্বামীর তত্বপ্রদীপিকা প্রভৃতি 
উৎক্ষ্ট প্রকরণগ্রস্থ। ইংরাজীভামায় মনো গ্রাফও প্রকরণগ্রন্থবিশেষ। 

দার্শনিক টাকাকারগণ, বিশেষতঃ নবান্তায়ের টাকাকারগণ কিরূপ 
বুদ্ধিপরিচালনা করিয়াছেন, কিরূপ কৌশল উদ্ভাবন করিয়াছেন, কিরূপ 
পাপ্ডিত্য প্রদর্শন করিয়াছেন, তাহার যৎকিঞ্চিৎ আভাপ্মাত্র প্রদর্শিত 
হইতেছে । অনেকেই জানেন যে, ধুমদর্শনে বহির অনুমিতি হয়, বহ্ি- 
দর্শনে ধূমের অনুমিতি হয় না। অনুমিতিস্থলে ব্যাপ্তিজ্ঞান অবশ্ত অপেক্ষিত। 
ব্যাপ্তিজ্ঞানই অনুমান এবং তদ্বারা যে অপর বস্তর জ্ঞান উৎপন্ন হয়, এ 
জ্ঞান অন্ুুমিতি বলিয়া কথিত । ধূমে বহর ব্যাপ্তি আছে--এইরপ ব্যাপ্তি- 
জ্ঞান অন্মান। উত্তরকালে ধৃমদর্শনে বহ্তিবিষয়ে যে জ্ঞান হয়, এ জ্ঞান 
অন্ুমিতি। ব্যাপ্ডিজ্ঞান না হইলে অন্ুমিতি হয় না। ধুমদর্শনে বহির 
অনুমিতি হয়, ঘুটের অনুমিতি হয় না। কারণ, ধূমে বহির ব্যাপ্তি 
আছে, ঘটের ব্যাপ্তি নাই। ব্যাপ্তি অর্থাৎ বিশেষরূপে আপ্তি কিনা 
সম্বন্ধ । সন্বন্ধের বিশেষত্ব অব্যভিচার। ব্যভিচার কিনা তদ্যতিরেকে 
অবস্থিতি। অব্যভিচরিত সন্বন্ধই ব্যাণ্ডি। যাহার মন্বন্ধ, তাঁহাকে সনবন্ধের 
প্রতিযোগী বলে। যাহাতে এ সম্বন্ধ থাকে, তাহাকে সম্বন্ধের অনুযোগী 


৯০ তৃতীয় লেক্চর। 


বলে। এই প্রতিযোগি-অনুষোগি-ভাব অন্থুভবসিদ্ধ। “যোগ"শবঝের অর্থ 
সম্বন্ধ, যোগী কিন! সন্বন্ধী। “প্রতিশব্ের অর্থ প্রতিকূল, এঅনু'শবের 
অর্থ অন্ুকূল। প্রতিষোগী কিনা প্রতিকূল সম্বন্ধী, অনুযোগী কিন! 
অনুকূল সম্বন্বী। ঘুটত্ব ও ঘটের সম্বন্ধ সমবায়। এই সমবায়সম্বন্ধের 
প্রতিযোগী ঘটত্ব, অন্ুযোগী ঘট। কেন না, ঘটত্তবের সমবায় ঘটত্বে থাকে 
না, ঘটে থাকে। স্থৃতরাং ঘটত্ব সমবায়ের সন্বন্ধী বটে, কিন্তু প্রতিকূল 
সম্বন্ধী। কেন না, ঘটত্ব সমবায়ের সন্বন্ধী হইয়াও তাহার আশ্রয় হয় না, 
তাহাকে অন্তত্র আশ্রয় গ্রহণ করিতে বাঁধা করে। এইজন্য ঘটত্ব 
সমবায়ের প্রতিষোগী । ঘট কিন্তু সমবায়ের অনুকূল সন্বন্ধী। কেন না, 
সমবায় ঘটাশ্রিত। এইজন্ত ঘট সমবায়ের অন্ুযোগী। 

মনুষ্য আসনে উপবেশন করে, স্থতরাং মনুষ্য এবং আসনের সম্বন্ধ 
আছে। প্র সম্বন্ধের প্রতিযোগী মন্তুষ্য, অন্ুযোগী আসন। এইজন্ত 
মনুষ্য আসনে আছে, এইরূপ অন্থভব হয়, আসন মন্তষ্যে আছে, একপ 
অনুভব হয় না। বহ্ির ব্যাপ্তিসমবন্ধ ধুমে আছে, এইজন্য বহি ও ধৃষ 
যথাক্রমে ব্যাণ্ডির প্রতিযোগী ও অন্ুযোগী। ব্যাপ্তির প্রতিষোগীর অপর 
নাম ব্যাপক এবং ব্যাপ্তির অন্থযোগীর অপর নাম ব্যাপ্য। বহি ধূমের 
ব্যাপক, ধৃম বহ্থির ব্যাপ্য। ব্যাপ্যের স্বারা ব্যাপকের অনুমিতি হইয়া 
থাঁকে। কেন না, ব্যাপ্যের সত্তাতে ব্যাপকের সতত! অবশ্থস্তাবিনী। ধূমের 
সত্তাত্ে বস্তির সত্তা অবস্তই থাকিবে, কেন না, বহি কারণ, ধৃম কার্ধ্য। 
কারণ ভিন্ন কার্য হওয়া একান্ত অসম্ভব। এইজন্য ধুমের দ্বার বির 
অনুমিতি হয়। কিন্তু ব্যাপকের সত্তাতে ব্যাপ্যের সত্তা অবশ্তস্তাবিনী 
নহে। অয়োগোৌলকে অর্থাৎ উত্তপ্ত লৌহপিণ্ডে বহ্কির সত্া আছে। 
কেন না, তৎসংধোগে দাহাবস্ত দগ্ধ হইয়া যায়। অয়োগোলকে বহির 
সত্তা আছে বটে, কিন্ত ধূমের সত্তা নাই--ইহা! প্রত্যক্ষসিদ্ধ। বন্ততঃ 
বহি সর্ধকালে ধুম উৎপাদন করে না, কালবিশেষে অবস্থাবিশেষে 
করিয়। থাকে, সুতরাং বহর সত্তীতে ধূম অবস্তই থাকিবে, ইহা হইতে 
পারে না। ধুমের মত্তাতে কিন্ত বস্তির সত্তা না থাকিয়াই পারে না। 
অতএব ব্যাপ্য ধূম ব্যাপক বস্তির অন্ুমিতির কারণ, কিন্তু ব্যাপক 
বসি ব্যাপ্য ধূমের অন্থুমিতির কারপ নহে। অয়োগোলকে দৃষ্ট হইয়াছে 


 দর্শনশাস্ত্। ৯১ 


যে, বস্তি আছে অথচ ধূম নাই। সুতরাং ধুমে বহর ব্যাপ্তি আছে 
বটে, কিন্তু বহিতে ধূমের ব্যাপ্তি নাই। তত্বচিন্তামণিগ্রন্থে ব্যাপ্তির 
অনেকগুলি লক্ষণ প্রদশিত হইয়াছে । তাহার প্রথম লক্ষণটি এইরূপ-_ 
“সাধ্যাভাববদবৃত্তিত্বম।৮ ইহার মোটামুটি তাৎপর্য্য এই যে, সাধোর 
অভাব যেখানে থাকে, সেখানে হেতু না থাকিলেই হেতুদাধ্য ব্যাপ্য 
হইয়াছে বুঝিতে হইবে । যাহার অন্থুমিতি হয়, তাহার নাম সাধ্য। 
যদ্র্শনে অন্ুমিতি হয়, তাহার নাম হেতু । “বহ্রিমান্‌ ধূযাৎ”__- এখানে 
বহি সাধা, ধূম হেতু । বহ্ির অভাব জলহ্দাদিতে আছে, তথায় ধূম 
থাকে না। সুতরাং ধৃম বহিব্যাপ্য। অর্থাৎ ধূমে বহির ব্যাপ্তিসন্ন্ধ 
আছে। ধৃমবান্‌ বহে:”এখানে সাধ্য ধূম। অয়োগোলকে ধূমের 
অভাব আছে, অথচ তথায় বহি আছে। অতএব বনি ধূমের ব্যাপ্য 
নহে, বহিতে ধূমের ব্যাপ্তিসন্বন্ধ নাই। 

লক্ষণটি দার্শ নক প্রণালীতে বুঝিতে হইলে, এই কথাগুলির প্রতি 
লক্ষ্য করা আবশ্যক। সন্বন্ধের যেরূপ প্রতিযোগী অনুযোগী আছে, অভাবের ও 
সেইরূপ প্রতিযোগী অনুযোগী আছে। যাহার অভাব, সে অভাবের 
প্রতিযোগী । যাহাতে অভাব থাকে, সে অভাবের অন্ুযোগী বা অধি- 
করণ। প্রতিযোগীর ভাব বা ধর্ম প্রতিযোগিতা, অন্ুযোগীর ভাব ব 
ধর্ম অনুযোগিত।। প্রতিযোগিতা প্রতিষোগীতে থাকে, অতএব প্রতি- 
যোগিতা। গ্রতিযোগিনিষ্ঠ বলা যায়। কেন না, নিপূর্ব স্থিত্যর্থ স্থাধাতু 
হইতে 'নিষ্ঠপদ নিষ্পন্ন হইয়াছে । প্রতিযোগিতা ও অনুযোগিতা, 
অভাবের। অতএব প্রতিযোগিতা ও অন্থযোগিতা অভাৰ-নিরপ্য বা 
অভাব-নিরূপিত। এবং অভাব প্রতিযোগিতা ও অনুযোগিতার 
নিরূপক। নিরপ্য-নিরূপক-তাব অন্ুভবদিদ্ধ। ভূলে ঘটের অভাব । 
এস্থলে অভাবের প্রতিযোগী ঘট ও অন্ুযোগী ভূতল। অভাবের গ্রতি- 
যোগিতা ঘটনিষ্, অনুযোগিতা ভূতলনিষ্ঠ। অভাব ঘটনিষ্ঠ-প্রতি- 
যোগিতার নিরপক। যাহা কোন আধারে স্থিত হয়, তাহাকে বৃত্তি 
বলে। বৃত্তির ভাব বা ধর্ম বৃত্তিত্ব। বৃত্তিত্ব অর্থেও বৃত্তিশব্ষ ব্যবহৃত 
হয়।..বৃত্তিত্ব আধেয়ত্ব। যে আধার বা অধিকরণে আধেয়পদার্থ 
থাকে, আধেয্‌ত্ব বা বৃত্তিত্ব সেই আধার বা অধিকরণ ছারা নিয়মিত, 


৯২ ততীয় লেক্চর। 


স্থতরাং উহ! অথাত বৃত্বিত্ব মেই-অধিকরণ-নিরূপিত । অতএব “দাধ্যাভাব+" 
শব্দের অর্থ হইল-পাধ্যনিষ্-প্রতিযোগিতা-নিরপক অভাব। এই 
অভাবের অধিকরণ হইল সাধ্যাভীববান্। “অবৃত্িত্ব'শব্দের অর্থ বৃতিত্বের 
অভাব। বৃত্তিত্ব অবশ্তই সাধাভাবের অধিকরণ-নিরূপিত হইবে। তাহা 
হইলে “দাধ্যাভাব বদবৃত্তিত্বম”--এই লক্ষণের অর্থ হইতেছে যে, সাধ্যনিষ্ঠ- 
গ্রতিফোগিতা-নিরূপক যে অভাব, সেই অভাবের অধিকরণ নিরূপিত 
যে বৃত্তিত্ব, সেই বৃভিত্থের অভাব, ব্যাপ্তি। “বহিমান্‌ ধূমাং”--এস্থলে 
সাধ্য বহি। নুতরাং বহিনিষ্ঠ-প্রতিযোগিতানিবূপক অভাব হইল 
বহর অভাব। এই অভাবের অধিকরণ জলহদাদি। তন্নিরূপিত বৃত্তিত্ব 
ধুমে নাই-_ধূমে তাদৃশ বৃত্তিত্বের অভাব আছে। সুতরাং ধৃমে বহির 
ব্যাপ্তি আছে। ইহা স্থির হইল। 

টাকাকারেরা এই লক্ষণের উপর বিস্তর আপত্তি ও তাহার সমাধান 
করিয়াছেন । একটিমাত্র আপত্তি ও তাহার সমাধান প্রদ্শিত হইতেছে। 
হ্যায়মতে অবয়ব ও অবয়বীর সন্বন্ধের নাম সমবায়, ততিন্ন দ্রব্যদয়ের 
সন্বন্ধের নাম ন'যোগ। বহি ও বহর অবয়বের সম্বন্ধ সমবায়। বহি ও 
পৰ্ধতাদির সম্বন্ধ নংযোগ। বহি সমবায়নন্বন্ধে কেণলগাত্র স্বাবয়বে, 
এবং নংবোগনন্বন্ধে পর্বাতাদিতে বর্তমান থাকে । বাহু সমবায়সন্বন্ধে 
পর্ধতাদিতে কখনও থাকে না, থাকিতে পারে না। নংযোগনন্বন্ধে পর্বতে 
বহি থাকিলেও সমবারসম্বন্ধে পর্বতে বহি নাই--ইহা৷ ঞবসত্য | 
যেখানে যে ল্বন্ধে যে বস্তু থাকে না, সেখানে অবশ্তই সেই সম্বন্ধে 
সেই বস্তর অভাব থাকে । অতএব সমবায়সন্বন্ধে বির অভাব পর্বতে 
আছে, অথচ তথায় ধূমও আছে। সুতরাং ধৃুমে বহর ব্যাপ্তি থাকিতে 
পারিতেছে না। কেন না, সমবায়নম্বন্ধে যে বহর অভাব, পর্ধতও 
তাহার অধিকরণ বটে। কিন্তু পর্ধত-নিরূপিত বৃণ্তিত্বের অভাব ধুমে 
নাই। পর্বত-নিরূপিত বৃত্তিত্বই ধূমে রহিয়াছে । আরও এক কথা। 
সংযোগসপ্থন্ধে বহি পর্বতে আছে বলিয়া সংযোগনন্বন্ধে বহর অভাৰ 
পর্বতে নাই সত্য, কিন্তু পার্কতীয় বহিই মংধোগসত্বন্ধে পর্বতে আছে। 
মহানদে অর্থাৎ পাকশালায় যে বহি আছে, সে বহি সংযোগনন্বন্ধে 
পর্বতে নাই। কেন না, মহানপীয় বহর নংঘোগ মহানসেই আছে, 


দর্শনশস্ত্র | ৯৩ 


মহাননীর বহর সংযোগ কোনক্রমেই পর্বতে থাকিতে পারে না। 
স্ররাং মংযোগসন্বন্ধে মহানসীয় বন্ধুর অভাব পর্মতে আছে, তাহার 
আর ভুল নাই । মহাননীয় বহিও বহ্ি। পর্দতও এ অভাবের অধিকরণ, 
অথচ পক্জতে ধুম রহিয়াছে । এতাবতাও ধুমে বহর ব্যাপ্তি থাকিতে 
পারিতেছে না। ৪ 

এই আপত্তির এইরূপ সমাঁধান করা হইয়াছে--“পর্বতো বহ্িমান্‌ 
ধূমাং”__এস্থলে পর্ধতে বহি সাধ্য, ধূম হেতু । এখানে সমবারদন্বন্ধে বহি 
পাধা হয় নাই, সংযোগনন্বন্ষেই বহি সাধা হইয়াছে। অর্থাৎ গর্কাতে 
বহর মংযোগ বা বংযৌগপঘ্বন্ধে বহি আছে, ধূমদর্শনে ইহাই অন্থমিত 
হয়। কেন না, কেবলমাত্র বহর অবয়বেই সমবায়সম্বদ্ধে বহি থাকে। 
অবয়ব ভিন্ন আর সমস্ত স্থলেই সংযোগনন্বন্ধেই বহি থাকে, সমবায়মন্বন্ধে 
থাকে না। যেখানে থে সম্বন্ধে যে বস্ত থাকে ব! থাকিতে পারে, সেখানে 
সেই সম্বন্ধে দেই বস্তু সাধ্য হইবে, ইহা! মহজবোধ্য। যেখানে যে সম্থন্থো 
নে বস্তর সন্তা অসন্তব, পেখানে সে নন্বন্ধে সে বস্ত সাধ্য হইতেই পারে 
না। সুতরাং ব্যাপ্তির লক্ষণে সাধ্যের অভাব বলিতে যে নম্বন্ধে সাধ্য 
হয়, দেই মন্বন্ধে মাধ্যের অভাব বুঝিতে হইবে। গ্রক্কৃতস্থলে নংযোগনন্বন্ধে 
বহি সাধ্য হইয়াছে, কিন্তু সংযোগবন্বন্ধে বহ্ির অভাব পর্ধতে নাই। 
সংযোগনম্বন্ধে বির অভাব বহর অবরবে এবং যে প্রদেশে বহি নাই, 
সেই প্রদেশে আছে। বহ্ির অবয়ব বা বহিশুন্য প্রদেশে ধূমও থাকে 
না। সুতরাং সাধ্যাভাবের যে অধিকরণ, তন্নিকূপিত-বৃত্তিত্ব ধূমে নাই। 
অতএব সমবারসন্বদ্ধে বহর অভাব পৰ্ধতে থাকা মবেও ধূমে বহর 
ব্যাপ্তি থাকার কোন বাঁধা হইতে পারে না। বিহ্রিমান্এস্থলে শুদ্ধ- 
বহিত্বর্ূপে বহি সাধ্য হইয়াছে, মহানসীয়-বহিত্বরূপে বহি সাধ্য হয় নাই। 
কেন না, 'বহিমান-_এস্লে শুদ্ধ বস্িদ্ছেরই গ্রতীতি হয়, মহানপীয়-বস্থিত্বের 
প্রতীতি হয় না। পপর্ধতে মৃহানসীয়বহির্নান্তি-_অর্থাৎ পরতে মহানসীয় 
বহি নাই-_-এইরপ প্রভীতি হয় বটে, কিন্তু “পর্বতে বহির্নাস্তি”_অর্থাৎ 
পব্ধতে বহি নাই--এইরূপ গ্রতীতি হয় না। তাহা হইলে পর্বতে 
মহানসীয়-বহির অভাব থাকিলেও, “বহি অভাব নাই”, ইহা অনায়াসে 
বল। যাইতে পারে। অর্থাৎ মহান্সীয়-বহ্িত্বরূপে বহর অভাব পর্বতে 


৯৪ তৃতীয় লেক্চর। 


আছে, কিন্তু শুদ্ধ-বহিত্বরূপে বহর অভাব পর্বতে নাই। শুদ্ধ-বহিত্বর্ূপেই 
কিন্তু পর্বতে বহি সাধা হইয়াছে, মহানসীয়-বহিত্বর্ূপে সাধ্য হয় নাই। 
যেরূপে সাধ্য হয়, সেইবূপে সাধ্যের অভাব ব্যাপ্তিলক্ষণস্থ “সাধ্যাভাবঃ- 
শব্দের অর্থ। সুতরাং পর্বতে মহাঁনসীয় বহর অভাব থাকিলেও, ধূমে 
বহির ব্যাপ্তি থাকিবার কোন ব্যাঘাত হইতে পাল্জ না। 
'সাধ্যাভাবশবের অর্থ নব্যন্তায়ের ভাষায় বলিতে গেলে এইরূপ 
বলিতে হয়-_সাধ্য তাবচ্ছেদক-সন্বন্ধাবচ্ছিন্ন-নাধ্যতাঁবচ্ছেদকধর্মমী বচ্ছিন্ন- 
প্রতিযোগিতা-নিরপক অভাবই “সাধ্যাভাঁবশব্দের অর্থ। সাধ্যের ধর্ম 
সাধ্যতা। সাধ্য যে সম্বন্ধে সাধ্য হয়, দেই সম্বন্ধ সাধ্যতাবচ্ছেদক সম্বন্ধ। 
সাধ্য অংশে প্রতীয়মান ধর্ম অর্থাৎ যে রূপে সাধ্য হয়, সেই রূপ বাধর্শের 
নাম সাধ্যতাঁবচ্ছেদ্বক ধর্ম । কেন না, এঁ সম্বন্ধ ও ধর্ম সাধ্যতার অবচ্ছেদ 
কিনা পরিচয় বা নিয়মন করিতেছে । সংযোগসম্বন্ধে বহর সাধ্যতা এবং 
সমবায়সন্বন্ধে বির সাধ্যতা এক নহে, ভিন্ন ভিন্ন। কারণ, এক 
সাধ্যতার নিয়ামক বা পরিচায়ক সম্বন্ধ সংযোগ, অপর সাধ্যতার নিয়ামক 
বা পরিচায়ক সম্বন্ধ সমবায়। এইরূপ বহিগত সাধ্যতা এবং ঘটগত 
সাধ্যতাও পরস্পর ভিন্ন। কেন না, বহিগত সাধ্যতার নিয়ামক বাপরিচায়ক 
ধর্ম বহিত্ব, ঘটগত সাধ্যতার নিয়ামক বা পরিচীয়ক ধর্ম ঘটত্ব। অবচ্ছেদক 
সম্বন্ধ ও ধর্ম যাহার অবচ্ছ্দে করে, তাহাকে অবচ্ছিন্ন কহে। সাধ্যতার 
যেমন অবচ্ছেদক সম্বন্ধ বা ধর্ম আছে, প্রতিযোগিতারও সেইরূপ অবচ্ছেদক 
সম্বন্ধ ও ধম্পম আছে। সমবায়সন্বদ্ধে বহির অভাবের প্রতিযোগিতা 
সমবায়সন্বন্ধাবচ্ছিন্ন। সাধ্যতাবচ্ছেদক যে সংযোগসন্বন্ধ, তদবচ্ছিন্ন নহে। 
মহানসীয় বহর অভাবের প্রতিযোগিতা মহানসীয়বস্িত্বাবচ্ছিন্ন, 
সাধ্যতাবচ্ছেদক ধর্্ন যে শুদ্ধবহ্রিত্ব, তদবচ্ছিন্ন নহে। অতএব পর্বতে 
উক্ত দ্বিবিধ অভাব থাকিলেও ধূমে বহ্ির ব্যাপ্তির কোনও ক্ষতি হইতে 
পারে না। কেন না, সমবার়সন্বন্ধাবচ্ছিন্ন বা মহানসীয়বহ্রিত্বাবচ্ছিন্ন যে 
প্রতিযোগিতা, তন্নিরূপক অভাব পর্বতে থাকিলেও সংযোগসম্বন্ধাবচ্ছিন্ন 
এবং শুদ্ধবহ্িত্বাবচ্ছিন্ন যে প্রতিযোগিতা, তন্নিবপক অভাব পর্বতে নাই। 
যে যৎকিঞ্চিৎ আভাস প্রদধিত হইল, তাহাতেই মনীবিগণ বৃ্বতে 
পারিবেন যে, নব্য নৈয়ায়িকগণ অত্যন্ত সুঙ্গদর্শিতা ও অদুত বুদ্ধিমত্তার 


দর্শনশীস্তর | ৯৫ 


পরিচয় দিয়াছেন। তাহারা দর্শনশাস্ত্রে এক অভিনব প্রণালী প্রবর্তিত 
করিয়াছেন,_দর্শনশাস্ত্রে যুগান্তর উপস্থিত করিয়াছেন বলিলে অত্যুক্তি 
হয় না। প্রাচীন স্তায়ের সহিত নব্য স্তায়ের তুলনা করিলে ইহা বিলক্ষণ 
স্বদয়ঙ্গম হইবে। 


চতুর্থ লেকৃচর। 


শান 


বৈশেষিকদর্শন | 


সংক্ষেপে দর্শনসকলের প্রতিপাগ্ধ বিষয়ের কিঞ্চিৎ পরিচয় প্রদত্ত 
হইতেছে । ষড়্দর্শনের মধ্যে প্রথমতঃ বৈশেবিকদর্শনের পরিচয় দেওয়া 
যাইডেছে। এই দর্শন কণাদ-মহধি-প্রণীত। কৃষকেরা শত্রক্ষেত্র হইতে 
শান্ত কর্তন করিয়া লইলে শস্তক্ষেত্রে যে ধান্ত গুলিকাঁগুলি পড়িয়া থাকে, 
তাহা এক একটি করিয়! তুলিয়া লইতেন এবং তাহাই আহার করিতেন 
বলিয়া, জীবিকার কঠোরতার প্রতি লক্ষ্য করিয়া বৈশেধিকদর্শন প্রণেতা 
“কণাদ"নামে অভিহিত হইয়াছেন । এইজন্য কোন কোন দার্শনিক 
কণভক্ষ বলিয়া তাহাকে কটাক্ষ করিয়াছেন। তাহী করুন, কিন্তু এরূপ 
কষ্টকর জীবিকা! ব্রাহ্মণের পক্ষে সামান্ত গৌরবের কথা নহে। এরূপ 
জীবিক1 উৎকৃষ্ট তপস্তা বলিয়া প্রশংমিত। বুঝা যাইতেছে যে, বৈশেষিক- 
দর্শনকর্তার 'কণাদ”নামটি প্রকৃত নাঁম নহে। জীবিকানুসারে তিনি এ 
নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছেন। তাহার প্রকৃত নাম উলুক। এইজন্য তাহার 
নামানুসারে বৈশেধষিকদর্শনের অপর ছুইটি নাম কাণাদদর্শন ও ওলুক্য- 
দর্শন। কিংবদন্তী আছে যে, ভগবান কশাদ মহেশ্বরের গ্রন্নতা লাভ 
করিয়া তাহারই আজ্তান্ুপারে বৈশেধিকদর্শন প্রণয়ন করিয়াছেন । 
উদয়নাচাধ্যও এই কিংবদন্তীর অস্তিত্ব স্বীকার করিয়াছেন | 

ইদানীং ছুইএকখানি নূতন ভাষ্য রচিত হইয়াছে বটে, কিন্ত 
বৈশেধিকদর্শনের প্রাচীন ভাষ্য এখন ছুশ্রাপ্য। লঙ্বেশ্বর স্বর রাবণ এই 
দর্শনের প্রাচীন ভাষ্যকার, ইহা বেদান্তের গ্রন্থে উল্লিখিত: আছে। বেদান্ত- 
দর্শনে বৈশেধষিকমতখণ্ডনগ্রসঙ্গে পুজ্যপাদ শঙ্করাচা্ধ্য রাঁবণভাষ্ের 
মতের থগুন করিয়াছেন। অনেকের মতে প্রশস্তপাদাচাধ্যের পদার্থ, 
ধর্্মমংগ্রহ বৈশেষিকদর্শনের ভাষ্য, কিন্তু ইহা প্রকৃত নহে। পদার্থ 


বৈশেধিকদর্শন | ৯৭ 


ধন্দ্সংগ্রছে সুত্র ব্যাখ্যাত হয় নাই। শ্ত্রের তাৎপর্য সংগৃহীত হইয়াছে 
মাত্র। গ্রশস্তপাদাচাধ্য ও তাহার গ্রন্থ মংগ্রহনামেই অভিহিত.করিয়াছেন, 
ভাষ্যনামে অভিহিত করেন নাই। পদ্দার্থধর্্রসংগ্রহের প্রামাণিক 
টাকাকার উদয়নাচীর্ধ্য স্বকৃত টাকায় বলিয়াছেন যে, সুত্র অত্ন্ত কঠিন, 
ভাষ্য অত্যন্ত বিস্তৃত, এইজন্য সরলতা ও স:ক্ষেপের উদ্দেশ্তে পদ্দার্থবর্ম্ম- 
সংগ্রহ বিরচিত হইয়াছে। সুতরাং পদার্থধন্্মনংগ্রহ যে ভাষ্য নহে, 
উদয়নাচাধ্যের মতে তদ্িষয়ে কোন সন্দেহই হইতে পারে না। 
পদার্থবন্মমংগ্রহ অতি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ। ইহাতে সমস্ত বৈশেধিকদর্শনের 
তাৎপর্য্য সংক্ষেপে ও যোগ্যতার সহিত সংগৃহীত হইয়াছে। অধিকন্ত 
মূলদর্শনে অন্ুক্ত জগতের শ্বষ্টিসংহার প্রণালী সমীটানভাবে প্রদনণিত 
হইয়াছে।_  উদয়নাচা্যের কিরনাবনী তক আরবরাচাধ্ের ভারকন্দলী 
পদদা্থবন্মমংগ্রহের উৎকৃষ্ট টাকা। বৈশেধষিকদর্শনের যে সকল গ্রন্থ 
এখন গ্রচপিত আছে, তন্মধ্যে প্রশস্তপাদাচাধ্যের পদার্থধন্দসংগ্রহ 
অত্যন্ত প্রাচীন ও প্রামাণিক। পরবর্তী গ্রন্থকারগণ উহাকে আকর- 
গ্রন্থ অর্থাং একপ্রকার মুলগ্রন্থ বলিয়া উহার প্রতি সম্মান প্রদর্শন 
করিয়াছেন। পরবন্তী গ্রন্থদকলের মধ্যে বল্লভাচার্যের ন্ায়লীলাবতী 
একথানি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ। বদ্ধমানোপাধ্যায়ের কিণাবলী প্রক।শ, লীপাবতী- 
প্রকাশ এবং মথুরানাথ তর্কবাগীশের কিরণাবলীরহস্ত, লীলাব্তীরহস্ত : 
গ্রশংপিত টাকা। শঙ্করনিশ্রকৃত বৈশেবিকস্থৃত্রোপস্কার নাতি প্রাচীন 
হইলেও সমীচীন। জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন কণাদহ্ুত্রবিবৃতি নামে 
বৈশেষিকদর্শনের এক সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্য। রচন। করিয়াছেন। তাহার ব্যাখ্য।র 
শেষভাগে তিনি ভাষাপরিচ্ছেদ ও নিদ্ধান্তমুক্তাবলীর রীতি অন্ুপারে 
বৈশেধিকদর্শনের গ্রতিপাদ্ত বিষয়ের ষে সারসংগ্রহ 'ষোজন। করিয়াছেন, 
তাহ পাঠার্থীদিগের পক্ষে উপাদেয়। উপস্কারগ্রস্থে বৃত্তিকারের মত উদ্ধৃত 
হইয়াছে । কিন্তু বৃত্তিগ্রন্থও দুপ্পাপ্য। বিজ্ঞানভিক্ষুকৃত বৈশেধিকবার্তিক 
পাওয়] যায় বটে, কিন্ত তাহাও নিতান্ত বিরলপ্রচার। নব্যন্তায়ের প্রাহুর্তাৰ 
এবং প্রসরবৃদ্ধিতে প্রাচীন নমীচীন গ্রন্থাবলী বিলুপ্ত এবং অন্ঠান্ত 
দর্শনের অধ্যয়ন-অধ্যাপনার সঙ্কোচ হইয়া পড়িয়াছে, ইহ পরিতাপের 
বিষয় সন্দেহ নাই। নব্ন্তায়ের যথেষ্ট উপকারিতা থাকিলেও তন্নিবন্ধন 
৩ 


৯৮৬৮ তে এসপি পি দল তা ০৩৪১০ 
৪০৮ ৮৫৫৮ একার ৫৮৮০৫ 


&৭ ৫৫০ (৫৩৫ - ৭ 1.7 সে ৫০ পুরি 


৫০ এ ০ জজ স্চ গ্য ১৮০০৫ ১৫৮ তা 
টি ধা লৈ ০৭, ধু লেকৃচ্র। 4 


যে পূর্বোক্ত অগকার এ তাহার তুল নাই এবং হুঃখের সহিত 
স্বীকার করিতে হইতেছে যে, তাহ অমার্জনীয়। 
মহধি কণাঁদ ষটুপদার্থবাদী কি সপ্তপদার্থবাদী, তদ্ধিষয়ে বিলক্ষণ মততেদ 
আছে। তিমি উদ্দেশসৃত্রে ছয়টি পদার্থের উল্লেখ করিয়াছেন। শৃত্রটি এই-__ 
ধর্মবিশেষপ্রহ্ৃতাদদ্রবাগুণকর্্মমা মান্যবিশেষপমবাঁয়ানাং পদার্থানাং 
 সাধব্শ্যবৈধন্দ্যাত্যাং তত্বজ্ঞানান্গিংশরেয়সমূ। 
ধর্মবিশেষ অর্থাৎ নিবৃত্তিলক্ষণ ধর্ম্ম বা নিষ্কামকর্মেপার্জিত ধর্ম হইতে 
সমুত্পন্ন ভ্রবা, গুণ, কর্ধ, সামান্ত, বিশেষ ও সমবায় পদার্থের সাধন্ম্য ও 
বৈধশ্্যরূপে অর্থাৎ কোন্‌ ধর্ম কোন্‌ কোন্‌ পদার্থের সমান ধর্ম, কোন্‌ 
ধর্মাই বা কোন্‌ কোন্‌ পদার্থের বিরুদ্ধ ধর্ম তদ্রূপে, তত্বজ্ঞান অর্থাৎ 
যথার্থজ্ঞান বা তত্বের সাক্ষাৎকার হইলে নিঃশ্রেয়ম অর্থাৎ মুক্তি হয়। 
কণাদ উদ্দেশন্ত্রে অভাবের উল্লেখ করেন নাই বটে, কিন্তু স্থলাস্তরে 
অভাবের সম্বন্ধে আলোচনাদি করিয়্াছেন। ইহাই মতভেদের কারণ। 
উদ্দেশসৃত্রে যটুপদার্থের কীর্তন করিয়াছেন বলিয়া কেহ কেহ বিবেচন! 
করেন, কণাদ যটপদার্থবাদী; আবার স্থলান্তরে অভাবসন্বন্ধে আলো- 
চনাদি করিয়াছেন বলিয়া কেহ কেহ বিবেচনা করেন যে, তিনি সপ্- 
চা ও দা্থবাদী। ায়ভান্তকীরও কণাদকে ষপদার্থবাদী বলিয়াই বিবেচনা 
নি বোধহ্য়। প্রমেয়নত্রের অর্থাৎ ন্যায়মতের প্রমেয় পদার্থ 
গুলি গোতমের যে সুজ কীন্ডিত হইয়াছে, মেই হৃত্রের ভাস্তে ভাম্তকার 
বলিয়াছেন যে__ 
অন্ত্যন্যদপি ভ্রবাগুণকর্্মামান্তবিশেষদমবায়াঃ প্রমেয়ম্‌। 
সুতরনিরদিষ্টের অতিরিক্তও দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্ত, বিশেষ ও সমবাঁর 
ই. প্রমেয় আছে। বৈশেধিকদর্শনের মতের প্রতি লক্ষ্য করিয়াই যে 
্তায়ভাম্তকার হট প্রমেয়ের উল্লেখ করিয়াছেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। 
গ্রচলিত সাংখাদর্শনের একটি স্থাত্র এই-_ 
ন বয়ং যটপদার্থবাদিনো বৈশেবিকাদিবং। 
বৈশেধিকাধির ন্তায় আমর! যটপদীর্ঘবাদী নহি। সাংখ্যহত্রকারের মতে 
. বৈশেষিক যে হটপদার্থবাদী, তাহা তাহার উকতিদ্ারা স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে। 
একটি প্রামাণিক লোকগাথ গ্রচাঘত আছে। তাহা এই. | 


টবশেধিকদর্শন |. 


ধর্মং ব্যাখ্যাতু ক্ামন্ত যট্পদার্ধোপবর্ণনঙ্্‌ । 

মাগরং গন্ভকামন্ত হিমবদগমনোপমম্‌ ॥ 
ধর্মব্যাধা করিতে ইচ্ছুক ব্যক্তির ষটুপদার্থবর্ণনা, সাগ্ররগমনেচ্ছু ব্যক্তির 
হিমালয্নগ্রমনের হ্টায় উপহাপাম্পদ। এই গাথাদ্বারা যে কণাদের প্রতিই 
কটাক্ষ কর! হইয়াছে, সে বিষয়ে মনেহ করিবার কোন কারণ নাই। কেন 
ন1, কণাদ--. 

অথাতে। ধর্মং ব্যাথান্তাম:__ 

এখন ধর্ম ব্যাখ্যা করিব, প্রথম শত্রে এইবপ প্রতিজা করিয়া পরে 
ষটুপদার্থের বর্ণনা] করিয়াছেন। কেবল কণাদ বলিয়া নছেন, মাংখ্য ও 
মীমাংসাদি দর্শনকারদের মতেও “অভাবনামে কোন অতিরিক্ত পদার্থ 
নাই, অথচ তাহাদের দর্শনে অভাবের বিস্তর উল্লেখ আছে। অভাব- 
নামক কোন পদার্থ না থাকিলে অভ্ভাবের উল্লেখ কিরূপে থাকিতে 
পারে, এ রহস্তের উদ্ভেদ প্রায় কেহই করেন নাই। কিন্তু মীমাংসাচার্য্য 
ভট্ট এই প্রশ্সের এইরূপ উত্তর দিয়াছেন _- 

ভাবান্তরমভাবো হি কম্াচিতু ব্যগেক্ষয়। 
কোনরূপ বৈলক্ষণোর অভিপ্রায়ে এক ভাবপদার্থই অপর ভাবপদার্থের 
অভাবনূপে ব্যবহৃত হয়। অভাব আকাশকুম্থমের স্যাঁয় অলীকও নহে, 
পদার্থাত্তরও নহে। একটিমাত্র উদাহরণ প্রদর্শিত হইতেছে । যে 
সময়ে ভূতলে ঘট থাকে, দে দময়ে ভূতলে ঘটাভাবের ব্যবহার হয় না) 
ভূতলে ঘট আছে, এইরূপ ব্যবহারই হইয়া থাকে। কিন্তু প্রী ঘটটি 
স্থানান্তরিত করিলে ভূতলে ঘট নাই, বা ঘটাভাব আছে--এইরূপ 
অনুভৰ বা ব্যবহার হইয়া থাকে। মনোযোগ করিলে বুঝা যাইবে 
যে, ভূতলে ঘট থাকিলে ঘটের ব্যবহার হয়, আর কেবলমাত্র 
ভূতলের বিস্তমানতাঁকালে ঘটাভাবের ব্যবহার হুয়। অতএব ঘটের 
অভাব কেবলমাত্র ভূতল ব| ভূতলের কৈবল্যাবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নছে। 
অতএব সিদ্ধ হইতেছে যে, অভাব পদার্থ বটে, কিন্তু “অতাব+নাষে 
কোনও অতিরিক্ত পর্র্থ নাই। একবিধ তাবপদীর্ঘই অরাধিধ ডা- 
'পদ্ধার্থের অতাবরূপে বাবহত হইয়া থাকে। .. 
যে সকল আচার্ষেযরা কণাদকে, হটপদার্থবাদী নে রর 


শব 


৮ £ £ /১০০৮ সপ 5" £ 
৮ ৮ ৫ ঞ। €৮/৮% 
2 লেক্চর ৷ 


তাহাদের মত প্রদর্শিত হইল। ধাহারা তাহাকে সপ্তপদার্থবাদী 
বলিয়া স্থির করিয়াছেন, তাহাদের মত প্রনর্শিত হইতেছে। প্রণস্তৃ- 
পাদাচার্ধাই এই মতের প্রবর্তক বলিয়া বোধ হয়। অন্ততঃ অন্মদাদির 
দৃষ্টিগোচর গ্রন্থাৰলীর মধ্যে প্রণস্তপাদাচার্য্যের গ্রন্থেই প্রথমতঃ 
প্রকারান্তরে কণাদকে সপ্তপদার্ধবাদী বলিয়া স্থির করা হইয়াছে। তিনি 
!বলিয়াছেন-দদ্রব্যগুণকর্ম্মপামান্তবিশেষসমবায়ানীং ষণ্ীং পদার্থানামভাব- 
সপ্ুমানাম্” ইত্যাদি । অর্থাৎ দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ, সমবায়, 
এইগুলি পদার্থ এবং অভাব সপ্তম পদার্থ । এই সাতটি পদার্থ__ 
ইহা! এককালে ন! বলিয়া, দ্রব্যাদি ছয়টি পদার্থ, অভাব সপ্তম পদার্থ, 
এইরূপ বাক্যভঙ্গীর তাৎপর্য এই যে, কণাদ ষট্পদার্থের উল্লেখ 
করিয়াছেন । সুতরাং উদ্দিষ্ট যট্পদার্থ প্রথমতঃ পৃথকৃরূপে কথিত 
হইরাছে। কণাদের দর্শনের পর্যালোচনা করিলে অভাবপদার্থও 
মানিতে হয় বলিয়া অভাবপদার্থ সপ্তমপদার্থরপে নির্দিষ্ট হইয়াছে। 
বল্লভাচার্ধ্য কণাদের উদ্দেশস্থত্রে ষট্পদার্থের কীর্ডনের প্রতি কিঞ্চিৎ 
কটাক্ষনিক্ষেপ করিয়া বলিয়াছেন যে-_ 

অতাবশ্চ বক্তব্য! নিঃশ্রেরসোপযোগিত্বাথ ভাবপ্রপঞ্চবৎ। কারণাভাবেন 
কাধ্যাভাবন্ত সর্বসিদ্বত্বাহূপযোগিত্বসিদ্ধেঃ। 

নিঃশ্রেয়স অর্থ(ৎ মুক্তির জগ্যই ষট্পদার্থ কীন্তিত হইয়াছে । ভাবপ্রপথ্। 
অর্থাৎ দ্রব্যাদির স্তায় 'অতাবও নিঃশ্রেয়মের উপযোগী, অতএব ভাঁব- 
প্রুপঞ্চের সভায় অভাবও বলিতে হইবে বা বল উচিত। কারণের 
অভাব হইলে কাধ্যেরও অভাব হয়, ইহ! সর্ধসিদ্ধ। যেমন মুত্তিকার 


: অভাবে ঘটের অতাব, সুবর্ণের অভাবে কুগডলের অভাব ইত্যাদি, 


সেইরূপ মিথ্যাজ্ঞানের অভাবে ছুঃখের অভাব সম্পন্ন হয়। ছুঃখের 
অভাব সুক্তি, মিথ্যাজ্ঞান দুঃখের কারণ। 'তত্বজ্ঞানদ্বার -মিথ্যাজ্ঞান 
বিদুরিত হইলে, সুতরাং ছুংখের অভাব হইবে। এইরূপে অভাৰ 


৫: নিঃশ্রেয়দ অর্থাৎ মুক্তির উপযোগী। সুতরাং ভাবপ্রপঞ্চের স্তায় অভাবও 


ৰক্তব্য। “অভাবশ্চ বক্তব্যঃ”--এই লিপিভঙ্গী ছারা যেন জোর করিয়! 
কণাদের মুখ হইতে অভাবেরও কথা বাহির করাইয়। ওয়া হইয়াছে-_ 
ইহা! সংস্কতভাাভিজ্ঞের অনায়াসে বুঝিতে পারেন। অর্থাৎ কণাদ 


বৈশেধিকদর্শন | ১০১ 


অভাবপদ্দার্থ বলেন নাই বটে, কিন্ত তাহাকে অভাবপদার্থও 
বলিতে হইবে, এতদ্বারা বল্পভাচাধ্য প্রকারান্তরে যে কণাদের নানতা- 
প্রদর্শন ও তাহার সংশোধন অথবা বিনয়ের সহিত অত্যন্ত গুঢ়ভাবে 
কণাদকে একটুকু উপহাস করিয়াছেন, মনোযোগপূর্বক বল্লভাচাধ্যের 
লিপিভঙ্গীর প্রতি লক্ষ্য করিলেই তাহ! বুঝিতে পারা যায়। পদার্থ- 
ধর্র্দংগ্রহের টাকাকার উদয়নাঁচার্ধ্য কিরণাবলীনামক টাকায় অভাবের 
সপ্রমপদার্ঘত্ব সমর্থন করিয়া উদ্দেশস্ত্রে ষটুপদার্থমাত্রকীর্ভনের তা ৎপর্য্য- 
ব্যাখ্যাস্থলে বলিয়াছেন-_ 

এতে চ পদার্থাঃ প্রধানতয়োদিক্টাঃ। অভাবস্ত স্বরূপবাঁনপি নোদ্দিষ্টঃ 
প্রতিযোগিনিরূপণাধীননিরূপণত্বান্ন তু তুচ্ছত্বাৎ। 

এই ষটুপদার্থ গ্রধানরূপে উদ্দিষ্ট হইয়াছে। অভাবপদার্থ বস্তরগত্য। 
বি্তমুন হইলেও, এস্থলে তাহার উদ্দেশ করা হয় নাই। কারণ, দ্রব্যাদির 
ন্তায় স্বরূপতঃ অভাবের দিরূপণ হইতে পারে না। প্রতিযোগিনিরূপণ 
দ্বারাই অভাবের নিরূপণ হয়। ঘটের অভাব, পটের অভাব ইত্যাদি স্থলে 
প্রতিযোগিভের্দেই অভাবের ভেদ হইয়া থাকে। এইজন্য অভাবের 
প্রতিযোগিস্বরূপ ষটপদার্থের উদ্দেশ কর] হইয়াছে । অভাবের নিরূপণ 
প্রতিযোগিনিরূপণের অধীন অর্থাৎ অভাবের প্রতিযোগিশ্বরূপ: ষট্পদা্থ 
নিরপিত হইলে অনায়াদে অভাবের নিরূপণ হইতে পারে বলিয়! অভাবের 
উদ্দেশ করা হয় নাই। অভাব তুচ্ছ অর্থাৎ অভাবনামে কোনও 
পদার্থ নাই বলিয়া অভাবের উদ্দেশ করা হয় নাই--ইহ!। প্রকৃত কথা 
নহে। পরবর্তী সমস্ত গ্রন্থে বৈশেষিকমতে অভাবের সপ্ডমপদার্থত্ব 
অঙ্গীকৃত হইয়াছে। ইদানীন্তন কালে এই মতের একাধিপত্য বলিলেও 
অভ্যুক্তি হয় না। অতএব বর্তমান প্রস্তাবে অভাব সপ্তম পদার্থ, এই 
মতেরই অনুসরণ করা হইবে। 

মুক্তির জন্ত আত্মার শ্রবণ ও মননাদি বিহিত। মনন অন্ুমানসাধ্য 
বা অনুমানরূপ। অনুমান ব্যাপ্তিজ্ঞানাধীন। ব্যাপ্তিজ্ঞান পদার্থতত্বজ্ঞান- 
সাপেক্ষ। স্ুুতরাঁং পদার্থতত্বজ্ঞান, সাক্ষাৎ নহে, পরম্পরা নিঃশ্রেয়দ 


বা মুক্তির কারণ। বৈশেষিকদর্শনে ৩৭০টি স্বত্র আছে। শুত্রগুলি 


দশ অধ্যায়ে বিভক্ত । প্রত্যেক অধ্যায়ে ছুইটি দুইটি করিয়া আহ্িক 


১০২ চতুর্থ লেকৃচর। 


আছে। আহক একপ্রকার পরিচ্ছে্দ। দর্শনকার এক এক দিনে 
যে হৃত্রগুলি রচিয়াছেন, তাহাই এক এক আহ্বিক নামে অভিহিত 
হইয়াছে। “অহা নির্ৃতে। গ্রন্থ আহিকঃ1” বুঝা যাইতেছে যে, মহষি 
কণাদ কুড়িদিনে বৈশেষিকদর্শন রচনা করিয়াছেন । যাহা! রচনা 
করিতে _কুড়িদিন সময় লাগিয়াছিল, ছুই-এক দিনে তাহার সম্পূর্ণ 
আলোচনা হইতে পারে না, তাহা অনায়াসবোধ্য। সে যাহা হউক, 
প্রথমাধাঁয়ের প্রগম আহিকে জাতিমান্‌ অর্থাৎ দ্রব্য, গুণ, কর্ম, 
দ্বিতীয়াহ্রিকে সামান্ত বা জাতি এবং বিশেষ পদার্থ নিরূপিত হইয়াছে। 
দ্বিতীয়াধ্যায়ের প্রথম আহিকে 'ভূত'পদার্থ অর্থাৎ পৃথিবী, জল, তেজ, বাষু 
ও আকাশ, দ্বিতীয়াহিকে কাল ও দিক্‌; তৃতীয়াধ্যায়ের আহ্বিকদ্বয়েই 
আত্মার নিরূপণ, অধিকন্ত দ্বিতীয়াহিকে মনেরও নিরূপণ করা হুইয়াছে। 
চতুর্থাধ্যায়ের প্রথমাহিকে জগতের মূলকারণ ও কতিপয় প্রতাক্ষের 
কারণ, দ্বিতীয়াহিকে শরীর বিবেচিত হইয়াছে । পঞ্চমাধ্যায়ের প্রথমাহিকে 
শারীরিক বর্ম, দ্বিতীয়াহিকে মানসিক কর্্দ; যষ্ঠাধ্যায়ের প্রথমাহিকে 
দান ও প্রতিগ্রহ, দ্বিতীয়াহিকে আশ্রমচতুষ্টয়ের উপযোগী ধর্ম; সপ্তমা- 
ধ্যায়ের আহ্বিকথ্বয়েই রূপাদ্ি গুণ এবং দ্বিতীয়াহিকে সমবায়েরও 
নিরূপণ করা হইয়াছে। অষ্টমাধ্যায়ের প্রথমাহিকে প্রত্যক্ষজ্ঞান, 
দ্বিতীয়াহিকে জ্ঞানসাপেক্ষ জ্ঞান ও জ্ঞানসাধন ইন্দ্রিয়; নবমাধ্যাঁয়ের 
প্রথমাহিকে অভাব এবং কতিপয় প্রত্যক্ষ-কারণ, দ্বিতীয়াহিকে লৈঙ্গিক 
বা অন্থমান ও স্থৃতি প্রতি; দশমাধ্যায়ের প্রথমাহিকে স্খদুঃখ ও 
দ্বিতীয়াহিকে সমবাক্ষিপ্রভৃতি কারণত্রয় বিবেচিত হইয়াছে । প্রগঙ্গতঃ 
আরও অনেক বিষয় স্থানে স্থানে আলোচিত হইয়াছে। 

_ষে সপ্তপদার্ধের কীর্তন করা হইয়াছে, তন্মধ্যে সুত্রোদ্দি্ট ষটপদার্থ 
অর্থাৎ দ্রবা, গুণ, কর্ম, সামান্ত, বিশেষ ও সমবায়, ভাবপদার্থ এবং অনুস্দিষ্ট 
সপ্তমপদার্থ অভাবপদার্থ বলিয়া অভিহিত। যে পদার্থে কোন-না- 
কোন একটি গুণ অধস্তই থাকে, অর্থাৎ যে পদার্থে গুণের অত্যস্তাভাব 
থাকে না, তাহার নাম ভ্রব্যপদ্ধার্থ। অথব! যে পদার্থে ভ্রবাত্বজজাতি 
থাকে, তাহার, নাম ভ্রবা। যে সামান্ত বা জাতি গুণবৃত্তি নছে, অথচ 
গগনবৃতি, সেই সামান্ত বা জাতিই ব্রব্যত্ব। সত্তানামে একটি সামাস্ত ৰা 


বৈশেধিকদর্শন। ১০৩ 


জাতি আছে। এ সামান্য গগনবৃত্তি বটে, কিন্ত গুণবৃত্তি বলিয়া তাহা 
্রব্যত্ব নহে। জ্রব্যপদার্থ নয়প্রকার-ক্ষিতি বা পৃথিবী, অপ্‌ বা জল, 
তেজ, বায়ু, আকাশ, কাল, দিক্‌, আত্মা ও মন। ক্ষিতি বা পৃথিবী, 
অপ্‌ বা জল, বায়ু, তেজ ও আকাশ, এই পাঁচটি দ্রব্কে পঞ্চভূত বলে, 
অর্থাৎ এই পাঁচটি ত্রব্যের মাধারণ সংজ্ঞা “ভূত, । যাহাতে বহিরিক্রিয়- 
রা বিং বিশেষ গুণ থাকে, তাহাকেই ভূত বলা যাঁয়। পৃথিবীর গন্ধ, 
জলের রস, তেজের রূপ, বায়ুর স্পর্শ ও আকাশের শব বিশেষ বিশেষ 
গুণ। অথচ এ সকল গুণ বহিরিক্্রিয়গ্রাহথ, স্বুতরাং পৃথিবী, জল, তেজ, 
বায়ু ও আকাশ, এগুলি ভূত বলিয়া কথিত। জ্ঞান আত্মার বিশেষ, গুণ 
55748 সানা | অর্থাৎ মনের দ্বারাই 
জ্ঞান জানিতে পার1 যায়, কোন বহিরিক্দ্রিয় দ্বার! জান জানিতে পারা 
যায় না, এইজন্য আত্মাকে ভূত বলা যায় না। 

যাহাতে গন্ধ আছে, অর্থাৎ যাহাতে গন্ধের অত্যন্তাভাব নাই, অথবা 
যাহাতে পৃথিবীত্বজাতি আছে, তাহাই পৃথিবী। (কেরকাতে অনমবেত, 
ঘটাদিতে সমবেত জাতির নাম পৃথিবীত্ব। সত্তা ও দ্রব্যত্ব জাতি করকাতে ও 
সমবেত, করকাতে অনমবেত নহে, গুণত্বাদি জাতি করকাঁতে অসমবেত 
হইলেও ঘটাদিতে সমবেত নহে। এইজন্য সত্তা, দ্রব্যত্ব ও গুণত্বাদি 
জাতিকে পৃথিবীত্ব বলা যাইতে পারে না ।9) 

ফলপুষ্পাদি সমস্তই পাধিব পদার্থ। পৃথিবী ভিন্ন অপর কোন দ্রব্যের 
গন্ধ নাই। সময়ে সময়ে জল ও বাষুতে যে গন্ধের অনুতব হইয়া থাকে, 
এ গন্ধও জলগত ও বাযুকর্তৃক আনীত পাধিবাংশের, জলের ব৷ বাযুর 
নহে। স্পষ্ট দেখিতে পাওয়া যায় যে, ছূর্ণন্ধ জল যন্ত্রযোগে পরিস্কৃত 
হইলে, তাহাতে কোনও গন্ধ অনুভূত হয় না। কেন না, গন্ধের উপাদান 
পাধিবাংশ যন্ত্রযোগে অপদারিত হইয়া যায়। এইজন্ত সমস্ত জল ও সমস্ত 
বাঘুতে গন্ধের উপলব্ধি হয় না। সত্য বটে, পাধাথে কোনও গন্ধ উপলব্ধ 
হয় না, কিন্তু পাধাণেও গন্ধ আছে। তাহা উদ্ভূত বা উৎকট নহে বলিয়। 
আমর! তাহার উপলব্ধি করিতে পারি না। পাষাণে অনুভূত বা হুক্রূপে 
গন্ধ আছে-_ইহা অবশ্ই ত্বীকার করিতে হইবে। কারণ, পাষাণের ভশ্মে 
সপষ্টরূপে গদ্ধেয় উপলন্ধি হয়। পাষাণের ভন্ম অবশ্ত গাঁধাণের উপাদানে 


১০৪ চতুর্থ লেক্চর। 


উৎপন্ন । অর্থাং থে পরমাণু হইতে পাধাণের উৎপত্তি, ঘেই পরমাণু 
হইতেই পাযাণভম্মেরও উতপন্তি। পাষাণের আরন্তক বা উপাদান 
পরমাণুই পাধাণভন্মেরও আরম্তক বা উপাদ্বান। পাষাণের আরম্তক 
গরমাণুতে গন্ধ না থাকিলে পাষাণভন্মে গন্ধ থাকিতে পারে না। পাষাণ- 
তম্মে গন্ধের উপলব্ধি হইতেছে, স্থতরাং পাষাথের আরম্ভক পরমাণুতে ও 
গন্ধ আছে। অতএব পাষাণেও অবশ্ত গন্ধ আছে। প্র গন্ধ উৎকট 
নহে বণিয়! তাহার উপলব্ধি হয় না, এইমাত্র বিশেষ। 

পৃথিবীপদার্থ ছুইপ্রকার-নিত্য ৭ অনিত্য। পরমাণুই নিত্য 
পৃথিবী, অর্থাৎ পরমাণুর উৎপত্তি বা বিনাশ নাই, উহা ম্বতঃসিদ্ধ। 
তত্তিন্ন সমস্ত পৃথিবীই অনিত্য। অর্থাৎ পরমাণু ভিন্ন সমস্ত পৃথিবীরই 
উৎপত্তি ও বিনাশ আছে । পরমাণু প্রত্যক্ষ নহে, কিন্ত অনুমেয় । 
অনুমানের প্রণালী এইরূপ। ঘটাদি সমস্ত বস্তই সাবয়ব। উৎপন্ন 
্রব্যমাত্রই সাবয়ব, নিরবয়ব হইতে পারে না। প্রত্যক্ষ দেখা যায় 
যে, অবয়বের বিশেষ বিশেষ সন্নিবেশক্রমে ঘটাদির উৎপত্তি হয়। 
সুতরাং উৎপন্ন দ্রব্য সাবয়ব। সাবয়ব-দ্রব্যের অবননবধার| বা অবয়ব- 
গরম্পরার অবশ্ঠ বিশ্রাম আছে। অর্থাৎ ঘটের অবয়ববিভাগ করিতে 
. গেলে ক্রমে সঙ্গ অবয়বে উপনীত হইতে হয়। এইরপে স্থক্ম হইতে 
হঙ্মুতর, হুক্মাতর হইতে কুক্াতম অবয়বে উপনীত হইবার পর ঈদৃশ 
অবয়ব উপস্থিত হয়, যাহার বিভাগ করা একাস্ত.অমম্তব। যাহার 
বিভাগ হইতে পারে না, যাহা অভেগ্য, তাহাই গরম সঙ, তাহাই পরমাণু। 
গরমাণুর উৎপত্তি হইতে পারে না। কারণ, অবয়বসংযোগেই দ্রব্যের 
উৎপত্তি হইয়৷ থাকে। পরমাণুর উৎপত্তি হইলে অবশ্ত তাহার অবয়ব 
থাকিবে। তাহা হইলে যাহা পরমাণুর অবয়বরূপে কল্পিত হইবে, 
তাহাই পরমীথু।১ নিরবয়ব দ্রব্য স্থী, মুক্ল বস্তুর অবযুর- 
ধারা অনন্ত হইবে! কেন না, নিরবয়ব বস্ত স্বীকার না করিলে বিভঙগ- 
মান অবয়ব যত কেন হৃক্ম হউক না, তাহারও অবয়ব আছে, এ অব- 
য়বেরও অবয়ব আছে, ইহ! শ্বীকার করিতেই হইবে। তাহা হইলে 
সমস্ত বস্তই অনন্তাবয়ব হইয়া পড়ে। সমস্ত বস্ত্র অবয়ব অনন্ত 
হইলে প্রতাক্ষপরিদৃষ্ট স্থুল-ুক্ম-বিভাগ অনুপপন্ন হয়_-নুমেক ও দর্মপের 


বৈশের্ধিকদর্শন | ১০৫ 


তুল্য-পরিমাণের আপত্তি হয়। কেন না, স্ুমের ও দর্ষপ উভগ়ই 
অনন্তাবয়ব হইলে পরিমাণের বৈলক্ষণ্য হইবার কোনও কারণ থাকিতে 
পারে না। অতএব সর্ধহুম্মতম অবয়বের অর্থাৎ পরমাণুর অবয়ব নাই, 
উহ! নিরবয়ব, ইহা অবশ্তই স্বীকার হইতে হুইবে। নিরবয়ব দ্রবোর 
উৎপত্তি নাই। যে দ্রব্যের উৎপন্ভি নাই, তাহার বিনাশ নাই। কেন 
না, অবয়্ববিভাগক্রমেই দ্রব্যের বিনাশ হইয়া থাকে । যাহার উৎপন্বি- 
বিনাশ নাই, তাহা নিত্য । অতএব সর্বন্থক্মতম অবয়ব বা পরমাণু,নিতা । 
ইহা দ্বারাই বুঝা যাইতেছে ? যে, পরমাগুভিন্ন অপরাপর অবয়ব বা 
ংশ এবং অবয়বী বা অংশী, এ সমন্তই ষারয়ব। দ্বাণুক হইতে আরম্ত 
করিয়! মহাবয়বী ব| অন্ত্যাবন্নবী অর্থাৎ ঘটপটাদি পর্যাস্ত সমস্ত বস্তুই 
সাবয়ব, স্থতরাং তাহাদের উৎপত্তি ও বিনাশ আছে। হি পরমাণুর 
মহাবয়বী পর্ম্স্ত উৎপন্ন হয়। অবয়বসং যোগে তি উঠতি 
অবয়ববিভাগে তাহাদের বিনাশ অব্তন্তাবী। বৈজ্ঞানিক মলিকিউল্‌ 
( 11৯15051৩) দ্যণুক হইতে মহাবয্বীর অবয়ব পর্য্যন্ত অবয়বসকলের 
সাধারণ নাম। কেন না, অন্ত্যাবয়বী বডি (7০৭) মলিকিউল্‌ নহে, 
এবং মলিকিউল্‌ অন্ততঃ ভাগদ্ধয়ে রিভাঙ্গয। বিজ্ঞানশান্ত্রমতে পরমাণু 
বা এটম্‌ (48০৫) স্বীকৃত হইয়াছে বটে, কিন্ত কোন কোন বৈজ্ঞানিক 
এটম্‌ মানেন না। আমাদের কোন কোন নৈয়ায়িকও দ্বাগুক ও 
পরমাণু মানেন না। তাহারা ত্রসরেগুতেই অবয়বধারার বিশ্রাম স্বীকার 
করেন। 
সে যাহ! হউক, অনিত্য পৃথিবী তিনপ্রকার -শরীর, ইন্ত্িয ও বিষয় । 
শরীর ভোগাম্তন। অর্থ।ৎ শরীরনংযোগেই আত্মীর ভোগ হয় বলিয়! 
শরীর ভোগায়তন। ইন্দ্রিয় ভোগকরণ। কেন না, ইক্দিয়দ্বারাই বিষয়ের 
উপলব্ধি হয়। বিষয়ের উপলন্ধিই ভোগ । শরীর ও ইন্দ্রিয় ভিন্ন ভোগ- 
সাধন পৃথিবীমাত্রই বিষয় । শরীর ও ইন্দ্রিগ্জ ভোগসাধন বলিক্!! বিষয়ের 
অন্তর্গত হইতে পারিলেও, শরীর ও ইন্দ্রিক্ের বিশেষ বিশেষ অদাধারণ 
ধর্শেরি অনুরোধে পূর্বাচার্যেরা পৃথক্রূপে তাহাদের নির্দেশ করিয়াছেন 
.শরীর ছুই গ্রকার_-যোনিজ ও অযোনিজ | গু্র-শোণিত-সংযোগ-জন্ত রি 


১০৬ চতুর্থ লেক্চর।  .*' 


শরীর যোনিজ, তত্তিন্ন অযোনিজ। যোনিজ শরীর দ্বিবিধ--জরাঁযুজ ও 
অগ্ডজ। মন্তুষ্যার্দির শরীর জরাযুজ, পক্ষী ও সর্পাদির শরীর অগুজ। 
অযোনিজ শরীরও দ্বিবিধ--ন্বেদজ ও উদ্ভিজ্জ। মশকাদির শরীর 
স্বেটজ এবং বৃক্ষার্দির শরীর উত্ভিজ্জ। বৃক্ষাদিতেও জীবাত্মা আছে। 
তাহার প্রমাণ শান্ত্র। পাপকর্মবিশেষের ফলম্বরূপ জীব স্থাবস- 
ষোনি প্রাপ্ত হয়, ইহা শাস্ত্রের অনুশাদন। বৃক্ষাদিতেও জীব আছে, 
এ বিষয়ে দার্শনিকগণ এইরূপ যুক্তির অবতারণা করিয়াছেন। 
বৃক্ষাদির কোন স্থান ভগ্ন বা কোন স্থানে ক্গত হইলে কালে তাহা 
জোড়া লাগে, এবং ক্ষত শুষ্ক হয়। ইহার দার্শনিক নাম তগ্র-ক্ষত- 
ংরোহণ। আধ্যাত্িক-বাযুর সম্বন্ধ না থাকিলে ভগ্রক্ষতপংরোহণ হয় 
না। বুক্ষা্দি পুষ্টির উপকরণ রসার্দির আকর্ষণ করিয়া! পরিপুষ্ট হয়। 
এতন্বারাও তাহাদের জীবসন্বন্ধ অন্নমান করা যাইতে পারে। এততিন্ন 
দেবধিদিগের ও নারকীদিগের শরীরও অযোনিজ । 
ঘ্রাণেন্দ্রিয় পার্থিব। কেন না, তদ্বার! গন্ধের অন্ভব হয়। গন্ধের 
অনুভব বা উপলব্ধি ক্রিয়াবিশেষ। ছেদনাদি ক্রিয়ার ন্যায় উহাও করণ- 
জন্য। উহ] গন্ধের ব্যপক বলিয়া পার্থিব। দ্বৃতাদি কুমকুম গন্ধের 
অভিব্যপ্তক, অথচ পার্থিব। ঘ্বাণেন্দ্রিয়ও গন্ধের অভিব্যপ্রক, অতএব 
উহাও পার্থিব। ইন্দ্রিয্মাত্রই স্ব-প্রকৃতি দ্রব্যের অসাধারণ গুণের 
অভিব্যঞ্জক হইয়া! থাকে। ইহা ইউরোপীয় দার্শনিকেরাও স্বীকার, 
করেন (১)।  ইন্দ্রিয়মাত্রই অতীন্র্িয় অর্থাৎ ইন্দরিয়গ্রাহ নহে। 
পরিদৃগ্ঘমান নানিকা ঘ্বাণেন্দ্িয় নহে, ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের স্থান। অন্তান্ 
পৃথিবীর গন্ধের অভিব্যক্তি করিবার শক্তি থাকিলেও ভৃতান্তরযোগে দেই 
শক্তি অভিভূত হয় বলিয়া মস্ত পার্থিবপদার্থ গন্ধের অভিব্যক্তি করিতে 
পারে ন!। শ্লেম্ষািদ্বারা অভিভূত হইলে ঘ্রাণেন্দ্রিয়ও গন্ধের অভিব্যক্তি 
করিতে গাঁরে না, ইহা প্রত্যক্ষপরিদৃষ্ট। ্রাথেত্রিয় পরি্ৃত পার্থিবাংশ- 
বিশেষ মাত্র। : 


(১) 41290) 89099 18 ৪0190 ৮০ & [097109]91 01898 01 11100061)098; 1080) &০ 
80010 07985375 )089086 60 96718] 01938009 511889 60 11010 ০: 018801591:09878 
৮7108 ০০:৪০ 07০985৪ ০৫ 009001021 1796019 3 8101)% 10 ৮0৪৪ 0009 3 ০£ 
996 100085055 00৫18৮ 38505 2110 804 8০05, 0, 22, (892), 


বৈশেষিকদর্শন | * ১০৭ 


ন্নেহনামক গুণ যে দ্রব্যে আছে, তাহার নাম অপ বাজল। যে 
গুণপ্রভাবে গুপ্ডিকার পিগাকার অবস্থা সম্পাদিত হয়, তাদৃশ গুণ- 
বিশেষের নাম স্নেহ। স্লেহগুণ '্নিগ্$ং জলম্ঠ এই অন্কুভবসিদ্ধ। জল 
ভিন্ন আর কোনও দ্রব্যের স্নেহগুণ নাই। তৈলাদিতে যে স্নেহগুণ 
আছে, তাহাও জলীয়, অর্থাৎ তৈলাদির অভ্যন্তরস্থ জলভাগের। 
তৈলাদির স্নেহ উৎকৃষ্ট, এইজন্য তাহা! দহনেক বা অগ্নির অনুকুল। 
মাধারণ-জলের স্নেহ 'অপকৃষ্ট, এইন্ন্য তাহা দহনের প্রতিকূল। অথব 
যে দ্রব্যে জলত্বজাতি আছে, তাহার নাম জল। (পৃথিবী-বুন্তি নহে, 
অথচ হিমকরকাদি-বুত্তি জাতিবিশেষের নাম জলত্ব। সত্তা ও দ্রবাত্থ 
জাতি পৃথিবীবৃত্তি, তেজন্ব প্রভৃতি জাতি হিমকরকাদি-বৃত্তি নহে, এই" 
অন্ঠ তাহাদিগকে জলত্ব বলা যায় না।) জল ছুইপ্রকার-_নিত্য ও 
আঅনিত্য। জলীনর পরমাণু নিত্য। তত্িন্ন সমস্ত জল অনিত্য। অনিত্য 
জল ত্রিবিধ--শরীর, ইন্দ্রিয় ও বিষয়। বরুণলোকস্থ জীবদিগের শরীর 
জনীয়। ইহা শান্ত্রপিদ্ধ। দ্রাশনিকেরা বক্ষামাণরূপে জলীয় শরীরের 
অনুমান করিয়াছেন। পার্থিব পরমাণু ইন্দ্রিয়ের আরম্তক, অথচ 
শরীরের আরন্তক। জলপরমাণুও ইন্্রিয়ের আরম্তক, অতএব তাহাও 
শরীরের আরম্তভক। জলীর ইন্দ্রিয় রসনা! । রপনেত্ত্রিয় রমের অভি- 
ব্যঞ্রক। অতএব শক্তুরসের অভিব্যঞ্নক জলের গ্ভায় উহাও জলীয় । 
জলে কোনও রম নাই, ইহা অন্ভববিরদ্ধ। ইক্ষু, ক্ষীর ও গুড়াদির 
হ্যায় উৎকট মাধুর্য জলে নাই বটে, কিন্তু জলে যে অন্যবিধ মাধুর্য 
আছে, তাহ! অপলাপ করিতে পারা যায় না। শরীর ও ইন্দ্রিয় ভিন্ন 
সমন্ত'জলের সাধারণ নাম বিষয়। 

যে দ্রব্যে রস নাই, অথচ রূপ আছে, তাহার নাম তেজ। পৃথিবী 
ও জলে রূপ আছে বটে, কিন্ত তাহাতে রদও আছে, বায়ু প্রতৃতিতে 
রূপ নাই; এইজন্ত উহারা তেজ নহে। অথবা যে দ্রব্যে তেজন্থগাতি 
আছে, তাহার নাম তেজ। কেরকাদিতে অবৃত্তি অথচ বিছ্যুদাদি- 
বৃত্তি জাতিবিশেষের নাম তেজন্ব। সত্তা ও ভ্রব্যত্ব করকাদিতেও 
আছে, করকাদ্দিতে অবৃত্তি নহে, পৃথিবীত্ব ও জলত্বাদি জাতি বিছ্যুদবাদি- 
বৃত্তি নহে, এইজন্ত উহাদিগকে তেজস্ব বলা যাইতে খারে ন। 


১০৮ চতুর্থ লেক্চর | 


তেজ ছুই প্রকাঁর--নিত্য ও অনিত্য। পরযাণুরূপ তেজ নিত্য, তততিন্ন সমস্ত 
তেজ অনিত্য। অনিত্য তেজ তিনপ্রকার--শরীর, ইন্জি় ও বিষয়। হৃর্যয- 
লোকস্থিত প্রাণীদিগের শরীর তৈজস। চক্ষুরিক্রিয় তৈজম। রূপমাত্রের 
অভিব্যঞ্রক আলোক তৈজন, চক্ষুরিন্ড্রিয়ও রূপমাত্রের অভিব্যগ্রক। অতএব 
উহাও তৈজস। শরীর ও ইন্দ্রিয় ভিন্ন সমস্ত তেজ “বিষয় বলিয়া কথিত। 
ষে দ্রব্যে রূপ নাই, স্পর্শ আছে, তাহার নাম বাধু। পৃথিবী, জল 
ও তেজোদ্রব্যে রপ আছে, আকাশাদি দ্রব্যে স্পর্শ নাই, এইঅন্ত 
উহ্ারা বায়ু নহে। বায়ু ছুইপ্রকার-_নিত্য ও অনিত্য। বায়বীয় 
পরমাণু নিতা, তত্তিন্ন ৰাযু অনিত্য। অনিত্য বায়ু তিনপ্রকার_- 
শরীর, ইন্দ্রিয় ও বিষয়। বায়ুলোকস্থ জীবদিগের শরীর বায়বীয়। 
বাজনবাধু অঙ্নসঙ্গি-জলের শীতল-স্পর্শের অভিব্যক্তি করে, ত্বগিক্রিয়ও 
্পর্শমাত্রের অভিব্যঞ্জক, অতএব উহা! বায়বীয়। শরীর ও ইন্দ্রিয় ভিন্ন 
সমস্ত বাষুর সাধারণ নাম বিষয়। জন্তাদ্রব্যমাত্রেই পৃথিবী, জল, তেজ 
ও বায়ু, এই ভূতচতুষ্টয়ের অল্লাধিক পরিমাণে সম্বন্ধ আছে, এবং এই 
ভূতচতুষ্টয় জন্ত-দ্রবোর আরম্তভক বা সমবায়িকারণ। 
শব্দের আশ্রয় দ্রব্যের নাম আকাশ। শব্দের অবশ্তই একটি অধি-... 
করণ বা আশ্রয় আছে, তাহাই আকাশ। শব্ষের উৎপত্তির জন্ত বায়ুর 
অপেক্ষা থাকিলেও বায়ু শব্ের আশ্রয় নহে। কারক বায়ুর একটি 
বিশ্ষগুণ ম্পর্শ। তাহা যাবদদ্রব্ভাবী, অর্থাৎ বাঘু যতক্ষণ থাকে, 
ততক্ষণ তাহার স্পর্শগুণও থাকে। শব কিত্ত তেমন নহে। বায়ু 
থাকিতেও শব নষ্ট হইয়া যায়। বায়ুর বিশেষণ্ণ স্পর্শের সহিত এই- 
রূপ বৈলক্ষণ্য থাকায় শব্ধ বায়ুর বিশেষগুণ নহে । শব্ধ বায়ুর বিশেষ- 
গুধ হইলে ম্পর্শের স্তায় উহাও যাবদদ্রব্যভাবী হইত। কোন কোন 
বৈজ্ঞানিকের মতে নির্বাত প্রদেশেও শব্দ হইতে পারে। সুতরাং শব 
বায়ুর. গুণ নহে। সমস্ত শব আকাশে বিলীন হয়_ ইহ] বিজ্ঞানশাস্ত্রে 
অনুমত। *দার্শনিক্ষেরা বলেন-ষে পদার্থ যাহাতে লীন হয়, তাহাতেই 
সেই পদার্থের উৎপত্তি হয়। উপাদান বা সমবায়িকারণ ভিন্ন অন্তত্র 
পদার্থের লয় হয় না। 'শবগ্রহণের হেতু শ্রবণেনত্িয় আকাশরপ 4 
কর্ণচ্ছিতর গ্রদেশবিশিষ্ট আকাশের নাম শ্রবণেক্র্রিয। টা 


বৈশেবিকদর্শন 2 


থে ভ্রবাদ্ধারা জো্ত্ব কণিষ্ঠত্ব-বাবহার-নির্ববাহ হয়, তাঁহার নাম 
কাল। পূর্বকালজাত ব্যক্তি জ্োষ্ঠ ও পরকালজাত ব্যক্তি কনিষ্ঠ । দূবন্ধ 
ও অস্তিকত্ব বা নৈকটা ব্যবহারের এবং পূর্ধপশ্চিমািব্যবহারের কারণ- 
প্রবাবিশেষের নাম দিকৃ। আকাশ, কাল ও দিক্‌ প্রত্যক্ষ নহে, 
কার্যের দ্বার অনুমেয় । উহারা প্রত্যেকে এক, অনেক নহৌোঁজক 
হইলেও উপাধিভেদে ভিন্ন ভিন্ন। ঘটাকাশ, মঠাকাশ প্রভৃতি আকাশের 
ওপাধিক ভেদ। কাল ক্ষণ-দিন-মাপাদি-ভেদে অনেকপ্রকার। ক্রিয়ারূপ 
উপাধিভেদে এরূপ ভেদপ্রতীতি হয়। বস্তরগত্যা কাল এক। দিকৃও 
উপাধিভেদে পূর্বপশ্চিমাদি-ভেদভিন্ন-রূপে ব্যবন্ৃত। যেদিকে প্রথম 
আদিত্যসংযোগ হয়, তাহার নাম প্রাচী বা পূর্বা। তাহার বিপরীত 
দিক্‌ প্রতীচী বা পশ্চিম। পূর্বাভিমুখে আদিত্যের পরিভ্রমণ হয়, স্থৃতরাং 
আদিত্যের দক্ষিণস্থ দিক্‌ অবাচী বা দগ্ষিণ। তাহার বিপরীত দ্রিক 
উদ্দীচী বা! উত্তর ইত্যাদ্ি। 

জ্ঞানের আশ্রয় দ্রবা আত্মা। আত্মা ছুইপ্রকার--পরমাত্বা বা 
ঈশ্বর ও জীবাত্মা। ক্ষিতি ও অস্কুরাদির কর্তারূপে ঈশ্বর অনুমেয় । 
জীবাত্ম। “অহং জানামি' ইত্যাদি মানস প্রত্যক্ষসিদ্ধব। কোন একটি বিশেষ 
গুণের সহকারে জীবাত্মার মানসপ্রত্যক্ষ হয়। যেমন 'অহং জানামি, 
অহং সুখী” অর্থাৎ 'আমি জানিতেছি, আমি সুখী” ইত্যাদিরূপে জ্ঞান ও 
সুখান্দি বিশেষগুণযোগে জীবাত্মার মানসপগ্রত্যক্ষ হয়। জীবাত্মা এক 
নহে, গ্রতিশরীরে ভিন্ন ভিন্ন। বুদ্ধি, সুখ, দুঃখ, ইচ্ছা, হ্বেষ। যত্ত, 
সংখ্যা, পরিমাণ, পৃথকৃত্ব, সংযোগ, বিভাগ, ভাবনাখ্য সংস্কার, ধর্ম ও 
অধর, জীবাত্মার এই চতুদিশটি গুগ। 

জীবাত্ব। এবং সুখছুঃথাদির প্রত্যক্ষের করণের নাম মন। রূপাদির 
উপলান্ধ পক্রিয়া' বলিয়া যেমন চক্ষুরাদিরূপ-করণ-সাধ্া, তন্রপ সুখাদির 
উপলব্ধি “ক্রিস” বলিয়া তাহাও করণ-সাধ্য। যাহা স্থখাদি উপলব্ধির 
কর, তাহাই মন। মন অন্তঃকরণ বা অস্তরিক্ডরিয়, চক্ষুরাদি -বহিঃকরণ 
বাঁ বহিরিন্দিয়। রূপাদি বহিধিষয়ের উপলব্ধির জন্য যেনধপ চক্ষুরাদি 
বহিকিন্রিয় অপেক্ষিত, নুথাদি অস্তধিষয়ের উপলব্ধির . জন্যও সেইরূপ 
অন্রিন্ত্িয় অপেক্ষিত। আরও এক কথা। চষ্ষুরিজ্িয় রূপের, 


১০১০ চতুর্থ লেক্চর। 


রসনেন্দ্ি রসের, ঘ্বাণেত্তিয় গন্ধের, শ্রবণেন্দ্রিয় শব্দের এবং 
ত্বগিন্রিয় স্পর্শের উপলব্ধির সাধন। রূপাদি বিষয়ের সহিত চক্ষুরাদি 
ইন্্রিয়ের সন্নিকর্ষ বা সম্বন্ধ হইলে তত্তদ্বিষয়ের উপলব্ধি হইয়! 
থাকে। কিন্তু এক সময়ে রূপার্দি পঞ্চবিষয়ের সহিত চক্ষুরাদি পঞ্চে- 
ক্রিয়ের সন্নিকর্ষ হইলেও, এককালে পঞ্চেন্ট্িয়জনিত চাক্ষুযাদি 
পাচগ্রকার জ্ঞান হয় না, উহার কোন-একটি জ্ঞান হইয়া থাকে। 
কেন এমন হয়? বিষয়ের সহিত ইন্দ্রিষের সন্নিকর্ষ জ্ঞানের সাধন। 
যখন পাচটি জ্ঞান হইবার কারণ রহিয়াছে, তখন কেন পাঁঢটি জ্ঞান 
এককালে হয় না? এতদ্বত্তরে অবশ্ঠ বলিতে .হইবে যে, বিষয়ের সহিত 
ইন্দ্রিয়ের মন্নিকর্ষের অতিরিক্তও কোন সহকারিকারণ আছে, যাহার 
সন্িধি হইলে জ্ঞান উৎপন্ন হয়, যাহার সন্নিধান না হইলে জ্ঞান উৎপন্ন 
হয় না। অর্থাৎ যে ইন্্িয়ের সহিত মন£সংযোগ হয় সেই ইন্দ্রিয়-জন্য 
জ্ঞাঁনটিই জন্মিয়া থাকে, যে ইন্রিয়ের মহিত মনঃসংযোগ হয় না, বিষয়- 
সন্নিকর্ষ থাঁকিলেও সে ইন্জিয়-জন্ত জ্ঞান হয় না। এইজন্তও মন স্বীকার 
করিতে হয়। সকলেই বলিয়া থাকেন যে, “মনোযোগ করি নাই বলিয়! 
শুনিতে পাই নাই বা দেখিতে পাই নাই” ইত্যাদদি। মনোষোগ আর 
কিছুই নহে--অভিমত ইন্দ্রিয়ের্র সহিত মনের সংষোগমাত্র। জ্ঞানের 
যৌগপদ্ এবং ক্রিয়ার যৌগপ্য অর্থাৎ এককালে একাধিক জ্ঞান ও 
একাধিক ক্রিয়া হয় ন! বলিয়া যদি মনের শ্বীকার আবশ্তক হুইল, তবে 
মন অবন্ত অণুপরিমাণ অর্থাৎ পরম সুক্ষ হইবে। কেন না, মন বিভু 
অর্থাৎ মহৎ-পরিমাণ হইলে এককালে তাহার একাধিক ইক্ররিয়ের হিত 
সংযোগ হইতে পারে; সুতরাং এককালে একাধিক জ্ঞানও হইতে 
পারে। অতএব যে কারণে মন স্বীকার করিতে হইতেছে, সেই কারণেই 
মনের অণুত্ব অর্থাৎ হ্ক্গাত্বও সিদ্ধ হইতেছে। সুতরাং মনের মহৎ-পরিমাণত্ব 
ক্বীকার করিবার উপায় নাই। দার্শনিকেরা ইহাকেই ধর্শি-গ্রাহক- 
প্রমাণ-বিরোধ ব! ধর্শি-গ্রাহক-প্রমীণ-বাধ বলিয়া থাকেনু। যাহার ধর্ম 
আছে, তাহা ধর্মী, অর্থাৎ বিশেষ্য । মনের ধর্শ অগুত্ব, সুতরাং মন 
. ধন্মী। তাহার গ্রাহক কিনা জাপক অর্থাৎ যে প্রমাণবলে মনের অস্তিত্ব 
: গ্ীকার করা হয়, তাহার নাম ধণ্সি-গ্রাহক গ্রমাণ। যে প্রমাণবলে মন 


বৈশেষিকদর্শন। 5১১ 


পিদ্ধ হইয়াছে, সেই প্রমাণবলে মনের অণুত্বও পিদ্ধ হইয়াছে। অতএব 
মনের মহত্বকল্পনা হইতে পারে না। মনের মহত্বকল্পনা করিতে গেলেই 
ধর্মি-গ্রাহক গ্রমাণের সহিত বিরোধ উপস্থিত হয়। 

আপত্তি হইতে পারে যে, দীর্ঘ-শঙ্কুলী-ভক্ষণ-স্থলে এককাঁলে একাধিক 
জ্ঞান হইতেছে। কেন না, শঙ্কুলী হস্তদ্বারা ধৃত হয় বলিয়া তাহার &১ 
স্গার্শন জ্ঞান, চক্ষুর দ্বারা দৃষ্ট হয় বলিয়া চাক্ষুষ জ্ঞান, শঙ্কুলীর গন্ধ পাওয়! 
যার বলিয়া তাহার ঘ্বাণেক্িরজন্য জ্ঞান, শফুলীর রদান্বাদন হয় বলিয়। 
তীয় রসেবু রাসন জ্ঞান, শফ্কুপীর চক্বণশব্দ শত হয় বলিয়া তাহার 
খাবণ জ্ঞান, এককালে হইতেছে। এইরূপ নর্তকী নৃত্য করিবার সময় 
দশকদিগের দর্শন, গেয়পদের ম্মরণ, বাগ্ঘশবের আুবণ, বস্াঞ্চলের 
স্গর্শন এবং পাদন্াম, হস্তচালন, শিরশ্চালন প্রভৃতি এককালে করিয়। 
থাকে। মন অণুপরিমাণ হইলে এককালে তাহার একাধিক ইন্দ্রিরের 
সহিত সংযোগ হইতেই পারে না, সুতরাং এককালে একাধিক জ্ঞান বা 
ক্রিযাও হইতে পারে না। এতদুন্তরে বক্তব্য এই যে, মন আগুসঞ্চারী১ 
অর্থাৎ মন অতি শীঘ্র শীঘ্র সঞ্চরণশীল। অত্যান্ত শীঘ্ব শীপ্ব একাধিক 
ইন্দ্রিয়ের সহিত মনের সংযোগ হয় বলিয়া যৌগগপ্ঠন্রম হয়, অর্থাৎ 
এককালে একাধিক জ্ঞান ও একাধিক ক্রিয়া হইতেছে বলিয়া ভ্রম হয়। 
বস্তুতঃ ক্রমেই জ্ঞান ও ক্রিয়াপরদ্পও| হইয়া থাকে। বিষয়ের সহিত 
ইন্ড্রিয়ের সন্িকর্ধ ত আছেই। সুতরাং মনের সহিত ইন্দ্রিয়ের সংযোগ 
হওয়ামাত্রই জান হয়। মন অত্যন্ত আশ্ুসঞ্চারী, সুতরাং এক ইন্দ্রিয়ের 
সহিত সংযুক্ত হইয়া পরক্ষণেই আর এক ইন্দ্রিয়ের সহিত, তৎপরক্ষণেই 
আবার অপর ইন্দ্রিয়ের সহিত সংযুক্ত হয়। মনঃনংযোগ ক্রমে হয় বলিয়া 
তজ্জন্ত জ্ঞানও ক্রমেই হয়। কারণের ক্রম থাঁকিলে কার্যের ক্রম 
অনিবা্ধ্য। সুতরাং তাহার অর্থাৎ জ্ঞানপরম্পরার যৌগপগ্ হইতেই 
পারে না। কিন্তু মন আশুসঞ্চারী বলিয়া! তাহার সংযোগক্রম এবং তজ্জন্য 
জ্ঞানক্রম এত দুর্লক্ষ্য যে, তাহা বোঁধগম্যই হয় না। এইজন্ত এককালে 
একাধিক জ্ঞান হইয়াছে বলিয়! বিবেচনা হয়। এ বিবেচনা ত্রমাত্মবক। 
শীদ্র পীঘ্র জ্ঞান হয় বলিয়া! ক্রমিক জ্ঞানের যৌগপপ্ত্রম অন্যাত্রও হইয়া] 
থাকে। একটি উদ্দাহরণ দেওয়া যাইতেছে। বক্তার বাক্য সরল হইলে. 


১১২ চতুর্থ লেক্‌চর। 


এঁ বাক্ষাটি গুনিবামাত্র তাহার অর্থবোধ হয়, ইহা সকলেই বিবেচনা 
করিয়া থাকেন। বন্ত্বগতা। কিন্তু তাহ হয় না। কারণ, বাক্য শুনিবার 
সময় প্রথমত: এক একটি বর্ণের, তৎপরে এ বর্ণঘটিত পদের, তার পর 
গদঘটিত বাক্যের জ্ঞান হয়। এইরূপে বাক্যজ্ঞান হইলে, পরে বাক্যঘটক 
পদাবলীর সঙ্কেত স্মরণ হয়। সঙ্কেত ম্মরণ হইয়া পদাবলীর অর্থজ্ঞান 
হয়। পরে অর্থসকল পরম্পর অন্বিত হইবার কোনও বাধা নাই--এইরূপ 
বোধ হইলে, তবে বাক্যের অর্থবোধ হয়। কিন্তু অভ্যন্ত বিষয় বলিয়া 
উহ1 এত শ্বীন্র শীঘ্র সম্পন্ন হয় যে, শ্রোতারা বিবেচনা করেন ধে, বাক্যটি 
শুনিবামাত্রই তাহার অর্থবোধ হইয়াছে । যে বিষয়টি অভ্স্ত নহে, সে 
বিষয় গুনিলে অনেক ভাবিয়া চিত্তিয়া তবে বাক্যের অর্থ বুঝিতে হয়। 
উৎপল-শতপত্র-ব্যতিতেদ ও অলাতচক্র-দর্শনও ইহার উত্তম দৃষ্ান্ত। 
কতকগুলি উত্পলপত্র বা পদ্পপত্র উপধ্যপরিভাবে রাখিরা স্চীদ্বারা 
বিদ্ধ করিলে আপাততঃ বোধ হয় যে, সমস্ত পত্রগুলিই এককালে বিদ্ধ 
* হইয়াছে । তাহ! কিন্তু হয় নাই। প্রথমতঃ; সর্রোপরিস্থিত পত্রটি, 
তৎপরে তত্রিয়স্থিত, তৎপরে তিকস্থিত ইত্যাদিক্রমে পত্রগুলি বিদ্ধ 
হইয়াছে । কিন্তু বেধক্রিয়া শীঘ্র শীপ্র সম্পক্প হয় বলিয়া ক্রম লক্ষ 
কর! যায় না, এইজন্ত বেধক্রিয়ার যৌগপদ্ত্রম হয়। একটি অলাত বা 
জলদঙ্গার 'গোলাকারে দ্রুত ভ্রমণ করাইলে চক্রাকার অগ্নিরেখা বা অগ্রির 
চত্র দৃষ্ট হয়। কিন্তু অলাতের বাঁ জলদন্গারের পরিত্রমণ অবশ্ত ক্রমে 
হইয়াছে। বৃহৎ-পরিমীণ সমস্ত বৃত্তপথে কোনমতেই ক্ষুদ্র অলাতের 
এককালে নম্বন্ধ হইতে পারে নাঁ। সুতরাং অলাতের পরিভ্রমণক্রিয়ার 
ক্রম অবশ্যই আছে। ক্রম থাকিলেও তাহ! ছুর্লক্ষ্য বলিয়। দর্শকদিগের 
চক্রভ্রম হইয়া থাকে । | 
বৈশেধিকমতে চড়ুবিধ পরমাণু ও আকাশাদি পঞ্চদ্রব্য নিত্য। 
তস্তিন্ন দ্বাুক অবধি মহাদতচতুষ্টঘ অর্থাৎ ক্ষিতি, জল, তেজ ও বায়ু 
অনিত্য। অনিত্য ভ্রব্যমকলের সৃষ্টি ও সংহারের বা প্রলয়ের ক্রম গ্রদণিত 
হইতেছে। ব্রহ্মার দেহবিসর্জনকালে সকল ভূবনের অধিপতি মহেণ্বরের 
 অ্জিহীর্যা অর্থাৎ সংহারেচ্ছা প্রাদ্ৃত হয়। তৎকালে সমস্ত জীবাস্মার 
_ ্বনৃ্দকলের বৃত্তিনিরোধ অর্থাৎ গ্রলয়হেতু অনৃটারা সপি-ও-স্থিতি- 


বৈশেধিকদর্শন | ১১৩. 


হেতু অনৃষ্টের কার্য্য প্রতিবদ্ধ হয়। প্রাণীদিগের ভোগের জঙ্ত জগতের 
হষ্টি ও স্থিতি। ডোগপ্রধোজক বা ভোগহেতু অদৃষ্ট পরল প্রযোজক 
বা প্রলয়হেত্‌ অনৃষ্ট্ধারা প্রতিবদ্ধ হইলে ভোগ প্রযোজক অদৃষ্ট আর 
ভোগসম্পা্দন করিতে পারে না। তৎকালে প্রলয়হেতু-অপৃষ্ট যুক্ত 
আত্মার অর্থাৎ প্রাণিবর্গের মংযোগে শরীর ও ইন্জিয়ের আঁরম্তক পরমাণু- 
মকলে কর্মের উৎপত্তি হয়। এ কর্মবশতঃ আরস্তভক দংযোগ নিবৃত্ত 
হইয়া যায়। তখন দেহ ও ইন্দ্রিয় বিনষ্ট হইয়া তদারস্তক পরমাণুমাত্র 
অবশিষ্ট থাকে । এইরূপ, পৃথিব্যারস্তক পরমাণুতে কর্ম হইয়া আরম্ভক- 
মংযোগ-নিবৃত্তি ক্রমে মহাপৃথিবী নষ্ট হয়। এই প্রণালীতে পৃথিবীর পর 
৬%জল, জলের পর তেজ, তেজের পর বায়ু নষ্ট হয়। তুখন চতুধিধ মহা- 
ভূতের চতুখিধ পরমাণুমাত্র বিভক্তরূপে অবস্থিতি করে। এবং ধর্ম, অধর্দ 
ও ভাবনাখাসংস্কারযুক্ত আত্মাকল ও আকাশাদি নিত্য পদার্থ গুলি 
মাত্র অবস্থিত থাকে। প্রলয়কালের অবগানে প্রাণীদিগের ভোগের জন্ত 
মহেশ্বরের পিস্থক্ষ। অর্থাৎ স্থষ্টি করিবার ইচ্ছা হয়। তখন প্রলয়হেতু 
অনৃষ্টের কাধ্য হইয়াছে বলিয়া উহ! আর ভোগ প্রযোজক অদৃষ্টের বৃত্তি- 
নিরোধ করিতে পারে না। স্কৃতরাং ভোগ প্রযোজক অদৃষ্ট বৃত্বিলাঁভ 
করিতে সমর্থ হয় অর্থাৎ ফলোনুখ হয়। এ অদৃষ্টযুক্ত আত্মার সংযোগে , 
প্রথমতঃ পবনপরমাণুতে কর্মের উৎপত্তি হয়। পবনপরমাণুলকলের « 
পরম্পর সংযোগে দ্বণুকাদিক্রমে মহান্‌ বায়ু উৎপন্ন এবং অনবরত 
কম্পমান হইয়া আকাশে অবস্থিত হয়। তিথ্যগ্নগমন বায়ুর স্বভাব। 
তৎকালে অপর কোনও দ্রব্যের উৎপত্তি হয় নাই,_-ধাঁহার দ্বার বায়ুর 
বেগ প্রতিহত হইতে পারে। সুতরাং বাষু অনবরত কম্পমান হইযুই 
অবস্থিত থাকে। বাযুস্ৃষ্টির পরে ন্নপে আপা বা! জলীয় পরমাণুতে 
কর্মের উৎপত্তি হইয়া দ্যাণুকাদিক্রমে মহান্‌ মূলিলরাশি উৎপন্ন এবং 
বাুবেধে কম্পমান হইয়া বাযুতে অবস্থিত হয়। তদনস্তর উক্ত ক্রমে 
পাখিৰপরমাণুমংযোগে নিবিড়াবয়ব মহাপৃথিবী উৎপন্ন হইয়। এ জন- 
রাশিতে অবস্থিতি করে। তৎপরে এঁরূপে দীপ্যমান মহান্‌ তেজোরাশি 
সমুৎপন্ন হইয়া এ জলরাশিতেই অবস্থিত হয়। তৎপরে মহেষবরের সন্কর- 
যাত্রে ব্রন্ধাও ও ব্রহ্ধার উৎপত্তি হয়। ব্রন্ধ! অতিশয় জান-বৈরাগ্য ও 


১১৪ চতুর্থ লেক্চর। 


শ্বধ্যসম্পন্ন হইয়াই উৎপন্ন হন। তিনি মহেশ্বরকর্তৃক স্ষ্টিকার্য্যে নিযুক্ত 
হইয়! প্রাণীদিগের কর্মানুমারে ক্রমে সমস্ত জগতের স্থষ্টি করেন। 
প্রাণিগণ যেমন সমস্তদিন পরিশ্রম করিয়! রাত্রিতে বিশ্রামলাভ 
করে, সেইরূপ জগতের স্থিতিকালে পুনঃপুনঃ ছুঃখাদিভোগে পরিক্রিষট 
প্রাণীদিগের কিয়ৎকাল বিশ্রামের জন্ত অর্থাৎ ছুঃখাদিভোগের উপশমনের 
জন্য মহেশ্বরের সঞ্জিহীর্ঝ। অন্থুলারে প্রলয়ের আবির্ভাব হয়। এইজন্য 
পুরাণাদিতে স্থষ্টি ও প্রলয় দিন ও রাত্রিরূুপে বণিত হইয়াছে । দেখিতে 
পাওয়া যায় যে, ঘটাদি পাথিব বন্ত চূর্ণীকৃত হয়, পব্বতদকলও পার্থিব, 
অতএব তাহারাও একসময় চুর্ণীকৃত হইবে । জলাশয়মকল শুষ্ক হয়, 
সমুদ্রও জলাশয়বিশেষ, অতএব সমুদ্রও শুফ হইবে। প্রদীপ তৈজন, উহ! 
এ+ নিবিয়! যায়, ক্ধ্যও তৈজন, অতএব হূর্য্যও নিবিয়! যাইবে-_ইত্যাদিরূপে 
উদয়নাচাধ্য, এবং প্রকারীস্তরে গঙ্গেশোপাধ্যায় প্রলয়ের সাধক বহু- 
প্রকার অনুমান প্রদর্শন করিয়াছেন । 
€েণাদের অভিমত ডব্যপদীর্ঘসন্বন্ধে কিছু বলিবার আছে। রাসায়নিক 
পপ্ডিতগণ জড়পদার্থ বা ভূতসকল প্রায় সত্তর প্রকারে বিভক্ত 
করিয়াছেন। কণাদ ও গোতমের মতে ভূতপদার্থ পাচটিমাত্র। সুতরাং 
পঞ্চতৃতের কথা শুনিয়া অনেকে হান্তমংবরণ করিতে পারেন না । অনেকে 
কণাদ ও গোতমের পঞ্চভৃত ভূতের গল্প বলিয়। উপহাস করিয়া থাকেন। 
কিন্তু এ বিষয়ে একটি কথা বিবেচনা করা উচিত। রসায়ন প্রক্রিয়া 
অনুপারে যে সকল পদার্থের বিশ্লেষণ হয় না, রাঁদায়নিক' পণ্ডিতের] সেই 
মকল পদার্থকে মূলপদার্থ বা ভূত সংজ্ঞা .দিয়৷ তাহাদিগকেই সত্তর 
প্রকারে বিভক্ত করিয়াছেন। উহা! বাসায়নিক-ভূত-রূপে পরিগণিত হউক্‌, 
তদ্ধিষয়ে কিছু বক্তব্য নাই । কণাদ ও গোতম জগনিম্মীণের এবং জাগতিক 
ব্যবহারের উপযোগী জড়পদার্থসকল পাঁচ শ্রেণীতে বিভক্ত করির। 
তাহাদের ভূতগংস্তা! দিয়াছেন । ইহাতে বিরোধের বা উপহাসের কোন 
কথাই হইতে পারে না। রদায়নশান্ত্রে ভূতশব্ধের অর্থ অবিশ্লেষণীয়, 
কিন্ত কণাদ ও গোতমের মতে ভৃতশবের অর্থ অন্তরূপ। তাহা পূর্বে 
প্রদর্শিত হইয়াছে ৰ কণাদ ও গোতমের বিভাগ প্রাকৃতিক ও ব্যাবহারিক। 
গ্রস্থকর্তাদের ইচ্ছান্থমারে বিভাগ্গের প্রকারভেদ বিচিত্র নহে। প্রাদান 


বৈশেষিকদর্শন | ১১৫ 


কি উপাদানে নির্মিত হয়, এ প্রশ্নের উত্তরে রাসায়নিক পদা্থগুলির 
উল্লেখ করিলে চলিবে না। ইট, চুন, শুরকী ইত্যাদির উল্লেখ করিতে 
হইবে। সুতরাং পদার্থের গ্রাকৃতিক ও ব্যাবহারিক বিভাগ আবশ্তক। 
দর্শনশান্ত্রে তাহাই প্রদর্শিত হইয়াছে। অন্সিজন্‌ (0%0860 ) ও 
হাইড্রোজনের (7010০) ) রাাযনিক সংযোগে প্রস্তত করিতে পার! 
যায় বণিয়া জলের বস্তন্থে সন্দেহ হইতে পারে না। প্রদীপের আলোক 
ত্রিকোণ কাচযন্ত্রবিশেষে পরিচালিত করিলে নানা বর্ণ বা রঙ দৃষ্ট হয়, 
উহা প্রদীপালোকের মৌগিক রঙ্‌ হইতে পারে, তাই বলিয় প্রদীপ কোন 
পদার্থ নহে, এ কথা বলা যায় না। মুদকঙ্গারদ্বারা কৃত্রিম হীরক প্রস্তুত হয় 
বলিয়া হীরককে মুদঙ্গার বলা সঙ্গত হইবে না। | 

সত্য বটে, জাগতিক বস্তমাত্রই ক্ষিতি, অপ্‌, তেজ ও বাধু, এই ভূত- 
চতুষ্টয়ের কার্ধ্য, কণাদ ও গোতমের মতে আকাশ কোন দ্রব্যের 
আরম্তক নহে। কিন্তু আকাশ বিভু বা সর্ধগত। জাগতিক কোন 
পদা্থই আকাশসম্পর্কশূন্ত নহে, আকাশের সহিত ওতপ্রোতভাবে 
সন্বদ্ধ। সুতরাং জাগতিক পদার্থ নির্বচন করিবার সময় আকাশ উপে- 
ক্ষিত হইতে পারে না। আরও বলা যাইতে পারে যে, কণাদাদিমতে 
আকাশ শব্দের আশ্রয়। আকাশ ভিন্ন শব্দ হইতে পারে না, সুতরাং 
জগতে আকাশের উপযোগিত। অবর্ণনীর়। ক্ষিত্যাদি পঞ্চতৃতের অতি- 
রিক্ত জড়পদার্থ কেহ প্রদর্শন করিতে পারিবেন কি না, বলিতে পারি 
না। রাদায়নিক পণ্তিতেরা রসায়নপ্রক্রিয়া অনুসারে অবিশ্লেষণীয় যে 
সপ্ততিএরকার ভূতের উল্লেখ করিয়াছেন, কে বলিতে পারে যে, ইদা- 
নীস্তন সংখ্যাবৃদ্ধির ভ্ায় কালে সংখ্যাহাম হইয়া তাহা পঞ্চভুতে 
পর্ধ্যবসিত হইবে না। তাহা না হইলেও রসায়নশান্ত্রে তৃত বা অবি- 
ভাজা পদার্থ যতপ্রকার হউক না কেন, উহার কণাদ ও গোতমের 
অভিপ্রেত পঞ্চভৃতেরই অন্তর্গত, পঞ্চভৃত অপেক্ষা অতিরিক্ত নহে। 
রসাঁয়নশান্ত্রের মতে রঙ্গ, রজত, স্বর্ণ, তা ও কান্ত প্রভৃতি পৃথক্‌ 
পৃথক্‌ ভূত। কিন্তু কণাদমতে উহার পঞ্চভৃতের সীমা অতিক্রম করিতে 
পারে না। ব্যাথ্যাকর্তাদের ক্রতভেদে তৎসমুদায় ক্ষিতি বা তেজ পদার্থের 
অন্তর্গত । রাঙ্, সীমা, লৌহ, রজত, স্ুবর্ণকে কণাদ এক শ্রেণীর 


১১৬ চতুর্থ লেক্চর। 


অন্তর্নিবি্ট করিয়াছেন। অক্সিজন্‌ ও হাইড্রৌজন্‌ রসায়নশাঙ্ের মতে 
পৃথক্‌ পৃথক ভূত হইলেও কণাদমতে উভয়ই বাযুপদার্থের অন্তর্গত। 
বৈশেষিকাদিমতে জীবাত্বা ও পরমাত্মা বা ঈশ্বর সম্পূর্ণ ভিন্ন পদার্থ 
হইলেও উভয়েরই জ্ঞান বা চেতনা আছে। কোন কোন নৈয়ায়িক 
জ্ঞানবত্বরূপ উভয়সাধারণ ধর্ম অবলম্বন করিয়া উভয়কে অর্থাৎ জীবাত্মা 
ও পরমাজ্মাকে এক শ্রেণীর অন্তর্গত করিয়াছেন। ফলতঃ পদার্থগুলির 
সত্যাসত্যতাবিষয়েই আলোচনা করা কর্তবা। পদার্থের বিভাগ বা 
শ্রেণীভেদ পুরুষের সম্পূর্ণ ইচ্ছাধীন। ধাহার যেরূপ ইচ্ছা, তিনি সেই- 
রূপ বিভাগ করিতে পারেন, তাহাতে কিছুই বাঁলবার নাই। অতএব 
সংখ্যাবৈষম্য শুনিয়াই উপহাস করা সঙ্গত নহে । তত্বপর্য)ালোচনা 
করিয়া বিবৈচনাপূর্বক কোনরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াই প্রেক্ষা- 
পুর্বকারীর কর্ত্য। 

আর এক কথা। যে পরিদৃশ্ঠমান পৃথিবীতে আমরা বসবাস করি, 
যাহা দেশ ও মহাদেশে বিভক্ত, তাহাই পৃথিবী বা ক্ষিতি শব্দের অর্থ; 
আমাদের স্নানপানাদির সাধনভূত কূপ, তড়াগ ও নদী-নদাদি-গত জলই 
অপ্শবের অর্থ এবং আলোক ও পাকাদির সম্পাদক ্ৃর্য্য ও অগ্নিই 
তেজঃশবের অর্থ, এইরূপ বুঝিলে ভূল বুঝা হইবে। কণাদ ক্ষিত্যাদির 
ষে লক্ষণ দিয়াছেন, তদনুসারে ক্ষিত্যাদিশবের অর্থ বুঝাইলে কোনও 
বিরোধ বাঁ অন্ুপপত্তি থাকে না। বৈজ্ঞানিক প্ডিতেরা জড়বর্গকে 
অবস্থানুনারে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছেন-_সলিড্‌ (90110), 
লিকুইভ্‌ (14051) ও গ্যান্‌ (09$)1 এততিনন ইথর্-( 000)67)- 
নামেও এক শ্রেণীর পদার্থ অঙ্গীকৃত হইয়াছে । এনজির (12061 ) 
অস্তিত্ব অবিসংবাদিত। তাহ হইলে বিজ্ঞানশাস্ত্রের মতেও গ্রকারা- 
স্তরে গদার্থসকল পাঁচ শ্রেণীতেই বিভক্ত হইতেছে । কণাক্ত্ুর পঞ্চভূতের 
সহিত তাহার কতদূর সামপ্রস্ত বা বিরোধ আছে, সংক্ষেপে তাহার 
আলোচনা কর! মন্দ নহে। বিজ্ঞানশান্ত্রে 'সলিড্*পদার্থের মোটামুটি 
লক্ষণ এই যে; উহা নিরেট, কঠিন, ঘন, দৃঢ় ও সংহত। কণাদের ক্ষিতি 
ও বিজ্ঞানের সলিড এক পদার্থ হইতেছে নাকি? কঠিন ম্পর্শক্ষিতিভিন্ন 
অপর পদার্থের ধর্ম নহে। ইহা। বৈশেষিকদিগের অবিসংবাদী সিদ্ধান্ত । 





বৈশেষিকদর্শন | ১১৭ 


অধিকন্ত, পুষ্পা্দিরূপ কোন কোন ক্ষিতির সুকুমার, স্পর্শ ও তাহারা 
স্বীকার করেন। সাধারণতঃ ক্ষিতিপদার্থ ঘন হইলেও কোন কোন পার্থিব- 
পদার্থ অগ্রিবংযোগে সাময়িক তরলতা ঝ1 দ্রংত্ব প্রাপ্ত হইয়া থাকে । 
বৈজ্ঞানিক লিকুইড্‌ চলনশীল, তরল ও দ্রব। কণাদের অপ্পদার্থও 
এরূপ। বৈজ্ঞানিক এনা্ির অন্যতম ধর্ম প্রকাশ ও তাপ। কণাদ্দের 
তেজঃপদার্থের ধর্ম ও প্রকাশ ও উম্মুস্পর্শ বা তাঁপ। বৈজ্ঞানিক গ্যাস্‌ 
কণাদের বায়ু ভিন্ন কিছুই নহে। কারণ, গ্যাস্‌ ও বায়ু উভয়ই তি্যগ্‌- 
গমনশীল। বৈজ্ঞানিক ইথর্শব্দের আভিধানিক অর্থ আকাশ, শৃন্ত, 
স্পন্দনশীল, নীরূপ ও সর্বব্যাপী । ইথর্‌ একমাত্র। কণার আকাশও 
নীরূপ, সর্বাপী ও একমাত্র। বৈজ্ঞানিক ইথর্‌ কণাদের আকাশপদার্থ 
কি না, তাহাও বিবেচ্য। সত্য বটে ষে, বিজ্ঞানশান্ত্রাথারে ইথর্‌ 
শবের অধিকরণ নহে, পৃথিব্যাদিই শব্দের অধিকরণ। মন্বাদিসংহিত! 
এবং বেদান্তাদিদর্শনে শব্দ পঞ্চভূতের ধর্ম বলিয়া অঙ্গীকৃত হইলেও, 
আকাশই শবের আকর, তাহাতে মতভেদ নাই । কণার্দ বলেন, শব 
একটি বিশেষ গুণ, পৃথিব্যাদদি যে সকল দ্রব্যের স্পর্শগুণ আছে, তাহার 
বিশেষ গুণ কারণ-গুণ-পূর্বক হইয়া থাকে । যেমন, তন্ততে যে রূপ 
থাকে, পটেরও সেই রূপ হয়। ঘটের রূপ ঠিক কপালের রূপের মত। 
কিন্তু বেণু বীণা-মুদঙ্গাদির শব তাহাদের অবয়বের শবের মত নহে, 
অন্তরূপ। শব বেণু-বীণাদির ধর্ম হইলে, রূপের ম্যায় তাহাও কারণ- 
গুণ-পূর্বক, স্থতরাং অবয়বশব্দের অগ্ুরূপ হইত। তাহা হয় না, এইজন্ 
শবের অধিকরণ মুদঙ্গাদি নহে। মুপঙ্গাদিতে অভিঘাত করিলে তৎ- 
গ্রদেশস্থ আকাশে শবের উৎপত্তি হয়। আকাশ সর্বব্যাপী। কঠিন 
কাষ্ঠের এক দিকে অভিঘাত করিলে অপর দিকে শব্ধ শুনা যায়। শবের 
পরিচালনবিষয়ে কাষ্ঠগরমাণুর সহায়তা থাকিতে পারে, কিন্তু তথায়ও 
আকাশের অসপ্ভাব নাই। সুতরাং শব্ধ কাষ্ঠাদির ধর্ম, আকাশের ধর্ম 
নহে, এ কথা ঠিক কি না, তাহা বলা যাইতে পারে না। ইথর্‌ ও আকাশে 
আরও একটু বৈলক্ষণা লক্ষিত হয়। 

.. বৈজ্ঞানিকমতে ইথরের স্পন্দন আছে। বৈশেষিকমতে আকাঁশে 
কোনও ক্রিয়া নাই। কিন্তু ব্যাখ্যাকারদিগের মত ছাড়িয়া দিলে 


১১৮ চতুর্থ লেকৃচর। 


স্ত্রকারের মতে আকাশে গতিক্রিয়া না থাকিলেও স্পন্দনমাত্র 
থাকিতে পারে কিনা, তাহা! মনীষীদিগের চিন্তয়িতব্য বিষয় বটে। 
কেন না, স্ত্রকার দ্রব্যপদার্থের মধ্যে আকাশের পরিগণন1 করিয়াছেন, 
অথচ দ্রব্যের সাধারণ লক্ষণ ক্রিয়া, ইহ ম্পষ্টভাষায় বলিয়াছেন। পঞ্চ- 
ভূতের অতিরিক্ত কাল ও দিক্‌, এই ছুইটি জড়পদার্থও কণাদ স্বীকার 
করিয়াছেন। ইদানীন্তনীয় বিজ্ঞানশান্ত্রেও তাহার যথেষ্ট আলোচন৷ 
দেখিতে পাওয়া যায় (১)। বর্তমান যুগে বিজ্ঞানের যথেষ্ট উন্নতি হইয়াছে 
বটে, কিন্তু বিজ্ঞানশাস্ত্রের উন্নতির চরমমীমায় উপনীত হইবার এখনও 
অনেক বিলম্ব আছে। ইহ] অবিসংবাদী সত্য। কে বলিতে পারে 
যে, কালে শবের আকাশধর্মত্ব বৈজ্ঞানিক দিদ্ধান্ত বলিয়া পরিগৃহাত 
হইবে না? বিজ্ঞানশান্ত্ের কার্ধ্যক্ষেত্র ব্যাবহারিক ও পরিদৃণ্তমান বস্তব- 
সকলে সীমাবদ্ধ। অতীন্দ্রিয় বিষয়ে বিজ্ঞানশান্ত্র অন্পই অগ্রপর হইয়াছে। 
স্থতরাং বিজ্ঞানশান্ত্রসম্মত নহে বলিয়া কোনও অতীন্দ্রি় বিষয়ে আপত্তি 
করা সঙ্গত হয় না।) 

(আরও একটি কথা, চিরন্তন-সিদ্ধান্ত-রূপে না হউক্‌, স্ুধীগণের বিবে- 
চনার জন্য বলা যাইতে পারে। ব্যাখ্যকারগণ যেরূপ ব্যাখ্যা করিয়াছেন, 
তদনুগারে কাল ও দিক্‌ পঞ্চতৃতের অতিরিক্ত বলিয়াই সিদ্ধান্তিত 
হইয়াছে । কণাদ কাল ও দিক্‌ পদার্থ মানিয়াছেন, তাহা কেন 
মানিতে হইবে, তাহার কাঁরণও প্রদর্শন করিয়াছেন সত্য, কিন্তু কাল ও 
দিক পদার্থ গ্ররৃতপক্ষে পঞ্চভূতের অতিরিক্ত বলিয়৷ কণাদের অভি- 
প্রেত কি না, দে বিষয়ে সন্দেহ করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। কণাদ 
প্রথমতঃ পৃথিবী, অপ্‌, তেজ ও বাধুর লক্ষণ নির্দেশ ও অপ্রত্যক্ষ বাযু- 
পদার্থের সাধন এবং তাহার নানাত্ব সংস্থাপনপূর্বক শব্দগুণের অধি- 
করণরূপে আকাশের সাধন বা অন্মান করিয়াছেন । এবং আকাশ 


(১) 02079509501 1366603501০ 0797 1816 05100, 1৮ 00), £৪ ৮982 
(819. 80709, ) 
[0)9 1196810)5510 01 1081১019009,-- 1017 917900760, ঢা, 8002500, ০1, [. 
9০০৮ [. (1898). 
01৮ 11200]5 115৮১৪ 820. 119100) 0৮ 29720. নিউটন্‌ (৩৮০৪) এই 
উভয়কেই সর্বজনবিদিত (0101109 1.084851004) বলিয়াছেন । ্‌ 


বৈশেষিকদর্শন | ১১৯ 


এক, নানা নহে, ইহা উপপাদন করিয়াছেন। বাধুর লক্ষণ স্পর্শবিশেষ 
বাযুনাধন প্রপঙ্গেই পরীক্ষত হইয়াছে । অতঃপর পুথিবী, অপ্‌ ও 
তেজের লক্ষণ গন্ধাদির পরীক্ষা করিয়া কাল ও তাহার একত্ব 
এবং দিক ও তাহার একত্ব: সংস্থাপনপূর্বক এক পদার্থেরও কার্য্য- 
ভেদে ওপাধিক ছেদ হইয়া থাকে, ইহা বলিয়া, দ্দিকৃপদার্থ এক 
হইলেও উপাধিভেদে পুর্বদক্ষিণাদি-ব্যবহার-ভেদদ৯ সমর্থন করিয়া, 
আকাশের বিশেষগুণ শবের পরীক্ষা করিয়াছেন। তৎপরে আত্মা ও 
মনের পরীক্ষা করা হইয়াছে । এখন বিবেচ্য এই যে, দিকৃপদার্থের 
ন্যায় কালপদার্থেরও ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমানাদি ভেদে ওপাধিক-নানাত্ব- 
ব্যবহার প্রছুরপরিমাণে আছে, স্ত্রকারও ভূতভবিষ্বদাদির ব্যবহার 
করিয়াছেন। আকাঁশেরও ঘটাকাশ, মঠাকাশ ইত্যাদিরূপে ওপাধিক 
ভেদের অভাব নাই। এমত অবস্থায় ক্ুত্রকার কেবল দিকৃপদার্থেরই 
ওপাধিক ভেদ কেন প্রদর্শন করিলেন, কাল ও আকাশের ওপাধিক 
ভেদ কেন প্রদর্শন করিলেন না এই প্রশ্ন স্বতই উপস্থিত হয়। কেবল 
তাহাই নহে, কাল ও আকাশের ওপাধিক ভেদ প্রদর্শন না করাতে 
সত্রকারের নানতাঁও অপরিহীর্ধ্য হইয়া উঠে। এতদ্বারা বুঝ! যাইতে পারে 
যে, স্বত্রকারের অভিপ্রায় স্বতন্্। তাহার মতে আকাশ, কাল ও দিকৃ 
এক পদার্থ, কার্ধ্যভেদে নামভেদ মাত্র। যেমন একই ব্যক্তি গ্রুতি-... 
যৌগিভেদে পিতা, পুক্র, ভ্রাতা, বন্ধু, আচার্য্য প্রভৃতি নানা আখ্যায় 
আখ্যাত হয়, সেইরূপ একই পদার্থ কার্ধ্যভেদে আকাশ, কাল ও দিক্‌ 
নামে অভিহিত হয়। প্রকৃতপক্ষে কাল ও দিক্‌--মাকাঁশ হইতে স্বতত্ 
পদার্থ নহে। হ্যত্রকার আকাশের অনুমান করিয়| পৃথিব্যাদির লক্ষণের 
বা বিশেষ বিশেষ গুণের পরীক্ষ। করিয়া, “ত আকাশে ন বি্যান্তে” এই স্থত্র- 
দ্বারা দেখাইলেন যে, উহবীরা আকাশগত নহে । পৃথিব্যাদির লক্ষণ আকাশে 
নাই, অর্থাৎ আকাশ পৃথিব্যাদির অন্তর্গত হইতে পারে না, উহা 
পৃথিব্যা্দি হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র পদার্থ। পরে আকাশের প্রকারভেদ- 
স্বরূপ কাঁল ও দিক্‌ পদার্থ এবং তাহাদের একত্ব নিরূপণ করিয়া আঁকাশ- 
নিরূপণের পূর্ণতা সম্পাদনপূর্বক কার্য্যভেদে এক পদার্থের নানাত্ব অঙ্গীকার 
করিয়া উদাহুরণন্বরূপ দিকৃপদার্ধের কাধ্যভেদে নানাত্ব দেখাইয়াছেন। | 


১২১ চতুর্থ লেক্চর। 


এইরূপে আকাঁশপদার্থের বিষয়ে বক্তবা শেষ করিয়া আক!শের 
বিশেষগ্তণ শর্ষের পরীক্ষ! করিয়াছেন। কেন না, ধর্মি-নিরপণের পরেই 
ধর্ম-নিরূপণ সর্বথা সমীচীন । শৃত্রকারের এইরূপ অভিপ্রায় না হইলে 
পঞ্চভৃতনিরূপণের পর পৃথিব্যাদি ভূতচতুষ্টায়ের গুণের পরীক্ষার অনস্তর 
কাল ও দিক্‌ পদার্থের নিরূপণ করিয়া! আকাশগুণ শব্দের পরীক্ষা কর! 
অনন্বদ্ধ এবং অসঙ্গত হইয়া পড়ে। অর্থাৎ পঞ্চভৃতের গুণপরীক্ষার 
মধ্যে কাল ও দিক্‌ পদার্থের নিরূপণ কোনমতেই সঙ্গত হইতে পারে ন। 

কুত্রকারের উক্তরূপ অভিপ্রায় বর্ণনা না করিলে প্রকারান্তরে স্ত্র- 
কারের অনম্বদ্ধভাষিত্ব স্বীকার করিতে হয়। তাহা কতদূর সঙ্গত, 
স্থধীগণ তাহার বিচার করিবেন। কাঁল ও দিক্‌ যে বস্তরগতা। আকাশ 
হইতে অতিরিক্ত নহে-_স্াত্রকারের এইরূপ অভিপ্রায় বর্ণনা করিবার 
আরও বিশিষ্ট হেতু আছে। তাহা এই । শব্দের অধিকরণ বা আশ্রয়- 
রূপে আকাশের অনুমান কর! হইয়াছে তাহার প্রণালী এইরপ প্রদর্শিত 
হুইয়াছে। “কারণগুণপূর্বকঃ কার্ধ্যগুণো দৃষ্ট:। কাধ্যান্তরা প্রাহুর্তাবাচ্চ 
শব? স্পর্শবভামগ্ডণঃ।” এই ছুইটি সুত্র দ্বারা শব্দ-_পৃথিবী, অপ, তেজ 
ও বাধুর গুণ হইতে পারে না, ইহা সমর্থন করা হইয়াছে । কেন না, 
কা্যভূত-পৃথিব্যাদির গুণ তাহার কারণ-গুণ-পূর্বক হইয়া থাকে, ইহা 
দেখা গিয়াছে। বীণা-বেধু ও স্দঙ্গাদির শব্দ কারণ-গ্ণ-পূর্বক নহে। কেন 
না, বীণাদির কারণের শ্রা ও বীণাদির শন্দ একরূপ হয় না। বীণাদির 
শব কারণ-গুণ-পূর্বক হইলে রূপাপির. ন্যায় তারুমন্দ-ভাবও তাহাতে 
হইতে পারে না। এই ছুইঃসথক্ দ্বারা শব পৃথিব্যাদির গুণ নহে, ইহা স্থির 
করিয়া, “পরন্ত্র নমবায়াৎ প্রত্যক্ষত্বাচ্চ 'নায্বগুণো ন মনোগুণ:” এই হ্ৃত্র- 
দ্বার শব্দ আত্মা ব| মনের গুণ নহে, ইহা সমর্থন করা হুইয়াছে। কেন না, 
আত্মার গুণ জ্ঞাননুখাদি আত্মপমবেত, শব্দ আত্মসমবেত নহে। সুতরাং 
শব্দ আত্মার গুণ হইতে পারে না। শব আত্মমমবেত হইলে “অহং জানামি, 
াহং সুখী অর্থাৎ “আমি জানিতেছি, আমি স্থথী' ইত্যাদির স্াঁয় “অহং 
শবাবান্‌ অর্থাৎ আমি শব্ষযুক্ত__আমাতে শব হইতেছে+, এইরূপ প্রতীতি 
হুইত। তাহাহ্য় না। অতএব শব্দ আত্মার গুণ নয়। শব মনেরও গুণ নয়। 
কারণ শবের প্রত্যক্ষ হয়। মনের গু প্রত্যক্ষ হইতে পারে না। কেন না, 


বৈশেধিকদর্শন। ১২১ 


মন অণু। এরই সৃত্রত্রয়ের দ্বারা শব্ব__পৃথিবী, অপৃ, তেজ, বায়ু, আত্মা 
ও মনের গুণ নহে, ইহা! প্রতিপন্ন করিয়াই স্বত্রকার বলিতেছেন যে, 
“পরিশেযাল্লিঙ্গমাকাশস্ত |” অর্থাৎ শব যখন পুথিবী, অপ্‌, তেজ, বায়ু, 
আত্ম ও মনের গুণ হইতে পারিতেছে না, তখন পারিশেষা প্রযুক্তই উহ 
আকাশের গুণ হইতেছে। এতদ্বারা বিলক্ষণ বুঝ! যাইতেছে যে, কাল ও 
দিক আকাশ হইতে অতিরিক্ত নহে। তাহা হইলে শব্দ কেন কাল ও 
দিকের গুণ হইতে পারে না, তাহা বুঝাইয়৷ দেওয়া স্থত্রকারের অবস্থ 
কর্তব্য ছিল। তাহা না করিয়া “পরিশেধাল্লিঙ্গমাকা শন্ত”-_-এ কথা বল! 
নিতান্তই অনঙ্গত এবং বালোন্মত্তাদি-বাক্যের স্তায় অসন্বদ্ধ হইয়া! পড়ে। 
কাল ও দ্রিকু আকাশের অতিরিক্ত নহে, ইহ কল্পনামাত্র বিবেচন। 
করিয়! উপেক্ষা করা সঙ্গত হইবে না। কারণ, সাংখ্যাচার্ধাদিগের মতেও 
কাল ও দিক আকাশের অতিরিক্ত নহে। “দ্িকৃকালাবাকাশাদিত্যঃ”__ 
এই সাংখ্যঙ্ুল্রই তাহার উত্কষ্ট প্রমাণ। কোন অসাধারণ নৈয়ায়িক 
আরও একপদ অগ্রমর হইয়াছেন। তিনি বলেন, আকাশও ঈশ্বর হইতে 
অতিরিক্ত নহে । সে যাহ! হউক, আত্মা ও মন পৃথক্‌ পৃথক্‌ পদার্থ কি না, 
তাহ! যথাস্থানে আলোচিত হইবে) 





পঞ্চম লেকৃচর ৷ 


--শ্ি*তিিশাী 


বৈশেষিকদর্শন। 


যে পদার্থে গুত্বঙ্গীতি আছে, তাহার নাম গুণ। সংযোগ ও বিভাগ 
এতছুভয়ে সমবেত সত্বাভিন্ন জাতির নাম গুণত্ব। দ্রব্যত্ব-কর্শতব- 
পৃথিবীত্বাদি জাতি সংযোগ-বিভাগে সমবেত নহে। সংযোগত্ব ও বিভাগত্ 
যথাক্রমে সংযোগ ও বিভাগে সমবেত হইলেও, সংযোগ-বিভাগ এতদুডয়ে 
সমবেত নহে। সত্তা-জাতি, সংযোগ-বিভাগ উভয়ে সমবেত হইলেও, সত্তা" 
ভিন্ন নহে । এইজন্য উহাদিগকে গুণত্ব বল! যাইতে পারে না। গুণ 
চতুর্বিংশতিপ্রকার--রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ, সংখ্যা, পরিমাণ, 
পৃথকৃত্ব, সংযোগ, বিভাগ, পরত্ব, অপরত্ব, বুদ্ধি, সখ, দুঃখ, ইচ্ছা, দ্বেষ, 
যত্্, গুরুত্ব, দ্রবত্ব, স্নেহ, সংস্কার, ধর্ম ও অধর্দ। রূপ শুক্ু-নীল-গীতাঁদি- 
তেদে অনেকপ্রকার। পৃথিবীতে নানাগ্রকার রূপ আছে। জলে ও 
তেজে কিন্তু কেবল শুরু রূপ। জলের রূপ ভাস্বর অর্থাৎ পর প্রকাশক 
নহে। তেজের রূপ ভাম্বর অর্থাৎ পরপ্রকাশক। কালিন্ীজলের 
নীলতা, বহর লৌহিত্য আশ্রয়ৌপাধিক | কালিন্দীজল নীলবর্ণ দেখায় 
বটে, কিন্তু এ জল উর্ধে বিক্ষিপ্ত হইলে তাহার ধবলতা সুস্পষ্ট উপলব্ধ 
হয়। রস মধুর-অন্-ভিক্তাদিতেদে অনেক প্রকার। পৃথিবীতে নানাপ্রকার 
রম আছে। জলে কেবল মধুর রম। জন্বীররসাদির অল্লতা, নিষ্বরসাদির 
তিক্তত| আশ্রয়ৌপাধিক। গন্ধ স্থরভি-অন্থরভি-ভেদে দুইপ্রকার। গন্ধ 
কেবল পৃথিবীবৃত্তি। স্পর্শ তিনগ্রকার--উষ্, শীত ও অনুষ্ণাণীত। তেজঃ- 
পদার্থের স্বাভাবিক স্পর্শ উষ্ণ । জলের স্বাভাবিক স্পর্শ শীতল। বায়ুর 
স্বাভাবিক স্পর্শ অনুষণণীত। চন্তর ুর্ধ্যতেজে তেজস্বী। চন্ত্রমগল জলবহুল, 
স্থতরাং জলের শীতম্পর্শদ্বারাতে্ঃস্পর্শের উষ্ণতা অভিভূত হয় বলিয়া 
চন্্রশ্মির উষ্ণতা! অদ্ভূত হয় না। অধ্ধি ও কূর্য/কিরণসম্পর্কে জলম্পর্শের 





বৈশেষিকদর্শন | ১২৩ 


উষ্ণতা এবং ত্র্ূপে বাষুষ্পর্শের উষ্ণতা ও হিমাঁনীসম্পর্কে শীতলতা 
অনুভূত হইলেও, জলের স্বাভাবিক স্পর্শ শীতল ও বাধুর স্বাভাবিক স্পর্শ 
অনুষ্ণাশীত। পৃথিবীর স্পর্শ কঠিন ও স্থকুমার ভেদে দ্বিবিধ। কঠিন বা 
দৃঢ় বস্তর স্পর্শের নাম কঠিন স্পর্শ, কোমলবস্তর স্পর্শের নাম সুকুমার 
স্গর্শ। এতস্তিন্ন পাকজ স্পর্শও পৃথিবীর আছে। অগ্নিপক হইবার পূর্বে 
ঘটশরাবাদির যাদৃশ স্পর্শ থাকে, অগ্রিপক হইবার পরে তাদৃশস্পর্শ থাকে 
না, অন্তরূপম্পর্শ হয়। ইহারই নাম পাঁকজ ম্পর্শ। শব্দ ছুইপ্রকার-_. 
ধ্বনি ও বর্ণ। মৃদঙগাদি-শব্দের নাম ধ্বনি। কণ্ঠ ও তালু প্রভৃতি প্রদেশে 
আত্যন্তরীণ বাষুর অভিঘাতে যে শব্দ হয়, তাহার নাম বর্ণ। একত্ব 
হইতে পরাদ্ধ পর্য্যন্ত সংখ্যা অনেকপ্রকার। তন্মধ্যে দ্বিত্বাদি-সংখ্যা 
অপেক্ষাবুদ্ধিজন্ত। অপেক্ষাবুদ্ধির নাশ হইলেই দ্বিত্বাদির বিনাশ হয়। 
অনেক-একত্ব-বিষয়ক বুদ্ধির নাম অপেক্ষাবুদ্ধি। পরিমাণ চারিপ্রকার-_ 
অণু, মহৎ, হুস্ব, দীর্ঘ। শঙ্করমিশ্রের মতে প্রত্যেক বস্ততে দ্বিবিধ 
পরিমাণ আছে। যাহাতে অণুত্বপরিমাণ আছে, তাহাতে হস্বত্বপরিমাণও 
আছে। এইরূপ মহত্ব ও দীর্ঘত্ব সমদেশবর্তী। পরমাণু ও মনঃপদার্থে 
পরম অণুত্ব অর্থাৎ অণুপরিমাণের চরম উৎকর্ষ, এবং আকাশ, কাল, 
দিক্‌ ও আত্মাতে মহত্বের চরমৌত্কর্ষ ব পরম মহত্ব আছে। যে গুণ 
অনুনারে ঘট হইতে পট পৃথক্‌, পৃথিবী হইতে জল পৃথক্‌ ইত্যাদি প্রতীতি 
হয়, তাহার নাম পৃথক্ত্ব। একাধিক যে সকল বস্তু পরম্পর-্সহ্বন্ব-শূহ্য 
হইয়াও থাকে, তাহাদের নন্বন্ধের নাম সংযোগ। কাধ্য কারণসন্বন্ধশূস্ত 
হইয়া থাকে না, এইজন্য কার্য-কারণের সম্বন্ধ সংযোগ নহে, উহা! 
সমবায়। স'যোগ তিনগ্রকীর--অন্ততর-কর্ম্-জন্য, উতয়-কর্মী-জন্য, ও 

ংযোগ জন্ত । যে ছুই বস্তর সংযোগ হত্ব, তাহাদের মধ্যে একমাত্রের 
ক্রিয়াজন্য যে সংযোগ, তাহাই অন্ততর-কর্মজন্ত। পর্বতে কোন পক্ষী 
বসিলে পর্বত ও পক্ষীর যে সংযোগ হইল, তাহা কেবল পক্ষীর ক্রিয়া- 
জন্য । যুদ্ধকালে মল্লদবয়্ ও মেষয়ের যে সংযোগ হয়, তাহ! উভয়-ক্রিয়া- 
জন্য। অঙ্গুলীর ক্রিয়াদারা অস্কুলীর সহিত বৃক্ষের সংযোগ হইলে, বৃক্ষ 
ও হস্তেরও সংযোগ হইয়াছে, সন্দেহ নাই। এই হস্ত-বৃক্ষ-দংঘোগ অন্গুপী- 
ৃক্ষ-সংযোগ-জন্ত। সংযোগের গ্রতিদন্দী কিন! প্রতিপক্ষ অর্থাৎ যে গুণ 


১২৪ পঞ্চম লেক্চর । 


উৎপন্ন হইলে সংযোগ বিনষ্ট হয়, তাহার নাম বিভাগ। বিভাগও 
সংযোগের ভ্তায় তিনগ্রকার। পর্বত হইতে পক্গীর বিভাগ পক্ষীর কর্ম 
জন্য । মল্লদ্ধয় ও মেষদ্বয়ের বিভাগ উভয়-কর্্ম-জন্য | বৃক্ষ হইতে হস্তের 
বিভাগ বৃক্ষ হইতে অন্গুলীর বিভাগজন্ত। পরত্ব এবং অপরত্ব কালিক 
ও দৈশিক ভেদে দ্বিবিধ। কালিক পরত্ব ও অপরত্ব জ্ঠ্ঠত্ব-ও-ক নিষ্ঠত্ব- 
রূপ। দূরত্ব ও অস্তিকত্বই দৈশিক গরত্ব ও অপরত্ব। 

বুদ্ধি কিনা জ্ঞান। জ্ঞান অনেকরূপে বিতক্ত। প্রথমতঃ নির্ব্বিকল্পনক 
ও সবিকল্পক ভেদে জ্ঞান দ্বিবিধ। যে জ্ঞানে বিশেষ্বিশেষণ- ভাব 
ভানমান হয় না, যাহাতে কেবল বস্তর স্বরূপমাত্র ভাসমান হয়, তাহা 
নির্বিকল্পক। নির্বিকল্পক জ্ঞান অতীন্দ্রিয়, উহ্‌! প্রত্যক্ষ নহে, অনুমেয় 
মাত্র। যে জ্ঞানে বিশেষ্য-বিশেষণভাব ভান্মান হয়, তাহার নাম 
সবিকল্পক। “অয়ং ঘট” এই প্রত্যক্ষ সবিকল্পক। কারণ, এই জ্ঞানে 
ঘট বিশেষ্যবূপে ও ঘটত্ব বিশেষণরূপে ভাঁদমান হইয়াছে । সবিকল্পক 
জ্ঞানের অপর নাম বিশিষ্ট জ্ঞান। বিকল্প কিন1 বিশেষ্য বিশেষণ-ভাবা 
কেন না, বিশেষরূপ কল্পনাই বিকল্প । এইটি বিশেষণ, এইটি বিশেষ্-_ 
ইহা বিশেষরূপ কল্পনা, সন্দেহ নাই । নির্ত্বিকল্নক জ্ঞানে ঈদৃশ বিশেষ 
রূপ কল্পনা নাই বলিয়াই উহা! নির্বিকল্পক, অর্থৎ বিকল্পশূন্য । নির্বি- 
কল্পক জ্ঞান অনুমান করিবার প্রণালী এইরূপ। বিশিষ্ট জ্ঞান বিশেষণ- 
জ্ঞানজন্য । নীল না! জানিলে নীলোৎপলের জ্ঞান হয় না। খড়গ ন! 
জানিলে খড়ণীর জ্ঞান হইতে পাবে না। সুতরাং ঘটত্ব-জ্ঞান না হইলে 
ঘটত্ব-বিশিষ্টের জ্ঞান হইতে পারে না। এইজন্য “অয়ং ঘট এইরূপ 
বিশিষ্ট জ্ঞান হইবার পূর্ব্বে বিশেষণীভূত-ঘটত্বের জ্ঞান হইয়াছে, ইহা! 
অনুমেয় । যে নির্বিকল্পক জ্ঞান ঘাঁত্বকে বিষয় করিয়াছে, সে জ্ঞান 
অবশ্য ঘটকেও বিষয় করিয়াছে । কেন না, ঘটত্ব ও ঘট ভয়েই বিষয় 
হইবার কারণ একরপ। ঘটত্ব ও ঘট এই উভয়, জ্ঞানের বিষয় 
হইলেও, তাহ! ন্বরূপেই বিষয় হইয়াছে, বিশেষ্ত-বিশেষণ-ভাবে নহে। 
এইভস্তই উহ! নির্ব্িল্পক। পূর্বে বিশেষণজ্ঞান নাঁ হইলে বিশিষ্ট- 
জ্ঞান বা বিশেম্ত-বিশেষণ-ভাবে জ্ঞান হইতে গারে ন1। ন্ৃতরাং নির্বি- 
কল্পক জ্ঞান বিশে্ব-বিশেষপ-ভাবে হইতে পারে না। এইজন্ত নির্বি- 


বৈশেধিকদর্শন | ১২৫ 


করক জ্ঞানের অভিলাঁপ হইতে পারে না, অর্থাৎ শব্ববারা এ জ্ঞানের 
আকার প্রকাশ করা যাঁয় না। কারণ, শব্দের দ্বারা যাহ! প্রকাশি 
হইবে, তাহা অবশ্য বিশেষ্য-বিশেষণ-ভাবাপন্ন হইবে । নির্বিকল্পক জ্ঞানের 
বিষয় বিশেষ্য-বিশেষণ-ভাবাপন্ন নহে, এইজন্য শব্দ্বারা প্রকাশিত 
হইতে পারে ন|। | 

অনুভূতি বা! অনুভব এবং স্থৃতি বা ম্মরণরূপেও জ্ঞান ছুইপ্রকার। 
অনুভূতি দ্বিবিধ_-প্রত্যক্ষ ও লৈঙ্গিক বা অনুমিত | প্রত্যক্ষ ছয় প্রকার-__ 
স্রাণজ, রান, চাক্ষুষ, স্পার্শন, শ্রাবণ ও মানস। সংস্কারজন্ত জ্ঞান. 
বিশেষের নাম স্থৃতি বা ম্মরণ। বিদ্ধা বা প্রমা ও অবিদ্তা বা অপ্রমা 
ভেদেও জ্ঞান দ্বিবিধ। যে বস্তরট বস্তুগত! যেরূপ, সেই রস্তর ঠিক 
সেইরূপে জ্ঞান বিষ্তা বা প্রমা। যে বন্ত যেরূপ, অন্যবূপে সেই বস্তর 
জ্ঞান অবিষ্ভা বাঁ অপ্রমা। অবিগ্ভা ছুইপ্রকার_-সংশয় ও বিপর্যযাস। 
সংশয় অনিশ্চয়াত্ক জ্ঞান, অর্থাৎ এক-ধর্মীতে বিরুদ্ধ নানাধর্মের 
জ্ঞানের নাম সংশয়। যেমন দূর হইতে স্থাগু অর্থাৎ শাখাদিশূন্য বৃক্ষ 
দর্শন করিলে 'ইহা স্থাণু কি পুরুষ'--এইরূপ যে অনিশ্চয়াত্মক জ্ঞান হয়, 
তাহাই সংশয়। কেন না, এক স্থাণুরূপ ধর্ীতে পরম্পরবিরুদ্ধ স্থাণুত্ব 
ও পুরুষত্বরূপ ধর্মদ্বয়ের জ্ঞান হইয়াছে। নিশ্চয়াত্মক ভ্রমের নাম বিপ- 
ধর্যা। যেমন দেহাদিতে আত্মবুদ্ধি, পিন্তদৌযহষ্ট ব্যক্তির শঙ্খে গীতবর্ণ 
বুদ্ধি, শুক্তিকাতে রজতবুদ্ধি, মরীচিকাতে জলবুদ্ধি ইত্যাদি । 

যে জ্ঞানের বিষয় বন্তগত্য। বিগ্কমান নাই, তাহাই মিথ্যাজ্ঞান বা 
অবিস্যা। স্বপ্রজ্ঞানও অবি্ভা। স্বপ্নকালেও জাগ্রদবস্থার হ্যায় বিষয়- 
সকলের অনুভব হয়। পরস্ত তখন ইন্দ্রিয়মকলের কার্যকারিতা! থাকে 
না, বিষয়েরও বিগ্যমানতা নাই। আুতরাং উহা! মিথ্যাজ্ঞান ব1 
অবিস্তা। পূর্ধান্থতবনধন্ত-সংস্কার-সহকারে স্বপ্নকালে বিষয়ের অনুভব 
হয়। কোন কোন আচার্যের মতে দ্বজ্ঞান পূর্ববান্ুভৃতের স্মরণ- 
মাত্র। শ্বপ্নে স্বশিরশ্ছেদনও দেখা যায় বটে, কিন্ত তাহার কোন 
পদ্দার্থই অননুভূত বল! যায় না। স্ব অর্থাৎ নিজেও অনুভূত, শিরও 
অনুভূত, ছেদনও অস্ভৃত, দোষাধীন পরম্পর-সন্বন্ধের প্রতিভান হয় 
মাত্র। কোন কোন স্বপ্র সংস্কারপটুতাজন্য। যেমন কোন বিষয় 


১২৬ পঞ্চম লেক্চর। 


আদরপূর্বক চিন্ত! করিয়া নিদ্রিত হইলে স্বপ্নে তাহা দেখিতে পাওয়া 
যায়। কোন কোন স্বপ্ন ধাতুটৈষম্জনিত। আকাশগমন, বন্থুন্ধরা- 
পর্যটন, ব্যাপ্বাদ্িভয় প্রভৃতি স্বপ্ন বাতদোষজন্ত । অগ্রিপ্রবেশ, ধিগ্দাহ, 
কনকপর্বত, বিছ্বাদ্বিষ্কুরণ প্রভৃতি স্বপ্ন পিত্তদোষজন্য । লমুদ্রসন্তরণ, 
নদীমজ্জন, বৃষ্টিপাত ও রজতপর্বতদর্শন প্রভৃতি শ্রেম্মদোষজন্ত । অর্থাৎ 
বাতপিত্তাদি-ধাতুদৌষে এ সকলের স্বপ্নান্ুভব হয়। তত্ঠিন্ন স্বপ্ন অনৃষ্টজন্য। 
তন্মধ্যে ধর্ষজন্ত স্বপ্ন শুভস্চক এবং অধর্মজন্ স্বপ্ন অশুভন্চক। 

সুখ-ছুঃখ-ইচ্ছা-দেষের ব্যাখ্যা অনাবশ্ঠক। উহা সকলেরই অন্ভব- 
সিদ্ধ। যত্ব তিনপ্রকার--প্রবৃত্তি, নিবৃত্তি ও জীবনযোনি | ইষ্টাধনতা- 
জ্ঞান, চিকীর্যা কিন কর্তব্যত্বরূপে ইচ্ছা অর্থাৎ “ইহা আমার কর্তব্য”এইরূপ 
ইচ্ছা, কৃতিসাধ্যত্বজ্ঞান ও উপাদদানপ্রত্যক্ষ, এইগুলি প্রবৃত্তির কারণ। ইন্ট- 
সাধনতাজ্ঞানের কারণতা' পূর্বেই সমর্থিত হইয়াছে । যাহা করিবার ইচ্ছা 
হয় না, তাহ করিবার জন্য কেহই প্রবৃত্ত হয় না। ইচ্ছা হইলেও যদি 
বিবেচন! হুয় যে, এ কার্য আমার ক্লৃতিসাধ্য নহে, অর্থাৎ এ কার্ধ্য নির্বাহ 
করা আমার সাধ্যাতীত, তাঁহ! হইলেও সেই কার্যে প্রবৃত্তি হয় না। 
অসাধ্য বিষয়ে প্রবৃত্তি হওয়। অসম্ভব। এ সমস্ত হইলেও যে উপাদানে 
কার্ধ্যসম্পাদন করিতে হইবে, সেই উপাদানের প্রত্যক্ষ না হইলে সে- 
কার্য্যসম্পদনে প্রবৃত্তি হইতে পারে না। মৃত্তিকার প্রত্যক্ষ না হইলে 
ঘটশরাবাদির নির্মাণে, তওুলের প্রত্যক্ষ না হইলে পাকে, কেহ প্রবৃত্ত 
হয় না, হইতে পারে না। নিবৃত্তির কারণ পূর্বে প্রদর্শিত হইয়াছে। 
শরীরে প্রাণবাঘুর সঞ্চরণ অর্থাৎ নিশ্বাস প্রশ্বাসাদি যে যত্বপ্রভাবে সম্পন্ন 
হয়, তাহার নাম জীবনযোনি যত্ব। 

গুরুত্ব পতনের কারণ। পৃথিবীর আকর্ষণশক্তিগ্রভাবে বস্ত পৃথিবীর 
অভিমুখে আকৃষ্ট হইলেও, গুরুত্ব বা গুরুত্বের পতনহেতুত্ব প্রত্যাখ্যাত 
হইতে পারে না। কেন না, বস্ত্র গুরুত্ব অনুসারে আকর্ষণশক্তির 
কার্ধ্কারিতার তারতম্য অস্বীকার করিবার উপায় নাই। পৃথিবীর 
আকর্ষণশক্তি এ দেশে অপরিজ্ঞাত ছিল নাঁ। অন্ততঃ ৭৫০ বৎসরের পূর্বে 
রচিত গ্রস্থে উহ! সিদ্ধপদার্থের স্তায় উল্লিখিত হইয়াছে দেখিতে পাওয়া 
যায়। সুতরাং তৎপুর্বেও উহ! সুুপরিজ্ঞাত ছিল, ইহা! অন্গমান কর! 


বৈশেষিকদর্শন | ১২৭ 


যাইতে পারে। গুরুবস্ত পৃথিবীকক আকৃষ্ট হয়, ইহা গ্রন্থকার 
স্পষ্টভাষায় বলিয়াছেন। শ্তন্দনের হেতু গুণবিশেষের নাম দ্রবত্ব। ভ্রবস্ত 
আছে বলিয়া! জল স্থিরভাঁবে থাকে না, গড়াইয়া পড়ে। স্নেহের পরিচয় 
পুর্বে প্রদত্ত হইয়াছে। সংস্কার ব্রিবিধ_বেগ, তাবন1 ও স্থিতিস্থাপক। 
ধনূর্যন্রপরিমুক্ত বাণ দুরস্থ লক্ষ্য বেধ করে। ধনু হইতে লক্ষ্য পর্য্যস্ত 
বাণের গতিক্রিয়া এক নহে । কারণ, বৈশেষিকমতে ক্রিয়া ক্ষণ- 
চতুষট়মাত্র থাকে । প্রথম ক্ষণে ক্রিয়ার উৎপত্তি, দ্বিতীয় ক্ষণে বিভাগ, 
তৃতীয় ক্ষণে পূর্বসংযোগনাশ, চতুর্থ ক্ষণে উত্তরদংযোগের উৎপত্তি, 
পঞ্চম ক্ষণে ক্রিয়ানাশ। উত্তরসংঘোগ ক্রিয়ার নাশক। অথচ ধন্ু 
হইতে লক্ষ্য পর্য্যন্ত বাণ পৌছাইতে লক্ষ্যের দূরত্ব, অন্থদারে বছক্ষণ 
আবশ্তক করে। বৈশেষিকাচার্যেরা বলেন যে, ধনুর নোদন বা 
নিপীড়নে বাণে গতিক্রিয়া জন্মে। সেই গতিক্রিয়া বেগাখ্য সংস্কার 
উৎপন্ন করে এবং বেগাখ্য সংস্কার বাণগত পর-পর গতিক্রিয়া জন্মাইয়] 
দেয়। এইরূপে বাণ লক্ষ্যস্থানে উপস্থিত হইয়া লক্ষ্যবেধ করে। 
তাবনাখ্য,মংস্কার স্মরণের কারণ। উহ নিশ্চয়জন্য। নিশ্যয় হইলেও 
তদ্বিষয়ে উপেক্ষাবুদ্ধি থাকিলে ভাবনাখ্য সংস্কার জন্মে না। অতএব 
উপেক্ষানাআআবক নিশ্চয়--ভাবনাখা সংস্কারের কারণ| যে সংস্কার বা গুণ- 
বশতঃ আকুষ্ট বৃক্ষশাখাদি পরিত্যক্ত হইবামাত্র পূর্ববৎ অবস্থিত হয়, 
তাহার নাম স্থিতিস্থাপক সংস্কার। পুণ্য ও পাপের নাম ধর্ম ও 
অধর্্ম। বিহিতক্রিয়ার অনুষ্ঠানে ধর্ম জন্মে, উহ! সুখের হেতু । নিষিদ্ধ" 
ক্রিয়ার অনুষ্ঠানে অধর্ম জন্মে, উহা! দুঃখের হেতু । ধর্ম ও অধর্থের 
সাধারণ নাম অনৃষ্ট। রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব, বুদ্ধি, সুখ, ছুঃখ, ইচ্ছা, 
দ্বেষ+য্্, স্নেহ, স্বাভাবিক-দ্রবন্ব, ভাবনাখ্য-সংস্কার ও অনৃষ্ট, এইগুলির 
দাধারণ নাম বিশেষগ্তণ । 

যাহাতে কর্মত্বজীতি আছে, তাহার নাম কর্ম। উৎক্ষেপণ ও 
অবক্ষেপণ, এই উভয়বিধ ক্রিয়াতে মমবেত সত্তাভিম্নজাতির নাম কর্দাত্ব। 
ব্যত্ব-গুণত্বাদি জাতি উৎক্ষেপণ ও অবক্ষেপণে সমবেত নহে, উৎক্ষেপণত্ত 
ও অবক্ষেপণত্ব যথাক্রমে উৎক্ষেপণ ও অবক্ষেপণে সমবেত হইলেও 
উৎক্ষেপণ ও অবক্ষেপণ এতদুতয়বিধ ক্রিয়াতে সমবেত নহে, সত্বাজাতি 


১২৮ | পঞ্চম লেক্চর। 


উক্ষেপণ ও অবক্ষেপণ উভয়-সমবেত হইলেও সত্তা-ভিন্ন নহে, এজন্য এ 
সকল জাতিকে কর্মৃত্ব বল! যাইতে পারে না। কর্ম পাঁচপ্রকার-- 
উৎক্ষেপণ, অবক্ষেপণ, আকুঞ্জন, প্রসারণ ও গ্মন। যে কর্খন্বার 
উৎক্ষিপ্ত লোস্ট্রাদির অধোদেশের সহিত বিভাগ এবং উর্ধদেশের সহিত 
ংযোগ হয়, সেই কর্ষের নাম উৎক্ষেপণ । ইহার বিপরীত অবক্ষেপণ, 
অর্থাৎ উর্ধাদেশের সহিত বিভাগ এবং অধোদেশের সহিত সংযোগজনক 
কর্মই অবক্ষেপণ। কোন বস্ত প্রাসাদের উপর হইতে নিয়ে নিক্ষিপ্ত 
হইলে, তাহার অবক্ষেপণ হইল বল! যায়। বিগ্যমান বস্তুর অবয়বপকলের 
আগন্তক-পরস্পর-দংযোগ-জনক কর্মের নাম আকুঞ্চন | হস্তাঙ্কুলীর মুষ্ট্া- 
কারে অবস্থিতি, বস্ত্রের পিণ্ডিততাবসম্পাদন আকুঞ্চনের কার্য । এ আগ- 
স্বক-সংযৌগের বিনাশক কর্ম গ্রসারণ। হস্তাক্কুলী ও বস্ত্র যথাবদবস্থিতি- 
সম্পাদন প্রসাক্জণের কার্ধ। উৎক্ষেপণ, অবক্ষেপণ, আকুঞ্চন ও প্রসারণ 
ভিন্ন সমস্ত কর্মের সাধারণ নাম গমন। নমন, উন্নমন, চক্রাদির 
পরিভ্রমণ, অগ্রির উর্ধাজলন প্রভৃতি গমনের অন্তর্গত । 
নিত্য ও অনেকসমবেত পদার্থের নাম সামান্য বা জাতি একাধিক 
বন্তর সংযোগ হয়, স্কুতরাং সংযোগ অনেকদমবেত বটে, কিন্তু নিত্য 
নহে। জলপরমাণুর ব্ূপ, আকাশের পরম মহৎপরিমাঁণ নিত্য ও 
সমবেত হইলেও অনেকসমবেত নহে; অত্যন্তাভাব নিত্য ও অনেকবৃত্তি 
হইলেও সমবেত নহে; এইজন্য উহারা সাঁমান্ত বা জাতি হইতে পারে 
না)। জাতি ছুইপ্রকার--পরা ও অপরা। অধিকৰেশবৃত্তি জাতি পর! 
এবং অল্পদেশবৃত্তি জাতি অপরা। সত্তাজাতি ভ্রব্য, গুণ ও কর্ম, 
এই তিন পদার্থেই আছে, সত্তা অপেক্ষা অধিকদেশবৃত্তি জাতি নাই। 
এইজন্য সত্তা পরা জ্ঞাতি। ঘটত্বাদি জাতি সর্বাপেক্ষা অল্পদেশবৃত্তি, এই- 
জন্য উহারা অপর! জাতি। দ্রব্যত্বাদি-'জাতি ক্ষিতিত্বাদি-জাতি অপেক্ষা 
অধিকদেশবৃত্তি বলিয়া! পরা এবং সভা! অপেক্ষা অল্পদেশবৃত্তি বলিয়া 
আপরা। এইজন্য উহাদ্দিগকে পরাপর জাতি বলা যাঁয়। 
. €গ্করখতিনন একাইাত্র-মবেত পদার্থের নাম বিশেহ/(ঘলীন- 
পরমাণুর রূপ-প্রভৃতি-গুণ এবং ফর্ম একমাত্রসমবেত হইলেও গুণ-কর্ধ- 
বতন্ন নহে, .সামান্তপদার্থ গুধ-কর্ম-ভিন্ন অথচ সমবেত হইলেও একমাত্র- 


বৈশেষিকদর্শন। ১২৯ 


সমবেত নহে । কোন অভাব গুণ-কর্-তিন্ন এবং একমাত্র-ব্ুত্তি হইলেও 
সমবেত নহ্থে। এইজন্য উহাদিগকে ৰিশেষপদার্থ বলা যায় না) বিশেষ- 
পদার্থ স্বীকার করিবার সংক্ষিপ্ত যুক্তি এই__ছ্যণুক হইতে আরম্ভ করিয় 
অন্ত্য অবয়বী অর্থাৎ ঘটাদিপর্ধ্যন্ত সমস্ত সাবয়বদ্রবোর তত্বং-অবয়ব- 
ভেদে ভেদ হইতে পারে। নিরবয়ব একজাতীয় পরমাণুদ্বয়ের. পরম্পর 
ভেদও অবশ্য কোন ধর্মদ্বারা সম্পন্ন হইবে। মুগ ও মাষের যথাক্রমে 
আরম্তক মুদগ-পরমাণু ও মাষ-পরমাণু অবশ্তই ভিন্ন ভিন্ন। এস্থলে 
পরস্পরের ভেদক ধর্ম কি? এই প্রশ্নের উত্তরে বলিতে হর যে, মুদেগর 
আরভ্তক পরমাণু ও মাঁষের আরন্তক পরমাণু সমানরূপ হইলেও উভয় 
পরমাণুতে ভিন্ন ভিন্ন অসাধারণ ধর্ম আছে। তদ্বারা উভয় পরমাণু 
পরম্পর ভিন্ন হইতেছে । সেই ভিন্ন ভিন্ন অপাধারণ ধর্মই বিশেষপদার্থ 
বলিয়! নিদিষ্ট হইয়াছে । বিশেষপদার্থ মাবয়ব-দ্রব্যবৃত্তি নহে, নিরবয়ব- 
্রব্যমাত্রবৃত্ি। কতগুলি পরমাণু সুদগমাত্রের আরম্ভক বগিয়া মাষে 
থাকে না। কতগুলি পরমাণু মাষমাত্রের আরন্তক বলিয়৷ মুদেগ থাকে 
না। কতগুলি পরমাণু মুদগ ও মাষ উভয়েরই আরম্তক। উহারা মুদগ ও 
মা উভয়েই থাকে । এইজন্য ষুদগ ও. মাষ পরস্পর ভিন্ন হইলেও 
অনেকটা সমান-আকার। 

অবয়বীর মৃহিত অবয়ৰের, গুণ ও ক্রিনার সহিত দ্রব্যের, জাতির 
সহিত ব্যক্তির এবং বিশেষের সহিত নিতাদ্রবোর যে সন্বন্ধ, তাহার 
নাম সমবায়। ঘটের অবয়ব কপাল, বস্ত্রের অবয়ব তন্ত। “কপালে 
ঘটঃ, তন্তু পটঃ” এস্থলে কপাল ও তন্তৃতে ঘট ও পটের সম্বন্ধ সমবায় 
গুলো! ঘট? এস্থলে ঘটে শুক্ুগুণের সমবায়সন্বন্ধ। এইরূপ ক্রিয়ার 
অধিকরণে ক্রিয়ার, জাতির অধিকরণে জাতির এবং বিশেষ-পদার্থের 
অধিকরণে বিশেষ-পদার্থের সমবায়সত্বন্ধ আছে । 

অভাব ছুইপ্রকার--সংসর্গাভাব ও অন্টোন্ঠাভাব। সংসর্গ[ভাৰ | 
কিনা সৃপ্বদ্ধের অভাব। লংসর্গীভাব তিনগ্রকার--প্রাগভাঁব, ধ্বংলাভার 
ও অত্যস্তাতাব। প্রাগভাব অর্থাৎ বন্ত উৎপর্ন হইবার পূর্বব্ালে বস্তর 
অভাব। “কপালে ঘটো! ভবিষ্তৃতি' অথাৎ “কপালে ঘট হইবে», সুতরাং 
এব ঘট নাই। উৎপত্তির পূর্বে কপালে ঘটের যে অভাব আছে, 


১৩০ পঞ্চম লেকৃচর। 


তাহা প্রাগভাব। প্রাগভাবের আদি নাই বটে, কিন্তু অন্তু আছে। 
ঘটের উৎপত্তি হইলে আর ঘটের প্রাগভাব থাকে না। সুতরাং প্রতি- 
যোগী প্রাগভাবের নাশক। মুদগরাদির আঘাতদ্বারা উৎপন্ন ঘটের 
যে অভাব হয়, তাহ। ধ্বংসাভাব। “ঘটে নষ্টঃঃ অর্থাৎ “ঘট নষ্ট হইয়াছে» 
এস্থলে ঘটের ধ্বংসাভাবের প্রতীতি হইতেছে। ধ্বংসাভাবের আদি 
অর্থাৎ উৎপত্তি আছে বটে, কিন্তু অন্ত অথাৎ বিনাশ নাই। ধ্বংস ও 
প্রাগভাব ভিন্ন সংসর্গাভাবের নাম অত্যন্তাভাব। অর্থ প্রতিযোগীর 
উৎপত্তির পূর্ধকালাবচ্ছেদে যে অভাব, তাহ! প্রাগভাব; প্রতিযোগী 
বিন& হইবার পরকালে যে তাহার অভাব, তাহ ধ্বংলাভাব? কিন্তু যে 
সংসর্গাভীব কোন বিশেষ-সময়ে সীমাবদ্ধ নহে, যাহা সর্বকালে থাকে, 
তাহাই অত্যন্তাভাব। বারুতে রূপ নাই, ঘটে চৈতন্ত নাই, ভূতলে 
ঘট নাই, ইত্যাদি অত্যন্তাভাবের উদ্বাহরণ। ভূতলে ঘট আনীত 
হইলেও ঘটের অত্যন্তাভাবের বিনাশ বা অভাব হয় না। কেন না, তখনও 
প্রদেশান্তরে ঘটের অত্যন্তাভাব থাকে। ভূতলে ঘট আনীত হইলে, 
তৎকালে এ ভূহলে ঘটের অত্যন্তাতাবের সম্বন্ধ থাকে না, এইমাত্র 
বিশেষ । অন্ঠোন্তাভাব কিনা অন্োন্ত অর্থাৎ পরস্পরেতে পরম্পরের 
যে অভাব। যে বস্ত যে বস্ত নহে, সেই বস্ততে সেই বস্তর যে অভাব, 
তাহাই অন্তোন্তাভাব। ঘট পট নহে, স্থৃতরাং ঘটে পটের যে অভাব, 
এবং পটে ঘটের যে অভাব, ত্বাহাই অস্তোন্তাভাব। অর্থাৎ যে অভাবের 
প্রতিযোগিতা তাদাক্স্যন্বন্ধে নিয়মিত হয়, তাহার নাম অন্টোন্তাভাব। 
অন্ঠোন্তাভাবের অপর নাম ভেদ। “ঘটঃ পটো ন, ঘটঃ পটা দরন্তাঃ, ঘটঃ 
পটাত্তিন্ এ সকল স্থলে ঘটে পটের অন্তোন্য (ভাবের প্রতীতি হইতেছে। 

কারণ তিন প্রকার-সমবাকি-কীরণ, অপমধাগ্িকারণ ও নিমিত্ত- 
কারণ। কাধ্য, যে কারণে সমবেত বা সমরায়দম্বঞ্জে থাকে, তাহার 
নাম স্মবায়ি-কারণ। কৃপাল ও কপালিকা ঘটের কারণ, অথচ কপাল 
ও কপালিকাতে সমবারসম্বন্ধে ঘট থাকে, কেন না, কার্ধ্য ও উপাদ্দান- 
কারণের সন্বন্ধ সমবায় । স্থতরাং কপাল ও কপালিক! ঘটের সমবাঁয়ি- 
কারণ। এইরূপ তন্ব পটের সমবায়ি-কারণ। ফলতঃ যে উপাদানে 
কাধ্য নিঙ্দিত হন্গ, তাহাই দ্মবারি-কাঁরণ। যে কারণ, সমবায়ি-কক্্পণে 


বৈশেবিকদর্শন। ১৩১ 


সমবেত, তাহা অপমবায়ি-কারণ। কপাল ও কপালিকার সংযোগ 
ঘটের অপমবায়ি-কারণ, তন্তসকলের পরম্পর সংযেগ পটের অনমবারি- 
কারণ। কপাল ও কপাপিকার সংযোগ না হইলে ঘট হয় না, তত্ত্- 
সকলের পরস্পর সংযোগ না হইলে পট হয় না। সুতরাং কপাল- 
কপালিকার সংষোগ ঘটের এবং তন্তদকলের পরস্পর সংযোগ পটের 
কারণ। কপাল-কপালিকার স'যোগ কপালে ও কপালিকাতে এবং 
তন্তনকলের পরম্পর মংযোগ তন্ততে সমবেত । কেন না, গুণ ও গুণীর 
স্বন্ধ সমবায়। সংযোগ গুণ এ৭ং কপাল-কপালিকা ও তন্ত গুণী। 
সুতরাং কপাঁল-কপালিকার সংযোগ ঘটের এবং তন্তনকলের পরস্পর 
সংযোগ পটের অসমবায়ি-কার্ণ। অনমবায়ি-কারণ নট হইলে দ্রব্যও 
বিনষ্ট হয়। সমবায়ি-কারণ ও অঙমবায়ি-কারণ ভিন্ন সমস্ত কারণের 
নাম নিমিত্-কারণ। দগুচক্রাদি ঘটের এবং তুরী-বেমাদি পটের 
নিমিত্-কারণ। 

বৈশেবিকমতে প্রমাণ ছুইপ্রকার-_ প্রত্যক্ষ ও অন্ুমান। প্রত্যক্ষ 
প্রমা ছয়প্রকার, ইহা পূর্বে বলা হইয়াছে । সুতরাং প্রত্যক্ষ: 
প্রমাণও ছয়প্রকার। চক্ষুঃ, ম্রাণ, রলনা, শ্রোত্র, ত্বক ও মনঃ--এই 
ছয়টি প্রত্যক্ষ প্রমাণ । প্রমার করণের নাম প্রমাণ । চক্ষুরাদি ছয়টি 
ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষপ্রমার করণ, অতএব প্রতাক্ষপ্রমাণ। যে কারণ 
কোনও একটি ব্যাপারের সাহাধ্ো কার্ধ্য সম্পাদন করে, তাহার নাম 
করণ। যে পদার্থ যজ্জন্য হইয়া যজ্জন্তের জনক হয়, সে তাহার ব্যাপার 2 
অর্থাৎ যে পদার্থ যাহ! হইতে উৎপন্ন হইয়! তাহার কর্তব্য ক্কার্ধ্য সম্পাদন 
করে ব। তাহার কাধ্যসম্পাদনে সহায়তা করে, তাহাকে তাহার ব্যাপার 
বলা যায়। “অদিন! ছিনভি? অর্থাৎ অনিদারা ছেদন করিতেছে, এস্থলে 
অসি ছেদনক্রিয়ার করণ। ছেগ্য ও অসির সংযোগ বাপার। কেন না, 
ছেগ্ভ ও অপির সংযোগ অসি-জন্ত অর্থাৎ অপির ক্রিয়া হইতে উৎপন্ন, 
এবং অসি-জন্ত-কাধ্য অর্থাৎ অসির কার্ধ্য যে ছেদন, তাহার জনক বা 
সম্পাদক। ছেগ্তের সহিত অপির সংযোগ না হইলে ছেদনক্রিয়া 
হইতেই পারে না। 'কা্টেঃ পচতি” অর্থাৎ কাষ্দ্বারা পাক করিতেছে, 
এন্লে কাণ্ঠ পাকের করণ। জ্বালা তাহার ব্যাপার। কাষ্ঠ না জালিলে পাক 


১৩২ পঞ্চম লেক্চর । 


হয় না। জালা কাষ্ঠ-জন্ত অথচ কাষ্ঠ জন্য পাকের জনক। প্রকৃতন্থলে 
বিষয়ের সহিত যে ইন্দ্রিয়ের প্রত্যাসণ্ডি বা সন্নিকর্ষ বা দ্বন্ধ, তাহাই 
ইন্দ্রিয়ের ব্যাপার। কেন না, বিষয়ের সহিত ইন্ট্রিয়ের সন্নিকর্ষ না 
হইলে বিষয়ের প্রত্যক্ষ হওয়া অসম্তভব। বিষয়ের সহিত ইন্ট্রিয়ের মন্নি- 
কর্ষ ইন্দ্রিয়-জন্ত, এবং ইন্দ্রিয়-জন্ত প্রত্যক্ষজ্ঞানের জনক। অতএব 
বিষয়ের সহিত ইন্দ্রিয়ের সন্নিকর্ষ, ইন্জিয়ের ব্যাপার । 
লৌকিক সন্নিকর্ষ ছয়প্রকার--সংযোগ, সংযুক্ত-সমবায়, সংঘুক্ত- 
সমবেত-লমবায়, সমবায়, সমবেত-সমবায় ও বিশেষণতা বা স্বরূপ । 
চক্ষুরিন্দ্রিয় ঘটের মহিত সংযুক্ত হইলে ঘটের প্রত্যক্ষ হয়। এখানে 
বিষয়ের সহিত ইন্দ্রিয়ের সম্বন্ধ সংযোগ। ঘটের সহিত চক্ষুরিক্িয়ের 
ংযোগ হইলে যেমন ঘটের প্রত্যক্ষ হয়, সেইরূপ ঘটত্বজাতি, 
ঘটগত শুর্ুনীলাি রূপ এবং সেই শুরুণীলাদিরূপগত শুক্লুত্ব নীলত্বাদি 
জাতিরও প্রত্যক্ষ হইয়া থাকে। ইহা অন্ুভবসিদ্ধ, ইহার অপলাপগ 
করা যাইতে পারে না। কেন না, যে ব্যক্তি ঘটের প্রত্যক্ষ করিয়াছে, 
ঘটটি কোন্-বর্ণ, ইহাও সে প্রত্যক্ষ করিয়াছে, ইহাতে সন্দেহ হইতে 
পারে না। সুতরাং ঘটত্বাদি-বিষয়ের সহিত চক্ষুরিক্রিয়ের কোন. 
রূপ সম্বন্ধ অবশ্তই আছে। কারণ, তাহা ন| হইলে ঘটত্বাদির প্রত্যক্ষ 
হইতে পারে না। ইন্দ্রিয়ের সহিত অসম্বদ্ধ বস্তুর প্রত্যক্ষ হওয়া! অসম্ভব 
ঘট চক্ষুঃসংযুক্ত। ঘটত্বজাতি এবং শুরু রূপ ঘটদমবেত, অর্থাৎ সমবায়- 
সম্বন্ধে ঘটবুদ্ত। সুতরাং ঘটত্বজাতি ও ঘটগত শুক্র রূপের সহিত চক্ষুর 
সম্বন্ধ হইল সংযুক্ত-সমবায়। শুক্র রূপ ঘটসমবেত, শুরুত্বজাতি আবার 
শুরু রূপে মমবেত। অর্থাৎ শুরুত্বজাতি শুরু রূপে সমবায়নস্বন্ধে আছে। 
তবেই শুরুত্বজাতির সহিত চক্ষুর সম্বন্ধ হইতেছে সংযুক্ত-সমবেত-সমবায়। 
কেন না, ঘট চক্ষুঃসংযুক্ত; শুক্ল রূপ ঘটদমবেত; শুর্ুত্বজাতি শুক্লুরূপ- 
সমবেত। এইরূপ ঘ্বাণ ও রসনার সহিত সংযুক্ত দ্রব্যের গন্ধ ও রদের 
প্রত্যক্ষ হয়, অতএব গন্ধ ও রসের সহিত ভ্রাণ ও রসনেজ্জরিয়ের সন 
সংযুক্ত-সমবাঁয়। কেননা, গন্ধ ও রসের আশ্রয় বা অধিকরণ দ্রব্য 
যথাক্রমে জাণ ও রসনেন্তরিয়সংযুক্ত। গন্ধ ও রস এ দ্রব্য-সমবেত। গন্ধত্ব ও 
 শ্রসন্থের সহিত প্রাণ.ও রসলেন্দ্রিয়ের সম্বন্ধ সংযুক্ত-লমবেত-দমবায়। শব 


বৈশেষিকদর্শন। ১৩৩ 


আকাশ-সমবেত। কর্ণপ্রদেশাবচ্ছিন্ন আকাশই শ্রবথেন্টিয়, সতরাং শব্দ- 
প্রতাক্ষের সম্বন্ধ মমবায়। শব্ত্ব-_কত্বগত্বাদি_-প্রত্যক্ষের সম্বন্ধ মমবেত- 
সমবায়। কেন না, শবত্বাদি শব্দসমবেত। অভাব-প্রত্যক্ষের সম্বন্ধ 
বিশেষণতা বা স্বরূপ। তৃতলে ঘটাভাবের প্রত্যক্ষস্থলে বিশেষণতাই 
সন্নিকর্ষ। কেন না, ভূতলের বিশেষণরূপেই ঘটাভাবের প্রত্যক্ষ হয়। যে 
বস্ত যে ইন্দ্রিয়ের গ্রাহ, সেই বস্ত্র ধর্ম এবং সেই বস্তুর অভাঁবও সেই 
ইন্জরিয়ের গ্রাহ্থা। ঘট চক্ষুরিক্দরিযগ্রাহ, অতএব ঘটবৃত্তি গুণক্রিয়াদি 
ধর্ম ও ঘটের অভাবও চক্ষুরিক্িয়গ্রাহা। 

উদ্ভুত রূপ ও মহত্ব বহির্জবা ও তাগত ক্রিয়াগুণাদির প্রতাক্ষের 
কারণ। উত্তপ্ত-ভর্জন-কপাঁলে হস্ত লাগিলে হস্ত দগ্ধ হয়, স্থতরাং তাহাতে 
অবশ্তই বহি আছে, কিন্তু এ বহর রূপ উদ্ভূত নহে বলিয়া তাছা 
দেখিতে পাওয়া যায় না। পরমাণুর মহত্ব নাই, এইজন্য পরমাণু দেখিতে 
পাওয়| যায়না । কোন কোন ইউরোগীয় পণ্ডিতের মতে বস্ত্র গুণ- 
মাত্রই প্রত্যক্ষ হয়, বস্তুর প্রত্যক্ষ হয় না। কণাদমতে বস্তরও ..প্রত্যক্ষ 
হয়| কেন না, বস্ত গুণসমষ্টিমাত্র নহে। বস্ত গুণের আধার । কোন 
বস্ত্র নষ্ট করিলে গুণের নাশ করা হয় না। গুণাশ্রয় বস্তরই নাশ করা 
হয়। জলপাত্রদ্বারা জল পান করা হয়, জলপাত্রের গুণদ্বারা জলের গুণ 
পান করা হয় না। অশ্ব বা শকটাদি আরোহণ করিয়া গমন করা হয়, 
তাহাদের গুণ আরোহণ করিয়া! গমন কর! হয় না। দীর্ঘ বস্ত্র পরিধান 
করা হয়, দীর্ঘতা পরিধান করা হয় না। দৃষ্টান্তবাহল্যের প্রয়োজন নাই। 
সকলেই অনুভব করিয়। থাকেন বে, শুরু ঘট, পীত পট দেখিতেছি। শুর 
ও গীত গুণ দেখিতেছি, এতন্মাত্র অন্ুতব সর্বত্র হয় না। অনুভব যদি 
পদার্থের বা বস্ত্র অন্তিত্ব-নান্তিত্ব-অবধারণের কারণ হয়, তবে ধর্মের 
স্তায় ধর্মী, গুণের স্তায় গুণীরও প্রত্যক্ষ স্বীকার করা উচিত। 

আর এক কথা। মহত্ব প্রত্যক্ষের কারণ। যাহার মহত্ব নাই, তাহার 
প্রত্যক্ষ হইতে পারে না। পরমাণুর মহত্ব নাই, এইজন্য পরমাণু 
অপ্রত্যক্ষ। মহত্ব গুণগত নহে, জ্্রব্গত। দ্রব্গত যে মহত্ব দ্রব্গত 
গুণের প্রত্যক্ষের কারণ, তাহ! দ্রব্যের প্রত্যক্ষের কারণ হইবে না, ইহ! 
সমীচীন কল্পনা! নহে। এতদ্বারা ইহাও সিদ্ধ হইতেছে যে, পরিদৃশ্তমান 


১৩৪ পঞ্চম লেক্চর। 


ঘটপটাদি-দ্রব্য পরমাণুপুঞ্জন্বরূপ নহে, পরমাণুপুঞ্জমারদ্ধ দ্রবান্তর। 
এ দ্রব্যান্তরের নাম অবয়বী। যাহার অবয়ব আছে, তাহার নাম অবয়বী। 
ঘটপটাদির অবয়ব আছে, অতএব তাহারা অবয়বী। যে-জাতীয় পরমাণু 
অবয়বীর আরম্তক বা জনক হয়, অবয়বীও সেই-জাতীয় হইবে। যেমন, 
মুদারধ ঘট মৃজ্জতীয়, রজতারদ্ধ ঘট রজতজাতীয় ইত্যাদি । গরমাণু- 
পুঞ্জের অতিরিক্ত অবয়বী স্বীকার না করিলে--ঘটাদি-দ্রবা পরমাণুপুী- 
স্বরূপ হইলে, ঘটাদি-দ্রবোর প্রতাক্ষ হইতে পারে না। আপন্তি হইতে 
পারে যে, যেমন দূরস্থ একটি কেশ প্রত্যক্ষ না হইলেও কেশগুচ্ছের 
প্রত্যক্ষ হয়, সেইরূপ এক একটি পরমাণু অপ্রত্যক্ষ হইলেও পরমাগুপুঞ্জ 
প্রত্যক্ষ হইতে পারে। এতদুত্তরে বক্তবা এই বে, দৃষ্টান্তট ঠিক হইল না। 
কারণ, এক একটি কেশও ত অতীন্দ্রিয় নহে। কেন না, নিকাটস্থ ব্াক্তি 
তাহা দেখিতে পার। দূরস্থ ব্যক্তি যে তাহা দেখিতে পায় না, এক 
একটি কেশের অতীব্রিয়ত্ব তাহার কারণ নহে। কেন না, এক একটি 
কেশ অতীন্রিয় হইলে নিকাটস্থ বাক্তিও তাহ! দেখিতে পাইত না। 
কিন্তু দূরস্থ ব্যক্তি ঘে একটি কেশ দেখিতে পায় না, তাহার কারণ দুরত্ব- 
রূপ দোষ। যেমন কোন পক্ষী উড়িবার সময় প্রত্যক্ষ হইলেও আকাশের 
দূরতর প্রদেশে উৎপতিত হইলে আর প্রত্যক্ষ বা দৃষ্টিগোচর হয় না। 
দুরত্বই তাহার কারণ। সেইরূপ দূরস্থ একটি কেশ দৃষ্টিগোচর না হইবার 
কারণও দূরত্ব, কেশের অতীন্দিয়ত্ব নহে। একটি কেশ যে-পরিমাণ দুরে 
থাকিলে দৃষ্টিগোচর হয় না, নেই-পরিমাণ দূরে কেশগুচ্ছ দৃষ্টিগোচর 
হইয়া থাকে। কারণ, এ দূরত্ব একটি কেশের উপর স্বপ্রভাব বিস্তার 
করিতে পারিলেও কেশগুচ্ছের উপর ন্বপ্রভাব বিস্তার করিতে পারে 
না। তদপেক্ষা অধিকতর দূরত্ব ঘটিলে কেশগুচ্ছও দৃষ্টিগোচর হয় না। 
প্রককৃতস্থলে প্রত্যেকটি পরমাণু এক একটি কেশের ন্যায় কোনকালেই 
দৃষ্টিগোচর হয় না। সুতরাং পরমাণু অতীন্দ্রিয়। পরমাণু অতীন্দ্ি় 
হইলে, পরমাণুপুপ্রও দৃষ্টিগোচর হইতে পারে না। কেন না, অতীন্দ্রির 
কিন! ইন্দ্রিয়ের অতীত অর্থাৎ অবিষয়। স্ববিষয়ের প্রত্যক্ষেই কারণ- 
রশতঃ ইন্দ্রিয়ের পটুমন্দভাৰ হইতে পারে। কিন্তু অবিষয়ের গ্রহণ কোন- 
কালেও হয় না। একটি সুপ আম্রফল দৃষ্টিপথে পতিত হইলে তাহার 


বৈশেষিকদর্শন | ১৩৫ 


বর্ণ ও আকার দেখিতে পাওয়া যায়। এ আত্ফলের দূরতা ও সন্িধানের 
তারতম্যে দর্শনের অব্যক্ত ও পরিদ্দুট অবস্থা হইতে পারে মাত্র। কিন্ত 
আম্রধলে প্রচুরপরিমাণে মধুররস থাকিলেও কিছুতেই তাহা দেখিতে 
পাওয়া যায় লা। কেননা, রূপ চক্ষুরিন্রিয়ের বিষয়, রম চক্ষুরি্রিয়ের 
বিবয় নহে। সেইরূপ পরমাণু যখন. চক্ষুরিক্সিয়ের বিষয় নহে, তখন 
প্রচুরপরিমাণে পরমাণু মিলিত হইলেও তাহা অর্থাৎ পরমাণুপুঞ্জ দৃষ্টি- 
গোচর হইতে পারে না। একটি ন্ায় আছে যে, 'শতমপ্ন্ধানাং ন 
পণ্ততি”__অর্থাৎ একটি অন্ধ যেমন দেখিতে পায় না, তেমনি শত অন্ধ 
একত্র হইলেও দেখিতে পায় না। কেন না, তাহাদের দৃষ্টিশক্তি নাই। 
এবং একের পরে একটি খিন্দু দিলে দশ হয় বটে, কিন্তু এক সংখা 
তুলিয়া লইয়া শত বিন্দু দিলেও কিছুই হইবে না। কেন না, একের 
সংযোগ ভিন্ন বিন্দুর কোনও কাধ্যকারিতা থাকে না। সেইরূপ মহত্বের, 
সহায়ত৷ ভিন্ন ইন্দিয়শক্তি কার্ধ্য করিতে পারে না। চক্ষুরিন্দিয্পের পরমাণু 
দেখিবার শক্তি নাই। চক্ষুর দ্বারা যেমন একটি পরমাণু দেখিতে পাওয়া 
যায় না, দেইরূপ শত শত পরমাণু একত্র হইলেও দেখিতে পাওয়া 
যাইতে পারে না। এইজন্য অবয়ব অর্থাৎ পরমাণুর অতিরিক্ত অবস্জবারন্ধ 
অর্থাৎ পরমাণুদ্ধারা সমারন্ধ অবয়বী অঙ্গীকৃত হইয়াছে । “একঃ স্থুলো। 
মহাঁন্‌ ঘটঃ, এই প্রত্যক্ষ অন্ুভব তাহার প্রমাণ। 

বৌদ্ধেরা অধৃষ্ত পরমাণুপুঞ্জ হইতে দৃশ্ত পরমাণুপুর্জের উৎপত্তি স্বীকার 
করেন। নৈয়ায়িকেরা এই মতের প্রত্যাখান করিয়াছেন। তাহারা 
বলেন যে, যাহা অদৃষ্ঠ, যাহ সুক্ষ, তাহ! দৃশ্ঠ বাদৃশ্তের উপাদান এবং 
মহৎ হইতে পারে না। উহা দৃশ্ত বা মহৎ হইবার কারণ নাই। দৃশ্ত 
ও মহান্‌ পরমাণুপুঞ্জ অদৃষ্ত ও সুক্ম পরমাণুপুপ্ত হইতে বন্বন্তর বলিয়] 
স্বীকৃত হইলে সুন্ম ও অনৃশ্ত পরমাণুপুগ্ত হইতে দৃশ্য ও স্থূল পরমাণু- 
পুঞ্জের উৎপত্তি হইলেও হইতে পারে বটে, কিন্তু তাহা হইলে উৎপন্ন 
পুপ্ের অন্তর্গত প্রত্যেক পরমাণু দৃশা ও স্থল বলিয়া স্বীকার করিতে 
হইবে। কেন না»যাহা প্রত্যেকে আবৃশ্য ও হুক্ম, তাহার সমষ্টিও দৃশ্য 
ও স্থূল হইতে পারে না। তাহা স্বীকার করিলে কিন্তু পরমাণু হইতে 
বন্বত্তরের উৎপত্তি উভয়বাদিসিদ্ধ হইতেছে। সেই বন্ধন্তরের নাম 


১৩৬ পঞ্চম লেক্চর । 


্টায়ঘতে অবয়বী, বৌদ্ধমতে দৃশ্য পরমাণুপুপ্ত, এইমাত্র গ্রভেদ | অর্থাৎ 
বস্বস্তরের উৎপত্তি উভয় মতেই স্বীকৃত হইতেছে, কিন্তু সেই বস্ত্র সংজ্ঞা 
ব| নাম লইয়া! বিবাদের পর্য্যবসান হইতেছে মাত্র। নৈয়ায়িকেরা ইহাও 
বলেন যে, স্তায়মতে “একো ঘট+,-_এই প্রতীতির বিষয় একটি অবয়বী, 
আর বৌদ্বমতে অনংখ্য পরমাণু । “একো! ঘটঃ--এই প্রতীতির বিষয্ততা 
একটি পদার্থে স্বীকৃত হওয়াই মঙ্গত) অনেক পদার্থে স্বীকৃত হওয়া 
অসঙ্গত ও গোৌরব্রস্ত। পে 
অলৌকিক সন্গিকর্ষ ডি ভা জ্ঞানগক্ষণ ও 
ঘোগজ। সামান্তলক্ষণ অর্থাৎ যে মামান্য যাহাতে স্থিত, এ সামান্তই 
তদাশ্রয়ের বা তাহার প্রত্যক্ষে সন্নিকর্ষস্বরূপ হয়। -এ লামান্তের কোন 
একটি আশ্রয়ে চক্ষুঃমংযোগ হইলে, উর সামান্তরূপনন্বন্ধে সমস্ত তদা- 
'শ্রয়ের অলৌকিক চাক্ষুঘ প্রত্যক্ষ হইয়া থাকে। কোন একটি ঘটে 
চক্ষুঃংযোগ হইলে ঘটত্বসন্বন্ধে নিখিল ঘটের অলৌকিক চাক্ষুষ 
প্রত্যক্ষ ইহার উদ্বাহরণ। জ্ঞনলক্ষণ অর্থাৎ জ্ঞানই সন্নিকর্ষন্বরূপ। 
যাহার জ্ঞান হয়, প্র জ্ঞান তাহারই অলৌকিক প্রত্যক্ষের সন্নিকর্ষ- 
স্বরূপ হয়। চন্দনখণ্ডে ক্ুংসন্লিকরষ হইলে “সুরভি চন্দনম্ঠ অর্থাৎ 
সুগন্বযুক্ত চন্দন_-এস্থলে জ্ঞানলক্ষণ সন্িকর্ষবশতঃ মৌরভের অলৌকিক 
চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ হইতেছে । যোগজধন্ম প্রভাবে যোগিগণ অতীত- 
অনাগত, শুক্ষ-ব্যবহিত-বিপ্রকৃষ্ট, সর্বপ্রকার পদার্থের প্রত্যক্ষ করিয়া 
থখাকেন। 
অন্ুমিতির করণ অনুমান । সাধ্য, হেতু ও ব্যাপ্তির পরিচয় পূর্বে 
প্রদত্ত হইয়াছে । হেতুর অপর নাম লিঙ্ক, কেন না, তন্বারা সাধ্য 
লিঙ্গিত অর্থাৎ জ্ঞাত হয়। যাহাতে সাধোর অন্মিতি হয়, তাহার 
নাম পক্ষ। পর্বতে বহর অনুমিতি হয় বলিয়] পর্বত পক্ষ । পিদ্ধির অর্থাৎ 
সাধ্যনিশ্চয়ের অভাব-পক্ষতা। অনুমিতির পূর্বে পর্বতে বহির নিশ্চয় 
হয় নাই। অতএব পর্বতে পক্ষতা আছে। স্থতরাং পর্বত পক্ষ। 
সিদ্ধি অর্থাৎ সাধ্যনিশ্চয় থাকিলেও পিষাধয়িষা কিন সাধনের ইচ্ছা 
বা'ন্থমিৎসা কিনা অঙ্গুমিতির ইচ্ছা হইলে অন্থুমিতি হইতে পারে। 
বআত্মার শ্রবণ ও মননাদি মুমুক্কর কর্তব্য বলিয়া বেদে বিহিত হইয়াছে। 


বৈশেষিকদর্শন। | ১৩৭ 


বেদবাক্য শুনিয়া আত্মার বিষয়ে যে অববোঁধ বা জ্ঞান হয়, তাহার নাম 
শ্রবণ। এস্থলে বেদবাক্যশ্রবণে আত্মার সিদ্ধি অর্থাৎ নিশ্চয় হইলে 
যদিও সিদ্ধির অভাব নাই, তথাপি সিষাধয়িষ! বা অনুমিৎস| দ্বার! 
আত্মার মননরূপ অনুমান হইয়া থাকে । অনুমানের প্রণালী এইরূপ-_ 
প্রথমতঃ পর্বতে ধৃমদর্শন হয়। ইহাকে প্রথম লিঙ্গপরামর্শ বলা 
যায়। লিঙ্গ হেতু, পরামর্শ তাহার জ্ঞান। পর্ধতে ধূমদর্শন প্রথম 
লিঙ্গজ্ঞান। পরক্ষণে ধূমো বহিব্যাপ্য+__অর্থাৎ ধুম বহর ব্যাপ্য, এই-. 
রূপ ব্যাপ্তিম্মরণ হয়। ইহাই অনুমান অর্থাৎ অনুমিতির করণ। ইহা 
দ্বিতীয় লিঙ্গপরামর্শ। তৎপরক্ষণে “বহিব্যাপ্যধূমবান্‌ পর্বতঃ” অর্থাৎ 
বহ্িব্যাপা ধুম পর্বতে আছে, এইরূপ জ্ঞান হয়। ইহা! তৃতীয় লিঙ্গ- 
পরামর্শ তৃতীয় লিঙ্গপরামর্শের অপর নাম 'পক্ষধর্মতাজ্ঞান। 
কেবল পরামর্শশব্দ্ধারাও ইহার নির্দেশ করা হয়। তৎপরক্ষণে 
পর্বত বহ্িমান্? এইরূপ অন্মিতি হইয়া থাকে। ব্যাথিজ্ঞান অন্থু- 
মিতির করণ। পরামশ তাহার ব্যাপার। কেন না, পরামর্শ ব্যাপ্তি- 
জ্ঞানজন্ত অথচ ব্যাপ্তিজ্ঞানজন্ত অন্মিতির জনক। প্রথম লিঙ্গ- 
পরামর্শ অন্থমিতির করণ হইতে পারে না। কেন না, কার্য্ের 
উৎপত্তির অব্যবহিত পূর্বক্ষণে কারণের বিদ্বমানতা৷ না থাকিলে কার্ষ্যের 
উৎপত্তি হইতে পারে না। কার্য্যের উৎপন্তির অব্যবহিত পূর্বক্ষণে 
কারণ না থাকিলেও কার্য্যের উৎপত্তি স্বীকার করিলে নিক্কারণ 
কার্যোৎপত্তি স্বীকার করিতে হয়। জ্ঞানমাত্রই প্রায় দিক্ষণস্থায়ী। 
প্রথম ক্ষণে জ্ঞানের উৎপত্তি, দ্বিতীয় ক্ষণে স্থিতি, তৃতীয় ক্ষণে তাহার 
বিনাশ হয়। প্রথম 'লিঙ্গপরামর্শের অর্থাৎ ধৃমদর্শনের দ্বিতীয় ক্ষণে 
ব্যাপ্চিম্মরণ, তৃতীয় ক্ষণে তৃতীয় লিঙ্গপরামর্শ, চতুর্থ ক্ষণে অন্ুমিতি 
হইয়া থাকে । প্রথম লিঙ্গপরামর্শ কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গপরামর্শক্ষণে 
অর্থাৎ অন্ুমিতির পূর্বক্ষণে বিনষ্ট হইয়া যায়। থে ক্ষণে যে বস্ত 
বিনষ্ট হয়, সে ক্ষণে সে বস্তর সত্তা থাকে না। কার্য্যোৎপত্তির 
অব্যবহিত পূর্বক্ষণে কারণের সত্তা না থাকিয়া তৎপুর্বে সত্তা থাকা 
দিনাত্তরে সত্তা থাকার তুল্য। তাদৃশ সত্ব কার্য্যোৎপত্তির কোনও 
উপকার করিতে পারে না। প্রথম লিঙ্বপরামর্শ বা প্রাথমিক ধুম- 


১৩৮ পঞ্চম লেক্চর। 


জ্ঞান অন্ুমিতির করণ বা সাক্ষাৎ হেতু না হইলেও পরম্পরা হেতু 
বা প্রযোজক বটে। কেন না, প্রথম লিঙ্গপরামর্শ ব্যাপ্তিজ্ঞানের, ব্যাপ্তি- 
জ্ঞান তৃতীয় লিঙ্গপরামর্শের এবং তৃতীয় লিঙ্গপরামর্শ অন্ুমিতির হেতু 
বা কারণ। 
যে হেতুবলে অন্থুমিতি হইবে, এ হেতুতে পক্ষসত্ব, সপক্ষদত্ব ও 
বিপক্ষাসত্ব, এই তিনটি রূপ বা ধর্ম থাকা আবস্তক। যে অধিকরণে 
সাধ্যের অনুমিতি হয়, তাহার নাম পক্ষ। যে অধিকরণে সাধ্যের 
নিশ্চয় আছে, তাহার নাম সপক্ষ। যে অধিকরণে সাধ্যের অগ্গাবের 
নিশ্চয় আছে, তাহার নাম বিপক্ষ। পর্বতে বসির অন্ুমিতিস্থলে পর্বত 
পক্ষ, মহানস সপক্ষ এবং জলহ্দ্দ বিপক্ষ। ধূম পক্ষ-পর্বত ও সপক্ষ- 
মহানসে আছে এবং বিপক্ষ-জলহ্দে নাই, এইজন্য ধূমে এ রূপ- 
ত্রয় আছে। এই রপত্রয়ের নাম গমকতৌপয়িক রূপ । গমকতা কিন! 
অন্ুমাপকতা, তাহার ওপয়িক কিনা উপায়স্বরূপ। ধুম যে পরম্পরা- 
সম্বন্ধে বন্তির অন্থমিতির কারণ হয়, তাহার উপায়ভূত হইতেছে এ রূপ- 
ত্রয়। কারণ, হেতু পক্ষে না থাকিলে যে অন্ুমিতি হইতে পারে না, 
তাহা বলাই অনাবস্তক। হেতু সপক্ষেঞ্জা থাকিলেও এ হেতুবলে অন্থু- 
মিতি হইতে পারে না। কেন না, যে অধিকরণে পাধ্যের নিশ্চয় আছে, 
সে অধিকরণে হেতু না থাকিলে এঁ হেতুতে সাধ্যের ব্যাপ্তিই থাকিতে 
পারে না। হেতুতে সাধ্যের ব্যাপ্তি না থাকিলে এঁ হেতুবলে সাধ্যের 
অন্ুমিতি হওয়া একান্তই অসম্ভতব। হেতৃতে সাধ্যের ব্যাপ্তি থাকিলে 
এ হেতু সপক্ষে অর্থাৎ যে অধিকরণে সাধ্যের নিশ্চয় আছে, তাহাতে 
না থাকিয়াই পারে না। বিপক্ষ অর্থাং যে অধিকরণে সাধ্যের 
অভাবের নিশ্চয় আছে, তাহাতে হেতু থাকিলেও হেতৃতে সাধ্যের ব্যাপ্তি 
থাকিতে পারে না। কারণ, বেখানে সাধ্যের অভাব আছে, সেথানে 
হেতু থাকিলে এঁ হেতুতে সাধ্যের ব্যাপ্তি থাকে না। কেন না, 
যেখানে সাধ্যের অভাব থাকে, সেখানে হেতু না থাকাই হইল 
ব্যাপ্তি। সুতরাং উক্ত রূপত্রয় £গমকতার উপায়ভূত, সন্দেহ নাই। 
উক্ত রূপত্রয় বা তাহার কোন একটি রূপ হেতুতে না থাঁকিলেই 
প্র হেতু গ্রমকভৌপরিক-রূপ-ূন্ত হইবে। স্ৃতরাং তাহা আপাততঃ 


বৈশেষিকদর্শন। ১৩৯ 


হেতু বলিয়া বোধ হইলেও প্রন্কৃতপক্ষে হেতু হয় না। এইজন্য 
তাদৃশ হেতুর নাম হেত্বাভাস। যাহা হেতুর স্ায় ভাসমান হয়, 
প্রকৃতপক্ষে হেতু হইতে পারে না, তাহাই হেত্বাভান। ছুষ্ট হেতুর 
নামান্তর হেত্বাভাস। বৈশেষিকদর্শনপ্রণেতা কণাদের মতে হেত্বাভাসের 
নাম অনপদেশ। অপদেশ কিনা হেতু, যাহা হেতু নহে 
অথচ হেতুদূশ, তাহাই অনপদেশ বা হেত্বাভাস। কণাদমতে 
হেত্বাভান তিনপ্রকার-অপ্রনিদ্ধ, অসন্‌ ও সন্দিপ্ধ। যে হেতুর 
প্রপিদ্ধি নাই, তাহার নাম অগ্রপিদ্ধ। প্রসিদ্ধি কিনা প্রকুষ্টররূপে 
সিদ্ধি অর্থাৎ ব্যাপ্তি। যে হেতুতে সাধ্যের ব্যাপ্তি নাই, অথবা 
ব্যাপ্তি থাকিলেও কোন কারণে তাহার জ্ঞান হয় না, সে হেতু অপ্রসিদ্ধ। 
অপ্রসিদ্ধের অপর নাম ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধ। “ধৃমবান্‌ বহে এখানে 
ধূমের অন্ুুমিতিবিষয়ে বহ্রিরূপ হেতু অপ্রসিদ্ধ বা ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধ। অসন্‌ 
অর্থাৎ যে হেতু পক্ষে বা সাধ্যের অধিকরণে থাকে না, তাহার নাম 
অসন্। ইহার অপর নাম বিরুদ্ধ। “গোত্ববান্‌ অশ্বত্বাৎ_গোত্ব সাধ্য, 
অশ্বত্ব হেতু, কিংবা এঅশ্বো বিষাণিত্বা__অশ্বত্ব সাধ্য, বিষাণিত্ব অর্থাৎ 
শৃল্পযুক্তত্ব হেতু, এই উভয় উদ্দাহঞ্জপেই হেতু অসন্‌ বা বিরুদ্ধ। কেন না, 
গোপিণ্ডে অশ্বত্ব নাই, অশ্বপিণ্ডে শৃঙ্গ নাই। শঙ্করমিের মতে বিরুদ্ধও 
অগ্রসিদ্ধের অন্তর্গত। সাধ্যের সহিত যে হেতুর ব্যাপ্তি নাই, সাধ্যা- 
তাঁবের সহিত ব্যাপ্তি আছে, দেই হেতু বিরুদ্ধ। স্ৃতরাং উহ! অপ্র- 
পসিদ্ধের অন্তর্গত। যে হেতু পক্ষে বিষ্কমান থাকে না, তাহা অসন্। 
তৃদে দ্রব্যং ধূমাৎ-এখানে ধূমরূপ হেতু হৃদরূপ পক্ষে বিদ্যমান নহে, 
স্থৃতরাং উহা অসন্। বে হেতুতে সাধ্যব্যাপ্তির সন্দেহ হয় বা যে হেতু 
সাধ্যের নিশ্চায়ক হইতে পারে না, পক্ষে সাধ্যের সন্দেহমাত্র উৎপাদন 
করে, তাহার নাম সন্দিপ্ধ । সন্দিপ্ধের অপর নাম অনৈকান্তিক। কেন 
না, সাধ্যও এক অন্ত, সাধ্যাভাবও এক অন্ত। যে হেতু একটি অস্তের 
সহিত অর্থাৎ কেবল সাধ্যের সহিত বা কেবল সাধ্যাভাবের সহিত 
সম্বদ্ধ, দে হেতু এ্রকান্তিক। যে হেতু এঁকাপ্তিক নহে, অর্থাৎ সাধ্য ও 
সাধ্যাতাব উভয়ের সহিত সন্বদ্ধ, মে হেতু অনৈকাস্তিক | বিষাণিত্ব হেতু 
করিয়া গোত্ব সাধন করিতে গেলে বিষাণিত্ব-হেতু সনদিগ্ বাঁ অনৈকাস্তিক। 





১৪০ গঞ্চম লেক্চর। 


কেন না, গোত্ সাধ্য, বিষাণিত্ব হেতু। গোগপ্তর যেমন বিষাণ অর্থাং 
ন্ন আছে, মহিযাদিরও দেইরপ শূষ্ন আছে। নুতরাং বিষাদে 
গোত্বরগ সাধের অধিকরণ গৌ-গণ্ততে আছে বলিয়। যেমন মাধ্যের মহিত 
নধদ্ধ। সেইরূপ দাধ্ের অর্থাং গোত্বের অভাবের অধিকরণ মহিষাদিতে 
আছে বলিয়া দাধ্যাভাবের মহিতও নত্ব্ধ। নুৃতরাং বিষাণিত্বহেতু 
অনৈকান্তিক। বিষাধিত্ব-হেতুদধারা গোত্বের নিশ্চয় হইতে গারে না, 
গোস্ের দানহ হইতে পরে মাত্র। এইজন্য & হেতু মনিগ্ধ। বৈশেষিক- 
মতে প্রত্যক্ষ ও অনুমান, এই দুইটিই প্রমাণ। শবাদি স্বত্ব গ্রমাণ 
নহে, উহ! অনুমানের অন্তর্গত। 'গৌরন্তি-অর্থাং গে| আছে, এই 
শব উুনিলে, গো-গনার্থে অস্তিত্বের অনুমিতি হয়। ইহা বৈশেষিক 
আচার্যদিগের মত। প্রন্তক্ষ ধূমদর্শনে যেমন অগ্রততক্ষ বহি অনুমিতি 
হয়। মেইরপ প্রত্যক্ষ শবশ্ুবণে অগ্রতাক্ষ গদার্থের অনুমিতি হয়। 
লি্নদর্পনেই হউক বাঁ শবশুবণেই হউক, অগ্রত্যঙ্ষ গদার্থের জ্ঞানমাত্রই 
অনুমিতি। সৃতরাং নৈয়ায়িকমন্মত উপমানও বৈশেধিকমতে অনুমানের 
অন্ত্দত। 


ষষ্ঠ লেকৃচর। 


-শ্িশিঁশিি 


ন্যায়ুদর্শন। 


্যায়দর্শন মহরি-গোতম-প্রণীত। কেহ কেহ তাহাকে গৌতমনামেই 
অভিহিত করিয়৷ থাকেন। গৌতম তাহার নামান্তর থাকিতে পারে, 
কিন্তু গোতম যে.তাহার নাম, তদ্দিষয়ে সন্দেহ করা যাইতে পারে না। 
দার্শনিক কবি শ্রীহর্ষ চার্বাকের মুখে ন্যায়দর্শনকর্তীর প্রতি তাহার নাম- 
ঘটিত যে উপহাঁনের অবতারণ! করিয়াছেন, তাহার প্রতি লক্ষ্য কবিলে এ 
বিষয়ে সংশয় থাকিতে পারে না। স্তায়দর্শনকর্তা এবং তাহার দর্শনের 
প্রতি উপহাসপুর্ধক নাস্তিকশিরোমণি চার্ধাক বলিতেছেন 
মুক্তয়ে যঃ শিলাত্বায় শান্ত্রমুচে মহামুনিঃ | 
গোতমং তমবেত্যৈব যথা। বিখ তখৈৰ সঃ ॥ 

্যায়দর্শনের মতে আত্যন্তিক ছুঃখধ্বংসই মুক্তি। এই মুক্তিসম্পাদনের 
উদ্দেশে ন্যায়দর্শন প্রণীত। শরীর ও ইন্জিয়াদির সব্বন্ধ থাকিলে দুঃখের 
অত্যন্তবিনাশ অসন্ভব। কেন না, অনিষ্ট বা অনভিমত বিষয়ের সহিত 
ইন্জিয়ের সম্বন্ধ হইলে দুঃখের উৎপত্তি ও অনুভব অনিবার্য । স্ৃতরাং 
মুক্তিকালে শরীর ও ইন্জিয়ের, সহিত আত্মার কোনও সম্বন্ধ থাকিবে 
না) আত্মা শরীর ও ইন্দ্রিয় হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িবেন। শরীরে- 
ক্রিয়াদির সহিত আত্মার বিচ্ছেদ সম্পন্ন হইলে আত্মার যেমন ছুঃথ হইতে 
পারে না, সেইরূপ স্খও হইতে পারে না। অধিক কি, শরীরাদিস্বন্ধ 
ভিন্ন আত্মার কোনরূপ জ্ঞান বা চেতনা হওয়াও একান্ত অম্তব। 
কেন না, আত্মা মনের সহিত, মন ইন্ডিয়ের সহিত, ইন্দিয় বিষয়ের সহিত 
সংযুক্ত হইলে তবে আত্মাতে জ্ঞানের বা চেতনার সঞ্চার বা উৎপত্তি হয়। 
মুক্তিকালে চক্ষুরা'দি ইন্দ্রিয়ের মহিত সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হওয়াতে যেমন আত্মার 
চাক্ষুষাদি জ্ঞান হইতে পারে না, মনের মহিতও সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হয় বলিয়া 


১৪২ যষ্ঠ লেক্চর। 


সেইরূপ মানপিক জ্ঞানও হইতে পারে না। মনের সহিত আত্মার সম্বন্ধ 
মানসিক জ্ঞানের কারণ। ভিন্ন ভিন্ন মনের সহিত ভিন্ন ভিন্ন আত্মার 
সম্বন্ধ আছে বলিয়া ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির মানসিক জ্ঞানও ভিন্ন ভিন্ন সময়ে 
ভিন্নভিন্নরূপ হইয়। থাকে । মানসিক জান সর্বদা সমানভাবে হয় না, 
নুতরাং উহ কাদাচিৎক ; যাহা কাদাচিৎক, তাহ! কাধ্য ) যাহা কার্ধ্য, 
অবশ্ত তাহার কারণ থাকিবে। আত্মার সহিত মনঃসংধোগ মানসজ্ঞানের 
মুখ্য কারণ। ইহা অন্বয়ব্যতিরেকসিদ্ধ বা প্রত্যক্ষগম্য। অপিচ, 
ত্বগিন্ত্িয়ের সহিত মনঃসংযোগ জ্ঞানসামান্ের কারণ; তগ্ভিন কোনও 
জ্ঞান হয় না। চক্ষুরাদ্ি বিশেষ বিশেষ ইন্ড্রিয়ের সহিত মনঃদংযোগ 
চাক্ষুযাদি বিশেষ বিশেষ জ্ঞানের কারণ। ত্বগিন্দ্িয় সর্ধবদেহব্যাপী। 
স্থতরাং যে ইন্দ্রিয়ের সহিত মনের সংযোগ হউক না কেন, ্বগিক্দিয়ের 
সহিত ষনঃসংযোগ অপরিহাধ্য। কেন না, ত্বগিক্দ্িয় দেহব্যাপী বলিয়া 
সমস্ত ইন্দ্রিয় প্রদেশেই ত্বগিক্ডিয়ের বিদ্যমীনত। রহিয়াছে । এখন প্রতিপন্ন 
হইল যে, মুক্তি-অবস্থাতে ইন্্রিয়াদির সহিত সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হওয়াতে আত্মার 
কোনরূপ স্ুখছুঃখ বা জ্ঞান থাকে না_থাকিতে পারে না। মুত্তিকা- 
পাষাণাদি জড়পদার্থের স্তায় মুক্তিকালে আত্মাও স্থখছুঃখ এবং জ্ঞানাদির 
সুম্পর্কপরিশূন্ত হইয়া পড়ে। স্তায়দর্শনের অভিমত মুক্তির এই অবস্থার 
প্রতি লক্ষ্য করিয়। চাব্বাক আস্তিকদ্দিগকে সম্বোধনপৃব্বক উপহাসচ্ছলে 
বলিতেছেন--যে মহামুনির মতে মুক্তিকালে সুখছ্ুঃখের স্তায় জ্ঞান বা 
চেতন। পর্য্যন্ত থাকিবে না, সুতরাং মুক্তির অবস্থা এবং প্রস্তরাদির অবস্থার 
কিছুমাত্র বৈলক্ষণ্য নাই, তাদৃশ মুক্ত্যবস্থার জন্য যিনি শান্ত্র প্রণয়ন 
করিয়াছেন, তাহাকে তোমরা গোতম বলিয়া ত জানই, কিন্তু গোতম 
বলিতে যেরূপ বুঝিতে পার, তাহাকে সেইরূপই বুঝিবে। চার্বাকের 
অভিপ্রায় এই যে, গোশব ও তমপ্রত্যয়ের যোগে গোতমশব্দ নিষ্পন্ন 
হইয়াছে। গোশবের অর্থ গো-পণ্ড, তমপ্রত্যয়ের অথ শ্রেষ্ঠ বা উৎকৃষ্ট । 
অতর্রধ চার্বাকের অভিপ্রায় অন্গনারে গোতমশবের ব্যুৎপত্তিলভ্য 
অর্থ হইতেছে শ্রেষ্ঠ বা উত্কষ্ট গো-পণ্ড। ধিনি জড়াবস্থার্ূ্প মুক্তির জন্ত 
শাস্ত্র বলিয়াছেন, তিনি শ্রেষ্ঠ গো-পশু বলিয়া! বিবেচিত হইবারই ধোগ্য। 
এতদ্বারা স্থির হইতেছে যে, অন্ততঃ শ্রীহর্ষের মতে ন্তায়দর্শনপ্রণেতার 





ন্যায়দর্শন | ১৪৩ 


নাম গোতম, এ বিষয়ে সনেহ করিবার কারণ নাই । তাহার আর একটি 
নাম অক্ষপাদ। তদনুপারে ন্তায়দর্শনেরও আর একটি নাম অক্ষপাদদর্শন। 
এই দর্শনে তর্কপদার্ঘ বিশেষরূপে নিরূপিত হইয়াছে এবং এই দর্শনের 
যথাবদন্ুণীলন করিলে তর্কশক্তির সবিশেষ সমুন্মেষ হয় বলিয়া ইহাকে 
তর্কশান্ত্রও বলে। ন্তাঁয়দর্শনের অপর নাম আব্বীক্ষিকী। এনু'শবের অর্থ 
পশ্চাং, “ঈক্ষাশবের অর্থ দর্শন বা আলোচন। শ্রবণের পর আত্মার 
আলোচন। বা মনন “অবীক্ষ/শবের অর্থ । স্তায়দর্শন বা গ্তায়বিস্তা অন্বীক্ষার 
নির্বাহ করে বণিয়া তাহার .নাম আহ্বীক্ষিকী। ভাষ্যকার বাংস্তায়ন 
আহ্বীক্ষিকী বিগ্ভাকে অতি উচ্চতম স্থানে স্বাপিত কবিয়াছেন। তিনি 
বলিয়াছেন 
সেয়মান্বীক্ষিকী-_ 
প্রদীপঃ সব্ববিগ্যানামুপায়ঃ সর্বকর্্মরণাম্‌ । 
আশ্রয়ঃ সব্বধন্মীণাং বিদ্বোদ্েশে প্রকীর্তিতা ॥ 

বিদ্যোদ্দেশে অর্থাৎ বিদ্ার পরিগণনাস্থলে এই আমব্বীক্ষিকী বিদ্যা সমস্ত 
বিদ্যার প্রদীপরূপে, সমস্ত কর্মের উপায়রূপে এবং সমস্ত ধর্মের আশ্রয় 
অর্থাৎ অবলদ্বনরূপে কথিত হইয়াছে। শ্লোকটির চতুর্থ চরণে “বিদ্ভোদেশে 
গরীয়সী” এইরূপ পাঠীান্তরও আছে। তাহার অর্থ বিদ্যার গণনায় 
আব্ীক্ষিকী বিদ্যা শ্রেষ্ঠতর। আম্বীক্ষিকীকে এইরূপ উচ্চস্থানে স্থাপন 
করিয়া ভাষ্যকার নিজের সুঙ্ষুদশিতারই পরিচয় দিয়াছেন, কিছুমাত্র 
অত্যুক্তিদোষে দূিত হন নাই। বস্ততই আধীক্ষিকী তাদৃশ উচ্চামন 
.পাইবার সম্পূর্ণ উপঘুক্ত। আবীক্ষিকী বা স্যারবিস্তা_ শ্রুতি, স্থৃতি ও 
পুরাণে ভূয়োভূয়ঃ প্রশংসিত । মোক্ষধর্ম্নে ভগবান্‌ বেদব্যাস বলিয়াছেন 
যে, গরীয়সী আহ্ীক্ষিকী অবলোকন করিয়া আমি উপনিষদের 
সারোদ্ধার 'করিতেছি। নব্যন্তায়ের অভ্যুদ্য়ে গোতমের শ্তায়দর্শনের বা 
আহ্বীক্ষিকীর অধ্যয়ন-অধ্যাপনা বর্তমানসময়ে বিরল হইতে বিরলতর 
হইলেও, বাৎস্তায়নের স্তায়ভাষ্য, উদ্ভোতকরের হ্যায়বাত্তিক, বাচন্পতি- 
মিশরের ন্তায়বার্তিক-তাৎপর্য্য-টাকা, উদয়নাচার্ষ্যের স্তায়বার্ভিক-তাৎপর্য্য- 
পরিশ্ুদ্ধি, জয়স্তভটের স্ায়মঞ্জরী প্রভৃতি কতকগুলি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ এখনও 
বিলুপ্ত হয় নাই। ন্তায়দর্শনে সচরাচর ৫৪৭টি সুত্র দেখিতে পাওয়া! যায়। 


১৪৪ যষ্ঠ লেক্চর। 


কিন্তু মতভেদে এই স্কাত্রসংখার কিছু তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। স্থলবিশেষে 
ভাস্বের অংশবিশেষ শুত্রব্ূপে এবং স্থত্র ভাষ্কের অংশবিশেষরূপে বিবেচিত 
হওয়াতেই স্ত্রসংখ্যার তারতম্য ঘটিয়াছে। কিন্তু সর্বতন্্শ্বতন্ত্র-বাচস্পতি- 
মিশ্র-কৃত স্যায়স্থচীনিবন্ধ গ্রন্থে সুত্রসংখ্যা পরিশুদ্বরপে নিদিষ্ট আছে। 
বাচস্পতিমিশ্রের মতে ন্তায়দর্শনের সুত্রনংখ্যা ৫২৮। হ্ত্রগুলি ৫ অধ্যায়ে 
এবং প্রত্যেক অধ্যায় ছুই-ছুইটি আহ্িকে বিভক্ত । সুতরাং বুঝা যাইতেছে 
যে, মহধি গোঁতম দশদিনে ন্যায়দর্শন রচন1 করিয়াছিলেন। প্রথমাধ্যায়ের 
প্রথমাহিকে-_ প্রমাণ, প্রমেয়, সংশয়, প্রয়েষজন, দৃষ্টান্ত, সিদ্ধান্ত, অবয়ব, তর্ক 
ও নির্ণয় পদ্দার্থের নিরূপণ । দ্বিতীয়াহিকে-_বাদ, জল্প, বিতণ্ডা, হেত্াভাদ ও 
ছলের নিরূপণ দ্বিতীয়াধ্যায়ের উভয় আহ্িকেই প্রমাণপরীক্ষা। তৃতীয় 
ও চতুর্থ অধ্যায়ে প্রমেক্পপরীক্ষা । পঞ্চম অধ্যায়ের প্রথমাহিকে জাতি এবং 
দ্বিতীয়াহ্িকে নিগ্রহস্থান বিশেষরূপে নিরূপিত এবং প্রসঙ্গক্রমে অপরাপর 
বিস্তর বিষয়ের আলোচনা করা হইয়াছে । স্তায়দর্শনের প্রথম স্থত্রটি এই-_ 
প্রমাণপগ্রমেয়ংশয় প্রয়োজনদৃষ্টাস্ত িদ্ধান্তাবয়বত্কনির্ণয়বাদজন্নবিতগ্া- 
হেত্বাভাসচ্ছলজাতিনিগ্রহস্থানানাং তত্বজ্ঞানান্লিঃশ্রে়মাধিগমঃ। 
এই স্ত্রদ্বার! স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে যে, গোতম যোড়শপদীর্ঘবাদী । 
তাহার মতে-_প্রমাণ, প্রমেয়, সংশয়, প্রয়োজন, দৃষ্টান্ত, সিদ্ধান্ত, অবয়ব, 
তর্ক, নির্ণয়, বাদ, জল্প, বিতণ্ঁ1, হেত্বাভাস, ছল, জাতি ও নিগ্রহস্থান, এই. 
ষোলটি পদার্থ । ইহাদের তত্বজ্ঞান হইলে নিঃশ্রেয়স বামুক্তি লাভ কর! যায়। 
তন্মধ্যে প্রমেয়পদার্থের তত্জ্ঞান অন্ঠনিরপেক্ষরূপে নি:শ্রেয়সহেতু, প্রমাণাদি- 
পদার্থের তত্ৃজ্ঞান পরম্পরাস্ধন্ধে নিঃশ্রেয়সহেতু । দেহার্দিতে আত্ম 
নিশ্চয় 'সমস্ত অনর্থের মূল । দ্রেহাদিতে আত্মনিশ্যয় আছে বলিয়! স্বভাবতই 
দেহাদির অন্থুকুলবিষয়ে রাগ বা উৎকট অভিলাষ এবং দেহাদির প্রতিকূল- 
বিষয়ে দ্বেষ হইয়। থাকে । রাগ ও দ্বেষ দোষ বলিয়! আখ্যাত। রাগ ও 
দ্বেষ থাকিলে তত্তদ্বিষয়ে প্রবৃত্তি অনিবাধ্য। থে বিষয়ে রাগ জন্মে, তাহার 
সংগ্রহ, এবং যে বিষয়ে দ্বেষ জন্মে, তাহার পরিহার করিবার প্রবৃত্তি 
লোকের স্বাভাবিক। প্রবৃত্তি হইলেই ধর্্াধন্ম্নঞ্চয় হইবে। কোন প্রবৃত্তিদ্বারা 
অর্থাৎ শান্ত্রবিহিতবিষয়ে প্রবৃতিদ্বারা ধর্মের, এবং কোন প্রবৃত্তিদ্বার৷ অর্থাৎ 
 প্রতিষিদ্ধবিষয়ে প্রবৃত্তিদ্ধারা অধন্মের সঞ্চয় হয়। ধর্্াধর্ম সুখছুঃখের হেতু, 


ন্যায়দর্শন | ১৪৫ 


জন্ম বা শরীরপরিগ্রহ ভিন্ন স্থুথছুঃখ হইতে পারে না। স্থতরাং প্রবৃত্তি 
জন্মের কারণ। অর্থাৎ প্রবৃত্তিঞ্চিত ধর্মাধর্মের ফলভূত সুখছুঃখভোগের 
জন্য জন্ম বা শরীরপরিগ্রহ হইয়া থাকে । শরীরপরিগ্রহ হইলে সুখছুঃখের 
ভোগ সম্পন্ন হয়। দেখা যাইতেছে যে, মিথ্যাজ্ঞান অর্থাৎ দেহাদিতে আত্ম- 
বুদ্ধিই যত অনর্থের মূল। আত্মা বাস্তবিক দেহাদি নহে, দেহাদি হইতে 
ভিন্ন, এইরূপ তত্বজ্ঞান অর্থাৎ যথার্থ আত্মজ্ঞান হইলে “দেহই আত্মা এই 
মিথ্যাজ্ঞান অপগত হয়। আত্মা অবিনাশী। দেহাদির ন্যায় আত্মার বিনাশ 
হইতে পারে না। সুতরাং দেহাদিকে আত্ম বলিয়া জানাতে দেহাদির 
বিনাশ বা অনিষ্ট সম্পাদনে'সমুদ্যত ব্যক্তির প্রতি যেমন দ্বেষ উপস্থিত হয়, 
এবং তদ্বার! তাহার বিনাশ সম্পাদন করিয়া অধর্মসঞ্চয় কর। হয়; আত্মা 
দেহাদি নহে, দেহাদি হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন, এইরূপ তন্বজ্ঞান হইলে আর 
দেহের প্রতিকূল আচরণে সমুগ্ত ব্যক্তির প্রতি তেমন দ্বেষ হইতে পারে 
না, সুতরাং তৎপ্রযুক্ত অধর্মসঞ্চয়ও হয় না। যাহারা দেহকে আত্ম! 
বলিয়া জানেন, তাহার! দেহের অনিষ্টকারীকে যেরূপ দ্বেষ করিয়া থাকেন, 
দেহের অনুকুল অ্রকৃ-চন্দন-বসনাদির অনিষ্টকারীকে দ্বেষ করিলেও সেরূপ 
দ্বেষ করেন না। অতএব তত্বজ্ঞানদ্বারা মিথ্যাজ্ঞান অপগত হইলে রাগ- 
দ্বেষ অপগত হয়, রাগ-দ্বেষ অপগত হইলে তন্ুলক প্রবৃত্তি এবং তজ্জন্ত 
ধর্ম ধর্মমনঞ্চয় অপগত হয়। পূর্ববসঞ্চিত ধন্মাধর্মন তত্বজ্ঞানদ্বার! বিনষ্ট বা 
দগ্ধ হইয়] যায়। স্থতরাং তাহ! আর থাকিতে পারে না, বা থাকিলেও 
ফল অর্থাৎ সুখদ্বঃখ উৎপাদনে সমর্থ হয় না। ধন্দীধর্ম্বের অপগমে তৎফল- 
ভোগের জন্য জন্ম ব! শরীরপরিগ্রহ হয় না। শবীরপরিগ্রহের অপগম 
হইলেই ছঃখের অপগম হয়। এই ছুঃখের অপগমেই নিঃশ্রেয়ন বা মুক্তি । 
এখন সংক্ষেপে গোতমোক্ত পদার্থগুলির পরিচয় প্রদত্ত হইতেছে । 

প্রমার করণের নাম প্রমাণ। প্রমাণ চারিপ্রকার-- প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপ- 
মান ও শব । প্রতি অর্থাৎ বিষয়ের প্রতি অক্ষ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়। “প্রতি'শবের 
দ্বার। বিষয়ের সহিত ইন্দ্রিয়ের সন্নিকর্ষ বা সন্বন্ধ লাভ হইতেছে। এতদ্্ার! 
বুঝা যাইতেছে যে, বিষয়সন্গিকষ্ ইন্্য় প্রত্যক্ষ প্রমাণ । বিষয়ের সহিত ইন্দ্রি- 
য্নের সন্নিকর্ষ বা সম্বন্ধ হইলে বিষয়ের যে ষথার্থ অনুভব হয়, তাহার নাম 
প্রত্যক্ষ প্রমা। বিষয়সন্নিকৃষ্ট ইন্দ্রিয় এই প্রত্যক্ষ পরমার করণ বলিয়া প্রত্যক্ষ- 


১০) 


১৪৬ ষষ্ঠ লেক্চর । 


প্রমাণ। ইন্দিয়--প্রত্যক্ষপ্রমাণ, বিষয়ের সহিত ইন্দিয়ের ন্বন্ধ_-ব্যাপার, 
তজ্ন্তঠ বিষয়গোচর যথার্থ অন্থুভব ব! প্রত্যক্ষ প্রমা--ফল। প্রত্যক্ষ প্রমার 
ফল--হান, উপাদান বা উপেক্ষাবুদ্ধি। অর্থাৎ বিষয়টি যথার্থরূপে জাদিলে 
বিষয়টি যদি নিকৃষ্ট বা অনিষ্টকারী বলিয়! প্রতীয়মান হয়, তবে তদ্দিষয়ে 
হানবুদ্ধি অর্থাৎ ইহ1 অনিষ্টকারী, অতএব ইহার সংশ্রব পরিত্যাগ কর! 
উচিত, এইরূপ বুদ্ধি হইয়া থাকে । জ্ঞাতবিষয়টি উৎকৃষ্ট বা হিতকর বলিয়া 
বিবেচিত হইলে তদ্িষয়ে উপাদানবুদ্ধি অর্থাৎ ইহা! উপকারী, অতএব 
ইহার সংগ্রহ করা উচিত, এইরূপ বুদ্ধি হইয়। থাকে। জ্ঞাতবিষয়টি 
দ্বারা ইষ্ট বা অনিষ্ট কিছুই হইতে পারে না বলিয়া বোধ হইলে তদ্বিষয়ে 
উপেক্ষাবুদ্ধি হইয়া থাকে । 

অন্কু পশ্চাৎ মান জ্ঞান। অনুমিতিষ্থলে প্রথমতঃ লিঙ্গদর্শন, তৎপরে 
লিঙ্গ-লিঙ্গীর অর্থাৎ হেতৃ-সাঁধোর দন্বন্ধজ্ঞান অর্থাৎ ব্যাপ্তিজ্ঞান, পরিশেষে 
অপ্রত্যক্ষ অর্থের অর্থাৎ সাধ্যের জ্ঞান হয়। এই সাধ্যের জ্ঞান অন্থমিতি, 
ব্যাপ্তিজ্ঞান বা লিঙ্গ-লিঙ্গীর সম্বন্ধদর্শন করণ, পরামর্শ অর্থাৎ সাধ্য-ব্যাপ্ডি- 
যুক্ত হেতুর পক্ষবৃত্তিত্বজ্ঞান ব্যাপার। লিঙ্গ-লিঙ্গীর সম্বন্ধ অর্থাৎ ব্যাপ্তি- 
স্তান করণ বলিয়৷ তাহাই অনুমান। কেন না, প্রথমতঃ লিঙগদর্শন, 
তৎপরে ব্যাপ্তির জ্ঞান বা স্মরণ হইয়া থাকে | “অন্ধ” পশ্চাৎ অর্থাৎ লিঙ্গ- 
দর্শনের পরে “মানঃ কিনা জ্ঞান, ইহাই হইল অন্ুমান। লিঙ্গদর্শনের পরেই 
লিঙ্গ-লিঙ্গীর সম্বন্ধজ্ঞান বা ব্যাপ্তিজ্ঞান হইয়া থাকে, অতএব লিঙ্গ-লিঙ্গীর 
সম্বন্ধজ্ঞান বা ব্যাপ্তিভ্ঞানই অনুমান । অনুমান প্রত্যক্ষপূর্বক। কেন না, 
লিঙের প্রত্যক্ষ না হইলে লিঙ্গ-লিঙ্গীর সনবন্ধম্মরণ হইতে পারে মু 
পিঙ্গ-লিঙ্গীর সম্বন্ধও পূর্বে প্রত্যক্ষ হইয়াছে । কেন না, অননুভূত-বিষয়ের 
স্মরণ হইতে পারে না। যে বাক্তি মহীনসে বহি ও ধূমের সহচার অর্থাৎ 
সহাবস্থান প্রত্যক্ষ করিয়াছে, কালে পব্ধতে ধৃম দৃষ্ট হইলে তাহার পক্ষেই 
বহিধূমের সন্বন্ধের ৰা ব্যাপ্তির স্মরণ হইতে পারে, যে ব্যক্তি বহি ও ধূমের 
সামানাধিকরণ্য কখনও অন্তুভব করে নাই, তাহার পক্ষে বহি-ধুমের 
ব্যাপ্তিম্মরণ অসম্ভব । ফলতঃ অব্যবহিত ভাবেই হউক বা ব্যবহিত 
ভাবেই হউক, অন্থুমানের মূলে অবস্থাই প্রত্যক্ষ থাকিবে । অনুমান তিন- 
 প্রকার--পূর্বব শেষবৎ ও সামান্ততোদৃষ্ট। কারণ ও কার্যের মধ্যে 





হ্যায়দর্শন | ১৪৭ 


পুর্বে কারণের সত্তা থাকে, শেষে অর্থাৎ উত্তরকাঁলে ভদ্বারা কার্যের 
উৎপত্তি হয়। এইজন্য পুর্বশব্দের অর্থ কারণ, শেষশবের অর্থ কার্য্য। 

অতএব যেখানে কারণদ্বারা কাধ্যের অন্থমান হয়, তাহার নাম পূর্ববৎ। | 
মেঘের উন্নতিবিশেষ দেখিয়া, বুষ্টি হইবে, শরইপ্রকার অনুমান কর! হইয়া 
থাকে। এ অনুমান পুর্ববৎ অন্থমান। এস্বলে কারণের দ্বারা কার্ধ্ের 

অনুমান হইতেছে। কেন না, মেঘের উন্নতিবিশেষ বৃষ্টির কারণ । কার্য্যের 

দ্বারা কারণের অনুমানের নাম শেষবৎ। নদীর পরিপূর্ণতা এবং আ্োতের 

প্রথরতাবিশেষ দর্শনে থে অতীত বৃষ্টির অনুমান হয়, তাহ শেষবৎ 

অন্ুমান। কেন না, নদীর পরিপূর্ণতা এবং স্রোতের প্রথরতাবিশেষ বৃষ্টির 

কার্য্য। বুষ্টিজলই উহ! সম্পাদন করিয়াছে । স্থৃতরাং এখানে কার্যযদর্শনে 

কারণের অনুমান হইতেছে। পূর্বব ও শেষবৎ অনুমান ভিন্ন সম্ত 

অনুমানের নাম পামান্ততোদৃষ্ট । দেশান্তরদৃষ্ট স্তর দেশান্তরে দশন এ 

বন্তর গতিপুর্বাক দেখিতে পাওয়া ষায়। গৃহে দৃষ্ট ব্যক্তির বথ্যাতে দর্শন 
তাহার গতিপূর্বক, পন্দেহ নাই। আদিত্যও দেশান্তরে দৃষ্ট হইয়! 
দেশান্তরে দৃষ্ট হয়, অতএব অপ্রত্যক্ষ হইলেও আদিত্যের গতি অনুমান 
করা যাইতে পারে। এই অনুমান সামান্ততোদৃষ্ট। কেন না, সামান্ততঃ 

দেখা গিয়াছে যে, অন্তত্র দৃষ্টের অন্াত্র দর্শন গতিপুর্বক। তদনুসারে 

আদিত্যের গতির অনুমান করা হইতেছে। 

পূর্ববৎ*শব মন্তর্থ-প্রতায় ও বতি-প্রত্যয়, এই উভয় প্রকারেই 

বাৎপাদিত হইতে পারে। মন্তর্থ-প্রত্যয়-পক্ষে পুর্ববৎশন্দের অর্থ 
যু, পূর্বশবের অর্থ কারণ। কারণযুক্ত অন্মানের উদাহরণ 

প্রদর্শিত হইয়াছে । বতিপ্রত্যয়ান্ত হইলে পূর্ববশব্ের অর্থ পূর্ব- 

তুলা । তদনুসারে প্রকারাস্তরে অনুমানের ত্রেবিধ্য ব্যাখযাত হইতেছে। 

ষে স্থলে সন্বস্কগ্রহণকালে অর্থাৎ ব্যাপ্তিজ্ঞানকালে লিঙ্গ-লিঙ্গীর বা সাধ্য- 

সাধনের প্রত্যক্ষ হইয়া থাকে, পরে প্রত্যক্ষ-পরিদৃষ্ট সাধনদ্বার! তথাবিধ 

অর্থাৎ প্রত্যক্ষদর্শনযোগ্য সাধ্যের অনুমান হয়, সে স্থলে পূর্বদৃষ্টের 

তুল্যরূপ সাধ্যের অনুমান হয় বলিয়া এ অনুমানের নাম পূর্বব। 

মহানসে ধূম ও বহর সম্বন্ধ বা ব্যাপ্তি গৃহীত হইয়াছে। কালাস্তরে 
তথাবিধ অর্থাৎ মহানমদৃষ্ট ধূমের তুল্য ধুম দেখিয়! পর্বতাদিতে তথাবিধ 


১৪৮ ষষ্ঠ লেক্চর। 


অর্থাং মহানসতৃষ্ট বহর তুল্য বহির অনুমান হয়। এই অন্মানের নাম 
পূর্ববৎ অনুমান । অর্থাৎ যে স্থলে ব্যাপ্তিগ্রহণকালে সাধ্য 'ও সাধন 
উভয়ের প্রত্যক্ষ হয়, তথাবিধ সাধনদ্বারা তথাবিধ সাধ্যের অনুমান 
পূর্ব অন্থুমান। পূর্ববৎ-অনুমান-স্থলে প্রত্যক্ষসাধনদ্বার! প্রত্যক্ষযোগ্য 
সাধ্যের অনুমান হইয়া থাকে। অর্থাৎ পূর্বে প্রত্ক্ষদৃষ্ট নিয়তসম্বদ্ধ 
পদার্থদ্বয়ের একটি পদার্থ দেখিয়া অপর পদার্থের অনুমান হয়। পরিশেষ 
অনুমানের নাম শেষবৎ অন্ুমান। একটি উদাহরণ প্রদর্শিত হইতেছে। 
শবের উৎপত্তি ও বিনাশ প্রত্যক্ষসিদ্ধ। সুতরাং শব সামান্য বা 
বিশেষাদি পদার্থ হইতেই পারে না। কেন না, সামান্াদি পদার্থের 
উৎপত্তি ও বিনাশ নাই। দ্রবা, গুণ ও করা, এই তিন পদার্থ অনিত্য 
হইয়া থাকে। শব্দও অনিত্য, অতএব শব্ব_ দ্রব্য, গুণ অথবা কর্ম, 
পদ্দার্থ বলিয়া বিবেচিত হইবে, এইরূপ সন্দেহ উপস্থিত হইতে পারে। 
বিশেষরূপ বিবেচনা করিলে বুঝিতে পারা যায় যে, শব দ্রব্যপদার্থ 
হইতে পারে না। কারণ, উৎপন্ন দ্রব্যমাত্রই অনেকক্রব্যবৃত্তি। কোনও 
উৎপন্ন দ্রব্য একমাত্র দ্রব্যে থাকে না, অনেক দ্রব্যেই থাকে । কপাল 
ও কপালিকা এই ভ্রবাদ্য় ঘটের অধিকরণ। যে সকল তন্তদ্বারা পট 
বা বস্ত্র প্রস্তত হইয়াছে, এ সমস্ত তন্ত পটের অধিকরণ। অবয়বদ্রব্য- 
সকলের পরস্পর সংযোগে অবয়বিদ্রবযোর উৎপত্তি হয়। অতএব 
অবয়বদ্রব্য অবয়বিদ্রব্যের আশ্রয় বা অধিকরণ। অবয়বদ্রব্য অনেক, 
সুতরাং অবয়বিদ্রব্যও অনেকাশ্রিত বা অনেকবৃত্তি। উহা একদ্রব্যবৃত্তি 
হইতেই পারে না। শব কিন্তু একদ্রব্যবৃত্তি। আকাশ শবের অধিকরণ। 
আকাশ একমাত্র, অনেক নহে। জন্তদ্রব্যমাত্রই অনেকদ্রব্যবৃত্তি, শব 
জন্য, অথচ একক্রব্যবৃত্তি। এই হেতুতে, শব দ্রব্যপদার্থ হইতে পারে না। 
শব্দকে কর্ম্পদীর্থ বলিয়া বিবেচনা করাও সঙ্গত নহে। তাহার কারণ 
এই যে, কর্ম কন্মাত্তরের জনক হুয় না। শব্ধ কিন্তু শব্যাস্তরের জনক 
হয়া থাকে । অভিথাতদ্বারা যে শব উৎপন্ন হয়, দুরস্থ ব্যক্তি এ 
শব্দ শুনিতে পায় না। প্র প্রথমোৎপন্ন শব শব্দান্তরের উৎপত্তি করে, 
শব্ান্তর অপর শবের, অপর শব অন্য শব্দের উৎপত্তি করে। এইরূপে 
রীচিতরঙ্গের স্তায় শবপরম্পরার উৎপত্তি হইতে হইতে দুরস্থ শ্রোতার কণ- 


ন্যায়ুদর্শন | ১৪৯ 


গ্রদেশে যে শবের উৎপত্তি হয়, দূরস্থ শ্রোতা সেই শব্ই শুনিতে পায়। 
নিকটস্থ ব্যক্তি তীব্র, দূরস্থ ব্যক্তি মন্দ, দূরতরস্থ ব্যক্তি মন্দতর শব্দ 
শুনিয়া থাকে । সকলে এক শব্ধ অবণ করিলে, তাহার তীব-মন্দ-ভাব 
হইতে পারে না। অতএব স্থির হইতেছে যে, উক্ত স্থলে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি 
ভিন্ন ভিন্ন শব্ধ শ্রবণ করে। পূর্ধব-পুর্ব শব্দ পর-পর শবের জনক । অতএব 
শব্ধ কর্ম নহে। কেন না, কর্ম কন্মান্তরের জনক হয় না। উক্তপ্রকারে 
শবের দ্রব্যত্ব এবং কর্মত্ব প্রতিধিদ্ধ হইল। শবে সামান্তত্বাদির প্রসক্তি ব৷ 
সম্ভাবনাই নাই। কেন না, শব্ধ অনিত্য, সামান্তাদি নিত্য । স্থতরাং 
সম্ভতাবিতের মধ্যে যাহা অবশিষ্ট রহিল, শব্দ সেই পদার্থ। এইরূপে শবের 
গুণত্ব স্থির হইতেছে। ইহাই শেষবৎ অন্ুমান। 

যে লিঙ্গী বা সাধ্য কোনকালে প্রত্যক্ষ হয় না, অথচ প্রত্যক্ষ 
সাধা ও সাধন অন্গুদারে সামান্ততঃ ব্যাপ্তিজ্ঞানবলে অন্মিত হয়, তাদৃশ 
নিতাপরোক্ষ সাধ্যের অনুমান সামান্ততোদৃষ্ট অন্থমান। কেন না, সে স্থলে 
নামান্ততঃ কোন বিষয় দেখিয়। অপ্রত্যক্ষ অর্থাৎ প্রত্যক্ষের অযোগ্য বিষয়ের 
অনুমান হইতেছে । রূপাদির উপলব্ধি বা! জ্ঞান দ্বার! চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়ের 
অন্নুমান সামান্ততোদৃষ্ট অন্থুমান। ছিদাদিক্রিয়া পরশু-প্রভৃতি-করণসাধ্য, 
পাকাদিক্রিয়া কাষ্ঠাদিবপ-করণমাধা, এইরূপ বিশেষ বিশেষ ক্রিয়া বিশেষ- 
বিশেষ-করণসাধ্য দেখিয়া ক্রিয়ামাত্রই করণসাধ্য, এইরূপ সামান্তাকারে 
ব্যাপ্তিগ্রহণ হয়। অনন্তর রূপাদির উপলব্িও ক্রিয়া, উহাও করণসাধ্য, 
এইরূপে রূপাদির উপলব্ধির করণ অনুমিত হয়। যাহ! রূপার্দির 
উপলব্ধির করণরূপে অনুমিত, তাহাই চক্ষুরাদি ইন্ত্রিয়। ইন্দ্রিয়সকল 
অতীন্ড্রিয়। উহ1 কোনকালেও প্রত্যক্ষ হয় না। সচরাচর লোকে 
যে সকল সংস্থানকে চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয় বলিয়া থাকে, উহা বস্ততঃ চক্ষু- 
রাদি ইন্দ্রিয় নহে, ইন্দ্রিয়ের অধিষ্ঠান বা স্থান মাত্র। প্রকারান্তরে 
অনুমান দুইপ্রকার-_স্বার্থ ও পরার্থ। নিজে বুবিবার জন্য যে অনুমান 
কর! হয়, লিঙ্গদর্শন ও ব্যাণ্ডিম্মরণেই তাহা পর্্যবমিত হইয়া থাকে। 
পরার্থ অনুমান অর্থাৎ অন্যকে বুঝাইবার জন্ত যে অনুমান হয়, তাহ 
হ্যায়সাধ্য। পঞ্চ-অনয়ব-যুক্ত বাক্যবিশেষের নাম হ্যায়। অবয়ৰদকল 
পরে প্রদর্শিত হইবে। প্রতাক্ষ প্রায় বর্তমানবিষয়গ্রহণেই পর্যযব- 


১৫০ | ষষ্ঠ লেক্চন্ব। 


পিত। অনুমান তেমন নহে। অনুমানের কার্যযক্ষেত্র বর্তমানের স্তায় 
অতীত ও অনাগত বিষয়েও অপ্রতিহত। অর্থাৎ অনুমান বর্তমান 
বিষয়ের ন্যায় অতীত ও অনাগত বিষয় গ্রহণেও সমর্থ। ধুমদর্শনে 
বর্তমান অগ্নির, নদীবৃদ্ধিদর্শনে অতীত বৃষ্টির, এবং মেঘোন্নতিদর্শনে 
অনাগত বা ভবিষ্যৎ বুষ্টির অন্ুমীন হয়। 

প্রসিদ্ধ পদার্থের সাদস্তদ্বারা অপ্রপিদ্ধ পদার্থের সাধন বা প্রজ্ঞা- 
পনের নাম উপমান। সংজ্ঞা এবং সংজ্ঞীর সম্বন্ধজ্ঞান অর্থাৎ এই 
পদার্থের এই নাম, বা এই বস্ত এই শবের অর্থ, এতাদুশ জ্ঞান উপ- 
মানের ফল। উদ্দাহরণের সাহায্যে ইহা বুঝিবার চেষ্টা] করা যাইতেছে । 
গবয়নামক একপ্রকার আরণ্য পশড আছে। গবয় কিরূপ পশু, তাহ! 
নগরবাপীর অপরিজ্ঞাত | কথাপ্রসঙ্গে নগরবাসীর প্রশ্বান্ুনারে আরণ্যক 
বলিল যে, গবয়-পশ্ড দেখিতে গোপশুর মত। কালে এ নগরবাসী 
মৃগয়াদিপ্রয়োজনে অরণ্যে গমন করিলে তথায় দৈবাৎ একটি গবয়- 
পণ্ড তাহার দৃষ্টিপথে পতিত হইল। নগরবামী এ অদৃষ্টপূর্ব পশুতে 
গো-পণ্ডুর সাদৃশ্ত দেখিতে পাইয়া আরণ্যকের পৃব্ববাক্যান্থমারে বুঝিতে 
পারিল যে, এই অদৃষ্টপূর্ব পশুর নাম গবয় বা এইজাতীয় পণ্ড গবয়- 
শব্দের অর্থ। এন্তলে প্রসিদ্ধ গো-পণুর সাদৃশ্ঠদ্বারা অপ্রপিদ্ধ গবয়- 
পশুর সাধন বা প্রজ্ঞাপন হইয়াছে। কেন না, অদৃষ্টপৃর্ব পশুতে গোপস্ুর 
সাদৃষ্ত দর্শন করিয়াই, ইহার নাম গবয় বা এইজাতীয় পশু গবয়শব্দের 
অর্থ_দ্রষ্টা ঈদৃশ জ্ঞানে উপনীত হইয়াছে । প্রক্কতস্থলে অদৃষটপূর্ব আরণ্য- 
পশুতে গোসাদৃশ্তদর্শন_-করণ, আরণ্যকের বাক্য বা তদর্থের স্মরণ 
ব্যাপার, এইজাতীয় পশু গবয়শবের ক্বর্থ, এই জ্ঞান--ফল। 

আতপ্তোপদেশের নাম শব্দপ্রমাণ। শব্দ গ্রতিপাস্ত-অর্থবিষয়ে যিনি 
অন্রান্ত, ধাহার প্রতারণাদিরূপ দূষিত অভিসন্ধি নাই, নিজে যাহ! যথার্থ 
বলিয়৷ জানিয়াছেন, তাহা অন্তকে বুঝানই ধাহার উদ্দেশ্য, তিনিই 
তদ্বিষয়ে আপ্ত। তাহার উপদেশ শব্ধরূপ প্রমাণ । ভাম্মকার বলেন, এই 
হিসাবে খধি, আধ্য ও শ্রেচ্ছ, সকলেই আপ্ত হইতে পারেন। তিনি 
আরও বলেন যে, এই সকল প্রমাণদ্বারা দেবতা, মনুষ্য ও পশ্বাদির 
ব্যবহারনির্বাহ হয়, তত্তিন্ন হইতে পারে না। 


ন্যায়দর্শন। ১৫১ 


প্রমেয় দ্বাদশপ্রকার। এই প্রমেয়ের জ্ঞান অপবর্গের উপযোগী । 
আঁস্মা, শরীর, ইন্ছিয়, অর্থ, বুদ্ধি, মন, প্রবৃত্তি, দোষ, প্রেত্যতাব, ফল, 
ছুঃখ ও অপবর্গ, এই দ্বাদশটি প্রমেয়। আত্মা ভ্রষ্টা ও ভোক্তা । ইচ্ছা, 
দ্বেষ, প্রধত্ব, সুখ, দুঃখ ও জ্ঞান, আত্মার লিঙ্গ বা অন্ুমাপক হেতু । বে- 
জাতীয় বিষয়ের সন্নিকর্ষবশত্রঃ স্থখের উপলব্ধি হইয়াছিল, সেইজাতীয় 
বিষয় দর্শন করিলে তাহার উপাদানবিষয়ে ইচ্ছা হইয়া থাকে। 
অনেকার্থদশী এক বস্তুরই এইরূপ ইচ্ছা হইতে পারে। যে পূর্বে কোন- 
জাতীয় পদার্থের সন্নিকর্ষে সখের অনুভব করিয়াছিল, তাহারই কালান্তরে 
তজ্জাতীয় অপর পদার্থ দর্শন করিলে তাহার উপাদানবিষয়ে ইচ্ছা হইতে 
পারে। সুতরাং পূর্বাপরকালস্থায়ী স্বখোপলব্ধি এবং সুখনাধনপদার্থ- 
বিষয়িণী ইচ্ছার কর্তী এক পদার্থ স্বীকার করিতে হইতেছে। সেই পদার্থই 
_আত্মা। উক্তরীতিক্রমে দ্বেষাদিদ্বারাও আত্মার অনুমান করা যাইতে 
পারে। আত্মার ভোগায়তন অর্থাৎ যাহাতে অধিষ্টিত হইয়া আত্মা ভোগ 
করেন, তাহাই শরীর। আত্মার ভোগদাঁধন ইন্দ্রিয়। ইন্িয় পাচপ্রকার-- 
ঘ্বাণ, রসন বা! রসনা, চক্ষু, ত্বক্‌ ও শ্রোত্র। ইন্দ্রিয়মকল ভূত হইতে উৎপন্ন। 
ভূত পাচপ্রকার--পৃথিবী, অপ্‌ বা জল, তেজ, বায়ু ও আকাশ । 
ভ্রাণেন্টরিয় পাথিব, রসনেক্ত্রির় আপ্য বা জলীয়, চক্ষুরিত্দ্রিয় তৈজস, ত্বগিন্দ্রিয 
বায়বীয় ও শ্রোত্রেক্তিয় আকাশীয়। ইন্দ্রিয়ের বিষয়ের নাম অর্থ । ঘ্রাণে- 
ক্দিয়ের বিষয় গন্ধ, রসনেব্দ্রিয়ের বিষয় রন, চক্ষুরিঙ্রিয়ের বিষয় রূপ, 
তবগিন্দ্রিয়ের বিষয় স্পর্শ ও শ্রোত্রেন্দ্রিয়ের বিষয় শব্দ। সুতরাং অর্থ পাঁচ 
প্রকার । বুদ্ধি--উপলব্ধি কিনা জ্ঞান। স্মরণ, অনুমান ও সংশয় প্রভৃতির 
এবং স্ুখারি প্রত্যক্ষের করণ মন্ঠ। বহিরিক্রিয়মকল ভৌতিক, এইজন্য 
স্বপ্রক্কৃতিভূত পদার্থের অসাধারণ-গুণগ্রহণ-মাত্র বহিরিক্দরিয়্ধারা সম্পন্ন 
হয়। অর্থাৎ বহিরিক্রিয়সকলের বিষয় নিয়মিত বা ব্যবস্থিত। মন 
অভৌতিক |. এইজন্য মন সর্ধব-বিষয়। বহিরিক্দ্রিয়ের স্ায় মনের বিষয় 
নিয়মিত নহে। .আরও এক কথ!। বিষয়ের সহিত ইন্দ্রিয়ের সন্গিকর্ষ 
থাকিলেও এককালে অনেক জ্ঞান হয় না। এতন্ত্বারাও মন অনুমিত 
হইতে পারে৷ অনুমিত হইতে.পারে যে, এমন একটি সহকারী নিমিত্তান্তর 
আছে, যাহার নংযোগ হইলেই ইন্দ্রিয় জ্ঞান জন্মাইতে পারে, নচেৎ 


১৫২ ষষ্ঠ লেক্চর। 


পারে না। সেই নিমিতান্তরের নাম মন। প্রবৃত্তি তিনপ্রকার _ 
শারীরিক, বাচিক ও মানপিক। দানাদির মাচরণরূপ শারীরিক প্রবৃত্তি, 
হিতোপদেশাদিরূপ বাচিক প্রবৃত্তি এবং দয়াদিরূপ মানসিক প্রবৃত্তি ধর্ম 
বা পুণ্যের হেতু । হিংসাদিরূপ শারীরিক প্রবৃত্তি, অনৃতভাষণাদিরূপ 
বাচিক প্রবৃত্তি এবং পরদ্রোহাদিরূপ মানসিক প্রবৃত্তি অধর্্ম বা পাপের 
হেতু। প্রবৃত্তির হেতু দোষ। দোষ তিনগ্রকার--রাগ, দ্বেষ ও মোহ। 
আসক্তিলক্ষণ রাগ বা অমর্ষলক্ষণ দ্বেষ না হইলে কোন বিষয়েই প্রবৃত্তি 
হয় না। মোহ বা মিথ্যাজ্ঞান ভিন্ন রাগ-দ্বেষের আবির্ভাব হয় না। ইহা! 
প্রত্যাত্মবেদনীয় অর্থাৎ সকলেরই অন্ুভবপিদ্ধ । কাম, মৎসর, স্পৃহা, তৃষ্ণা, 
লোভ প্রভৃতি রাগপক্ষ ব৷ রাগের অন্তর্গত(১)। ক্রোধ, ঈর্ষা, অস্ুয়া, 
দ্রোহ, অমর্ধ প্রভৃতি দ্বেষপক্ষ বা দ্বেষের অন্তনিবিষ্ট (২)। মিথ্যাজ্ঞান বা 
বিপর্যয়, বিচিকিতৎসা বা সংশয়, মান ও প্রমাদ প্রভৃতি মোহপক্ষ বা রর 
মোহের প্রকারভেদ (৩)। জন্মমরণপ্রবন্ধ বা পুন*পুনঃ জন্মমরণের নাম 
প্রেতাভাব । প্রপৃব্ব ইণৃধাতু হইতে প্রেতাশব্দ এবং ভূধাতু হইতে ভাবশব্দ 
নিষ্পন্ন হইয়াছে। ইণ্ধাতর অর্থ গতি, ভূধাতুর অর্থ উৎপত্তি প্রক্্ট্রূপে 
গমন কিনা মরণ। ভাব কিনা উৎপত্তি । প্রেত্যভাব কিনা মরণানস্তর 
উৎপত্তি। উপাত্-দেহাদির সহিত আত্মার সম্বন্ধবিচ্ছেদের নাম মরণ, 


(১) কাম--রতির ইচ্ছা । রতি সংযোগবিশেষ। নিজের প্রয়োজনের অভিসন্ধি ন। 
থাকিলেও পরের অভিপ্রেত বিষয়ের নিবারণ করিবার ইচ্ছার নাম মত্সর। ধর্মের 
অবিরোধে কোন বস্তু পাইবার ইচ্ছার নাম স্পৃহা । ধনাদির যেন ক্ষয় হয় না, এতাদৃশ 
ইচ্ছার নাম ভৃষ্ণ। ধর্মবিরোধে ভ্রব্যপ্রাপ্তির ইচ্ছার নাম লোভ। 


(২) নেত্রলোহিত্যাদির হেতু দ্বেষবিশেখের নাম ক্রোধ। ঈর্্যার একটি উদাহরণ 
প্রদর্শিত হইতেছে । অবিভক্ত ধনে সকলের স্বত্ব আছে, কিন্তু এ ধন এক জনে লইলে 
অপরের যে ছেষ হয়, তাহার নাম ঈর্ষা । পরগুণে দ্বেষ অস্ুয়। | যে দ্বেষ অনিষ্টসম্পাদন 
করে, তাহার নাম প্রোহ। 


(৩) অযথার্থ নিশ্চয়ের নাঁম মিথ্যাজ্ঞান বা বিপধ্যয়। অনবস্থিত জ্ঞান_-বিচিকিৎস! 
বা সংশয়। নিজের যে গুণ নাই, সেই গুণ আরোপ করিয়া! নিজের উৎকর্ষবুদ্ধির নাম 
মান। কর্তব্যরূপে অবধারিত বিষয়ে অকর্তব্যতাবুদ্ধি এবং অকর্তব্যরূপে অবধারিত 
বিষয়ে কর্তব্যতাবুদ্ধির নাম প্রমাদ। 


স্যায়দর্শন। | ১৫৩ 


অভিনব-দেহাদ্দির সহিত সন্বন্ধের নাম উৎপত্তি বা জন্ম। দোষ ও. 
প্রবৃত্তিজনিত অর্থ অর্থাৎ স্থুখছুঃখের অনুভব ফল। দোঁষ ও প্রবৃত্িবশতঃ 
সদসৎ কন্মের অনুষ্ঠান করা হয়। অনুষ্ঠিত সৎকর্ম্ের ফলস্বরূপ সুখের, 
এবং অনতকর্দের ফলস্বরূপ ছুঃখের অনুভব হইয়া থাকে। লোক যে- 
কিছু কর্মের অনুষ্ঠান বা আচরণ করে, তদ্বার! স্থখের বা ছুঃথের অনুভব 
করিয়া থাকে, সন্দেহ নাই । অতএব স্থুথছুঃখান্থতব ফল, ততিন্ন ফলান্তর 
নাই । দুঃখ বাধনালক্ষণ। বাধন কিন! পীড়া বা তাপ। শরীরেন্ড্রিয়াদি 
হুংখসাধন, সুখও ছুঃখান্ুুষক্ত অর্থাৎ সুখের সহিত ছুঃখের একপ্রকার নিয়ত 
সম্বন্ধ বলিয়া, শরীর-ইন্দরিয়াদি এবং স্থখ গৌণরূপে ছুঃখ বলিয়া পরিগণিত। 
দুঃখ সকলেরই অনুভবমিদ্ধ। ছুঃখের অত্যন্তবিনাশ অপবর্গ। 
অনবধারণ জ্ঞানের নাম সংশয় । সাধারণধর্মঙ্ঞান, অসাধারণধর্মীজ্ঞান, 

বিপ্রতিপত্তি, উপলব্ধি ও অন্ুপলব্ষি__এই পাঁচটি সংশয়ের কারণ। স্থৃতরাং 
কারণভেদে সংশয় পাচপ্রকার। বিশেষ ধর্দ্বের অর্থাৎ যে সকল ধন্মের 

ংশয় হয়, তাহাদের স্মরণ সমস্ত সংশয়ের সাধারণ কারণ । বিশেষ ধর্মের 
স্মরণ না হইলে কোনও সংশয় হইতে পারে না। সংশয়ের উদাহরণ 
প্রদর্শিত হইতেছে। দুর হইতে উর্ধধ বা উচ্চ কোন পদার্থ ৃষ্ট হইলে, 
“ইহা স্থাধু কি মন্ুষ্যয এবং চাকৃচিক্যশালী পদার্থ দৃষ্ট হইলে, “ইহা শুক্তি 
কি রজত" ইত্যাকার সংশয় হইয়া থাকে। পুর্বোদাহরণে উদ্ধৃত্ব বা উচ্চত্ব 
স্থাু ও মনুষ্মের এবং দ্বিতীয় উদ্দাহরণে চাক্চিক্য শুক্তি ও রজতের সাধারণ 
ধন্ম। উত্দাহরণদ্বয়ে যথাক্রমে স্থাণুত্ব ও মনুষ্যত্ব এবং শুক্তিত্ব ও রজতত্বরূপ 
বিশেষধর্ম্ের স্মরণসহকারে উক্ত সাধারণধর্মজ্ঞান সংশয় উৎপাদন করি- 
তেছে। সাধারণ ধর্মের অর্থাৎ উদ্ধার, ও চাকৃচিক্যের জ্ঞান হইলেও স্থাণুত্ব 
ও মনুষ্যত্ব এবং শুক্তিত্ব ও রজতত্বরূপ বিশেষধর্থের স্মরণ না৷ হইলে প্ররূপ 

ংশয়ের উৎপত্তি একাস্তই অসম্ভব । সন্দিহামান ধর্শ অর্থাৎ যে-সকল- 
ধন্প্রকারে সংশয় হয়, তাহার জ্ঞান ন1] থাকিলে কিরূপে তাহার সংশয় 

হইতে পারে ? এই সন্দিহামান ধর্মের অপর নাম কোটি। ইহা! স্থাণু কি 
মনুষ্য, ইহা দ্বিকোটিক সংশয় । সিদ্ধ হইতেছে যে, সন্দিহমান কোটির 
শ্মরণসহকারে সাধারণাদি-ধর্মের জ্ঞান সংশয়ের কারণ । 

শব্ধ নিত্য কি অনিত্য, এই নংশয় অসাঁধারণধর্মজ্ঞানজন্ত | শব্ের ধর্ম 


ক. 


১৫৪ ষষ্ঠ লেক্চর। 


শব্দত্ব। নিত্যরূপে পরিজ্ঞাত আকাশাদিপদার্থে এবং অনিত্যরূপে 
পরিজ্ঞাত ঘটাদিপদার্থে শবত্ব থাকে না, এইজন্য শবত্ব অসাধারণ ধর্ম 
উদ্ধত্বধন্্ম যেমন স্থাণু ও মনুষ্য উভয়ের সাধারণ ধর্ম, শব্ত্বধন্দম তত্রপ 
নিত্য ও অনিত্যের সাধারণ ধর্ম নহে, প্রত্যুত নিত্য ও অনিত্য এ উভয় 
হইতে ব্যাবৃত্ত। অর্থাৎ পরিজ্ঞাত নিত্য ও অনিত্য কোন পদার্থে ই শব্ত্ব 
নাই। অথচ পদার্থমাত্রই হয় নিত্য, না হয় অনিত্য, ইহার কোনও 
এক প্রকারের অন্তর্গত হইবে। নিত্য বা অনিত্য তিন্ন তৃতীয়শ্রেণীর 
পদার্থ হইতে পারে না। সুতরাং শব্ধ নিত্য কি অনিত্য, এইরূপ সংশয় 
উপস্থিত হয়। নিত্য ও অনিত্য, এই কোটিদ্বয়ের স্মরণমহকারে অসাধারণ 
অথাৎ নিত্যানিত্যব্যাবৃত্ত শবত্বধন্মের জ্ঞান উক্ত সন্দেহের কারণ । 

বিপ্রতিপত্তিও সংশয়ের কারণ। বিপ্রতিপত্তি কিনা এক বিষয়ে এক 
সময়ে পরস্পর বিরুদ্ধ ধর্মদ্বয়ের বা বস্তদ্ধয়ের জ্ঞান। বি--বিরুদ্ধ, প্রতি- 
পর্তি-জ্ঞান। কোন দার্শনিক বলেন, সংঘাতের অতিরিক্ত আত্মা আছে। 
কোন দার্শনিক বলেন, সংঘাতের অতিরিক্ত আত্মা নাই । ইহা বিপ্রতি- 
পত্তি। কারণ, এক সময়ে এক পদার্থে অস্তিত্ব ও নান্তিত্ব থাকিতে 
পারে না! বলিয় অস্তিত্ব ও নাস্তিত্ব পরম্পর বিরুদ্ধ ধর্ম । দীর্শনিকদিগের 
মতভেদ দর্শন করিয়া, বস্তগত্যা সংঘাতের অতিরিক্ত আত্ম! আছে কি 
না, লোকের এইরূপ সংশয় উপস্থিত হইয়া থাকে । 

উপলন্ধি_জ্ঞান। যে সকল বিষয়ের উপলব্ধি হয়, তাহা সৎ অর্থাৎ 
বিদ্যমীন, বা অসৎ অর্থাৎ অবিস্ভমানও হইতে পারে। দেখিতে পাওয়া 
ষায় ষে, জলাশয়ে বিদ্যমান জলের এবং স্ররীচিকাতে অবিদ্ভমান জলের 
উপলন্ধি হইয়া থাকে । সুতরাং উপলভ্যমান বিষয়টি অর্থাৎ যাহার উপলব্ধি 
হইতেছে, তাহ] বস্তগত্য। সৎ অথবা অনৎ, এইরূপ সংশয় হওয়া বিচিত্র 
নহে। উপলক্ষিই উক্ত সংশয়ের কারণ। উপলব্ধির স্তায় অন্ুপলব্ষিও 
সংশয়ের কারণ। কেন না, অবিষ্যমীন বস্তর স্তায় অবস্থা বা সময়বিশেষে 
বিদ্ধমীন বস্তরও উপলব্ধি হয় না। অতএব অন্ুপলভ্যমান বস্তু সৎ অথব 
অসৎ, এইব্প সংশয় হইতে পারে। মন্দান্ধকারে কোন ক্ষুদ্রবস্ত অন্ুন্ধান 
করিয়া না পাইলে, এই বস্তরটি এখানে আছে, অন্ধকারে দেখিতে পাওয়া 
গেল না, অথবা! ইহা এখানে নাই _অনুধন্ধ(ভার মন্তঃকরণে এইরূপ 


ম্যায়দর্শন | ১৫৫ 


সন্দেহ বা সংশয় হইয়া! থাকে । আলোকের সাহায্যে এ মন্দেহ অপনয়ন 
করিয়া একতর অবধারণ করা হ্য়। 

যছুদ্দেশে লোকের প্রবৃত্তি হয়, তাহার নাম প্রয়োজন। লোকে যে- 
কিছু কার্যের অনুষ্ঠান করে, সুখপ্রাপ্তি বা ছুঃখপরিহার তাহার চরম 
লক্ষা। অতএব সুখ ও দুঃখাভাব মুখ্য প্রয়োজন। তত্ভিন্ন সমস্তই গৌণ 
গ্রয়োজন বলিয়া পরিগণিত । 

ঘাহাদের স্বাভাবিক বা শিক্ষাজন্ত বুদ্ধির উৎকর্ষ নাই, চলিতভাষায় 
যাহাদিগকে সাধারণ লোক বল! হয়, তাহারা লৌকিক । ধাহারা তদ্দি- 
পরীত অর্থাৎ স্বতাবতঃ বা শিক্ষাদ্ধারা ধাহাদের বুদ্ধি উৎকর্ষ প্রাপ্ত 
হইয়াছে, ধাহারা তর্কান্ুসারে প্রমাণদ্ারা অর্থ পরীক্ষা করিতে সক্ষম, 
তাহারা পরীক্ষক। যে বিষয়ে লৌকিক ও পরীক্ষকদিগের বুদ্ধিসাম্য 
আছে অর্থাৎ যে বিষয়টি লৌকিকেরা৷ যেরূপ বুঝে, পরীক্ষকেরাও সেইরূপ 
বুঝিয়া থাকেন-_যে বিষয়ে লৌকিক ও পরীক্ষকদিগের মতভেদ হয় না, 
তাহার নাম দৃষ্টান্ত। দৃষ্টান্ত ছুই প্রকার-_সাধর্মাদৃষ্টান্ত ও বৈধর্মা দৃষ্টান্ত । 

অভ্ভাপগম কিনা শ্বীকার অর্থাৎ শিশ্চয়। অর্থের অভ্যাপগম বা অভ্যুপ- 
গম্যমান অর্থের নাম সিদ্ধান্ত । সিদ্ধান্ত চারিপ্র কার-_সর্ধতন্্ সিদ্ধান্ত, গ্রতি- 
তন্থ সিদ্ধান্ত, অধিকরণ সিদ্ধান্ত ও অভ্যুপগম সিদ্ধান্ত । তন্ত্র শাস্ত্। স্বশান্্রসিদ্ধ 
এবং সর্ধশান্ত্রের অবিরুদ্ধ সিদ্ধান্তের নাম সর্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত। চক্ষুরাদি 
ইন্দ্র, রূপাদি ইন্দিয়ার্থ, প্রমাণদ্বারা অর্থগ্রহণ, এ সমস্ত সর্বতন্্র সিদ্ধান্ত । 
যে সিদ্ধান্ত সমানতন্ত্রসিদ্ধ, পরতন্ত্রসিদ্ধ নহে, অথবা যে সিদ্ধান্ত স্বশান্ত্- 
মাত্রনিদ্ধ, তাদৃশ সিদ্ধান্তের নাম প্রতিতন্ত্র সিদ্ধান্ত । অসতের উৎপত্তি 
নাই, সতের বিনাশ নাই, আত্মার কোনও গুণ নাই,_দাংখ্যদিগের এই 
সকল সিদ্ধান্ত গ্রতিতন্ত্র সিদ্ধান্ত । কেন না, উহা সমানতন্ত্রপা তঞ্লদর্শন- 
সিদ্ধ, পরতন্ত্ স্ায়াদিদর্শন-সিদ্ধ নহে। অপৎ বন্তর উৎপত্তি হয়, উৎপন্ন 
বস্তুর বিনাশ হয়, আত্মার কতগুলি গুণ আছে-_-এই মকল নৈয়ায়িকদিগের 
প্রতিতন্ত্র সিদ্ধান্ত। কেন না, উহা! সমানতন্ত্রবৈশেষিকদর্শন-সিদ্ধ, পরত 
সাংখাপদিদর্শন-দিদ্ধ নহে। যে অর্থের সিদ্ধি হইলে আনুষঙ্গিকরূপে অপর 
অর্থও সিদ্ধ হয়, অর্থাৎ যে অর্থসিদ্ধি ভিন্ন যে অর্থ সিদ্ধ হয় না, তাহার 
নাম অধিকরণ দিদধান্ত। দর্শনেন্তিয়্ ও স্পর্শনেত্্িয় দ্বারা এক পদার্থের 


১৫৬ যষ্ঠ লেক্চর। 


গ্রহণ হইয়া থাকে। যাহা আমি পূর্বের দেখিয়াছিলাম, তাহাই এখন স্পর্শ 
করিতেছি । এইরূপ শত শত অনুভব সব্বলোকসিদ্ধ। এতদ্বারা প্রমাণ 
হইতেছে যে, ইন্িয় আত্ম! নহে, আত্মা ইন্দ্রিয় হইতে ভিন্ন পদার্থ । ইন্দ্রিয় 
আত্মা হইলে এক আত্মার দর্শন ও স্পর্মন অ্ভ্তব। কেন না, দর্শন চক্ষু- 
রি্ট্িয়নাধ্য, স্পর্শন ত্বগিক্ট্রিয়সাধ্য । চক্ষরিন্রিয়ের স্পর্শনক্ষমতা নাই, 
ত্বগিন্দ্িয়ের দর্শনক্ষমতা নাই। তবেই দিদ্ধ হইতেছে যে, চক্ষুরিন্রিয়ও 
আত্মা নহে, ত্বগিক্রিয়ও আত্মা নহে। চক্ষুবিক্দ্িয়দারা দর্শনের এবং 
তবগিন্দিয়দ্বার! স্পর্শনের কর্তী আত্মা চক্ষরিক্রিয় ও ত্বগিক্তিয় হইতে ভিন্ন 
পদার্থ। ইহ সিদ্ধ হওয়াতে আন্ুষঙ্গিকরূপে ইহাও সিদ্ধ হইতেছে যে, 
চক্ষু ও ত্বগাদি ইন্জিয় এক নহে, নানা । ইন্দ্রিয়সকল নিয়তবিষয়, ইন্দরিয়- 
সকল জ্ঞাতা নহে, জ্ঞাতার জ্ঞানের সাধন, দর্শনাদি জ্ঞান হইতেছে 
বলিয়াই তত্বৎ জ্ঞানের সাধন ইন্দরিয়সকল অন্থমেয়, এবং গন্ধাদি গুণের 
অধিকরণ দ্রব্য গন্ধািগুণমাত্র নহে-_গন্ধাদি গুণ হইতে অতিরিক্ত বা ভিন্ন 
পদার্থ। 

প্রতিবাদী যাহ! বলিল, তাহা সঙ্গত বা অসঙ্গত, ইহার বিচার না 
করিয়াই তাহা স্বীকার করিয়া লইয়া এ বিষয়সংক্রান্ত কোন বিশেষ 
ধন্মাদ্ির বিচার করার নাম অতভ্যপগম সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ প্রতিবাদীর 
কথা যুক্তিযুক্তই হউক বা নিতান্ত অযুক্তিই হউক, তাহ! মানিয়া-লইয় 
প্রকারান্তরে প্রতিবাদীকে পরাজিত করিবার অভিপ্রায়ে তদগত বিশেষের 
পরীক্ষাই অভ্যুপগম সিদ্ধান্ত । একটি উদাহরণ দেওয়া যাইতেছে । মীমাংসক- 
মতে শব দ্রব্যপদার্থ ও নিত্য । নৈয়ায়িকমতে শব্ধ গুণপদার্থ ও অনিত্য। 
বিচারমুখে নৈয়ায়িক শবের ভ্রব্যত্ব মানিয়া-লইয়া তাহার নিত্যত্ব ও 
অনিত্যত্বের পরীক্ষা করিতে প্রবৃত্ত হন। নৈয়ায়িক গর্ধের সহিত বলেন যে, 
হৌক শব্ধ দ্রব্য, উহা! নিত্য কি অনিত্য | এই বিচারে শব্দের অনিত্যত্ 
সংস্থাপন করিয়া নৈয়ায়িক প্রকারান্তরে মীমাংদককে পরাস্ত করিয়াছেন । 
ভাষ্যকার বলেন, নিজের অতিশয় বুদ্ধিমত্তাপ্রখ্যাপনের জন্য এবং 
প্রতিবাদীর বুদ্ধির প্রতি অবজ্ঞীগ্রদর্শনের জন্য অভ্যুপগম সিদ্ধান্তের 
অবতারণা হইয়া থাকে। কারণ, তুমি, যাহা বলিলে, তাহাই মানিয়া 
_লইলাম, কিন্ত তথাপি তোমার মত টিকিতে পারিতেছে না, কেন না, 


হ্যায়দর্শন । | ১৫৭ 


তাহাতেও অন্ প্রকার দোষ অনিবার্য হইয়। উঠে। অভ্যুপগম-দিদ্ধান্ত- 
বাদী প্রকারান্তরে এইরূপে প্রতিপক্ষের প্রতি অবজ্ঞ ও নিজের বুদ্ধিম্ত! 
প্রদশন করিয়া থাকেন। 

যে শখনমূহ বা বাক্যসমূহ অন্ুদারে সাধনীয় অর্থের কিন! সাধ্যের 
পিদ্ধি অর্থৎ অন্ুমিতি পরিসমাপ্ত হয়, তাহার নাম ন্তায়। ন্যায়ের 
একদেশ অবয়ব। অবয়ব পাঁচপ্রকার-- প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ, উপনয় 
ও নিগমন। সাধনীয়-ধর্মরযুক্ত-বূপে ধর্মার নির্দেশ প্রতিজ্ঞা । যদ্দারা 
সাধ্যের সাধন হইতে পারে, তাহার নাম হেতু । হেতু ছুই প্রকার-_সাধন্ম্য- 
হেতু ব1 অন্বয়ী হেতু এবং বৈধন্থ্যহেতু বা ব্যতিরেকী হেতু। উদ্দাহরণের 
সমান ধর্ম অগ্নুসারে যে হেতু সাধ্যের সাধন অর্থাৎ সাধ্যের সিদ্ধি 
কিনা অন্ুমিতি সম্পাদন করে, তাহার নাম সাধর্ম্যহেতু বা অনয়ী 
হেতু ॥ যে হেতু উদদাহরণের বিপরীত ধর্ম অনুসারে সাধ্যের সাধক 
হয়, তাহার নাম বৈধন্ধ্হেতু বা ব্যতিরেকী হেতু । উদাহরণ কিনা 
ৃষ্টান্ত। তাহাও সাঁধন্ম্য ও বৈধন্দ্য ভেদে ছুইপ্রকার-সাধন্থ্যযুক্ত 
উদ্বাহরণস্থলে, “তথা” এইরূপে, এবং বৈধন্ষ্যযুক্ত উদ্দাহরণস্থলে, “ন 
তথা” এইরূপে, পক্ষে সাধ্যের উপসংহারের নাম উপনয়। হেতুকথন- 
পূর্ববক প্রতিজ্ঞার পুনঃকথন নিগমন। উদ্দাহরণের সাহায্যে অবয়ব- 
গুলির স্বরূপ বুঝিবার চেষ্টা করা যাউক। “অনিত্যঃ শব্দঃ অর্থাৎ শব্দ 
অনিত্য-_ইহা। প্রতিজ্ঞা । এস্থলে শব্দ ধন্দী, অনিত্যত্ব ধর্ম এবং তাহা! 
সাধনীয় বা সাধ্য। সাধনীয় ধর্ম অনিত্যত্ব, তদ্যুক্তরূপে শবরূপ ধন্মীর 
নির্দেশ হইয়াছে । অতএব, 'অনিত্যঃ শবঃ__ইহ। প্রতিজ্ঞা। “উৎপত্তি 
ধর্মকত্বাৎ, অর্থাৎ যেহেতু শবে উৎপত্তিরূপ ধর্ম আছে। ইহা! হেতু। 
উৎপততিধর্দ্কং স্থালাদি দ্রব্যমনিত্যং দৃষ্টম অর্থাৎ উৎপত্তিধর্মক কিনা 
যাহার উৎপত্তি আছে, তথাবিধ স্থালী প্রভৃতি দ্রব্য অনিত্য দেখা 
গিয়াছে। ইহা সাধর্াযুক্ত উদাহরণ। “অন্ুৎপত্তিধর্্মকমাত্মাদি দ্রব্যং 
নিত্যং দৃষ্টম অর্থাৎ অন্ুৎপত্তিধর্মক কিন! যাহার উৎপত্তি নাই, তাদৃশ 
আত্মাদি দ্রব্য নিত্য দেখা গিয়াছে । ইহ! বৈধন্থ্যযুক্ত উদ্াহরণ। “তথা 
শব উতৎপত্িধর্্মরকঃ অর্থাৎ স্থাল্যাদি অনিত্যদ্রব্যের স্তায় শব্দও 
উৎপত্ভিধর্মক কিন স্থাল্যাদির ম্যায় শবেরও উৎপত্তি আছে। ইহা 


১৫৮ ষষ্ঠ লেক্চর | 


সাধন্ম্যযুক্ত উদাহরণপক্ষে উপনয়। “ন চ তথা শব” অর্থাৎ আত্মাদি 
নিতাদ্রব্যের স্তায় শব্ষ অনুৎপত্তিধর্ক নহে। ইহা বৈধন্থযযুক্ত উদা- 
হরণপক্ষে উপনয়। “তম্মাহুৎপতিধর্শমকত্বাদনিত্যঃ শব; অর্থাৎ অত- 
এব উতপত্তিবূপ ধর্ম আছে বলিয়া শব অনিত্য, ইহা নিগমন। গ্রতিজ্ঞা- 
দ্বার ধর্মী অর্থাৎ পক্ষের সহিত ধর্ম অর্থাৎ সাধ্যের সম্বন্ধ নিদ্দেশ করা 
হয়। উদ্দাহরণস্থিত ধন্মের সমান বা বিপরীত ধর্মের সাধকত্বপ্রদর্শন 
হেতুর কার্ধয। উদ্দাহরণদ্বারা সাধকধর্ম্ম ও সীধ্যর্ঘের সাধ্যসাধনভাব 
প্রদর্শিত হয়। সাধকধর্ম ও সাধ্যধর্মের প্রকৃত ধন্মীতে সামানাধিকরণ্য 
অর্থাৎ অবস্থিতির প্রদর্শন করা উপনয়ের কার্ধ্য। প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদা- 
হরণ ও উপনয় দ্বারা যাহা সমর্থিত হইল, নিগমনদ্বারা তাহার বিপ- 
রীত প্রনঙ্গের নিরাস করা হয়। হেতু এবং উদ্বাহরণ পরিশুদ্ধ হইলে 
অনুমানের কোনও দোষ হইতে পারে না। বৌদ্ধমতে উদ্দাহরণ ও 
উপনয়--এই ছুইটিমাত্র অবয়ব । ইউরোপীয় নৈয়ায়িক এবং ভারতীয় 
বৈদান্তিক তিনটিমাত্র অবয়ব মানেন। ইউরোপীয়মতে এবং বৈদান্তিক- 
মতে উদাহরণ, উপনয় ও নিগমন, এই তিনটি অবয়ব অঙ্গীরৃত 
হইয়াছে । বৈদান্তিকমতে পক্ষান্তরে উদাহরণ, উপনয় ও নিগমনের পরি- 
বর্তে প্রতিজ্ঞা, হেতু ও উদাহরণ, এই তিনটি অবয়বও স্বীকৃত হইয়াছে। 
প্রাচীন নৈয়াফ়িকেরা দশটি অবয়ব মানিতেন। বাহুল্যভয়ে তাহ! 
গ্রদর্শিত হইল না। 

যে বিষয়ের তত্ব অর্থাৎ যাথার্থা জান! যাইতেছে না, সেই বিষয়ে 
তত্বজ্ঞানের জন্ত কারণের উপপত্তি অস্ুনারে একতর পক্ষের উহ অর্থাৎ 
অভ্যনুজ্ঞা বা সম্ভাবনার নাম তর্ক। যেবিবয়ের তত্ব জান! যাইতেছে 
না, তাহার তত্ব জানিবার ইচ্ছা হওয়া লোকের স্বাভাবিক। তত্ব জানি- 
বার ইচ্ছা! হইলেই পরস্পরবিরুদ্ধ ধর্দ্বয়ের আলোচনা হয়। অর্থাৎ 
ইহ! এইপ্রকার,কি এইপ্রকীর নহে-_-এইরূপ সন্দেহ উপস্থিত হয়। 
সন্দিহমান ধর্দদ্বয়ের মধ্যে যে ধর্মের কারণের উপপত্তিবোধ হয়, তাহার 
অনুক্ঞা বা সস্তাবন! হইয়া থাকে । অর্থাৎ ইহা! এইরূপ হইতে পারে, 
এতাদৃশ সম্ভাবনা বা অন্ুজ্ঞা হইয়া থাকে। এই সম্ভাবনাই তর্ক। 
একটি উদাহরণ প্রদর্শিত হইতেছে। জ্ঞাতা অর্থাৎ আত্মার তত্ব জানি- 


্যায়দর্শন। “৯৫৯ 


বার ইচ্ছা হইলে প্রথমতঃ আত্মা উৎপত্িধর্মক কি অন্ুৎপত্তিধর্মক-_ 
এইরূপ সংশয় উপস্থিত হয়। পরে কারণের উপপত্তি অন্ুপারে বক্ষ্যমাণ- 
রূপে তর্কের অবতারণা হয়। আত্মা অন্ুৎপত্ভিধর্্ক হইলে বর্তমান 
জন্মের পুর্বে৪ আত্মা ছিল, সুতরাং তাহার দেহান্তরও ছিল। এ 
দেহাস্তরে অবস্ত কর্মও আচরিত হইয়াছিল। সুতরাং আত্মা অন্ুৎ- 
পত্তিধন্মক হইলে পূর্বাচরিত কর্মের ফলভোগার্থ আত্মার বর্তমান-দ্রেহ- 
গিগ্রহ, পুব্বকৃত কর্মের ফলোপভোগ এবং একই আত্মীর নানাদেহ- 
সম্বন্ধ হইতে পারে । এবং তত্বজ্ঞানের অভ্যাসদ্বারা শরীরাদির আত্য-... 
স্তিক বিয়োগও সম্ভবপর । এইরূপে আত্মা অনুত্পভিধন্মবক হইলে, তাহার 
ংসার ও অপবর্গ, উভয়ই হইতে পারে। পক্ষান্তরে, আত্মা উৎপত্তি- 
ধর্মক হইলে, তাহার সংসার বা অপবর্ণ, কিছুই হইতে পারে না। কেন 
না, আত্মা উৎপভিধর্মক হইলে বলিতে হইবে যে, অভিনব উৎপন্ন 
দেহাদির সহিত অভিনব উৎপন্ন আত্মার সম্বন্ধ হয়। ইহ] ত আত্মার 
পৃর্বাচরিত কর্মের ফল নহে। কারণ, পূর্বে আত্মাই ছিল না। স্ুখ- 
ছুঃখাদির কারণ কর্ন, ইহ প্রত্যক্ষসিদ্ধ। কারণ ভিন্ন কাধ্যের উৎপত্তি 
অসস্তব। অতএব আত্মা উৎপত্তিধন্মক হইলে তাহার সংসার হইতে 
পারে না। কেন না, পূর্বাচরিত কর্ম ভিন্ন অভিনব-দেহসম্বন্বনিবন্ধন 
স্থছুঃখভোগ হওয়া অনন্তব। এবং শরীরের সহিত উৎপন্ন আত্মা 
শরীরের সহিত বিনষ্ট হইবে, সুতরাং আত্মা উৎপত্তিধর্মনক হইলে তাহার 
অপবর্ণও হইতে পারে না। অতএব আত্ম! উৎপন্তিধন্মক নহে, ইহাই 
সম্ভবপর । 
নব্য নৈয়ায়িকেরা, বলেন, আপত্তিবিশেষের নাম তর্ক। অর্থাৎ যে 
ধন্্মীতে ব্যাপ্য ও ব্যাপকের অভাবনিশ্চয় আছে, সেই ধর্মীতে ব্যাপ্যের 
আহার্্য আরোপ অর্থাৎ ব্যাপ্য তথায় থাকিতে পারে না, এরূপ নিশ্চয়- 
সত্বেও ইচ্ছাপুর্বক ব্যাপ্যের আরোপ করিয়া, তন্নিবন্ধন ব্যাপকের আহার্যযা- 
রোপ অর্থাৎ ইচ্ছাপুর্বক আরোপই তর্ক | ধুমবান্‌ স্তাৎ বহিমান্‌ স্তাৎ 
অর্থাৎ জলহবদ যদি ধূমবান্‌ হইতে পারে, তবে বহ্রিমান্ও হইতে পারে, 
ইত্যাদি আপত্তিই তর্ক। এখানে ধূম ব্যাপ্য, বহি ব্যাপক | জলহদে ধূমের 
এবং বহির অতাবের নিশ্চয় আছে। অথচ ইচ্ছাপূর্ধক তাহাতে ধূমের 


১৬০ | যষ্ঠ লেক্চর। 


আরোপ ,রুরিয়া তন্নিবন্ধন বির আহার্ধ্য আরোপ করা হইতেছে । তর্ক 
স্বয়ং প্রমাণ নহে, প্রমাণের অন্ুগ্রাহক অর্থাৎ সহকারী । 

পরপক্ষদূষণ ও স্বপক্ষস্থাপন দ্বারা অর্থের অবধারণ অর্থাৎ নিশ্চয়ের 
নাম নির্ণয়। স্থলবিশেষে সংশয়পূর্বক এবং স্থলবিশেষে সংশয় ব্যতিরেকেও 
নির্ণয় হইয়া! থাকে । নির্ণয় প্রমাণ ও তর্কের ফল। 

তত্বনির্ণন্ব বা বিজয্ন অর্থাৎ পরপরাজয় উদ্দেশে ন্যায়ান্থগত বচন- 
পরম্পরার নাম কথা। কথা তিনপ্রকার--বাদ, জন্ন ও বিতগ্ডা। 
পরপরাজয়ের জন্ত নহে, কেবলমাত্র তত্বনির্ণয়ের উদ্দেশে যে কথা 
প্রবর্তিত হয়, তাহার নাম বাদ। বাদকথাতে বাদী ও প্রতিবাদী 
উভয়েরই তত্বনির্ণয়ের দ্রিকেই লক্ষ্য থাকে, সুতরাং এক পক্ষ অপর পক্ষের 
নানতাদি ধর্তব্য করেন না। বাদকথাতে প্রমাণ ও তর্ক দ্বারা স্বপক্ষস্থাপন 
এবং পরপক্ষদূষণ করা হয়। সিদ্ধান্তের অপলাপ করা হয় না এবং 
ৰাদ্দ কথা পঞ্চাবয়বযুক্ত হইয়া থাকে । ফলত: বীতরাগ অর্থাৎ নিজের 
জয় বা প্রতিপক্ষের পরাজয়বিষয়ে অভিলাষশৃন্য ব্যক্তির কথাই বাদ। 
তত্বনির্ণয়ের প্রতি লক্ষ্য ন1 রাখিয়| প্রতিপক্ষের পরাজয় এবং নিজের 
জয়মাত্র উদ্দেশে যে কথ প্রবর্তিত হয়, তথাবিধ বিজিগীষু অর্থাৎ জয়েচ্ছু 
ব্যক্তির কথার নাম জন্ন। জন্পে বাদী ও প্রতিবাদী উভয়েই ন্বপক্ষ- 
স্থাপন ও পরপক্গপ্রতিষেধ করিয়া থাকে । নিজের কোনও পক্ষ নির্দেশ 
না করিয়া কেবল পরপক্ষথগুনের উদ্দেশে বিজিগীষু যে কথার প্রবর্তন 
করে, তাহার নাম বিতগ্ডা। 

জন্প ও বিতগ্ডাতে প্রতিপক্ষের পরাজয়ার্থ ছল, জাতি ও নিগ্রহস্থানের 
উদ্ভাবন করিতে পারা যায়। বাদে কিন্ত তাহা পারা যায় না। তত্বনির্ণয়ের 
জন্য হেত্বাভাস এবং আরও. ছুইএকটি নিগ্রহস্থানের উদ্ভীবন কর 
যাইতে পারে মাত্র। যাহারা তত্বনির্ণয় বা বিজয়ের অভিলাধী, সর্ববজন- 
দিদ্ধ অন্ুতবের অপলাঁপ করে না, শ্রবণাঁদিপটু, কথার উপযুক্ত বাাপারে 
কিনা উক্তিগ্রত্যুক্তি প্রভৃতিতে সমর্থ, অথচ কল্পহকারী নহে, তাহারাই 
কথার অধিকারী। যাহার! তত্ববুততস্থ, প্রকৃত কথ! বলে, গ্রতিভাশালী, 
যুক্কিসিদ্ধ অর্থ স্বীকার করে, অথচ প্রতারক নহে এবং প্রতিপক্ষের 
তিরস্কার করে না, তাহারাই বাদকথায় অধিকারী। বাদকথাতে সভার 


হ্যায়দর্শন। ১৬১ 


ফী 


অপেক্ষা নাই। জন্ন'ও বিতগাতে সভার অপেক্ষা আছে। যে জনতার 
মধ্যে রাজ! বা কোনও ক্ষমতাশালী লোক নেতা এবং কে€নও ব্যক্তি 
বা ব্যক্তিগণ মধ্যস্থ থাকেন, তথাবিধ জনসমূহের নাম সভ]। 

কথা বা শাস্ত্রীয়বিচারের প্রণালী এইরূপ । প্রথমতঃ বাদী প্রমাণো- 
পন্তাসপূর্বক স্বপক্ষস্থাপন করিয়া! তাহাতে সম্ভাব্যমান দোষের নিরাস 
করিবে। প্রতিবাদী নিজের অজ্ঞানাদিনিরাসের জন্য অর্থাৎ তিনি 
বাদীর কথ! উত্তমরূপে বুঝিতে পারিয়াছেন ইহ! প্রকাশের জন্য, বাদীর 
মতের অনুবাদ করিয়া দোষ প্রদর্শনপূর্বক তাহার খণ্ডন এবং প্রমাণো- 
পন্ঠাসপুর্বক স্বমতস্থাপন করিবে । তৎপরে বাদী, প্রতিবাদীর কথাগুলির 
অনুবাদ করিয়! স্বপক্ষে প্রতিবাদিপ্রদত্ত দোবগুলির উদ্ধারপুর্বক প্রতি- 
বাদীর স্থাপিত পক্ষের খণ্ডন করিবে । এই প্রণালী অন্ুপারে বাদী ও 
প্রতিবাদীর বিচার চপিতে থাকিবে। পরিশেষে যিনি স্বমতে দোষের 
উদ্ধার বা পরমতে দোষ প্রদর্শন করিতে অসমর্থ হইবেন, তিনি পরাজিত 
হইবেন। বিচারকালে খিনি এই রীতির উল্লীজ্ঘন করেন, অথবা অনবসরে 
বা অযথাকালে অর্থাৎ যে সময়ে পরপক্ষে দোষপ্রদর্শন করিতে হয়, 
তদন্তসময়ে দোষ প্রদর্শন করেন, তিনিও নিগৃহীত অর্থাৎ পরাজিত হন । 
ঈদৃশ বিচারপ্রণালী বে সব্বথা সমীচীন, তদ্বিষয়ে সনেহ নাই। এই 
বিচারপ্রণালার তুপনায় বর্তমান সময়ের অধিকাংশ বিচার হট্টগোল 
বলিলে অত্যান্ত হয় না। নেতা থাকিলে বর্তমানকালের অধিকাংশ 
বিচারক পদ্দে পদে নিগৃহীত হইতেন। নে বাহা হউক, এখন প্রকৃত 
বিষয়ের অনুসরণ করা যাইতেছে । 

বৈশেষিকমতে হেতুর গমকতৌপয়িক রূপ অর্থাৎ যে হেতুবলে অন্ুমিতি 
হয়, মেই হেতুর অন্ুমাপকতানির্বাহের অন্থকুল রূপ বা ধর্ম তিনটি 
পক্ষত্ত, সপক্ষত্ব ও বিপক্ষাসত্ব । এই রূপত্রয় না থাকিলে হেতু হুষ্ট ব! 
হেত্বাভাস হয়। অর্থাৎ উক্ত রূপত্রয়ের কোন-একটি রূপ না থাকিলে এ 
হেতুবলে অন্থমিতি হইতে' পারে না। সুতরাং রূপত্রয়ের ব্যতিক্রমে হেত্বা- 
ভাসও বৈশেধিকমতে তিনপ্রকার--অপ্রসিদ্ধ, অসন্‌ ও সন্দিগ্ধ ব অনৈ- 
কান্তিক। ইহা! প্রস্তাবান্তরে বল! হইয়াছে । নৈয়ায়িকমতে উক্ত তিনটি 
রূপের অতিরিক্ত অবাধিতত্ব ও অসংপ্রতিপক্ষিতত্ব এই দুইটি রূপও 


১ 


&" 


১৬২ ষষ্ঠ লেকৃচর $ 


গমকতৌপয়িক রূপ বলিয়া অঙ্গীকৃত হইয়াছে। অতএব নৈয়ায়িকমতে 
হেতুর গমকতৌপয্রিক রূপ পাচটি। এই পাঁচটি রূপের ব্যতিক্রম ঘটিলেই 
হেত্বাভান ঘটে। যাহা! আপাততঃ হেতুর মত আভাসমান কিনা প্রতীয়- 
মান হয়, বাস্তবিক হেতু হইতে পারে না, তাহাকে হেত্বাভান বল! 
যায়। সব্যতিচার, বিরুদ্ধ, প্রকরণসম, সাধ্যদম ও অতীতকাল বা 
কালাতীত-_এই পাঁচ প্রকার হেত্বাভান গোতমের অনুমত। সব্যভিচারের 
অপর নাম অনৈকান্তিক। যে হেতু ব্যভিচারের সহিত বর্তমান, 
তাহাকে সব্যতিচার বলা যায়। একত্র অব্যবস্থা অর্থাৎ এক স্থানে 
বিশেষরূপে অবস্থিতি না থাকাই ব্যভিচীর। বি--বিশেষরূপে, অতি-_ 
সর্বতোভাবে, চার-_গতি। সাধ্যের অধিকরণমাত্রে হেতুর অবস্থান 
নিয়মিত হওয়াই সঙ্গত। কারণ, এরূপ হইলেই তান্বারা সাধ্যের অনু- 
মিতি হইতে পারে। যে হেতুর গতি ব! সম্বন্ধ অর্থাৎ অবস্থিতি উক্ত- 
রূপে নিয়মিত নহে, যাহার গতি সার্বধতোমুখীন অর্থাৎ যে হেতু সাধ্যের 
অধিকরণে ও সাধ্যাভাবের অধিকরণে তুন্যরূপে থাকে, সেই হেতুবলে 
সাধ্যের অন্নমিতি হইতে পারে না। তাদৃশ দুষ্ট হেতুকে সব্যভিচার 
বলা যায়। যে হেতু বিশেষরূপে সাধ্যের রোধ করে অর্থাৎ সাধ্যের 
অধিকরণে ন1 থাকিয়া সাধ্যের অভাবের অধিকরণে থাকে, তাহার নাম 
বিরুদ্ধ। কণাদ বিুদ্ধকেই “অসন্ঠশবে নির্দেশ করিয়াছেন। 
প্রকরণ--প্রস্তাব। সাধ্য এবং সাধ্যাভাব, এ উভয় প্রকরণ বলিয়। 
গণ্য হইতে পারে। কেন না, সাধ্যনির্যয়ের জন্যই হেতু প্রযুক্ত হইয়! 
থাকে । তবেই সাধ্য আছে কি না, এইরূপ চিন্ত৷ সাধ্যনির্ণয়ে পৃর্ষে 
অবশ্য থাকিবে। যে হেতুদ্বার প্রকরণবিষয়ে চিন্তা হইতে পারে 
অর্থাৎ সাধ্য ও তদভাবের সন্দেহমাত্র হইতে পারে, সেই হেতু একতর- 
পক্ষনির্ণয়ের অভিপ্রায়ে প্রযুক্ত হইলে তাহাকে প্রকরণমম বলা যায়। 
অর্থাৎ যে হেতুদ্বারা সাধ্য ও সাধ্যাতাব, এ উভয়ের মধ্যে কোন 
বিশেষের অর্থাৎ যন্্ারা উহার একতর নিশ্চয় হইতে পারে-_তাদৃশ 
বিশেষের উপলব্ধি হইতে পারে না, তাহাই প্রকরণসম। ভাষ্যকার ইহার 
এইরূপ উদ্দাহরণ দিয়াছেন--“অনিত্যঃ শব্দো নিত্যধর্মান্থপলব্ধেঃ” 
অর্থাৎ শব্দ অনিত্য, যেহেতু শবে নিত্যবস্তর কোনও ধর্মের উপলব্ধি 


ন্যায়দর্শন। ১৬৩ 


হইতেছে না। এখানে “নিত্যধন্মান্ুপলন্ধে”__এই হেতু প্রকরণসম। 
কেন ন1, শব্দে নিত্যধর্মের অন্ুপলব্ধি, শব্দ নিত্য কি অনিত্য, এইরূপ 
সন্দেহের কারণমাত্র হইতে পারে। কেন না, নিত্যধর্মের বা অনিত্য- 
ধর্মের উপলব্ধি হইলে সন্দেহের নিবৃন্তি হইয়া যায়। বিশেষধর্থ্ের 
অর্থাৎ নিত্যধর্থের বা অনিত্যধর্মের উপলব্ধি হয় না বপিয়াই, শব্দ 
নিত্য কি অনিত্য, এইরূপ সন্দেহ হয়। ক্ুতরাং নিত্যধর্ম্নের অন্ুপ- 
লব্ধি সংশয়ের কারণ, অথচ তাহাই শিশ্চয়ার্থ প্রযুক্ত হইয়াছে । অত- 
এব এই হেতু প্রকরণস্ম। বৃত্তিকার বলেন যে, বাদী সাধ্যের এবং 
প্রতিবাদী নাধ্যাভাবের সাধকরূপে ভিন্ন ভিন্ন দুইটি হেতুর প্রয়োগ 
করিলে প্রকরণ কিনা! প্রকুষ্টকরণ বিষয়ে চিন্তা অর্থাৎ এই ছুই হেতুর 
মধ্যে কোন্‌ হেতু প্রকৃষ্ট বা নির্দোয, তদ্বিষয়ে চিন্তা হয়, এইজন্য এ 
উভয় হেতুই প্রকরণসম বলয়! নির্দিষ্ট হইবার যোগ্য। ফলতঃ বৃত্তি- 
কারের মতে পরম্পর বিরুদ্ধ অর্থাৎ একটি হেতু সাধ্যের সাধক, অপর 
হেতু সাধ্যাভাবের সাধকরপে প্রযুক্ত হইলে, শ্রী উভয় হেতুই প্রকরণ 
সমদোষে দূষিত হয়। কেন না, প্রযুক্ত হেতুয়ের মধ্যে কোন্‌ 
হেতুটি উৎকৃষ্ট, এই চিন্তা থাকিয়! যায়। এক পক্ষ নিতাধর্ম্বেরে অন্থু- 
পলব্ধি-হেতৃতে শব্দের অনিত্যত্ব সাধন করিতে গেলে, অপর পক্ষ অনিত্য- 
ধর্মের অনুপলব্ি-হেতুতে শবের নিত্যত্ব সাধন করিতে প্রবৃত্ত হইলে, 
উভয় হেতুই প্রকরণসমদোষে ছুষ্ট হইবে। প্রকরণসমের অপর নাম 
সতপ্রতিপক্ষ । যে হেতুর প্রতিপক্ষ কিন! শত্রু অর্থাৎ সমানবল বিরোধী 
হেতু, সৎ অর্থাৎ বিস্তমান থাকে, তাহাকেই সংপ্রতিপক্ষ বলা যায়। 

যে হেতু সাধ্যের স্তায় সাধনীয়, তাহার নাম সাধ্যসম। কেন না, 
সে সাধ্যেরই তুল্য। হেতু বাদি-প্রতিবাদী উভয়ের মতসিদ্ধ হওয়া উচিত। 
বাদী যে হেতুর বলে সাধ্য দিদ্ধি করিতে প্রবৃত্ত হন, প্রতিবাদী সেই 
হেতুতে বিপ্রতিপন্ন হইলে অর্থাৎ প্রতিবাদী সেই হেতু অস্বীকার 
করিলে, বাদীকে সাধ্যের ন্তায় হেতুও সিদ্ধ করিয়া লইতে হয়। একটি 
প্রবাদ আছে ষে, "স্বয়মসিদ্ধঃ কথং পরান্‌ সাধয়তি” অর্থাৎ ষে নিজে 
অদিদ্ধ, দে কিরূপে অন্যের সাধন করিবে? তথাবিধ সাঁধনীয় হেতুই 
সাধ্যমম। একটি উদ্বাহরণ দেওয়া যাইতেছে,-_মীমাংসকমতে ছায়া বা 


১৬ ষষ্ট লেক্চর। 


অন্ধকার দ্রব্যপদার্৫থ বলিয়া অঙগীক্কৃত। নৈয়ায়িকমতে ছায়া! দ্রব্য 
নহে, আলোক বা তেজের অভাবমাত্র। মীমাংসকেরা বিবেচনা করেন 
যে, ক্রিয়া দ্রব্যের সাধারণ লক্ষণ, ইহা নৈয়ায়িকদিগেরও সন্মত। 
ছায়ারও গতিক্রিয়া আছে। কেন না, কোনও ব্যক্তি আলোকের 
অভিমুখে গমন করিলে সঙ্গে সঙ্গে তাহার পশ্চাদ্বত্রী ছায়াও গমন করে। 
স্থতরাং গতিমত্্বহেতুর বলে মীমাংসকেরা নৈয়ায়িকদিগের প্রতি 
ছায়ার ত্রবাত্ব সাধন করিতে চাহেন) নৈয়ায়িকেরা কিন্তু ছায়ার গতি 
স্বীকার করেন না। সুতরাং ছায়ার দ্রব্যত্বের স্তায় তাহার গতিমত্বরূপ 
হেতুরও সাধন করিতে হয় বলিয়া উহা সাধ্যমম। নৈয়ায়িকেরা বলেন, 
পুরুষের স্তায় বস্তরগত্যা ছায়ারও গতি আছে অথবা বস্তৃগত্য। ছায়ার 
গতি নাই,_-দৌোষজন্য গতির ভ্রম হয়, তাহ বিবেচ্য । গমনশীল পুরুষ 
আলোকের আবরক বলিয়া তাহার পশ্চাাগে ছায়৷ পড়ে । এর স্থানে 
আলোকের অসন্নিধি বা অভাব অবিসংবাঁদী। পুরুষ ক্রমে অগ্রসর 
হইতেছে বলিয়া আলোকের অসনিধি বা অভাবও উত্তরোত্তর অগশ্রিম- 
স্থানে উপলব্ধ হয়। এইজন্য পুরুষের স্তায় ছায়াও ক্রমে অগ্রসর 
হইতেছে, এইরূপ ভ্রম হয়। অতএব ছায়ার গতি নাই, সুতরাং ছায়। 
দ্রব্য নহে, উহ1! আলোকের অসন্নিধিমাত্র। সাধ্যদমের অপর নাম 
অদিদ্ধ। কণাদ ইহাকেই অপ্রসিদ্ধ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন । 
কালের অতিক্রমযুক্ত হেতুর নাম অতীতকাল বা কালাতীত। 
মীমাংসকেরা বলেন যে, যেমন উপলব্ির পুর্বে এবং পরেও রূপের 
অবস্থিতি থাকে, অথচ রূপের অধিকরণদ্রব্যের সহিত আলোকের সংযোগ 
হইলে রূপের অভিব্যক্তি বা উপলব্ধি হয়; সেইরূপ ভেরী ও দণ্ডের 
যোগ হইলে শব্দের অভিব্যক্তি বা উপলব্ধি হয়। অতএব সংযোগব্যঙ্গ্য 
বলিয়া শব্দের শব্দও রূপের স্ায় উপলব্ধির পূর্বে ও পরে অবস্থিত 
থাকে। এস্কলে সংযোগব্যঙ্গ্যত্ব হেতুদ্বার প্রকারান্তরে শবের নিত্যত্ব 
সাধন করা হইতেছে । এই হেতু কালাতীত। কেন না, আলোক- 
ংযোগের সমকালে রূপের অভিব্যক্তি হয় এবং আলোকসংযোগ 
নিবৃত্ত হইয়া গেলে রূপের অভিব্যক্তি হয় না। সুতরাং রূপের 
অভিব্যক্তি সংযোগন্ধন্ত, সন্দেহ নাই। শব্দের অভিব্যক্তি কিন্ত সংযোগ- 


ন্যায়দর্শন। ১৬৫ 


জন্য হইতে পারে না। কারণ ভেরী-দও-সংযোগের মমকালেই শবে 
অভিব্যক্তি হয় না, তৎপরে হইয়া থাকে । আর একটি উদ্াহরণের 
সাহাঁধ্য লইলে ইহা! আরও একটু ম্পষ্টরূপে বুঝিতে পারা যায়। দূরে 
কোন কাষ্টে কুঠারের আঘাত করিলে দূরস্থ ব্যক্তি এ আঘাতের শব 
শুনিতে পায়। কাষ্ঠ ও কুঠারের সংযোগকালে দূরস্থ ব্যক্তির শবৌপ- 
লব্ধি হয় না,--অনেক পরে তাহার উপলব্ধি হইয়া থাকে । কেন না, 
দুরস্থ শ্রোতা দূরস্থ শব্দ শ্রবণ করে না, শ্রোতার শ্রবণপ্রদেশে যে শব্ধ 
উৎপন্ন হয়, তাহাই সে শ্রবণ করিয়া থাকে । সুতরাং শব্দের উপলব্ধি 
কাষ্ঠ ও কুঠারের সংযোগকাল অতিক্রম করে। অতএব সংঘোগ- 
বাঙ্গাত্ব হেতু কালাতীত। ফলতঃ, শব সংযোগব্ঙ্গ্য নহে-_সংযোগ- 
জন্ত। কালাতীতের অপর নাম কালাত্যয়াপদিষ্ট। 

বন্ত। যে অর্থ-অভিপ্রায়ে বাক্যপ্রয়ৌগ করেন, তাহার বিপরীত 
অর্থ কল্পনা করিয়া দৌষোডাবন করার নাম ছল। ছল তিনপ্রকার-_ 
বাঁকৃছল, সামান্তচ্ছল ও উপচারচ্ছল। বক্তার অনভিপ্রেত অর্থকর্পনার 
নাম বাকৃছল। “নবকম্বলোহয়ং মন্ুষ্যঃ১ এই বাক্যে বক্তার অভিপ্রেত 
অর্থ এই যে, এই মনুষ্য নৃতনকম্বলযুক্ত, কিন্তু ছলবাদী তাহার অর্থ 
কল্পনা! করিল যে, “এই মনুষ্য নয়খানি-কম্বল-যুক্ত ।” এইরূপ অর্থ কল্পনা 
করিয়া! বক্তাকে উপহধিত করিতে প্রবৃত্ত হইয়া বলিল যে, ইহার ত 
একথানি বৈ কম্বল নাই, কিরূপে বলিলে, ইহার নয়খানি কম্বল ?, 

যে অর্থ সম্ভবপর, তাহার অতি সামান্ট অর্থাৎ যৎকিঞ্চিৎ সাদৃশ্ঠ 
অবলম্বন করিয়া অনস্তভব অর্থের কল্পন। করার নাম সামান্চ্ছল। ব্রাহ্মণ 
বিদ্ভা সম্ভবপর, কেহ এইরূপ বাক্য প্রয়োগ করিলে, যদি ব্রাহ্মণ হইলেই 
খিগ্ঠা সম্ভবপর হয়, তবে ব্রাত্য বা বালকেও বিদ্যা সম্ভবপর হইতে 
পারে? কেন না, তাহারাও ত ব্রাহ্মণ, এইরূপে ছলবাদী অসম্ভব অর্থের 
কল্পনা করে। ইহাই সামান্তচ্ছল। 

মুখ্য ও গৌণ ভেদে শবের দ্বিবিধ বৃত্তি আছে। তন্মধ্যে বক্ত! মুখ্যবৃত্তি 
বা গৌণবৃত্তি অভিপ্রায়ে বাক্যপ্রয়োগ করিলে প্রযোক্তার অভিপ্রেত 
বৃত্তির ভিন্ন বৃত্তি অবলম্বন করিয়৷ দোষোগস্ভাবন করার নাম উপচারচ্ছল। 
মঞ্চস্থ পুরুষে মঞ্চশবের মুখ্যবৃত্তি নাই-কিন্তু গৌণবৃত্তি আছে। বক্তা 


১৬৬ ষ্ঠ লেক্চর। 


মঞ্চশন্দের গৌণবৃত্তি'অভিপ্রায়ে মঞ্চাঃ ক্রোশস্তি' এইরূপ বলিলে বুঝায়, 
মঞ্চস্থ পুরুষেরা ক্রোশন করিতেছে, কিন্তু ছলবাদী, মঞ্চের ত ক্রোশন 
করে না, এই বলিয়া! যে দোষারোপ করে, তাহাই উপচারচ্ছল। 

ব্যাপ্তির অপেক্ষা না করিয়া কেবল সাধন্ম্য বা বৈধন্ম্যবলে যে 
দোষোস্তাবন করা হয়, তাহার নাম জাতি । জাতি চতুর্কিংশতি প্রকার-- 
সাধন্ম্যনমা, বৈধন্ম্যসম], উতৎকর্ষসমা, অপকর্ষনমা, বর্ণ্যসমা, অবর্যসমা, 
বিকল্পসম1, সাধ্যদমা, প্রাপ্তিসমা, অপ্রাপ্তিমমা, প্রসঙ্গনমা, প্রতিদৃষ্টান্তসমা, 
অন্ুতৎপত্তিনমা, সংশয়সমা, প্রকরণসমা, অহেতুসমা, অর্থাপত্তিসমা, অবিশেষ- 
সমা, উপপত্তিম1, উপলব্ষিনমা, অন্ুুপলব্ষিসমা, নিত্যলমা, অনিতানমা 
ও কাধ্যসমা। এক একটি উদাহরণ প্রদর্শিত হইতেছে । ঘটপটাদি 
কৃতক অর্থাৎ জন্ত অথচ অনিত্য, শব্বও কৃতক, অতএব শব ও অনিত্য। 
এই স্থাপনাতে জাতিবাদী ব্যাপ্তির অপেক্ষা না করিয়া কেবল সাধশ্ম্য- 
অবলম্বনে এইরূপ দোষোস্ভাৰবন করে যে, যদি অনিতা ঘটপটাদির সাধন্থ্য- 
বলে শব্দ অনিত্য হয়, তবে নিত্য আকাশের সাধন্ম্য অমূর্তত্ব শব্দে 
আছে বলিয়া শব্ধ নিত্যও হইতে পারে? ইহা সাঁধন্ম্যসমা জাতি । ঘট 
কৃতক অর্থাৎ জন্ত অথচ অনিতা, শবও কৃতক, অতএব উহাও ঘটের 
স্তার অনিত্য, বাদীর এইরূপ স্থাপনাতে অনিত্য ঘটের বৈধর্ম্য অমূর্তত্ 
শবে রহিয়াছে, অতএব শব্ধ নিত্য হউক--প্রতিবাঁদীর ঈদৃশ প্রত্যবস্থান 
বৈধন্ধ্যসমা জাতির উদাহরণ। কৃতকত্ব-হেতুতে ঘটের ন্তায় শবের 
অনিত্যত্ব সাধন করিলে ক্কৃতকত্ব ও অনিত্যত্ব ঘটে রূপ-সহচরিত দৃষ্ট 
হইয়াছে, অর্থাৎ ঘটে কৃতকত্ব, অনিত্যত্ব ওরূপ আছে, অতএব শব্ধ 
ঘটের স্তাঁয় কৃতক ও অনিত্য হইলে ঘটের স্তাঁয় বূপবান্ও হউক--প্রতি- 
বাদীর এতাদৃশ প্রত্যবস্থান উৎকর্ষসম! জাতি । "শর্বোহনিত্যঃ কৃতক- 
ত্বা-_-এই স্থাপনাতেই ঘটে কৃতকত্ব ও অনিত্যত্বসহচরিত রূপ আছে। 
শবে রূপ নাই, অতএব কৃতকত্ব ও অনিত্যত্বও থাকিবে ন!_-এইরূপ 
প্রত্যবস্থানের নাম অপকর্ষনমা। “শব্দোইনিত্যঃ কৃতকত্বাৎ ঘটব--এই 
স্থাপনাতে জাতিবাদীর এইরপ প্রত্যবস্থান হইতে পারে যে, পক্বৃত্তি হেতু 
সাধ্যের সাধক । যাহাতে সাধ্যের অন্থমিতি হয়, ভাহাই পক্ষ। পক্ষে 
সাধ্যের নিশ্চয় থাকে না_-সনেহ থাকে । যে হেতুবলে অনুমিতি বা 


হ্যায়দর্শন। ১৬৭ 


সাধ্যসিদ্ধি হইবে, দৃষ্টান্তেও সেই হেতু থাকা আবশ্তক। দৃষ্টান্তে সাধ্যের 
নিশ্চর আছে, পক্ষে সাধ্যের নিশ্চয় নাই-_ইহা' স্বীকার করিলে দৃষ্টান্ত ও 
দা্টাস্তিকের তুল্যরূপত্ব হয় না। দৃষ্টান্ত ও দাষ্টান্তিক কিন্তু তুলারূপ 
হওয়াই উচিত। অতএব দৃষ্টান্ত ও দাষ্টান্তিকের তুল্যরপত্বরক্ষার জন্য, 
হয় পক্ষের ন্যায় দৃষ্টান্তেও সাধ্যের সন্দেহ, অথবা দৃষ্টান্তের স্তায় পক্ষেও 
সাধ্যের নিশ্চয় স্বীকার করিতে হয়। এই উভয়ের নাম যথাক্রমে 
বর্যসমা ও অবর্যসমা। জাতিবাদীর অভিপ্রায় এই যে, কোনরূপেই 
স্থাপন! হেতুসিদ্ধ হইতে পারিতেছে না। কেন না, দৃষ্টান্তে সাধ্যের সন্দেহ 
হ্বীকার করিলে দৃষ্টান্তের এবং পক্ষে সাধ্যের নিশ্চয় স্বীকার করিলে 
পক্ষের অসিদ্ধি হইয়া পড়ে । 'শবোহনিত্যঃ কৃতকত্বাং,_-এই স্থাপনাতে 
কৃতকত্ব বাষুতে গুরুত্বব্যতিচারী অর্থাৎ ঘটাদিতে কৃতকত্ব ও গু+ত্ব সহচর 
হইলেও বাষুতে কৃতকত্ব আছে, গুরুত্ব নাই । গুরুত্ব পরমাণুতে অনিত্যত্ব- 
ব্যভিচারী, অর্থাৎ ঘটাদিতে গুরুত্ব ও অনিত্যত্ব সহচর বটে, কিন্তু 
পরমাণুতে গুরুত্ব আছে, অনিত্যত্ব নাই। আননিত্যত্ব ক্রিরাতে মূর্তত্ব- 
ব্যতিচারী অর্থাৎ ঘটাদ্দিতে অনিত্যত্ব এবং মূর্তত্ব এ উভয়ই আছে, ক্রিয়াতে 
কিন্তু অনিত্যত্বই আছে, মূর্ভত্ব নাই। এইব্ূপে ধর্মঘকলের পরস্পর 
ব্যভিচার দৃষ্ট হইতেছে । অতএব ক্লৃতকত্বও অনিত্যত্বব্যতিচারী হউক-- 
জাতিবাদীর এইরূপ প্রত্যবস্থান বিকল্পসমা । সাধোর ম্যায় পক্ষার্দিও 
অন্ুমিতির বিষয়, সুতরাং প্রস্তাবিতন্তায়সাধ্য এই বিবেচনায়, পক্ষা্দি 
পর্বে পিদ্ধ হইলে তাহাদের প্রস্তাবিতন্তায়সাধ্যত্ব হইতে পারে না বলিয়া 
অভিলধিত অন্ুমিতিবিষয়ত্বও হইতে পারে না, পূর্বে সিদ্ধ না হইলে 
আশ্রয়াসিদ্ধি প্রভৃতি দোষ হয়, এইরূপ প্রত্যবস্থানের নাম সাধ্যসমা। হেতু 
সাধ্যের সহিত বন্বদ্ধ হইয়! সাধ্যের সাধক হয়, অথবা দাধ্যের সহিত সন্বদ্ধ 
না হইয়াই সাধ্যের সাধক হয়? সম্বদ্ধ হইয়! সাধ্যের সাধক হইলে, হেতু 
ও সাধ্য উভয়েরই নন্বদ্বত্ব তুল্য, তন্মধ্যে কে£কাহার সাধক হইবে? পক্ষা- 
স্তরে, হেতু সাধ্যের সহিত মন্বদ্ধ না হইয়াই যদি সাধ্যের সাধক হয়, 
তবে অমন্বদ্ধত্বের অবিশেষহেতুক সাধ্যাভাবেরই সাধক হয় না কেন? 
ঈদৃশ প্রত্যবস্থানদ্বয়ের যথাক্রমে নাম প্রাপ্তিমমা ও অপ্রাপ্তিসমা। 
ৃষ্টান্তের প্রমাণ বলিতে হইবে, এ প্রমাণেরও প্রমাণ বলিতে হইবে, 


১৬৮ যষ্ঠ লেক্চর। 


ইত্যাদিরূপে প্রত্যবস্থানের নাম প্রসঙ্গপমা । 'শবোহনিত্যঃ কৃত কত্বাঁৎ 
ঘটবৎ»_এই স্থাপনাতে, যদি ঘটদৃষ্টান্তবলে শব অনিত্য হয়, তবে 
আকাশমৃষ্টান্তবলে নিত্যই হয় নাকেন? এইব্ধপ প্রত্যবস্থানের নাম 
প্রতিদৃষ্টান্তনমা। “ঘটো বূপবান্‌ গন্ধাৎ পটবৎ অর্থাৎ ঘটে গন্ধ আছে, 
অতএব পটের ন্তায় ঘটে রূপ আছে-_ এইরূপ স্থাপনাতে, ঘট, গন্ধ 
ও পটের উৎপত্তির পূর্ব্বে হেতু ও দৃষ্টান্তের অদিদ্ধি__জাঁতিবাদীর ঈদৃশ 
প্রত্যবস্থানের নাম অনুৎপত্তিসমী। “শবোহনিত্যঃ কৃতকত্বাৎ ঘটবৎ-_ 
এই স্থাপনাতে অনিত্য ঘট এবং নিত্য গোত্বাদিজাতি, এই উভয়েই 
ন্দিয়কত্ব অর্থাৎ ইন্দরিয়গ্রাহ্ত্ব আছে। স্থৃতরাং কৃতকত্ব-হেতুবলে যেরূপ 
শবের অনিত্যত্ব নিশ্চয় কর! হয়, সেইরূপ এক্রিয়কত্ব-হেতুবলে শবের 
অনিতাত্বের সন্দেহই করা হয়না কেন? এইরূপ প্রত্যবস্থানের নাম 
সংশয়সমা। এ স্থাপনাতেই, শব্ধ অনিত্য হইতে পারে না। কারণ, 
নিত্যত্বনাধক শ্রাবণত্ব অর্থাৎ শ্রবণেন্র্িয়গ্রাহত্ব অনিতাত্বের বাধক হইতেছে। 
কেন না, শব্বত্ব নিত্য অথচ তাহ! শ্রবণেন্দ্িষগ্রাহ্থা। এতাদৃশ প্রত্যব- 
স্থানের নাম প্রকরণসমা। দণ্ডাদি ঘটাদির পুব্বকালবর্তী হইয়া ঘটাদির 
কারণ হইতে পারে না। কেন না, ঘটাদির পুর্বকালে ঘটাদিই নাই, 
কাহার কারণ হইবে? দণ্ডাদি ঘটাদির উত্তরকালবর্তী হইয়াও কারণ 
হইতে পারে ন1। কেন না, তৎপুর্বেই ঘট হইয়াছে । ঘটাদির সমকালবত্তী 
হইয়াও কারণ হইতে পারে না। কেন না, বাম ও দক্ষিণ শূঙ্গের স্ায় 
তুল্যকালবন্তী পদার্থের কার্্যকারণভাব হয় না। এইরূপ প্রত্যব- 
স্থানের নাম অহেতুসমা। “শবোইনিত্য;,_-এরপ বলিলে, অর্থাৎ বোধ 
হয় যে, শব্ধ ভিন্ন সমস্তই নিত্য; “কৃতকত্বাদনিত্যঃ--এরূপ বলিলে, 
অর্থাৎ বোধ হয় যে, অন্য হেতুতে নিত্য-_ইত্যাদিরূপ প্রত্যবস্থানের নাম 
অর্থাপত্তিসমা। শব্দ ও ঘট উভয়েই কৃতকত্ব আছে বলিয়া যদি 
উভয়ের তুল্যতা হয়, তবে সকল পদার্থেরই সত্তা আছে বলিয়া সকল 
পদার্থেরই তুল্যতা হউক-_ইত্যাকার প্রত্যবস্থানের নাম অবিশেষসম1। 
'শর্ষোহনিত্যঃ কৃতকত্বাৎ__ এই স্থাপনাতে, শব্দের অনিত্যত্বের কারণ 
কৃতকত্বের উপপত্তি হয় বলিয়। যদি শব্দ অনিত্য হয়, তবে নিত্যত্বের 
কারণ অল্পর্শত্বের উপপত্তি হয় বলিয়া শব্ধ নিত্যও হইতে পারে--এইরূপ 


স্যায়দর্শন। ১৬৯ 


প্রত্যবস্থানের নাম উপপত্তিসমা। 'পর্বতো বহিমাঁন্‌ ধৃমাৎ--এই স্থাপ- 
নাতে ধূমের অভাবে আলোকদ্বারাও বহির সিদ্ধি হয়, স্থৃতরাং ধূম বহি 
সাধক হইতে পারে না-_ঈদৃশ প্রত্যবস্থানের নাম উপলব্ধিদমা । 
নৈয়ায়িকেরা বলেন, শব্দ নিত্য নহে। কারণ, উচ্চারণের পুর্বে এবং 
পরে শবের উপলব্ধি হয় না। শব্ধ নিত্য হইলে তাহার অনুপলব্ধি হইতে 
পারে না। যেমন কুড্যাদিদ্বারা আবৃত ঘটাদির উপলদ্ধি হয় না, 
সেইরূপ উচ্চারণের পূর্বে ও পরে শব্দ আবৃত থাকে বলিয়া তাহার 
উপলব্ধি হয় না--এরূপও বল! যাইতে পারে না। কেন না, তাহা হইলে 
যাহা দ্বারা শব্দ আবৃত হয়, সেই আবরণের উপলব্ধি হইত। আবরণের 
উপলব্ধি হয় না বলিয়া আবরণের অভাব নিশ্চিত হয়। ইহাতে জাতিবাদী 
এইরূপ প্রত্যবস্থান করেন যে, আবরণের যেমন উপলব্ধি হয় না, সেইরূপ 
আবরণের অনুপলব্ধিরও উপলব্ধি হয় না। সুতরাং অনুপলব্ধিবলে যদি 
আবরণের অভাবনিশ্চয় হয়, তবে অন্থপলব্ষিবলেই আবরণের অন্ুপ- 
লব্ষিরও অভাবনিশ্চয় হইতে পারে। অন্ুপলন্ধির অভাবের নিশ্চয় হইলে 
কিন্ত আবরণের উপলব্ধিই সিদ্ধ হয়। এইব্প প্রত্যবস্থানের নাম অন্কুপ- 
লব্ষধিসমা । ঘটের হ্যায় শব্ষে কৃতকত্ব আছে বলিয়! ঘটের ন্যায় শবের 
অনিত্যত্ব সাধন করিতে গেলে, ঘটের যৎকিঞ্চিং সাধন্দ্ট অবলম্বন করিয়া 
সকলেরই অনিত্যত্ব সাধন করিতে পার! যায়, এইরপ প্রত্যবস্থানের নাম 
অনিত্যদমা। শব্দের অনিতাত্ব যদি সর্ধবকালে স্বীকার কর! হয়, তাহ! 
হইলে শব্ধ সর্বধকালে থাকে-ইহাও শ্বীকার করিতে হইবে । শব্দ সর্ব- 
কালে থাকিলে শব্ধ নিত্য হুইয়া পড়ে। এইরূপ প্রত্যবস্থানের নাম 
নিত্যসমা | 'শর্োহনিত্যঃ প্রধত্তানস্তরীয় কত্বাৎ” অর্থাৎ যেহেতু শব্ধ প্রযত্বের 
অনস্তরভাবী, অতএব শব্দ অনিত্য, এই স্থাপনাতে, দেখা যাইতেছে যে, 
প্রযত্বের অনস্তর বিছ্যমান বস্তরও অভিব্যক্তি হয়, অবিদ্তমান বস্তরও 
উৎপত্তি হয়। সুতরাং প্রযত্বানস্তরভাবিত্বরূপ হেতৃদ্বারা শব্ের অনিত্যত্ব 
সিদ্ধ হইতে পারে ন1। ইতাকার প্রত্যবস্থানের নাম কার্যযসমা । অথবা 
যে সকল জাতি পূর্বে বলা হইয়াছে, তত্তিন্ন জাতিমাত্রই কার্য্যসমা। 
যদ্দারা বিচারকারীর বিপ্রতিপত্তি কিনা বিপরীত জ্ঞান বা অপ্রতি- 
পতি কিনা প্রক্কৃতবিষয়ে অজ্ঞান প্রকাশ পায়, তাহার নাম নিগ্রহস্থান। 


২ 


১৭০ ষষ্ঠ লেক্চর। 


প্রথমতঃ একরূপ প্রতিজ্ঞা করিয়া পরে তাহার পরিত্যাগ করা, পরপক্ষে 
দোষোগ্ভাবন না করা, পরদত দোষের উদ্ধার ন' কর! প্রভৃতি নিগ্রহস্থান । 
অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাহানি প্রভৃতি ঘটিলে পুরুষ নিগৃহীত বা পরাজিত হয়। 
নিগ্রহস্থানগুলি পুরুষদেষের উন্নায়ক | 

নিগ্রহস্থান দ্বাবিংশতিপ্রকার-_ প্রতিজ্ঞাহানি, প্রতিজ্ঞান্তর, প্রতিজ্ঞা- 
বিরোধ, প্রতিজ্ঞাসংন্তাস, হেত্বন্তর, অর্থান্তর, নিরর্থক, অবিজ্ঞাতীর্থ, 
অপার্থক, অপ্রাপ্তকাল, ন্যুন, অধিক, পুনরুক্ত, অনন্ুতাষণ, অজ্ঞান, 
অগ্রতিভ1, বিক্ষেপ, মতান্থৃজ্ঞা, পর্ধযন্থুযোজ্টোপেক্ষণ, নিরন্ুযোজ্যান্বযোগ, 
অপসিদ্ধান্ত ও হেত্বাভান। সংক্ষেপে নিগ্রহস্থানগুলির পরিচয় দেওয়া 
হইতেছে। 

শকঝৌহনিত্যঃ এন্রিয়কত্বাৎ ঘটবৎ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গ্রাহাত্বহেতৃক ঘটের 
্তাঁয় শব অনিত্য, এই স্থাপনাতে, সামান্য (জাতি) ইন্দিয়গ্রাহ্হ অথচ নিত্য-_ 
প্রতিবাদী এইরূপে ব্যভিচারের উদ্ভাবন করিলে, বাদী যদি বলে যে, যদি 
ইন্দিয়গ্রাহ্ সামান্ত নিত্য হয়, ঘটও নিত্যই হউক, তাহা হইলে বাদীর 
প্রতিজ্ঞাহানি হইল। এ স্থাপনাতে এ দোষের নিরাসার্থ যদি বাদী 
বলে যে, ইন্রিয়গ্রাহা সামান্ত নিত্য বটে, কিন্তু সামান্ত সর্ব্গত। ইন্দ্রিয় 
গ্রান্থ ঘট সব্দগত নহে, অথচ অনিত্য। শবও সর্ধগত নহে, স্বৃতরাং 
অনিত্য। তাহা হইলে, প্রতিজ্ঞান্তর হইল। কেন না, “শব্দো- 
ইনিত্য£-_ইহা! প্রথম প্রতিজ্ঞা । “অসর্ধগতঃ শবোহনিত্যঃ ইহ! দ্বিতীয় 
গ্রতিজ্ঞা। “গুণব্যতিরিক্তং দ্রবাং বূপাদিভ্যোহর্থান্তরস্তান্ুপলব্ধেঃ,__অর্থাৎ 
দ্রব্য গুণের অতিরিক্ত ঘেহেতু রূপাদিগুণের অতিরিক্ত কিছুরই উপলব্ধি 
হয় না। ইহা প্রতিজ্ঞাবিরোধের উদ্দাহরণ। কেন না, দ্রব্য গুণের 
অতিরিক্ত হইলে অবশ্য তাহার উপলব্ধি হইবে । গুণাতিরিক্তের উপলব্ধি 
না হইলে ভ্রব্য গুণের অতিরিক্ত হইতে পারে না। সুতরাং ইহা পরম্পর 
বিরদ্ধ। শকঝোহনিত্যঃ এক্িয়কত্বাৎ, এই স্থাপনাতে সামান্তে ব্যভি- 
চারের উদ্ভাবন করিলে বাদী যদি বলে যে, কে বলে শব্দ অনিত্য? 
তাহ! হইলে বাদীর প্রতিজ্ঞাসংস্তাস হইল। ্রঁ স্থাপনাতেই প্রতিবাদীর 
উদ্ভাধিত সামান্তে ব্যভিচারের নিবারণার্থ বাদী যদি হেতৃতে 'সামান্তবন্বে 
সতি” এইকপ বিশেষণ দেয় অর্থাৎ সামান্যুক্তত্ব-সহকৃত ইন্জিযবগ্াত্ব হেতু 


হ্যায়দর্শন | | ১৭১ 


করে, তাহা হইলে সামান্ত সামান্যযুক্ত নয় বলিয়া প্রতিবাদীর উদ্ভাবিত 
ব্যভিচারের নিরান হয় বটে, কিন্তু হেত্বস্তর হয়। কেন না, “উত্দ্িযকত্বাৎঃ__ 
ইহা প্রথম হেতু । প্দামান্তবন্ে সতি এ্রত্দ্রিরকত্বাৎ__ইহা দ্বিতীয় 
হেতু । শবোইনিত্য ইতি প্রতিজ্ঞা, অস্পর্ণত্বাদিতি হেতু৮--এইব্সপ স্থাপনা 
করিয়া বাদী যদি বপিতে থাকে যে, হেতুশন্দটি হিধাতু ও তুন্প্রত্যন- 
যোগে নিষ্পন্ন কদন্তপদ, পদ চারিপ্রকার-নাম, আখ্যাত, উপসর্ণ, 
নিপাত ইত্যাদি, তাহা হইলে অর্থান্তর হইল। কেন না, বাদীর পর-পর 
কথাগুলি প্রকৃতের উপযোগী নহে। এনিত্যঃ শব্ষঃ কচটতপাঃ অর্থাৎ 
ক-ট-ট-ত-প-রূপ শব্ধ নিত্য। এস্কলে 'কচটতপাঃ ইহ! নিরর্থক । যে 
বাক্য তিনবার বলিলেও পরিষদ্‌ ও প্রতিবাদী তাহার অর্থগ্রহণ করিতে 
পারে না, ভাদৃশ ছুর্োধ্য বাক্য অবিজ্ঞাতার্থ। দশ দাড়িগানি বড়পৃপা৮-- 
অর্থাৎ দশটি দাড়িম ফল, ছয়টি অপুপ, ইত্যাদিরূপ যে সকল বাক্য 
পূর্বাপর মিলিত হইয়া কোন অর্থ প্রতিপাদ্ন করে না, তাহার নাম 
অপার্থক। স্টায়াবয়বগুলি যে ক্রমে প্রয়োগ করিতে হর, তাহার বিপরীত 
ক্রমে প্রয়োগ করার নাম অপ্রাপ্তকাল। পাঁচট স্তায়াবয়বের কোন- 
একটি অবয়ব প্রযুক্ত না হইলে, নানবপ নিগ্রহস্থান হয়। ধুমাদালোকাৎ 
মহানদবৎ চত্বরবৎ-_ইত্যািবূপে অধিক হেতু বা উদাহরণ প্রষুক্ত 
হইলে "অধিক,নামক নিগ্রহস্থান হয়। ভাম্যকার বলেন যে, একটি হেতু 
বা উদাহরণ প্রযুক্ত হইবে-_ এইরূপ নিয়মে কথার আরন্ত হইলে ইহা! 
দোষ হইবে। 

প্রয়োজন ভিন্ন শব্ধ বা অর্থের পুনকৃক্তি এবং যাহা অর্থাৎ লন্ধ হয়, 
শবদদ্ধার৷ তাহার নির্দেশ করার নাম পুনরুক্ত। বাদী তিনবার বলিয়াছে, 
সতা তাহার অর্থ বুঝিতে পারিয়াছে, অথচ প্রতিবাদী তাহার প্রত্যুচ্চারণ 
পর্য্যন্ত করে না। এস্থলে প্রতিবাদীর অননুভাষণরূপ নিগ্রহস্থান হইল। 
বাদী তিনবার বলিয়াছে, পরিষদ্‌ তাহার অর্থ বুঝিয়াছে, অথচ প্রতিবাদী 
তাহার অর্থ বুবিতেছে না, এন্থলে প্রতিবানীর অজ্ঞানরূপ নিগ্রহস্থান 
হইল। উচিত অবসরে উত্তর করিতে 'না পারিলে অপ্রতিভারপ নিগ্রহ- 
স্থান হয়। কথা চলিতেছে, এমন সময়ে কার্য্যান্তরব্যপদেশে কথাবিচ্ছেদ 
করার নাম বিক্ষেপ। স্বপক্ষে কোন দৌষ প্রদত্ত হইলে এ দোষের 


১৭২ ষষ্ট লেক্চর। 


উদ্ধার না করিয়াই যদি বলা হয় যে, তোমার পক্ষেও এ দোষ রহিয়াছে, 
তাহা হইলে মতানুজ্ঞা হইল। এক পক্ষ নিগ্রহস্থান প্রাপ্ত হইয়াছে, 
তথাপি তাহার উদ্ভাবন না করিলে পর্য্যন্ুযোজ্যোপেক্ষণ হয়। বাস্তবিক 
নিগ্রহস্থান হয় নাই, তথাবিধস্থলে ভ্রমবশতঃ নিগ্রহস্থানের উদ্ভাবন করার 
নাম নিরন্ুযৌজ্যানযোগ। বিচারকালে নিজের স্বীকৃত নিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ- 
কথা বলিলে অপনি্ান্তরূগ নিগরহস্থান হয়। হেত্বাভাদের পরিচয় পূর্বে 
প্রদত্ত হইয়াছে। 


সপ্তম লেকৃচর | 


্পসস্ঞতিং 8০৩৪০ 


সাংখ্যদর্শন | 


মহধি কপিল সাংখ্যদর্শনের প্রথম আচা্য। তাহার প্রণীত সাংখ্যদর্শন 
তত্বসমাস+নামে আখ্যাত। উহা নিতান্ত সংক্ষিপ্ত । বিজ্ঞানভিক্ষুর মতে 
ইদানীস্তন প্রচলিত সাংখ্যদর্শনও কপিলপ্রণীত। 'তত্বমান'নামক সংঙ্ষিপ্ত 
সাংখ্যদর্শনের প্রপঞ্চন অর্থাৎ বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা আছে বলিয়। প্রচলিত 
সাংখ্যদর্শনের অপর নাম সাংখ্যপ্রবচন। এই কারণে পাতগ্রলদর্শনও 
সাংখ্যপ্রবচন নামে অভিহিত হইয়াছে । সাংখ্যদর্শনে ঈশ্বর অঙ্গীকৃত 
হন নাই, অধিকন্ত প্রত্যাখ্যাত হইয়াছেন বলিয়া, ইহার অপর নাম 
নিরীশ্বর-সাংখ্দর্শন। বিজ্ঞানভিক্ষু বলেন, সুত্রকার অভ্যুপগমবাদ অবলম্বন 
করিয়া ঈশ্বরের প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন । হৃত্রকারের অভিপ্রায় এই যে, 
মানিলাম বিচারমুখে ঈশ্বর পিদ্ধ হইলেন না। তদ্বারা বিবেকসাক্ষাংকার 
হইলে মুক্তি হইবার কোন বাধ! হইতে পারে না। “ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ”__. 
এইরূপ হ্বত্ররচনাদ্বারাই হ্ত্রকারের উক্তরূপ অভিপ্রায় বুঝিতে পার! যায়। 
ঈশ্বর নাই'ইহা সুত্রকারের অভিপ্রায় হইলে “ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ” এরূপ সুত্র 
না করিয়া, “ঈশ্বরাভাবাৎ-__এইরূপ হুত্র করিতেন। বাচস্পতিমিশ্রের 
মতে কিন্ত সাংখ্য নিরীশ্বরবাদী । 

সে যাহ! হউক, মহর্ষি কপিলের শিষ্য আস্মরি, আম্থরির শিষ্য পঞ্চ- 
শিখাচার্ধ্য সাংখ্যদর্শনের পরিষ্কারচ্ছলে বিস্তর গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। 
কালক্রমে সাংখ্যদর্শনের অনেকগুলি গ্রন্থ বিলুপ্ত হইয়াছে। ঈশ্বররুষ্ণের 
সাংখ্যকারিক। অতি সমীচীন ও প্রামাণিক গ্রন্থ। প্রাচীন আচার্যদিগের 
নিকট ইদানীন্তন প্রচলিত সাংখ্যদর্শনের সুত্র অপেক্ষাও সাংখ্যকারিকা! 
সমাদৃত ও প্রামাণিকরূপে পরিগৃহীত হইয়াছে। পুজ্যপাদ ভগবান্‌ 
শঙ্করাঁচার্য্য শারীরকভাস্তে সাংখ্যদর্শনের মতখওনপ্রসঙ্গে প্রচলিত সাংখ্য- 


১৭৪ সপ্তম লেক্চর। 


দর্শনের সুত্র উদ্ধৃত না করিয়া ঈশ্বরকৃষের মাংখ্যকারিকা উদ্ধৃত করিয়াছেন। 
স্থতরাং ভগবান্‌ শঙ্করাঁচার্য্য প্রচলিত সাংখ্যস্থত্র অপেক্ষা সাংখ্যকারিকার 
সমধিক সম্মান করিতেন-_-এরপ বিবেচনা করিলে অসঙ্গত হইবে না। 
গ্রচলিত সাংখ্যদর্শনে ৪৫৬টি হৃত্র আছে। শুত্রগুলি ৬ অধ্যায়ে বিভক্ত। 
৮প্রথমাধ্যায়ে হেয়, হেয়হেতু, হান ও হানহেতু নিরূপিত হইয়াছে । 
ছুংখ হেয়, প্রকৃতি ও পুরুষের অবিবেক বা অভেদজ্ঞান ছুঃখহেকু। 
দুঃখের অত্যন্তনিবৃত্তিই হান। বিবেকজ্ঞান অর্থাৎ প্রক্কৃতি বা তৎকার্ধ্য 
বৃদ্ধা পুরুষ নহে ; পুরুষ_-প্রক্কতি এবং প্রক্কতিকার্ধা বুদ্ধ্যাদি হইতে মম্পূর্ণ 
ভিন্ন, এতাদৃশ বিবেকজ্ঞান কিনা প্রন্কৃতি ও পুরুষের পৃথকৃরূপে জ্ঞান, 
হানের কিনা অত্যন্তছঃখনিবৃত্তির হেতু । এই সকল বিষয় প্রথমা- 
ধ্যায়ে নির্ণীত হইয়াছে । দ্বিতীয়াধ্যায়ে প্রকৃতির সুক্মুকার্ধ্য ; তৃতীয় 
অধ্যায়ে প্রকৃতির স্থুলকাধ্য, লিঙগশরীর, স্থুলশরীর, অপরবৈরাগ্য এবং 
পরবৈরাগ্য নিরূপিত হইয়াছে । চতুর্থ অধ্যায়ে শাস্ত্রপ্রসিদ্ধ কতকগুলি 
আখ্যায়িক! প্রদশনপূব্বক প্রকারান্তরে বিবেকজ্ঞাননাধনের উপদেশ, 
পঞ্চমাধ্যায়ে পরপক্ষনিরাস অর্থাৎ স্বসিদ্ধান্তে বাদীদিগের সমুদ্ভাবিত 
দোষের নিরাস এবং তাহাদের মতখণ্ডন। ষষ্ঠ অধ্যায়ে বিস্ৃতভাবে 
শাস্ত্রের মুখ্য বিষয়ের ব্যাখ্যা ও শান্তরার্থের উপসংহার করা হইয়াছে। 
তাষ্কার বিজ্ঞানতিক্ষু বলেন যে, শ্রবণের পর আত্মার মননের 
জন্য ভগবান্‌ কপিল সাংখ্যদর্শনের প্রণয়ন করিয়াছেন। এই দর্শনে 
শ্রতির অবিরোধী ও অন্ুকুল উপপত্তি বা যুক্তিসকল প্রদর্শিত হইয়াছে। 
ঈশ্বরকষ্ণের সাংখ্যকারিকা, গৌড়পাদাচার্্যক্ূত সাংখ্যকারিকাভাম্য, 
বাচস্পতিমিশ্রকৃত সাংখ্যতত্বকৌমুদী, বিজ্ঞানভিক্ষুকৃত সাংখাভাষ্য এবং 
ততকৃত নাংখ্যসার প্রভৃতি সাংখাশাস্ত্রের প্রামাণিক গ্রন্থ । সাংখ্যদর্শনের 
প্রথম্ন সুত্রটি এই__ 
অথ ত্রিবিধছুঃখাত্যন্তনিবৃত্তিরত্যন্তপুরুষা খঃ। 
অর্থাৎ ন্তায়মতের স্তায় সাঁখ্যমতেও ছুঃখত্রয়ের অত্যন্তনিবৃত্তিই পরম- 
পুরুতার্থ বা মুক্তি। ছুঃখ ত্রিবিধ--আধ্যাত্সিক, আধিভৌতিক ও আধি- 
দৈবিক। যে ছুঃখ আত্যন্তরীণ উপায়ে সম্পন্ন হয়, তাহার নাম আধ্যা- 
ত্বিক ছথ। সাধারণ লোকে দংঘাত অর্থাৎ শরীর ও ইন্রিয়াদিকেই 


 সাংখ্যদর্শন। ১৭৫ 


আত্মা বলিয়া বিবেচনা করে, স্থৃতরাং তাদৃশ-উপায়-সাধা ছুঃখ আধ্যাত্মিক- 
ভুঃখরূপে পরিগণিত। আধ্যাত্মিক ছুঃখ দুইপ্রকার_-শারীর ও মানস। 
বাত-পিত্ত-শ্নেক্সার সাম্যাবস্থা আরোগ্য বা স্বাঙ্ক্ের নিদান। উহাদের 
বৈষম্য ঘটিলেই রোগের উৎপত্তি হয়। তন্নিবন্ধন যে দুঃখের অন্কুতব হয়, 
তাহাই শারীর ছুঃখ। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও ভয়াদিজনিত 
দুখে মানস ছুঃখ। আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক, এই দ্বিবিধ ছুঃখই 
বাহা-উপান্ন-সাধ্য, আভ্যন্তরীণ উপায়-নীধ্য নহে। মানুষ, পশত বা স্থাবরাদি- 
জনিত ছুঃখের নাম আধিভৌতিক দুঃখ । কেন না, এ্র-জাতীয় ছু 
ভূতপদার্থের ছারা সম্পন্ন হয়। যঞ্ষরাক্ষমাদির আবেশনিধন্ধন যে 
ছুঃখ হয়, তাহাই আধিদৈবিক দুখ । ঘেহেতু, দেবতাদ্বারা তাদূশ দুঃখ 
সমুৎপর হয়। এই ত্রিবিধ দুঃখের অত্যন্তনিবৃত্তিই মুক্তি। বিবেক- 
জ্ঞান মুক্তিন্ন বা অত্যন্তঘঃখণিবুত্তির উপায়। বিবেকজ্ঞান অর্থাৎ 
প্রক্কতি এবং প্রক্ৃতিকার্ধ্য বুদ্ধযাদি হইতে ভিন্নরূপে পুরুষের কিনা 
আত্মার জ্ঞানের নাম ধিবেকজ্ঞান। এই বিবেকজ্ঞান সম্পাদনের জন্য 
সাংখ্যদর্শনের আবিভাৰ বা অবতারণা । 

সাংখ্যাচার্যেরা বলেন, জগতে বদি ছুঃখ না থাকিত, থাকিয়াও 
যদি ড্িহাপিত না হইত অর্থাৎ লোকে বদ্দি ছুখ পরিতাগ করিতে 
অভিলাধী না হইত, তাহ! হইলে কেহই শাস্্প্রতিপাগ্ধ বিষয় জানিতে 
চাহিত না। কিন্ত গ্রাণিমাত্রেই ছুঃখের অনুভব করে, এবং স্বভাবতই 
ছুঃখকে প্রতিকুলরূপে ভাবিয়া থাকে। এমন ব্যক্তি নাই, থে ছুঃখকে 
নিজের অনুকূলরূপে বিবেচনা করিতে পারে'। প্রতিকূল বিষয় পরি- 
ত্যাগ করিবার ইচ্ছাও লোকের স্বাভাবিক । শাস্ত্র বা সাংখ্যদর্শন দুঃখ- 
সমুচ্ছেদের উপায় নির্দেশ করিয়া দের। এইহেতু শাস্্রপ্রতিপাদ্য বিষয় 
অবগত হইবার জন্য লোক আগ্রহান্বিত, সুতরাং শান্ত্রগ্রণেতার বাঁকে 
শ্রদ্ধাবান্। লোকে যাহ! জানিতে চায়, যে বক্তা! তদ্বিয়ের প্রসঙ্গ বা 
অবতারণা করেন, বুদ্ধিমান্‌ ব্যক্তিরা মনোযোগের সহিত তাহার বাক্য 
শ্রবণ করিয়া থাকেন। লোকে যাহা জানিতে চায় না, বক্তা তদ্বিষয়ের 
প্রসঙ্গ উত্থাপিত করিলে, বুদ্ধিমানের তাহার বাক্য শুনিতে চাহেন না, 
প্রত্যুত উন্নত্তের সায় তাহার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করিয়া থাকেন। 


১৭৬ সপ্তম লেক্চর | 


যে দুঃখের অপ্রতিহত প্রভাবে লোকদকল একান্ত জর্জরিত ও তাহার 
সমুচ্ছেদমাধনে নিতান্ত আগ্রহান্বিত, শান্্র সেই ছুঃখসমুচ্ছেদের উপায় 
নির্ধারণ করে। সুতরাং শান্্রপ্রতিপান্ত বিষয় লোকের বুভুৎসিত ও 
অপেক্ষিত। অতএব শান্ত্রপ্রতিপান্তধ বিষয়ে লোকের মনোযোগ 
অবশ্তস্তাবী। | | 
সত্য বটে, শাস্ত্রোপদিষ্ট উপায়ে ছুঃখের সমৃচ্ছেদসাধন করা কষ্টনাধ্য। 

কেন না, বিবেকজ্ঞান ছুঃখসমুচ্ছেদের শাস্ত্রোপদিষ্ট উপায়। বিবেকজ্ঞান 
অনায়াসসাধ্য নহে, অনেকজন্মপরম্পরার আয়াসে বিবেকজ্ঞান লাভ করা 
যায়। ভগবান্‌ বলিয়াছেন--. 

বহ্‌নাং জম্মনামস্তে জ্ঞানবান্‌ মাং প্রপদ্ভতে। 
লৌকিক উপায়ে কিন্তু অল্লায়াসে ছুঃখের সমুচ্ছেদ সাধন করা যাইতে পারে। 
সদ্বৈদ্বের উপদেশানুসারে উত্তম-ওষধ-ব্যবহারে শারীরছুঃখের, মনোজ্ঞ স্ত্রী- 
পান-ভোজনাদির পরিসেবনে মানসছুঃখের, নীতিশান্ত্রকুশলতা ও নিরাপদ্‌ 
সমীচীন স্থানে অবস্থিতিদ্বারা আধিভৌতিক দুঃখের এবং মণিমন্ত্রাদির 
সাহায্যে আধিদৈবিক দুঃখের প্রতিকার অনায়াসে সম্পন্ন হইতে পারে। 
ঈদৃশ সহজ উপায়ে যখন ছুঃখের প্রতিকার হইতে পারে, তখন কষ্টকর 
শান্ত্রোপদিষ্ট উপাক্জে লোকের প্রবৃত্তি একান্ত অসম্ভব । একটি প্রবাদ 
আছেঘে__. 

অর্কে চেন্মধু বিন্দেত কিমর্থং পর্বতং ব্রজেৎ। 

ইষ্্তার্থগ্ত সংসিদ্ধোৌ কে বিদ্বান যত্বমাচরেৎ | 
অর্ক অর্থাৎ আকনবৃক্ষে যদি মধু পাওয়া যায়, তাহা হইলে মধু-আহরণ- 
উদ্দেশে কিজন্ত লোক পর্বতে যাইবে? অভিলধিত প্রয়োজন সম্পন 
হইলে কোন্‌ বিদ্বান্‌ ব্যক্তি ফত্ব করিয়া থাকে? ইহার তাৎপর্য্য এই যে, 
সুকর উপায়ে অভিপ্রেত কাধ্য সিদ্ধ হইতে পারিলে ছুষ্ধর উপায়ে কেহই 
প্রবৃত্ত হয় না। 

এ আপত্তি আপাততঃ রমণীয় বা অকাট্য বলিয়া বোধ হইতে পারে 
বটে, কিন্তু অভিনিবিষ্রচিত্তে বিবেচনা! করিলে ইহার অসারতা প্রতিপন্ন 
হইতে অধিক সময়ের অপেক্ষা থাকে না। দেখা গিয়াছে যে, ষথাবিধি 
উঁধধসেবন, মনোজ স্ত্ী-পান-ভোজনাদির উপযোগ, নিরাপদ স্থানে অবস্থিতি 


সাংখ্াদর্শন। | ১৭৭ 


ও নীতিশাস্ত্রের অভ্যাস এবং মণিমন্ত্রাদির সংগ্রহ করিয়াও আধ্যাজ্মিকাদি 
দুঃখের প্রতিকার কগ্তে পারা যায় নাই। অতএব ওষধসেবনারি ছুঃখ- 
নিবৃত্তির উপায় হইলেও" উহা! একান্তিক বা অব্যভিচারী, উপায় নহে 12৩৮ 
আরও বিবেচ্য যে, এঁ সকল উপায়ে তৎকালে ছুঃখের নিবু্তি হইলেও 
কালাস্তরে তজ্জাতীয় ছুঃখের পুনরাবি3ভাব হয়, ইহীও প্রত্যক্ষপিদ্ধ। তাহার 
ৃ্ান্তপ্রদর্শন অনাবশ্ঠক। বিবেকজ্ঞান কিন্তু ছু:খনিবৃত্তির একান্তিক 
উপায়, অথচ বিবেকজ্ঞানদ্বারা ছুঃখের সমুচ্ছেদদাধন হইলে পুনর্ধার দুঃখের 
আবির্ভাব একান্ত অপন্তব। কেন না, মিথাজ্ঞান দুঃখের নিদান বা 
আদিকারণ। বিবেকজ্ঞানদ্বারা মিথ্যাজ্ঞান সমূলে উন্ুলিত হইলে 
কারণের অভাবে কার্যের উৎপত্তির আশঙ্কাই হইতে পারে না। বুক্ষ 
উৎপাটিত হইলে প্রক্কৃতিস্থ ব্যক্তি ফলের গ্রতাশ! করিতে পারে না। 

যদিও বেদোক্ত বজ্ঞাদির অনুষ্ঠানদ্ারা স্বর্সলাভ করা যায়, স্বর্গ 
কিনা ঢঃখবিরোধী স্থখবিশেষ, স্থৃতরাং তদ্বারা ছুঃখনিবৃত্তি হইতে পারে 
এবং অনেকজন্মপরম্পরার আয়ারদাধ্য বিবেকজ্ঞান অপেক্ষা বেদোক্ত 
যজ্ঞাদির অনুষ্ঠান অন্পকালসাধ্যও বটে, তথাপি বেদৌক্ত যজ্ঞাদির অনুষ্ঠান- 
দ্বারা ছুঃখের সমুচ্ছেদ হইলেও অত্ন্তপমুচ্ছেদ হয় না। তাহার কারণ 
এই যে, বেদোক্ত যঙ্্ান্ুষ্ঠানে পণ্ড ও বীজাদির হিংস্র করিতে হর। 
সাংখ্যাচার্ধাদিগের মতে বৈধহিংসাও পাপজনক। শাস্ারদিষ্ট হিং করিলেও, 
গাপ হইবে। তাহারা বিবেচনা করেন ঘে, “মা হিংস্তাৎ সর্ব ভূতীনি”- 
অর্থাং কোনও প্রাণীর হিংসা করিবে না_এই নিষেধবিধির তাৎপর্য্য 
এই যে, হিংসা করিলেই পুরুষের প্রত্যবায় বা পাপ জন্মে। “অগ্নিযোমীয়ং 
পশডমালভেত”__অর্থাৎ অগ্নিষোমীয় পশ্তর হিংস! করিবে_ইতযাদি বিধি- 
দ্বারা যজ্ঞসম্পাদনের নিমিত্ত পশুহিংসা বিহিত হইয়াছে। ইহার 
তাৎপধ্য এই যে, পণ্ড প্রভৃতির হিংসা ভিন্ন যজ্ঞ সম্পন্ন হয় না, এ 
হিংসাদ্ার যক্ঞসম্পাদন করিবে। কোনও প্রাণীর হিংসা করিবে না, 
ইহ সামাতশাল্) আর অগ্নিষোমীয় পশুর হিংসা করিবে, ইহা বিশেষ- 
শান্ত্র। শাস্্রীয়নিয়মাগদারে সচরাচর বিশেষশাস্ত্রের বিষয় পরিত্যাগ 
করিয়। তদতিরিক্রস্থলে গামান্তশাস্ত্রের বিষয় হইয়া থাকে । অর্থাৎ, 
বিশেষশান্ত্র সামান্তশান্ত্রের বাধক এবং নামান্তশান্ত্র বিশেষশাস্ত্র্ধারা . 

ই ১. 


১৭৮ সপ্তম লেক্চর। 


বাধিত হইয়া থাকে। কিন্তু প্রক্কতস্থলে এরূপ বাধ্যবাঁধকভাঁব হইতে 
পারে না। অর্থাৎ বিশেষশান্ত্র সামান্তশান্ত্রের বাধক বা সামান্তশান্ত 
বিশেষশাস্ত্রকর্তক বাধিত হইতে পারে না। কেন না, পরম্পর 
বিরোধ না হইলে বাধ্যবাধকভাব হয় না অর্থাৎ একে অন্যের বাধা 
জন্মাইতে পারে ন1। প্রকৃতস্থলে কিছুমাত্র বিরোধ নাই। কেন না, 
কোনও প্রাণীকে হিংসা! করিৰে না_এই নিষেধবিধি বুঝাইয় দিতেছে, 
প্রাণিহিংদা করিলে পুরুষকে প্রত্যবায়ভাগী হইতে হইবে। অগ্নি- 
যোমীয় পশুর হিংসা করিবে--এই বিধি বুঝাইয়া দিতেছে যে, অগ্নি- 
যোমীয় পশুর হিংস1 ষজ্জের উপকারক কিন! সম্পাদক। অগ্নিষোমীয় 
পশুর হিংসা! ভির যজ্ঞ হইতে পারে না, সুতরাং অগ্রিষোমীয় পশুর 
হিংসাঁদারা ষজ্ঞসম্পাদন করিবে। এই ছুইটি বিধির কিছুমাত্র বিরোধ 
হইতে পারে না। কেন না, জ্তীয়পশুহিংসা যজ্ঞের সম্পাদন এবং 
পুরুষের প্রত্যবায়, এই উভয়েরই নির্বাহ করিতে সমর্থ। সুতরাং 
এস্থলে বিধিদ্বয়ের বিরোধ বা বাধ্যবাধকভাব হইতে পারে না। শাস্ত্রে 
যদি এইরূপ উপদেশ থাকিত যে, অগ্নিষোমীয় পণুহিংস! প্রুষের 
পাপোত্পাদন করে না, তাহা হইলে বিরোধ এবং বাধ্যবাধকভাৰ 
হইতে পারিত। & যেহেতু, পাঁপের উৎপাদন করা এবং না করা পরম্পর 
বিরুদ্ধ, এ বিরুদ্ধ ধর্ম্ধয় এক পদার্থে থাকিতে পারে না। শাস্ত্রে কিন্ত 
তেমন উপদেশ নাই। 

এইরূপে সাংখ্যাচার্য্যের৷ প্রতিপন্ন করেন থে, বৈধহিংসাতেও পাপ 
হইবে। অতএব বৈদিক যজ্ঞের অনুষ্ঠানে যেমন প্রভৃত পুণ্যসঞ্চয় হয়, 
সেইরূপ এ যক্ঞানুষ্ঠান হিংসাদাধ্য বলিয়া প্রভৃত পুণ্যের সঙ্গে সঙ্গে 
যৎকিঞ্চিৎ পাপেরও সঞ্চয় হইয়! থাকে । অতএব বজ্তানুষ্ঠানকর্তী যখন 
স্বোপার্জিত পুণ্যরাশির ফলস্বরূপ স্বর্গস্খের উপভোগ করিবেন, 
তখন হিংসাজন্ত পাপাংশের ফলম্বরূপ যৎকিঞ্চিত দুঃখ তাঁহাকে উপভোগ 
করিতে হইবে। কিন্তু স্ব্গী পুরুষের! সখের মোহিনী শক্তির প্রভাবে এমন 
মুগ্ধ হন যে, এ ছুঃখকণিকাকে ছুঃখ বলিয়াই বিবেচনা করেন না, 
অনায়ামে তাহ! সম্থ করিতে সক্ষম হন। 
.... অপিচ, বেদোক্ত ম্বগ্ফগজনক কর্মগুপি একক্ধপ নহে। কর্মের 


সাংখ্যদর্শন। ১৭৯ 


তারতম্য অনুসারে কর্্মফলেরও অর্থাৎ স্বর্গেরও তারতম্য বা উৎকর্ষাপকর্ষ 
আছে। কারণের বৈজাত্য বা তারতম্য থাঁকিলে কার্যেরও বৈজাত্য বা 
তারতম্য অবশ্থন্তাবী। ্বর্গের উতৎকর্ষাপকর্ষ থাকিলে স্বর্গীদিগেরও কিঞ্চিং 
উৎকর্ষাপকর্ষ অপরিহা্ধ্য । যিনি অপেক্ষাকৃত অপরুষ্ট স্বর্গ ভোগ করেন, 
তিনি উতকষ্টন্বর্গভোগীর সবিশেষ ন্ুখস্বচ্ছন্দতা অবলোকন করিয়া মনে 
মনে কিঞ্চিৎ দুঃখান্ুভব করিবেন, তাহ! বিচিত্র নহে। প্রতিবেশীর 
নিরতিশয় জুখস্বচ্ছনূতা দেখিলে, তাহার তুল্য্রেণীস্থ যে ব্যক্তির তাদৃশ 
সুখন্বচ্ছন্দতা নাই, তাহার মন কিয়ৎপরিমাণে ক্ষুপ্ন হইবে, ইহা স্বাভাবিক। 
সৃতরাং স্বর্গিগণ এককালে ছুঃখপরিমুক্ত নহেন, অর্থাৎ স্বর্গীদিগেরও 
অত্যন্তছঃখনিবৃত্তি হইতে পারে না। 

আরও এক কথা। স্বর্গ বিনাশী, উহ চিরস্থায়ী নহে। স্বর্গ সুখবিশেষ- 
মাত্র। সখ যেমন উৎপন্ন, সেইরূপ বিনাশী। স্থথ নিত্য বা অবিনাণী 
হইতে পারে না। যাহা কারণবশতঃ উৎপন্ন হয়, কারণবিগমে বা অন্তরূপে 
তাহার বিনাশ হইবেই হইবে। পক্ষান্তরে, ছুঃখনিবৃত্তি বিবেকজ্ঞানরূপ- 
কারণসাধ্য হইলেও উহা! অভাবস্বরূপ, উহ! ভাবপদার্থ নহে। অভাব 
'উতৎপর হইলেও তাহার বিনাশ হয় না। মুদগরপাতনে ঘটের এবং পাটনে 
পটের বিনাশ হয় বটে, কিন্তু মুদগরপাত বা পাটনের* বিগমে তজ্জনিত 
ঘটপটবিনাঁশের বিনাশ হয় না। ঘটপটের বিনাশ বিনষ্ট হইলে বা ন! 
থাকিলে, ঘটপটের সত্তা এবং উপলব্ধি অবশ্তঠ থাকিবার কথা। তাহ! 
সব্বপ্রমাণবিরুদ্ধ, তাহা প্রক্কতিস্থ ব্যক্তির অন্ুমত হইতে পাঁরে না। ঘট- 
পটাদিরূপ সমুৎপন্ন তাঁবপদার্থের বিনাশ কিন্ত প্রত্যক্ষদিদ্ধ। দুঃখনিবৃত্তি 
বৈদিক যজ্জানুষ্ঠানের ফলরূপে কীর্ডিত হয় নাই। স্বর্নামক স্থখবিশেষই 
তাহার ফল বলিয়। নির্দিষ্ট হইয়াছে । সুখ অভাবরূপ নহে, উহা! ভাঁবরূপ। 
উৎপন্ন ভাবপদার্থের বিনাশ আছে, স্বৃতরাং ্বর্গেরও অবস্ত বিনাশ, 


৮০৩০৮ এপার 


আছে। তগবানু বলিয়াছেন__ 
তে তং ভুক্ত হ্বর্গলোকং বিশালং 
্‌ ক্ষীণে পুণ্য মত্ত্যলোকং বিশস্তি। 
তাহারা সেই বিশাল শ্বর্দলোক ভোগ করিয়া! পুণ্যক্ষয় হইলে মর্ত্যলোকে 
প্রবেশ করে । অতএব পিদ্ধ হইল যে, দুষ্ট বা লৌকিক উপাঁয় ওষধা্ি 


১৮০ সপ্তম লেক্চর। 


এবং অদুষ্ট বা বৈদিক উপায় যজ্ঞানুষ্ঠানাদি, ইহাঁর কোন উপার়েই ছুঃখের 
অত্তান্তনিবৃত্তি হইতে পারে না। সুতরাং বেদৌক্ত একমাত্র বিবেকজ্ঞান- 
রূপ উপায় অবলম্বন করিলেই দুঃখের অত্যন্তনিবৃন্তি হইতে পারে। 
দয়ালু মহূর্ষি কপিল দাংখ্যদর্শনে সেই বিবেকজ্ঞানের উপদেশ করিয়াছেন। 
বিবেকজ্ঞান যে অজ্ঞাননিবৃত্তি দ্বারা মুক্তির সাধন, তাহা কেবল 
শান্তপিদ্ধ নহে, যুক্তিনিদ্ধও বটে। প্রস্তাবাস্তরে । ইহ! প্রদর্শিত 
হইয়াছে। 

সাংখ্যমতে প্রমাণ তিনটি-_ প্রত্যক্ষ, অনুমান ও আপ্রবাক্য বা শব্দ। 
এই প্রমাণত্রয়ও প্রস্তাবান্তরে ব্যাখ্যাত হইয়াছে। প্রমাণসন্বন্ধে প্রণানীগত 
যে বৈলক্ষণ্য আছে, তাহ! দেখান যাইতেছে । বাচস্পতিমিশ্র বলেন যে, 
প্রথমতঃ বিষয়ের সহিত ইন্দ্রিয়ের সংযোগ হয়। এই সংঘোগের নাম 
বৃন্তি। ইন্দ্রিয়ের উক্তরূপ বৃত্তি হইলেই ত্রিগুণাত্মিক! বুদ্ধির তমোগুণ 
অভিভূত হইয়া সত্বগুণের সমুদ্রেক হয়, অর্থাৎ সত্বগুণের সমুদ্তব হয় বা 
সত্তৃগুণ প্রধান বা প্রবল হইয়া উঠে। এই সত্বসমুদ্রেকের নাম অধ্যবসায়, 
বৃত্তি ও জ্ঞান। বুদ্ধির বৃত্তিরূপ জ্ঞানই হইল প্রমাণ। এই জ্ঞানছ্ারা 
চেতনাশক্তির বা চেতনের যে অনুগ্রহ, তাহাই প্রমাণফল বা প্রমা। 
ইহারই অপর নাম বোধ। প্ররুতি অচেতন, তৎসমুদ্ূত বুদ্ধিসত্বও 
অচেতন। সুতরাং বুদ্ধির অধ্যবসায় বা'বৃত্তিও অচেতন । অচেতন বলিয়া 
বুদ্ধিবৃত্তি নিজে বিষয় প্রকাশ করিতে সক্ষম হয় না। পুরুষ চেতন ও 
অপাঁরণামী। অপরিণামী পুরুষের জ্ঞান বা বৃত্তিরূপ পরিণাম হইতে পারে 
না। কেন না, যাহার পরিণাম হয়, তাহাকে অপরিণামী বলা যায় না। 
বিষয় বুদ্ধিতাত্য, বুদ্ধি পরিণামিনী, পরিণাম সর্বদা হয় না, কখন-কখন, 
হইয়া থাকে ; এইজন্য সর্বদা বিষয়ের ভান হয় না। বুদ্ধিবৃত্তি জড় বলিয়া 
স্বপ্রকাশ নহে, উহা! পুরুষভাব্য, বুদ্ধিবৃত্তি অনবগত বা1 অজ্ঞাত অবস্থায় 
থাকে না, এইজন্য পুরুষ অপরিণামী। পুরুষ পরিণামী হইলে সর্ধদা বুদ্ধি- 
বৃন্তির ভান ব' প্রকাশ হইতে পারিত না। কেন না, পুরুষ পরিণামী হইলে 
বুদ্ধির পরিণামের ন্তাত্ব পুরুষের পরিণামও কাদাচিৎক হইবে। তাহা 
হইলে পুরুষের পরিণাম না হওয়া! অবস্থায় বুদ্ধিবৃত্তি কখন অজ্ঞাতও 
থাকিতে পারে। পুরুষ অপরিণামী বলিয়াই বুদ্ধিবৃত্তি অজ্ঞাত থাকিতে 


সাংখ্যদর্শন | | ১৮১ 


পারে ন1। বুদ্ধিবৃত্তি বিষয়াকার, স্থতরাং বুদ্ধবৃত্ির প্রকাশ হইলেই সন্ধে 


সঙ্গে বিষয়ের প্রকাশ হয়। এইজন্য আযম! সর্ধব্যাগী হইলেও সর্বদ! ৮৫ 
সর্ধবিষম্ন প্রকাশ গায় না। কেন না, বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্যেই বিষয়্ের€ 


প্রকাশ হয়। বিষয়াকার-বুদ্ধিবৃত্তির গ্রকাশেই বিষয়ের প্রকাশ । 
বুদ্ধিসত্বে পুরুষ প্রতিবিদ্বিত হন। আবরক তমোগুণ অভিভূত হইলে 
সত্বগুণের উদ্ভব হয়। সত্ব স্বচ্ছ, তাহাতে পুরুষের প্রতিবিষ্ব পড়ে। মলিন 
আদর্শ উজ্জল আলোকের নিকটবর্তী হইলেও উজ্জ্রপিত হয় না। কিন্ত 
নির্মল আদর্শ উজ্জল বস্তর সন্ধানে উজ্জ্বলতা ধারণ করে । সেইরপ 
চিচ্ছক্তির মন্নিধান থাকলেও তষোভিভূত চিন্তে চিচ্ছায়া বা প্রকাশরূপত। 
হয় না। সন্বসমুদ্রেক হইলে চিচ্ছক্তির সারিধাযবশতঃ চিন্তও উজ্জবলিত বাঁ 
প্রকাশরূপত। প্রাপ্ত হয়। এতদ্বারা চিপ্রতিবিষ্বের বিষয় কিষপরিমাণে 
বুঝা যাইতে পারে। বৃদ্ধিতে চিতিশক্তির প্রতিবিম্ব পড়িলেই, জ্ঞানাদি 
বৃততিগুনি বন্তগতা] ুদ্ধিতত্বের ধন্ম হইলেও, পুরুবের ধর্ম বিয়া পরতীরদান 
হয়। মণিন দর্পণে মুখৈর প্রতিবিষ্ব গড়িলে দর্গণের মালিন্ত যেমন মুখে 
পরিলক্ষিত হয়, সেইরূপ বুদ্ধিতত্বগত জ্ঞানাদি বৃত্তিও পুরুষগতরূপে 
প্রতিভাত হয়। ইহারই নাম চেতনাশক্তির অনুগ্রহ, ইহারই নাম 
গৌরুষেয় বোধ। পক্ষান্তরে, বুদ্ধিতত্ব ও তাহার অধ্যবসাম্ন অচেতন 
হইলেও উহাতে চেতন পুরুষ গ্রতিবিদ্বিত হন বলিয়া উহা চেতনের ন্যায় 
প্রতীয়মান হয়। এই অবস্থায় পুরুষ এবং বুদ্ধিসত্ব 'অভিন্ন বলিয়া বোধ 


হয়। এতদ্বারা বুঝা যাইতেছে যে, বাচস্পতিমিশ্রের মুতে বুদ্ধিবৃত্তিতে পুরুষ 


প্রতিধিষ্বিত হন, পুরুষে বুদ্ধিবৃত্তি গ্রতিবিদ্বিত হয় না। 'পাতগুলভাম্তকার 
বেদুব্যাসের মতও এরূপ,। কিন্তু দাংখ্যভাষ্মকার বিজ্ঞানভিক্ষুর_মতে বুদ্ধি- 
বৃত্তি ও পুরুষ এই উভয়েতেই উভয়ের প্রতিধিষ্ব অঙ্গীকৃত হইয়াছে। 
তাহার মতে পুরুষ যেমন বুদ্ধিবৃত্তিতে প্রতিবিদ্িত হন, বুদ্ধিবৃত্তিও সেই: 
রূপ পুরুষে প্রতিবিদ্বিত হয়। তিনি বলেন, বিষয়ের সহিত ইন্দ্িয়ের 
সন্নিকর্ষ হইলে বুদ্ধির বিষয়াকা'র পরিণাম বা [বৃতি হয়। সেই বিষয়াকার 
বুদধিবৃত্তি পুরুষে প্রতিবিস্বিত হইয়া! ভাসমান হয়। পুরুষ অপরিণামী, 


অথচ তীহার বুদ্ধির স্তায় বিষয়াকারতা ভিন্ন বিষয়গ্রহণ বা বিষয়ভোগ 
হইতে পারে না।: অতএব পুরুষে প্রতিবিষ্বরূপ বিষয়াকারতা৷ স্বীকার 


১৮২ সপ্তম লেক্চর। 


করিতে হইতেছে বিজ্ঞানভিক্ষু নিজমত-সমর্থনের জন্য নিয়লিখিত বাক্য 
প্রমাণরূপে উদ্ধৃত করিয়াছেন-_ 

তশ্মিংশ্চিদর্পণে স্কারে সমস্তা বস্তদৃষটযঃ। 

ইমাস্তাঃ প্রতিবিস্বন্তি সরসীব তটদ্রমাঃ ॥ 
তটস্থ বৃক্ষমকল যেমন সরোবরে প্রতিবিষ্বিত হয়, সেইরূপ বিস্তৃত সেই 
চৈতন্তস্বরূপ দর্পণে সমস্ত বস্তৃষ্টি অর্থাৎ বুদ্ধির বিষয়াকার বৃত্তিসকল 
প্রতিবিষ্বিত হয়। তিনি উপসংহারে বলেন যে 

প্রমাতা চেতন: শুদ্ধঃ প্রমাণং বৃত্তিরেব নঃ। 

প্রমাধ্থাকারবৃত্বীনাং চেতনে প্রতিবিস্বনম্‌ ॥ 
আমাদিগের অর্থাৎ সাংখ্যদিগের মতে বিশুদ্ধ তেতন অর্থাৎ পুরুষ, প্রমাতা 
অর্থাৎ প্রমাসাক্ষী । বিষয়াকার বুদ্ধিবৃত্তি প্রমাণ। বিষয়াকার বুদ্ধিবৃত্তি- 
সকলের চেতনে কিনা পুরুষে প্রতিবিষ্বন প্রমা । প্রত্যক্ষের নায় অনু- 
মানাদিস্থলেও সাংখামতে উক্তরূপ প্রমাণ প্রমেয়বাবহার বুঝিতে হইবে। 
বদ্ধিবৃত্তি ও চৈতত্তের পরম্পর প্রতিবিষ্ব হয় বলিয়াই প্রজ্বপিত লৌহপিণ্ডে 
অগ্রিব্যবহারের ন্যায় বুদ্ধবৃত্তিতে বোধব্যবহার হইয়া থাকে। বুদিবুত্তি 
ক্ষণতন্ুর, এইজন্য বোধও ক্ষণভঙ্কুর বলিয় বিবেচিত হয়। বিজ্ঞানভিক্ষ 
স্পর্ধার সহিত বলিয়াছেন যে, অন্পবুদ্ধি বাক্তিনকল বুদ্ধিবৃত্তি ও বোধের 
বিবেক অর্থাৎ পার্থক্য বুঝিতে সক্ষম নহে। তাকিকেরাও এ বিষয়ে ভ্রান্ত 
হইয়াছেন । বিজ্ঞানবাদী বৌদ্ধেরাও ভ্রান্ত হইয়াছে । সাংখ্যেরা বুদ্ধিবৃত্ি 
ও বোধের বিবেক বুঝিতে পারিয়াছেন বলিয়াই তাহাদের শ্রেষ্ঠতা। 
বিজ্ঞানভিক্ষুর মতে জ্ঞানাত্মক বুদ্ধিবৃত্তির স্তায় স্ুখছুঃখাত্মক বুদ্ধিবৃদ্ধিও 
পুরুষে প্রতিবিদ্বিত হয়। অর্থাৎ পুরুষে সাক্ষাৎসম্থন্ধে সুখছুঃখাদ্রি না 
থাকিলেও প্রতিবিহ্বরূপে সুখছুঃখাদির অস্তিত্ব আছে। 

সাংখ্যাচার্যের৷ বলেন, যে অতীন্দ্রিয় অর্থাৎ যাহ! প্রত্যক্ষগোচর হয় 

না, তাহ! অনুমানসিদ্ধ। যাহা অনুমানদ্বারাও সিদ্ধ হয় না, তাহা আপ্ত- 
বাক্য অন্থুদারে সিদ্ধ হইবে | প্রধানপুরুষাদ্দি প্রত্যক্ষের অগোচর হইলেও 
অনুমানসিদ্ধ । মহদাদিক্রমে সৃষ্িক্রম অনুমানসিদ্ধ না হইলেও আপ্তবাকা- 
পিদ্ধ অর্থাৎ শীল্তরপিদ্ধ। প্রত্যক্ষ হয় না বলিয়া যেমন ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ার্থ ও সপ্তম 
বসের অভাবনিশ্যয় হয়, সেইরূপ প্রধানপুরুষাদিরও অভাবনিশ্চয় 


সাংখ্যদর্শন। ১৮৩ 


হউক, এ আপত্তি মঙ্গত নরহ। যেহেতু অতিদূরত্ব, অতিনিকটত্ব, 
ন্রিয়ঘাত, মনের অনবস্থান বা অভিনিবেশীভাব, বিষয়ের সুক্মৃতা,+৯%, 
ব্যবধান, অভিভব, অনুষ্ভব এবং তুল্যবস্ন্তরের সংগ্লেষবশতঃ বিদ্যমান দু 
বস্তরও উপলব্ধি বা প্রত্যক্ষ হয় না। আকাশে উৎপতিত পতত্রী কিয়ৎক্ষণ পাল 
দৃষ্টিগোচর হইয়া যখন অতিদূর প্রদেশে গত হয়, তখন আর দৃষ্টিগোচর রর 
হয় না। কিন্তু দৃষ্টিগোচর না হইলেও তাঁহার অভাঁবনিশ্চয় করা যাইতে 80০ 
পারে না। লোচনস্থ অঞ্জন চক্ষুর অতি নিকট বলিয়া দৃষ্ট হয় না। (৪4 
ইন্দ্রিয়ঘাত অন্ধত্ব-বধিরত্বাদি । অন্ধ ব্যক্তি বিদ্যমান বস্তু দেখিতে পায় না, গে! 
বধির ব্যক্তি বিদ্যমান শব শুনিতে পায় না। অনবস্থিতচিত্ত অর্থাৎ যাহার ৪ 
মন বিষয়ান্তরে আস্ত, তথাবিধ ব্যক্তি উজ্জ্ল-আলোক-স্থিত ইন্রিরসনিৃষট4-%৫ 
বিষয়ও উপলব্ধি করিতে দক্ষম হয় না। পরমাণু প্রভৃতি হবগগাবস্ত 4 7, 
ইন্দিয়সন্নিকষ্ট হইলেও স্থক্ষ বলিয়া দৃষ্টিগোচর হয় না । . যবনিকার অন্ত- নর 
রালস্থ বস্ত ব্যবহিত বণিয়া দৃষ্ট হয় না। রাত্রিকালের স্তায় দিবাকাঁলে 
গ্রহনক্ষত্রমগ্ুল বিদ্যমান থাকিলেও হৃধ্যের প্রথরতেজে অভিভূত হয় 
বলিয়া দেখিতে পাওয়া যায় না। ছুগ্ধাদ্দি অবস্থায় দধ্যাদি এবং তিলে 

তৈল উদ্ভূত হয় নাই বলিয়া উপলব্ধ হয় না। ক্ষীরমিশ্রিত নীর, জলাশয়- 
পতিত বৃষ্টিজল তুল্যবন্ন্তরের সংশ্লেববশতঃ পৃথকৃরূপে দৃষ্ট হয় না।, ** 
উল্লিখিত উদাহরণ প্রপঞ্চ দ্বারা স্থির হইল যে, প্রত্যক্ষের প্রবৃত্তি না :* 
হইলেই বস্তর অভাবনিশ্যয় করা যাইতে পারে না। কেন না, উক্ত 
উদাহরণাবলীতে বস্তু বিগ্মান রহিয়াছে, অথচ প্রত্যক্ষের প্রবৃত্তি হইতে 
পারিতেছে না। অতএব দিদ্ধান্ত হইতেছে যে, যে বস্তু প্রত্যক্ষযোগ্য, 
তদ্দিষয়ে প্রত্যক্ষের প্রবৃত্তি না হইলে তাহার অভাবনিশ্যয় করা যাইতে 
পারে। ঘটপটাদি প্রত্যক্ষযোগ্য পদার্থ, অথচ গৃছে তাহার প্রত্যক্ষ না 
হইলে, গৃহে ঘটপটাদি' নাই--এইরূপ অভাবনিশ্চয় হইতে পারে। ইচ্ছা না 
থাকিলেও বাধ্য হইয় চার্বাকের ইহা স্বীকার করিতে হইবে। ইহ! 
দ্বীকার না করিলে, চার্ধাক যখন গৃহ হইতে বহির্গত হয়, তখন সে গৃহ- 

জন দেখিতে পায় না, সুতরাং তাহাদের অভাঁবনিশ্চয় করিয়। কপালে 
করাঘাতপূর্ববক উচ্চম্বরে রোদন করাই তাহার কর্তব্য হইতে পারে। 
তাহার কৌন আত্মীয়ের মৃত্যু হইলে দেও এরূপ করিয়া থাকে । অতএব 


১৮৪ সপ্তম লেক্চর। 


যাহা প্রত্রাঙ্ষযোগ্য, তাহার প্রত্যক্ষ না হইলে ভাঁহার “অভাঁবনিশ্চয় . 
হইতে পারে। কিন্ত যাহ! গ্রত্যক্ষযোগা নহে, প্রত্যক্ষ হয় না বলিয়া 
তাহার অভাবনিশ্চয় হইতে পারে না। প্রধানপুরুষাদি স্ক্ম বলিয়া 
প্রত্যক্ষের অযোগ্য, ম্ৃতরাং প্রত্যক্ষ হয় না বলিয়া! তাহাদের অভাব- 
নিশ্চয় কর! নিতান্তই অসঙ্গত। কেন না, অন্ত প্রমাণদ্বারা তাহাদের 
অস্তিত্ব প্রতিপন্ন হয়। প্রমাণসিদ্ধ বস্তৃতে গ্রত্যক্ষের প্রবৃত্তি না হইলে, 
তাহা প্রতাক্ষের অযোগ্য, ইহাই দিদ্ধান্ত করিতে হয়। কারণ, দৃঢ়তর 
প্রমাণদ্বার! বস্তুর অস্তিত্ব প্রতিপন্ন হইতেছে, অথচ তাহাতে প্রত্যক্ষের 
প্রবৃত্তি হইতেছে না। ম্ৃতরাং তাহা প্রত্যক্ষের যোগ্য নহে বলিয়াই 
্রতাক্ষ হইতেছে না, এতপ্িক্ন আর কি বলা যাইতে পারে। হষ্ঠ ইন্দিয়ার্থ 
,ও সপ্তম রদ কোনও প্রমাণদ্ারা প্রতিপন্ন হয় না। সুতরাং উহার৷ 
গ্রত্যক্ষের অধোগা, এরূপ কল্পনা করা যাইতে পারে না। অতএব 
প্রতাক্ষ হয় না বলিয়া ষষ্ট ইন্জিঘ্ার্থ ও সপ্তম রসের অভাবনিশ্যয় করা 
যাইতে পারে । ইন্্িযার্থ, অথচ ইন্দ্রিয়ের যোগ্য নহে, একপ কল্পনা 
ফরাও অসঙ্গত। পু 
সাংখ্যমজেঃগ্রমেয় বা পদার্থগুলি “তত্ব'নামে অভিহিত। তত্ব পঞ্চ- 
বিংশতিগ্রৎ 3) মূলগ্রকৃতি, মহত্ত্ব, অহঙ্কার, শব্দ তন্মাত্র, স্পশ্শতন্মাত্র, 
রূপতন্মাত্র, চন ও গন্ধতন্মাত্র--এই পঞ্চতন্মাত্রপঞ্চক, পঞ্চ কর্ধে- 
ভি, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয। ও মন--এই একাদশেক্্িয়। পঞ্চমহাভূত এবং 
পুরুষ। তন্মধ্যে প্রথম চতুর্রিংশতি তত্ব জড়বর্গ, পুরুষ চেতন। সাংখা- 
চার্য্েরা ধর্ম ও ধন্মীর অভেদ স্বীকার করেন, স্ৃতরাং গ্রকৃত্যাদির, ধর্ম ও 
প্রক্ত্যাদ্রিরূপেই পরিগৃহীত। এই তত্বগুলি চারি শ্রেণীতে বিভক্ত কর! 
হইয়াছে । কোঁন তত্ব কেবলই প্রকৃতি অর্থাৎ কাহারও বিকৃতি নহে। কোন 
কোন তত্ব প্রকৃতি-বিকৃতি রথ উভয়াত্বক। কোন কোন তত্ব কেবল 
বিকৃতি অর্থাৎ কোনও তত্বের প্রকৃতি নহে। কোন তত্ব অনুভয়াত্মক 
অর্থাৎ প্রকৃতিও নহে, বিকৃতিও নহে। প্রকৃতিশৰের অর্থ উপাদান- 
কারণ, বিক্কৃতিশবের অর্থ কার্ধয। মূলপ্রক্কৃতি অর্থাৎ যাহা হইতে জগতের 
উৎপত্তি হইস্াছে, যাহার অপর নাম প্রধান, তাহার কোন কারণ হইতে 
উৎপৃত্তি সন্তবে না। কেন না, মূলপ্রক্কতি কারণজন্ত হইলে মনেই কারণও 


সাংখ্যদর্শন। | ১৮৫ 
নিশি তি 
কারণাস্তরজন্য, সেই কারণান্তরও অপরকারণজন্য-_ইত্যা।দিরূপে অুনুবস্থা- 
দোষ হইয়া পড়ে। অতএব মূলকারণ উৎপন্ন বন্ত নহে, উহা স্বতঃপিদ্ধ__ 
ইহা অবস্ত স্বীকার করিতে হইবে। এতাবত! দিদ্ধ হইল যে, মূলপ্রক্কতি 
কেবলই প্রকৃতি, কাহারও বিকৃণ্ত নহে। মহত্ত্ব, অহঙ্কারতত্ব ও 
পঞ্চতন্মাত্র_-এই সাতটি তত্ব গ্রক্ৃতি-বিক্ৃতি বা উভয়রূপ। অর্থাৎ ইহারা 
কোন তত্বের প্রকৃতি এবং কোন তত্বের বিকৃতি। মহত্তত্ব মূলপ্রক্কৃতি 
হইতে উৎপন্ন হইয়াছে, সুতরাং উহা! মূলগ্রক্ৃতির বিকৃতি । এবং মহত্তত্ব 
হইতে অহঙ্কারতত্বের উৎপত্তি হইয়াছে, এইজন্ত মহত্ত্ব অহঙ্কারতত্বের 
প্রক্কৃতি। উক্তরূপে অহস্কারতত্ব মহত্তত্বের বিকৃতি এবং তাহা হইতে পঞ্চ- 
তন্মাত্র ও একাদশ ইন্দ্রিয়ের উৎপত্তি হইয়াছে বলিয়! অহস্কারতত্ব পঞ্চ- 
তন্মাত্র ও একাদশেক্দ্রিয়ের প্রকৃতি। পঞ্চতন্মাত্রও উক্তরূপে অহঙ্কার- 
তত্বের বিকৃতি, এবং তাহা হইতে পঞ্চমহাতৃতের উৎপত্তি হইয়াছে 
বলিয়া পঞ্চমহাভূতের প্ররৃতি। পঞ্চমহাভূত এবং একাদশ ইন্দ্রিয় 
কোনও তত্বাস্তরের উপাদান বা আরম্ভক হয় না। এজন্য উহার! প্রকৃতি 
নহে। উহারা পঞ্চন্মাত্র ও অহঙ্কার হইতে সমুৎপন্ন হইয়াছে বলিয়া 
বিকৃতি বটে। অতএব পঞ্চমহাভূত ও একাদশ ইন্দ্রিয়, ইহারা কেবলই 
বিকৃতি, কাহারও প্রকৃতি নহে। পুরুষ অন্ুভয়াত্মক অর্থাৎ প্রকৃতিও নহে, 
বিকৃতিও নহে। ম্মরণ করিতে হইবে, প্ররুতিশব্বের অর্থ কারণ, বিকৃতি- 
শব্দের অর্থ কার্ধ্য। পুরুষ কুটস্থ অর্থাৎ জন্তধর্ম্মের অনাশ্রয়, অবিকারী ও 
অপঙ্গ। এজন্য পুরুষ কারণ হইতে পারে না। পুরুষ নিত্য, তাহার 
উৎপত্তি নাই, স্থৃতরাং কার্যও হইতে পারে না। অতএব পুরুষ 
অনুতয়াত্ক ৷ 
পূর্ধ্বে বলা হইয়াছে যে, অতীব্রিয় পদার্থগুলি অন্তুমানসিদ্ধ । জগত্রূপ 
কার্য্যদ্বারা তাহার মূলকারণ অনুমেয়। কেন না, কারণ ভিন্ন কাঁধ্য হইতে 
পারে না। কিন্তু এ বিষয়ে বাদীদ্দিগের বিস্তর মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। 
বৌদ্বের৷ অসদ্বার্দী। তাহাদের মতে অভাব হইতে ভাবের উৎপত্তি হয়। 
তাহারা! বলেন, বীজ হইতে অস্কুরের উৎপত্তি হয় না। কিন্তু পারি 


উষ্ণতা ও জলাদির সংযোগে বীন্গ বিনষ্ট হইলে তবে অন্কুরের উৎপত্তি 
হইপ্লা থাকে । স্বৃতরাং ভাবরূপ বীন্ধ অস্কুরের কারণ নহে, বীজের 


৯৪ 


বা 


১৮৬ সপ্তম লেক্চর। 


প্রধ্বংসরূপ অভাবই অস্কুররূপ ভাবপদার্থের কারণ। এই দৃষটান্তঘারা 
সর্বত্রই অভাব ভাবোৎপত্তির কারণ, বৌদ্ধের! এতাদৃশ সিদ্ধান্তে উপনীত 
হন। সাংখ্যাচার্যোরা বলেন, এ সিদ্ধান্ত ভ্রমাআ্মক। বীজের প্রধ্বংসের 
পরে অস্কুরের উৎপত্তি হয় সত্য । কিন্তু বীজের নিরন্বয় বিনাশ হয় না।%৫ 
বীজ বিনষ্ট হয় বটে, কিন্তু বিনষ্ট বীজের অবয়ব বিনষ্ট হয় না। প্র 
তাঁবভূত বীজাবয়ব অন্কুরের উৎপাদক । বীজাভাঁব অস্কুরের উৎপাদক 
নহে। অতাব তাবোৎপন্তির কারণ হইলে, অভাব দর্ধস্থলে সুলভ 
বলিয়া সর্বস্থলে দর্বভাবের উত্পত্তি হইতে পারে । অতএব অভাব 
তাঁবোৎপত্তির কারণ নহে। ভাবপদার্থই ভাবপদার্থের উৎপত্তির 
কাঁরণ। বৌদ্ধদিগের অসদ্বাদের ন্যায় বৈদান্তিকদিগের বিবর্তবাদও 
সাংখ্যাচাধ্যদিগের আদৃত হয় নাই। বিকারবাদ বা পরিণামবাদেরই 
তাহার আদর করিয়াছেন। বিকার ও বিবর্তের লক্ষণ এইরূপ নিদিষ্ট 
হইয়াছে 
সতত্বতোহন্থা প্রথ। বিকার ইতুযুদীরিতঃ। 
অতত্বতোইন্তথ প্রথ। খিবর্ত ইত্যু্রা্ৃতঃ ॥ 

অর্থাৎ বস্তুর সহিত যে অন্তথা প্রথা কিনা অন্তরূপ জ্ঞান, তাহ! বিকার, 
আর বস্ত না থাকিয়াও যে অগ্তরূপ জ্ঞান হয়, তাহার নাম বিবর্ত। ইহার 
তাৎপর্ধ্য এই যে, পরিণামবাদীপিগের মতে কারণ বিকৃত বা অবস্থান্তর- 
প্রাপ্ত অর্থাৎ কার্ধযাকারে পরিণত হয়। সুতরাং কাধ্যরূপ বস্ত আছে। 
কাধ্যজ্ঞান নির্বস্তক নহ্ে। বিবর্তবাদীদিগের মতে, কারণ অবিকৃতই থাকে) 
অথচ তাহাতে বস্তরগত্যা কার্য না থাকিলেও কার্যের প্রতীতি হয় মীত্র। 
ছুগ্ধের দধিভাবাপত্তি প্রভৃতি পরিণামবাদের দৃষ্টান্ত এবং রজ্জুতে সর্পপ্রতীতি 
প্রভৃতি বিবর্তবাদের দৃষ্টান্ত। বৈদাস্তিকেরা বিবেচনা! করেন যে, যেমন 
সর্প না থাকিলেও রচ্জুতে সর্পের প্রীতি হইতেছে, সেইরূপ প্রপঞ্চ ব 
জগৎ না থাকিলেও বর্ষে প্রপঞ্চের প্রতীতি হইতেছে। রজ্জুপর্পের 
প্রতীতির কারণ যেমন ইন্দ্রিয়দৌষ, সেইরূপ. প্রপঞ্চ প্রতীতির কারণ 
অনাদি-অবিগ্যা-্ূপ দৌষ। রজ্জুতে প্রতীয্নমান সর্প যেমন রজ্জুর বিবর্ত, 
অঙ্গে প্রতীয়মান প্রপঞ্চও সেইরপ বরন্ধের বিবর্তমাত্র। প্রকৃতপক্ষে প্রপঞ্চ- 
নামে কোন বৃস্ত নাই। রঙ্জদর্পের স্তন প্রপঞ্চও প্রতীয়মান মান্র। 


সাংখ্যদর্শন। ১৮৭ 


মাংখ্যাচার্যোরা বলেন যে, রজ্জুতে র্পপ্রতীতি হইবার পর নৈপুণ্য- 
সহকারে গ্রণিধানপৃর্বক বিবেচনা করিলে, ইহা মর্প নহে, ইহা রজ্জ'_ 
এইবূপ বাজান উপস্থিত হয়। আ্ৃতরাং রজ্জুতে সর্পপ্রতীতি দে 
্মাত্বক, তাহী বেশ বুঝিতে পারা যায়। কিন্তু প্রপঞ্চনন্বন্ধে এন্ধপ 
বাধজ্ঞান কখনই হয় না। অতএব প্রপঞ্চপ্রতীতি ভ্রমাজ্বক, ইহা বল। 
যাইতে পারে না। এই যুক্তি অনুমারে দাংখ্যাচার্ষেরা। বিবর্তবানে 
অনাস্থা গ্রদণ্নপূব্বক পরিণামবাদের পক্ষপাতী হ্ইয়াছেন। মনোঘোগ 
করিলে বুঝা যাইবে যে, পরিণামবাণে কার্ধ্য কারণ হইতে ভিন্ন নহে, 
কারণের অবস্থান্তর মাত্র। ছুগ্ধ দধিরূপে, সুবর্ণ কুগুররূপে, মৃত্তিকা 
ঘটরূপে এবং তন্তু পটব্ূপে পরিণত হয়। অতএব দধি, কুণগুল, ঘট ও 
পট, যুথাক্রমে দুগ্ধ, স্বর্ণ, মৃত্তিকা ও তন্ধ হইতে বস্তৃগৃত্যা ভিন্ন_ইহ। [০ 
বলা যাইতে পারে না। কার্ধ্য যর্দি কারণ হইতে ভিন্ই না হইল, 
তাহা হইলে ইহাও বুঝিতে গার] যায় যে, উংপত্তির পূর্বেও কার্য 
হুক্মকূপে বিদ্যমান ছিল। কারকব্যাপার অর্থাৎ যে নকল উপায়ে 
কার্য্ের উৎপত্তি হয় বলিয়। সচরাচর বিবেচনা করা যায়, বাস্তবিক এ 
মকল উপায় ৰা কারকব্যাপার কার্ধেোযর উৎপাদক নহে। কেন না, 
তাহার পূর্ধেও ত কার্য হুক্মরূপে কারণে খিদ্মান ছিল। অতএব 
কারকব্যাপার কার্যের উৎপাদক নহে»মভিব্যগুক বা গ্রকাশক। 
অর্থাৎ পূর্বে হুক্ম ও অবা্তরূগে কার্য বিষ্কমান ছিল, কারকব্যাপার- 
দ্বারা তাহার স্থুলরূপে অভিব্যক্তি হয় মাত্র। এখন বেশ বুঝা যাইতেছে 
যে, মাংখ্য চার্যেরা পরিণামবাদ অবলম্বন করায় সংকার্বযবাদ অবলঘ্ষন 
করিতেও বাধ্য হইয়াছেন। বস্ততই তাহার! মংকার্ধাবাদী। এই 
সংকার্ধ্যবাদের প্রবল প্রতিপক্ষ নয়ায়িক ও বৈশেধষিক আচীর্যযগণ। 
তীহারা মং হইতে অনতের উৎপত্তি হয়, এই মতের পক্ষপাতী । সুতরাং 
“হার! আরন্তবাদী।: তাহাদের মতে জগতের মূলকারগ অর্থাং 
চতুর্ধিধ পরমাণু মত অর্থাৎ সর্বদ] বিগ্রমান। ছ্থাগুকহইতে মহাবয়বী টি 
পর্যন্ত কা্ধযগুলি সাক্ষাৎ বা পরষ্পরামত্বন্ধে পরমাগুসমারন্ধ অর্থাৎ “০% 
পরমাণু হইতে উৎগন্ন। সুতরাং কার্যকলাপ উৎপত্তির পূর্বে অদৎ 
অর্থাৎ ছিল না, উৎপত্তির পরে সং হইয়াছে। অতএব মৎ হইতে 


৯৮৮ সপ্তম লেক্চর। 


অসতের”উৎপত্তি, ইহ! সিদ্ধ হইল। আরস্তবাদীদিগের মতে কার্য 
কারণ হইতে মন্পূর্ণ ভিন্ন। কেন না, কার্য্যোৎপত্তির পূর্বেও কারণ 
সং অর্থাৎ বিদ্কমান, কার্য্য কিন্তু তৎকালে অসৎ অর্থাৎ অবিগ্কমান। 

উৎপত্তির পূর্বেও কাধ্য সৎ অর্থাৎ বিদ্যমান ছিল, ইহা প্রতিপন্ন 
হইলেই আরম্তবাদের মেরুদণ্ড ভগ্র হইয়া যায়। এই অভিপ্রায়ে 
সতকাঁধ্যবাদ সমর্থন করিবার জন্য সাংখাচাধ্যেরা বলেন যে, কারণ- 
ব্যাপারের পূর্বে যদি বস্ততই কার্ধ্য অসৎ অর্থাৎ অবিগ্যমান হইত, তবে 
কেহই কার্যের সত্ব অর্থাৎ বিদ্বমানত্ব সম্পাদন করিতে সমর্থ হইত না। 
সহস্র শিল্পী যত্ব করিয়াও নীলকে পীত বা গীতকে নীল করিতে পারে 
না। কারণ, নীল পীত নহে। তত্রূপ কার্য বস্তুতঃ অসৎ হইলে কোন- 
মতেই সৎ হইতে পারে না। আপত্তি হইতে পারে যে, যেমন ঘট 
পাকের পূর্বে শ্তামবর্ণ এবং পাকের পরে রক্তবর্ণ হয়, সেইরূপ কার্য্যও 
কারণব্যাপারের পূর্বে অসৎ এবং কারণব্যাপারের পরে সৎ হইবার 
বাধা নাই। অর্থাৎ কালভেদে শ্ঠামত্ব ও রক্তত্বের হ্যায় অসত্ব ও সত্ব 
ঘটের ধর্ম হইতে পারে। এতদুত্তরে বক্তব্য এই যে, তাহা হইলেই 
প্রকারান্তরে সৎকাধ্যধাদের অঙ্গীকার কর! হয়। কেন না, শ্ঠামাবস্থা 
ও বক্তাবস্থা_-এই উভয়কালে ঘট সৎ অর্থাৎ বিদ্যমান বলিয়। কালভেদে 
ঘটের শ্ঠামত্ব ও রক্তত্বরূপ ধর্মভেদ হইতে পারে। প্রকৃতস্থলে কাল- 
ভেদে অসত্ব ও সত্ব ঘটের ধর্ম অর্থাৎ উৎপত্তির পূর্বকালে ঘটের অসত্ব 
এবং উৎপত্তির পরে তাহার সত্ব--ইহা স্বীকার করিলেই উভয়কালে 
অর্থাৎ উৎপত্তির পূর্বকালে ও পরকালে ঘটের সত্ব! অর্থাৎ বিদ্তমানতাও 
অবগত ত্বীকার করিতে হইবে । কারণ, ধন্ম্শর আশ্রয়েই ধর্মের অব- 
স্থিতি। কারণব্যাপারের পূর্বে ধর্দিরূপ ঘট নাই, অথচ তাহার ধর্ম 
অপত্ব থাকিবে, ইহা! একান্ত অসম্ভব ও হান্তাম্পদ্দ। 

কারণব্যাপারের পূর্বেও যদি কার্ধয সৎ অর্থাৎ বিদ্যমান থাকে, তবে 
কারণব্যাপার কর্থ_এ আপত্তিও অনঙ্গত। কেন না, সৎ অর্থাৎ 
বিদ্যমান, কার্যযই কারণব্যাপারদ্বারা অভিব্যক্ত হয় অর্থাৎ কার্য্য কারণ- 
ব্যাপারের পূর্বেও সৎ, সনোহ নাই, কিন্তু কারণব্যাপারের পূর্বে 
ত্বাহা অনভিব্যক্ত থাকে, কারণব্যাপারদ্বারা তাহার অভিব্যক্তি হয়। 


সাংখ্যদর্শন। ১৮৯ 


স্থতরাঁং কারণব্যাপার নিরর্থক নহে। নিগীড়নদ্বারা তিলে তৈলের, 
অবঘাতদ্বার ধান্তে ততুলের, এবং দোহনদ্বারা গবাদিতে হু্ধের অভিব্যক্তি 
হয়--ইহা কেহই অস্বীকার করিতে পারেন না। তিলে তৈলের, ধান্তে 
তুলের এবং গবাদিতে হুগ্ধের বিছ্বমানতা সর্ববাদিপিদ্ধ। স্থতরাং কারণ- 
ব্যাপারদ্বারা মতের অভিব্যক্তি মকলকেই স্বীকার করিতে হইতেছে । 

সতের অভিব্যক্তির দৃষ্টান্ত প্রদর্শিত হইল। কিন্তু অনতের উৎপত্তির 
একটিও দৃষ্টান্ত নাই। যাহা বন্তরগত্যা অদৎ, কোনকালে তাহার 
উৎপত্তি হয় না__হইতে পারে না। মনুষ্যশূঙ্গ, কৃুর্মরোম ও গগন- 
কমলিনী বস্তগত্যা সং নহে, এইজন্য তাহাদ্দের উৎপত্তি কেহ কোন- 
কালে দেখেন নাই, শুনেন নাই। অতএব সিদ্ধ হইল যে, সৎ অর্থাৎ 
বিদ্ধমান কার্যেরই কারণব্যাপারদ্বারা অভিব্যক্তি হয়, অনতের উৎপত্তি 
হয় না। আর এক কথা। যেকারণের সহিত যে কার্য্যের সম্বন্ধ আছে, 
সেই কারণ হইতে সেই কার্ষ্যের আবির্ভাব বা উৎপত্তি হয়) যে 
কারণের সহিত যে কাধ্যের সন্বন্ধ নাই, সেই কারণ হইতে সেই কার্য্যের 
আবির্ভাব বা উৎপত্তি হয় না; ইহা অবস্ত শ্বীকার করিতে হইবে। 
তন্তর সহিত পটের এবং মৃত্তিকার সহিত ঘটের কোনরূপ সম্বন্ধ আছে 
বলিয়া তন্ত হইতে পটের এবং মৃত্তিকা হইতে ঘটের আবির্ভাব বা উৎ- 
পত্তি হইয়া থাকে । তস্তর সহিত ঘটের ব৷ মৃত্তিকার সহিত পটের 
কোনরূপ মশ্বন্ধ নাই বলিয়া তন্ত হইতে ঘটের বা মৃত্তিকা হইতে 
পটের আবির্ভাব বা উৎপত্তি হয় না। 

গবাদি-শরীরের বা তছুপাদানের সহিত শূঙ্গের এবং মন্ুষ্যাদি- 
শরীরের বা তদৃপাদানের সহিত রোমের সন্বন্ধ আছে বলিয়া গবাদির শৃঙ্গ 
এবং মনুষ্যাদ্ির রোম হইয়। থাকে। মনুষ্বশরীরের বা তছুপাদানের 
সহিত শৃঙ্গের, এবং কৃত্মশরীরের বা তছুপাদ্দানের সহিত রোমের 
কোনরূপ সম্বন্ধ নাই বলিয়া মনুষ্ের শূঙ্গ এবং কৃর্মের রোম হয় 
না। উৎপত্তির পূর্বে ঘটাদি-কাধ্যের মৃত্তিকাদি-কারণের সহিত সম্বন্ধ না 
থাকিলে অপরাপর কাঁ্ধ্য যেমন উৎপত্তির পূর্বে মৃত্তিকার সহিত সম্বন্ধ- 
শৃন্ট, ঘটও সেইরূপ উৎপত্তির পূর্বে মৃত্তিকার সহিত সন্বন্বশৃন্য । তাহা! 
হইলে মৃত্তিকা হইতে ঘটেরই উৎপত্তি হয়, পটাদি অপরাপর কার্যের 


১৯০ সপ্গুম লেক্চর। 


উৎপত্তি হয় না_-এরূপ নিয়ম হইবার কোনও কারণ নাই। সম্বন্ধশূন্ত তার 
ইতরবিশেষ না থাকায় সমস্ত কার্ধ্য সমস্ত কারণ হইতে সমুৎপন্ন হইতে 
পারে। এই অব্যবস্থা অর্থাৎ অনিয়মের নিবারণের জন্য অবশ্ঠই স্বীকার 
করিতে হইবে বে, উৎপত্তির পূর্বেও কারণবিশেষের মহিত কাধ্ধযবিশেষের 
সম্বন্ধ থাকে। তাহা হইলেই সৎকার্ধ্যবাদ দিদ্ধ হইল। কেন না, 
একাধিক বিদ্যমান বস্তরই পরস্পর সম্বন্ধ হইতে পারে। একটি 
বিদ্কমান, অপরটি অবিদ্ধমান-:এ উভয়ের পরস্পর সম্বন্ধ কোনক্রমেই 
হইতে পারে না। 

যদি বলা হয় যে, কারণগত এমন অনাধারণ শক্তি আছে,-যাহার 
প্রভাবে কারণবিশেষ কার্ধযবিশেষের উৎপাদন করে, সমস্ত কার্যের 
উৎপাদন করে না। তাহা হইলেও জিজ্ঞান্ত হইতে পারে যে, এ 
অনাধারণ শক্তির সহিত কাধ্যবিশেষের কোনরূপ সম্বন্ধ আছে কি না? 
যদি সন্বন্ধ থাকে, তবে অনতের সহিত সম্বন্ধ থাকিতে পারে না বলিয়া 
সতকার্ধ্যবাদ সিদ্ধ হয়। পক্ষীন্তরে, সঞ্ন্ধ না থাকিলে কারণের ন্যায় 
কারণগতশক্তিও কার্ধাবিশেষের নিয়ামক হইতে পারে না। সুঙরাঁং 
“অব্যবস্থা'দোষ উপস্থিত হয়। ফলত: কারণগতশক্তি কাধ্যের অব্যক্তাবস্থা 
মাত্র। অন্তরূপ শক্তিবিষয়ে কোনও প্রমাণ নাই। আরও বিবেচনা করা 
উচিত যে, কার্ধ্য কাঁরণ হইতে ভিন্ন নহে। উহা কারণাআ্মক। কারণ 
সৎ, এ বিষয়ে মতভেদ হইতে পারে না। সুতরাং কারণ হইতে অভিন্ন 
এবং কারণাত্মক কার্ধ্যও সং--ইহাতেও মতান্তর হইবার কোন কারণ 
নাই। কাধ্য কারণের অবস্থাবিশেষ মাত্র । ঘট মৃত্তিকার, পট তন্ত্র, 
কুগুল সুবর্ণের অবস্থাবিশেষ_ইহাতে সন্দেহই হইতে পারে না। যে 
সকল বস্ত পরম্পর হিন্ন, তন্মধ্যে একটি বস্তু অপরের ধর্ম অর্থাং 
অবস্থাবিশেষ হয় না। গো-পণু ও অশ্ব-পশ্ড পরস্পর ভিন্ন, এইজন্য 
তাঁহাদের একটি অপরের ধর্ম হয় না। পট কিন্তু তন্তর ধর্ম, সুতরাং পট 
তন্ত হইতে ভিন্ন নহে । ভিন্ন হইলে তত্র ধর্ম হইত ন1। তত্ত উপাদান, 
পট উপাদেয় । যে বস্তর নির্মাণের জন্ত লোকে যে বস্তর সংগ্রহ করে অর্থাৎ 
যে বস্তদ্ধার। অভিলধিত বস্ত নির্দিত হয়, তাহার নাম উপাদান; যে বস্ত 
নির্মিত হয়, তাহার নাম উপাদেয় । যে সকল বস্ত পরস্পর ভিন্ন ভিন্ন, 


স।ংখ্যদর্শন। ১৯১ 


তাহাদের উপদান-উপাদের-ভাব হয় না। ঘট ও পট পরস্পর ভিন্ন, এই- 
জন্য তাহাদের উপাদান-উপাদেয়-ভাব নাই। তন্ত ও পটের উপাদান- 
উপাদেয়-তাব আছে, অতএব তত্ত ও পট পরস্পর ভিন্ন নহে। 255 
যে মকল বস্তু বাস্তবিক পরম্পর ভিন্ন, তাহাদের হয় পরম্পর সংযোগ, 
নাহয় পরস্পর অপ্রাপ্তি | অনন্বন্ধ থাকে। কুণ্ড ও বদর পরস্পর ভিন্ন, 
কিন্ত তাহাদের কখনও পরম্পর সংযোগ কখনও বা পরম্পর অগ্রাপ্তি 
দেখিতে পাওয়া যায়। হিমাঁচল ও বিন্ধাচল পরস্পর ভিন্ন, তাহাদের 
সর্বদাই পরস্পর অপ্রার্থি আছে। তন্তু ও পটের পরম্পর ঘংযোগ বা 
অগ্রাপ্তি নাই। কেন না, বৈশেষিক ও নৈয়ারিক আচাধ্যদিগের মতে তস্ত 
ও পের স্্ধ স্মবায়। স্ৃতবাং তন্্ ও পট পরম্পর ভিন্ন নহে। পিচ, 
গুরুত্ব একপ্রকার গুণ, তাহার কাধ্য অবনতি । অর্থাৎ ওজন করিবার 
সময় গুরুবস্ত অবনত হইয়া পড়ে। ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর গুরুত্ব ভিন্ন ভিন্ন, 
তাহার কার্ধ্য অবনতিও ভিন্ন ঠিন্ন। একপল স্ুররদ্ার৷ যে অলঙ্কার 
নির্মিত হইয়াছে এবং দ্বিপল স্থৃবর্ণদ্বারা যে অলঙ্কার নির্মিত হইয়াছে, 
এ উভয় অলঙ্কার পরস্পর ভিন্ন, তাহাদের গুরুত্ব এবং গুরুত্বের কার্য 
অবনতিও ভিন্ন ভিন্ন। একপলিক অলঙ্কারের গুরুত্বকার্ধ্য অবনতি 
অপেক্ষা দ্বিপলিক অলঙ্কারের গুরুত্বকার্ধ্য অবনতি অধিক--ইহা! প্রত্যক্ষ- 
সিদ্ধ। কিন্তু একপল স্বর্ণের যেরূপ গুরুত্বকার্ধ্য অর্থাৎ অবনতি, এক- 
পলিক অলঙ্কারের গুরুত্বকার্ধাও সেইরূপ । যে তত্তসমন্টিদ্বারা পট 
নির্মিত হয়, এ তন্তদমষ্টি ও পটের গুরুত্বকার্ধ্য একরূপ। অতএব কারণ 
ও কার্য পরম্পর ভিন্ন নহে। ভিন্ন হইলে স্ুুবর্ণের গুরুত্ব অপেক্ষা অল- 
স্কারের গুরুত্বের এবং তন্তর গুরুত্ব অপেক্ষা! পটের গুরুত্বের কার্ষা অর্থাৎ 
অবনতিও ভিন্ন ভিন্ন হইত। কেননা, কারণের .গুরুত্ব ত আছেই, কার্ধ্য 
কারণ হইতে ভিন্ন হইলে কার্য্যের গুরুত্ব কারণের গুরুত্ব অপেক্ষা অবশ্য 
ভিন্ন হইবে। সুতরাং গুরুত্বকার্য্য অবনতিও ভিন্ন হওয়াই সঙ্গত। মণ্ড- 
লেপনদ্বারা যে পটের গুরুত্ব কিঞ্চিৎ অধিক হয়, তাহার কথ! বলা 
হইতেছে না। কেন না, পট নির্মিত হইলে মণ্ডলেপন করা হইয়া থাকে। 
এই মণ্ডলেপন যেমন পটে করা হয়, তেমনি হৃত্রে করা হয়, ইহাও বলা 
যাইতে পারে। কিন্তু মগ্ডলেপনের পূর্বে ওজন করিলে পটের এবং 


& 


১৯২ সপ্তম লেক্চর। 


তদুপাদান তত্তসমষ্ির গুরুত্বকার্য্যর কিছুমাত্র বৈলক্ষণা হয় না। কার্ধা ও 
কারণ পরষ্পর ভিন্ন হইলে কিন্তু এরগ হইতে পারে না। 
প্রত্যেক বাহক ধেমন শিবিকাবহন করিতে পারে না, অথচ তাহারাই 
মিলিত হইয়। শিবিকাবহন করিতে পারে, মেইবপ প্রত্যেক তত্ত 
গ্রাবরণ করিতে ন! গারিলেও তন্বকল মিপিত হইয়া গটভাবাপর 
হইলে প্রাবরণ করিতে সক্ষম হয়। বিশেষভাবে পরম্পর মিলিত তন্ত- 
মমি পট। অতএব দিদ্ধ হইলে যে, কার্ধা কারণ হইতে ভিন্ন নহে। 
কারণ সং, সুতরাং কার্যযও দং। তাস্মকার মংকার্য্যবাদের একটি 
সুন্দর দৃষ্টান্ত দিয়াছেন। একখানি শিলাফলকদ্বারা অখণ্ড গ্রতিমা 
নির্মিত হইয়। থাকে। শিল্পী শিলাফলকে গ্রতিমার আকার অঙ্কিত 
করিয়া লয়। পরে শিলাফলকের অনপেক্ষিত অংশ বিচ্ছিন্ন করিয়া 
লইলেই প্রতিম! নির্শিত হয়। এখানে প্রতিমার জন্ত শিল্পীকে নৃতন 
কিছুই করিতে হয় নাই। অনপেক্ষিত 'মংশ পরিত্যক্ত হইয়াছে মাত্র। 
অতএব অবশ্ত বলিতে হইবে যে, শিলাফলকে প্রতিমা ছিল। অনপেক্ষিত 
ধশ সংযুক্ত থাকায় তাহা! লক্ষা করিতে পারা যায় নাই বাঁ অভিথাক্ত 
ছিল না। শিল্পীর ব্যাপারদ্বারা এ অনপেক্ষিতাংশ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পূর্বমিদ্ধ 
প্রতিমার অভিব্যক্তি হইয়াছে মাত্র। 


অষ্টম লেক্চর। 


সাংখ্যদর্শন | 


কাধ্য কারণীত্বক, ইহা প্রতিপন্ন হইয়াছে । কার্য জগৎ স্বখদুঃখ- 
মোহাত্বক, সুতরাং তাহার কারণও স্ুখছুঃখমোহাত্মক হইবে, ইহা 
অনায়াষে বুঝিতে পারা যায়। জগতের সমস্ত বস্তুই সুখ, ছুংখ ও মোহ 
বা খিষাদের হেতু হয় বলিঘা উহা .স্থছুঃখমোহাত্মকরূপে নিশ্চিত 
হয়। “অমুক ব্যপ্তি মরিয়াছে”_এই শব শ্রুত হইলে, মুত ব্যক্তির শক্রর 
স্থখ, মিত্রের ছুঃখ এবং পিত্রাদির মোহ উপস্থিত হয়। "এ শব্দই সুখ 
ছুঃখ-য়োহ উৎপাদন করে, এইজন্য উহ1 স্্খছুঃখমোহাআ্বক। রূপ- 
ঘৌবনকুলশীলসম্পন্না একটি স্ত্রী স্বামীকে সুখী, মপত্বীকে ছুঃখিনী, 
তাহার লাভে বঞ্চিত পুরুষান্তরকে মোহ বা ব্যাদযুক্ত করে। তাহার 
কারণ এই যে, স্বামীর প্রতি তাহার স্থখরূপ সমুডূত, ছুংখাদিরূপ অভি- 
ভূত। মপত্রীর প্রতি ছুঃখরূপ সমুডূত, সুখাদিরূপ অভিভূত। যে 
পুরুষান্তর তাহার লাভে বঞ্চিত, তাহার প্রতি তাহার মোহরূপ সমুদ্ভূত, 
সুখাদিরূপ অভিভূত। ,বাচম্পতিমিশ্র বলেন_-“অনয়া চ স্ত্িয়া সর্বে 
ভাবা ব্যাখ্যাতাঃ৮-_অর্থাৎ এই স্ত্রীর সৃখছুঃখমোহাত্মকত্ের গ্তায় সমস্ত 
পদার্থের স্ুথছুংখমোহাত্মকত্ব বুঝিতে হইবে। স্থির হইল যে, জগতের 
ন্যায় জগতের মূলকারণও স্থখছুঃখমোহাত্মবক। অতএব পিদ্ধ হইতেছে 
যে, সত্ব, রজঃ ও তমঃ, এই গুণত্রর জগতের মুলকারণ। মুলপ্রক্কৃতি, 
প্রধান ও অব্যক্ত প্রভৃত তাহারই নামান্তর । সন্বপুণ স্খাত্বক, লঘু ও 
প্রকাশক । রজোগুণ দুঃখাত্বক, চঞ্চল ও চালক বা প্রবর্তক । তমোগুণ 
মোহা্মক বা বিষাদাআবক, গুরু, আবরক ও নিয়ামক। 

যেমন বস্তি ও তৈল প্রত্যেকে অনলবিরোধী হইলেও উভয়ে মিলিত 
হইয়া অনলের সহিত রূপপ্রকাঁশরূপ কাধ্য সম্পাদন করে, এবং বাত, 

২৫ 


১৯৪ .. অফীম লেক্চর। 


পিত্ত ও শ্রেম্স। পরস্পর বিরুদ্ধস্বভাব হইলেও মিলিত হইয়া শরীরধারণ- 
রূপ কার্য নির্বাহ করে, সেইরূপ গুণত্রয় পরস্পর বিরুদ্ধস্বভাৰ হইলেও 
মিলিত হইয়! স্বকাধ্যসম্পাদনে সধর্থ হয়। সত্বাদির পরম্পর সংযোগ 
ও লঘুত্বাদি গুণ আছে বলিয়া উহার দ্রব্য। সত্বাদি গুপত্রয় পুরুষের 
উপকরণ বা পুরুষরূপ পপর বন্ধনের হেতু বলিয়া গুণশব্ষে অভিহিত 
হয়। সত্বাদি গুণত্ররের ছিবিধ পরিণাম শাস্ত্রে নি্দি হইয়াছে__ দশ, 
পরিণাম ওসবিসতৃশ, পরিণাম । প্রলয়কালে » সদৃশ পরিণাম অর্থাৎ সত্ব 
সত্বরূপে, রজঃ রঙ্জোরূপে ও তমঃ তমোরূগে পরিণত হয়। কেন না, 
পরিণাম সত্বাদির স্বভাব। গুণত্রয় কোনরূপ পরিণাম ভিন্ন ক্ষণকালও 
থাকিতে পারে না। স্থ্টিকালে বিসদৃশ পরিণাম হইয়! থাকে, অর্থাৎ গুণ- 
্রয়ের বিসদৃশ পরিণাম হইলেই স্থষ্টি হয়। হ্ষ্টিকালে প্রলয়কালের স্থায় 
'অমানরূপে গুণত্রয়ের পরিণাম হয় না, বিষমরূপে হইয়া থাকে । জগতে 


* পপ আপ পপ গা 


এ 


অপ্রাধান্ত হয়। যেমন জল একরস রর দেই সেই ভূমিবিক'রের 
সংযোগে নারিকেল-জন্বীর-চিরবি্বাদি-ফলরম-রূপে পরিণত হইয়া মধুর, 
অন্ন ও তিজ্তাদিরূপে অগ্ুভূয়মান হয়, সেইরূপ কাধ্যবিশেষে গুণবিশেষের 
উদ্ভব এবং গুণান্তরের অভিভব হওয়াতে অপ্রধান গুণ প্রধান গুণের 
আশ্রয়ে বিচিত্র পরিণামের কারণ হইয়! বিচিত্র কার্যের উৎপাদন করে । 
প্রকৃতি হইতে আরস্ত করিয়া চরমকার্ধ্য পধ্যন্ত সমস্ত জড়বর্গই 
হত বা মিলিতগুণত্রযন্বক্ূপ, সুতরাং স্থথছুঃখমোহাত্মক, অত- 
এব-পবার্থ, অর্থাৎ অপরের প্ররয্মোজনসম্পাদনার্থ তাহাদের উত্তব। 
গৃহ-শয্যা-আসনাদি পদার্থ মংঘাতরূপ অথচ পরার্থ, ইহা! প্রত্যক্ষসিদ্ধ। 
তদনুসারে সংঘাতমাতুই পরার্থ, ইহ! স্থির হইতেছে।, প্ররতি-মহদাদি 
সমন্তই সংঘাত, অতএব পরার্থ। সেই পর--পুরুষ বা আত্মা । এতাবতা 
পুরুষ সংঘাত্তাতিরিক্ক অর্থাৎ ত্রিগুণাত্বক নহে-_-গুণাতীত, ইহাও সিদ্ধ 
হইতেছে। কেন না, পুরুষ সংঘাঁতা ত্বক হইলে সেও পরার্থ হইবে, সেই পর 
সংঘাতাত্বক হইলে তাহাও পরার্থ হইবে, এইরূপে অনবস্থাদোষ উপস্থিত 
হয়। সুতরাং পুরুষ অসংহত, ইহা স্বীকার করিতে হইতেছে ।, 


সাংখ্যদর্শন। ০১৯৫ ? 


দ্বিতীয়ত, ভ্রিগুণাত্বক রখাদি সারধিপ্রভৃতি-চেতনকর্তৃক অধিঠিত। 
ৃদ্ধাদিও ত্রিগুণাত্বক, তাহাও অবশ্ত অন্তকর্তৃক অর্থাৎ চেতন- 
কর্তৃক অধিষ্ঠিত হইবে। সেই অন্যই পুরুষ বা আত্মা। তৃতীয়ত, স্থথ 
ও ছুঃখ যথাক্রমে অন্ুকূন-বেদনীয় এবং প্রতিকূল বেদনীয়। সুখের অনু 
কুলনীর এবং ছুঃখের প্রতিকৃ্নীয় গুণাতীত পুরুষ। বুদ্ধাদি নিজেই 
স্থথায়ক ও ছুংখাম্মক, এইজন্য স্থথের অনুকূলনীয় বা দুঃখের প্রতি- 
কৃপনীয় হইতে পারে না। কেন না, তাহা হইলে স্বক্রিয়াবিরোধ হইয়া 
পড়ে। চতুর্থতঃ, বুদ্ধাদি দৃশ্ঠ, অতএব তাহার দ্রষ্টারূপেও পুরষ সিদ্ধ 
হইতেছেন। কেন না, ভরষ্টা ভিন্ন দৃশ্ত হইতে পারে না। 

পুরুষ প্রতি শরীরে ভিন্ন ভিন্ন, নব্মশরীরে এক পুরুয় নহেন। সমস্ত 
শরীরে এক পুরুষ হইলে জন্মমরণাদির ব্যবস্থা হইতে পারে না। 'ভাহা 
হইলে একের জন্মে কলের জন্ম, একের মরণে সকলের মরণ, একের 
অন্ধতাদিতে সকলের অন্ধতাদি, একের প্রবুতিতে সকলের প্রবৃত্তি, এবং 
একের নুধছুঃখে সকলের স্থথছুঃখ হইতে পারে। তাহা হয় না বলিগ়্াই 
শরীরভেদে পুরুষও ভিন্ন ভিন্ন। এই পুরুষ পাক্ষী। কেন না, রতি 
নিজের সমস্ত আচরণ পুরুষকে দেখায় । বাদী ও প্রতিবাদী বিবাদবিষয় 
যাহাকে দেখায়, লোকে তাহাকে সাক্ষী বলে। প্রর্কতিও নিজের আচরণ 
পুরুষকে দেখায় বলিয়! পুরুষ সাক্ষী ও ্রষ্টা। পুরুষ ত্রিগুণাতীত, এইজন্য 
অকর্তা, উদাদীন ও কেবল অর্থাৎ কৈবল্যযুক্ত। ছুঃখত্রয়ের অত্যান্ত অভাব চর 
কৈবল্য। দুঃখ গুণধর, পুরুষ গুণাতীত। এইজন্ত পুরুষ কৈবলাযুক্ত। 
প্রধানমহদাঁদি ভোগ্য বলিয়া ভোক্তার অপেক্ষা করে। কেন না, তোক্ক। 
ভিন্ন ভোগ্যতা হইতেই পারে না । বুদ্ধাদিতে প্রতিবিদ্বিত পুরুষ বৃদধ্যাদি- 
গত দুঃখ নিজের _বনিয়া বিবেচনা করেন।_ বিবেকজ্ঞানিদ্ধার তাহার 
পরিহার হয়। বিবেকজ্ঞান বুদ্ধিবৃত্তিবিশেষ। এইহেতু বিবেকজ্ঞানের 
বন্য পুরুষও প্রকৃতির অপেক্ষা করেন। উভয়ের উভয়ের প্রতি অপেক্ষ! 
আছে বলিয়! প্রকৃতি ও পুরুষের পরস্পর গংযোগ হয়। এই সংযোগ- 
বশত; সৃষ্টি হইয়া থাকে। গতিশক্রিহীন ও দৃক্শক্তিসম্পর পঞ্ধু এবং 
দৃক্শক্তিহীন গতিশক্তিযুক্ত অন্ধ, এই উভয়ের পরম্পর অপেক্ষা হয় বলিয়া ৫ 
উভয়েই পরষ্পর মংযুক্ত হয়। দৃক্শক্তিসম্পর পঙ্গু গতিশক্তিলম্পন্ন অন্ধের 


১৯৬ অফ্টম লেক্চর। 


বন্ধে অণ্থরূঢ় হইয়া পথপ্রদর্শন করে, অন্ধ তদনুমারে গমন করে, এইরপে 
উভয়েরই অভিলধিতসিদ্ধি হয়। প্রক্ৃতিপুরুষের সংযোগও তদ্রপ। 
পুরুষ দৃক্শক্তিযুক্ত ও ক্রিয়াশক্তিশূন্ত বলিয় পন্ুস্থানীয়, প্রকৃতি ক্রিয়াশক্তি- 
যুক্ত ও দৃকৃশক্তিশৃন্ত বলিয়া অন্বস্থানীয়। এই সংযোগহেতুই প্রক্কৃতি- 
মহদাদ্দি অচেতন হইয়াও চেতনের ন্যায় এবং পুরুষ বন্তৃগত্যা অকর্তী 
হইয়াও গুণের কর্তৃত্বে কর্তার স্তায় প্রতীয়মান হন। 

সর্গ বা সথষ্টিছুইপ্রকার- প্রত্যয়সর্গ ও তন্মাত্রসর্গ। বুদ্ধিদর্গের নাম 
প্রত্যয়সর্গ। তৃত-ভৌতিক সর্গের নাম তন্াত্রসর্ণ। গ্রকৃতির প্রথম 
পরিণাম মহত্ত্ব বা বুদ্ধিতত্ব। তাহার অসাধারণ বৃত্তি বা ব্যাপার 
অধাবসায় বা নিশ্যয়। বুদ্ধির ধর্ম আটটি-ধর্ম, জ্ঞান, বৈরাগা, এব, 
অধর্, অজ্ঞান, অবৈরাগ্য ও অনৈশ্বধ্য । ইহাদের প্রথম চারিটি সাত্বিক 


এবং পরবন্তী চারিটি তামন। মহত্তত্বের কার্ধ্য অহঙ্কারতত্ব। অভিমান 


তাহার বৃত্তি। “আমি ইহাতে শক্ত, এই সকল বিষয় আমার প্রয়োজন- 
সম্পাদনের জন্য”, ইত্যাদিরূপ অভিমান অহস্কারের অসাধারণ বৃত্তি। 
অহঙ্কার তিনপ্রকার-বৈকারিক বা সাত্বিক, তৈজদ বা রাজস ও ভূতাদদি 
বা তামস। সাত্বিক একাদশ ইন্দ্রিয় সাত্বিক অহঙ্কার হইতে এবং তামন 
তন্মাত্রপঞ্চক তামন অহঙ্কার হইতে উৎপন্ন । রাজন অহঙ্কার উভয়বর্গের 
উৎপত্তির সাহাধ্যকারী মাত্র । চক্ষুঃ, শ্রোত্র, ঘ্বাণ, রসন ও ত্বকৃ--এই 
পাঁচটি বুদ্ধীক্রিয়। বাক, পাণি, পাদ, পাষু ও উপস্থ_-এই পাঁচটি কর্শের্িয়। 
মন একাদশ ইন্দ্রিয় এবং তাহা উভয়াআ্মক। অর্থাৎ মন জ্ঞানেন্ত্রিয় ও 
কর্শেন্ত্রিয, এই উভয়রূপেই নির্দিষ্ট হইতে পারে। কি জ্ঞানেত্িয় 
কি কর্মেন্দ্িয। মনের অরধিষ্ঠান ভিন্ন কেহই স্ব ম্ব বিষয়ে প্রবৃত্ত 
হইতে পারে না। গুণনসকলের পরিণামবিশেষবশতঃ নান ইন্দ্রিয় এবং 
নানা বাহাপদার্ধের উৎপত্তি হইয়াছে। মনের অসাধারণ বৃত্তি সঙ্কল্প 
অর্থাৎ দম্যক্রূপে কিন বিশেঘ্য-বিশেষণ-ভাবে কল্পনা । রূপ, শব্দ, গন্ধ, 
রস ও স্পর্শ--এই পাঁচটি বিষয়ের আলোচনা কিনা অপরিস্ফুট জ্ঞানমাত্র 
যথাক্রমে চক্ষুরাদি পাঁচটি বুদধীন্দ্িয়ের বৃত্তি বা ব্যাপার। বচন বা কথন, 
আদান বা গ্রহণ, বিহরণ বা গমন, উতমর্গ বা ত্যাগ ও আনন্দ, এই পাঁচটি 
'থাক্রমে বাগাদি পঞ্চক্দেন্দিয়ের বৃত্তি। মন, অহঙ্কার ও বুদ্ধি, এই তিনটি 


সাংখ্যদর্শন | : ১৯৭ 


আন্তঃকরুণ, চক্ষুরাদধি দশটি বাহৃকরণ। অন্তঃকরণত্রয়ের অগাধারণ বৃত্তি 
বলা হইয়াছে। উহাদের সাধারণ বৃত্তি প্রাণাদি পঞ্চবাযু। প্রাণবাযু-_ 
নাসাগ্র, হৃদয়, নাভি ও পাদাঙ্্বন্তি। কুকাটিকা, পৃষ্ঠ, পাদ, পায়ু, উপস্থ ও 
পার্খবৃত্তি বাঘুর নাম অপানবাযু। সমানবায়ু_ছদয়, নাতি ও সমস্তমদ্ধি- 
স্থানবৃত্বি। হৃদয়, কণ্ঠ, তালু, মন্তক ও ভ্রমধাস্থানস্থিত বায়ুর নাম 
উদ্দান। ত্বগ্ৰৃভি বায়ুর নাম ব্যান। উহা! সর্্শরীরবাপী। মহত্তত্বাদির 


বৃত্তি বা কাধ্যগুলি পরিস্ফট করিবার জষ্গ কিঞিৎ বলা আবশ্তুক। প্রথমতঃ 


কোন ন বস্তর সৃহিত ইত্রিয়ের দ. মংযোগ হইগে অপরিস্কুটরূপে বস্তুর যে ০ 


০০টি আপা পোপ পাপা 


জ্ঞান হয়, তাহীর নাম আলোচনজ্ঞান বা বা নির্বিকরক জ্ঞান। কেন না, এ 
জ্ঞান বিকল্পশূৃন্য অর্থাৎ বিশে ্যবিশেষণভাবশূন্য। | বালক কিংবা মুক ব্যক্তি 
যেমন তাহাদের জ্ঞান শবের দ্বারা অন্যকে বুঝাইতে পারে না, আলোটন- 
জ্ঞানও সেইরূপ অভিলাপ বা! শৰের দ্বারা অন্তকে বুঝাইতে পার! যায় 
না। কেন না, শবন্বারা যাহ! গ্রতিপাদিত হইবে, তাহা অবন্য বিশেষ্য- 
বিশেষণভাবাপন্ন হইবে। আলোচনজ্ঞান বিশেষ্বিশেষণতাবাপন্ন নহে, 
স্থতরাং শব্বদ্ধারা প্রতিপাদিত হইতেই পারে না। অতএব বুদ্ধান্তিদ্বারা 
“ইহা একটি বন্ত-_ইত্যাকার আলোচনমাত্র হয়। পরে “ইহা এইরূপ, 
এরূপ নহে”_ইত্যাকারে সম্যকৃরূপে কল্পনা কিনা বিশেষ্যবিশেষণভাবে 
বিবেচনা করা মনের কার্য্য। মনঃসক্কল্পিত বিষয়ে অহঙ্কার পৃর্বোক্তরূপ অর্থাৎ 
“আমি ইহা সম্পাদন করিতে সমর্থ-__ইত্যাকার অভিমান করে। “এই 
অভিমত বিষয়ে ইহা আমার কর্তব্/ঃ__ইত্যাকার নিশ্চয় করা বুদ্ধির 
কার্ধ্য। স্মরণ করিতে হইবে যে, অগ্নিসংযোগে অয়ঃপিগড যেমন অগ্রির ন্যায় 
প্রতীয়মান হয়, সেইরূপ পুরুষণংযোগে চিতপ্রতিবিশ্বদ্ধারা বুদ্ধিও চেতনের 
্যায় প্রতীয়মান হয়। স্থতরাং বুদ্ধির কর্তৃত্ব এবং ভোজত্ব পুরুষে 
প্রতীয়মান হইয়া থাকে। ইহাই পুরুষের সংসার। মনোযোগ করিলে 
বুঝা যাইবে যে, সংসারদূশীতেও বাস্তবিক পুরুষের কৈবল্য বা মুক্তির 
কোনও ব্যাঘাত হয় নাই! কেন না, পুরুষ তৎকালেও কেব্লই রহিয়াছে। 
উক্তপ্রণালীক্রমে বুদ্ধিই পুরুষের তোগণম্পার্দিকা এবং বুদ্ধিই বিবেক- 
জ্ঞানদ্বারা পুরুষের মুক্তিসাধিকা। বন্ধ, মোক্ষ ও সংসার বস্তুগত্য। পুরুষের 
' নাই। পুরুষের আশ্রয়ে বুদ্ধিই বন্ধ, মোক্ষ ও নংসারভাগিনী। 


"গা 9০৮%৮৫৮6 





এ 


১৯৮ অফ্টম লেক্চর। 


মাংখ্যাচার্ষে/রা বলেন ষে, বাহেব্রিয়মকল গ্রামাধ্যক্ষের। মন বিষয়া- 

ধ্যক্ষের অথাৎ দেশাধ্যক্ষের, বুদ্ধি সর্ধধাধ্যক্ষের এবং পুরুষ মহারাজের 
স্থানীয়। গ্রামাধাক্ষ প্রজাদের নিকট কর গ্রহণ করিয়া বিষয়াধাক্ষের 
নিকট অর্পণ করে। বিষয়াধ্যক্ষ সর্ধাধাক্ষের নিকট দেয়। সর্ধাধ্যক্ষ 
মহারাজের প্রয়োজন সম্পাদন করে। তদ্রপ ইন্দ্রিয়মকল বিষয়ের 
আলোচন! করিয়া! তাহ! মনের নিকট উপস্থিত করে। মন মত্ল্পূর্বক 
বুদ্ধির নিকট সমর্পণ করে, বুদ্ধি উক্তক্রমে পুরুষের ভোগাপবর্গ মম্পাদন 
করে। বাহেক্ড্রিয়। মন, অহঙ্কার ও বুদ্ধি, ইহাদের বৃত্তি ক্রমে হয়, তাহ 
গ্রসিদ্ধ আছে। কিন্তু কখন-কখন এককালেও সকলের বৃত্তি হইয়া 
থাকে। ঘোর অন্ধকারে ক্ষণিক-বিছ্বাৎপ্রকাশ-কালে যখন দেখিতে পাওয়া 
যায় যে, অতি নিকটে তয়ানক ব্যান মুখব্যাদানপুর্বক গ্রাস করিতে উদ্যত 
হইয়াছে, তখন ক্ষণমাত্র বিলম্ব না করিয়া উল্লম্ষনপূর্বক ত্ষ্টা এ স্থান 
হইতে অপন্যত হইয়া পড়ে। এ স্থলে ইন্দ্রিয়ের আলোচন, মনের মঙ্কল্প, 
অহঙ্কারের অভিমান ও বুদ্ধির অধাবসায় একই সময়ে প্রাছুর্ভৃত হয়। 
ভোগ ও অপবর্গরূগ পুরুতার্থনির্বাহের জন্যই করণনকলের প্রধৃত্ি। 
পীাপণমু্ ্রবর্তরিতার অপেক্ষা নাই। মমষ্টরতে করণ ত্রয়োদশপ্রকার। 
£4৮ তন্মধ্যে কন্ধেরিয়মকল আহরণ করে অর্থাৎ স্ব স্ব বিষয় প্রাপ্ত হয়। 
সঃকরণ় সাধারণবৃত্তিবূপ প্রাণাদিবায়ুপঞ্চক দ্বারা শরীরধারণ 
এবং জ্ঞানেত্র্িয়পঞ্চক স্ব স্ব বিষয়ের প্রকাশ করে। ত্রয়োদশগ্রকার 
করণের মধ্যে কর্মেন্দ্িয়ের কার্ধ্য--আহাধ্য শবাদি বিষয়। শব্ার্দি বিষয়- 
সকল দিব্য ও অদিব্য ভেদে প্রত্যেকে ছুইপ্রকার। মুতরাং সমষ্টিতে 
আহাধ্য দ্শপ্রকার। অন্তঃকরণত্রয়ের সাধারণব্যাপার প্রাণানিবায়ুপঞ্চক 
বারা ধার্য শরীর বা শরীরধারণ। শরীর গাঞ্চভৌতিক। পঞ্চতৃতসকল 
আবার দিব্য ও £অদিব্য ভেদে দ্বিবিধ, সুতরাং ধারধ্যও দশপ্রকার। 
বৃদ্ধীন্ররিয়পঞ্চকের প্রকাশ্র শব্ধাদিপঞ্চক প্রত্যেকে দিব্য ও অদদিব্য ভেদে 
ছ্বিবিধ বলিয়া! প্রকাণন্তও দশগ্রকার। দশপ্রকার বাহ্করণ ত্রিবিধ 
অস্তঃকরণের স্ব স্ব ব্যাপারের সহায়তা করে। কেন না, কর্মের! 
আহত এবং বুদ্ীনিযদ্বারা প্রকাশিত বিষয়েই সচরাচর সঙ্কল্প, অভিমান 

ও অধ্যবসায়রূপ অন্তঃকরণতরস্ের বৃত্তি হইয়া থাকে। বর্তমানকালবিষয়েই 


সাংখ্যদর্শন। ॥ ১৯৯ 


বাহেক্দ্রিয়ের ব্যাপার। কিন্তু অস্তঃকরণের ব্যাপার--বর্তমান, অতীত ও 
অনাগত, এই কালত্রয়বিষয়েই অপ্রতিহত | 

করণের বিষয় সংক্ষেপে বলা হইল। এখন তন্মাত্রসর্গবিষয়ে 
কিছু বলা যাইতেছে । তন্মাত্রসকল স্থক্ম বলিয়া অস্মদাদির ভোগ্য 
নহে। এইজন্য উহারা অবিশেষ বলিয়া কথিত। শান্তত্ব বা স্খত্ব, 
ঘোরত্ব বা ছুঃখত্ব এবং মৃদত্বরূপ বিশেষ--ভোগ্যবস্ততেই অবস্থিত 
পঞ্চতন্মাত্র হইতে পঞ্চমহাভৃতের উৎপন্তি হইয়াছে। শব্বতম্মাত্র 
হইতে শব্গুণক আকাশ, শব্তন্নাত্রযুক্ত স্পর্শতন্মাত্র হইতে শব্দ- 
স্পর্শগুণযুক্ত বায়ু, শবম্পর্শতন্মাত্রসহিত রূপতন্মীত্র হইতে শব- 
স্পর্শরূপগুণযুক্ত তেজঃ, শব্স্পর্শরূপতম্মাত্রসহক্কৃত রসতন্মাত্র হইতে 
শবম্পর্শরূপরসগুণযুক্ত জল এবং শবম্পর্শরপরসতন্মাত্রসংবলিত গন্ধতন্মাত্র 
হইতে শবম্পর্শরূ্পরসগন্ধগুণযুক্ত পৃথিবী উৎপন্ন হইপ্নাছে। এই পঞ্চ- 
মহাভূতের মধ্যে কেহ সুখকর ও লঘু, কেহ ছুঃখকর ও চঞ্চল, কেহ 
বিষাদকর ও গুরু । অতএব ইহারা বিশেষ বলিয়া নির্দিষ্ট। বিশেষ- 
সকলও তিন শ্রেণীতে বিভক্ত-_হুক্মশরীর, মাতাপিতৃজ বা স্থৃন শরীর 
এবং তদতিরিক্ত মহাভূত। মহত্ত্ব, অহঙ্কার, একাদশ ইন্দ্রিয় ও পঞ্চ- 
তন্মাত্র, এই সকলের সমষ্টই স্ক্মশরীর। ইন্দ্রিযমমকল শান্ত, ঘোর ও 
মূঢ়াত্মক, অতএব বিশেষ । হুক্মশরীর ইন্ডরিয়ঘটত, অতএব বিশেষমধ্যে 
পরিগণিত । এক এক পুরুষের এক একটি হুক্্রশরীর পৃর্ধেই প্রকৃতি হইতে 
উৎপন্ন হইয়াছে । উহ1 মহা প্রলয় পর্য্যন্ত স্থায়ী। এই হুক্মশরীর পূর্বগৃহীত 
স্থলদেহের পরিত্যাগ এবং অভিনব স্কুলদেহের গ্রহণ করিয়া থাকে । ইহার 
নাম সংসার। চিত্র যেমন আশ্রয় ভিন্ন থাকিতে পারে না, সেইরূপ 
বদ্ধাদিও আশ্রয় ভিন্ন থাকিতে পারে না। এইজন্ত লির্গশরীরের আশ্রয়- 
স্বরূপ স্থুলশরীর অপেক্ষিত। _বাচম্পতিমিশ্রের মতে শরীর ছুইটি_- 
হুশ্্শরীর ও স্লশরীর। ভাষ্যকার বিজ্ঞানভিক্ষুর মতে শরীর তিনটি - 
হুক্মশরীর, অবিষ্ঠানশরীর ও স্থলশরীর। তিনি বলেন, স্থুপদেহের 
পরিত্যাগের পরে লিক্ষদেহের যে লোকান্তরগমন হয়, তাহা 'গই 
অধিষ্ঠানশরীরের আশ্রয়ে হইয়া থাকে। তাহার মতে লিঙ্গশরীর বা 
হ্দ্মশরীর কোন দনয়েই আশ্রয় ভিন্ন থাকিতে পারে না। স্থুলভূতের 


$৮6 পি, রং পি 
২০০ (৪পাশিকএ৫ অফটম লেক্চয় | 


হুক্মা অংশই অধিষ্ঠানশরীর বলিয়া অঙ্গীক্ৃত হইয়াছে । এই অধিষ্ঠান- 
শরীরের অপর নাম আতিবাহিক .শরীর.। হুক্মশরীর ধর্মাধর্ঘাদিরপ 
নিমিত্ত অনুসারে নানাবিধ স্কৃলশরীর গ্রহণ করিয়া থাকে। ধর্মাদি 
কাহারও স্বাভাবিক, কাহারও বা উপায়ানুষ্ঠানসাধ্য। স্থৃতিকারের! 
ৰলেন, স্ষ্টির আদিতে মহামুনি কপিল ধর্ম, জ্ঞান, বৈরাগা ও শ্বধ্য- 
সম্পন্ন হইয়াই প্রাছভূতি হইয়াছিলেন। ধর্মগ্ারা উদ্ধগমন, অবন্থন্ধারা 
অধোগমন, জ্ঞানদ্বারা অপবর্গ, অজ্ঞানদ্বার৷ বন্ধ, বৈরাগ্যদবারা প্রকৃতিতে 
লয়, রাগদ্বারা সংসার, পর্দার ইচ্ছার সফষলত! এবং অনৈশবর্যদ্ারা 
(৮৯৭0 ইচ্ছার বিঘাত বা নিক্ষলত। হইয়া থাঁকে। 

প্রত্যয়সর্গ প্রকারান্তরে চারি শ্রেণীতে বিভক্ত হইতে পারে_ বিপর্যয়, 
অশক্তি, তুষ্টি ও পিদ্ধি। বিপর্যয় পাচগ্রকার-_অবিদ্যা, অস্মিতা, 
রাগ, দ্বেষ ও অভিনিবেশ। ইহাদের যথাক্রমে নামান্তর-তমঃ, মোহ, 
মহামোহ, তামিআঅ ও অন্ধতামিআ্র। অনাম্াতে আত্মখ্যাতির নাম অবিষ্ঠা। 
অনিত্য ও অনাস্ীক্ বস্তুতে নিত্য ও আয্মীররূপে অভিমান অন্মিতা। 
রাগ ও দ্বেষের ব্যাখ্যা অনাবশ্তক। অভিনিবেশ-ভয়। অন্মিতা 
বিপর্ষ্যয় অর্থাৎ মিথ্যাজ্ঞানম্বভাব এবং রাগাদি বিপর্যযয়মূলক বণিয়। 
বিপর্ধ্যয়মধ্যে পরিগণিত হইয়াছে। অবিগ্ভা বিষয়তেদে _আটপ্রকার। 
অব্যক্ত অর্থাৎ প্ররুতি, মহত্ত্ব, অহঙ্কার ও পঞ্চতন্বাত্র, এই অঙ্বিধ 
অনাত্মাতে আত্মবুদ্ধি হয় বলিয়া বিষয়ভেদে অবিষ্তা আটগ্রকার। 
দেবগণ অণিমা্দি অষ্টবিধ শ্রশ্বর্যয লাভ করিয়া উহাকে নিত্য ও আত্বীয়- 
রূপে বিবেচনা করেন। অষ্টবিধ এশ্বর্ঘ্য বস্তগত্যা অনিত্য ও অনাতআ্ীয়। 
কেন না, খশ্ব্য বুদ্ধিধর্্ম, এইজন্য অনাত্বীয়। সুতরাং অক্মিতাও বিষয়- 
তেদে আটপ্রকার। শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ, ইহারাই রঞ্জনীয় অর্থাৎ 
রাগের ব্ষয়। শব্ধাদি বিষরগুলি দিব্য ও অদিব্য ভেদ্দে প্রত্যেকে 
দ্বিবিধ। অতএব বি্ষিয়ভেদে রাগ দশপ্রকার। শব্দাদি দশ বিষয় 
স্বভাবত রঞ্জনীয় হইলেও উহ্বারা পরম্পর প্রতিহন্যমান হইয়া থাকে, 
অর্থাৎ একবিধ শব্দাদি অপরবিধ শব্ধাদির ভোগের প্রতিবন্ধক হয়। প্রতি- 
বন্ধক শব্াদিবিষয়ে 'দ্বেষের আবির্ভাব স্বাভাবিক। ভোগ্য শব্দাদির 
উপায়ন্বরূপ অণিমার্দি অষ্টবিধ ধশ্বধ্য স্বভাবতই দ্বেষবিষয়। কেন না 


7 


সাংখ্যদর্শন। ২০১ 


অগিমাদি-এশ্বর্য সম্পাদন বহু-আয়াস-সাধ্য। অতএব শব্দাদি দশটি 
ভোগ্যবিষয় এবং তৎ্সম্পাদক অণিমাদি অষ্টবিধ রশ্বর্ধ্---এই অষ্টাদশ 
বিষয়ে দ্বেষ হয় বলিয়া! বিষয়ভেদে দ্বেষ অষ্টাদশপ্রকার। ভোগ্য 
শব্বাদি দশ বিষয় ও তাহার উপায়ভূত অণিমাদি আষ্টবিধ খরশবরঘ্য, 
এই অষ্টাদশ বিষয়ে বিনাশভয় হয় বলিয়া বিষয়তেদে অভিনিবেশও 
অষ্টাদশপ্রকার। একাদশ ইন্দ্িয়ের অশক্তি একাদশপ্রকার এবং বুদ্ধের 
নিজের অশক্তি সপ্তদশপ্রকার। সুতরাং মোটের উপর অশক্তি 
অষ্টাবিংশতি প্রকার। চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়ের অশক্তি অন্ধতাদি। তুষ্টি নয়- 
প্রকার, দিদ্ধি আটপ্রকার। ইহাদের বিপর্যয় বা অভাবনিবন্ধন 
বুদ্ধির নিজের অশক্তি সপ্তদশ প্রকার। বিষয়বৈরাগ্যজন্ত তুষ্টি পাচ- 
প্রকার। কেন না, ভোগ্যবিষয় শব্দাদিভেদে পাচপ্রকার। বৈরাগোর 
হেতুও পাচপ্রকার। কারণ, অজ্জনদোষ, রক্ষণদোষ, ক্ষয়দোব, ভোগদোষ 
ও হিংসারদ্দোষ দর্শনে বিষয়বৈরাগ্য উপস্থিত হয়। ধনোপাজ্জনের 
উপায়নকল দুঃখকর। পেবা! একটি ধনাজ্জনের উপায়, তাহা কত কষ্টকর, 
তাহ! সেবাকারী বিলক্ষণ জানেন। পুর্বাচার্য্যের! বলিয়াছেন-- 
দৃপাদ্ছুরীখর্াস্থদ্ডিচওাদিচন্রজাম্‌। 
বেদনাং ভাবয়ন্‌ প্রাজ্ঞঃ কঃ সেবাস্থ প্রনজ্জতে ॥ 1. 

গর্বিত ছুপ্রতূর দ্বারস্থিত দণ্ধারীর ভয়ানক অ্দীচন্ত্র অর্থাৎ গলহস্তজনিত 
গীড়ার বিষয় চিন্তা করিলে কোন্‌ বুদ্ধিমান্‌ ব্যক্তি সেবাতে আসক্ত হইতে 
পারে ? কৃষিবাণিজ্য প্রভৃতি ধনাজ্জনের উপায়গুলিও দুঃখকর, তাহ! 
ভূক্তভোগিমাত্রই অবগত আঁছেন। ধনার্জনের উপায় ছুঃখকর বলিয়া বিষয়ে 
বৈরাগ্য উপস্থিত হইলে থে তুষ্টি হয়, তাহার নাম পার । অজ্জিত ধন অগ্নি, 
জল ও চৌরাদি দ্বারা বিনষ্ট হইতে পারে, সুতরাং ধন উপার্জন করিলেই 
হয় না, অতি কষ্টে অর্জিত ধনের রক্ষা করিতে হয়। এই রক্ষণক্রেশ 
চিন্তা করায় থে বৈরাগা উপস্থিত হয়, তজ্জনিত তুষ্টির নাম সুপার! 
মহাকষ্টে ধনের অর্জন ও রক্ষা করিলেও ভোগ্বারা তাহ! ক্ষয়প্রাপ্ত হর, 
এই ক্ষয়দৌষদর্শনজন্য বিষয়বৈরাগ্য উপস্থিত হইলে যে তুষ্টি হয়, তাহার 
নাম পারাপার। বিষয়ভোগের অভ্যাস ভোগাভিলাষ বদ্ধিত করে।' 
কোনক্রমে বিষয়ের অপ্রাপ্তি ঘটিলে বদ্ধিত ভোঁগাভিলাষ নিরতিশয় কষ্ট- 


৬ 


২০২ অফ্টম লেক্চর | 


স্বর হয়। এইরূপ ভোগদোষদর্শনে যে বৈরাগ্য জদ্মে, তজ্জনিত তুষ্টির 
নাম অনুন্তমান্ভঃ। প্রাণীদিগের পীড়া না জন্মাইয়া! ভোগ হইতে পারে 
না, সমস্ত ভোগেই অল্পবিস্তর প্রাণিহিংদা আছে, ইত্যাকার হিংসা- 
দৌধদর্শনাধীন বিষয়বৈরাগো যে তুষ্টি হয়, তাহার নাম উত্তমান্তঃ। 

বিষয়বৈরাগাজন্য এই পঞ্চবিধ তুষ্টি বাহাতুষ্টি বলিয়া আখ্যাত। আধ্যাস্ত্িক 
তুষ্টি চারি গ্রকার-- প্রকুৃতিতৃষ্টি, উপাদীনতুষ্টি, কালতুষ্টি ও ভাগ্য- 
ুষ্টি। বিবেকসাক্ষাৎকারও প্রক্কৃতিরই পরিণামবিশেষ। অতএব বিবেক- 
সাক্ষাৎকারও প্রকৃতির কার্য্য। প্রক্কতিই বিবেকসাক্ষাৎকারের কর্রাঁ, 
আমি বিবেকপাক্ষাৎকারের কর্তা নহি। সুতরাং আমি সর্বদাই কৃটন্থ 
ও পূর্ণ, এইরূপ ভাবনাতে যে তুষ্ট জন্মে, তাহার নাম প্ররৃতিতুষ্টি, ইহারই 
অপর নাম অন্তঃ। প্রবজ্য! অর্থাৎ সন্যাসের উপাদান কিনা গ্রহণ করিলে 
যে তুষ্টি হয়, তাহার নাম উপাদানতুষ্টি। ইহারই নামান্তর সলিল। সন্ন্যাস 
গ্রহণপূর্ব্বক দীর্ঘকাল ধ্যানাত্যান বা সমাধির অনুষ্ঠানে সমুতগন্ন তুষ্টির নাম 
কালতুষ্টি। এই তুষ্টি ওঘ'নমে অভিহিত । সম্প্রজ্জাত সমাধির চরমোৎকর্ষ- 

স্বরূপ ধর্মমেঘদমাধি লাভ হইলে যে হা জন্মে, তাহার নাম তাহাই 

রি হইল। ব্রাচম্পতিমিশ্রের মতে আধ্যাত্মিক তুষ্িগুলি 
অসছুপদেশজন্ত । তিনি বলেন, শিষ্য অবগত হইয়াছে যে, আত্মা 
প্রকৃত্যাদিরপ নহে, প্ররুত্যা্দি হইতে অতিরিক্ত ; কিন্তু অসদুপদেশ- 
দ্বারা পরিতুষ্ট হইয়া শ্রবণমননাদিক্রমে বিবেকসাক্ষাৎকারের জন্য যত্র করে 
না। শিষ্তের তাদৃশ তুষ্টিই আধ্যাত্মিক তুষ্টি। বিবেকসাক্ষাৎকার প্রকৃতির 
পরিণামবিশেষ, প্রকৃতিই তাহা সম্পন্ন করিবে, ভজ্জন্ত ধ্যানাভ্যাসের 
প্রয়োজন'নাই--এইরূপ উপদেশশ্রবথে প্রকৃতিবিষয়ে শিষ্যের যে তুষ্টি জন্মে, 
তাহার নাম প্রকৃতিতৃষ্টি। বিবেকথ্যাতি প্রকৃতির কার্ধা বটে, কিন্ত 
প্রকৃতিমাত্রের কার্ধা নহে। কেন না, বিবেকখ্যাতি প্রকৃতিমাত্রের কার্ধ্য 
হইলে সর্বকালে সর্ধালোকের বিবেকথ্যাতি হইতে পারে। স্থতরাং 
বিবেকখ্যাতি মহকারি-কারণাত্তরেরও অপেক্ষা করে। সেই সহকারি- 

কারণাত্তর পরব্জ্যা-বা-সন্্যাস | অতএব সন্্যান অবলম্বন কর, ধ্যানাভ্যাস 
করিয়া কষ্টম্বীকারের আবশ্কতা নাই-ঈদৃশ উপদেশশ্রবণে যে তুষ্ট 


সাংখ্যদর্শন। ২০৩ 





হয়, তাহার নাম উপাদানতুষ্টি। যদ্দিও দন্ন্যান অবলম্বন করিলেই তর 
ক্ষণাৎ মুক্তি হয় না, তথাপি কালক্রমে সন্ন্যাস হইতেই মুক্তিলাভ হইবে, 
উদ্বিগ্ন হইবার কোন কারণ নাই_-এতাদৃশ অসছুপদেশশ্রবণে যে তু্টির 
আবির্ভাব হয়, তাহার নাম কালতুষ্টি। মন্্যাসও মুক্তির কারণ নহে, 
কাঁলও মুক্তির কারণ নহে, ভাগ্যই মুক্তির কারণ, ধ্যানাভ্যাসাদির 
জন্য পরিশ্রম করিবার প্রয়োজন নাই, ভাগ্য থাকিলে অবশ্যই মুক্তি 
হইবে। মদালপার পুত্রগণ সন্নানও করে নাই, ধ্যানাভ্যাও করে নাই, 
অথচ অতি বালাকালে মাতার উপদেশশ্রবণমাত্রেই তাহারা মুক্ত 
হইয়াছিল--এইরূপ অনছুপদেশশ্রবণজন্ত তুষ্টির নাম ভাগ্যতুষ্ি। 

পিদ্ধি আটপ্রকার। আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক ভেদে 
ছঃখ তিনপ্রকার, সুতরাং প্রতিযোগিভেদে ছুঃখনিবৃত্তিও তিনপ্রকার । 
এই ছুঃখনিবৃস্তিত্রয় মুখাসিদ্ধি। যথাক্রমে এই দিদ্ধিত্রয়ের নামান্তর-- 
প্রমোদ, মুদিত ও মোদমান। তাহার সাধনগুলি গৌণমিদ্ধি বণিয়। 
পরিগণিত। গোৌণদিদ্ধি পাঁচপ্রকার__অধ্যয়ন, শব, উহ, স্থৃহৃৎ প্রাপ্তি 
ও দান। গুরুর নিকট অধ্যাত্শাস্ত্রের যথাবৎ অক্ষরগ্রহণের নাম 
অধ্যয়ন । ইহার অপর নাম তার.। গৃহীত অধ্যাত্বশাস্ত্ের অর্থাববোধের নাম 
শব। ইহার নামান্তর ন্থতার। এই পিদ্ধিদ্ধয় আত্মার শ্রবণ বলিয়া কথিত । 
উহ কিনা তর্ক। শান্ত্রাবিরোবী যুক্তিদ্বারা সংশয় ও পূর্বপক্ষ পিরদনপূর্বক 
শান্ত্রার্থের অবধারণই তর্ক। ইহাই মাত্মার মনন বপিয়া অভিহিত। এই 
তৃতীয় দিদ্ধির অপর নাম তারতার। স্ব যুক্তিদ্বারা প্রকৃত শাস্্ার্থ 
আবধারণ করিলেও যে পর্যন্ত তাহা অন্তের অর্থাৎ গুরুশিষ্য বা সত্রঙ্গ- 
চারীর অন্থমোদিত না হয়, সে পর্য্যস্ত তাহাতে বিশ্বাসস্থাপন করিতে 
পারা যায় না। অতএব স্ুহৃৎ প্রাপ্তি অর্থাৎ গুরু-শিশ্য-দব্রক্গচারী প্রভৃতির 
প্রাপ্তি চতুর্থসিদ্ধিূপে কথিত হইয়াছে। ইহার নামান্তর রম্যক। বিবেক- 
জ্ঞানের শুদ্ধির নাম দান। ইহার নামাত্তর সদ্দামুদ্রিত। আদরপূর্ববক 
দীর্ঘকাল নিরন্তর অগ্্ণীলন বা অত্যাস দ্বারা বিবেকখ্যাতির শুদ্ধি- 
পান হয়। পরিশুদ্ধ ববেকখ্যাতিই সংশযবিপর্ারের সমুচছেদে সমর্থ 
ধাহারা আশা! করেন যে, একবার তব্বকথা শুনিয়াই তত্বজ্ঞ হইবেন? 
অধিকত্ত, তন্বকথা। গুনিবার পরও মিথ্যান্ঞান অপনীত হয় না দেখি! 


২০৪ অফ্টম লেক্চর 


জ্ঞানের মিথ্যাজ্জাননিরদনের সামর্থ অবিশ্বীন করেন, তাহাদের এই 
শান্্রসিদ্ধান্তের প্রতি মনোযোগ করা উচিত। শুক্তিরজতাদি শতশত 
স্থলে দেখা যায় বে, তত্বজ্ঞান মিথ্যাজ্ঞান অপনয়ন করিতে সমর্থ । বজ্জুপর্প- 
ভ্রম ও দিয্মোহাদিস্থলে দেখা গিয়াছে যে, অপরোক্ষ মিথ্যাজ্ঞান পরোক্ষ এগ, 
তত্বঙ্ঞানদ্বারা অপনীত হয় না, অপরোক্ষ তত্বজ্ঞানদ্বারাই অপনীত 
হয়। সংসারনিদান মিথ্যাজ্ঞান বা! অবিবেক অপরোক্ষ । স্ৃতরাঁং বিবেক' 
জ্ঞান বা তন্বভ্ঞানের অপরোক্ষত্বদম্পাদনের জন্ঠ দীর্ঘকাল শ্রবণ-মনন- 
নিদিধ্যাননের অভাস আব্্ক। 

সে যাহ! হউক, উপরে বাচস্পতিমিশ্রের মত প্রদর্শিত হইল। প্রবচন- 
ভাষ্যকারের মতে শিষ্যাচার্ধ্যভাবে গুরুর নিকট শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়। 
জ্ঞানলাভ করার নাম অধ্য়নপিদ্ধি। শিষ্যাচার্ধ্যভাবে গুরুর নিকট অধ্যরন 
করা হয় নাই, কিন্তু অগ্ঠে অধ্যাত্মশান্্র পাঠ করিতেছে, তাহ! শুনিয্বা বা 
স্বয়ং অধ্যাত্মশান্ত্ের আলোৌচন! করিয়৷ যে জ্ঞানলাভ করা যায়, তাহার 
নাম শব। উপদেশাদি ব্যতিরেকেই পূর্ধজন্মের অভ্যাসবশতঃ স্বয়ং 
তত্বের উহ করার নাম উহ। কোনও জ্ঞানী করুণাপরবশ হইয়া খয়ং 
গৃহে উপস্থিত হইলে, তাহার নিকট যে জ্ঞানলাভ কর! যায়, তাহার 
নাম সুহতপ্রাপ্তি। কোন জ্ঞানীকে ধনদানদ্বারা পরিতুষ্ট করিয়া তাহার 
নিকট জ্ঞানলাভ করার নাম দ্রান। অধ্যয়ন, শব্ধ ও উহ, এই তিনটি 
গৌণদিদ্ধি মুখ্যপিদ্ধিত্রয়ের অন্তরঙ্গ সাধন। নুহৃতপ্রাপ্তি ও দান মন্দ- 
সাধন। বাচম্পতিমিশ্র বলেন যে, বিপধ্্যন, অশক্তি ও তুষ্টি, এই তিনটি 
দিদ্ধির নিবারক কিনা প্রতিবন্ধক। তাহার মতে প্রত্যয়মর্গের মধ্যে 
সিদ্ধি উপাদেয়। বিপর্যয়, অশক্তি ও তুষ্টি হেয়। প্রত্যয়দর্গ ভিন্ন তন্মাত্র- 
সর্গ ও তাহার পুরুষার্থমাধনত্ব হইতে পারে না। আবার অন্মাত্রসর্থ' 
ভিন্ন গ্রতায়দর্গ 'এবং তাহার পুরুষর্থপাঁধনত্ব সম্তবে না। এইজন্ত দ্বিবিধ 
সর্সের অর্থাৎ তন্মাত্রসর্গের ও প্রত্যরসর্গের প্রবৃত্তি হইয়াছে। (ভোগ্য 
শব্ধাদিবিষয় এবং ভৌগায়তন শরীরদ্য় ভিন্ন ভোগরপ পুরুষার্থ হইতে 
পারে না বলিয়া তন্মাত্রসর্ণের বিলক্ষণ উপযোগিতা আছে। কেন না, 
শবাদিখ্ষিয় এবং শরীরদ্বয় তন্মাত্রসর্গের অন্ত্তুক্ত। পক্ষান্তরে, ভোগ- 
মাধন ইন্দ্রিয় ও অন্তঃকরণ ভিন্ন ভোগ হইতে পারে না, ধর্মাদদি ভিন্ন 


সাংখ্যদর্শন । ২০৫ 


ইন্দিয়াদি ও শরীরাদির সৃষ্টি হইতে পারে না। সুতরাং প্রতায়সর্গের 
আবশ্তকতাগ অপরিহীর্য্য।) অপবর্গরূপ পুরুতার্থ বিবেকখ্যাতিসাধ্য। 
বিবেকথ্যাতি--প্রতায়সর্গ ও তন্মাত্রপর্গ উভরগাপেক্ষ। এইহেতু ও উভয়বিধ 
সর্গের আবশ্তকতা অন্তত হইতে পারে। আপত্তি হইতে পারে 
যে, ধর্মাদিসাপেক্ষ সৃষ্টি ও স্বষ্টিসাপেক্ষ ধর্মমাদি, সুতরাং অন্টোন্তাশ্রয়- 
দোষ হইতেছে। এতছুত্তরে বক্তব্য এই যে, পুর্বঙ্গন্মার্জিত ধর্মাদিদ্বারা 
বর্তমান শরীরের উৎপত্তি হইয়াছে । পৃক্বতরজন্মনঞ্চিত ধর্ম্াদিদ্বার! 
পৃর্বজন্মের শরীরাদি এবং পূর্বতম জন্মে সমাচরিত ধর্মাদিদ্বার1 পূর্বতর 
জন্মের শরীরাদি হইয়াছে । দার্শনিকপিগের মতে সংসার অনাদি বলিয়া 
আনিসর্গের প্রশ্ন উঠিতে পারে না। এই অন্টোনতাশ্রয় প্রমানসিদ্ধ বায় 
দোষাবহ নহে। ইহার দৃষ্টান্তস্থলে বীজাঙ্কুরের কথা উল্লেখ করা 
হইয়াছে । বীজ হইতে অস্কুরাদিক্রমে বৃক্ষের উৎপত্তি, আবার বৃক্ষ 
হুইতে বীজের উৎপত্তি হয়, ইহা! প্রত্যক্ষসিদ্ধ। সুতরাং বীজাস্কুরস্থলে 
অন্টোন্তাশ্রয় বা অনবস্থা প্রমাণসিদ্ধ বলিয়! দূষণাবহ হয় না। কর্ম 
প্রবাহ ও স্ৃষ্টিগ্রবাহ সন্বন্ধেও এই দিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে প্রযুক্ত হইতে 
' পারে। আচাধ্যদের এ বিষয়ে মতভেদ নাইী। 

যদিও সংসারে বিচিত্র স্থুখভোগ করেন, এমন প্রাণীর অসস্ভীব নাই, 
তথাপি জরা ও মরণাদি দুঃখের হস্ত হইতে কেহই পরিত্রাণ পাইতে 
পারেন না। সুতরাং সংনার স্বভাবতঃ দুঃখন্বরূপ, ইহা অস্বীকার করা 
যাইতে পারে না। কেন না, জরামরণাদিছুঃথ স্বাভাবিক। সুখ 
্বাভাবিক নহে, আগন্তক-উপায়-সাধ্য। জরামরণাদির জন্য কোন- 
রূপ চেষ্টাযত্ব করিতে হয় না, উহা আপনিই উপস্থিত হয়। সুখের 
'জন্ত কিন্তু বিস্তর চেষ্টাবত্র করিতে হয়। একজন দার্শনিক কুপিত- 
ফণিফণাচ্ছায়ার সহিত সাংসারিক সুখের উপমা দিয়াছেন। ফলত: 
উপরিভাগে শাণিতকপাণ সুঙ্গাঙ্তত্রে ঝুলিতেছে, তাহার নিয়ভাগে উপ- 
বেশন করিয়া বিশ্রামন্থথ অন্ুভব করার ন্যায় সাংসারিক সুখ ছুঃখান্ু- 
ধক্ত ও বিপৎসঙ্কুল। সংসার প্রকৃতির কাধ্য। প্রকৃতি ত্রিগুণাত্মক। 
তন্মধ্যে রজোগুণ ছুঃখাত্মক। সুতরাং সংসার দুংখাত্মক হইবে, তাহাতে 
সন্দেহ হইতে পারে না। সত্য বটে সত্বগুণ স্থুখাত্মক, অতএব সংসারে 





২০৬ অফ্টম লেক্চর। 


ছুঃখ অপরিহাধ্য হইলেও সুখের অসস্ভাব নাই। এ আপত্তি ভিততিশৃন্ত 
বলিলেও অতুযুক্তি হয় না। কে বলে যে, সংসারে সুখ নাই? সংসারে 
স্ুথ আছে সত্য, কিন্তু ছুঃখের তুলনায় তাহা! নাই বলিলেও চলে। 
সাংসারিক স্থুখ কুপিতফণিফণাচ্ছায়ার তুল্য, এই উপমার প্রতি লক্ষ্য 
করিলেই বুঝা যাইতে পারে যে, সুখলেশ যংসামান্ত । ছুঃখরাশির অবধি 
নাই। প্রগাঢ় অন্ধকারের মত ছুঃখরাশি সুবিস্তীর্ণ। মধ্যে মধ্যে থগ্ো- 
তিকার স্ায় স্থুখের আবির্ভাব ও তিরোভাব হয় মাত্র। সাংখ্যাচার্ধয- 
দিগের মতে ছ্যলোক হইতে সত্যলোক পর্য্যন্ত সত্ববহুল। সত্ববন্ল 
বলিয়াই তাহাতে স্থখের আধিক্য আছে। ভূলোক বা মনুষ্যলোক 
রজোবহুল। সুতরাং ভূলোকে দুঃখের আধিক্য স্বাভাবিক। পশ্বাদি স্থাবরান্ত 
স্ষ্টি তমোবছুল, সুতরাং মোহময় । কেহ কেহ বলিয়া থাকেন যে, মরণ 
সর্ধস্থখের আকর, মরণ দুঃখকর নহে । বলিয়৷ থাকেন সত্য, কিন্ত কোন 
প্রমাণের দ্বার নিজের মত সমর্থন করিতে পারেন না। যে কথার 
কোনও প্রমাণ নাই, তাহার প্রতিবাদ করিয়! বৃথা সময়ক্ষয় না| করাই 
মঙ্গত। তথাপি দেখিতে পাওয়া যায় যে, কেহ কেহ এ্ররূপ কথার 
প্রতি আস্থাস্থাপন করিয়া থাকেন। এইনন্ত এ সম্বন্ধে ছুইএকটি 
কথা বলা উচিত বোধ হইতেছে। কৃতবিদ্ত.শ্রোতৃমণ্ডলী ক্ষমা করিবেন। 
এস্থলে ধান ভানিতে শিবের গীতের ন্যায় একটি অনন্বদ্ধ কথা না বণিয়! 
থাকিতে পারিলাম না। বর্তমান সময়ে এমন এক শ্রেণীর লোকের 
আবির্ভাব হইয়াছে, ধাহারা দয়ালু মহধিগণ শাস্ত্র ও যুক্তি প্রদর্শনপূর্বক 
যে সকল সুপদেশ প্রদান করিয়াছেন, তাহা অনাদর করিতে--কেবল 
অনাদর করিতেই বা বলি কেন--কুসংস্কার বা মূর্থতানিবন্ধন অস্কবিশ্বাস 
বলিয়া তওপ্রত্তটি অবজ্ঞাপ্রদর্শন করিতে কিছুমাত্র সস্কোচবোধ করেন 
না, অথচ মরণ সুখের সোপান, উহাকে দুঃখ বলিয়া বিবেচনা! করা 
কুসংস্কার, ইত্যাকার ভিত্তিশৃন্ত কতগুলি কথার প্রতি বিলক্ষণ আস্থা 
প্রদর্শন করিয়া থাকেন। এরূপ আস্থাগ্রদর্শন না করিলে যেন অন্যায় 
করা! হয় বিবেচনা করেন, কেমন যেন বাধবাধ বোধ করেন, চিত্তের 
সন্কীর্ণতা বলিয়া ভাবেন। ইহা! উন্নতির লক্ষণ বা অধোগতির লক্ষণ 
বলিব, তাহা বুঝিতে পারিতেছি না। কৃতবিদ্ত শ্রোতৃমগলীর প্রতি 


সাংখ্যদর্শন। ২৭০৭ 


ইহার মীমাংসাঁভার অর্পণ করিয়া প্রকৃত বিষয়ের অনুলরণ করা 
যাইতেছে। 

সমস্ত প্রণীরই মরণভগ্ন স্বাভাবিক। কেহই মৃত্যুসস্তাবনার 
ত্রিসীমায় পদার্পণ করেন না। সকল অবস্থায় সকল সময়ে আত্মরক্ষা ও 
মৃত্যুপরিহারের জন্য দকলেই যথাপাধা যত্ব করিয়া থাকেন, যথোচিত 
সাবধানতা অবলম্বন করেন। এতত্বারাই প্রমাণ হইতেছে যে, মৃত্য 
নুথের সোপান নহে, উহা! ছুঃখকর। কেন না, ছুঃখই ভয়ের কারণ, 
নখ ভয়ের কারণ হয় না। ধাহারা মৃত্রাকে সুখের সোপান বলিয়া 
ব্যাথা! করেন, তাহাদের চিত্তই তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়। তাহারা 
মুখে যাহাই বলুন না! কেন, তাহাদের অন্তঃকরণে মরণভয় বিলক্ষণণ- 
রূপেই আছে। তাহা না হইলে মৃত্যুর নানাবিধ উপায় স্থলভ ও 
স্বাধীন থাকা স্থলে মৃত্যুর আশ্রয় গ্রহণ করা মকলের পক্ষেই শ্রেয়স্কর 
হইত, মৃত্যুর ভয় করা কাহারও পক্ষে উচিত হইত না। দে যাহা 
হউক, সমস্ত কার্ধাই প্রক্কৃতি হইতে উদ্ভৃত। সাক্ষাৎ বা পরম্পরা 
প্রক্কতিই কার্য্যমাত্রের কারণ। এই মতে কেহ কেহ আপত্তি করিয়! 
থাকেন। চার্ধাক বলেন, কার্ধ্যমাত্রই নিষ্কারণ। কার্য্ের কোনও 
কারণ নাই, উহা আপনিই উৎপন্ন হইয়া থাকে । এ আপৰ্তি অসঙ্গত। 
কারণ, কার্ধ্য কাঁদাচিৎক, ইহা! প্রত্যক্ষসিদ্ধ অর্থাৎ সকল সময়ে সকল 
কার্ধ্য হয় না, কোন সময়ে কোন কার্ধ্য হইয়া থাকে। কার্ধ্যের 
কারণ থাকিলে এই কার্দাচিৎকত্ব উপপন্ন হয়। কেন না, যখন কারণ- 
কলাপের সমবধান বাঁ মেলন হয়, তখনই কার্ষোর উৎপত্তি হইয়া 
থাকে। কারণকলাপের সমবধান সর্বসময়ে হয় না বলিয়া সর্বসময়ে 
কার্ধোের উৎপত্তি হইতে পারে নাঁ। কার্ধ্য নিষ্কারণ হইলে কার্যের 
কাদাচিৎকত্ব উপপন্ন হয় না। তাহা হইলে হয় সর্বকালেই সর্ধকার্ধ্য 
হইতে পারে, না হয় কোনকালেই হইতে পারে না। কারণ, 
কার্ষযের উৎপত্তির জন্ত যখন কিছুই অপেক্ষণীয় নাই, তখন কারোর 
উৎপত্তির বিলম্ব হওয়া অসস্তব। অতএব চার্ষাকের আপত্তি সহ্ৃত 
নছে। ব্রহ্ম হইতে জগতের উৎপত্তি হইয়াছে, এই মতও সাংখ্যা- 
চার্য্ের মমীচীন বলিয়া বিবেচনা! করেন না। কেন না, চিতিশক্তি বা বদ্ধ 


রঃ অফ্টম লেক্চত্ব। 


অপরিণামী। ব্রন্ষের জগদাকারে পরিণাম একান্তই অপন্তব। কেহ কেহ 
বলেন থে, প্রকৃতি জগতের কারণ, ইহ! সত, কিন্তু প্রক্কৃতি অচেতন । 
অচেতন বস্ত চেতন প্রবন্তিত হইয়াই কার্ধ্যসম্পাদন করিয়া থাকে । বাদী 
অচেতন, কিন্ত চেতন-স্ত্রধর-কর্ভৃক অধিষ্ঠিত বা প্রবন্তিত হই! ছেদনরূপ 
কার্ধ্য সম্পন্ন করে। প্রক্কৃতিও অচেতন। অতএব তাহারও অধিষ্ঠাত1 ব! 
প্রবর্তয়িতারপে কোন চেতনের শ্বীকার করিতে হইতেছে । জীব- 
সকল চেতন হইলেও তাহার প্রকৃতির স্বরূপের অভিজ্ঞ নহে। এইজন্য 
তাহার! প্রকৃতির অধিষ্ঠাতা হইতে পারে না। কেন না বাস্তাধির 
শ্বর্ূপের অভিজ্ঞ স্ৃত্রধরাদিই বাশ্তাদির অধিষ্ঠাতা হইয়া থাকে। 
স্থতরাং প্রকৃতির স্ব্পের অভিজ্ঞ চেতনই প্রকৃতির অধিষ্ঠাত। 
হইতে পারেন। তিনিই ঈশ্বর। তবেই সিদ্ধ হইল যে, প্রকৃতিদ্বার। 
ঈশ্বর জগতের স্ৃষ্টিকর্তী। সাখ্যাচার্যেরা বলেন যে, এ কথাও সঙ্গত 
হয় না। কারণ, ঈশ্বরবাদীদগের মতে ঈশ্বরের কোনরূপ ব্যাপার 
বা ক্রিয়া নাই। স্থৃতরাং তিনি প্রকৃতির অধিষ্ঠাতা হইতে পারেন না। 
দেখিতে পাওয়া যায় যে, সুত্রধর যখন ব্যাপারধুক্ত হয়, তখনই 
বাশ্তাদির অধিষ্ঠাতা হইয়া! থাকে, ব্যাপারশূন্ত হইয়া বান্তাদির অধিষ্ঠাত। 
হয় না। কেনই বা ঈশ্বর প্রকৃতির অধিষ্টাতা হন, কিজন্তই বা 
প্রকৃতির অধিষ্ঠানবিষয়ে ঈশ্বরের প্রবৃত্তি হয়, তাহাও বিবেচনা করা 
উচিত । বুদ্ধিমান ব্যক্তি হয় নিজের স্বার্থের জন্য, না হয় অপরের 
ছুখপরিহারের জন্য প্রবৃত্ত হইয়া থাকেন। ঈশ্বরের কোনরূপ 
স্বার্থ থাকিতে পারে না। কেন না, তিনি পরিপূর্ণণ তিনি আগ্তয্লাম, 
তীহার কিছুরই অভাব নাই; স্থৃতরাং প্রয়োজনীয় বা অপেক্ষণীয় এমন 
কোন বিষয় নাই,যাহার জন্য তাহার প্রবৃত্তি হইতে পারে। পরছুঃখ- 
প্রহরণের জন্য তাহার প্রবৃত্তি হইবে, এ কথাও বল! যাইতে পারে 
না। কেন না স্যষ্টির পূর্বে ছুঃখই ছিল না। ছুঃখও ত তাহারই 
সথষ্ট। অপিচ, কারুণ্য ঈশ্বর প্রবৃত্তির কারণ হইলে, ঈশ্বর করুণা করিয়! 
সমস্ত প্রাণীকে সুখী করিতেন, কাঁহাকেও ছুঃখী করিতেন না। পূর্ববা- 
চরিত কর্মের বৈচিত্র্য অনুসারে ঈশ্বর বিচিত্র প্রাণিগণের কৃষ্টি 
করিয়াছেন -এ কথাও মমীচীন নহে । কেন না, কর্ম ও অচেতন। চেতনের 


সাংখ্যদর্শন। ২০৯ 


অধিষ্ঠান ভিন্ন কর্ম্মও ফল জন্মাইতে পারে না। ঈশ্বরই সেই সকল 
কর্মের অধিষ্ঠাতা। ঈশ্বরের অধিষ্ঠাতৃত্ব হইতে পারে না, ইহ! পূর্বেই 
প্রতিপন্ন হইয়াছে । 

কারুণা চরিতার্থ করিবার আরও এক সহজ উপায় এই হইতে 
পারিত যে, ঈশ্বর কর্মের অধিষ্ঠাতা না হইলেই শরীর ও দুঃখাদির উৎ- 
পত্তি হইত না। অতএব ঈশ্বর প্রকৃতির অধিষ্ঠাতা নহেন।  প্ররুতি 
নিজেই স্থষ্টিকত্রী। বসের পরিপোষণের জন্ত যেমন অচেতন ছুগ্ধের 
প্রবৃত্তি হয়, পুরুষের ভোগাপবর্গের জন্ত সেইরূপ অচেতন প্রক্কৃতিরও 
প্রবৃত্তি হয়। নর্তকী যেমন সভাসদ্‌দিগকে নৃতাদর্শন করাইয়া নৃত্য 
হইতে নিবৃত্ত হয়, প্ররুতিও নেইরূপ পুরুষের নিকট নিজের স্বরূপ- 
প্রকাশ করিয়া নিবৃত্ত হয়। গুণবান্‌ ভৃত্য নিপুণ প্রভূর আরাধন। 
করিয়া যেমন কোনরূপ প্রত্যুপকারের প্রত্যাণা করে না, গুণবতী 
প্রকৃতিও সেইরূপ নানাবিধ উপায়ে নির্ণ পুরুয়ের উপকার করিয়া 
ত্বাহা হইতে কোনরূপ প্রত্যুপকারের আশা করে না। অন্থর্যযম্পস্ত। 
কুলবধূ দৈবাৎ স্মলিতবস্ত্রাঞ্চল অবস্থায় একবারমাত্র কোন পুরুষ- 
কর্তৃক দৃষ্ট হইলে, লজ্জায় যেমন দ্বিতীয়বার তাহার দর্শনপথবর্তিনী 
হয় না, প্রকৃতিও সেইরূপ কোন পুরুষকর্ক বিবেকঙ্ঞানদ্বারা দুষ্ট 
হইলে পুনর্ধার আর তাহার দর্শনপথে উপস্থিত হয় না; অর্থাৎ মুক্ত- 
পুরুষের সম্বন্ধে গ্রক্কৃতির স্থষ্টি আর হয় না। পুরুষের আশ্রয়ে প্রক্কৃতিরই 
বন্ধ, মোক্ষ ও সংসার। বস্তৃগত্যা পুরুষের বন্ধ, মোক্ষ ও সংপার 
নাই। ভৃত্যগত জয় ও পরাজয় যেমন স্বামীতে উপচরিত হয়, সেই- 
রূপ প্রকৃতিগত বন্ধমোক্ষও পুরুষে উপচরিত হয়। কোশকার কীট 
যেমন নিজেই নিঙ্জেকে বন্ধন করে, প্রক্কতিও তেমনি নিজেই নিজেকে 
বন্ধন করে। 

আদরের সহিত দীর্ঘকাল নিরস্তরভাবে পূর্বকথিত তত্বনকলের 
বিবেকজ্ঞান অভ্যান করিলে, 'আমি পুরুষ, আমি প্রকৃতি বা বুদ্ধ্যাদি 
নহি, আমি কর্তা নহি, কোন বিষয়ে আমার স্বাভাবিক স্বামিত্বও 
নাই, এইরূপ বিবেকবিষয়ে সাক্ষাৎকারাত্মক জ্ঞান উৎপন্ন হয়। যর্দিও 
মিথ্যাঙ্জান ও মিথ্যাজ্ঞানবাদন! অনাদি, পক্ষান্তরে বিবেকজ্ঞান ও বিকেক- 


চে চা 
৭ রী 


২১৪ অফ্টম লেক্চর । 


জ্ঞানবাসন! আদ্দিমতী, তথাপি বিবেকজ্ঞান মিথ্যাজ্ঞানের এবং বিবেক- 
জ্ঞানবাঁনন1 মিথ্যাজানবাসনার উচ্ছেদ সম্পাদন করে। কেন না, তত্ববিষয়ে 
বুদ্ধির স্বাভাবিক পক্ষপাত আছে বলিয়া তত্বজ্ঞান প্রবল ও মিথ্যাজ্ঞান 
দুর্বল বিরোধস্থলে প্রবল ছুর্ঘগের উচ্ছেদ্সাধন করে, ইহার শতশত দৃষ্টান্ত 
সকলেই অবগত আছেন । সুতরাং মিথ্যাজ্ঞানদ্বারা তত্ৃজ্ঞানের বাধের 
আশঙ্কা! এবং পুনর্বার বিপর্যয় ব! মিথ্যাজ্ঞানের উৎপত্তির আশঙ্কী হইতে 
পারে না। যেমন বীজের অভাবে অঙ্কুর হয় না, তেমনি প্রকৃতিপুরুষের 
4৭ সংযোগ থাকিলেও বিবেকখ্যাতিদ্বারা অবিবেক বিনষ্ট হইয়াছে বলিয়া, 
যাহার বিবেকধ্যাতি হইয়াছে, তাহার পক্ষে আর সৃষ্টি হয় না। শব্াদি- 
বিষয়ভোগ পুরুষের স্বাভাবিক নহে । মিথ্যাজ্ঞানই ভোগের নিবন্ধন কা 
হেতু । মিথ্যাঙ্ঞান বিনষ্ট হইলে ভোগ হইতে পারে না। সুতরাং তখন 
স্টির কোনও প্রয়োজন নাই। উত্তরূপে বিবেকসাক্ষাৎকার হইলে সঞ্চিত 
ধর্দীধর্ম্ের বীজভাব নষ্ট হইয়া যায় বলিয়। তাহ। জন্মাদিরূপ ফল উৎপাদন 
করিতে পারে না। বাচম্পতিমিশর বলেন-- 
ক্লেখসলিলাবদিক্তায়াং হি বুদ্ধিতূমৌ কর্দাবীদানস্থরং গ্রস্থবতে ততব- 
জ্ঞাননিদাঘনিপীতসকলক্লেশনলিলায়ামুষরায়াং কুতঃ কর্াবীগানামন্কুর- 
প্রমবঃ | 
জলগিক্ত তূমিতেই বীজ অস্কুরোৎপাদন করিতে পারে। প্রথর স্থ্য্য. 
তাপে যে ভূমির সমস্ত জল পরিশুষ্ক হইয়াছে, তথাবিধ উধরভূমিতে বন্ধের 
অন্করোতৎপাদকতা অসম্ভব । তদ্দপ, মিথ্যাজ্ঞানাদিরূপ ক্লেশ খাকিলেই 
সঞ্চিতকর্ম ফলজননে সমর্থ হয়। তত্বজ্ঞানদ্বারা মিথ্যাজ্ঞানাদি ক্লে 
অপনীত হইলে আর কর্পফল নমূতপন্ন হইতে পারে না। উদ্ভৃতবাক্যের 
তাৎপর্বার্থ এই থে, ক্লেণরূপ জলে অবপিক্ত বুদ্ধিরূপ ভূমিতেই কর্ধরূপ 
বীজ ফলরপ অস্কুর উৎপাদন করে। তত্বজ্ঞানরূপ প্রথর কৃর্যাকিরণে সমস্ত 
ক্লেশরূপ মপিল নিপীত. হইলে বুদ্ধিভূমি উর হইয়া যায়। তাদুশ উর 
ভূমিতে অস্কুরোৎপন্তি কিরূপে হইবে € 
যদ্দিও তত্বজ্ঞানীর কর্মফল হইতে পারে না, তথাপি যে ধর্দাধর্শ 
ফলগ্রদব করিতে আরম্ভ করিয়াছে, অর্থাৎ যে ধর্ম(ধর্ প্রভাবে অর্থাৎ 
যাহার ফলন্োগজন্- বর্তমান শরীর উৎপন্ন হইক্জাছে, তাহা! গ্রবৃত্ববেগ 


সাংখ্যদর্শন। ২১১ 


বলিয়। তাহার প্রতিরোধ হওয়৷ অদন্তব। কুস্তকাঁর দণ্ডাদিদ্বারা চক্রের 
পরিভ্রমণ সম্পাদন করে। কিন্তু গরন্ধপে কয়েকবার চক্র ঘুরাইয়। দওটি 
তুলিয়৷ লইলেও যেমন বেগাখানংস্কারবলে চক্র কিছুকাল আপনিই ঘুরিতে 
থাকে, সেইরূপ সঞ্চিত ধন্মাধর্ম ফলজননে অসমর্থ হইলেও, যে কর্ম ফল 
জন্মাইতে আরম্ত করিয়াছে, তথাবিধ প্রারন্ধফল-কর্ধানদারে তত্বজ্ঞানীর 
শরীর কিছুকাল অবস্থিত থাকে। প্রন করমপ্ন-ভোগের পরে জ্ঞানীর 
দেহপাত হইলে আর দেহান্তরের আরন্ত হইতে পারে না। কেন না, 
তত্বজ্ঞানদ্বার৷ কর্মমাশয্নের বীজভাব দগ্ধ হইয়া গিয়াছে। দগ্ধ বীজ যেমন 
অঙ্কুর জন্মাতে গারে না, জ্ঞানদগ্ধ কর্দাশয়ও সেইরূপ তত্বজ্ঞানীর দেহ 
জন্মাইতে পারে না। তখন এঁকান্তিক ও আতান্তিক ছুঃখনিবৃত্তিক্ূ 
কৈবল্য সম্পন্ন হয়। এঁকান্তিক কিনা অবশ্যন্তাবী। আত্যন্তিক কিন 
অবিনাশী। যেরূপ বলা হইল, তাহার প্রতি মনোধোগ করিলে বুঝ! 
যাইবে যে, ভোগ ব্যতিরেকে প্রারন্ধফল কর্্াশয়ের ক্ষয় হয় না । অনারব- 
বিপাক বা অনারব্ধল কর্মাশয় তত্বজ্ঞানদ্বার| দগ্ীবীজের ন্যায় অকর্মণ্য 
হয়, উহা! আর ফল জন্মীইতে পারে না । অতএব-- 

মাতুক্তং ক্ষীয়তে কর্ম্ম কল্পকোটিশতৈরপি_- 
অর্থাৎ ভোগ ভিন্ন শতকোটি কল্পেও কর্ণাক্ষয় হয় না-_ইহ! প্রারন্ধফল- 
কর্ণের প্রতি লক্ষ্য করিয়া বলা হইয়াছে । 

জ্ঞানাগিঃ সর্ককর্মীণি ভম্মমাৎ কুরুতেহজবন__ 
অর্থাৎ জ্ঞানরূপ অগ্নি সমস্ত কর্ম ভন্ম করে--ইহা অনারব্ধবিপাক'কর্া- 
শয়ের গ্রতি লক্ষ্য করিয়া! কথিত হইয়াছে। সুতরাং শাস্্দ্য়ের পরম্পর 
বিরোধ আশঙ্কা করা অন্থচিত। 


নবম লেকৃচর | 


সিএ চ৮প ৭ পপ 


পাতগলদর্শন। বা ০৮০-৯৯৫৯]- 


তগবান্‌ পতঞ্ীলি পাতঞ্জলদর্শনের প্রণেতা । পাতঞ্জলদর্শনের অপর নাম 
যোগদর্শন। এই দর্শনে ধোগের বিভৃতি ও বিশদ উপদেশ প্রদত্ত 
হইয়াছে। যোগ্সিদ্ধ ব্যক্তিই যোগের উপদেষ্টা হইতে পারেন । দুর্ভাগ্য- 
ক্রমে আমি যোগী নহি। আমার বাক্য উপদেশরূপে গৃহীত না হয়, 
হা প্রার্থনীয়। দর্শনহিসাবে পাতঞজলদর্শনে আমার যে যংসামান্ 
অভিজ্ঞতা আছে, তাহার কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ বিবৃত করিতে চেষ্টা করিব। 
ধাহারা যোগবিষয়ে উপদেশগ্রহণের অভিলাধী, তাহারা কোন যোগীর 
নিকট উপদিষ্ট হইবেন। | 

তগবান্‌ বেদব্যা পাতঞ্জলদর্শনের সংক্ষিপ্ত অথচ উপাদেয় ভাম্য 
রচনা করেন। পাতগ্রলভাস্ত বেদব্যানক্ৃত, ইহা ভাষ্ে লিখিত হয় নাই 
বটে, কিন্তু মাধবাচার্ষ্য প্রভৃতি প্রাচীন ও প্রামাণিক আচার্ধ্গণ যোগ- 
তাম্য বেদব্যাদকৃত, ইহা স্পষ্টাক্ষরে বলিয়াছেন। অসাধারণধীশক্তিসম্পন্ন 
সর্ধতনন্বতন্ত্র বাচম্পতিমিশ্র গাতঞ্জলভাম্তের উপর সমীচীন টাক! রচনা 
করিয়াছেন। তিনি শ্বকৃত টাকার প্রান্তে বলিয়াছেন__ 

নত্ব৷ পতগ্জলিমুষিং বেদব্যাদেন ভাষিতে। 
সংক্ষিপ্তষ্পষ্টবহ্বর্থা ভাতে ব্যাথ্যা বিধাস্ততে ॥ 

ইহার তীৎপর্্য এই-গতঞ্জলি-গষিকে গ্রণাম করিয়৷ বোব্যানতাধিত 
তাসের সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট, অথচ বন্ু'অর্থগ্রকাশক ব্যাখ্যা রচনা করিব। 
বাচন্পতিমিশ্রের মতে গাতঞ্জলভাখ্ব বেদব্যাদরচিত, এ বিষয়ে সন্দেহই 
হইতে পারে না। 

কিন্তু, “ভিন্নকুচিহি লোকঃ1” চেতনদিগের ইকমত্যের আশা অনেক- 
স্থলে নিক্ষণ হয়। বাঁচস্পতিমিশ্রের স্তায় অপামান্ত আচাধ্যের সিদ্ধান্ত 


গ|তর্জীলদর্শনা ২১৩ 


সকলে অত্রান্ত বিবেচনা! করেন নাঁ। কেহ কেহ বলেন, ভগবান্‌ বেদ- 
ব্যান পাতঞ্জীলভাষ্য রচণা করেন নাই। এই কর্নার প্রমাণরূপে 
তাহারা বলিয়া থাকেন যে, শারীরকমীমাংলা বা ব্রন্মমীমাংসাতে 
তগবান্‌ বেদব্যান “এতেন যোগঃ প্রত্যুক্তঃ”_-এই হ্ত্রদ্ধারা পাতঞ্জল- 
দর্শনের মতের খণ্ডন করিয়াছেন। ভর্বান্‌ বেদব্যাসের মতে পাতঞ্জল- 
দর্শন শ্রতিবিরুদ্ধ, সুতরাং অপ্রামাণিক। শ্রুতিবিরুদ্ধ ও অগ্রামাণিক 
বলিয়৷ বেদব্যান যাহা নিজে খগ্ন করিয়াছেন, তিনি তাহার ভাঘ্য- 
রচনা করিবেন, ইহা নিতান্ত অশ্রদ্ধে় ও অবিশ্বান্ত। যাহারা ইহা 
অনুধাবন না করিয়া বেদব্যাসকে পাতঞ্জলদর্শনের ভাধ্যকর্তার পদ- 
প্রদানে সমুত্স্থক, তাহার! প্রকারান্তরে নারায়ণের অংশাবতার ভগবান্‌ 
বেদব্যাসের মহিমায় কলঙ্ক আরোপ করেন, সন্দেহ নাই। 

এতদ্বন্তরে বক্তবা এই যে, তাহাদের যুক্তি আপাতরমণীয় হইলেও 
নিতান্ত অন্তঃগারশৃগ্ঠ। বাচস্পতিমিশ্র প্রহ্থতি চিরন্তন আচার্্য- 
পরম্পরা পাতগ্রলভাষ্য বেদব্যাসপ্রণীত বলিয়া অঙ্গীকার করিয়াছেন। 
বাস্পচ্ছেগ্ধ অকিঞ্চিংকর যুক্ত্যাভাসের সাহায্যে তাহাদের দিদ্ধান্তের শ্ঞ 
'বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সাহপিকতার পরিচায়ক হইতে পারে, অভিজ্ঞতার 
পরিচায়ক হয় না। কেন হয়না, তাহার কারণ প্রদর্শিত হইতেছে। 
সমস্ত শান্ত্ের গ্রতিপাগ্ধ বিষয় গৌণ ও মুখ্য ভেদে ছুই শ্রেণীতে* 
বিতক্ত। তন্মধ্যে গৌণবিষয়ের দোষে মুখ্যবিষয় দুষ্ট হইতে পারে 

ইহা! সকলেই স্বীকার করিবেন। গৌণবিষয়গুলি আন্ুষঙ্গিক- 
ভাবে বলা হয়, ধী সকল বিষয়ে শান্ত্রকারের তাৎপর্য বা নির্ভর 
থাকে না। মুখ্যবিষয়েই শাস্ত্রের তাৎপধ্য থাকে, ইহা সহজেই 
' বুঝিতে পারা যায়। সকল শান্তরেই একটি বিষয় মমর্থন করিবার 
ন্ত অনেকগুলি হেতুর উপন্তা দেখিতে পাওয়া ঘায়। ইহা ভারতীয় 
আচাধ্যদিগের রীতিপিদ্ধ। কিন্তু উগন্ন্ত সমস্ত হেতুই সর্বস্থলে 
অকাটা প্রমাণ হয় না। সচরাচর পূর্ব-পূর্ব্ব হেতুতে অল্লাধিক দোষের 
সংশ্রব থাকে। শিষ্যবুদ্ধির বৈশগ্ এবং তর্কশক্তির বিকাশের জন্ 
আচার্যেরা প্রথমতঃ কিঞ্চিৎ দোষশ্ৃষ্ট হেতুরও নির্দেশ করেন। 
সাধারণতঃ চরমনির্দিষ্ট হেতুই নির্দোষ ও দমীচীন হইয়া থাকে। , 

হাহ ৮০৯৮ | 


১৪ নবম লেক্চর। 


“মিদ্ধান্তে চোত্তরং বল্যম্৮__অর্থাৎ একটি বিষয়ে একাধিক সিদ্ধান্তের 
অবতারণা থাকিলে, তন্মধ্যে পরনিদ্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বলবান্‌, সুতরাং 
ূর্বনিদিষ্ট দিদ্ধান্ত অপেক্ষাকৃত অঙমীচীন। ইহা পূর্বাচার্ধ্যদিগের 
একটি গাথ!। মীমাংসকাচার্্যের! বলিয়াছেন-_-“্যৎপরঃ শব্দঃ স শব্দার্থঃ”__ 
অর্থাৎ যাহাতে শব্ধের তাৎপর্য, তাহাই শব্ষের অর্থ। এতদনুমাৰে 
বিবেচনা করিলে স্পষ্ট প্রতীত হইবে যে, শাস্ত্রের তাৎপর্য্যবিষযীভূত 
অর্থই প্রকৃতপক্ষে শাস্তার্থ। অনেক হেতুর উপন্তাসস্থলে পূর্ব-পৃর্ব 
হেতুগুলি হুষ্ট ও অপ্রামাণিক প্রতিপন্ন হইলেও তন্বারা শাস্ত্রের দু্টতা 
বা অপ্রামাণিকতা৷ প্রতিপন্ন হয় না। শাস্ত্রের তাঁৎপর্য্যবিষয়ীভূৃত অর্থ 
অছুষ্ট ও অগ্রামাণিক হইলে তদ্বারাই শাস্ত্রের প্রামাণিকত্ব রক্ষিত 
হয়। ইহাতে বিবাদ হইতে পারে না। ইহা অস্বীকার করিলে প্রায় 
সমস্ত শান্ত্রই অপ্রমাণ হইয়া পড়ে। কেন না, প্রায় সর্বত্রই বিষয়- 
বিশেষের সমর্থন করিবার জন্য একাধিক হেতুর অবতারণ! দেখিতে 
পাওয়া যায়। অথচ তাহাতে প্রায় পূর্ব-পূর্ব হেতৃগুলি আংশিক- 
দৌোষ-মংস্পষ্ট। অতএব স্থির হইল যে, শাস্ত্রের মুখ্যবিষয় ব 
তাৎপর্্যবিষয়ীভূত অর্থ নির্দোষ ও প্রমাণসিদ্ধ হইলে, গৌণ বা 
আনুষঙ্গিক বিষয় দৌষছুষ্ট ও প্রমাণবিরুদ্ধ হইলেও তদ্বারা শাস্ত্রের 
অগ্রামাণিকত্ব বলা যাইতে পারে না । 

এখন দেখিতে হইবে যে, যোগদর্শনে ষে সকল বিষয় বল! 
হইয়াছে, তন্মধ্যে মুখ্যবিষয় কি এবং গৌণবিষয়ই বাকি? এবং ব্রহ্গ- 
মীমাংসাতে ঘোগদর্শনের কোন্‌ বিষয়টিই বা খ্ডিত হইয়াছে? কেন ন!, 
ব্রহ্মমীমাংমাতে যোগশান্ত্রের মুখ্যবিষয় খণ্ডিত হইয়া থাকিলে যোগশাস্ত্রই 
থণ্ডিত এবং শ্রুতিবিরুদ্ধ বঙ্িয়। প্রতিপন্ন হইবে। সুতরাং শ্রৃতিবিরুদ্ধ ' 
ঘোগদর্শনের ভাস্ত প্রণয়ন কর! সর্বজ্ঞ বেদব্যাসের পক্ষে সম্ভব হইতে 
পারে না, ইহা যথার্থ। পক্ষান্তরে, যোগশান্ত্রের গৌণ বা আনুষঙ্গিক 
বিষয় তিবিরুদ্ধ ও অপ্রমাণ হইলেও তাহার মুখ্যবিষয়ের প্রামাণ্যের কোন 
বাঁধা হইতে পারে না । সুতরাং প্রামাণিক-যোগশাস্ত্রের ভাম্বপ্রণয়ন কর! 
সর্ধজ্ত বেদব্যামের পক্ষে কোনমতেই অদঙ্গত বা অনুচিত বলা যাক না। 
পথ যোগান্ুশাননম্‌।*-_-যোগদর্শনের এই প্রথম কুত্রের প্রতি লক্ষ্য 





পতগ্ীলদর্শন | ২১৫ 


করিলে স্পষ্ট গ্রতীত্ত হইবে যে, যোগই যোগণদর্শনের মুখ্যপ্রতিপাস্ভ বিষয়। 
প্রধান্মহ্দহষ্কারাদি তাহার গৌণপ্রতিপাগ্ত বা আনুধর্গিক বিষয়। 
অর্থাৎ পদার্ঘনিবূপণ যোগদর্শনের উদ্দেগ্ত নহে, যোগের উপদেশই তাহার 
উদ্দেশ্ত। কোন একটি দরশনের মত অবলম্বন করিয়া যোগের উপদেশ 
করিতে হইবে। কেন না, নিরালম্বন যোগ হইতে পারে না। যোগের 
আলঙ্বন বা বিষয়ের অপেক্ষা আছে। ন্যায় ও বৈশেধিকাদি দর্শনের 
পদার্থাবলী অধ্যাত্মববিগ্ভার তাদুশ উপযোগী নহে । শ্রুতিবিরুদ্ধ হইলেও 
সাংখ্যদর্শনের পদার্থাবলী অধ্যাম্মবিগ্ভার অনেকট। কাছাকাছি। এইজন্ত ৭ 
সাংখাদর্শনের পদার্থাবলী অবলম্বিত হইয়াছে মাত্র। সাংখাদশনের 
পদার্থাবলী অবলগ্ষিত হইয়াছে বটে, কিন্তু সাখ্যদর্শনে যেমন প্রত্যেক 
গদার্থ যুক্তিদ্বারা সমর্থিত হইয়াছে, যোগদর্শনে তাহ! হয় নাই। এতাঁবতা 
বুঝা যাইতেছে যে, তাহ! যোগদর্শনের মুখ্যবিষয় নহে, আনুষঙ্গিক বা গৌণ 
বিষয়। ' ভগবান্‌ শঙ্করাচার্ধ্য বলেন, “স চ কাধ্যকারণানগ্ঠত্বাভাপগমাৎ 
প্রতাঁসনো বেদান্তবাদস্ত”__বৈদান্তিকদিগের স্ায় সাংখ্যেরাও কাধ্য এবং. 
কারণের অনন্তত্ব স্বীকার করেন, স্থৃতরাং সাংখ্যপক্ষ বেদান্তবাদের গ্রত্যাসন 
অর্থাং নিকটবর্তী । স্থির হইল যে, ধোগদর্শনের মুখ্যবিষয় যোগ, প্রধান- 
মহদহস্কারাদি তাহার আনুষঙ্গিক বাঁগৌণ ব্ষয়। “এতেন যোগঃ প্রত্যু কঃ”-- 
এই ব্রঙ্গমীমাংসাহত্রদ্বারা যোগদর্শনের মুখ্য বা তাৎপর্য্যবিষয়ীভূত অর্থ 
প্রত্যাখ্যাত হয় নাই। গৌণ বা আনুষঙ্গিক বিষয় প্রত্যাখ্যাত হইয়াছে। 
“এতেন” এই পদদ্বারা অবপ্ঠ পূর্বনির্দিষ্ট হেতুর পরামর্শ করা হইয়াছে। 
ূর্বনৃত্রটি এই--“ইতরেষাঞ্চান্থপলব্ধেঃ৮_-স্বতন্্র প্রধান জগতের কারণ 
এবং সাংখ্যপরিকল্পিত মহদহঙ্কার প্রভৃতি অপরাপর পদার্থগুপি বেদে 

ও উপলব্ধ হয় না, এইজন্ত সাংখ্যদর্শন ক্রতিবিরুদ্ধ ও অপ্রামাণিক। “এতেন 
বোগঃ প্রত্যুক্তঃ৮_ অর্থাৎ এতদ্বারা যৌগদর্শনও প্রত্যাখ্যাত হইল। 
এখন স্পষ্ট বুঝ! যাইতেছে যে, ঘোগদর্শনের অবলঘ্িত সাংখ্যোক্ত পরার্থ- 
গুলিই নিরাকৃত হইয়াছে, যোগ নিরাক্কত হয় নাই। অর্থাৎ যোগদর্শনের 
গৌণ বা আনুষঙ্গিক বিষয়মাত্র ত্রক্ষমীমাংসাতে প্রত্যাধ্যাত হইয়াছে, 
তাঁৎপর্যযবিষয়ীভূত মুখ্যার্থ প্রত্যাথাত হয় নাই। কেন না, প্রধানমহদাঁদি 
ক্রতিতে উপলব্ধ হয় না, স্থতরাং যোগোক প্রধানমহ্দাদ্িও প্রত্যাখ্যাত & 


১৬ নবম লেক্চর | 


হইল, “এতেন ধোগঃ প্রতুাক্তঃ” এই হ্থত্রটির এইরূপ অর্থই সঙ্গত হয়। 
পক্ষান্তরে, গ্রধানমহদাদি শ্রুতিতে উপলব্ধ হয় না, অতএব যোগ শ্রাতি- 
বিরুদ্ধ ও অপ্রামাণিক, ইহা নিতান্ত অসংলগ্ন হইয়া! পড়ে। প্রধানমহদাদি 
শ্রুতিবিরুদ্ধ বলিয়া যোগ শ্রুতিবিরুদ্ধ হইতে পারে না। প্রত্যুত “তাং 
যোগমিতি মন্তন্তে” “বিগ্ামেতাং যোগবিধিঞ্চ কৃতম্”_ ইত্যাদি আ্রতিতে 
যোগ নির্দিষ্ট থাকায় যোগ শ্রতিসিদ্ধ এবং প্রামাণিক বলিয়৷ স্পষ্ট প্রতীত 
হয়। পত্রিরুন্নতং স্থাপ্য সমং শরীরম্ঠ__ ইত্যাদি শ্রুতিতে যোগশাস্ত্রোক্ত 
আননাদিও উপদিষ্ট হইয়াছে । “এতেন যোগঃ প্রতুযুক্ত:” এই স্তরের ভাষ্ে 
ভগবান্‌ শঙ্করাঁচার্যা বলিয়াছেন_-“এতেন সাংখ্যস্থৃতিপ্রত্যাখ্যানেন যোগ- 
স্বতিরপি প্রত্যাখ্যাতা দ্রষ্টবোত্যতিদিশতি। তত্রাপি শ্রতিবিরোধেন 
গ্রধানং শ্বতন্ত্রমেব কারণং মহদাদীনি চ কাধ্যাণি অলোকবেদ প্রসিদ্ধানি 
বন্পান্তে ।”__অর্থাৎ সাংথ্যন্থৃতিপ্র ত্যাখ্যান দ্বারা যোগম্থৃতিও প্রত্যাখাত 
বুঝিতে হইবে। এতদ্বারা সাংখাস্থৃতির প্রত্যাখ্যান যোগম্থৃতিতে 
অতিদিষ্ট হইতেছে । কেন না, সাংখ্যম্থৃতির স্তায় যোগস্থৃতিতেও স্বতন্ 
প্রধান জগতের কারণরূপে এবং মহদাদি কার্ধ্যরূপে কল্পিত হইয়াছে। 
ইহ কিন্ত লোকবেদপ্রসিদ্ধ নহে। যোগশান্ত্রগ্রণেতা গতঙ্গপি সাংখ্যেক্ত 
প্রধানমহদাদ্ির কথা বলিয়াছেন বটে, কিন্তু ততপ্রতি তাহার নির্ভর 
নাই, অর্থাৎ উহা! বিবক্ষিত নহে। এইজন্য যোগশাস্ত প্রণেতা ভগবান্‌ 
বার্ষগণ্য বলিক়াছেন-_ 
গুগানাং পরমং রূপং ন দৃষ্টিপথমৃচ্ছতি | 
যত দৃষ্টিপথং প্রাপ্তং ত্মায়েব স্বতুচ্ছকম্॥ ॥ 

সত্বদিগুণের পরমনূপ অর্থাৎ অধিষ্ঠান আত্মা দৃকৃপথের অতীত। 
স্বুকৃপথপ্র'প্ত অর্থাৎ দৃষ্ত প্রধানমহদাদি মায়ার স্ায় তুচ্ছ। কোন একটি 
'আলম্বন ভিন্ন যোগ হইতে পারে না, এই অভিপ্রায়ে গুণের কথা বলা 
হইয়াছে মাত্র । বস্তগত্যা প্রধানমহদা্দি বিবক্ষিত নহে, অর্থাৎ তাহাতে 
যোগশাস্ত্রের তাৎপর্য্য নাই । কেন না, তাহ! তাত্বিক অর্থাৎ যথার্থ নহে। 
'যোগীরাগ্ড উহ মায়ার ম্যায় তুচ্ছ বলিয়াই বিবেচনা করেন। ইহা 
যোগাচাধ্য বার্ষগণ্য স্প্টভাষায় বলিয়াছেন। স্থৃতরাং যোগাচার্ধ্য পতঞ্জলির 
মতও প্ররূপ, ইহা অনুমান করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। শেষনাগ 


পথ 


পাতঞ্জলদর্শন | ২১৭ 


অর্থাৎ অনন্তদ্দেব নাতিবিস্তৃত একখানি আর্ধ্যাগ্রস্থ রচনা করেন। তাহাতে 
তিনি বৈদান্তিক দিদ্ধান্তগুলি সমর্থন করিয়াছেন। সাংখ্যমত তাহার 
অন্থমোদিত হইলে দাখখ্যদিদ্ধান্তের সমর্থন ন1 করিয়া সাংখাসিদ্ধান্তের 
বিরুদ্ধ বৈদাস্তিকসিদ্ধান্তের সমর্থন করিবার কোনও কারণ দেখা বার 
না। স্মরণ করা উচিত যে, যোগস্ুত্র প্রণেতা পতঞ্জলি অনম্তদেবের 
অবতার । “এতেন যোগঃ প্রত্যুক্তঃ”--এই স্ত্রের টীকায় বাচস্পতামশ্র 
বলিয়াছেন-_- 

“নানেন যোগশাস্রস্ত হৈরণ্যগর্ভপাতগ্রলাদেঃ সর্ধথা প্রামাণ্যং 
নিরাক্রিয়তে, কিন্তু জগছ্পাদানন্বতন্্ প্রধানতদ্বিকারমহদহঙ্কারপঞ্চতন্মাত্র- 
গোচরং প্রামাণ্যং নাস্তীত্যুচ্যতে ৷ ন চৈতাবতৈবাম প্রামাণ্যং ভবিতৃমহতি । 
যৎপরাণি থি তানি তত্রাপ্রামাণ্যে২ প্রামাণ্যমশ্লবীরন্‌। ন চৈতানি 
গ্রধানাদিসাবপরাণি, কিন্তু যোগন্বরূপতত্মাধনতবান্তরফলবিভূতি- 
তৎ্পরমফলটৈ বল্যবা্পাদনপরাণি।*২ ২২ 

এতত্বারা হিরণ্যগর্ ও পতঞ্জলি শ্রী প্রণীত যোগশাস্ত্ের সব্বথা- 
রূপে প্রামাণ্য নিরারুত হইতেছে ন|। স্বতন্ব প্রধান জগতের উপাদান, 


মহদহস্কারাদি তাহার কার্য, এই বিষিয়ে যোগশান্ধের প্রামাণ্য নাই, 


ইহাই প্রতিপাদ্ন করা হইতেছে। এভাবতা যোগশাস্ত্রের অপ্রানাণ্য 
হইতে পারে না। কেন না, প্রধানাদির সঞ্ভাবপ্রতিপাদন যোগশাস্ত্রের 
তাৎপর্যযবিষয় নহে। ঘোগ এবং তৎসাধনাদির নিরূপণই যোগশাস্ত্রের 
তাৎপর্য্যবিষয়। সে বিষয়ে যোগশাস্ত্ের অগ্রামাণ্য হইবার কোনও 
কারণ নাই । আরও বিবেচনা করা উচিত যে, মহাভারত এবং 


পুরাণে ভগবান বেদব্যা যোগবিষয়ে বিস্তর উপদেশ দিয়াছেন। 


যোগ শ্রুতাবরদ্ধ ও অপ্রমাণ হইলে, তিনি তাহা করিতেন না। স্থৃতরাং 
বোগভাম্য বেদব্যাসপ্রণীত, পূর্ববাচাধ্যদিগের এই সিদ্ধান্তে সন্দেহ করিবার 
কোন কারণ নাই। 

ধারেশ্বর মহারাজ ভোজ গাতগ্জলদর্শনের একথানি বুত্তি রচন। 
করিয়াছেন। তিনি তাহার উপক্রমণিকায় বাঁলয়াছেন যে, ভগবান্‌ পতঞ্জলি 
লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিয়া বৈদ্য কগ্রন্থদ্বারা শারীরিক মূল, ব্যাকরণ- 
ছার! বাচিক মল এবং যোগঘ্বারা মানসিক মল অপনীত করিয়াছেন। 

২৮ 


২০৮ নবম লেক্চর। 


এতত্বার! বুঝা যাইতেছে যে, ভোজরাজের মতে ব্যাকরণমহাভাষব প্রণেত৷ 
পতঙ্জলি এবং যোগশাস্ত্ প্রণেতা৷ পতঞ্জলি অভিন্ন ব্যক্তি। পতগ্জলি অনস্ত- 
দেবের অবতার। ভগবান্‌ অনন্তদেব পতগ্রলিশরীর পরিগ্রহ করিয়! 
ব্যাকরণমহাভাষ্য প্রণয়ন করিয়াছেন, এ বিষয়ে ভারতীয় আচার্য্য- 
দিগের মতভেদ নাই। এইজন্ত ব্যাকরণমহাভাম্বের অপর নাম 
ফণিভাষ্য। এঁতিহাসিক্দিগের মতে বেদব্যাসের আবির্ভাবকাল এবং 
পাণিনির আবির্ভাবকালের মধ্যে বিস্তর অন্তর); অর্থাৎ বেদব্যাসের 
আবির্ভাবের অনেককাল পরে পাণিনি আবিরত হন। পাণিনির 
আবির্ভাবের অনল্পকাল পরে ফণিভাষ্য রচিত হয়। কেন না, পাণিনি 
ব্যাকরণের নুত্র রচনা করেন। তছুপরি কাত্যায়ন বান্তিক রচন। 
করেন। তৎপরে মহাভাষ্য রচিত হয়। মহাতাষ্যে বার্তিকের বিস্তর 
আলোচনা দেখিতে পাওয়! যায়। এতন্বারা বুঝা যাইতেছে যে, 
পতঞ্জলি বেদব্যাসের বহুকালপরবর্তী। সুতরাং তাহার যোগহ্ত্রও 
বেদব্যাসের বনকালপরবর্তী হইবে, সন্দেহ নাই। এইজন্ত যোগস্থত্রের 
ভাষ্য বেদব্যাসরচিত হওয়া অসম্ভব। কেহ কেহ এইরূপ আপত্তি করিয়া 
থাকেন। ব্যাকরণমহাভাম্ব প্রণেতা পতঞ্জলি এবং যোগস্ত্রগ্রণেতা 
পতঞ্জলি অভিন্ন ব্যক্তি কি না, বেদব্যাম যোগভাষ্যের রচয়িত। কি না, এ 
সকল বিষয়ে মতভেদ থাকিতে পারে। কিন্ত কথিত আপত্তির সারবত্ব। 
অতি অল্পই আছে। কারণ, বেদব্যাস চিরজীবী, ইহা সুপ্রসিদ্ধ। ভগবান্‌ 
অনস্তদেব কোন্‌ সময়ে পতঞ্জলিরূপে প্রাছুর্ভূত হন, এবং পতগ্রলি শরীর- 
পরিগ্রহ করিয়া কতকাল ভূতলে বিরাজমান ছিলেন, তাঙ্থীন্ষ কোন 
বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নাই। বেদব্যাপের আবির্ভাবের অনেক পরে মহাভাস্ত 
রচিত হইয়াছিল বলিয়া! তৎকালেই পতঞ্রলির আবির্ভাব হইয়াছিল, 
ইহা কল্পনামাত্র। তাহ! হইলেও চিরজীবী বেদব্যাসের পক্ষে যোগভাত্ব- 
প্রণয়ন ক্ছিই অপন্তব নহে। পতঞ্জলি যোগী ছিলেন, যোগপ্রভাবে আমু 
বদ্ধিত হয়, ইহ1 অভিজ্ঞিগের অবিদিত নাই। বর্তমান সময়েও মিতাচারী- 
দিগের সার্ধশতবর্ষধ জীবনের উদাহরণ দেখিতে পাওয়া যায়। 
কাশ্মীরের ইতিহাস পাঠে জানা যায় যে, একজন রা! তিনশত বদর 
কাশ্মীরের সিংহাদনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ইন্ানীস্তন কালে সংযমীদিগের 


পাতগ্রলদর্শন। ২১৯ 


দীর্ঘজীবনের উদাহরণ পাওয়া যাইতেছে, সুতরাং ষোগীদিগের দীর্ঘজীবন 
বিস্ময়ের বিষয় হইতে পারে না। ভোজদেবের অন্ুকুলে যাহা বলা যাইতে 
পারে, তাহাই বলা হইল। এখন সমস্ত সামঞ্জন্তের ভার ধতিহাসিক- 
দিগের প্রতি অর্পণ করিয়া মপরাপর বিষয়ের অবতারণা করা যাইতেছে। 
পাতগ্জলদর্শনে ১৯৫ট হৃত্র মাছে। হ্ত্রগুলি চারি পাদে বা পরিচ্ছেদ 
বিভক্ত । প্রথম পাদের নাম সমাধিপাদ, দ্বিতীয় পাদের নাষ সাধনপাদ, 
তৃতীয় পাদের নাম বিভূতিপাদ, চতুর্থ পাদের নাম কৈবল্যপাদ। নামের 
দ্বারাই পরিচ্ছেদ গুলির স্কুল প্রাতিপান্ত বিষয় বুঝা যাইতেছে। বাচ- 
ম্পতিমিশ্র প্রত্যেক পাদের ব্যাখ্যাপরিদমাপ্তিকালে একএকটি শ্লোকদ্বার! 
পাদার্থের সংগ্রহ করিয়াছেন। তাহা! ক্রমে প্রদর্শিত হইতেছে । 
ষোগস্তোদ্দেশ নির্দেশৌ তদর্থং বৃত্তিলক্ষণম্‌। 
যোগোপায়াঃ গ্রভেদাশ্চ পাদেহন্ষি,পবর্ণিতাঃ ॥ 
যোঁগের উদ্দেশ ও লক্ষণ, বৃত্তির লক্ষণ, যোগের উপায় এবং যোগের 
প্রকারভেদ, এ সমস্ত প্রথম পাদে বর্ণিত হইয়াঁছে। 
ক্রিয়াযোগং জগৌ ক্লেশান্‌ বিপাকান্‌ কর্্ণামিহ। 
তন্বঃখত্বং তথা বুহান্‌ পাদে যোগন্ত পঞ্চকম্‌।॥ 
ক্রিয়াযোগ, ক্লেশ, কর্্মবিপাক অর্থাৎ কর্মফল, কর্্মকলের হুঃথত্ব এবং 
হেয়, হেয়হেতু, হান ও হানোপায়রপ ব্যুহচতুষ্ট়, এই পাঁচটি বিষয় 
দ্বিতীয়পাদে বলা হইয়াছে । 
অত্রান্তরঙ্গান্তঙ্গানি পরিণামাঃ প্রপঞ্চিতাঃ | 
মংযমাডুতিসংযোগস্তাস্থ জ্ঞানং বিবেকজম্‌ ॥ 
ভৃতীয়পাদে যোগের অন্তরঙ্গ অঙ্গ, পরিণাম, সংযমবিশেষদ্বারা বিভূতি বা 
ীশবর্ধ্যবিশেষ এবং বিবেকজ জ্ঞান বুতৎ্পাদিত হইয়াছে। 
ুক্তার্থচিত্বং পরলোকমেয়জ্ঞসিদ্ধয়ে! ধর্ম্ঘনঃ নমাধিঃ। 
ছ্বী চ মুক্তিঃ প্রতিপাদিতাহস্মিন্‌ পারে প্রনঙ্গাদপি চান্তহুক্তম্‌ ॥ 
মুক্তিযোগ্য চিত্ত, পরলোক সিদ্ধি, বাহ্থার্থন্তাবসিদ্ধি, চিন্তাতিরিক্ত আত্মার 
সিদ্ধি, ধর্মমেঘ লমাধি, জীবন্ুক্তি, বিদেহটৈবল্য এবং প্রকৃত্যাপৃরাদি 
চতুর্থপাদে কথিত হইয়াছে। বাচপ্পতিমিশ্র প্রধান প্রধান প্রতিপাস্ 
ব্ষয়ের সংগ্রহ করিয্বাছেন। প্রনঙ্গক্রমে অপরাপর বিস্তর বিষয়ের 


২২৪ নবম লেক্চর। 


আলোচনা করা হইয়াছে । বেদব্যাসের ভাষ্য, বাঁচম্পতিমিশ্রের তত্ব 
বৈশারদীনামী টীকা, ভোজরাজের বৃত্তি এবং বিজ্ঞানভিক্ষুর যোগ- 
বাতিক, এই গ্রন্থগুলি সমধিক প্রমিথথ। অপরাপর ব্যাখ্যা ও প্রকরণ- 
্রন্থ৪ অনেকগুলি পরিদৃষ্ট হয়। কিন্তু বর্তমানকালে প্রকৃতপক্ষে যোগের 
উপদেষ্টা বিরল। নুতরাং আলোচনার হাস হওয়াতে অনেক গ্রন্থ 
বিলুপ্ত হইয়াছে। পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, পাতঞ্জলদর্শনে সাংখ্যদর্শনোন্ত 
পদার্থাবলী অবলশ্বিত হইয়াছে । অধিকন্ত, সাংখ্যদ্িগের অনঙ্গীকূত। 
ও প্রত্যাখ্যাত ঈশ্বর পাতঞ্কলদর্শনে অঙ্গীকৃত এবং সমর্থিত তি : 
পতগ্রলি বলেন যে, যে সকল পদার্থের তারতম্য অনুভূত হয়, তাহার 
তারতম্য কোনস্থলে অবশ্তই বিশ্রান্ত হইয়া থাকে। পরিমাণের তার- 
তম্য দেখিতে পাওয়া যায়। কুবল অপেক্ষা আমলক মহৎ, আমলক 
অপেক্ষা বিল্বফল মহৎ। এইক্পে মহৎপরিমাণের তারতম্য অনুভূত 
হইতেছে । অথচ আম্মাতে মহত্পরিমাণের নিরতিশয়ত্ব বা তারতম্যের 
বিশ্রান্তি সর্বসন্মত। অর্থাৎ আত্মা সর্বাপেক্ষা। মহান্‌। আত্মা অপেক্ষা 
মহদ্বস্ত দ্বিতীয় নাই। আত্মাতে মহৎ-পরিমাঁণ নিরতিশয় বা কাষ্ঠাপ্রাপ্ত 
অর্থাৎ চরম-উৎকর্ষ-প্রাপ্ত। সেইরূপ জ্ঞানেরও তাঁরতমা অনুভূত হইয়া 
থাকে। একের জ্ঞান অপেক্ষা অপরের জ্ঞান অধিকবিবয়গ্রাহী দেখিতে 
পাওয়া যায়। দেবদত্ত যে পরিমাণে অতীত, অনাগত এবং বর্তমান বস্ত 
জানিতে পারেন বা জানেন, যজ্ঞদত্ত তদপেক্ষা অধিক জানিতে পারেন 
বা জানেন। খিষুমিত্রের জ্ঞান তদপেক্ষাও অধিক বিষয়ে পরিব্যাপ্ত। 
সামান্ত সামান্ত অতীত-অনাগত বিষয় আমরাও জানিতে পারি 
অপেক্ষা অধিকবুদ্ধিশালী ব্যক্তি আমাদের অপেক্ষা অধিকপরিমাণে 
অতীত-অনাগত বিবয় জানিতে পারেন। সুতরাং পরিমাণের হ্যায়" 
জ্ঞানের তারতম্য আছে। অধিক দূরে যাইবার প্রয়োজন নাই, মূর্খ 
এবং পণ্ডিতের মধ্যে জ্ঞানের তারতম্য এবং পঞ্ডিতের মধ্যেও পরম্পর 
জ্ঞানের ন্যনাধিকভাব অর্থাৎ অন্ন ও অধিকবিষয়গ্রাহিত্ব সকলেই অবগত 
আছেন। . অতীত, অনাগত এবং বর্তমান বিষয় গ্রহণের আপেক্ষিক 
আধিক্য অনুসৃত হইতেছে, এ কথা অস্বীকার করিতে পারা যাঁয় না। 
অত্তএব এই আধিক্যও পরিমাণের স্তায় অবস্ত কোনস্থলে চরমোতকর্ষ ] 





গাঁতগ্রলদর্শন। হই 


হইবে, মন্দেহ নাই। যেস্থলে জ্ঞান চরম উৎকর্ষ প্রাপ্ত হইয়াছে, 
তিনি অবশ্যই সর্ধজ্ঞ হইবেন। তিনিই ঈশ্বর। এই প্রশালী গণিত- 
শাস্ত্রের শ্রেচাব্যবহারের অনুরূপ । ঈখর ব্রদ্ধাদিরও গুরু। লোকে ৮ 
শ্বধ্যেরও তারতম্য অনুভূত হইয়া থাকে। ঈখরের ধ্র্ষয নিরতিশয়। 
তাহার অ্র্যা অপেক্ষা! উতকষ্ট শর্বর্ান্তর নাই,_থাকিতে পারে না। 
কেন না, থে এশরধ্য নব্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট, তাহাই ঈশ্বরীয় উশরধ্য। যে 
স্থলে এইবধ্য চরম উৎকর্ষ গ্রাপ্ত হইয়াছে, তিনিই ঈশ্বর । ইঈশ্বরীয় 
এ্বর্যের তুল্য খশ্থ্ধ্যান্তরও নাই। কেন না, তত্ত ল্য ধর্ধর্যান্তর থাকিলে 
এ খরশথর্য্যশালীও ঈশ্বর বণিয়া গণ্য হইবেন। কিন্তু একাধিক ঈশ্বর থাক! 
অসম্তব। কেন না, ঈশ্বরদ্বয়ের একটি বিষয়ে পরম্পর বিরুদ্ধ ইচ্ছা উৎপন্ন 
হইলে উভয়ের ইচ্ছা পূর্ণ হইতে পারে না। কারণ, এক বস্তুতে বিরুদ্ধ 
ধশু্য় এক সময়ে কোনমূতেই থাকিতে পারে না। স্বতরাং একের ইচ্ছা! 
পর্ণ হইবে, একের ইচ্ছা অপূর্ণ থাকিবে । বাহার ইচ্ছা অপূর্ণ থাকিবে, 
তিনি ঈশ্বর হইতে পারেন না। কেন না, অম্মদাদির সভায় তাহার 
ইচ্ছারও বিঘাত আছে । মনে করুন, একটি বস্তবিষয়ে এক ঈশ্বরের 
ইচ্ছা হইল যে_ইহা নৃতন হউক, অপর ঈশ্বরের ইচ্ছা হইল যে_ইহা 
পুরাতন হউক। একটি বস্তুতে এককালে নবত্ব এবং পুরাতনত্ব, এই 
বিরুদ্ধ ধশ্বদ্ধয়ের মমাবেশ কোনমতেই হইতে পারে না। এন্লে একটি 
ইচ্ছা পূর্ণ হইবে, একটি ইচ্ছা পূর্ণ হইবে না। যাহার ইচ্ছা! পূর্ণ হইল 
না, তিনি ঈশ্বর নহেন। ঈশ্বরের ইচ্ছা অপূর্ণ থাকিবে, ইহা অনস্তব। 
অতএব স্থির হইল, ঈশ্বর এক । 
অন্তান্য পুরুষ অর্থাৎ জীবগণ ক্রেশ, কর্ম, বিপাক ও আশয়দম্পর্ক- 
'ুক্ত। ক্রেশাদি ভোগের হেতৃ। ঈশ্বর ক্রেশাদিমম্পকশূন্ত, সুতরাং 
তাহার ভোগ নাই। য্দিও ক্লেশাদি অন্তঃকরণের ধর্ম, সুতরাং জীবাত্বাও 
বস্তুগত্যা ক্লেশাদিসম্পর্কশূন্য, তথাপি অন্তঃকরণধর্মম ক্লেশাদি জীবাত্রাতে 
বাপদিষ্ট বা উপচরিত হয়। কেন না, পুরুষ বা! জীবাত্বা, তদীয় ফলের 
ভোক্তা কিনা চেতগিতা। বাস্তবিক, ভোগ বুদ্ধিস্থিত হইলেও জীবাআতে 
তাহার ব্যপদেশ হয়। বেমন যোছুস্থিত জয় বা! পরাজয় স্বামীতে ব্যপরিষ্ট 
হয়, কেন না, স্বামীই তাহার ফলভোকা; সেইরূপ বুদ্ধিস্থিত ভোগাদি 





হত নবম লেকৃচর। 


জীবাত্মাতে বাপদিষ্ট হয়। বুদ্ধিস্থ রেশাদিও কিন্তু ঈশ্বরে বারদিষ্ট হইতে পা. 
পারে না। কারণ, ঈশ্বরের উপাধিরূগ বুদ্ধিসত্ব অপরাপর পুরুষের 
উপাধিরূপ বুদ্ধিসত্তের ম্তায় মলিন নহে। উহ] বিশুদ্ধ । সুতরাং তাহাতে 
ক্লেশাদি আদৌ নাই। 

ক্লেশ গাঁচপ্রকার-_অবিষ্তা, অস্মিতা, রাগ, দ্বেষ ও অভিনিবেশ। 
অবিদ্বা কিন! মিথ্যান্তান। মিথ্যাজ্ঞান চারিপ্রকার-অনিত্য ভূলোক- 
ছ্যালোকাদিতে নিত্যধ্যাতি অর্থাং নিত্যত্বজ্ঞান; শরীর স্বতাবতঃ অশ্ুচি,' 
অণ্ুচি শরীরে শুচিখাতি; অনাত্বা দেহেন্দ্রিয়াদিতে আত্মখ্যাতি এবং 
ছুঃখে নুখখ্যাতি। বৈষয়িক স্থুখ পরিণামে ছুঃখের কারণ হয় বলিয়া 
ছুখরূপ। স্থ্খপ্রতায় চিত্তের পরিণামবিশেষ । চিত্ত ত্রিগুণাত্বক, তাহার 
পরিণামও অবশ্ঠ ত্রিগুণাআক হইবে। তন্মধ্যে রজোগুণের পরিণাম 
ছু'খাত্মক । তাহা অপরিহার্য । সংসারী ব্যক্তি সুখতোগকাঁলে এই 
অপরিহাধ্য ছুঃখকণিকাকেও সুখ বলিয়াই বিবেচনা করে। যোগী কিন্ত 
স্বখভোগকালেও ছুঃখের অনুভব করিয়া ক্রিষ্ট হয়। যেমন উর্ণাতস্ত 
শরীরের অন্য অবয়বে ন্তস্ত হইলে শ্পর্শদ্বারা ছুঃখদীয়ক হয় না, কিন্ত 
চক্ষর্গোলকে স্বস্ত হইলে ছুঃখের হেতু হয়) সেইরূপ পরিণামছুঃখাদি 
সংসারী ব্যক্তির পক্ষে ক্লেশকর না হইলেও অভিজ্ঞের পক্ষে ক্লেশকর হইয়া 
থাকে। অপুণ্যে পুণ্যখ্যাতি, অনর্থে অর্থধ্যাতিও অবিষ্ঠামধ্যে গণ্য। 
বুদ্ধি পরিণামিনী, পুরুষ অপরিণামী। সুতরাং বুদ্ধি ও পুরুষ পরম্পর 
ভিন্ন। বুদ্ধি ও পুরুষ বস্তুগত্যা পরম্পর ভিন্ন হইলেও উভয়ের একরূপের : 
সায় প্রতীতির নাম অস্মিতা। সখ এবং ুখসাধন বিষয়ে *্ভিলাষের 
নাম রাগ। ছুঃখ এবং ছু'খনাধন বিষয়ে ক্রোধ বা জিঘাংসার নাম দবেষ। 
অভিনিবেশ-_মরণভয়। জাতমাত্র প্রাণীরও মরণতয় দেখিতে পাওয়া 
যায়। কিন্তু জাতমাত্র প্রাণীর মরণছুঃখের অন্থতব ইহজন্মে হয় নাই, 
অথচ তাহার মরণভয় হইয়া থাকে। মরণহ্ঃখের জ্ঞান ভিন্ন মরণভয় 
হইতে পারে না। অতএব পূর্বজন্মে অনুভূত মরণছুঃখের সৃতি হইয়া 
তাহার মরণত্রাস উৎপন্ন হয়। এই মরণত্রামার! পূর্ব অনুমিত 
হইতেছে। কর্ম চারিগ্রকার-__কৃষ, শুরু, শুরু ও অন্তরার 
| নিরবছছিন পাঁপকর্ণের নাম কৃষ্ককর্শ, ছুরায়াদিগের এ কর্ণ প্রায় হইয়া 


পাতগ্রলদর্শন। ২২৩ 


থাকে । বহিঃসাধনসাধ্য কর্মের নাম শুক্ুকৃষ্ণ। কারণ, বহিঃসাধনসাধ্য 
ঘাগাদিকর্থ্ে কিছু-না-কিছু পরপীড়া ও পরান্গ্রহ থাকে । পরগীড়া থাকে 
বলিয়া! তাহা কৃষ্ণ এবং পরান্থগ্রহ থাকে বলিয়া তাহ শুরু । এইজন্ত 
যাগাদ্িকর্মন শুর্লুকৃষ্ণ বলিয়া কথিত। তপন্তা, স্বাধ্যায় ও ধ্যানসাধ্য কর্ম 
শুরু । কেন না, উহা! বহিঃসাধনসাধ্য নহে বলিয়া উহাতে পরগীড়ার 
সংশ্রব নাই। যোগীদিগের যোগানুষ্ঠান অশুর্লারুষ্ণ। কেন না, তাহাতে 
পরপীড়ার সম্পর্ক নাই, অথচ তাহার ফল ঈশ্বরে অর্পিত হয়। কর্দফলের 
নাম বিপাক। বিপাক তিনপ্রকার- জন্ম, আয়ু. ও ভোগ। বিপাকাহ্থুগুণ 
স্কারের নাম আশয়। অনুরূপ সংস্কার ভিন্ন বিপাকনির্বাহ হয় না। 
করভজাতির ভোগজনিত বাসনা ভিন্ন করভজন্মসম্পাদক কর্ম বিপাক 
অর্থাৎ করভজন্মরূপ ফল জন্মাইতে পারে না। কারণ, এরূপ সংস্কার 
ভিন্ন করভোচিত ভোগনির্বাহই হইতে পারে না। 
এই ক্লেশাদির সহিত ঈশ্বরের কোনরূপ সম্পর্ক নাই। ধাহার! 
'মুক্তিলীভ করিয়াছেন, তাহাদের ক্লেশাদিসম্পর্ক থাকে না বটে, কিন্ত 
মুক্ত হইবার পূর্বে তাহাদের ক্রেশাদিসম্পর্ক ছিল। ঈশ্বরের ক্লেশাদি- 
সম্পর্ক কোনকালে ছিল না, কোনকালে হইবে না। এইজন্য তিনি 
নিত্যমুক্ত । অপরাপর পুরুষের পক্ষে যোগের সাহায্যে আত্মসাক্ষাৎকার- 
পূর্বক ক্লেশাদির প্রহাণ করিতে হয়। এক্ষণে ঘোগের কিঞ্চিৎ পরিচয় 
দেওয়া যাইতেছে। চিত্বৃত্তিনিরোধের নাম যোগ। ক্ষিপ্ত, মূঢ়, বিক্ষিপ্ত 
১একাগ্র ও নিরুদ্ধ, এই পাঁচটি চিত্তহূমি বাচিত্তের অবস্থা তুমি বাঁচিত্তের অবস্থা | । চিত্ত ্িগুণাত্বক। 


পাকা পিজা |  .... পীপাশিিশিশীশিশ 


রজোগুণের সমুদ্রেক বা আধিক্যহেতৃক তত্তদ্বিষয়ে পরিচালিত চিত্তের 
অত্যন্ত অস্থির অবস্থা বা তদবস্থ চিত্তের নাম ক্ষিপ্ত। তমোগুণের 
সমুদ্রেকজনিত নিদ্রাবস্থা বা তদবস্থ চিত্তের নাম মূঢ়। ক্ষিপ্ত-মূঢ় অবস্থাতে 
যোগের সন্তাবনাই নাই। ক্ষিপ্ত অবস্থা অপেক্ষা কিঞিৎ বিশেষযুক্ত চিত্তের 
নাষ বিক্ষিপ্ত । কিঞ্চিৎ বিশেষ কিন! অত্যন্ত অস্থির চিত্তের কার্দাচিংক 
বা ক্ষণিক স্থিরত|। বিক্ষিপ্ত চিত্তের কদাচিৎ স্থিরতা হয় বলিয়া! ততকালে 
ক্ষণিক বৃত্তিনিরোধ হইতে পারে বটে, কিন্তু এ বৃত্তিনিরোধ ক্লেশাদির 
পরিপন্থী বা নিবারক হয় না বলিয়া যোগশববাচ্য হইতে পারে না। 
যে চিত্তবৃত্তিনিরোধ ক্রেশারদিক্ষয়ের দাধন, তাহাই যোগ। একাশ্র এবং 


২২৪ নবম লেক্চর। 


নিরুদ্ধ চিত্রই যোগের উপযুক্ত। ধোয়ব্ষিয়ে একতাঁন চিত্তের নাম 
একাগ্র। যখন চিত্তের ধোয়বিষয়ণী বৃত্তিও নিরুদ্ধ হয়, কেবল বৃত্তি্গনিত 
মংস্কারমাত্র অবশিষ্ট থাকে, তথাবিধ চিত্তের নাম নিরুদ্ধ। যোগ ছুই-৭% 
গ্রকার-সম্প্রজ্ঞাত ও অসস্প্রজ্ঞাত। একাগ্র চিত্তের যোগ সম্প্রজ্ঞাত। 
কেন না, তৎকালে ধোয়বন্ত সম্যক্রূপে গ্রন্জাত হয়। নিরুদ্ধচিন্তের 
 যোগের নাম অমশ্প্রজ্ঞাত। কেন না, তৎকালে ধ্যেয়বিষয়ক বৃত্তিও নিরুদ্ধ 
হয় বলিয়া কিছুই প্রজ্ঞাত হয় না। এই দ্বিবিধ যোগের সাধারণ নাম 
সমাধিযোগ | চিতের বৃত্তি ছুইপ্রকার-ক্রষ্ট ও অকিষ্ট। যে দকল বি 
ক্লেশজনিত বা ক্লেশের হেতু এবং ধর্ম ও অধর্মের প্রসবভূমি, তাহার 
নাম ক্রিষ্টবৃত্তি। সত্ব ও পুরুষের বিবেকবিষয়িণী বৃত্তির নাম অক্রিষ্ট- 
বৃত্তি। সংক্ষেপতঃ রাজস ও তামস বৃত্তি ক্রিষ্ট, সাত্বিক বৃত্তি অকিষ্ট। 
প্রকারান্তরে বৃত্তি পাচপ্রকার--প্রমাণ, বিপধ্যর, বিকল্প, নিদ্রা ও 
স্বতি। প্রমাণবৃত্তি তিন প্রকার_ প্রত্যক্ষ, অনুমান ও আগম বা শন্। 
ইন্িয়ের সহিত বাহবস্তর সম্বন্ধ হইলে মন্বদ্ধবস্তুবিষয়ে তিন্তের বিশেষাব- 
ধারণপ্রধান! যে বৃত্তি হয়, তাহার নাম প্রত্যক্ষ। পিগ্কনিবন্ধন সামান্তাব- 
ধারণপ্রধান1 চিত্তবৃত্তির নাম অন্ুমান। শ্রোতার শবজনিত শব্দার্থ- 
বিষয়িণী বৃত্তি আগম। মিথ্যাঙ্ঞানের নাম বিপর্য্যয়। সংশয়ও বিপর্যায়ের 
অন্তর্গত। বস্ত না থাকিলেও শব্বজ্ঞানমাহাত্র্যনিবন্ধন যে বৃত্তি হইয়া 
থাকে, তাহার নাম বিকল্প । ঠৈতন্ত পুরুষের স্বব্ূপ- ইহা একটি বিকল্পের 
উদ্দাহরণ। কেন না, পুরুষ চৈতত্স্বরূপ, অর্থাৎ চৈতন্য ও পুরুষ একই 
পদার্থ। স্থৃতরাং চৈতন্য ও পুরুষের ধর্মধর্শিভাব বস্তগতা। নাই । অথচ 
চৈতন্য পুরুষের স্বরূপ, এতাদৃশরূপে ধর্র্ধন্শভাবে ব্যবহার হইতেছে 
শুক্তিকাতে রজতবুদ্ধি বিপর্যয়ের উদাহরণ। বিশেষদর্শন হইলে সর্ব- 
সাধারণের পক্ষেই রজতবুদ্ধি বাধিত বলিয়া প্রতীত হয়। বাধিত বলিয়া 
নিশ্চয় হইলে আর তদ্বার| কোনরূপ ব্যবহার হয়'না। বিকল্পস্থলে 
সর্বসাধারণের বাঁধবুদ্ধি আদৌ হয় না। বিচারনিপুণ ুধীগণেরই বাধ- 
বুদ্ধি হইয়া থাকে । অথচ বাধবুদ্ধি হইলেও উহার ব্যবহার বিলুপ্ত হয় 
না| বিপরযায় এবং বিকল্পের এই সৃঙ্ম ভেের প্রতি লক্ষ্য করা কর্তব্য 
মুপ্তিকাণীন চিত্তবৃত্তির নাম নিদ্রা। কোন কোন দার্শনিকের মতে 


মক 


পাতগ্রলদর্শন | ২২৫ 


্ধুপ্তিকালে চিত্তের কোনরূপ বৃত্তি থাকে না৷ বটে, কিন্তু পাতঞ্জলাদি- | 
দর্শনের মতে স্ুযুপ্তিকালেও চিত্তের বৃত্তি থাকে । এ বৃত্তি কোন বাহ্থার্থ- 


- বিষয্িণী নহে, অন্তব্ষিয়িণী। "মুখে নিদ্রিত ছিলাম, কিছুই জানিতে 


পারি নাই”_্থপ্তোখিত পুরুষের এই প্রত্যবমর্শ বা স্মৃতি স্্যুপ্তিকালে 
চিত্ববৃত্বির সঞ্ভাব প্রতিপন্ন করিতেছে। কেন না, অনন্ুভূত বিষয়ে স্মৃতি 
হইতে পারে না। সুতরাং বলিতে হইবে যে, স্ুযুপ্তিকালে সুখ এবং 
জ্ঞানাভাবের অনুভব হইয়াছিল। বৃত্তি ভিন্ন অনুভব অনস্তব। অতএব 
প্রতিপন্ন হইল যে, স্ুুপ্তিকালেও চিত্ববৃত্তির সপ্তাব থাকে । .অন্ুভূত-বস্ত্- 
বিষয়িণী বৃত্তির নাম স্মতি। এই পাঁটপ্রকারের অতিরিক্ত চিত্তবৃতি নাই । 
যে কোন বৃত্তি হউক না কেন, তাহা উক্ত পাঁচ প্রকার বৃত্তির কোনও 
এক প্রকারের অস্তনিবিষ্ট হইবে। অভ্যাস ও বৈরাগ্য দ্বারা উক্ত বৃভ়ি- 
সকলের নিরৌধ করিতে হয়। চিত্তের একাগ্রতাসম্পাদনের যত্বের নাম 
অভ্যাস । সংকারপূর্ববক অর্থাৎ শ্রদ্ধা ও ্রঙ্গচর্য্যাদিপৃর্বক নিরস্তরভাবে 
দীর্ঘকাল অনুষ্ঠিত হইলে অভ্যার্ণর দৃঢ়তা হয়। দৃষ্ট এবং অনৃষ্ট বিষয়ে 
বিতৃষ্ণার নাম বৈরাগা। অভ্যাপদ্বারা বিবেক উদ্ঘাটিত এবং বৈরাগ্য- 


দ্বারা বিষয়প্রবণতা নিবারিত হয়। সুখসস্তোগাপন্নপ্রাণিবিষয়ে মৈত্রী, 


টু 


॥ 


দুঃখিতপ্রাণিবিষয়ে করুণা, পুণাশীলবিষর়ে মুদিতা এবং পাপশীলবিষ়ে 


উপেক্ষা ভাবনা করিবে। এই. ভাবনাচতুষটরধার৷ চিতের প্রগননত] 
সম্পন্ন হয়। 

বম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি, 
এই আটটি যোগের অঙ্গ । োগাঙ্গগুলি অনুষ্ঠিত হইলে চিত্তের অন্ধ 
ষয়প্রাপ্ত হয়, এবং বিবেকখ্যাতিরূপ সম্যক জ্ঞানের অভিব্যক্তি হয়। 
যতই যোগাঙ্গের অনুষ্ঠান হয়, ততই অশুদ্ধি ক্ষয়প্রাপ্ত হইতে থাকে । 
অশ্ুদ্ধিক্য়ের অন্ুপারে বিবেকজ্ঞানের পরিদীপ্তিও বদ্ধিত হইতে 
থাকে। অহিংসা, সত্য, অন্তেয়, ব্রহ্মচরধ্য ও অপরিগ্রহ বা বিষয়ের 
অস্বীকরুণের নাম বম।, সর্দকীলে কোনরূপে কোনও প্রাণীর অভি- 
দ্রোহ বাঁ গীড়া না করার নাম অহিংসা। সত্য, অস্তেয় প্রভৃতির দ্বার! 
অহিংসার নির্মলতাসম্পাদণণ হয়। যেরূপ দৃষ্ট, অনুমিত বা শ্রুত. হয়, 
ঠিক সেইরূপ বাক্য ও মনের অবস্থা হইলেই সত্য হইয়া! থাকে। এক- 


৮২ 


২২১ | নবম লেক্চর। 


রূপ বুৰিয়া অন্রূপ ব্যক্ত করিলে বা অন্তরূপ বলিবার জন্য অভিলাষ 
হইলে সত্য হয় না। কেন না, নিজের বোধ পুরুষাস্তরে সংক্রান্ত বা 
সঞ্চারিত করিবার জন্যই বাঁক্য বলা হয়। সেই বাক্য ষদ্দি পুরুষা- 
স্তরের বঞ্চনা! বা প্রতারণার কারণ হয়, তবে তাহা সত্য হইতে পারে 
না। কারণ, এ বাক্যদারা পুরুষাস্তরে স্বঝোধের সঞ্চার হয় না, 
অন্যবিধ বোধের উৎপত্তি হয়। একট দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতেছে। কুরু- 
ক্ষেত্রসংগ্রামে অশ্বথামানামক প্রকটি হৃম্তী হত হয়। তাহা যুধিষ্ঠির 
জানিতেন। পরন্ত দ্রোগাচার্যযকে শুনান হয় যে, তাহার পুত্র অশ্বথামা 
হত হইয়াছে। দ্রোণাচারধ্য ইহা বিশ্বাস করিতে পারিলেন না। তিনি 
সন্দিহান হইয়। সত্যবাদী যুধিষিরকে জিজ্ঞাদা করিলেন, “ঘুধিটির, সত্যই 
কি অশ্বথাম। হত হইয়াছে?” যুধিষ্ঠির বলিলেন, “অশ্বথামা হত হইয়াছে ।” 
ুধিষ্টিরের এই উত্তর সত্য হয় নাই। কেন না, অশ্বখামানামক হস্তী 
হত হইয়াছে, ইহার অভিসন্ধান করিয়াই যুধিষ্ঠির রূপ উত্তর করিয়া- 
ছিলেন। দ্রোণাচাধ্য বুঝিয়াছিলেন যে, তাহার পুত্র অশ্বথামা হত 
হইয়াছে। এস্থলে যুধিষ্টিরের বোধ হইয়াছিল,-হন্তী হত হওয়া বিষয়ে । 
ড্রোণাচার্য্যের বোধ হইয়াছিল,--তীহার পুত্র হত হওয়। বিষয়ে । স্থৃতরাং 
দ্রোণাচার্য্ের অস্তঃকরণে যুধিষ্টিরের বোধের সঞ্চার হয় নাই। তাহার 
অন্রূপ বোধ হইয়াছিল। এইজন্য যুধিঠিরের বাক্য সত্য হয় নাই। 
সর্ঘভূতের উপকারের জন্যই বাক্যের প্রবৃতি হইয়াছে, ভুতের 
উপঘাত অর্থাৎ গীড়ার জন্ত বাকোর প্রবৃত্তি হয় নাই। যথাদৃষ্ট-যথাশ্রুত 
বিষয় বলিলেও যদি তাহা ভূতের উপঘাত সম্পাদন করে, তবে 
তাহা নত্যাতাসমাত্র । বস্তগত্যা তাহা! সত্য হয় না। অতএব 
বিবেচনাপূর্বক সর্কসূতের হিতকর সত্য বলিবে। অশাস্্ীয় উপায়ে ' 
পরদ্রব্য গ্রহণের নাম স্তেম্। স্তেয়াভাব অস্তেয়। অন্ধরাগপূর্বক স্ত্রীর 
দর্শনম্পর্শনাদি বিষয়ে লোলুপ নমন্ত ইন্দ্রিয়ের সংঘমের নাম ব্রহ্চর্য্য। 
বিষয়ের অর্জনদোষ, রক্ষণদোধষ প্রভৃতির আলোচনাপুর্বক বিষয়ের 
অস্বীকরণ--অপরিগ্রহ। : 
জাতি, দেশ, কাল, সময় অর্থাৎ নিয়ম--এতদ্বারা দা বা 
অনিয়মিত, সর্ধবিষয়ে সর্ব! অব্যতিচরিত অহিংসাদি মহাব্রত বলিয়া 


পাতগ্রলদর্শন। ২২৭ 


অভিহিত হইয়াছে। তাদৃশ অহিংসাদিই যোগীিগের অবলম্বনীয়। 
ইহার সংক্ষিপ্ত উদাহরণ প্রদর্শিত হইতেছে। মৎস্তঘাতকের মতত্তেই 
হিংমা আছে, অন্নত্র নাই। তাহার অন্তত্র অহিংসা জাত্যবচ্ছিনন বা 
জাতিগ্বারা! নিয়মিত। “তীর্ঘে মত্গ্তহিংসা করিব না'__ইহা হইল দেশা- 
বচ্ছিন্ন অহিংসাঁ। 'পুণ্যদ্িনে মতগ্তহিংসা৷ করিব না”-ইহা। কালাবচ্ছিনন 
অহিংসা। “কেবল দেবব্রাহ্গণার্থ মতম্তহিংসা করিব, অন্ত কারণে করিব; 
না,_ইহা! সময়াবচ্ছিন্ন অহিংসা। সত্যা্দিরও যথাসম্ভব জাতি, দেশ, 
কাল ও সময়াবচ্ছেদ বুঝিতে হইবে। বাহুল্যভয়ে বিস্তৃত উদাহরণ দেওয়া 
গেল না। 

শৌচ, সন্তোষ, তগঃ, স্বাধ্যায় ও ঈশ্বরপ্রণিধানের নাম নিয়ম। 
শৌট হিবিধ_বাহি ও আভ্যন্তরা মুজ্জলানিদ্ারা সম্পাদত, শরীর- 
শুদ্ধি এবং পবিত্রবন্তুভোজন বাহ্‌ শৌচ। চিন্র-মল-ক্ষালন আত্যন্তর, 
শৌচ। সন্নিহিত বস্তর অধিক বস্তর গ্রহণেচ্ছা, না হওয়াই সন্তোষ । 
প্রীতো্খাদি দন্দ-ঘহন তগঃ। মোক্ষশান্ত্রের অধ্যয়ন বা প্রণবজপের 
নাম স্বাধ্যায়। ঈশ্বর প্রণিধান কিনা পরমেশ্বরে সমস্ত কর্মের অর্পণ 
| করা। নিশ্চর অথচ স্খাবহ অবস্থান বারা সমপর_হয়, তাহার নান 
আসন।  গন্মাসন, বীরাসন, ভদ্রাসন প্রন্থৃতি অনেকপ্রকার আদন 
যোগশান্তে বিহিত আছে। শ্বানপ্রশ্বানের গতিবিচ্ছেদ অর্থাং রেচন, 
ও পূরণপৃৰ্বক কুন্তকের নাম প্রাণায়াম। ইন্দ্রিয়লকলের স্ব ম্ব বিষয়ের 
সহিত সন্ষন্ধ রহিত হইলে তিত্স্বরূপের অনুকারের ন্যায় অবস্থার 
নাম প্রত্যাহার । চিত্তের নিরোধ হইলে চিত্তের ন্যায় ইন্দ্রিয়মকলও 
আপনা মাপনিই নিরুত্ধ হয়। প্ররূপ ইন্দ্রিয়নিরোধই প্রত্যাহার । 
নাভিচক্রাদি আত্ন্তরদেশে বা চন্্রাদি বাহবিষয়ে চিত্তের, বন্ধন বা 
বৃত্তিবিশেষের নাম ধারণা। অভিলধিত দেশে ধ্োয়বিষয়ে তৈলবারার 
ন্যায় অবিচ্ছিন্ন চিত্তবৃত্তিপ্রবাছের নাম ধ্যান। ধ্যান যখন ধ্যেয়াকারমাত্রের 
পরিস্তূরভিমন্িত হয়, প্রহায়ের আকারের স্ষুদ্তি পায় না, তখন তাহাকে 
দমাধি ব বলা যায়। 

যোগের কতগুলি অন্তরায় বা বির আছে। যাহা চিত্তবিক্ষেপক, 


তাহাই যোগের অন্তরায়। ব্যাধি, স্ত্যান, সংশয়, পু, আজঙ্ত, 





২২৮ নবম লেক্চর। 


অধিরতি, ত্রান্তিদর্শন, অলব্বভূমিকত্ব ও স্বুনবস্থিতত্ব,। এই গুলি চিন্তের 
বিক্ষেপক এবং যোগের অন্তরায়। বাতপিত্তগ্নেম্মরূপ ধাতুর, অশিত-পীত 
আহারের পরিণামবিশেষরূপ রসের ও ইন্দ্িয়সকলের বৈষম্যের নাম 
ব্াধি। চিত্তের অকর্মুণ্যতার নাম ক্তযান। “ইহা এইরূপ কি অন্তরূপ-- 
ইতাকার অনিশ্চিত জ্ঞানের নাম সংশয়। সমাধিসাধনবিষয়ে যত্রের 
অভাবের নাম প্রমাদ। কফাদিহেতুক শরীরের, এবং তমোগুণের 
আধিক্যহেতু চিত্তের গুরুত্বনিবন্ধন অগ্রবৃত্তির নাম আলম্ত। চিত্তের 
বিষয়তৃষ্ণার নাম অবিরতি। বিপর্ধযয়জ্ঞানের নাম ভ্রান্তিদর্শন। সমারধি- 
যোগ্য তুমি অর্থাৎ চি্ৰাবস্থার অলাভের নাম অলব্তৃমিকত্ব। 
যোগোপযুক্ত-ভূমি-লাভ হইলেও যদি তাবন্মাত্রেই অর্থাৎ ভূমিলাভমাত্রেই 
গিজেকে কৃতকৃত্য বিবেচনা করা হয় অর্থাৎ সমাধির উপযৃক্ত ভূমিলাভ 
হইলেও যদি সমাধিলাত না হয় বা সমাধিভ্রষ্ট ইওয়! যায়, তবে লব্ধ- 
ভূমি অবস্থিত থাকে না। ইহারই নাম অনবস্থিতত্ব। দুঃখ, দৌর্মনস্ত, 
অঙ্গমেজয়ত্ব, শ্বাস ও প্রশ্বাস, এগুলি বিক্ষেপের সহচর; অর্থাৎ 
পৃর্বোক্ত বিক্ষেপ হইলে সঙ্গে সঙ্গে ছুঃখাদিও অবশ্ত হইয়া থাকে। 
আধ্যাত্বিক, আবিভৌতিক ও আধিটৈবিক ভেদে দুঃখ ত্রিবিধ। ইচ্ছার 
অন্তিথাত ব| অপূর্ণতানিবন্ধন চিত্তের ক্ষোভের নাম দৌর্মনস্ত। অন্ধ- 
কম্পের হেতুর নাম অঙ্গমেজয়ত্ব। অনিচ্ছাবস্থাতেও প্রাণ বাহ্বাধুকে 
অভ্যন্তরে প্রবেশ করায়, ইহারই নাম শ্বাস। এরূপ আত্যন্তরীণ 
বাধুর নিঃনারণের নাম প্রশ্বাস। শ্বাস ও প্রশ্বাম প্রাণায়ামেব্‌, গ্রতি- 
কুল। বিক্ষেপনিবারণের জন্ত ঈশ্বরচিন্তাতে চিন্তকে অতস্ত করিবে, 
প্রণবের জপ করিবে এবং প্রণবপ্রতিপাগ্ ঈশ্বরের ভাবনা করিবে। 
প্রণবজপ ও প্রণবার্থভাবনারও অপর নাম ঈশ্বরপ্রণিধান। তন্বারা 
অন্তরায়ের অভাব এবং প্রত্ক-চেতনের অর্থাৎ অবিস্তাশালী জীবাত্মার 
যথার্থস্বরূপের জ্ঞান হয়। চিত্তের একাগ্রতা ও স্থের্য্যসম্পাদনের অনেক- 
গুলি উপায় প্রদর্শিত হইয়াছে বটে, কিন্তু তন্মধ্যে ঈশ্বরপ্রণিধান উৎকৃষ্ট 
এবং সুলভ উপায়। এইজপ্ত তন্মাত্রই প্রদর্শিত হইল। 

|. তপন, স্বাধ্যায় ও ঈশ্বরপ্রণিধানের নাম ক্রিয়াযোগ। সমাহিতচিত্ব 
সাকির সুমাধিযোগে অধিকার । বিক্ষিপ্তচিত্ত বাক্তি সমাধিযোগের 


পাতগ্লদর্শন | 


অধিকারী নহে, ক্রিয়াযোগের অধিকারী। প্রথমাধিকারী ক্রিয়াযৌগের 
অনুষ্ঠান করিবে। তন্দারা কালে তাহার ক্লেশসকল তনৃকৃত হয় এবং 
মমাধিবোগের যোগ্যতালাভ হয়। রোগ, রোগহেতু, আরোগ্য ও 
ভৈষগ্া ভেদে চিকিৎগীশাস্্ব যেমন চতুর্বাহ বা চতুরবয়ব, তদ্রপ সংসার, 
নংসারহেতু, মোক্ষ ও মোক্ষহেতু ভেদে অথবা হেয়, হেয়হেতু, হান. ও 
হানোপায় ভেদে যোগশান্ত্রও চতুবাহ। তন্মধ্যে দুঃখবহুল সংসার হেয়। 
প্রধান ও পুরুষের মংযোগ হেয়হেতু। সংযোগের অত্যন্তনিবৃতি হান। 
সম্যগর্শন বা বিবেকখ্যাতি হানোপায় অর্থাৎ হানের কারণ। তাষ্যকারের 
মতে কারণ নয়প্রকার। যথা-- 
উৎ্পত্তিস্থিত্যতিব্যক্তিবিকারপ্রত্ায়াপ্তযঃ ৷ 
বিয়োগান্তত্বধৃতয়ঃ কারণং নবধা স্ৃতম্‌ ॥ 

অর্থাং উৎপত্তিকারণ, স্থিতিকারণ, অভিব্যক্তিকারণ, বিকারকারণ, 
প্রত্যারকারণ, প্রাপ্তিকারণ, বি্মোগকারণ, অন্যত্বকারণ ও ধৃতিকারণ ভেদে 
কারণ নরপরকার। | 

খিজ্ঞানের অর্থাৎ বৃত্তির উৎপত্তিকারণ মন। মনের স্থিতিকারণ 
পুরুযার্থতা। শরীরের স্থিতিকারণ আহার । আলোক রূপের অভিব্যক্তি- 
কারণ। বিষয়ান্তর মনের বিকারকারণ, যেমন তপস্বীদিগের অগ্গারো- : 
দশনাদি। পাক্যবস্তর বিকারকারণ অগ্নি ইত্যাদি। ধ্ুমজ্ঞান অগ্নির 
প্রতায়কারণ। যোগাঙ্ষের অনুষ্ঠান বিবেকথ্যাতির প্রাপ্তিকারণ। 
নুবর্ণকার স্বর্ণের অন্যত্বকারণ। কেন না, স্তুবর্ণকার কুগুলকে বলয় ও 
বলয়কে কুগুল করিয়া থাকে। শরীর 'ইন্দ্রিয়ের ধৃতিকারণ। স্থাবর- 
জঙ্গমাদিও পরম্পর পরষ্পরের ধৃতিকারণ। কেন না, পণ, পক্ষী, মুগ 
প্রভৃতি জঙ্গমণদার্থ এবং ফলমূলাদি স্থাবরপদাথের তক্ষণদ্বার৷ মনুম্ত- 
শরীর ধৃত হয়, ব্যাপ্রাদির শরীর মনুষ্যানিশরীরভঙ্ষণদ্ারা ধৃত হয়। 
এবং মন্ুষ্যাির মাংসকধিরাদি “সাররূপে পরিণত হইয়া শ্তাবরের 
পরিপোষণ করে ও তাহার ধৃতিকারণ হয়। ফলতঃ পাতগ্লদর্শনের 
মতে সমস্ত বস্তুতেই সমস্ত শক্তি আছে বলিয়৷ সমস্ত বস্তই সমস্তাত্বক | 
জলভূমির যেরূপ রূপরম অনুভূত হয়, ফলপল্পবাদিতে . তাহার নানারূপ 
বিচিত্র পরিণাম দেখিতে পাওয়া যায়। স্থাবরের বিচিত্র পরিণাম জঙ্গমে 


টস নবম লেক্চর। 
হদৃষ্ট হয়। কেন না, মনুস্তাদি ফলাদিভোজন করিয়| রূপবিশেষ প্রাপ্ত 
হয়। সমস্ত বস্ত সমস্তাত্মক হইলেও দেশকালভেদে কোন কোন বস্ততে 
কোন কোন শক্তির বিকাশ হয় মাত্র। কোন শক্তির বিকাশ হয় বলিয়! 
অপরাপর শক্তির অসপ্তাব বল! যায় না। যেমন চৈত্র একটি স্ত্রীতে 
অনুরক্ত হইলেও অন্ঠান্ত স্ত্রীতে বিরক্ত, এ কথা বলা যাইতে পারে না। 
কেন না, কালাস্তরে অন্ত স্ত্রীতেও তাহার অনুরাগ দৃষ্ট হয়। অতএব 
বলিতে হইতেছে যে, এক শ্ত্রীতে অস্গুরাগকালেও অপরাপর স্ত্রীতেও 
অনুরাগ আছে । কিন্তু চৈত্র যে স্ত্রীতে অন্ুরক্ত হইয়াছে, গ্র স্ত্রীতে অন্নরাগ 
তৎকালে বৃত্তিলাভ করিয়াছে, অর্থাৎ পরিস্ফুট হইয়াছে। অপরাপর 
স্্রীতে অনুরাগ ভবিষ্যদবত্তি অর্থাৎ তৎকালে বৃত্তিলাভ করে নাই কিনা 
পরিস্কূট.হয় নাই, প্রচ্ছন্নভাবে রহিয়াছে। তন্রপ জল ও ভূমির ফল- 
পল্পবাদিতে রূপরসের যে বিচিত্র পরিণাম হইয়া থাকে, প্র পরিণামশক্তি 
তইকালে কার্যে পরিণত হইয়াছে । যাহা কার্যে পরিণত হইয়াছে, তাহা 
পূর্বেও অবশ্ঠ প্রচ্ছন্নভাবে ছিল। কেন না, সৎকার্ধযবাদ্দে কোন 
_অবিস্কমান পদ্দার্থের উৎপত্তি হইতে পারে না। এইরূপ প্রচ্ছন্ন 
অনভিব্যক্ত.শক্কিকে অব্যপদেহ্ বলিয়া নির্দেশ করা হইয়াছে । সং- 
বা অসছৃৎপত্তি অলীর কুরা.. সুতরাং অব্ঠ স্বীকার করিতে 
হুইবে যে, মুলকারণে সমস্ত শক্তি নিহিত আছে।: রজঃ ও তমঃ, 
“এই গুণত্রয় জগতের মুলকারণ চি ঠনীয়িক |. শি আর কিছুই 
নহে, কার্ষের সু বস্থাসান্ী।” সুতরাং সমস্ত বন্ধ মস্তক, টুহা প্ব- 
সত্য, ইহাতে সন্দেহ করিবার ক্কোনএকারগ লই:।” 
পরিণাম কিনা অবস্থাত্তরপ্রাপ্তি। "পরিণাম তিনপ্রকার--ধর্মা- 
প্রণাম, লক্ষণপপ্সিণাম ও অবস্থাপরিণাম | পৃথিব্যাদি ধর্ম্ীর মনুয্যাদি- 
শরীর ও ঘটাদিরূপ অবস্থান্তরপ্রাপ্তির নাম ধর্দপরিণাম। মনুষ্যাদি- 
শরীর ও ঘটাদি পূর্বে অনাগত ছিল, এখন বর্তমান হইয়াছে, পরে অতীত 
'হইবে। অতএব মন্ুষ্যশরীর ও ঘটাদিধর্মের অনাগত, বর্তমান ও 
অতীতরূপভার নাম লক্ষণপরিণাম। বর্তমানলক্ষণাপন্ন মনুষযশরীরের 
বাল্য-যৌবন-বার্ধক্য এবং ঘটাদির নৃতন্ত্ব ও পুরাণত্ব অবস্থাপরিণাম। জগৎ 
ব্রিগুণায্মক। গুণসকল পরিণামন্বভাব। তাহারা ক্ষণকালও পরিণামশূগ্